Showing posts with label কবিতা ও কবি. Show all posts
Showing posts with label কবিতা ও কবি. Show all posts

Monday, August 31, 2020

 


কবিতা ও যাপনে শূন্যদশক এবং প্রথম দশকের চার কবি
বাবলি সূত্রধর সাহা

জন্মদিন- ২৪.১০.১৯৭৯, ধূপগুড়ির মেয়ে বিবাহ সূত্রে আলিপুরদুয়ারে থাকেন।
কাব্যগ্রন্থ - সময়, মহাকালের স্রোত, অনেক আগুনের শিখা, কাচপোকাদের প্রেম।
সম্মান বলতে সকলের অনেক ভালোবাসা পেয়েছেন। লেখা পড়ে কারোর মননে যদি ছুঁয়ে
যায় সেটাই প্রকৃত সম্মান। বই পড়া নেশা। যা পেয়েছেন জেনেটিক্যালি বাবার
থেকে। আর গান শোনা, আবৃত্তি করতে ভালোবাসেন।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
কবি বিকাশ দাস (বিল্টু)

একটি কবিতার নির্মাণ করেন কবি। কবিতার সাম্রাজ্যে তিনিই একমার অধিপতি।
এখানে পুরোপুরি স্বাধীন তিনি। এই মুক্তির নেশায় কবি সৃষ্টি করেন অসংখ্য
শব্দছক। একটা ধোঁয়াশার মতো অবয়বহীন আদল মনের মধ্যে ঘুরে বেড়ায়। কখনও
বিচ্ছিন্ন থাকে, আবার কোন একটা সময় সেটাই কবিতা হয়ে ওঠে। জীবনে সেতু
বন্ধনের কাজ করে কবিতা। এই কবিতার জন্যই আজ আমার দূর - দূরান্তরের অজানা
মানুষগুলো হয়ে উঠেছে একান্তই প্রিয় আত্মজন। সেই রকমই কবিতা মিলিয়ে দিল
কবি বিকাশ দাস (বিল্টু) কে। মাথাভাঙ্গার শিবপুরে বিকাশের জন্ম ও বেড়ে
ওঠা।প্রথম দশকের কবি বিকাশ দাসের লিখতে আসা ২০১৬ সালে। কবিতা লেখার সাথে
তিনি "আল্পনার কবিতা" পত্রিকা সম্পাদনা করছেন। গৃহশিক্ষকতার পাশাপাশি তার
নেশা লেখা, প্রকৃতির রুপ, রস, গন্ধে মজে থাকা। একান্তই যা নিজের তাকে
হারিয়ে মানুষের বেঁচে থাকাটা মৃত্যুর সমতুল্য। সেই না থাকার স্রোতে বিকাশ
তার প্রেম, স্বপ্নকে হারিয়ে ফেলেও লেখেন - "একবার না হয় কাছে ঘেঁষো/
ঘ্রাণ নাও কাদা মাটি,সোঁদা মাটি কিংবা পিঠের ঘামে লেপটে থাকা পারিজাত
সুগন্ধির"।
অসাধারন নিজস্বতা আছে বিকাশের কবিতায়। কবিতায় কেন আসা?  আদৌ কি এর কোন
উত্তর হয়! কিছুটা হয়তো কারণ থাকে। কবি বিকাশ তাঁর প্রিয় সঙ্গীকে হারিয়েও
কবিতার মাঝে খুঁজে পেয়েছেন তাকেই। তাই তো তিনি "আল্পনার কবিতায়” নিজেকে
ঢেলে সাজিয়েছেন। মেধাবী ছাত্র এবং উজ্জ্বল জীবন হতেই পারত!  তা না হয়ে
কবি অসহায় ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বিভিন্ন পত্রিকায় লেখা ছাড়াও "
বিরহী প্রেমের ঝংকার"" নামে একটি কাব্যগ্রন্থ আছে।

গভীর বোধ থাকলেই এমনটা লেখা যায় - "তাই তো এখন রোদে হাঁটলেও / ছায়ার সাথে
পাপকে হাঁটতে দেখিনা আর!"  খুব অল্প সময়ের তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে
উঠেছেন সকলের কাছে। "মা" আমাদের বটবৃক্ষ সম। সেই মা কেই তিনি কবিতায়
এঁকেছেন। " কান্নাকে কোঁচায় ভরে / ফুল হাতে মা ক্যামন বিলিয়েই চলছেন আলো
উঠোন জুড়ে।" মায়াময় নস্টালজিয়ায় মন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। কবি বিকাশের
কবিতা পাঠকদের এক আলাদা ভুবনে নিয়ে যাবে। এই আশা নিয়েই বলছি আপনার লেখা
চিরকালীন হয়ে উঠুক বিকাশ দাস।

কবি খুরশিদ আলম

কবির মন খারাপ খুব ক্ষনস্থায়ী। বিষাদের মেঘ কেটে গেলেই কবি বেরিয়ে পড়েন
রসিকবিল অথবা চিলাপাতার গভীর জঙ্গলে। সবুজে ডুব দিয়েই কবি খুরশিদ আলম
লিখে ফেলেন ঈশ্বরের পরিধি। "যে জটিলতা থেকে বেরিয়ে আসে সংখ্যা অথবা সরণি/
তাকে ছুঁতে চাওয়ার আগে / আমরা নাম দিই ঈশ্বর"। অনবদ্য খুরশিদের
চিন্তাধারা। প্রথম দশকের কবি খুরশিদের জন্মস্থান আলিপুরদুয়ার জেলার
দক্ষিণ পারোকাটা। লেখাতে আত্মপ্রকাশ ডিঙি পত্রিকার মাধ্যমে। ২০১৪ সাল
থেকে বিভিন্ন পত্রিকায় লিখে চলেছেন তিনি। স্বভাবে লাজুক এই কবি ভ্রমণ
প্রিয়। অত্যন্ত বিপন্ন সময়ের মধ্যে দিয়ে আমরা চলছি। মানবিকবোধগুলো আজ
হারিয়ে যেতে বসেছে সবার। কবির মননে দাগ কেটে যায় এই ভাবনাগুলো। তাই
খুরশিদ লিখতে পারেন "প্রতিটি স্বপ্ন ভঙ্গের ভেতরেও থাকে / এক একটি
স্বপ্নের বসবাস।" কতটা বোধ আর জহুরীর চোখ থাকলে এতটা গভীরে ডুব দিয়ে
কবিতার মণিমানিক্য তুলে আনা যায় অতল সাগর থেকে।

কবির মননে বারবার আঘাত হেনেছে স্বপ্ন। খুরশিদের পরিনত লেখা পাঠকের দৃষ্টি
আকর্ষণ করে আর আগামীতেও করবে। সামনের দিনগুলোতে খুরশিদের আরও সম্ভাবনাময়
জীবন আশা রাখছি। কবি এগিয়ে চলুক তাঁর স্বপ্ন নিয়ে। সূর্যাস্তের সময় যে
সারা দিনের আশা আকাঙ্খা ডুবে যায়না, তারই প্রতিফলন ফুটে উঠেছে খুরশিদের
লেখায়। " সংখ্যা অথবা সংখ্যার অনুপাত/ সূর্যাস্ত বলতে ডুবে যাওয়া নয়। "

কবি মিহির দে


কবিতা আমাদের অক্সিজেন যোগায়। কবিতার আকাশে কবি মুক্তির আনন্দ খুঁজে পায়।
দিন শেষে মনের জানালা খুলে দিয়ে কবিতাতেই সমর্পিত হই আমরা। এমনই এক
সমর্পিত কবি হলো আলিপুরদুয়ারের প্রথম দশকের কবি মিহির দে। ২০০৮ এর
পরবর্তী সময়ে লিখতে আসা মিহিরের ভালো লাগা ঘুরে বেড়ানো। অজানা অচেনা ছবি
তোলা, ছিপ দিয়ে মাছ শিকার করা তার ভীষন ভালো লাগার বিষয়। ২০১১ সাল থেকে
কবি মিহির দে "কবিকুঞ্জ" নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেন। এ ছাড়াও "
হিরণ্যগর্ভ " নামে অনলাইন পত্রিকার চরৈবেতির সম্পাদক।
কবিতা যাকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নতুন পথ দেখায় তিনিই লিখতে পারেন  -"
শ্মশান ছুঁয়ে যে নদী / তারও একটা নীরবতা আছে।" কি কঠিন বাস্তব অথচ করুন
আর্তি ফুটে উঠেছে তার লেখায়। অথবা " ছড়ানো কড়ির ভেতর / জেগে ওঠে আমাদের
সংসার।"  সামাজিক এবং একান্তই ব্যক্তিগত জীবনের প্রতিফলন এই লেখাতে পাওয়া
যায়। বিভিন্ন পত্রিকায় লেখালেখি করেছেন কবি। অত্যন্ত হৃদয় দিয়ে তিনি
লেখেন।একটা নিস্তব্ধ পুকুরে ঢিল পড়লে যেমন চক্রাকারে একটি আলোড়ন ওঠে
তেমনই  আলোড়ন ওঠে মিহিরের কবিতা পড়ে।

কবির বেঁচে থাকার রসদ থাকে কবিতার মাঝেই।প্রকৃতির আলো, হাওয়ার টানে
বেরিয়ে পড়েন ডুয়ার্সের সবুজ বনাঞ্চলে।খুঁজে পান পানবাড়ির কাঠবাড়ি।" কতদিন
যাইনি পানবাড়ির কাঠবাড়িতে/ যেখানে রোদ্দুর হেলান দিয়ে থাকে বাঁশের
মাচায়"। কবির দেখার চোখ অসাধারণ!  রোদ্দুরকে তিনি হেলান দিয়ে থাকতে
দেখেছেন। অত্যন্ত গভীরে ডুব দিয়ে তিনি শব্দকে মিশ্রিত করেন কবিতার
সমীকরণে। নীরবে কবিতার সাধনা করে চলেছেন মিহির। স্বভাবে বিনয়ী এই তরুন
কবির লেখাতে একটা স্বচ্ছতা, স্বাতন্ত্রতা আছে।কবিতার মিছিলে তাঁর লেখাটি
নজর কাড়ার মতোই। "বুনো মহিষের পালে নিজেকে জড়াতে পারিনা/ মিশে যাই হরিণের
দলে।"
অসম্ভব দক্ষতায় নিজের মননকে মিশিয়ে দিতে পারে প্রকৃতির ফুল, ঘুঘুর ডাক,
পিঁপড়ের  অস্তিত্বে।কবির ভাবনায় কারো অভিযোগ নেই জেনেও বৃষ্টি নামে।"
বেলে মাছ ধরা ছেলেটির কোন অভিযোগ নেই/ এ কথা জেনেও বিকেলের হাটে বৃষ্টি
নেমে আসে।"  দুর্দান্ত এক পারদে নিয়ে গেছেন কবির কবিতা। বাংলা সাহিত্যে
কবি মিহির দে নিজের দক্ষতা প্রমান করে চলেছেন তাঁর কবিতার মাধ্যমে। আমরা
পাঠকেরা তাঁর লেখা কবিতার সফলতা আশা করছি  প্রতি মুহূর্তে।

কবি জাকির হোসেন স্মৃতিজিৎ

ঈশ্বরের আশীর্বাদ থাকে কবির ওপরে। "যার দুঃখ সইবার ক্ষমতা থাকে তাকেই
ঈশ্বর দুঃখ দেন। আর যিনি কবি বা লেখক তাঁর দুঃখ, হতাশা থাকবেনা এমনটা
কখনই নয়। তাহলে যন্ত্রনা, কষ্ট কি ঈশ্বরের আশীর্বাদ কবির কাছে!"  না এর
কোন ব্যাখ্যা আমাদের জানা নেই। যেমনটা জানা নেই কবি কখন ঠিক কি ভেবে
কবিতা লেখেন। কিন্তু জাকির হোসেন স্মৃতিজিৎ মনে করেন "সকলের মাঝে গিয়ে
বহু হতে চেয়েই কবিতা লেখা।"  শূন্য দশকের কবি জাকির হোসেন স্মৃতিজিৎ
ইদানীং প্রায় সব পত্রিকায় লিখছেন " স্মৃতিজিৎ" নামে। কোচবিহার জেলার
খোচাবাড়ি গ্রামে কবির জন্ম ও বেড়ে ওঠা। ছাত্র জীবন থেকে লেখার প্রতি
অনুরক্ত ছিলেন। লেখার পাশাপাশি তিনি ছবি আঁকতে এবং গান গাইতে ভালোবাসেন।
এ ছাড়াও কয়েকটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের চিত্রনাট্য রচনা করেছেন এবং তাতে অভিনয়
করেছেন। শব্দের নৈবেদ্য সাজাতে তিনি ভালোবাসেন।
সত্যিই কবিতা আমাদের কাছে ঈশ্বর। অক্ষরের উপাচারে নিজস্ব অনুভূতির
উদযাপনেই তিনি লিখে  যান একান্ত চেতনা। "এখনও দূরত্ব বেঁচে আছে বলে
দিলখোলা আকাশটা / নীল খামে পাঠায় সন্দেশ"। জাকিরের কবিতায় আলাদা একটা
মাত্রা আছে। কবি তাঁর বাঁচার স্বার্থকতা খুঁজে পায় কবিতার নির্মাণ করে।
স্বার্থকতা, ব্যর্থতা, হতাশা সবকিছুরই বোধ ও ক্ষরণ আছে। সেই প্রকাশেই কবি
বুঁদ হয়ে থেকে সৃষ্টি করেন কবিতার অন্তরীপ।" চলো মেখে নিই ঘাসের আদর,
অন্তরীপ ঢেউ/ নীলকণ্ঠ পাখির ঠোঁটের উদার আকাশের গান"।
এরই মাঝে কবির প্রচেষ্টায় প্রকাশিত হয়েছে তিনটি কাব্যগ্রন্থ- "নাম রেখেছি
অন্বেষা", " আমার ঈশ্বর ও মাকড়শা", "যে আকাশ আঁকতে চেয়ে"। আরো দুটি
কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের অপেক্ষায়। শব্দের মিছিলে কবি হেঁটে চলেছেন তার
নিজস্ব কষ্ট আর আনন্দ নিয়ে। কবি লিখে যান, "একদিন কলম ধরা হয়নি/ মন
মস্তিস্ক আর কলম... / তিনটেকেই কেমন যেন ভোঁতা মনে হয় আজকাল।" কবির জীবনে
মাঝে মধ্যেই হতাশার মেঘ এসে ভীড় করে। নিজের অস্তিত্বকে তখন দুর্বল মনে
হয়। তবে ক্ষণিকের  এই মেঘ বাদলে আবার নতুন সূর্য এসে আলোয় ভরিয়ে দেয় এক
কবির জীবন।

জাকির হোসেন অসম্ভব উষ্ণতার মোড়কে কবিতাকে সাজিয়েছেন। "ঘরের লীনতাপ শুষে
বিহ্বল জর্জর / হৃদয় বোঝে তাই বন্ধুত্বের উষ্ণখোলা হাত।" এই উষ্ণ হাতেই
কবি পেয়েছেন  "নীতীশ দত্ত স্মৃতি পুরস্কার" আল্পনার স্মৃতি পুরস্কার" এবং
একলব্য স্মারক"। কবি লিখতে থাকুন তাঁর শব্দাবলী। দীর্ঘ এই কবিতার ভ্রমণে
স্মৃতিজিৎ তার লক্ষ্যে পৌঁছাক। তার একনিষ্ঠ পাঠকেরা অপেক্ষা করে থাকবে
আগামী সৃষ্টির জন্য।

নীলাদ্রি দেব

 পরিবারের তরুণতম স্বর... আগামী ও অক্সিজেন.

নীলাদ্রি দেব



বাংলা কবিতা একটা আস্ত পরিবার. একটা অনন্ত জার্নি. সীমাহীন কোন পথ. পথের ধারে পেভার্স ব্লকের উপর দাঁড়িয়ে প্রায় সামনে থেকে পথটিকে ছুঁয়ে দেখলে যা কিছু অনুভব হয়, তার ওপর কতটাই বা মন্তব্য করা যায়. শুধু জড়িয়ে ধরাই এক ও একমাত্র পথ বলে মনে হয়. তাই কবিতার কাছে বারবার নত হই. যে সমৃদ্ধ ইতিহাস আমাদের বাংলা কবিতার, সেখানে নতুন কী আসছে বা এল, সে নিয়ে ভাবা যেতে পারে. যদিও নতুন সংযোজন বলেও কি কিছু হয়? যা বলা হয়েছে, তাই খানিকটা নতুন মোড়কে উঠে আসে সময়ের স্রোতে. সৃষ্টি যদিও এক রহস্যময় কুয়াশার নাম. এই সৃষ্টি চলছে. কবিতার পথ প্রশস্ত হচ্ছে. বদল ঘটছে চারপাশের, কবিতা যাপন ও উদযাপনের. আলোর তীব্রতা জোরালো হচ্ছে. এর মধ্যেও সাধক সাধনা করছেন. স্পটলাইটের নিচে মাছ বিক্রি হচ্ছে. হাই মাস্ট বাতির নিচে কলাপাতায় বিতরণ চলছে শিন্নি. এত এত শ্বাস, বিশ্বাসের পরও ভূগোলের বেড়া ভেঙে তরুণ প্রজন্ম সিরিয়াস কবিতার সাথে পরিচিত হচ্ছেন, জড়িয়ে যাচ্ছেন. প্রযুক্তি ও সামাজিক মাধ্যম এই ভূগোলের বেড়া ভাঙতে এতটা কার্যকর হতে পারে, বছর পনেরো বা কুড়ি আগেও তা ভাবা সম্ভব হয়নি. যা হোক, সময়ের সাথে সাথে এগুলো আমাদেরই প্রাপ্তি. যদিও ভূগোল ভেঙেছে, তবু পুরোনো অভ্যেস ভাঙা শক্ত ও সময়সাপেক্ষ. এখনও, কেন্দ্র বা প্রান্ত না থাকলেও, কোথাও একটা থেকেই গেছে এর ছাপ ও ছায়া. কলাগাছের শেকড়েরই মতো. 

না. স্বীকৃতি একটি কঠিন অঙ্ক. এ বিষয়টি তোলা থাক. কাজ নিয়ে কিছু কথা হোক. প্রান্তিক অঞ্চলে বসে কাজ করা তরুণ প্রজন্ম নিয়ে কথা হোক. যারা শুধুই পাঠক চান, পোডিয়াম নয়. এমনই কয়েকজন নন, বেশ কয়েকজন ছড়িয়ে আছেন উত্তরের বিভিন্ন জেলায়, জনপদে. কোচবিহারেও. তাঁদের থেকে চার কবির কবিতা যাপনের খানিকটা অংশ আপনাদের সামনে তুলে ধরছি. একটি কবিতা, বা তা প্রসঙ্গে সামান্য কথায় কবিকে চেনা যাবে না, তবে খানিকটা আগ্রহ তৈরি হলেই ওঁদের কবিতার পাঠক হিসেবে আমার ভাল লাগবে. 


•• 

ঝুমঝুমি


তোমার আমার মধ্যে মাঝে মাঝে তুমুল ঝগড়া হোক। মুখ গুঁজে কাঁদতে থাকো। বালিশের ঘন অন্ধকারে বেজে উঠুক দীর্ঘপ্রেমের ঝুমঝুমি। অপেক্ষার একটা শব্দ আছে । যাক না ভেস্তে বাইরে ডিনার করার পুরোনো প্ল্যান। আমার মনের কথা বলেই ফেললে। চলো শান্তিপুর ঘুরে আসি। সম্পর্ক খতিয়ে দেখলে বুঝতে পারি প্রেমে কোনো প্রশ্নচিহ্ন থাকতে পারে না। কোনো ভলান্টিয়ার বাতাসে শান্ত হয় না প্রেমের মন্দাক্রান্তা ছন্দ।


খোকন বর্মন. ওপরের এমন উচ্চারণ খোকনের. সদ্য কুড়ির এই যুবকের. কোচবিহারের এক প্রান্তিক অঞ্চলে বসেও খোকন বাংলা কবিতার মায়াভুবনে এমন অক্ষরের চাষ করছেন. কবিতার কাছে সবসময় সৎ এই কবিতাপাগল শুধু সম্ভাবনাময় নয়, পরিশ্রমীও. লেখা ও পড়ার ভেতরে ডুবে থেকে খোকন দীর্ঘ এক আশাবাদ লিখে রাখছেন. আমরা তাকিয়ে থাকব ওঁর সুন্দর আগামীর দিকে. 


•• 

অস্ত ও জন্মের কথা


আপাতকালীন বৃষ্টির পর রোদ উঠলে জীবনের গন্ধ পাই

অনিশ্চিত পথে এলোমেলো হাঁটতে হাঁটতে পিছু ফিরি 

অনেকটা পিছিয়ে এসে গুনতে শুরু করি ভুল-মেদ-ক্ষমা-কান্না 

মিথ্যে মুহুর্তের কাছে যেদিন আত্মসমর্পণের গল্প-বিচ্ছেদ... 

গন্ডি কেটে রাখি মননের চারদিকে; ভবিষ্যতের কথা বলা বারন। 


প্রতিটি মুহুর্তেই আমরা এগিয়ে যাই অনিয়ন্ত্রিত 

কাটাকুটির দিকে 

দাগ কেটে কেটে এগিয়ে যেতে গেলে হিসেবে ভুল হয়, 

গাছেদের মতো মা হতে চাই না আপাতত, এখন আমায় সন্তান হতে দাও; 

অনিশ্চয়তা আসলে একধরনের অসুখ... যা মৃত্যুর পরেও ঘুরপাক খায়। 


প্রতি মুহূর্ত একেকটি জন্মদিন... প্রতিটি সূর্যোদয়েই লেখা থাকে সূর্যাস্তের কথা...


নাদিরা আহমেদ মুক্তি লিখেছেন ওপরের এই কবিতাটি. দিনহাটায় বসে লিখছেন নাদিরা. বাংলা কবিতার সাম্প্রতিকতম এই সংযোজন লিখে রাখছেন সহজ জীবনের কথা. এই কথার ভেতর থেকে যাচ্ছে সংকেত, মায়াময়তা. অকারণে জটিল না করে তুলে এমন এক উচ্চারণ করছেন, যেখানে স্মার্টনেস থেকে অনেক বড় আন্তরিক স্পর্শ. ওঁর সুন্দর আগামীর পথে আমরাও পথিক বন্ধু হয়ে ওঁর পাশে থাকব. 


••

সম্পর্ক

তিন


দ্রুত সরে যাচ্ছে চাঁদ

রাত থেকে নামিয়ে আনছি স্বপ্ন

তারাদের দেশে ঘুমিয়ে আছে 

নাম না দেওয়া সম্পর্ক।


উনুন ধরাও, কারফিউতে বিলি করো খিচুড়ি

ভিখারীকে দাও দু ফোটা জল

মদ ঢেলে দাও বড়বাবুর গ্লাসে


উন্নতি লুকিয়ে রাখো 

তোমার দুটো অসম স্তনের মাঝে।


সম্পর্কে জল দাও

মিথ্যে থেকে বেরিয়ে এসে...


সপ্তর্ষি বনিক কোচবিহারে বসে বাংলা কবিতা লিখছেন. সময়ের কথা সময়ের ভাষ্যে বলছেন সপ্তর্ষি. স্মার্ট অথচ সজীব, প্রাণবন্ত কথোপকথনের ছলে পাঠকের সাথে কথা বলছেন তিনি. কী এক ঘোর বিছিয়ে ধরেন এই যুবক কবিতার অক্ষরে অক্ষরে. আসলে তরুণতমরাই পারেন গতিপথ তৈরি করতে. সপ্তর্ষির আগামী সুন্দর থেকে আরও সুন্দর হয়ে উঠুক. 


••

কবিতা 


রাত্রি গভীর হলে পাখিদের কান্না পায়

গভীর ঘুম থেকে স্ত্রী কে তুলে দিয়ে তার নরম পালকের নীচে সে ঘুমায় 

গোপনে সে কাঁদে


একটু একটু করে ক্ষয়ে আসছে জীবন

ঘর, বাড়ি, আঙিনা জুড়ে গভীর বিষাদেরা নোঙর ফেলেছে

গোপনে তার কান্না পায়...


প্রতিটি মানুষের ভিতর কেউ কেউ অসহায় বাস করে

তোমার ভিতর আমি

কিংবা আমার ভেতর পাখি

যারা গাছ-পাতা-জল না পেয়ে পেয়ে অজান্তে 

একটু 

একটু 

করে

ক্ষয়ে যায়, ঝড়ে যায় রোজ...


অভ্রদীপ বসু. সে অর্থে কনিষ্ঠতম অভ্র. ওঁর লেখার আলপথ সবে তৈরি হচ্ছে. আর এর মধ্যেই স্বতন্ত্র এক ভাষা. উচ্চারণ. যেন বাস্তব, কল্পনা মিলে মিশে এক হয়ে উঠছে. ভনিতা নেই, মাছ ঢেকে রাখবার শাক নেই. স্পষ্ট. আনকাট. দিনহাটায় বসে অদ্ভুত এক কবিতাভুবন গড়ে তুলছেন নিজেরই অক্ষরে. আসলে ওঁরাই আমাদের প্রাপ্তি. 


মূলত 2015 পরবর্তী সময়ে এসেও ধারাবাহিকতা, সংযম, আগ্রহ ও ইচ্ছেশক্তি দিয়ে ওঁরা বাংলা কবিতা পরিবারকে সমৃদ্ধ করে যাচ্ছেন. এসব অক্ষর, উচ্চারণ সমসাময়িক তরুণ কবিদের থেকে পেয়ে সাধারণ পাঠক হিসেবে আমি, আমরাও শিখছি. যদিও এ চারজনই নয়. আরও অসংখ্য কলম উঠে এসেছে. আসছে. 


স্বাগত নতুন. 


বিকাশ দাস বিল্টু, রাজিব পাল, মানিক রায়, সুলগ্না বাগচী, আরণ্যক চক্রবর্তী, তুলী চক্রবর্তী, সৌরদীপ বর্ধন, দুর্গেশ বর্মন, রাহুল ঘোষ, নিশীথ কুমার সেন, মাসুদ হাসান, অমিত বিশ্বাস থেকে হিমাদ্রী শেখর... এমন সম্ভাবনাময় অনেক কবিই সেই জার্নির অক্সিজেন. 


তাই আরও একবার বলতে ইচ্ছে হয়, জয় হোক. জয় হোক কবিতার. বন্ধুতার. বৃহত্তর কবিতা পরিবারের.