Sunday, May 6, 2018

খনন করিডোর :সম্পাদনায় সব্যসাচী ঘোষ 



গৌতম গুহরায় , কবিতা ও লিটিল ম্যাগাজিনের উল্লেখযোগ্য নাম । ৮ টি কাব্যগ্রন্থ । আরও ১০ টি নিবন্ধ , অনুবাদ গ্রন্থ । শৈশব থেকেই কবিতায় । সম্পাদিত পত্রিকা দ্যোতনাও বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য লিটিল ম্যাগ বলে সমাদৃত । খনন করিডোরের সামনে অনেকটাই দ্বিধাহীন ভাবে খুলে দিলেন বুকের জমি । এরপর আমরা ক্রমশ কবির ভেতরে প্রবেশ করি ,  


প্রশ্ন - আপনি একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাস করেন । কবিতায় এর প্রভাব পড়ে কি ? তাতে কবিতার কি কোন ক্ষতি হয় ?
উত্তর – কেউ রাজনীতির উর্ধে নন । প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতিতে যুক্ত হয়তো সকলে নয় , তবুও তার চিন্তা চেতনায় রাজনীতির মতাদর্শ তৈরি হয় । সেখান থেকেই তার ব্যক্তি রাজনীতির শুরু । নীতিগত ভাবে সাম্যবাদী সমাজের স্বপ্ন আমি দেখি , যেখানে শ্রেণি , অর্থ , জাত কোন বৈরিতা তৈরি করবে না। এর প্রভাব তাই আমার লেখায় আছে এবং থাকবেও । 
কবিতায় নিজস্ব এই বিশ্বাসের প্রতিফলন থাকা ভীষণ জরুরি সেখান থেকে সরে আসা মানেই অসততাকে প্রশ্রয় দেওয়া । 

প্রশ্ন – একটা ভিন্ন সময়ে আমরা আছি । কবিতা এই সময়ে কতটা সহায় হতে পারে । 
উত্তর – সভ্যতার ইতিহাস বলে মানুষের যখন অস্তিত্ব বিপন্ন হয় তখন চেতনা যাদের অস্ত্র তারাই অগ্রভাগে থেকে পথ দেখান । কবিতা সেখানে প্রথম সারিতেই । রবীন্দ্রনাথ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লেখেন লেখক শিল্পীর হাটে তো অস্ত্র নেই , তাদের সৃজন দিয়েই সভ্যতাকে রক্ষা করতে হবে । আমিও মনে করি এই বিপন্নতার সময় সেই দৃপ্ত উচ্চারণ জারি রাখতেই হবে । 
প্রশ্ন – চার দশক কবিতায় রয়েছেন , আজ এখান থেকে পেছন ফিরে তাকালে কিরকম অনুভূতি হয় ? 

উত্তর – কবিতার সঙ্গে আমার যাপন সেই শৈশব থেকে , ১০ বছর বয়সে বসুমতি পত্রিকায় আমার কবিতা প্রকাশিত হয় । এরপর প্রায় ৪৪ বছর , অনেক কিছু অতিক্রম করতে হয়েছে , অনেক অভিজ্ঞতা অনেক যন্ত্রণা । আমার কবিতা লেখার সঙ্গে সঙ্গে আসে লিটিল ম্যাগাজিন প্রকাশের তাড়না । সেও প্রায় চার দশক হল । আজ মাঝে মাঝে অবাক হয়ে তাকাই এই সব লিটিল ম্যাগাজিন , আমাদের ঘাম রক্ত লেগে থাকা আয়ুধগুলোর দিকে । সেই শৈশব থেকে , তথন আমরা ১৪/১৫ , কি উৎসাহ নিয়ে বুকের চিৎকারগুলোকে একত্রিত করে প্রকাশের যন্ত্রণা থেকে কাগজ করা , নাটক করা , কবিতা লেখা ! আজ ভাঙা সময়ের সামনে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে দাঁড়িয়ে আছি , আর দেখছি ৪০ বছর ধরে যত্নে লালিত প্রেম , অপ্রেমগুলোর দিকে । সামনে তাকিয়ে আছে আমাদের অপমানগুলো , আমাদের ঘৃণা , আমাদের অহংকার , আমাদের উল্লাস , আমাদের কান্নারা । তবুও এই আমাদের শক্তিস্থল , আমাদের স্বপ্ন । 
স্বপ্ন আমাদের মান অপমানের মেঘ ভেঙে নামা সহস্রধারার ক্ষুব্ধ জল / স্বপ্ন আমাদের কথা ও না কথার জমাট স্লোগান , আমাদের বাঁচা মরা / আমাদের যাবতীয় ইচ্ছার জন্ম ও মৃত্যুর মধ্যবর্তী দিন ও রাত / স্বপ্ন আমাদের বাঁচা ও বাঁচানোর গুমগর্জন । 

প্রশ্ন – অনুবাদকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন । এটা আপনার মেধার সাক্ষ্য বহন করে । সাম্প্রতিক অনুবাদ কাজ বিষয়ে কিছু জানান । 
উত্তর – একজন কবি আসলে একজন বিশ্বনাগরিক । সেখানেই যোগসূত্র তৈরি হয় । সেকারণেই অন্য ভাষার কবিতা পড়া জরুরি। কিশোর বয়সে অরুনেশ ঘোষ র‍্যাবোর “নরকে এক ঋতু” তুলে দেন । লোকনাথ ভট্টাচার্যের সেই অবিস্মরণীয় অনুবাদে তছনছ হয়ে যাই । ফরাসি ভাষা জানতে ফরাসি ভাষার একটি প্রশিক্ষনেও এই তাড়না থেকেই যোগ দিই । র‍্যাবো ছাড়াও সম্প্রতি গুন্টার গ্রাস কে নিয়ে একটি কাজ করেছি । 
প্রশ্ন – কর্পোরেট স্টাইলে কাগজ হচ্ছে , এতে ভাল হবে তো । 
উত্তর – চাকচিক্য বাড়বে , আর্থিক সমৃদ্ধি আসবে কিন্তু কাগজ স্বপ্নহীন হবে , আপোষহীন মনোভাব হারিয়ে যাবে । 
প্রশ্ন – প্রিয় কবি কে ও কেন ?
উত্তর – র‍্যাবো , জীবননান্দ , বিনয় মজুমদার ও শঙ্খ   ঘোষ । সাম্প্রতিক কালে জহর সেনমজুমদার । 
  

     



No comments:

Post a Comment