পল্লীর দুর্গা
পাঞ্চালি দেবনাথ
আমার দুর্গা থাকে গ্রাম্য পল্লীতে। সে হাজার ব্যস্ততাতেও নিজের ভালো মন্দ নিয়ে না ভেবে তার রত্নের কথা না ভেবে থাকেনা। আমার দুর্গা বড়ো দুঃখী। অভাবের সংসারে আমার দুর্গা দুর্গতিনাশিনী। অনেক কষ্টে তিনি তার রত্নকে শিক্ষিত করে তুলেছেন। সে স্বামীর অনুগত। তার চোখের তলায় অযাচিত কালী মুখে সৌখিন বলিরেখা। কাঁচাপাকা চুল আর ঘামে ভেজা মুখটা তাঁরই।
সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে সংসার সামলে আঁচলে মুখ মোছে। ক্লান্তিতে দুচোখে ঘুম জড়িয়ে আসে। ঘুমন্ত মুখটা দেখে বড্ডো মায়া হয়। খাবার সময়টুকুও পায়না। মুখে খাবার তুলে দিয়ে তৃপ্তি পাই আমি। সে বড়ো ক্লান্ত, বড়ো অভাগী।
কখনো বলা হয়নি মা তোমাকে যে বড্ডো ভালোবাসি মা। সে শত শত আঘাত বুকে নিয়েও মুখ বুজে থাকতে পারে। প্রতিদিন নতুন করে বেঁচে উঠতে পারে। শত দুঃখেও তাঁর মুখে হাসি। চোখের জলে মুক্তো খুঁজি। সেই জলও বড্ডো দামী। দশ হাত না থাকলেও আমার দুর্গা দশ দিকের ঝঞ্ঝা দুহাতে সামলাতে পটু। সে আমার আমার মিত্র, সখি। দুঃসময়ে সাহস যোগান তিনি। আমি নিশ্চিন্তে তাঁর কোলে মাথা রেখে পরম তৃপ্তি পাই। কালো আকাশ মাথায় নিয়ে ছাতা হয়ে দাঁড়ায় আমার দুর্গা। কখনোবা প্রবল বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে। সমস্ত প্রতিকূলতা, সবকিছুকে পেছনে ফেলে দুর্গা চলে সামনের দিকে এগিয়ে। তাঁর কোনো তুলনা নেই। তার জুড়ি মেলা ভার। আমার দুর্গা আমার কাছে সেরা... সমাজ তাকে ঘরের বৌ বললেও সে আমার কাছে দুর্গতিনাশিনী দুর্গাই। আমার মাই আমরা দুর্গা।
No comments:
Post a Comment