কোচবিহার জেলা শূন্য দশক
একটু শুনবেন, স্যার
পাপড়ি গুহ নিয়োগী
আপনারা দেশটাকে রাজনৈতিক গোয়াল ঘর বানিয়েছেন
আর আমরা কিছুতেই হাসপাতাল বানাতে পারছি না ঘরকে
কারণ দুটোই মাত্র শোবার ঘর একটি বাথরুম
বাবা ক্যান্সারে চলে গেছেন
মা পা ঘষে ঘষে অনন্ত আলোর খোঁজে
মেধাবি সন্তানকে ঋণ করে পড়াতে হয়
তারপর চাকরি ভ্যানিস মিথের কল্পলোকে
ক্রমাগত আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি
জ্বর,কাশি,শ্বাসকষ্টর চেয়েও পেটকে ভয় করে আজকাল
চোখের কালো দাগ ঢাকতে পারি
কিন্তু ঘরকে হাসপাতাল বানানোর ম্যাজিক জানা নেই
সভ্যতার প্রতিটি ভাঁজে আমাদের রক্ত, ঘাম
এর পরেও যা বলবেন তাই শুনবো
আপনি যেখানে বুড়া আঙুল বসাতে বলবেন
আপনাদের আপেলের মত ঘুম
না আসা অব্দি দাঁড়িয়ে থাকবো
জমিতে চাষ, ইট ভাটা, বিড়ি কারখানা ,
ঘর দুয়ার পরিষ্কার, রান্না সব করবো
শুধু আমাদের সন্তানদের ঘরে ফিরিয়ে দিন
••
মুক্তির মূর্ছনা
মাধবী দাস
মাথার ভেতর যত দুঃস্বপ্ন বেজেছে গত রাতে
আমি তার স্বরগুলি খুলে নিয়ে
গান বানিয়েছি
নেশাগ্রস্ত দেওয়ালের গায়ে
সেই গান আছড়ে পড়ে
বিন্দু বিন্দু আলো মেখে মালকোষ থেকে
তিলক কামোদ হয়ে গেল
নূপুর বাজিয়ে এল নীল সর্বনাশ
জমে ওঠা ক্ষতের ভেতর
গোপনে লুকোনো পুঁজ
ফেটে গেলে ব্যথা কমে যায়
দুঃস্বপ্নে কুড়িয়ে পাওয়া
স্মৃতিদের ধরে রাখে কোমল গান্ধার
শুদ্ধ ধৈবতে নয় , তীব্র 'মা' তে আছে
হাহাকার থেকে মুক্তি পাওয়ার মূর্ছনা...
** পরিচিতি- কবি পরিচিতি---বাংলা সাহিত্যমহলে মাধবী দাস পরিচিত নাম।জন্ম ১৬-০১-১৯৭৯ । পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার শহরে জন্ম ও বেড়ে ওঠা। বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর করে বর্তমানে উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। 'উত্তরবঙ্গ সংবাদ 'আজকাল পত্রিকার মতো বিভিন্ন স্বনামধন্য পত্রিকায় ও প্রতিষ্ঠিত লিটল ম্যাগাজিন গুলোতে গল্প, কবিতা ও গ্রন্থ আলোচনা করে সুনাম অর্জন করেছেন। প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'অযোগবাহবর্ণ ' বেশ কয়েকটি পুরস্কার পেয়েছে। দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ 'আদি ধর্মকথা'। সম্পাদক গোল্লাছুট পত্রিকা।
••
ছোঁয়া
সমিত ভৌমিক
হঠাৎ চালের ফুটো দিয়ে আমার অন্ধকার ঘরে
চাঁদের এক টুকরো আলো
রহস্যময়ী প্রেমিকার মত
আমার বুকের ওপর রাখল ওর হাত
চোখ বুজে ভাবছি সারা রাত
আঙুলে আঙুল রেখে
নদীর ধার ঘেসে
হাটছি কেবল আমি আর চাঁদ...
**পরিচিতি- সমিত ভৌমিক. জন্ম- ১২/০৭/১৯৮৭
কলেজে পড়াকালীন লেখালিখির শুরু।
1. স্কুল শিক্ষক ।
2. লেখক ।
প্রকাশিত উপন্যাস -
i) বিক্ষত মানুষ ।
ii) বরফের নীচে আগুন।
iii) ভোরের আলো।
iv) জঙ্গল রহস্য। (প্রকাশিতব্য)
3. কবি।
'আনন্দম্ কালচারাল সেন্টার'( কোচবিহার) কর্তৃক কবি হিসাবেসংর্বধনা ( 2015),
'কথা কোলাজ সাহিত্য সংস্থা'(নদীয়া) কর্তৃক সম্মাননা পত্র (2015)
,'কথা কোলাজ সাহত্যি সংস্থা '(নদীয়া)কতৃক সম্মাননা (2016)।
'দেশ' এ প্রকাশিত প্রথম কবিতা 'পরকীয়া'(17/03/2016)।
••
থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার
উদয়ার্ণব
বাঁচার তাগিদ নিয়ে যারা আন্দোলন করছেন
তাদের জন্য বানিয়ে দেবো দেশ।
লেখা হবে নতুন সংবিধান।
সরকার বলতে থাকবে খেটে খাওয়া মানুষ।
গণতন্ত্র আসলে সুবিধাবাদীদের পোষা কুকুর।
আমি তার বদলে উড়িয়ে দেবো এক ঝাঁক পায়রা।
ব্রহ্মজিৎ সরকার ।পেশায় শিক্ষক। প্রথম দশকেই সক্রিয় লেখালেখি। দিবারাত্রির কাব্য, কবি সন্মেলন, কবিতা আশ্রম, ভাষানগর, নতুন কৃত্তিবাস ইত্যাদি এবং বিভিন্ন ই-ম্যাগাজিনে লেখালেখি। ২০১৯-এ নতুন কৃত্তিবাস থেকে তারাপদ রায় পুরস্কার।
প্রহরী
-------------
ব্রহ্মজিৎ সরকার
ঘুমিয়েছে বলে কিছু দেখতে পারছে না
অথচ পাখি উড়ে যাচ্ছে ছায়া মুছে মুছে...
দিঘি তার ঘনীয়েছে বেণি
সকলেই ফিরে গেছে কোলে।
সে শুধু বসে আছে- একা
ঈশ্বর সুধা টুকু নিয়ে
ধুলো গায়ে ঘুমিয়েছে ছেলে।
জেগে যাবে ভেবে
মা তাকে একবারও ডাকতে আসেনি
অপলক চেয়ে আছে আকাশের চোখ...
নাম - গৌতম লালা
পিতা - ঁহেমেন্দ্র নারায়ণ লালা
বাসিন্দা - হলদিবাড়ি
বিবরণ - বোধন পত্রিকার সম্পাদক এবং বনলতা পত্রিকার যুগ্ম-সম্পাদক। আশির দশক থেকেই কবিতা লেখা শুরু ।দীর্ঘ কবিতার প্রতি বিশেষ ঝোঁক । দক্ষিণা বার্তা, সুরধ্বনি, সমিধ ইত্যাদি পত্রিকার লেখক ।
নদীর নাম জলঢাকা
গৌ ত ম লা লা
ওপাশের ঝোপের ঝাড় থেকে
ওই পাহাড় এগিয়েছে...
মাঝখানে ঘাসের চাদর পেতে
এদিকে ওদিকে নদী বয়ে যায়
পাথরে পাথরে জলাভূমির স্রোত...
বেপরোয়া এলো বনানীর দুল
বনলতায় দোল খেলে পাখি
এই যে ব্রিজ-বিকেল
কোনো জেলে মাছ নিয়ে পথে বসে
খরি নিয়ে ওরিয়েন্টা-কেনুয়া-বধূয়া
হাঁটু উঁচু কাপড়ে সভ্যতা পেড়োয়
সবুজ পাহার নদীর কোল
এখানে বার বার থেকে যেতে চাই
আমাকেও চলে যেতে হবে
পার হয় হাতি-গন্ডার-বাইসন এ জঙ্গল ছেড়ে অন্য জঙ্গলে...
জীবন থামে না
আমাকেই বার বার থেমে যেতে হয়।
সোমা রায়।ছোট বেলা থেকেই সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ।ভালো লাগতো সুকুমার রায়,ভবানী প্রসাদ মজুমদার ,রবীন্দ্র নাথের শিশু ভোলানাথ এবং আরো অনেক কবির ছড়া ও কবিতা। শুন্য দশকে লিখতে আসা এই কবির লেখা প্রকাশ পেয়েছে
বিভিন্ন পত্র পত্রিকায়।
মাঝের কিছু সময় গদ্য চর্চা করলেও কবিতায়
আবার ফেরা ২০১৫ তে
লেখালেখি ছাড়াও ভালো লাগে গান গাইতে এবং প্রকৃতিকে ফ্রেম বন্দী করতে।
শেষ ফেরি
সোমা রায়
শেষ ফেরি দাঁড়িয়ে তখন,
তীরে পৌঁছতে মরিয়া তুমি।
পাড় থেকে দেখছি যাত্রী আনাগোনা।
তোমার চওড়া বুক দৃঢ় চিবুকে
দেখেছি প্রত্যয়!
রঙিন আতসবাজির ভীড়ে
চুপসে যাওয়া ফানুসের মত স্বভাবদোষে মিলিয়ে গেছি দূরে।
তুমি তখন যাযাবর
পাহাড়ে ফোটাচ্ছ রডড্রেনডন
নীলচে মেঘের গালিচায় সাজাচ্ছ মেহেফিল গুলজার। খুশ মেজাজ হাওয়ার
আহ্লাদি সহবাসে করছ পানসি ভ্রমন ।
আজ শেষতম রাতের খেয়াঘাটে সহযাত্রী অগণন
অকুলান ঠাঁই নোঙর উঠছে ধীরে,
যাত্রী তুমি আমজনতার
আসন্ন তুফানের আঁচ লেগেছে পালে
বাতাসে মৃত্যুর ফিসফাস,
বৃষ্টি নামেনি এতল্লাটে বেশিদিন
শিখেছি ডুব সাঁতার সিন্ধু পাড়ি দিতে
তবু ভয় হয়,সাবধানে ছুঁয়ে থাকি পাটাতন;
জানি তুমি ওস্তাদ গালিব ; জাহান্নামে টেনে নাবাবার।
অভিমান ॥ রাজীব রায়
আয়নার বাইরেও তো কতকিছু ঘটে যায়
সবটাই শুধরে নেব এমন আয়না
আমাদের কারুর কাছে নেই
এটা ভেবেই
গোছানো হলো না বহু অভিমান
ক্ষমা লিখতে বসলে দূরবর্তী পাখির ঝাঁকের মতো
ঝাপসা হয়ে আসে পৃথিবী
তবুও তো দু'একটি অভিমান সযত্নে তুলে রাখি
এই অভিমানটুকু ফিকে হয়ে এলে
নিরুদ্দেশের জন্য কোনো ব্যাখা দিতে হয় না
সৃষ্টি
এরশাদ হোসেন
যখন কোন ভালোলাগা বার বার ডাকে
ঠিক যাওয়ার তাড়া
শরীর জানে থামতে হবে
মন যে বড় ব্যাকুল সন্ধ্যা তারার খোঁজে
জোনাকির আলোয়, নিজস্বতা খুঁজে ফেরে...
ভোরের কুয়াশায় পাখিদের কলরব
ঘুম ভাঙ্গা গানকে যেন ছুঁয়ে যায়
আবেগের রাস্তায় স্মৃতি গুলো
তেল রঙে আঁকা...
............
বিধ্বস্ত
বিধ্বস্ত -
বিকল স্নায়ু শরীরে
আরষ্ঠ জিহ্বায় শব্দের লুকোচুরি
নিদ্রামগ্ন সমাজ
এক পিঠ রোদ মেখে
আমি হাসতে চেয়েছি
চনমনে সমাজের বুকে মুখ রেখে
..............................
এরশাদ হোসেন, ১৭ই জুলাই জন্মদিন। কোচবিহার জেলার বক্সীগঞ্জে থাকেন।
সম্পাদনা করেন মুক্তপবন, নূর এ পয়গাম পত্রিকা সম্পাদনা করেন। শুন্য দশকের প্রথম থেকেই লেখালেখি করছেন। এছাড়া আন্তরিক, ওয়েব ম্যাগাজিন - সকলের গানের সাথেও যুক্ত। "মুক্তপবন" পত্রিকা গোষ্ঠী ইতিমধ্যেই বেশ সমৃদ্ধ কিছু কাজ করেছে। ছাপা পত্রিকার পাশাপাশি অনলাইন সংখ্যা সহ ভিডিও ম্যাগাজিনের সংখ্যাগুলোও পাঠকের ভালালাগায় ভরে উঠছে।
স্রোতের বয়স গুণে
দীপ চন্দ
চিলেকোঠায় শহর আটকে গেছে
স্মরণলালিত হল জানালার কাঁচ
মোচন রেখেছো কোলে চিতার শহরে
পুরানো করিডোর জুড়ে কমলালেবু
লেলন শুনে তারা একাত্তরের ভোরে
পাতাল ভুলে গেছে স্বপ্ন দেখার
পাখির পালক তাই মিথ্যে ছড়িয়ে
চ্যাটরুমে পাপ রেখে বেড়াল মেরেছে
সেই থেকে গ্লানি আর শীতলতা নিয়ে
তিনশো বছর ছোঁয়া জানালার কাঁচ
কিশোর বয়স তার বিগত অক্ষরে
মাগুরমারিতে স্রোত পুব চিনে নেয়
..............................
দীপ চন্দ, জন্ম তারিখ- ১০ ই জুলাই ১৯৮৯। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ও বর্তমানে গবেষণার সাথে যুক্ত। শূন্য দশকের এই প্রতিভাবান কবি মেখলিগঞ্জ, কোচবিহারে থাকেন।
সম্পাদনা করেন সকলের গান। নেশা বলতে বই পড়া, ঘুরতে যাওয়া, নতুন কিছু শেখা।
পাথর
রাজা ইসলাম
চারিদিকে বেজে উঠেছে মৃত্যুর দামামা
অদেখা, অচেনা শত্রু তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে জীবন
মৃত্যুর দেবতারা দিন দিন হিসেব গুলিয়ে ফেলছে
ক্ষুধার্ত শিশু হারিয়ে ফেলছে শব্দ।
তবুও লজ্জা নেই আমাদের
এখনো কে কার ওপর আঙ্গুল তুলতে পারি
অদেখা শত্রুর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে ব্যস্ত
অসহায় মানুষের মুখের অন্ন ছিনিয়ে নিয়ে
ভুড়িওয়ালার ভুঁড়ি বাড়াতে ব্যস্ত আমরা
লজ্জা নেই আমাদের
অসহায়দের আর্তনাদ পৌঁছায়না কানে
হতদরিদ্র মানুষের কান্নার রোল
গলিতে গলিতে ঘুরপাক খেয়ে থেমে যায় একটি সময়
মানুষের মৃত্যু আজ শুধুই একটি সংখ্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে
তবুও এতটুকু লজ্জিত হইনা আমরা।
আত্মীয়তা ভাঙতে মরিয়া
মনের দূরত্ব বাড়াতে ব্যস্ত কিছু অমানুষ
মৃত্যু আজ হয়ে উঠেছে সংখ্যা মাত্র
কান্নায় ভেসে যাচ্ছে মায়ের কোল
তবু লজ্জা নেই আমাদের।
------------------------------
রাজা ইসলাম
জন্ম তারিখ- ১১ই জুলাই ১৯৯০, প্রধানপাড়া, হলদিবাড়ি, কোচবিহারে থাকেন। সম্পাদনা করেন "অন্বেষা"। শূন্য দশকের কবি। লেখালেখি শুরু - ২০০৭।
ঘাসফুল
অনিমা মন্ডল বর্মণ
বেদনার জঞ্জালে,
এক বিন্দু ভালো বাসার বপন
একদিন প্রেম মাথা তুলে দাড়াবে
বিদীর্ন করে দেবে নিরবতা ঘেরা টোপ
নিজের অস্তিত্ব মেলে ধরবে আকাশের সন্মুখে
ফুলে ফুলে ছেয়ে যাওয়া শাখা মৃগ
ভুলে যায় জন্মবৃত্তান্ত
ফেলে আসা অতীতে হাতড়ানোর কিছু নেই
তবু জল নামে চোখের কোনে
খুজে ফিরে পিতৃপরিচয়।
হোক সে লালসার,হোক সে অবাঞ্ছিত
তবুও সে প্রাণ
পথের ধারে ফোটা ঘাসফুল একটা।
.....…........................
অণিমা মন্ডল বর্মন, জন্ম দিন- ৩০.৪.১৯৮৭। কোচবিহার জেলার শিলডাঙাতে থাকেন। একমাত্র কাব্যগ্রন্থ- ক্লান্তিহীন স্বপ্ন।
মুক্তচিন্তা পত্রিকার সাথে যুক্ত। ২০০০ সাল থেকে লেখালেখি শুরু।
কবিতা ও গল্পের বই পড়তে, পুরোনো দিনের গান শুনতে ভালোবাসেন।
No comments:
Post a Comment