মাতব্বর বৃত্তান্ত --- এক মিথকথার দেশ
বিপ্লব সরকার
বিপ্লব সরকার
"অনেক রোদের বিস্তারিতের ভিতর আদ্যন্ত ডুবে থাকতে থাকতে নদীপ্রান্তরের পাথারবাড়ির নকশিবিষাদটুকু সারাজীবন ধরতে গিয়েও শেষাবধি অধরাই থেকে যায়।" কবি ও গদ্যকার সুবীর সরকারের সাম্প্রতিকতম গদ্যের বই "মাতব্বর-বৃত্তান্ত" পড়ে ওঠার পর মনে হল গদ্যকারের এই উদ্ধৃতাংশটিই "মাতব্বর-বৃত্তান্ত"কে যথার্থ বর্ণনা করতে পারে। আসলে বইটি গদ্যকারের নিজস্ব চারণভূমি অর্থাৎ উত্তরের হাওয়া-বাতাস, নর-নারী, গাছ-গাছালির রূপকময় বর্ণনা। যার মধ্যে মিশে আছে উত্তরের প্রাণের গান, ভাওয়াইয়া গানের মিথকথা। গানের ভিতর লুকিয়ে থাকা জীবন কিংবা জীবনের প্রয়োজনে উঠে আসা গান কিভাবে বেঁধে রেখেছে উত্তরের দিগন্তবিস্তৃত মাঠের সবুজ ঘাস ও তাকে ছুঁয়ে থাকা রূপকথা, সে সবই যেন মিথকথার মতো বর্ণনা করে গেলেন তিনি। যাকে ছুঁয়েও যেন ঠিক ছুঁয়ে ওঠা হল না। এখানেই কিন্তু গদ্যকার বাজিমাৎ করে দিয়েছেন। কারণ, আদৌ কি সবকিছু ছুঁয়ে থাকাই জীবন? যেটুকু অধরা, অছোঁয়া সেখানেই তো জীবনের অপর গল্প, যা জীবনকে জীবনী করে তোলে। লেখকের অন্তঃস্থলে অগাধ বিষাদ। তাই বলে বিষাদু চরিত্র হয়ে ওঠা নয়। বরং নিজস্ব বিষাদের ভিতর পাড়ি দিয়েই তিনি গড়ে তোলেন তাঁর পছন্দসই রূপকল্পের দেশ। যেখানে আছে উত্তুরে হাওয়া-জঙ্গল, মাহুত-হাতি, রাজবাড়ী ও রাজকন্যা। আছে বাওকুমটা বাতাস, আছে জীবনের গান, প্রাণের গান, প্রেমের গান লোকগান। অথবা তাঁর নিজস্ব উচ্চারণে--"আর মাটির উঠোন থেকে অনিবার্য কিছু গান গোটা জীবন আমার সঙ্গে থেকে যাবে। আর জীবনের বৃত্তে ঘনঘন আছড়ে পড়বে উড়ন্ত ঘোড়া, হস্তশিল্প এবং উৎসবগাথা।"
লেখক যদিও আবহমানতার কথা বলেন, কিন্তু একজন সচেতন পাঠক জানেন-- কোনোকিছুই আবহমান নয়। দেশের যেমন সীমা আছে। কালেরও তেমনি সীমা আছে। জীবন যত দ্রুতগতিময় হয়ে উঠছে, হারিয়ে যাচ্ছে শীতল হাওয়া ও সম্পর্কের যোগসূত্রগুলি। যান্ত্রিকতায় যন্ত্রমানব হয়ে ওঠার গল্প তো সকলেরই জানা। অতএব, আসন্ন সেই দিন কিন্তু জরুরী হয়ে উঠবে মাটির ঘ্রাণ, সবুজ পাতার গল্প এবং রূপকথার রাজকন্যা ও গ্রামীণ হাটের সরগম। কিংবা এমন একটা মাতব্বরকাহিনী, যার সংস্পর্শে রক্তে বইবে শান্ত শীতল স্রোত। পরিশেষে, সুবীর সরকারের গদ্য মানেই তাঁর ব্যাক্তিস্বাতন্ত্র্যতা। একম্ অদ্বিতীয়ম্ ছন্দে, অনুভবে এবং দার্শনিকতায় তিনি রচনা করেন তাঁর গদ্যগুলো। এখানেও ব্যতিক্রম নেই। উত্তরভুমি চষে বেড়ানো তিনি "মাতব্বর-বৃত্তান্ত" - এ খুব সঞ্চারণশীল বৃত্তান্ত রাখলেন রাখালবন্ধু-মইশাল, নদীঘাট-বাজারহাট, জোতদার-মাতব্বর, মাঘময়ূর-গোয়ালঘর, ভালুক মিঞা-নানুভাই, ইয়াসিনউদ্দিন-ধনকান্ত প্রমুখ এবং বর্ণজ্জ্বল হিজড়াযাপন থেকে ছন্দপতনের কাহিনী। পাতায় পাতায় কালো অক্ষর থেকে খুব আলতোভাবে সেসব মূর্ত ও বিমূর্তরা এসে ঢুকে পড়ে পাঠকের অন্দরে এক একটা মায়ামিথচরিত্ররূপে।
লেখক যদিও আবহমানতার কথা বলেন, কিন্তু একজন সচেতন পাঠক জানেন-- কোনোকিছুই আবহমান নয়। দেশের যেমন সীমা আছে। কালেরও তেমনি সীমা আছে। জীবন যত দ্রুতগতিময় হয়ে উঠছে, হারিয়ে যাচ্ছে শীতল হাওয়া ও সম্পর্কের যোগসূত্রগুলি। যান্ত্রিকতায় যন্ত্রমানব হয়ে ওঠার গল্প তো সকলেরই জানা। অতএব, আসন্ন সেই দিন কিন্তু জরুরী হয়ে উঠবে মাটির ঘ্রাণ, সবুজ পাতার গল্প এবং রূপকথার রাজকন্যা ও গ্রামীণ হাটের সরগম। কিংবা এমন একটা মাতব্বরকাহিনী, যার সংস্পর্শে রক্তে বইবে শান্ত শীতল স্রোত। পরিশেষে, সুবীর সরকারের গদ্য মানেই তাঁর ব্যাক্তিস্বাতন্ত্র্যতা। একম্ অদ্বিতীয়ম্ ছন্দে, অনুভবে এবং দার্শনিকতায় তিনি রচনা করেন তাঁর গদ্যগুলো। এখানেও ব্যতিক্রম নেই। উত্তরভুমি চষে বেড়ানো তিনি "মাতব্বর-বৃত্তান্ত" - এ খুব সঞ্চারণশীল বৃত্তান্ত রাখলেন রাখালবন্ধু-মইশাল, নদীঘাট-বাজারহাট, জোতদার-মাতব্বর, মাঘময়ূর-গোয়ালঘর, ভালুক মিঞা-নানুভাই, ইয়াসিনউদ্দিন-ধনকান্ত প্রমুখ এবং বর্ণজ্জ্বল হিজড়াযাপন থেকে ছন্দপতনের কাহিনী। পাতায় পাতায় কালো অক্ষর থেকে খুব আলতোভাবে সেসব মূর্ত ও বিমূর্তরা এসে ঢুকে পড়ে পাঠকের অন্দরে এক একটা মায়ামিথচরিত্ররূপে।
গ্রন্থ : মাতব্বর-বৃত্তান্ত
প্রকাশক : গাঙচিল
মূল্য : ২০০ টাকা
প্রকাশক : গাঙচিল
মূল্য : ২০০ টাকা
No comments:
Post a Comment