Friday, November 20, 2020

 ঝুরোগল্প

কাজল সেন


গোঁয়ারগোবিন্দ


গোঁয়ারগোবিন্দ একেই বলে। একবার রোখ চাপলেই হলো, সেটা শেষ না করা পর্যন্ত কোনো ছাড়ান নেই। হ্যাঁ, তোতনের এটাই একমাত্র দোষ। সেই যে প্লাশ-টুয়ের  সিবিএসসি বোর্ড পরীক্ষায় যে কান্ডটা করল! কয়েকটা ম্যাথ সল্ভ করার  পর একটা ইন্ট্রিগাল ক্যালকুলাসের সাম কিছুতেই সল্ভ করতে পারছিল না। ব্যাস রোখ চেপে বসল। সল্ভ তাকে করতেই হবে। এদিকে আরও কয়েকটা অঙ্ক তখনও সমাধান করা বাকি। খুবই সহজ প্রশ্ন। অনায়াসে করে ফেলতে পারে। কিন্তু করবে না। যেটার সমাধান করা যাচ্ছে না সেটা নিয়েই তার কুস্তি। কেন হবে না? হতেই হবে! আরে বাবা, এদিকে যে পরীক্ষার সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে! অন্য যেগুলো করা যাবে, সেগুলো আগে করে নে! না, তা হবে না। ওগুলো তো চুটকি মেরে হয়ে যাবে। কিন্তু এটা কেন হচ্ছে না? বাকি সময়টা তোতন লড়ে গেল সেই ইন্ট্রিগাল ক্যালকুলাসের সঙ্গে। তোতনের মা বাবা অসহায় কন্ঠস্বরে বললেন, বলুন তো, এই ছেলেকে নিয়ে আমরা কী করি? অঙ্কের পরীক্ষাটাই চটকে দিল! 

ঠিক একই কান্ড কলেজেও। সহপাঠী একদঙ্গল মেয়ের মধ্যে আচমকাই তার ভালো লেগে গেল ঝিমাকে। ঝিমা খুবই অ্যাভারেজ মেয়ে। শরীরে ও পড়াশোনায়। তবে খুব সাংস্কৃতিক মানসিকতার। নাচ ও গান দুটোই শিখছে। ভালো আবৃত্তি করতে পারে। পারিবারিক আবহাওয়া নিতান্তই রক্ষণশীল। কলেজেই শুধুমাত্র ছেলেবন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা করে। ঘরের কেউ তা জানে না, পছন্দও করে না।  এমনই এক মেয়ের প্রেমে পড়ে গেল তোতন। সরাসরি ঝিমাকে জানালো  তার মনের কথা। বেচারি ঝিমা! সে আর কী করে! প্রস্তাবে সাড়া দিতে মনের কলকব্জাগুলো ছটপট করে, অথচ ঘরের কথা চিন্তা করলে মনটা দমে যায়। তোতন ঝিমাকে বোঝায়, তাড়াহুড়ো করার দরকার নেই, তুই ভালো করে ভেবে দেখ। তারপর যদি রাজী থাকিস, আমাকে জানাস। ব্যাস সেই থেকে শুরু হলো তোতনের প্রতীক্ষার প্রহর গোণা। চারিদিকে অসংখ্য মেয়ে প্রজাপতির মতো উড়ে বেড়াচ্ছে, অথচ তোতন সেদিকে তাকিয়েও উদাসীন থাকে। কিছু মেয়ে তাকে নাড়া দিতে চাইলেও সে নড়ে না। ঝিমি কবে ভেবে তাকে হ্যাঁ বা না জানাবে, তার আগে অন্য কোনো মেয়েকে তার ভাবনায় এন্ট্রি দিতে সে নিতান্তই গররাজী। এদিকে ঝিমাও কোনো সিদ্ধান্ত নেবার মতো অবস্থায় নেই। এর আগে কোনো ছেলে তাকে প্রপোজ করেনি। তোতনই তার হৃৎপিণ্ডে প্রথম এমন টেনশন ইনজেক্ট করেছে। মা বাবা দাদারা এসব জানতে পারলে হয়তো ঝিমাকেই কেটেকুটে গরমমশলা দিয়ে ঝোল বা ঝাল বানিয়ে দেবে।

কিন্তু তোতনকে এসব বোঝায় কে? তিন তিনবার সে তার ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র বসের সঙ্গে লড়ে গেল প্রোডাকশন শপের কোনো একটা মেকানিক্যাল গন্ডগোল  নিয়ে। তোতন নাছোড়, বসকে সে কনভিন্সড করেই ছাড়বে যে, বস সমস্যাটা আসলে কিছুই বোঝেনি।

তবে তোতন তার বেস্ট পারফর্মেন্স দেখালো বিয়ের আগে। ভাবী শ্বশুরকে বলল,   মিতাকে আমি বিয়ে করব, কিন্তু মিতা অঙ্কে নেহাৎ কাঁচা। আগে আমার কাছে  রেগুলার ক্লাস করে পাশ করুক। তারপর উলু-উলু…   

No comments:

Post a Comment