Monday, August 31, 2020

মানিক সাহা

 কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার জেলার শূন্য দশকের কবিরা

মানিক সাহা



 আমরা যখন লিখতে এসেছি, বাংলা কবিতার ক্ষেত্রভূমি তখন নব্বইয়ের দামালদের দখলে। নব্বইয়ের কবিদের অনেকেই প্রতিষ্ঠানকে অবলম্বন করে খ্যাতি ও যশ লাভ করার দৌড়ে মেতেছে। প্রতিষ্ঠান-বিরোধি যারা তারাও  নিজেদের মধ্যে সংঘ গড়ে তুলেছে। কবিতার চর্চা  আর শহরকেন্দ্রিক নয়। বরং সুদূর মফঃসলের আপাত নির্ভার বাতাসে বাংলা কবিতার শিল্পীত অক্ষরগুলো  প্রতিধ্বনি   হতে শুরু করেছে। যদিও আশির দশক থেকেই কবিতা নন্দন তত্ত্বের প্রচলিত বিধি ডিঙোনোর সাহস দেখিয়েছে 'নতুন কবিতা'য়। কিন্তু তা পরিপূর্ণ রূপ লাভ করছে শূন্যে এসে। কিংবা অন্যভাবে বললে এও বলা যায় আশির দশকের নতুন কবিতার ধারা যখন নব্বইয়ে এসে কিছুটা শিথিল হয়ে গেছে, শূন্য দশকের কবিতা সেই নতুন কবিতার ধারাকে এগিয়ে নিয়েছে  নিজেদের মতো করে। 

বাংলা কবিতার মূল ধারা লক্ষ্য করলে দেখা যায় তা মূলত শহরকেন্দ্রিক। যদি কেউ গ্রাম বা মফস্বলের শক্তিশালী কবির কথা বলে শহরকেন্দ্রিক ধারনার নশ্বরতা ও অর্থহীনতাকে প্রকাশ করার চেষ্টা করেন, তবুও দেখা যাবে সেই গ্রাম বা মফস্বল আসলে মেদিনীপুর, মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়া, বীরভূম, পুরুলিয়া কিংবা হুগলী'র কোন গ্রাম বা ছোট শহর। অর্থাৎ বাংলা কবিতার তথাকথিত প্রবক্তাগণ অন্তত বর্ধমানের উপরের অংশ থেকে যেতে পারছেন না। অথচ আশি বা নব্বই দশকের কবিতা লক্ষ্য করলে দেখা যাবে কবিতা ক্রমশঃ এই সীমারেখা অতিক্রম করতে শুরু করেছে। এবং শূন্যে এসে অনেকটাই বদলাতে শুরু করেছে।

শূন্য দশকের কবিরা মূলত ১৯৮০ বা তার সামান্য আগে পরে জন্মানো মানুষ। ফলে আমরা যারা এই সময়কালে জন্মেছি আমাদের চোখের সামনে সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সর্বোপরি তথ্য প্রযুক্তির   বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে। আমরা তার প্রত্যক্ষদর্শী ও তাতে সামিল হয়েছি। এই পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও জীবনকে গ্রহণ করার মানসিকতা ও পদ্ধতিও কিছুটা বদলে গেছে। নব্বইয়ের প্রতিষ্ঠিত কবি ছন্দ মিল করতে গিয়ে প্রেমের সাথে এটিএম বসিয়ে দিয়েছেন নির্দ্বিধায়। বাংলা কবিতায় উঠে এসেছে নতুন নতুন শব্দ ও শব্দ ভাবনা। যে জগৎ মানুষের ভাবনার অতীত ছিল তা বাস্তবে দেখা দিয়েছে। ফলে কবিতাও তার গতিপথ নজের মতো করে বদলে নিয়েছে এটা বলাই যায়। 

কবিতার ভাব নির্ভর জগৎ থেকে কবিতা মুক্তি পেয়েছে শূন্য দশকের কবিদের হাতে। প্রথা বিরোধী, ধারাবিরোধী, নতুন কবিতা - যা-ই লেখা হোক না কেন, শূন্যের কবিরা এসে সেই সব কবিতাকে আরো নতুন ভাবে নিজেদের মতো করে প্রকাশ করতে শুরু করে৷ একদিকে যখন অনিমিখ, সংঘমিত্রা, নীলাব্জ, দেবাঞ্জন, অর্ঘ, ইন্দ্রনীল, রিপন,  পলাশ, অস্তনির্জন, দোলনচাঁপারা লিখছে সেই সময় অর্থাৎ ২০০০ পরবর্তী সময়ে কোচবিহারে বসে কবিতা লিখছি আমি, অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায় , ওয়াহিদা খন্দকার । উদয়ার্ণব ও সুকান্তও লিখছে কিছুদিন পর থেকে। ওদিকে আলিপুরদুয়ার থেকে লিখছে মূলত সুব্রত সাহা, শুভঙ্কর পাল। তবে এই সময় এদিকটায় শূন্য'র মুখপত্র হিসেবে কোন পত্রিকা প্রকাশিত হয়নি। ফলে আমরা লিখছি কলকাতা তথা দক্ষিণবঙ্গ থেকে প্রকাশিত পত্রিকাগুলিতে। অবশ্য নব্বই ও নব্বই পূর্ববর্তী পত্রিকাগুলি আমাদের লেখা প্রচুর ছেপেছে।

জলপাইগুড়ি থেকে প্রকাশিত 'এখন বাংলা কবিতার কাগজ' নতুন বাংলা কবিতা প্রকাশের ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। এখন এর সম্পাদকের নাম অতনু বন্দ্যোপাধ্যা।  ওঁর এক বন্ধু নীলাদ্রি বাগচি তখন কোচবিহারের জেলা পুলিশের প্রধাণ হিসেবে চাকরি করছে৷ অতনুদা কোচবিহারে এসেছে। অর্জুন ফোন করে আমাকে ডাকলো। আমিও বিকেলের দিকে চলে গেলাম কোচবিহারে। প্রথম দেখা ও কথাতেই আপন করে নেবার স্বভাব অতনুদার।  এখন বাংকা কবিতার কাগজে লিখতে লিখতে পরিচয় হচ্ছিল শূন্যের অন্য সব কবিদের সাথে। অর্ঘ, দেবাঞ্জন, অস্তনির্জনের সাথে সাক্ষাৎ হল। বাংলা কবিতা নতুন গতিপথে বইতে শুরু করেছে তখন।

২০০০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত সময়কালকে শূন্য দশক হিসেবে ধরা হল। এই সময় প্রচুর বই বের হচ্ছিল বললে মিথ্যে বলা হবে৷ শূন্য দশকের কবিরা লিখতে এসেই টপ করে বই করে ফেলেনি। বরং বই প্রকাশের থেকে বই পড়া ও লেখার প্রতি অভিনিবেশ মূখ্য হয়ে দেখা দিয়েছে। তবে ২০০০ এর মধ্যভাগ অতিক্রম করার পর থেকে শূন্য দশকের অনেকেই নিজেদের বই প্রকাশ করতে শুরু করলো৷ তবে দুঃখের বিষয়টিহল এই যে আমাদের কোচবিহার বা আলিপুরদুয়ার জেলার কবিরা বই প্রকাশের ব্যাপারে অতটা আগ্রহ দেখায়নি। সকলেই একে অপরের সাথে পরিচিত হচ্ছে। পরিসর বিস্তৃত হচ্ছে। শূন্যের কবিরা বাংলা কবিতার মূল ক্ষেত্রটি অধিকার করে ফেলছে ধিরে ধিরে৷ আমরা তখন নিয়মিত লিখে চলেছি কৌরব, নতুন কবিতা, কবিতা ক্যাম্পাস, এখন,  বৈখরীভাষ্য,  কবিসম্মেলন, কবিতা পাক্ষিক ইত্যাদি পত্রিকায়। এসময়ে লক্ষ্য করার মতো বিষয় ছিল এই যে, পূর্ববর্তী পত্রিকাগুলি যা মূলতঃ আশি বা নব্বইয়ের কবিরা প্রকাশ করছিল, তার দায়িত্ব চলে আসে শূন্য দশকের কবিদের হাতে।  ফলে শূন্যের কবিরা নিজেদের পত্রিকা প্রকাশের বিষয়টি তেমনভাবে ভাবার অবকাশ পায়নি। 

কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার থেকে যে কবিরা শূন্য দশকের প্রতিনিধিত্ব করেছে তাদের মধ্যে প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয় সম্ভবতঃ  অর্জুনের।  '২০ মিনিটের জন্য সুমিত্রা মুখোপাধ্যায়' প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তারপর দীর্ঘ বিরতি। এইসময় আমরা বাংলা সাহিত্যের পাশাপাশি  বিদেশী সাহিত্যের  দিকে ঝুঁকে গেছি। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, এই সময় আমরা কবিতাকে বাংলা কবিতার ভাব- সর্বস্বতা ও এর  লিরিক নেচার থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করছি। কবিতাকে আরো স্মার্ট কী করে করা যায় সেই কথা ভাবছে শূন্যের কবিরা। প্রথাগত কাহিনি নির্ভরতাকে পুরোপুরি ত্যাগ করা হয়েছে। ছন্দবদ্ধ লেখাও খুব কম লেখা হচ্ছে বা লেখা হচ্ছে না বললেই চলে। কবিতা হয়ে গেছে ওপেন এন্ডেড। চিত্রকল্প ব্যবহার কমছে। যেটুকু ব্যবহৃত হচ্ছে তাও নতুনতর। কেননা,  আগেই লিখেছি, তথ্য প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতি ঘটছে সারা পৃথিবী জুড়ে।   ফলে নতুন শব্দ, নতুন ভাবনা,  নতুন চিত্রকল্প জন্ম নেবে এটাই স্বাভাবিক। অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায় চলতি হাওয়ায় গা ভাসায়নি। তাই ওর লেখা হয়ে উঠেছে ওর নিজস্ব। শূন্য দশকে প্রচুর কবিতা লেখা হলেও গদ্যের সম্ভার অপ্রতুল বলা যায়। হাতে গোনা কয়েকজন মাত্র গদ্য সাহিত্য রচনায় বিশেষ মুন্সিয়ানা দেখিয়েছে৷ অর্জুন তাদের অন্যতম। ওর উপন্যাস 'বঙ্কিমচন্দ্র', আমার মতে,  বাংলা সাহিত্যে বিশেষ স্থান অধিকার করে থাকবে। 'বঙ্কিমচন্দ্র'  ছাড়াও অর্জুনের আরো বেশ কিছু গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।  উল্লেখযোগ্য হল - 'ডি মেজর', 'ডাক্তারকে যা বলেছিলাম', 'উন্নয়ন বিরোধী যেসব কার্যকলাপ এখন শহরে হচ্ছে',' মরণ অন্তরালে' ইত্যাদি।

আলিপুরদুয়ার জেলার শামুকতলায় থাকে সুব্রত সাহা। প্রান্তিক গ্রাম বললে খুব একটা ভুল বলা হয়না। সুব্রত একদিন ফোন করে জানালো সে একটা পত্রিকা করছে। ওর পরিকল্পনা শুনে আমি বিস্মিত হয়েছিলাম। এই ছোট্ট জনপদে বাস করা একটি সাধারণ  ছেলে তার স্বপ্নকে কতটা বিস্তৃত করতে পারে সেটা ভেবেই অবাক হয়েছিলাম। 'নীলপাখি' নামে পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যা রাজকীয় ভঙ্গিতে প্রকাশ পেয়েছিল। প্রচুর অর্থব্যয় করেছিল নিজের স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দেওয়ার জন্য। কিন্তু বাস্তব বড়ই নির্মম। পত্রিকাটি আর চালানো সম্ভব হয়নি। 

অন্যদিকে কোচবিহারে কলেজে পড়া ছেলে সুকান্ত দাস পত্রিকা প্রকাশের সম্ভাবনাকে প্রায় বাস্তব রূপ দিয়ে ফেলেছে৷ সুকান্ত বয়সে অনেকটা ছোট এবং লেখালেখির ক্ষেত্রে শূন্য দশকের প্রায় শেষের দিকে তার  আবির্ভাব। ফলে সুকান্তকে শূন্য পরবর্তী তথা প্রথম দশকের  কবিদের মধ্যেও ধরা যেতে পারে৷ আমার মনে হয় সুকান্ত নিজেকে প্রথম দশিকের কবি হিসেবেই নিজেকে পরিচয় দিতে অধিক স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে। সে যা-ই হোক, সুকান্ত প্রকাশ করলো 'শাঙ্ক্ষিক'।  আনন্দের বিষয় হল পত্রিকাটি মাঝখানে কিছুদিন বন্ধ এবং অনিয়মিত প্রকাশিত হলেও আবার নতুন করে প্রকাশ হতে শুরু করেছে। সুকান্ত দাসের সঙ্গে যার নাম মনে আসে সে হল উদয়ার্ণব বন্দ্যোপাধ্যায়। শূন্য দশকের শেষের দিকে লিখতে আসা শক্তিশালী কবিদের অন্যতম উদয়ার্ণব। তার প্রকাশিত একটি কাব্যগ্রন্থের নাম এখানে উল্লেখ করত্র ইচ্ছে করছে - যদিও তা ২০১০ এর পরে প্রকাশিত- তা হল ' মৃত্যুর পর যে ঘড়ায় চড়ে তুমি দেশ পেরোবে'। 

আলিপুরদুয়ার জেলা থেকে যে কবিরা শূন্য দশকের প্রতিনিধিত্ব করেছে শুভঙ্কর পাল তাদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। শুভঙ্কর বারোবিশার ছেলে। লেখালেখির পাশাপাশি পত্রিকা সম্পাদনার ক্ষেত্রে শুভঙ্কর আমাদের কাছে উদাহরণ স্থাপন করেছে। বারোবিশার মতো প্রান্তিক জনপদে বাস করে নতুন কবিতা লেখার সাহস দেখিয়েছে সে। আর দুঃসাহস দেখিয়েছে 'কবিতা করিডোর' প্রকাশ করে। এবং আমি মনে করি শুভঙ্কর সত্যিই এই দুঃসাহস দেখানোর স্পর্ধা রাখে৷ কেননা 'কবিতা করিডোর' উত্তরবঙ্গ থেকে প্রকাশিত প্রথম পূর্ণাঙ্গ ব্লগজিন। এই মুহূর্তে বঙ্গ, বহির্বঙ্গের প্রচুর কবি সাহিত্যিক লিখে চলেছেন এই ব্লগজিনে।  শুভঙ্কর নিজের লেখার পাশাপাশি অনুবাদের কাজও চালিয়ে যাচ্ছে। তবে কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের ক্ষেত্রে ও আজও সিদ্ধান্ত নেয়নি। আশা করি খুব শিগগির ওর কবিতার সংকলন পড়ার সুযোগ করে দেবে শুভঙ্কর। 

ওয়াদিহা খন্দকার দিনহাটার মেয়ে। আমার সহপাঠী। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকে কবিতা লিখছে৷ যদিও তখন কবিতা লেখার স্রোত ছিল একটু মন্থর। পরবর্তীতে অনেক লিখেছে। লিখে চলেছে। প্রকাশিত হয়েছে দু'টি কাব্যগ্রন্থ - 'নীরব দশমিকের ভিড়' এবং ' বিবর্ণ শ্লেটের সমীকরণ'। এখানে বলে রাখা ভালো ওয়াহিদা শূন্য দশকে লেখা শুরু করলেও তার বইদুটিই সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে৷ 

দশক বিভাজন খুব জটিল এক প্রক্রিয়া। কবি ও সমালোচক নিজেরা নিজেদের মতো করে দশকের ব্যাখ্যা দিয়ে চলেছেন। যদিও এই দশক বিভাজন বিষয়টি একটি ভ্রান্ত ব্যাপার বলে মনে করেন, তথাপি আলোচনার সুবিধার্থে একে উদ্ভাবন করা হয়েছে। কবি সাহিত্যিকদের নিয়ে এক্ষেত্রে কিছু সমস্যাও দেখা যায়। যেমন বয়সের দিক থেকে অনেক কবি হয়তো নব্বই দশকের কবি হিসেবে স্থান পাবে কিন্তু লেখার সময়কাল ধরে তিনি প্রথম দশকে স্থান পেয়েছেন। আবার অনেকে শূন্য দশিকে প্রচুর লিখেছেন, পরিচিত হয়েছে, অথচ তার কাব্যগ্রন্থ প্রথম দশকে প্রকাশিত হওয়ায় তিনি নিজেকে প্রথম দশকের কবি হিসেবেই পরিচয় দিতে চেয়েছেন। যদিও কবিতার বই প্রকাশের বিষয়টির চেয়ে, কবির লেখার মূল সময়কে ধরে দশক বিভাজন করলে ভালো হয় বলেই আমার মনে হয়। 

শূন্য দশকে কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারের কবিদের নিয়ে আলোচনা পরবর্তী সময়ে আরো বিস্তৃত হবে আশা করি। অনবধানতাজনিত কারণে যারা অনুল্লেখিত হয়েছে তাদের নিয়ে পরবর্তী পরিসরে আবার লেখা হবে৷ 

    

পরিচিতিঃ মানিক সাহা

কবি ও গদ্যকার শূন্য দশক 

দিনহাটা

কোচবিহার

প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থঃ 

ছায়ারোদের ব্রেইল (২০১৩)

'জলজ্যোৎস্নার মেয়ে' (২০১৭)

অশ্বমেধের ঘোড়া (২০১৯)

1 comment: