সেতু বন্ধন সুব্রত সাহা
বিধিসন্মত সতর্কীকরণ - লেখাটির মতামতের দায় শুধুমাত্র এই অধমের। বই এর আলোচনার একটা নতুন রূপ বা বলতে পারেন নতুনের নতুনায়নের প্রচেষ্টা... পাঠক সহায় হবেন আশা করি। ভালো যা কিছু তা সবার জন্য তোলা রইলো। ভালো না লাগাটুকুর দায় শুধুমাত্র আমার জন্যই তোলা থাকুক। বিষন্ন বিবশ সময়ে সব্বাই ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। সাবধানে থাকুন। ভালোবাসায় থাকুন। এবং অবশ্যই ভালো ভাষায় থাকুন।
শূণ্য কিন্তু শূন্য নয়। শূণ্য ও প্রথম দশকের তিন লেখক ও কবির যাপনকে তাদের কাব্য গ্রন্থ ও গল্প গ্রন্থের মধ্যে দিয়ে ছুঁয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টায় সেতু বন্ধন। আলোচনায় - "সরীসৃপ সঙ্গ", "কাচ পোকাদের প্রেম", "যারা যাপনে নেই"।
টিং টং টিং টং! - ও তোরা চলে এসেছিস? আয় আয়। মামুকে ডাক তো দিদি। - ঋষি ওই ঋষি মামু ডাকছে তোকে। তোরা কিন্তু এক্কেবারে ঠিক সময় এসেছিস। সময় এর মূল্য দেওয়া উচিৎ। ঠিক কিনা অম্বরীশ? - ঠিক ঠিক একদম ঠিক বলেছো। কিগো মামু কেমন আছো? এই নাও তোমার চকোলেট। - থ্যাংকু মামু। কেমন আছো তুমি? দিদা আর দাদু কেমন আছে? আর পুচকু ভাইটা? আরে আড়াই বছর হয়ে গেছে। বড় হয়ে গেল তো আমার মামাইটা। তা মামু তোমার পড়াশুনো কেমন চলছে? - ভালো। মামু তুমি মাকে বলে দাওতো আজকে কিন্তু আমি তোমাদের সাথে আড্ডা দেব। বাহ্, বেশ তো। তা তুমি কি কবিতা লেখ? - না পড়ি তো। মার লেখা তোমার লেখাও পড়েছি আমি। এক কাজ করি আমরা কবিতা নিয়ে আড্ডা দেব। আর তুমি ছবি আঁকবে। কি ঠিক আছে তো? - মামু দারুন আইডিয়া। তা ঠিক। পড়াশুনোটাও মন দিয়ে করবে আড্ডার পর। - অম্বরীশ বোস তোমরা। তা চা না কফি? সুব্রত কি বলে? কোনটা? - এখন কফি হোক। পরে না হয় চা হবে। বাহ্, ভালো বলেছো। - আরিব্বাস মাশরুম পকোড়া। দিদি জমে যাবে আড্ডা। আরে ওই তো দীপান্বিতাও এসে পড়েছে। আয় আয় দীপু। - যাহ্, আমার জন্য আছে তো? আছে দীপু তোমার জন্যও আছে। - চলো তবে আড্ডা শুরু করা যাক্।
অম্বরীশ, তোমার সহেলীপনা
মাদকতা দিচ্ছে। দাদা ভাই সহেলীপনাটা কিন্তু ঠিক মাথায় ঢুকলোনা। - আরে দীপু আমি লেখার সাথে সহেলীপনার... আত্মীয়তার কথা বলছি। বুঝলে এবার। হুম, বুঝেছি। অম্বরীশ আমাদের সব্বার প্রিয় আলিপুরদুয়ার কবির শহরের অন্যতম গর্ব। - একদম ঠিক বলেছো দিদি। ও কিন্তু শুধু কবি নয় "এক পশলা বৃষ্টি" পত্রিকা সম্পাদনার পাশাপাশি এক হাজারেরও বেশী অনুষ্ঠান সন্চালনাও করেছে। আর ভীষণ ভালো সংগঠকও বটে। ভাই একদম ঠিক বলেছিস। অম্বরীশ আমাদের গর্ব। - আরে হয়েছেতো। এত কিছু হজম হবেনা কিন্তু। দাদা, তোমায় দেখে অনেক কিছু শেখার আছে। আচ্ছা, তোমার কয়েকটা গল্প শুনবো আজ। - একদম। আচ্ছা আমার দ্বিতীয় বই "সরীসৃপ সঙ্গ" থেকে কয়েকটা লেখা পড়ছি। প্রথম গল্প লাঠি, ভালো ছেলে, গলদা চিংড়ি, সোয়েটার এই কটা আপাতত পড়ছি। পড়ো পড়ো বন্ধু। তোমার পড়ার মধ্যে একটা আমেজ আছে গো। পড়ো পড়ো। - অম্বরীশ পড়া শুরু করে। একটা কথা বলতেই হয়, ১৩টি লাইনের গল্প লাঠিতে চমৎকারভাবে গ্রামজীবনের চালচিত্র উঠে এসেছে। জটেশ্বর দাসের একটা ফ্রেমে বাঁধা নিপাট ছবি পেলাম আমরা। - যতই শুনছি উথলে উঠছি। ভাষার বাঁধুনি চমৎকার। তোমার ভালো ছেলে শুনে দ্যাখো কেমন আমাদের চোখ ছলছল করে উঠেছে। - সত্যিই ভালো ছেলের সংজ্ঞা বদলে গেছে। পেছনের সারির ছেলেরাই এগিয়ে আসছে। ভালো ছেলে আর ভালো কাজের কথা অম্বরীশের কলম তুলে এনেছে। - গলদা চিংড়ি গল্পে ধরা পড়েছে সমাপন বাবুর পরিবার, মেয়ে, মিত্র বাবু, স্ত্রীর কথা ধরা পড়েছে। বাস্তব। দেখতে পাচ্ছি। ঠিক বলেছিস ভাই, সোয়েটার গল্প জুড়ে শীতাতুরতা লেগে আছে। নস্টালজিক তেমনি পাশাপাশি দহনেরও। আবার বদল এ দুই বিপরীত চিত্রের ছবি পাই।
আচ্ছা এবার বাবলি দির কবিতা শুনবো। তোমার "কাচ পোকাদের প্রেম" থেকে কিছু কবিতা পড়ো। আমরা সেগুলো নিয়ে আলোচনা করি। কি বলো? - একদম। একদম। কবিতা পড়ছি। নাম কাচ পোকাদের প্রেম। "গাঢ় সন্ধ্যার কাচ পোকারা/ গোপন প্রেম হয়ে/ আমার শরীরে বৃষ্টি নামায়।" আরেকটা পড়ছি, "ভগ্নাংশ" - "গভীর দহ জুড়ে তখন/ শারীরিক সংলাপের বসবাস;/ আর ভেঙে ফেলার বৃত্তের সমীকরণ"... সত্যি কবিতা আমাদের মনে বৃষ্টি নামায়। ভেজায়। আপন করে। - একটা ভালোলাগা কবিতা পড়ি। " নাভি পদ্ম"... "জীবনের বারমাস্যাতে উঁকি দেয় ভারাক্রান্ত উপোসী অতীত,/ নির্জলা রাত গুটিপায়ে চলা/ সরীসৃপের মতো!/ একাদশীর চাঁদ দেখে/ রঙীন স্বপ্নে ভাসে ষোড়শী মেয়ে,/ সময়ের গর্ভে টলমল করে/ নিভন্ত আলোর বদবুদ!/ জীবনের বারমাস্যাতে বয়ে যায়/ একমুঠো ছাই।" - বাবলি দি অবশ্যম্ভাবী কথাকে জীবনের ছবি তুলে ধরলে তুমি। আহা! এবার আমি একটা দিদির কবিতা পড়ে আমার ভাবনা শেয়ার করার চেষ্টা করছি। "স্বরহীন প্রতিচ্ছবি" তে তুমি স্বরহীন হয়ে কাটাতে চাও জীবন। কোনও নির্বাক কষ্ট তোমায় ছুঁতে পারেনা। হাওয়ার সাথে ডুবে গিয়ে তুমি চলে যাও অনন্ত শয্যায়... তোমার স্বরে জীবনের নির্মেদ দৃশ্যপট ধরা পড়েছে। এবার দীপান্বিতার কবিতা শোনা যাক্। - ঠিক আছে কবিতা পড়ছি। আমার বই "যারা যাপনে নেই " তে "বাবা"কে নিয়ে লেখা আছে। ওটা পড়ি। " সব মেয়েরাই মায়ের কাজল চোখ,/ আমি হবো তোমার মত ছায়া/ সামলে লক্ষী পূজার ঘট/ আমি তোমার হোম যজ্ঞ 'বাবা'।" - দীপান্বিতা উঠোন হতে চায়। বাবার মত হতে চায়। লক্ষী সোনা মেয়ে হয়ে থাকতে চূয়। বাবা তো আসলে বট বৃক্ষ। আমরা সন্তানেরা তো বাবার আঙুল ধরে হেঁটে যাই। আবার দেখ, প্রিয় শীতে কবিতায় মিঠে রোদ মরশুমি মাতোয়াল হয়। গীত রাগেরা বন্দিশে জাগে অজানার খেয়ালে। কুয়াশার দেয়ালে ছুঁয়ে থাকে সব। "মিঠে মিঠে ওম নিতে, পার্বনী পৈাষ পিঠে" রা যেমন এসেছে। তেমনি এসেছে পিকনিকের কথাও। ভালো লাগলো। - দীপুকে একটা কথা বলার ছিল। বলবো? দাদা ভাই বলো। - রাগ করবেনাতো? না না করবেনা। তুমি তো আমার ভালোর জন্যই বলছো। - ছেদ, যতি চিহ্নের ব্যাবহারে একটু মনোযোগী হও তুমি। আর বর্তমান দশকের লেখা কিন্তু পাল্টাচ্ছে। দশককে ধরতে হবে। যুগকে ধরতে হবে। ওরা কথা বলবে কবিতায়। নতুনের ডাক শুনতে হবে। ছন্দ মিলের কবিতা সবাই লিখতে পারেনা। এটা একটা মস্ত বড় গুণ। এটা আমার কেন অনেকরই নেই। কিছুটা ছন্দ মিল ছেড়ে লেখার চেষ্টা করো। তোমার লেখায় এনেকটা বিস্তৃতির জায়গা আছে। সে জায়গাটা ধরতে হবে। - দীপা, সুব্রত কিন্তু ঠিক বলেছে। আমিও কথাটা অনুভব করি।
যাক্, আমাদের আড্ডা কিন্তু জমে গেছে কি বলো সবাই? - এধরণের আড্ডা খুব দরকার। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করলে লেখায় গতি আসে বলেই আমার মনে হয়। আমি কিন্তু একমত সুব্রতর সাথে। - একটা কথা না বললেই নয়, অম্বরীশ ঘোষ আমাদের কাছে এক প্রীত নাম। গল্প লেখকদের কমতিটা কিন্তু অম্বরীশ পূরণ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। ওর "সরীসৃপ সঙ্গ" এক মলাটে ৫৫ টি গল্পকে ধরে তার পথ দেখাচ্ছে। আর হ্যাঁ, শূণ্য ও পরবর্তী দশকে লিখতে এসে আমাদের বন্ধু কবি ও সম্পাদক শুভঙ্কর পাল ও কিছু কিছু গদ্যে ও গল্পে অভাব পূরণ করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। - অম্বরীশের গল্প শুনি আবার। অনেক ধন্যবাদ সুব্রত ও বাবলি দি, দীপান্বিতা। পড়ছি তাহলে। - "এ্যাই খুশবু, তোর লোক এসেছে"- প্রতিদান গল্পে ভালোবেসেফেলা মেয়ের নিষিদ্ধপল্লীতে বিক্রি হয়ে যাওয়াটা সময়কে তুলে ধরছে। এটা ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করছে। আবার, " উচ্চতা"য় বন্ধুর বার্গারের দাম মেটানোর মধ্যে দিয়ে সোকলড শ্রেণীর হেয় করার মানসিকতার যোগ্য জবাব খোঁচা খোঁচা দাড়ির বিমলের সরকারী আধিকারীক হয়ে ওঠার মধ্যে দিয়ে অম্বরীশের কলম তুলে ধরেছে। - "ভাত" গল্পে বর্তমান সময়ের ফেলে আসা দিনের চিত্রপট অকপটভাবে তুলে এনেছো তুমি। সখ্যতা'য় গাছ ও আনোয়ার এক হয়ে গেছে। ভাবায় আমাদের। গাছ কাটার সাথে সাথে পাগল আনোয়ারের মৃত্যু আমাদের মানসিক বোধকে নাড়িয়ে দেয়। - অম্বরীশ দা তোমার জিন্স গল্পটা তো বোধোদয়ের আরেক ছবি। তেমনই, ইলেকট্রিক বাল্ব গল্পে জ্বলে ওঠে মহাদেব বর্মনের ঘরের দৃশ্যায়ন। অস্বস্তিতে বাল্ব নিভিয়ে লন্ঠন জ্বালিয়ে দেয় মহাদেবের বউ। আলো'র কষ্টা ফুটে তুলেছে তুমি। আর আর আর, "দেনা পাওনা" বিশ্বাস কর অম্বরীশ, পড়ছি আর কেঁদেছি। কেঁদেছি আর পড়েছি। এত অল্প পরিসরে এতটা সার্থকভাবে তুলে ধরা তোমার পক্ষেই সম্ভব অম্বরীশ। হ্যাটস অফ জানাই তোমায়। - সত্যিই অসাধারণ। নিপুণভাবে কথকতা আর ছবিগুলোকে অসাধারণভাবে ফুটওয়ে তুলেছো। শূণ্য দশকের কবিদের গদ্যে ফেরাটা কেবল সময়ের অপেক্ষা এটুকু বলতে পারি।
এইযে গরম গরম বাটার টোস্ট, ওমলেট আর চা চলে এসেছে। - আরে মামু, কে বানালো তুই? ভেরী গুড। খিদে পেয়ে গেছে রে। নাগো মামু, শুধু চা টা আমি বানিয়েছি। টোস্ট আর ওমলেট বাবা বানিয়েছে। আসলে আমারও খুব খিদে পেয়েছিল তাই বাবাকে বললাম। আর বাবা বানিয়ে বললো নিয়ে আসতে। - হুম, দুই পেটুক একসাথে জুটেছে। যেমন মামু তেমনি তার ভাগ্নে। আরে আগে খেয়ে তো নিই। তারপর কথা হবে। আপাতত ব্রেক নেওয়া যাক্ একটু। কি বলো সবাই? - ব্রেক হোক। টোস্টগুলো খুব মুচমুচে হয়েছে। আর ওমলেটটাও টেস্টি। আর চা টা অসাধারণ হয়েছে। - কে বানিয়েছে দেখতে হবেতো... খাওয়াদাওয়া তো হলো। আড্ডায় ফেরা যাক্। - একদম। যে কথা হচ্ছিল। ফিরি। আচ্ছা আমরা তো সবাই কবিতা, গল্প পড়ছি সুব্রতর কবিতার কথা কি ভুলে গেলাম সবাই। সুব্রত কবিতা শোনাও। - সে শোনাব নিশ্চয়ই। সবার শেষে। এখন অম্বরীশের গল্প নিয়ে বাকী কথাটুকু হোক। যেটা বলছিলাম, "কর্তব্য"এ এক জটিল অবস্থান। দুটো মেয়েকে নিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়া ও নীল হয়ে আকাশে মিশে যাওয়া... আবার " গাছ" এর কথা লিখেছে গল্পকার অম্বরীশ অনায়াস দক্ষতায়। বাবা তো প্রতিটি মানুষের জীবনে গাছের মতোই। বলতে পারি জীবন গাছ। তারই প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। আর "নীতিকথা" য় ছোট্ট মেয়ের কাছে বাবার শেখাটা ধরা পড়েছে। যা আমাদের অন্যরকম ভালোলাগায় ভরিয়ে তোলে। আমরা তন্ময় হয়ে পড়ি... রেশ থেকে যায়...
- বাবলি দি, এবার পড় তুমি। "অনাচার"- স্বরবর্ণের পথে হেঁটে গিয়ে/ লিখেই ফেললাম বিন্যস্ত ব্যাকরণ,/ আর খুব গোপন অনাচারের আখ্যান!/ যা আড়াল করেছিলাম নিতান্তই / তোমার চোখের কথা ভেবে,/ যে চোখের দহনে দাহ হয়/ একটা নদী আর ক্ষতবিক্ষত অনাচার"। - বেশ ভালো লাগলো দিদি। " স্ব-অন্বেষণ" এ তুমি অবয়বহীন ডাইমেনশনে লজ্জাকে ফ্রেমবন্দী করে রাখো তুমি। আবার প্রত্যাশিত ভুল চাহনি’র অবসান ঘটিয়ে টিস্যু পেপারে মুছে দাও বিষাদ। অবধারিত যন্ত্রণা, অবগাহনে ডুবে যাওয়ার মধ্যে বেআব্রু জীবনের স্ব-অন্বেষণ ঘটাও তুমি। - ঠিক তেমনি করে তোমার কলমে তুলে এনেছো - "শস্যদেবতা"য় সময়ের পালা বদল, স্বপ্নেদের নেমে আসা গোপন টানেল বেয়ে। শস্যদেবতার বীজ বপনে ও সশব্দ রাত জেগে থাকে"। একটা কথা বলতেই হবে, " তন্দ্রা, স্বপ্ন এবং মুখোশ" কবিতা আগে লেখা হলেও বর্তমানের সময়কে তুলে ধরলো অনেকটাই। "ফসিলের মতো সম্পৃক্ত মুহুর্তোগুলো/ অপ্রকাশ বিষাদ মেখে হেঁটে যাই/ শূণ্যতার দিকে।/ এতসব তন্দ্রা, স্বপ্ন অথবা আত্ম নিষেকের উর্বরতা যাপন করি/ স্বজনহীন যান্ত্রিক খেয়ালে।/ মোমের মত রাত গলে যায় দুর্বোধ্য আগুনে।/ আর সাদা মেঘ নেমে আসে/ আমাদের সাজঘরে/ এবং অবিরত চলতেই থাকে/ মুখোশের কার্নিভাল।" - নিজের শহর নিয়ে বাবলি দি শোকাতুর। এভাবেই তার চিহ্ন "অন্তর্জলি যাত্রা" য় দেখতে পাই আমরা। "যেদিন শহর ডুবল জলে/ একবুক আগুন নিভিয়ে এলে/... যেদিন/ শহর পুড়ল বারুদে.../ দুচোখ ভরা বৃষ্টি নিয়ে এলে/ সে বৃষ্টিতে/ আকাশও ভিজে গিয়ে/ তোমাতেই বানভাসি হল"- এভাবেই বলে ওঠো তুমি। আর আমরা দেখে নিই একটুরো ছবি।
দীপান্বিতার "বাঁধনে" পিছুটান, ক্ষয় কিসে রাখবে সেই প্রশ্ন করেছে। তেমনি রোজকার অভিযোগ ও অভিমানেরা মাখামাখি হয়ে গেছে। অনেক কিছু সরালেও বড়াই এর তীর বুকের ভেতর বিঁধছে। হারানোর সুর বিষন্ন সানাইয়ে বেজে ওঠে। মায়ার বাঁধনে জড়ায়। খুব সামান্য অক্ষরের জাদুতে ছবি আঁকা হয়ে গেছে। - "পশমিনা চাঁদ" কবিতায় "ভিনদেশী এক পশমিনা চাঁদ জলোচ্ছাসের পর জেগে উঠেছে। কাজল চোখের কোণে জমিয়েছে কোন গোপন আতাত। মেঘের সাথে আড়ি যেন বাড়িয়ে রেখেছে তফাৎ। শেষ লাইন চমৎকার। " খুব গোপনে ভিজলো এ মন.../ ছুইতে চেয়ে ব্যর্থ বিফল/ জোস্নার ক্ষত।" "নিয়ে যাবি" তে দীপান্বিতার খুব ইচ্ছে করে পাশাপাশি হাত ধরে সুমুদ্দুরে যেতে। কবি হারিয়ে যেতে চায় অচিনপুরে। বলে ওঠে, "নিয়ে যাবি?/ আমার তো খুব ইচ্ছে করে,/ সঙ্গে তোর রাত্রি দিনের সাতকাহনে।" গহন থাকার ইচ্ছেগুলোই নদী হয়ে বয়ে যায় ভেতর বাইরের খরস্রোতে। তারপর ইতিবৃত্ত লেখা হয় শেষ পেরেকে। - পুরোনো ও নতুনের মিশেলে কবির যাপন ধরা পড়ে এভাবে, "অথচ এই ঘনীভূত রূপকথায়,/ আহ্নিক ঘিরে বৈরাগী বনবাস।/ পদ্যে লেখা সে ডুবে যাওয়া নদী,/ যাপনে রাখা উলম্ব অবসাদ।" এভাবেই কবিতার কাছাকাছি চলে আসে পাঠক।
আবার কবি বাবলি সূত্রধর সাহার কলম বলে ওঠে, "অযুত বছর চলে যায় প্রত্যাশিত/ ডার্ক রুমে"। " অযুত" শব্দের প্রয়োগে কবি তুমি এনে দিলে এক বহুমাত্রিক রূপটান। বাবলি দির বইটিও মুদ্রণ প্রমাদে পড়েছে। অম্বরীশের বইতে থাকলেও তুলনামূলক তা কম। এই ত্রুটিটুকু বাদ দিলে কবি ও গল্পকারের যাপনের স্বাক্ষর বহন করছে আমাদের আজকের আলোচ্য বইগুলো। বাবলি দি'র মায়াজড়ানো কবিতা "পয়লা জুলাই" পড়ছি। একমাত্র বোনকে হারানোর যন্ত্রণাবোধের সঙ্গী হই আসুন পাঠক। "পয়লা জুলাই ফিরলাম শহরে,/ সেই যে নদী উৎসব, নুড়ি পাথরের/ ফেলে আসা জল রং আর/ তোমার ল্যাভেন্ডারের শিশি,/ সবই গোছানো ছিল;/ অথচ গতকালই চলে গেলে তুমি.../ ক্ষতচিহ্ন রয়ে গেল শুধু ইনজেকশনের চ্যানেল!/ আর বেঁচে থাকার মিথ, জন্মান্তরের সনেট।/ এবং কিছু ব্যথার হাইফেন।/ সবটাই গুছিয়ে রাখি বিষন্নতার নোনাজলে!" - এর পর আর কথা থাকতে নেই।
……………………………………………………………………………………………………….
১. আলোচ্য গল্পের বই- সরীসৃপ সঙ্গ, লেখক- অম্বরীশ ঘোষ প্রকাশক - দি সী বুক এজেন্সী, কলকাতা প্রথম প্রকাশ - মহালয়া ১৪২৬, সেপ্টেম্বর ২০১৯ মূল্য- ১২০/- টাকা
২. আলোচ্য কাব্যগ্রন্থ - "কাচ পোকাদের প্রেম"। কবি- বাবলি সূত্রধর সাহা প্রকাশক- দৃশ্যমুখ প্রকাশন,
প্রচ্ছদ- উত্তম চৌধুরী,
প্রকাশকাল- জানুয়ারী ২০২০
মূল্য- ৩০/- টাকা
৩. আলোচ্য কাব্যগ্রন্থ- "যারা যাপনে নেই" কবি- দীপান্বিতা রায় সরকার প্রকাশক- মামমাম বুকস্, কলকাতা প্রকাশকাল- ফেব্রুয়ারী ২০১৯, মূল্য- ১৫০/- টাকা ……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
সুব্রত সাহা, চা বাগান ঘেরা ছোট্ট জনপদ শামুকতলা, আলিপুরদুয়ার জেলায় থাকেন। ৭ই জুলাই ১৯৮১তে জন্ম। বাংলার পাশাপাশি সমাজকর্ম বিষয়ে স্নাতকোত্তর। শিক্ষকতার সাথে যুক্ত। "ক্রিয়েটিভ আইডিয়াস ফোরাম" এর কর্ণধার। ভালোবাসাবাসি কবিতা, গদ্য লেখা ও সমাজ সচেতনতায় অংশ নেওয়ার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক আড্ডা। লিখেছেন সচেতনতামূলক কয়েকটি ছোট্ট নাটক। করেছেন কয়েকটি পত্রিকা সম্পাদনাও। সবুজের চিঠি, অথবা এবং নীল পাখি সম্পাদনা ও প্রকাশনাতে যুক্ত ছিলো। কবিতা লেখার শুরু শূন্য দশকে, দু'হাজার সালে। একমাত্র কবিতার বই - "যে গানে বৃষ্টি নামে"। "এখন বাংলা কবিতার কাগজ" জলপাইগুড়ি থেকে প্রকাশিত হয় ২o১১ এর কলকাতা বইমেলায়।
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
No comments:
Post a Comment