কোচবিহার জেলার শূন্য পরবর্তী দশক
১.
রহস্য বিধবা
পীযুষ সরকার
টানা আটমাস খুব সন্তর্পণে খুন হলাম আমি । মরদেহে সামান্য মাটি বা আগুন দিল না কেউ । দিন তিনেক অশৌচ না , দুবেলা হবিস না ! আমার অতৃপ্ত আত্মা এখন ফনীর মতো উড়ে বেড়ায় । নিজের ঘর নিজে ভাঙে , নিজের গাছ উপরে ফেলে নিজের ভবিতব্যে । পরিবারের চোখে জল । ঈশ্বরের কপালে ভাঁজ । মৃত্যুর পর এই জীবদ্দশা ,এই অস্থিরতা অলক্ষুণে বৈকি !
ময়নাতদন্ত শেষ । হতোদ্যম পুলিশ কুকুর ।
কী শাস্তি ? কী বিধান ? এ ক্ষতির দায় নেবে কে বা ?
খুনিও কাছের লোক ..
নিষ্পাপ । প্রণয়ী । রহস্য বিধবা..
** পরিচয়- কোচবিহার জেলার প্রান্তিক গ্রাম দ্বিতীয় খন্ড বাঁশরাজায় ১৯৮৭ সালের ১৯শে সেপ্টেম্বর জন্ম পীযূষ সরকারের। ইংরেজী ভাষা-সাহিত্যে স্নাতকোত্তর শেষে এখন পেশায় স্কুল শিক্ষক। প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ- 'সুতরাং শিস্ দিলাম'(২০১০, উত্তরের মুখ), দ্বিতীয় প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ- 'ভাঙা মানুষের রিংটোন'(২০১৬,লাইটহাউস), তৃতীয় প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ-'আমাছামা চান'(২০১৬, রাজবংশী ভাষা একাডেমি)। তার অবিমিশ্র যাদুকলমে উঠে আসে সহজাত ও আবাল্য লালিত গ্রামীণ লোকসংস্কৃতি এবং রাজবংশী জীবন চর্চার নানা অনুসঙ্গ; উঠে আসে আত্মবীক্ষণ ও আত্মব্যবচ্ছেদের মর্মভেদী ভাষা। গান লেখা, সুর করা, গান গাওয়ার পাশাপাশি কবির শখ দোতারা, সারিন্দা, ব্যানা, উকুলেলে, গীটার এবং অভাব বাজানো।
••
পরিচয় গাছ
নিশীথ কুমার সেন
কতবার ঘড়ির কাঁটা এসে দাঁড়িয়েছে
রঙিন দেয়ালে
রক্ত লুকিয়ে পেরেক হয়েছি
সময় আটকে গেছে
বুঝতে পারোনি
শালবাগানের মর্মর পাতার নীচে
যে স্বপ্নগুলো পুঁতে দিয়ে গেছো
সেগুলো গর্ভবতী হয়ে গেছে আজ
দুদিন বাদে যখন
দুহাত মেলে গাছ হয়ে জন্মাবে
কোল বাড়িয়ে অক্সিজেন নাম দিয়ে যেও
আমি শেকড় হয়ে মাটি মাটি কামড়ে থাকব
প্রমিস
কেউ বুঝতে পারবে না
** পরিচয়- নিশীথকুমার সেন । জন্ম ১০ মে ১৯৯৫; কোচবিহার জেলার বামনহাটে । পিতা- নগেন সেন, মা- শোভারানী সেন ।
পেশা- অতিথি শিক্ষক
বই- "মেঘ ও বৃষ্টি" (কবিতা ২০১৮), বামনহাট দর্পন (প্রবন্ধ ২০১৭)
পত্রিকা - অন্বেষণ মাসিক ব্লগজিন.
••
ময়দান
দীপায়ন পাঠক
অচেনা নয় লাশের গন্ধ
এই মৃত্যুপুরীতে
ধ্বজা পুরে গেছে সেই কবেই
ধোঁয়ার মতো কিছু কুয়াশা
যুদ্ধের ময়দানে লাখো
অদৃশ্য যোদ্ধা
তবু শক্ত করে ধরে রেখেছি হাতের অস্ত্র
** পরিচিতি- দীপায়ন পাঠকের জন্ম 22 এ নভেম্বর কোচবিহারে। সংস্কৃতিক জগতের পরিচিত মুখ। ছোটবেলা থেকেই নাটকের সাথে জড়িত। রয়েছে নিজস্ব নাট্যদল। পরিবেশপ্রেমী। জঙ্গল ও লোকজীবনের সাথে রয়েছে নিবিড় যোগাযোগ। এছাড়াও নিয়মিত প্রবন্ধ, গল্প লেখেন।দেশের বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিনের পাশাপাশি বহুল প্রচারিত বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় লেখেন। ছবি তোলা তাঁর অত্যন্ত প্রিয় শখ। বইপোকাও বটে। প্রথম কবিতাবই 'মরফিন'। দ্বিতীয় কবিতাবই 'ব্ল্যাকহোল' । বিরক্তিকর পত্রিকার সম্পাদনার সাথে যুক্ত ।
দীপায়ন পাঠক
দক্ষিণ খাগড়াবাড়ী
শিলিগুড়ি রোড
কোচবিহার - 736101
ফোন - 9614383949
ই মেইল - deep.cob007@gmail.com
••
# নেপথ্যচিত্র
সৈকত সেন
-----------------------------------
কোন একদিন মধ্যরাতে একটি প্রবল জলোচ্ছ্বাস
ঢুকেছিল আমার ঘরে।
ঘরের গুছোনো আসবাব,দীর্ঘ স্মৃতি
বেদনাচিহ্নিত জ্যোৎস্নারেখা সবকিছু কেমন
ওলটপালট করে দিয়ে গেছে।
চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেছে যাপন কথা, জারজ ভাগ্য।
ভেসে যেতে দেখেছি আমার
জটিল চাওয়া পাওয়া লিপিবদ্ধ
বাদামি হিসেবের খাতা।
আমার টুকরো টুকরো ইচ্ছে
আমার স্বপ্নমলিন চাঁদফালি
আমার নিসঙ্গ গানের সুর
জলের তোড়ে ভেসে গেছে সব।
আমি শুধু বাঁচার জন্য সম্ভাবনাময় কিছু
খড়কুটো আঁকড়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম,
এখনো আছি।
দূরে তোমার ঘরে আলো দেখে ভাবি
একদিন আমার এই বিপর্যস্ত কুটিরের গায়ে
হয়তো আবার জ্যোৎস্না পড়বে,
রমণীয় হয়ে উঠবে
আমার দীর্ঘ প্রতীক্ষা।
এখন শূন্যতাই কাম্য
তুমি-আমি-আমাদের গৃহধর্ম
সবকিছু অর্থহীন,নিরাসক্ত।
পড়ে আছে যে অবশেষ,
তার জন্য অপেক্ষমাণ সময়-জল-মাটি
ততদিন নেপথ্যে যত যাপনলিপিচিত্র
অলৌকিক বর্ণময় হয়ে উঠুক।
** পরিচয়- সৈকত সেন. জন্ম- কোচবিহার সত্তরের দশক। একাদশ শ্রেণী থেকেই স্কুল ম্যাগাজিন ও ওয়াল পত্রিকার দায়িত্ব সামলানো। পরে বিভিন্ন ক্ষুদ্র পত্রপত্রিকার সঙ্গে যুক্ত। তারপর গল্প, অনুগল্প, কবিতা নিয়ে লেখার জগতে পা রাখা। নিয়মিত বিভিন্ন ম্যাগাজিনে কবিতা লেখা।
2018 থেকে তোর্সা সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদনার কাজ করে আসা। বর্তমানে নিজস্ব একটি ম্যাগাজিন "কথালহরীতে" যুগ্ম সম্পাদনায় নিযুক্ত।
••
আমার ধানগাছ
বিকাশ দাস (বিল্টু)
আমার বুকের ভিতরের
ধানগাছটি প্রতিদিন বড় হয়
অথচ এই বাড়ন্ত সবুজ সতেজতার
ভিতর আর্তনাদ করে 'মৃত্যবান'
মৃত্যু খুব কাছে জেনেও
ক্যামন হাওয়ায় দোলে
আমার সেই ধানগাছ
উদ্বাস্তু
বুকে জমানো পাথর এর শেল
'শিকল ভাঙার গান' গেয়ে
উড়ে যেতে চায় পাখির বেশে
মুক্ত আকাশে
আমার
সম্মুখে প্রাচীর। পিছনে প্রাচীর
বন্দীদশায় গরাদের সেলে
একা আমি সাঁতার কাটি
নিজের সাথে
দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে
পৃথিবী বুঝি এভাবেই
উদ্বাস্তু হয়ে ওঠে
** পরিচিতি- সোনার চামচ নয়, অনেকটাই বেতের চামচ নিয়েই জন্মগ্রহণ করা ০৩ রা এপ্রিল, ১৯৯৪। পিতা স্বর্গীয় নরেশ চন্দ্র দাস, মাতা প্রিয়াবালা দেবী। অভাবের সংসার। ৫ ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট।
পিতা বাংলাদেশ এর ময়মনসিংহ জেলা থেকে রায়ট এর সময় শরণার্থী হয়ে কোচবিহার জেলার এক অজ পাড়া-গাঁ তথা বোচাগাড়িতে নতুন আবাস গড়েন। সেখানেই বেড়ে ওঠা। পড়াশোনা। পড়াশোনায় মেধাবী থাকা সত্তেও নিত্য অভাব অনটনের জন্য ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হয়েও, অভিমানে ইংরেজিতে স্নাতক। এই অভিমান থেকেই লেখায় হাতে খড়ি। এরপরে কিছু প্রিয়জনদের মৃত্যু লেখার প্রতি ঝোঁক বাড়িয়ে তোলে। বর্তমানে গৃহ শিক্ষকতার সাথে যুক্ত। ২০১৪ থেকে লিখতে আসা। তবে এর পূর্ণতা পায় ২০১৬ তে। এখন কবিতায় যাপন, কবিতায় জীবন পাওয়া। অতীতকে ভুলে ,নতুন করে বাঁচতে শেখা। মাটির ঘ্রাণে সব খুঁজে পাওয়া। বাতাসে ,নদীতে নিজের জীবনকে পাওয়া।
এর মাঝেই সম্পাদনা করে চলা 'আল্পনার কবিতা'(২০১৮)। এভাবেই এগিয়ে চলছে গুণীজনদের সান্নিধ্যে সবার ভালোবাসার সে পত্রিকা। আত্মপ্রকাশ সংখ্যায় সবার সান্নিধ্য পাওয়া(২০১৯,২৪শে অক্টোবর)।
যদিও হুজুগের বসে প্রথম বই করা। এখন বড্ড অনুশোচনা হয়। সময় নেওয়া উচিত ছিল। যাইহোক প্রথম বই এর নাম:'বিরহী প্রেমের ঝংকার(২০১৯)'। এর পরের বই কবে হবে জানা নেই। তবে দাগ কাটার মতো কিছু করার ইচ্ছে। কবিতায় ডুবে কবিতার রসদ নেওয়ার পরেই সে সিদ্ধান্ত।
••
রামধনু
সুজয় নিয়োগী
নদীর ধারে হঠাৎ রামধনুর সাথে দেখা,
আকাশটাকে সাতরঙা করে
গন্ডি কেটে বসে আছে।
বেশ লাগছিল,
ও চলে যাবার আগে জানতে চাইলাম
আচ্ছা ক্ষনিকের জন্য
এই রঙ দেখিয়ে কি লাভ?
আসলে তো তুমি সাদা, তাই না?
হেসে বলল- আসলে মাঝে মাঝে
আমি জানান দিয়ে যাই----
সাদা বলে যাকে চেনো বা জানো
তা আসলে সাদা নয়,
ওই সাদার আড়ালে কত কত রঙ
লুকিয়ে থাকে তা যদি জানতে!
** পরিচয়- সুজয় নিয়োগী. ছোটবেলা কেটেছে জলপাইগুড়ি জেলার বেলাকোবায়।
জলপাইগুড়ির আনন্দ চন্দ্র কমার্স কলেজ থেকে বানিজ্যে স্নাতক।
পরবর্তীতে কোচবিহার নিজের শহরে পরিনত হয়।
স্কুল ম্যাগাজিন দিয়ে হাতেখড়ি।
পরবর্তীতে কবিতা-ছড়ার টানে লেখালেখির চেষ্টা, মূলত প্রথম দশকে
বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ছড়া ও কবিতার প্রকাশ।
••
ভাওইয়া
খোকন বর্মন
মাঠ থেকে ফেরার পথে রোজ আমার দিকে আড়চোখে তাকাত।শরীরে কাঁদা দেখে গা ঘিন ঘিন করার মতো মেয়ে সে নয়। কিছুদূর এগিয়ে ভাবতাম তার চোখে মরুভূমির বালাই নেই একটা শান্ত নদী দীর্ঘদিন ধরে কি যেন খুঁজে চলেছে। আমার হাতে তখন বিষণ্নতার দোতারা, মেয়েটির সারা শরীর জুড়ে ভাওইয়ার তীব্র গন্ধ।
** পরিচয়- খোকন বর্মন , জন্ম 2.12.1998 এ বলরামপুরের চেকাডারা গ্রামে
মাতা যোগমায়া বর্মন পিতা কমলাকান্ত বর্মন। বলরামপুর উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা এরপর স্কুল ব্রজেন্দ্রানাথ শীল মহাবিদ্যালয় থেকে বাংলা নিয়ে বি এ কমপ্লিট করে এখন কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে এম এ পড়ছি।
••
সম্পর্ক
সপ্তর্ষি বনিক
তিন
দ্রুত সরে যাচ্ছে চাঁদ
রাত থেকে নামিয়ে আনছি স্বপ্ন
তারাদের দেশে ঘুমিয়ে আছে
নাম না দেওয়া সম্পর্ক।
উনুন ধরাও, কারফিউ তে বিলি করো খিচুড়ি
ভিখারীকে দাও দু ফোটা জল
মদ ঢেলে দাও বড়বাবুর গ্লাসে
উন্নতি লুকিয়ে রাখো
তোমার দুটো অসম স্তনের মাঝে।
সম্পর্কে জল দাও
মিথ্যে থেকে বেরিয়ে এসে...
** পরিচয়- সপ্তর্ষি বনিক. জন্ম 21 সে অক্টোবর, 1999।
বর্তমানে বাংলা অনার্স নিয়ে পাঠরত।
লেখার শুরু 2017 সাল।
বই হলো-আস্ত শহর ঘুম দেয় এক মিথ্যে সুখে-2019
আর
শহর অভিমান ভুলে-2020
••
প্রিয় বিষণ্নতা ও একটি অন্ধ চুম্বক
নীলাদ্রি দেব
পাঁচ.
তোর্সার জলে চিত্রকর ভাসিয়ে দিয়েছিল
গোলানো অ্যাক্রিলিক
তোমার যেমন ডাকনাম আছে, তেমনি রংএর
এত নাম মনে রাখব না বলেও...
ভুলে যেতে পারিনি আলো
নদীর মাঠে তখন জেলেমাঝির গান
আমাদের পাশে না বলা কথার ভিড়
তখনও থার্মোমিটারের পারদ ঝুঁকে আসেনি
** পরিচয়- নীলাদ্রি দেব.
জন্ম 14 এপ্রিল, 1995. কোচবিহার (পশ্চিমবঙ্গ).
শারীরবিদ্যায় স্নাতক. যুক্ত আছেন শিক্ষকতায়.
কবিতায় এসেছেন প্রথম দশকে.
কবিতাবই- ধুলো ঝাড়ছি LIVE, জেব্রাক্রসিং ও দ্বিতীয় জন্মের কবিতা, এবং নাব্যতা.
সহ সম্পাদিত পত্রিকা- ইন্দ্রায়ুধ, বিরক্তিকর.
••
#ঘোড়দৌড়ের_বিকেল
#নাদিরা
আমাদের গাঁ উজাড় হয়ে গেছে ঘৃনায়
একরাশ কাঠ জমিয়েছি, পোড়াবো বলেই....
পৃথিবী কখনো ভালোবাসতে গিয়ে গুঁড়িয়ে যাবেনা
বরং তোমাদের লালসা ও নীল লালায় ফেটে যাবে।
প্রপিতামহের মেরুদন্ডের মতোই
বাঁকা - ক্ষয়াটে একটা ভবিতব্য নাচছে,
ঘোলা চোখের মনির মতো ফেনিল সকাল...
আমি কুড়িয়েছি ; কোনো দোষারোপ নেই আছে আফসোশ।
নাভীজুড়ে সেগুন কাঠের গন্ধ... অথবা
চন্দনের..... যার ঘ্রাণ স্বপ্নে পাই মাঝেমাঝে
মা বলে মৃত্যু ঘনিয়ে এলে লোকে ঘনঘন...
ভয় পায়... আর্তনাদ করে... বালিশ জড়িয়ে ঘুমায়।
এখন আমি স্বপ্নে ঘনঘন ঘোড়ার লাগাম দেখি...
ঘুম ভাঙলে দেখি বিকেল হবার তোড়জোড় চলছে
** পরিচিতি- নাদিরা আহমেদ
গ্রাম + পোস্ট-- বড় আটিয়া বাড়ি
থানা -- দিনহাটা
ফোন নম্বর -- 9679949359
••
ঘোর
দেবশ্রী রায়
চোখের তলায় সূর্যাস্তের মায়াকাজল
স্বপ্নহীন ঘুমে নিহত হই রোজ
রাতের গাণিতিক স্নান সেরে জেগে উঠি আবার
কোনো নিয়ম ছাড়াই
বেঁচে আছি এভাবেই
শরীর যেন বুদ্বুদ
একটা অস্পষ্ট কুয়াশার মধ্যে
হেঁটে চলেছি।
ফুলতোলা বালিশের ভেতর ভেঙ্গে পড়ে আছে
স্থূল বিশ্বাস।
জানিনা,এতটা নিঃস্ব হয়েও কিভাবে বেঁচে আছি
কিভাবে বেঁচে থাকা যায়?
হয়তো পায়ের নিচে গন্ধভরা ঘাস,
আগুন ঘিরে স্মৃতিজাগা রাত
জলপ্রিয় পাখিদের গান
আর
রক্তের ঢেউ এ অক্ষর সাজানোর
এক ঘোরই
বাঁচিয়ে রেখেছে আমায়।
** পরিচয়- দেবশ্রী রায়. জন্ম- কোচবিহার, সত্তরের দশক। পেশায় শিক্ষিকা।
খুব ছোটবেলা থেকে কবিতার প্রতি প্রেম।বাচিক শিল্পী হিসেবে সামান্য পরিচিতি।নবম শ্রেণী থেকে একটু একটু লেখার চেষ্টা। তবে কবিতা নিয়ে সবার সামনে আসা দ্বিতীয় দশকে। নিয়মিত বিভিন্ন ম্যাগাজিনে কবিতা লেখা।খুব সাম্প্রতিক সম্পাদনার কাজে নিজেকে যুক্ত করা। পত্রিকা "কথলহরী"।
••
নেমো নাকো জলে চাঁদ
মাধুরী হালদার
ওগো হেমন্তের চাঁদ!
দেখ তুমি সারারাত
নতমুখ ফসলের রূপ;
সারা মাঠ ভরে আছে
সোনালি ধানে
এতো রূপ দেখে তারপরে
শেষ রাতে এসো তুমি নোনাই এর তীরে
সেখানে হরিণও নদীতে নামে,
হাতি জল খায়
ভোরের আলোয় আমি কলসী ভাসাব
বন ঝোপের আড়ালে তুমি চুপ করে থেকো
নেমো নাকো জলে চাঁদ!
আকাশে কুসুম কুসুম আলো
ডুবো নাকো জলে চাঁদ!
ছুঁয়ো না আমায়!
নোনাইয়ের জলে রাই কলসী ভাসায়
** পরিচিতি- মাধুরী হালদার--জন্ম দক্ষিণ ২৪পরগণার বহড়ু গ্রামে।বর্তমানে উত্তরবঙ্গের কোচবিহারের মহারাণী ইন্দিরা দেবী বালিকা বিদ্যালয়ের সহশিক্ষিকার পদে কর্মরতা।ছোটবেলায় মায়ের মুখের আবৃত্তি শুনতে শুনতে কবিতার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন।অষ্টম শ্রেনীতে পড়াকালীন প্রথম কবিতা লেখার সূত্রপাত।তারপর থেকে নিয়মিত লিখতে থাকেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি ছাড়ানোর পর নানা কারণে তাঁর সাহিত্য চর্চায় ছেদ পড়লেও মূলতঃ ফেসবুকের পাতায় তিনি আবার লেখালেখি শুরু করেছেন।
••
শুশ্রূষা
মনিমা মজুমদার
একটিই রাস্তা
হেঁটে যাচ্ছি সবাই
শরীর থেকে খুলে রাখি যাবতীয় শোক
মুহুর্তে যেন কতকালের আলো
ঘাসের ডগায় চুম্বন এঁকে যায়
এত সহজ এই পথচলা
বুকের খাঁজে লুকিয়ে রাখা প্রিয় মানুষের গন্ধের মতো
একটু একটু করে শুশ্রূষা নেমে আসে
চিরকালের এক পাপের শরীরে
** পরিচিতি- মনিমা মজুমদার, পেশায় শিক্ষিকা। ভালোবাসেন কবিতা, প্রবন্ধ লিখতে। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ 'ব্যক্তিগত বর্ণমালা'।
••
রাজীব পাল
বাড়ি হালদিবাড়ি
আমি ২০১৪ থেকে লেখা শুরু করি,
পড়াশুনোর পাশাপাশি,পত্র পত্রিকায় লেখালেখি করি এবং কয়েকজন মিলে আন্তরিক নামে একটি পত্রিকা বের করি।
কবিতা আর কবিতা বিষয়ক কবিতা গদ্য পড়তে ভালোবাসি।
আড়াল
রাজীব পাল
--------------
নদীর কাছে যেতে ভালো লাগে....
খুব রাক্ষুসে হয়,পাড় গিলে খেতে ওস্তাদ।
অবশ্য আমি যে নদীটার কাছে বসি সেটি খোঁড়া,
বুক অব্দি বালি।
গল্প শুনেছি এই নদীটাও নাকি একদিন ডাকাতিয়া নদীটি ছিল।আস্ত আস্ত গ্রাম গিলে খেতো বর্ষায়।
এরপর সময় পাল্টেছে আর সাথে সাথে এত বিশ্রী ভাবে গুটিয়ে গেছে,
এখন চলতে পারে না ।
নদীটা মরে যাবে।খুব তাড়াতাড়ি মরে যাবে নদীটা।
ঠিক যেমন বাইজি পাড়ার বয়স্ক-মেয়েরা অবহেলা পেতে পেতে মরে যায়!
সৌমিতা মিত্র
লেখালেখি শুরু ২০১০ সালে দমকা হাওয়া পত্রিকায় লেখা দিয়ে। লেখা শুরু হয়েছিল শুধুমাত্র পত্রিকা সম্পাদকের অনুপ্রেরনায়
প্রিয় কবি- জয় গোস্বামী, ভাস্কর চক্রবর্ত্তী, রনজিৎ দাস
শখ- গান শোনা
বারান্দা বাড়ি
--------------------
সৌমিতা মিত্র
রোজ রাতে বসে থাকি
একলা বারান্দায়
প্রতিটা বাড়িতে একটা
খোলামেলা বারান্দা দরকার।
একটা বারান্দা...
যেখানে অন্তত পাঁচ ছ-জন
বসতে পারে.....
রোজ রাতে বারান্দায় আসে
পরিচিত জোনাকি
জোনাকি গল্প শোনায়
জোনাকি গল্প শোনায়?
শোনায়, নিজের জ্বলে যাওয়া
নিভে যাওয়ার গল্প।
আর আমি আবছা অন্ধকারে
গল্পগুলো লিখে রাখি......
তারপর ঘুম গড়িয়ে এলে
ঘুমিয়ে যাই এক কোনে
একটা বারান্দাই ঘর
বাড়ি হয়ে ওঠে.....
নাম-হৃদয় হোম চৌধুরী
বসবাস-হলদিবাড়ী কোচবিহার
(বর্তমানে পড়াশোনার সূত্রে কলকাতা)
-উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগে স্নাতক হিসেবে পাঠরত
২০১৭ সাল থেকেই কবিতার জগতে
কবিতা কে ভালোবেসে কবিতায়
প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশ, মুকুন্দ দাস,শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সুবোধ সরকার, রাহুল পুরকায়স্থ...
আপাতত কোন বই নেই
বাতিল বাড়ি
হৃদয় হোম চৌধুরী
বাতিল পোড়ো বাড়ির বুক চিরে
জীর্ণ জানালাটিও হওয়ায় সঙ্গী হবে না আর ;
শ্যাওলার সবুজকে আপন করে
মৃত আবেগের ভাবনায় অন্ধকার।
কখনো নিজেকে মৃত আবেগ
মনে হতে থাকে;কখনো বাতিল জানালা;
শ্যাওলার পাশে পড়ে থাকে প্রেম
মন বলে, থেকে যাওয়াই বেশ ভালো।
আমি খুঁজি রং, পোড়ো বাড়িটি যাকে ভুলে গেছে;
আমি খুঁজি হওয়া,ভুলে গেছে জানালা যাকে;
শ্যাওলা সিক্ত ছোঁয়ায় এসে
এখনো ধুলো মাখা আকাশের কবিতা খালি হাসে।
বাড়িটি ভেঙে গেছে,জীর্ণ জানালাটি
হওয়ার সাথে প্রণয় করে হাসে;
শ্যাওলার গায়ে অভিমান তীব্র হয়
মাটির গন্ধ নারী শরীরেই ভাসে।
বিপ্লব সরকারঃ-- তরুণ কবির বাস উত্তরবঙ্গের একটি প্রান্তিক শহর মাথাভাঙ্গায়। ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর এই তরুণ কবির প্রকাশিত দুটি কাব্যগ্রন্থ "ওঁ চিহ্নের সন্ধি" এবং "চাপা পড়ে আস্ত শহর"। কবিতা লেখার পাশাপাশি করেন অনুবাদের কাজও। সম্প্রতি প্রকাশিত হয় কবি সন্তোষ সিংহের " স্বপ্নের কবিতাঃ সূর্যাস্তের ভাষা" কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদগ্রন্থ "Poems of Dreams: Language of Sunset"।
দূরুহ গূঢ়তা
বিপ্লব সরকার
ইদানীং যা ধরা পড়ছে। বড়ো বেশি সহজলভ্য হলে আকাশ
নিয়ে
এত মাতামাতি হত না। দূরুহ গূঢ়তার ভিতরেই সহজটান।
গভীর সন্ধান। জ্ঞাত বিধান জেনেই আমাকে কেমন বিষাদ লাগছে
আজ। প্রতিটা
অক্ষরের পাশে শুয়ে থাকছে একটি গভীর পুকুর। ধূসর-রঙা
মার্বেল যেন কেঁপে কেঁপে উঠছে প্রতিটা বৃষ্টির ফোঁটায়
আচ্ছা সহজলভ্য বলেই কি তুমি সহজে
বদলে নিতে পারছো ধারালিপি? অভাবী রোদ্দুর জানে কতটা
আকুতি দিয়ে
ধরে রাখতে হয় বটবৃক্ষচ্ছায়া
কবি পরিচয় : দক্ষিণবঙ্গ উত্তরবঙ্গ মিলিয়ে আমার বেড়ে ওঠা। এখন উত্তরবঙ্গে থাকি। পড়তে লিখতে ভালোবাসি। লেখায় আমার মুক্তি আবার লেখাই আমার আশ্রয়।
আমার ২টি কাব্যগ্রন্থ আছে : ১.সূর্যাস্তের খাতা (জানুয়ারী ২০১৯)
২.নাইট ক্রীম (জানুয়ারী ২০২০)
মেইল আইডি : mukherjeeminakshi26@gmail.com
নির্জন দুপুর
মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়
ভাঁজ খুলতে থাকি
খুলতে খুলতে একদিন আয়নায় নিজেকে দেখি অস্থিসার দাঁড়িয়ে আছি
কথাগুলো হেঁটে যাচ্ছে এ-ঘর থেকে ও-ঘর
কিছু আবার হোঁচট খাচ্ছে চৌকাঠে
আমি দেখি আর গাল বেয়ে গড়িয়ে নামে উষ্ণতা
হাওয়া বদলালে বুঝি বিকেল হয়
অস্থিতে বন্দী করতে থাকি বছর
আর নদীর জলে অস্তমিত সূর্য
সুকান্ত দাস
জন্ম ১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৯১
অরুণাচল প্রদেশের ইটানগরে
ইতিহাস বিষয়ে স্নাতকোত্তর
সম্পাদিত পত্রিকা - শাঙ্খিক
প্রকাশিতব্য কাব্যগ্রন্থ - ম্যানিকুইন
প্রকাশিত গানের অ্যালবাম-শোরা
ঠিকানা - প্রযত্নে ডঃ নৃপেন পাল, হরেন্দ্র নারায়ণ সরণি, হাজরা পাড়া, কোচবিহার ৭৩৬১০১ ভারত
ই-মেইল-thesukantadas@rediffmail.com
সুকান্ত দাস
হেলানবাড়ি
১.
আঙুল ধরে বাবা বলছেন ধর নয়তো হারিয়ে যাবি। সে কোথায় তার খোঁজ বাবা জানেন। নিরুদ্দেশ হয়েছে বিকেল। বিকেলের হেলানবাড়ি। পাশের বাড়ির সুমন। এককাট্টা মাঞ্জা লাগাতো সুতোয়। মেঘের বিদ্রুপ সহ্য করতে পারতো। তারপর একদিন আলোচনা করে আমরা বড় হয়ে গেলাম। পা দানীতে এসে ঠেকল গন্তব্যের ট্রিগার। তারপর -
২.
এখন ছোট নেই ভাবতেই শরীর কাঁটা দেয়। রাক্ষুসে বাতাসে ঘুরে বেড়ায় সময়ের লেটারবক্স। মাপজোকের সিঁড়ি তুলে নিয়ে হেলানবাড়ি অপেক্ষা করে পরবর্তী ভ্রুণের
৩.
মায়ের ছবিগুলো ফ্যাকাশে হয়ে আসছে। অথচ বাবা চেয়েছিল মায়ের চোখে হয়ে উঠবে একান্ত ফোটোগ্রাফার। বর্ষা এসে যায়। মেয়ে ব্যাঙেরা চেঁচিয়ে ডাকে পুরুষজনকে।
ফোটোগ্রাফগুলো আরও ফ্যাকাশে হতে থাকে।
৪.
প্রতিটা মেয়েবেলায় জড়ত্ব লুকিয়ে থাকে। চর্যাপদ শেষ করে আর ধরা যাচ্ছেনা। অথচ দেখা হয়েছিল কোন এক রবীন্দ্র সন্ধ্যায়। বেণী দুলিয়ে গাইছিলে - আজ আমাদের ছুটি রে ভাই আজ আমাদের ছুটি
৫.
আলো কমে আসে। তীর ফিরবেনা বলেই এখন তূণ ফাঁকা। বিপ্লব বিদ্রোহ শেষ করে হাতে তুলে নেব গাদা গাদা ওষুধর প্রেসক্রিপশন। হেলানবাড়ির খোঁজ করব। যদি শেষবার কোন বিকেল দেখা যায় ..
মানিক রায়ের কবিতা
আলো
প্রত্যেকেই ভবিষ্যতের একটা সরল অঙ্ক আঁকতে চায়
No comments:
Post a Comment