' কবিতা করিডোর ' উত্তরবঙ্গের প্রথম মাসিক ওয়েবজিন । এই ব্লগ নতুন সৃষ্টি নিয়ে ভাবে । কবিতা নয় সাহিত্যের নানা দিক ও চিত্রকলা থেকে চলচ্চিত্র সবেতেই এই ব্লগ নতুন ভাবনার পথিক ।
Monday, July 8, 2019
সম্পাদকীয়
' স্মৃতি সতত সুখের ' কথাটি নেহাতই কথা নয় । স্মৃতির সরণি বেয়েই আবারো ফিরে আসা । বেশ কিছুকাল নিজের সাথেই নিজের লড়াই চলছিলো । চোখের জন্য কিছুটা বিরতি । এবার আবারো নতুন ভাবে কবিতা , গল্প ও গদ্য নিয়ে হাজির কবিতা করিডোর । বিজ্ঞাপনের চমকে নয় গুণগত মানেই বিশ্বাস রাখে কবিতা করিডোর । আকারে নয় বরং প্রাকারে এগিয়ে থাকে .......
ধন্যবাদান্তে
শুভঙ্কর পাল
সম্পাদক - কবিতা করিডোর
' স্মৃতি সতত সুখের ' কথাটি নেহাতই কথা নয় । স্মৃতির সরণি বেয়েই আবারো ফিরে আসা । বেশ কিছুকাল নিজের সাথেই নিজের লড়াই চলছিলো । চোখের জন্য কিছুটা বিরতি । এবার আবারো নতুন ভাবে কবিতা , গল্প ও গদ্য নিয়ে হাজির কবিতা করিডোর । বিজ্ঞাপনের চমকে নয় গুণগত মানেই বিশ্বাস রাখে কবিতা করিডোর । আকারে নয় বরং প্রাকারে এগিয়ে থাকে .......
ধন্যবাদান্তে
শুভঙ্কর পাল
সম্পাদক - কবিতা করিডোর
উত্তর পূর্বের কবিতা
বসন্ত ও কুয়াশা
শতদল আচার্য
শিলচরে বসন্তে ও কুয়াশা নামে
কুয়াশা ভরা ভোরে
তোমার গাড়িতে এয়ারপোর্ট ।
যারা জানে না ,জীবনযাপন
প্রেম নামক শব্দটির সংজ্ঞা।
কথা বলা কয়েকটা মুহূর্ত
অনন্ত আকাশ জুড়ে ভালবাসা হয়
কিছু ভালবাসার গল্প ভেবে
বিকেলে ঘুমিয়ে যাওয়া
আমার বসন্ত যাপন ছিল না কোনদিন
বসন্ত নিয়ে এক ছবি ছিল
সমস্ত রাস্তায় পাতায় ঢেকে ,
একা কোন বন্ধুর হেঁটে যাওয়া ।
উত্তরণ
নীলাদ্রি ভট্টাচার্য
উত্তর নেই তবু আশ্রয় আছে
চৌহদ্দিতে এখন অগ্রহায়ণ শীত
বৈঠা তুলে অভিনব তুলতুল রোদ
ছোটো নৌকো
সুতোর মতো জলে গাঁথা।
দুপুরের চোখের ভেতর
পালিয়ে যাচ্ছে সাড়ে তিন হাতের ধোঁয়ায়
আবৃত চিনেমাটির গন্ধ অপার।
সেই ঘরে কিছু শাঁখের সন্ধে
বাতাসে কাঁপে
নিয়মিত গোপন স্বপ্নের তেমাথা
উপরে দাঁড়িয়ে আছে অবাক সন্ন্যাস
দুপাড়ে মাটি চাপা হৃদয়ের ঘাম।
খোঁজ
দেবাশিস সায়ন চক্রবর্তী
উত্তর কেনো চাও হে পরমাত্মার শৈশব
স্বাধিষ্ঠানে আমিত্বের গোড়ামি ভাসে,
পঞ্চমুখী রুদ্রাক্ষ পড়ে মানসিকতা নরপিশাচ!
বৈষম্যের শ্লোগান আর পুকুর চুরি হরদম,
এই বল্কল গুলো উপড়ে ফেলি এসো।
ইন্দ্রি়য় শোধন করে নাও আয়না দেখে—
আনন্দ প্রেম, ভিক্ষা চাই তার কাছে চলো—
নিত্য শুদ্ধ অলিপান করে হারাই কেন?
এসো দুহাত তুলে বলি
“সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম”।
জন্ম বিজ্ঞানময়, জীবন রহস্যময়’
আর মৃত্যু সে তো চিদানন্দময়—
মৃত্যুকে, ভালোবেসে।
বিজয় ঘোষ
অন্তহীন মৃত্যুর খোঁজে ঘুরে বেড়াই। সে নিঃশ্বাস ফেলে।ঈষৎ উষ্ণ সেই শ্বাস।আমি ভয় পাই!অথচ মৃত্যু এক চরম সত্য। আমি জানি জন্ম নাও হতে পারে। কিন্তু মৃত্যু...
বৈশাখের নতুন সকাল।কত ফুল।অজস্র ভালোবাসা আর ফুলম গামোছা।
এরই মধ্যে মৃত্যু চেয়ে থাকে স্থির চোখে-----
তখন মনে হয় আমিও তাকে ভালোবাসি ইশারায় জানিয়ে দিই সে ভালোবাসার কথা...
বসন্ত ও কুয়াশা
শতদল আচার্য
শিলচরে বসন্তে ও কুয়াশা নামে
কুয়াশা ভরা ভোরে
তোমার গাড়িতে এয়ারপোর্ট ।
যারা জানে না ,জীবনযাপন
প্রেম নামক শব্দটির সংজ্ঞা।
কথা বলা কয়েকটা মুহূর্ত
অনন্ত আকাশ জুড়ে ভালবাসা হয়
কিছু ভালবাসার গল্প ভেবে
বিকেলে ঘুমিয়ে যাওয়া
আমার বসন্ত যাপন ছিল না কোনদিন
বসন্ত নিয়ে এক ছবি ছিল
সমস্ত রাস্তায় পাতায় ঢেকে ,
একা কোন বন্ধুর হেঁটে যাওয়া ।
উত্তরণ
নীলাদ্রি ভট্টাচার্য
উত্তর নেই তবু আশ্রয় আছে
চৌহদ্দিতে এখন অগ্রহায়ণ শীত
বৈঠা তুলে অভিনব তুলতুল রোদ
ছোটো নৌকো
সুতোর মতো জলে গাঁথা।
দুপুরের চোখের ভেতর
পালিয়ে যাচ্ছে সাড়ে তিন হাতের ধোঁয়ায়
আবৃত চিনেমাটির গন্ধ অপার।
সেই ঘরে কিছু শাঁখের সন্ধে
বাতাসে কাঁপে
নিয়মিত গোপন স্বপ্নের তেমাথা
উপরে দাঁড়িয়ে আছে অবাক সন্ন্যাস
দুপাড়ে মাটি চাপা হৃদয়ের ঘাম।
খোঁজ
দেবাশিস সায়ন চক্রবর্তী
উত্তর কেনো চাও হে পরমাত্মার শৈশব
স্বাধিষ্ঠানে আমিত্বের গোড়ামি ভাসে,
পঞ্চমুখী রুদ্রাক্ষ পড়ে মানসিকতা নরপিশাচ!
বৈষম্যের শ্লোগান আর পুকুর চুরি হরদম,
এই বল্কল গুলো উপড়ে ফেলি এসো।
ইন্দ্রি়য় শোধন করে নাও আয়না দেখে—
আনন্দ প্রেম, ভিক্ষা চাই তার কাছে চলো—
নিত্য শুদ্ধ অলিপান করে হারাই কেন?
এসো দুহাত তুলে বলি
“সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম”।
জন্ম বিজ্ঞানময়, জীবন রহস্যময়’
আর মৃত্যু সে তো চিদানন্দময়—
মৃত্যুকে, ভালোবেসে।
বিজয় ঘোষ
অন্তহীন মৃত্যুর খোঁজে ঘুরে বেড়াই। সে নিঃশ্বাস ফেলে।ঈষৎ উষ্ণ সেই শ্বাস।আমি ভয় পাই!অথচ মৃত্যু এক চরম সত্য। আমি জানি জন্ম নাও হতে পারে। কিন্তু মৃত্যু...
বৈশাখের নতুন সকাল।কত ফুল।অজস্র ভালোবাসা আর ফুলম গামোছা।
এরই মধ্যে মৃত্যু চেয়ে থাকে স্থির চোখে-----
তখন মনে হয় আমিও তাকে ভালোবাসি ইশারায় জানিয়ে দিই সে ভালোবাসার কথা...
চৈত্রের সঙ১
দেবাশিস মুখোপাধ্যায়
হেলমেট আর সূর্যমুখী থেকে সরছে না মাথা
যে নীল কুড়িয়ে নেব নীলকুঠির ওপার থেকে
বাজারে আঙুর এলে আপেলের দাম বেড়ে যায়
লোকেরা জানে তবুও শুকতারা কিনে ভোরে
বাড়ি ফিরে রোদে বিছিয়ে দেয় ঘামের জামা
নিজের গন্ধ থেকে মাঝে মাঝে পালাতে ইচ্ছে হয়
গা-র যেমন গান গাইতে ধারাজলের বাথরুমে
চৈত্রের সঙ ২
মুক্তো ভাবলেই সমুদ্রের আছাড়িবিছাড়ি
আঁচ করে নি আর একটা কাজুবাদামের
পাহাড়ের ভেতর বরফ খুঁজতে থাকি
যতক্ষন না চোখের লোনাজল গান করে ঠোঁটে
আর ঝাউবন ভেঙে দেয় বালিঘর
গাজনের জিভ ফুঁড়ে
চৈত্রের সঙ ৩
মেঘলা চিঠি লিখে বসে আছে সকালের আকাশ
এমন সন্ন্যাসী ভাব বল রে জবা বললেও
কথা ফুটছে না বলেই ভেতরের রক্ত আইস
দেখছে না চড়কের মেলা ভিড়ের সূচিপত্র
সরিয়ে ফেলেছে মাদলের ইতিহাস
আর মুখোশের উৎস কাহিনী
চায় না বলেই স্মার্টফোনই ঝুমুর গাইছ
চৈত্রের সঙ ৪
দশমী শেষ । বাসন্তী চলে যাওয়ার দিনে
জীববিদ্যার বই খুলে খুঁজে যাই বিলুপ্ত
জীবদের বৈজ্ঞানিক নাম আর জিভের
ভেতর লেগে আছে সেই কুমারী
যে ফুল তুলতে গিয়ে গল্পের কুমির
পেয়ে আর ফেরত আসে নি বিলুদের পাড়ায়
অস্তগামী পুকুরের আলোয় বৃষ্টি এলে
কাকভেজা শব্দে কাঁসর ঢাক বাজে
আর ঝাঁপের প্রস্তুতি চলে
চৈত্রের সঙ ৫
জোরালো খঞ্জনির শব্দ সন্ধ্যার বৃষ্টি ঢেকে দেয়
লালন লালিত কথা পলকা লালে ভিজে গেলে
হাড়ে হাড়ে ক্ষত ভিতর শরীর ক্ষেপায় আর নীল
শিবের অনুচর ভূত মাথায় খেলা শুরু করে
রণ পায় পায় ঢোল বাজে বোলান গানে গম্ভীরায়
পোশাক খসে গেলে বাতাসে বাতাসে বাতাসা লুট আর তালি
চৈত্রের সঙ ৬
খোলের চামড়ায় খোলে তারকব্রহ্ম নাম
ও পাড়ার রাধার কন্ঠি কেঁপে ওঠে
নতুন ব্রিজের নীচে তাকে কৃষ্ণ পেলে রা
ধ্যাণ করতে যায় সেলুনের ক্ষুরে
চাঁদের আলো মেঘলা মেখে
ছদ্মগানে সেফটিপিনে টাকা বেঁধে দিলে
চিৎ হওয়া শরীরে আনন্দের দীর্ঘশ্বাস
মাথুর শোনে একলা এপ্রিল
চৈত্রের সঙ ৭
এদিক সেদিক পড়ে থাকা ধুতুরা আকন্দে
মৃদু মৃদু মৃদঙ্গ বহুরূপী ভিখারি শোনে
ধূলা পাগুলি পেলে লুটিয়ে পড়ে হারমোনিয়াম
বটতলার সিঁদুর মাখা থানে নামানো কাঁচা আমবেল
আর আড়বাঁশি কিশোরের হারিয়ে নূতন সড়কের
ওপারে বুক ধড়পড় গান বাজে ডিজে বক্সের
ছৌ নাচের রাবণ মাহাতো মরে গেলে
জাতীয় শোক না
হালখাতার উৎসবে লেখা বকেয়া
চৈত্রের সঙ ৮
করাতের কান্না শুনি
আর সাজিয়ে নি মরুদ্যান কল্পনার আঁকার খাতায়
ক্রমশ পাথর থেকে রজনীগন্ধা খসে পড়ে রজনী শরীরে
অন্ধরা তমসায় গেয়ে ওঠে সুন্দরের গান
সমবেত বাজনার সুরে এক নিরুদ্দেশ যাত্রায়
হারিয়ে যায় সিনেমা নায়িকা
ব্লেড দিয়ে শিরা কাটবার পর
গুণ টানে গানের পর্দায়, ওকে কাট
চৈত্রের সঙ ৯
জলেরও অভাব হয়
দ্যাখো চোখে মহুয়ার দেশে
মাইল মাইল ভারসাম্য রক্ষার সার্কাস
ভাদু বুনতে পারে না
অসময়ে শহর বেতারের ভাটিয়ালি শুনে
শুকনো মাই টানে মেদহীন ঝুলন্ত কুসুম
কামারের আগুনে
হাজার হাজার পাতা উড়ে জড়ো হলে
রামলীলার হনুমান লঙ্কা পুড়িয়ে
গরম ভাতে দিয়ে বুঝে নেয় হাভাতের স্বাদ
চৈত্রের সঙ ১০
কাঁচা আমকুচিরা নুন আর সরষের তেল পাচ্ছে না
জিভের ভেতর ইচ্ছা জমিয়ে রাখা
বেরোচ্ছে না রোদের পাঁচিলের পারে
পাখিটির ডানা খুঁজে নিতে চাইছে টুসুগান
গাছের শরীরে আর কোনো গাছ নেই
রক্তপাত আছে রক্তচাঁদ ছাড়া
এক গ্রাস খেতে গেলে চন্দ্রগ্রাস লাগে
কুচি খুলে গ্রহণের পরেও
নীল আলো সহ্য করে যায় অন্ধকার
উদয়ার্ণব বন্দ্যোপাধ্যায়
বিতর্ক রেখার নিচে
১.
আমরা বুঝতে পারছি সামনে অজগর
দারোগাগিরির স্লোগান ভীষণ উচ্চারিত হচ্ছে
কোলের শিশুকে ইঁদুরের উপদ্রব
একজন কবি মারা যাচ্ছেন ঈগল কোণে
ঠান্ডা মাথায় যতটা চাবুক কষা যায়
তার ফল শিয়ালের টুকে খায়
একজন রাজনীতিবিদ তার তিন তলা ফ্ল্যাট থেকে
ছুঁড়ে দেন বাসি খাবার
যদিও ভিখারীরা বরাবর দেশের সম্পদ
ইন্দ্রনীল ব্যানার্জীর কবিতা
যা বলতে পারিনি
অন্য আমি ...
আমার সাহসিকতার গল্পগুলো একদিন শুনবে বলেছিলে
বলেছিলে শহরের বুকে জেগে থাকা গাছের মত জেগে থেকে
আমাকে ভয়মুক্ত করে আগলে রাখবে
বলেছিলে চুলের ছায়ার শীতলতায় আমাকে শান্তি দেবে দুদন্ড
আরও কত কিছুই যে বলেছিলে অব্যক্ত বর্ণমালায় !
অথচ সাহস করে কিছুতেই বলতে পারিনি !
লতা গুল্মের মত কিভাবে নির্ভরযোগ্য কাঠামো খুঁজি এখনো I
বলতে পারিনি
কি বিশাল অন্ধকার আমার এই শরীর ও মনের ভেতর I
বলতে পারিনি
কিভাবে কোথাও পরাজিত হয়ে লুকাতে চাই মুখ I
বলতে পারিনি
কিভাবে যেন আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছি I
বলতে পারিনি
কিভাবে কত প্রিয় ডাক শুনিনি বহুদিন I
বলতে পারিনি
কিভাবে নিজেই নিজের শরীরে বিঁধেছি আলপিন
কিভাবে নিজেই নিজেকে ক্রুশে বিদ্ধ করে যিশু হয়ে গিয়েছি
এসব কোনো কিছুই বলতে পারিনি তোমায়
যা শুনলে তুমি হয়ত বিচারক হয়ে শাস্তি শুনিয়ে দিতে কঠোর I
জশপুর ...ছত্তিসগড় ...৩১/০৩/২০১৯
প্রবীর রায়ের দুটি কবিতা
-------------------------
বিচারসভা
উষ্ণ এই ঝোড়ো দিনেও ক্যালেন্ডুলা ফুটে আছে
বিশ্বাস কি মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে এই বাগানের আমার প্রতি
শুকনো নিমপাতা যেমন ছড়িয়ে তেতো করতে চাইছে মাটি
মনে করিয়ে দিতে চাইছে অনুকীটদের সাথে তার বোঝাপড়া
নাকি শুধু আমার জন্যই
সূর্যমুখী না ফোটার জন্য ভুল ব্যবহার
দোষী রয়ে গেল পাতায় পাতায়
সবই ঠিক ছিল শুধু আমার ভ্রান্তচালনা
একাল বৈশাখী
করজোড়ে অমঙ্গল জানিয়ে যাচ্ছে নতুন পরিচয়
চৌকাঠের চল ছিল অতীতের চালাঘরে
সে সব ডিঙিয়ে যাবার মত সতর্কপ্তা নেই আর
অনায়াসে হাত পেতে নেওয়ার আলাপ
দুচারটে কথায় শেষ হয়েও হয়না
বেশ আছি বললেই ভেঙ্গে পড়ে পুরনো ঘরবাড়ি
গল্প :
রঞ্জিত
রঙ্গন রায়
বাড়িটাকে দেখে ভালো লাগেনি রঞ্জিতের। শহরের একেবারে শেষ প্রান্তে ফাঁকা জায়গায় থাকা বাড়ি সমন্ধে কারোরই খুব একটা ভালো লাগা থাকেনা। কিন্তু কিছু করার নেই। ক্যুরিয়ারের পার্সেলে এই বাড়ির ঠিকানাই রয়েছে।
এখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। এটা শেষ ডেলিভারি। এরপর বাড়ি।
কলিংবেল বাজাতে গিয়ে রঞ্জিত দেখলো কলিংবেল বলে কোনো বস্তু বাড়ির দরজায় নেই। এবার সে ফাঁপরে পড়লো। ভেতরের লোকদের ডাকবে কী করে? গোটা বাড়িটাই প্রায় ফাঁকা মনে হয়। সন্ধ্যা হওয়াতেও কোনো আলো টালোর বন্দোবস্ত নেই। এতো মহা সমস্যা! চিৎকার করবে? কিন্তু গলা দিয়ে তো শব্দই বেরোবেনা। গতকালই তো . . .
হঠাৎ বাড়ির ভেতরে একটা আলো জ্বলে উঠলো বলে মনে হল। এবং একটু পরেই একটা দরজা খুব যন্ত্রণা মিশ্রিত শব্দে খুলে গেল। একটা থুত্থুরে বুড়ো। বয়সের গাছ পাথর আছে বলে মনে হয়না। রঞ্জিতের বুড়োটিকে দেখা মাত্র অস্বস্তিটা আরোও বেড়ে গেলো। এ লোকটা যেন ঠিক লোক নয়।
- কী এসেছে পার্সেলে?
রঞ্জিত বুড়োটার ঘর্ঘরে কন্ঠে এই প্রশ্ন শুনে চমকে উঠলো। সে একেবারেই প্রস্তুত ছিলনা যে কেউ এ বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে ক্যুরিয়ার বয়কেই উল্টে প্রশ্ন করবে।
- আজ্ঞে , পার্সেলে কী আছে তা কি করে বলি বলুন! ওটা খোলার তো এথিকস্ নেই আমাদের।
- তা বটে। আসলে আজ অনেক বছর পর কোনো পার্সেল এভাবে ক্যুরিয়ারে এলো কি না।
- ও , আচ্ছা। নিন স্যার , এই কাগজ টাতে একটা সই করে দিন।
- আরে , আগে ঘরে তো এসো। সন্ধ্যে বেলায় এসেছো , তাও কদ্দিন বাদে একজন স্বজাতীর মুখ দেখলাম। এমনি এমনি ছাড়ি কি করে। ঘরে এসো।
স্বজাতী? কি বলছে কি বুড়োটা? সে তার স্বজাতী হবে কি করে? না না , এই বুড়ো নির্ঘাৎ উন্মাদ। তাই জন্যই বাড়িটাকে ভালো লাগেনি রঞ্জিতের। সে নেগেটিভ এনার্জি ফিল করতে পারে।
- সরি স্যার , আমাদের রুলস অ্যান্ড রেগুলেশনে কাস্টোমারের বাড়িতে বসবার কোনো নিয়ম নেই।
- আহা! নিয়ম তো তৈরিই হয় নিয়ম ভাঙার জন্য।
- না স্যার , নিয়ম ভাঙতে পারবোনা , আমার চাকরি চলে যাবে। প্লিজ এখানে সই করুন আর আমাকে রিলিজ করুন।
- আরে বাবা তুমি বুঝতে পারছোনা। তুমি তো রিলিজ হয়েই গেছো। আর তোমার চাকরিরও প্রয়োজন নেই। বরং অযথা যে মানুষের নিয়ম গুলো অভ্যাসের বশে পালন করে চলেছো সেটাও তো ভাঙতে হবে না কি!
- মানে টা কী? কী উল্টোপাল্টা বকছেন!
- তোমায় দেখেই চিনেছি , ওই তো গলায় এখনো চাকার দাগ রয়েছে। না হে বাপু মানুষ চিনতে ভুল হলেও স্বজাতীকে চিনতে আমি ভুল করিনা কখনো। ওই চাকার দাগটা তো কালকেরই , তাইনা?
রঞ্জিত
রঙ্গন রায়
বাড়িটাকে দেখে ভালো লাগেনি রঞ্জিতের। শহরের একেবারে শেষ প্রান্তে ফাঁকা জায়গায় থাকা বাড়ি সমন্ধে কারোরই খুব একটা ভালো লাগা থাকেনা। কিন্তু কিছু করার নেই। ক্যুরিয়ারের পার্সেলে এই বাড়ির ঠিকানাই রয়েছে।
এখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। এটা শেষ ডেলিভারি। এরপর বাড়ি।
কলিংবেল বাজাতে গিয়ে রঞ্জিত দেখলো কলিংবেল বলে কোনো বস্তু বাড়ির দরজায় নেই। এবার সে ফাঁপরে পড়লো। ভেতরের লোকদের ডাকবে কী করে? গোটা বাড়িটাই প্রায় ফাঁকা মনে হয়। সন্ধ্যা হওয়াতেও কোনো আলো টালোর বন্দোবস্ত নেই। এতো মহা সমস্যা! চিৎকার করবে? কিন্তু গলা দিয়ে তো শব্দই বেরোবেনা। গতকালই তো . . .
হঠাৎ বাড়ির ভেতরে একটা আলো জ্বলে উঠলো বলে মনে হল। এবং একটু পরেই একটা দরজা খুব যন্ত্রণা মিশ্রিত শব্দে খুলে গেল। একটা থুত্থুরে বুড়ো। বয়সের গাছ পাথর আছে বলে মনে হয়না। রঞ্জিতের বুড়োটিকে দেখা মাত্র অস্বস্তিটা আরোও বেড়ে গেলো। এ লোকটা যেন ঠিক লোক নয়।
- কী এসেছে পার্সেলে?
রঞ্জিত বুড়োটার ঘর্ঘরে কন্ঠে এই প্রশ্ন শুনে চমকে উঠলো। সে একেবারেই প্রস্তুত ছিলনা যে কেউ এ বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে ক্যুরিয়ার বয়কেই উল্টে প্রশ্ন করবে।
- আজ্ঞে , পার্সেলে কী আছে তা কি করে বলি বলুন! ওটা খোলার তো এথিকস্ নেই আমাদের।
- তা বটে। আসলে আজ অনেক বছর পর কোনো পার্সেল এভাবে ক্যুরিয়ারে এলো কি না।
- ও , আচ্ছা। নিন স্যার , এই কাগজ টাতে একটা সই করে দিন।
- আরে , আগে ঘরে তো এসো। সন্ধ্যে বেলায় এসেছো , তাও কদ্দিন বাদে একজন স্বজাতীর মুখ দেখলাম। এমনি এমনি ছাড়ি কি করে। ঘরে এসো।
স্বজাতী? কি বলছে কি বুড়োটা? সে তার স্বজাতী হবে কি করে? না না , এই বুড়ো নির্ঘাৎ উন্মাদ। তাই জন্যই বাড়িটাকে ভালো লাগেনি রঞ্জিতের। সে নেগেটিভ এনার্জি ফিল করতে পারে।
- সরি স্যার , আমাদের রুলস অ্যান্ড রেগুলেশনে কাস্টোমারের বাড়িতে বসবার কোনো নিয়ম নেই।
- আহা! নিয়ম তো তৈরিই হয় নিয়ম ভাঙার জন্য।
- না স্যার , নিয়ম ভাঙতে পারবোনা , আমার চাকরি চলে যাবে। প্লিজ এখানে সই করুন আর আমাকে রিলিজ করুন।
- আরে বাবা তুমি বুঝতে পারছোনা। তুমি তো রিলিজ হয়েই গেছো। আর তোমার চাকরিরও প্রয়োজন নেই। বরং অযথা যে মানুষের নিয়ম গুলো অভ্যাসের বশে পালন করে চলেছো সেটাও তো ভাঙতে হবে না কি!
- মানে টা কী? কী উল্টোপাল্টা বকছেন!
- তোমায় দেখেই চিনেছি , ওই তো গলায় এখনো চাকার দাগ রয়েছে। না হে বাপু মানুষ চিনতে ভুল হলেও স্বজাতীকে চিনতে আমি ভুল করিনা কখনো। ওই চাকার দাগটা তো কালকেরই , তাইনা?
অনুরূপা পালচৌধুরী
ট্রপিক্যাল ছায়াশরীক
___________________
১চুমুক রঙিন বরফিঠোঁট সবেমাত্র লাট খেতেই আততায়ী দুপুরের স্নিকারে চাক্কু চালানো ফুলস্টপ রিপোর্টে বেদুইন লাশটার নিখাদ মিছিল এগিয়ে এলো। কারবারী বুক থেকে নাভি ট্রানজিট চ্যানেল পেড়িয়ে এখন প্রসাধনী আওতার প্রেসিংক্লাব। গোটাকতক চোখ আর জিভের জলে ছটফটে চড়ুইভাতি চড়াই ভিজছে নির্ভেজাল ঘুলঘুলিমঞ্চে।
আলো বন্ধ করো। মেলে ধরো সামুদ্রিক ক্রসিংডায়াল। আলজিভের ছায়ায় কোনো সেফ ফাইটার বৃত্ত খুললে প্রথম কেন্দ্রবিন্দুতেই সেপটিক চাঁদখনন। অদৃশ্য ভোরের শিকড়ে সাদাটে ঢেউ পুড়িয়ে পুরুষক্ষুরের সংরক্ষণ। খসে পড়ে আবিষ্ট মেঘের কেনাইন সুলভ খন্ড দরজার ক্ষয়। আচমকা ঘুম ভাঙে করবীরোদের শরীরগত শবনমে। ৯০ দিনের ঘাসে গড়িয়ে যাচ্ছে উচ্ছেদের বেড়িমাটি।
জ্যোতির্ময় মুখার্জি
একটা ঢোঁড়া সাপ
সকালের সু মেখে পড়ে আছে একটা ঢোঁড়া সাপ। বেশ হৃষ্টপুষ্ট। জলকেলি সাঙ্গ করে উঠে এসেছে ডাঙায়। যদিও ওর ঘর-সংসারের খবর আমার জানা নেই। এমনকি জানি না ও ছেলে না মেয়ে। যৌবন আছে বেশ বা হয়তো সবেমাত্র একটা ব্যাঙ খেয়ে পরিপাকে তা দিচ্ছে
তা যাইহোক, দেখি কাদার মধ্যে ন্যাংটো হয়ে পড়ে আছে ও। আর পাশ দিয়ে পেরিয়ে গেল কয়েকটা হাঁস। একবার আড়চোখে। তারপর যে যার নিজের ছায়ায়
ছায়া বলতেই মনে পড়ল, আশ্চর্য! ওর তো কোনও ছায়া নেই। থাকেও না। তা সে যতই, আড় ভাঙলে মুচড়ে উঠুক রোদ
সকালের সু মেখে পড়ে আছে একটা ঢোঁড়া সাপ। বেশ হৃষ্টপুষ্ট। জলকেলি সাঙ্গ করে উঠে এসেছে ডাঙায়। যদিও ওর ঘর-সংসারের খবর আমার জানা নেই। এমনকি জানি না ও ছেলে না মেয়ে। যৌবন আছে বেশ বা হয়তো সবেমাত্র একটা ব্যাঙ খেয়ে পরিপাকে তা দিচ্ছে
তা যাইহোক, দেখি কাদার মধ্যে ন্যাংটো হয়ে পড়ে আছে ও। আর পাশ দিয়ে পেরিয়ে গেল কয়েকটা হাঁস। একবার আড়চোখে। তারপর যে যার নিজের ছায়ায়
ছায়া বলতেই মনে পড়ল, আশ্চর্য! ওর তো কোনও ছায়া নেই। থাকেও না। তা সে যতই, আড় ভাঙলে মুচড়ে উঠুক রোদ
কুকুর
আমার একটা বন্ধু আছে, নাম পার্থ। সেদিন ফোন করল, হ্যাঁ রে, একটা কুকুর হবে? বললাম, আমিও খোঁজ করছি একটা কুকুরের। তুই’ও সন্ধান পেলে বলিস
হ্যাঁ, ওর খুব কুকুর পোষার সখ। আগে একটা ছিল, মারা গেছে। অবশ্য, ও দরকারেই পোষে। প্যান্ডেলের বাঁশ পাহারা দিতে হবে তো বা ‘ম্যাঙ্গিফেরা ইন্ডিকা’
এখন, ‘ম্যাঙ্গিফেরা ইন্ডিকা’টি ঠিক কী বস্তু, সেটা জানতে গেলে আপনাকে অবশ্যই বুবুনের খোঁজ করতে হবে। বুবুন, মানে আমাদের বন্ধু, পিয়ালীর ‘মামা’। পিয়ালী, পিয়ালী সাহা। লেখালেখি করে, দেখতে ভালো, চিবুকে তিল আছে। চিনবেন হয়তো
তা আজ হঠাৎ একটু আগে দেখা। চুল কাটছিলাম, দাড়িও। ও সেলুনে এল, বলল পেলি। বললাম, না’রে। তবে আর খুঁজতে হবে না। তোকেই চেন দিয়ে বেঁধে রাখি, ব্যাপারটাতো একই
নিপাট ইয়ার্কি। কিন্তু ভাবছিলাম, সত্যিই তো। মানুষ যদি কুকুর হতো। মানে কুকুরের মতো হতো, তাহলে পৃথিবীটা কী সুন্দর হতো, তাই না?
আমার একটা বন্ধু আছে, নাম পার্থ। সেদিন ফোন করল, হ্যাঁ রে, একটা কুকুর হবে? বললাম, আমিও খোঁজ করছি একটা কুকুরের। তুই’ও সন্ধান পেলে বলিস
হ্যাঁ, ওর খুব কুকুর পোষার সখ। আগে একটা ছিল, মারা গেছে। অবশ্য, ও দরকারেই পোষে। প্যান্ডেলের বাঁশ পাহারা দিতে হবে তো বা ‘ম্যাঙ্গিফেরা ইন্ডিকা’
এখন, ‘ম্যাঙ্গিফেরা ইন্ডিকা’টি ঠিক কী বস্তু, সেটা জানতে গেলে আপনাকে অবশ্যই বুবুনের খোঁজ করতে হবে। বুবুন, মানে আমাদের বন্ধু, পিয়ালীর ‘মামা’। পিয়ালী, পিয়ালী সাহা। লেখালেখি করে, দেখতে ভালো, চিবুকে তিল আছে। চিনবেন হয়তো
তা আজ হঠাৎ একটু আগে দেখা। চুল কাটছিলাম, দাড়িও। ও সেলুনে এল, বলল পেলি। বললাম, না’রে। তবে আর খুঁজতে হবে না। তোকেই চেন দিয়ে বেঁধে রাখি, ব্যাপারটাতো একই
নিপাট ইয়ার্কি। কিন্তু ভাবছিলাম, সত্যিই তো। মানুষ যদি কুকুর হতো। মানে কুকুরের মতো হতো, তাহলে পৃথিবীটা কী সুন্দর হতো, তাই না?
আলো ছায়ার দিনগুলি রাতগুলি
------------------------------ -----
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
১
শোকসভায় একের পর এক সাজানো কথা। সব আলোর গল্প। চব্বিশ ঘণ্টায় একফোঁটাও অন্ধকার নেই ? এরা কারা, যারা তোমার কথা আউড়ে যাচ্ছে ? তুমি এদের একজনকেও ভালো করে চিনতে ? এদের সাহস দেখলে আমার কথা বন্ধ হয়ে আসে। আজকের একটা কথাকেও কাঁটাতার পার হতে হবে না। কারণ আসল মানুষটাই তো নেই। তাছাড়া শোকসভা কেন ? তুমি কি লোককে দেখানোর জিনিস ?
২
ছাতায় কতটা রোদ আটকায় জয়রাজ ? ভয়ঙ্কর দাবদাহে ছাতার ভেতরটাকে তুমি কি নাম দিয়েছ ? সেখানে কি বৃষ্টি পড়ে ?
ছাতা মাথায় আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু ছাতা মাথাতে রেখেও মুখে বিরক্তি প্রকাশ করো কেন ? তুমি কি চাও ? পৃথিবী থেকে কি রোদ মুছে যাক ? মানতে পারবে ? তোমার চারপাশে কি সবাই তোমার পছন্দের লোক থাকবে ? কেন তারা তোমার মতো চলবে ? তুমি মানিয়ে নাও ------ তোমারই তো লাভ। সবাই নিজেকে ছড়িয়ে বাঁচতে যায়। সে তার মতো। তোমার মতো তুমি।
৩
চারপাশটা দেখলে মনে হয় ঝড় আসার আগের মুহূর্ত যেন। সবাই সবকিছু গুটিয়ে নিতে ব্যস্ত। কেউ কারো দিকে তাকাচ্ছে না। মনে হচ্ছে এখনই সবকিছু খেয়ে নিয়ে পালিয়ে যাবে সবাই। ছাদের ওপর দাঁড়িয়ে আমি অনেককিছু দেখতে পাই। খুব দ্রুত একটা বিন্দু আর একটা বিন্দুর দিকে সরে যাচ্ছে। সেই বিন্দুটিও নিজের জায়গা থেকে সরে যাচ্ছে দূরে। কেউ একমুহূর্তও তার নিজের জায়গায় স্থির নেই। আমার খুব কষ্ট হয় জয়রাজ। যে মাটির ওপর আমি দাঁড়িয়ে থাকব শেষদিন পর্যন্ত তাকেও ঠিক ঠিক ভাবে চেনা হয়ে উঠল না আমার।
রাত
নীলিমা দেব
১
একশো সেতারের সুর নিয়ে
পিওর অন্ধকার
কমলা গাছের ঘ্রাণের মতো
চুপচাপ নদী
কেবল কুড়িয়ে যাচ্ছে জল
তাও যদি সহজ হতো রাত.......
২
এভাবেই খুচরো পরিচয়
ততটাই ফ্রী যতটা পূর্বাভাস
আলোয় টোকা দিতে দিতে
শুকিয়ে যায় বেলা
রাতের বিপরীত......
৩
আগুনের কুয়াশায় ছড়িয়ে যাচ্ছে ক্ষত
ঘর ভর্তি বারান্দা
আলো ভাঙছে
আলো গড়ছে
যতদূর চাঁদের লাইব্রেরী
শেষ পর্যন্ত রাত হতে হতে
আয়ুর আঁধার...........
শোকের ভেতর একটা দাউ দাউ সোনাপাড়া
সুবীর সরকার
১।
তো,সেই নদী করতোয়া আর তার গম্ভীর সেতু অতিক্রম করে নদীপার্শ্বের নানান দৃশ্যপট কলাবাগিচা অতিক্রম করে আমরা পৌঁছলাম ঘোড়াঘাট।ইতিহাসপুরাণমিথ বিনির্মিত হয়ে সুপ্রবীন এই ঘোড়াঘাট পরগণার হাওয়াবাতাসের দিকে ঝুঁকে পড়ে কবি এগিয়ে এলেন প্রসন্নতা নিয়ে।আমি সিগার ধরালাম।কবি মজে গেলেন ধূমায়িত চায়ের কাপে।কবি আজ উৎফুল্ল।তার মাথার চুল যেন চাঁদ ধোয়া।শরীরে আবহমানের বাংলাদেশ।এই কবি আমাদের দোস্ত।এই কবি অসুখজড়ানো অসুখফেরত।এই কবি বেঁচে থাকতে চাওয়া বেঁচেবর্তে থাকা জীবনঘনিষ্ঠ এক মিরাকলের মতো।এই কবি আমার কাছে আশ্চর্য এক বিষ্ময়।কবি থাকেন বসবাস করেন নদীপুকুরবিলখালজমিজিরেত ধানের গন্ধে ভরা আশ্চর্যতম এক গ্রাম সোনাপাড়ায়।কবিতাগ্রাম সোনাপাড়া।এই কবি মাসুদার রহমান।অজস্র জন্ম ধরে আমি যার দিকে যাচ্ছি।যার দিকে ভাসিয়ে দিচ্ছি আকুতিভরা চোখ।আর করতোয়ার পানসা জলে পানসি ভাসে।মেঘ ভাসে আসমানে।
দিগন্ত টিগন্ত পেরিয়ে আসে কবি।মাথার ওপর আকাশের মেঘলা আলো।জীবন ও মরণের এই পৃথিবী আর তার বুকের ভেতর থেকে উঠে আসা জীবনযাপন,দৈনন্দিন মাসুদারকে অন্যমনষ্ক করে দেয়।চিরকালীন সব জিজ্ঞাসারা ঘিরে ধরলে সে ঘোরের ভিতর ডুবে যেতে থাকে।উচারণের মৃদুমন্দের ফাঁকে ফাঁকে বুনে দিতে থাকে কবিতার পর কবিতা-
‘আকাশ স্বচ্ছ হলে পড়া যাবে ঈশ্বরের সমাধি-ফলক
দাঁড়াও বাংলাদেশ,ওপারে অন্য গ্রহলোক’।
দৃশ্যের পর দৃশ্যের জন্ম দেখে মাসুদার।ধানবাংলার পাখি,পাখিদের জন্যই মনোরম হয়ে ওঠা ভোরবেলাগুলি;তাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় ডিলিরিয়ামের দিকে।ওপার বাংলা থেকে আসা ‘কবিতা ক্যাম্পাস’ পত্রিকার পাতায় সে আকূল হয়ে খুঁজতে থাকে অপর কবিতার ভুবনমায়া।দীর্ঘ অসুখের দিকে কখন কিভাবে যেন চলে যাওয়া!আর অসুখ থেকে ফিরে আসলেই বারীন ঘোষালের চিঠিগুলি তাকে আশ্রয় দেয়।ঘুমোতে যাবার আগে তার কন্ঠে ঝরে পড়েন আল মাহমুদ-
‘তাড়িত দুঃখের মতো চারপাশে
অস্পষ্ট স্মৃতির মিছিল’।
২।
সোনাপাড়ার পথে পথে ক্ষেতে ক্ষেতে মাঠে মাঠে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে উত্তরের আকাশের বিস্তৃতির দিকে সঙ্গনিঃসঙ্গতা নিয়ে তাকিয়ে থাকা মাসুদারের।দিনের পিঠে দিন চলে যায়।উঠোনের হাঁসগুলি মোরগগুলি বেড়ালগুলি গরুগুলি মোষগুলি হালের বলদগুলি সবই থাকে চিরন্তনতা নিয়ে।মাসুদার তার ব্যর্থতাগুলি নিয়ে ভাবে।সফলতাগুলিকে উপেক্ষা করে।য়াজ বিকেলে কি তবে সে বাংলাহিলির দিকে চলে যাবে!সীমান্তের দিকে চলে যাবে!সুমাত্রাকে নিয়ে দেখা করে আসবে জিরো পয়েন্টে কবি সুরজ দাসের সাথে।ওপাড়ের বই পত্রপত্রিকারা অপেক্ষা করে আছে তার জন্য।উমাপদ কর ফোন দিয়েছিলেন।কদিন আগে ‘চিহ্নমেলা’ ঘুরে গেলেন উমা দা।সোনাপাড়াও ঘুরে গেলেন।খুব মনে পড়ে বউদির কথা।দেখা হওয়ার কথা হওয়ার আন্তরিক মূহুর্তগুলি নাড়া দিয়ে যায়।সুমাত্রাকেও।না,এসব থাক।আজ কোথাও যাবার নেই।বরং প্রশান্ত গুহ মজুমদারের ‘কাহাদের কথা’ বইটি নিয়েই বসা যাক।সাধুভাষায় লিখিত টানা গদ্যের কবিতাপুস্তক।
৩।
শোকের ভিতর আগুনের ভিতর রক্তপাতের ভিতর কতবার যাওয়াআসা।কত কত জন্মজন্মান্তর জুড়ে কবিতাবুনন।সেই বুননের হলকায় অর্ন্তদহনে ছিন্ন হতে হতে মাসুদারের যাপনটা ক্রমবর্ধিত হতে হতে একসময় পাখামেলা ব্রিজে লালন সহ তার উঠে পড়া।হাওয়ায় অগোছালো চুল।যেন বরফকুচি।মাসুদার চারপাশে পূর্ণদৃষ্টি মেলে।তার দৃশ্যসীমায় আসা খন্ডগুলি দৃশ্যসীমানার বাইরে বুঝি চলেও যেতে থাকে।আর তখন আবুল হাসানের কবিতার অন্তরীক্ষর কথা মনে পড়ে।আবুল হাসান তাকে উন্মনা করে তোলে-
‘জেনেছি মানুষ তার চিবুকের কাছেও ভীষণ অচেনা ও একা!
দৃশ্যের বিপরীত সে পারে না একাত্ম হতে এই পৃথিবীর সাথে কোনোদিন’।
জীবনের পরতে পরতে কি এক রহস্য!কি এক ইশারা!সরে আসতে আসতে কুহকের টানে কেবলই জড়িয়ে পড়া।তখন মাঠগুলি পুকুরগুলি রাস্তাগুলি পুকুরের অনন্ত হাঁসগুলি সোনাপাড়ার ভরাফসলের সব ধানবাড়িগুলি জন্মান্তরের অতিলৌকিকতায় জেগে থাকে।ভরভরন্ত হয়ে আকাশের পাখিগুলির দিকে দিনকালগুলির দিকে ধ্রুবসত্যের মতো অমোঘ হয়ে ওঠে।সোনাপাড়ার রাস্তায় রাস্তায় ছড়িয়ে পড়তে থাকে আব্বার কাশীর শব্দ আম্মার মোনাজাত মিঠুভাইএর হাসি লালনের বিবাগী হাঁটাচলা সুমাত্রার দৌড়ে যাওয়া।প্রহরের হাততালি থেকে মাসুদার বাস্তবে ফেরে।তার ঘোর ভেঙ্গে যায়।ইণ্ডিয়া থেকে সোনালি আপা,মানে কবি সোনালি বেগমের ফোন আসে।কত কথা হয় আপার সাথে।ক্যানভাস ভরে ওঠে রঙ ভাঙবার শিসে।মাসুদার তার কবিসত্ত্বার হাড়হিম অস্তিত্বের সংকট টের পায়।তার ভাবনাচৈতন্যপ্রবাহে তরঙ্গ তরঙ্গ বিদ্যুত।কবিতায় কি বলবে সে?জীবনের শিকড় স্পর্শ করতে গিয়েও সে কিন্তু বিভ্রান্ত হয়।বিচলনচলনজনিত বিভ্রান্তির ভিতর খেই হারাতে হারাতে সে আদতে কবিতার ভিতর দর্শন অনুসন্ধান করতে থাকে।মহাজীবনের চিরসত্যিগুলি মাঠ মাঠ ধান আকাশ আকাশ পাখি নদী নদী পানির মতো আপাতবিষ্ময় বহন করে।মাসুদার জানে,মাসুদার টের পায় কবির নিঃসঙ্গতা।কবির সংকট।কবির উদাসীন বিষ্ময়গুলিও।সে দ্রুত তার পাঠকক্ষের নির্জনতায় শামসুর রহমানের ‘স্মৃতির শহরে’ ডুবে যায়।এই গ্রন্থ তার চোখে পানি আনে।আবেগ আনে।ঠিক তখন সুমাত্রা কাঁচের বড় গ্লাসে চা এনে দেয়।
সুবীর সরকার
১।
তো,সেই নদী করতোয়া আর তার গম্ভীর সেতু অতিক্রম করে নদীপার্শ্বের নানান দৃশ্যপট কলাবাগিচা অতিক্রম করে আমরা পৌঁছলাম ঘোড়াঘাট।ইতিহাসপুরাণমিথ বিনির্মিত হয়ে সুপ্রবীন এই ঘোড়াঘাট পরগণার হাওয়াবাতাসের দিকে ঝুঁকে পড়ে কবি এগিয়ে এলেন প্রসন্নতা নিয়ে।আমি সিগার ধরালাম।কবি মজে গেলেন ধূমায়িত চায়ের কাপে।কবি আজ উৎফুল্ল।তার মাথার চুল যেন চাঁদ ধোয়া।শরীরে আবহমানের বাংলাদেশ।এই কবি আমাদের দোস্ত।এই কবি অসুখজড়ানো অসুখফেরত।এই কবি বেঁচে থাকতে চাওয়া বেঁচেবর্তে থাকা জীবনঘনিষ্ঠ এক মিরাকলের মতো।এই কবি আমার কাছে আশ্চর্য এক বিষ্ময়।কবি থাকেন বসবাস করেন নদীপুকুরবিলখালজমিজিরেত ধানের গন্ধে ভরা আশ্চর্যতম এক গ্রাম সোনাপাড়ায়।কবিতাগ্রাম সোনাপাড়া।এই কবি মাসুদার রহমান।অজস্র জন্ম ধরে আমি যার দিকে যাচ্ছি।যার দিকে ভাসিয়ে দিচ্ছি আকুতিভরা চোখ।আর করতোয়ার পানসা জলে পানসি ভাসে।মেঘ ভাসে আসমানে।
দিগন্ত টিগন্ত পেরিয়ে আসে কবি।মাথার ওপর আকাশের মেঘলা আলো।জীবন ও মরণের এই পৃথিবী আর তার বুকের ভেতর থেকে উঠে আসা জীবনযাপন,দৈনন্দিন মাসুদারকে অন্যমনষ্ক করে দেয়।চিরকালীন সব জিজ্ঞাসারা ঘিরে ধরলে সে ঘোরের ভিতর ডুবে যেতে থাকে।উচারণের মৃদুমন্দের ফাঁকে ফাঁকে বুনে দিতে থাকে কবিতার পর কবিতা-
‘আকাশ স্বচ্ছ হলে পড়া যাবে ঈশ্বরের সমাধি-ফলক
দাঁড়াও বাংলাদেশ,ওপারে অন্য গ্রহলোক’।
দৃশ্যের পর দৃশ্যের জন্ম দেখে মাসুদার।ধানবাংলার পাখি,পাখিদের জন্যই মনোরম হয়ে ওঠা ভোরবেলাগুলি;তাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় ডিলিরিয়ামের দিকে।ওপার বাংলা থেকে আসা ‘কবিতা ক্যাম্পাস’ পত্রিকার পাতায় সে আকূল হয়ে খুঁজতে থাকে অপর কবিতার ভুবনমায়া।দীর্ঘ অসুখের দিকে কখন কিভাবে যেন চলে যাওয়া!আর অসুখ থেকে ফিরে আসলেই বারীন ঘোষালের চিঠিগুলি তাকে আশ্রয় দেয়।ঘুমোতে যাবার আগে তার কন্ঠে ঝরে পড়েন আল মাহমুদ-
‘তাড়িত দুঃখের মতো চারপাশে
অস্পষ্ট স্মৃতির মিছিল’।
২।
সোনাপাড়ার পথে পথে ক্ষেতে ক্ষেতে মাঠে মাঠে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে উত্তরের আকাশের বিস্তৃতির দিকে সঙ্গনিঃসঙ্গতা নিয়ে তাকিয়ে থাকা মাসুদারের।দিনের পিঠে দিন চলে যায়।উঠোনের হাঁসগুলি মোরগগুলি বেড়ালগুলি গরুগুলি মোষগুলি হালের বলদগুলি সবই থাকে চিরন্তনতা নিয়ে।মাসুদার তার ব্যর্থতাগুলি নিয়ে ভাবে।সফলতাগুলিকে উপেক্ষা করে।য়াজ বিকেলে কি তবে সে বাংলাহিলির দিকে চলে যাবে!সীমান্তের দিকে চলে যাবে!সুমাত্রাকে নিয়ে দেখা করে আসবে জিরো পয়েন্টে কবি সুরজ দাসের সাথে।ওপাড়ের বই পত্রপত্রিকারা অপেক্ষা করে আছে তার জন্য।উমাপদ কর ফোন দিয়েছিলেন।কদিন আগে ‘চিহ্নমেলা’ ঘুরে গেলেন উমা দা।সোনাপাড়াও ঘুরে গেলেন।খুব মনে পড়ে বউদির কথা।দেখা হওয়ার কথা হওয়ার আন্তরিক মূহুর্তগুলি নাড়া দিয়ে যায়।সুমাত্রাকেও।না,এসব থাক।আজ কোথাও যাবার নেই।বরং প্রশান্ত গুহ মজুমদারের ‘কাহাদের কথা’ বইটি নিয়েই বসা যাক।সাধুভাষায় লিখিত টানা গদ্যের কবিতাপুস্তক।
৩।
শোকের ভিতর আগুনের ভিতর রক্তপাতের ভিতর কতবার যাওয়াআসা।কত কত জন্মজন্মান্তর জুড়ে কবিতাবুনন।সেই বুননের হলকায় অর্ন্তদহনে ছিন্ন হতে হতে মাসুদারের যাপনটা ক্রমবর্ধিত হতে হতে একসময় পাখামেলা ব্রিজে লালন সহ তার উঠে পড়া।হাওয়ায় অগোছালো চুল।যেন বরফকুচি।মাসুদার চারপাশে পূর্ণদৃষ্টি মেলে।তার দৃশ্যসীমায় আসা খন্ডগুলি দৃশ্যসীমানার বাইরে বুঝি চলেও যেতে থাকে।আর তখন আবুল হাসানের কবিতার অন্তরীক্ষর কথা মনে পড়ে।আবুল হাসান তাকে উন্মনা করে তোলে-
‘জেনেছি মানুষ তার চিবুকের কাছেও ভীষণ অচেনা ও একা!
দৃশ্যের বিপরীত সে পারে না একাত্ম হতে এই পৃথিবীর সাথে কোনোদিন’।
জীবনের পরতে পরতে কি এক রহস্য!কি এক ইশারা!সরে আসতে আসতে কুহকের টানে কেবলই জড়িয়ে পড়া।তখন মাঠগুলি পুকুরগুলি রাস্তাগুলি পুকুরের অনন্ত হাঁসগুলি সোনাপাড়ার ভরাফসলের সব ধানবাড়িগুলি জন্মান্তরের অতিলৌকিকতায় জেগে থাকে।ভরভরন্ত হয়ে আকাশের পাখিগুলির দিকে দিনকালগুলির দিকে ধ্রুবসত্যের মতো অমোঘ হয়ে ওঠে।সোনাপাড়ার রাস্তায় রাস্তায় ছড়িয়ে পড়তে থাকে আব্বার কাশীর শব্দ আম্মার মোনাজাত মিঠুভাইএর হাসি লালনের বিবাগী হাঁটাচলা সুমাত্রার দৌড়ে যাওয়া।প্রহরের হাততালি থেকে মাসুদার বাস্তবে ফেরে।তার ঘোর ভেঙ্গে যায়।ইণ্ডিয়া থেকে সোনালি আপা,মানে কবি সোনালি বেগমের ফোন আসে।কত কথা হয় আপার সাথে।ক্যানভাস ভরে ওঠে রঙ ভাঙবার শিসে।মাসুদার তার কবিসত্ত্বার হাড়হিম অস্তিত্বের সংকট টের পায়।তার ভাবনাচৈতন্যপ্রবাহে তরঙ্গ তরঙ্গ বিদ্যুত।কবিতায় কি বলবে সে?জীবনের শিকড় স্পর্শ করতে গিয়েও সে কিন্তু বিভ্রান্ত হয়।বিচলনচলনজনিত বিভ্রান্তির ভিতর খেই হারাতে হারাতে সে আদতে কবিতার ভিতর দর্শন অনুসন্ধান করতে থাকে।মহাজীবনের চিরসত্যিগুলি মাঠ মাঠ ধান আকাশ আকাশ পাখি নদী নদী পানির মতো আপাতবিষ্ময় বহন করে।মাসুদার জানে,মাসুদার টের পায় কবির নিঃসঙ্গতা।কবির সংকট।কবির উদাসীন বিষ্ময়গুলিও।সে দ্রুত তার পাঠকক্ষের নির্জনতায় শামসুর রহমানের ‘স্মৃতির শহরে’ ডুবে যায়।এই গ্রন্থ তার চোখে পানি আনে।আবেগ আনে।ঠিক তখন সুমাত্রা কাঁচের বড় গ্লাসে চা এনে দেয়।
বৃষ্টির নিজস্ব সংলাপ
চিরঞ্জীব হালদার
১
এক উদ্ভিন্না ষোড়শী পরে নিয়েছে বৃষ্টি বসন।
তার নিষিদ্ধ কথন মেঘেদের ডানা হয়ে উড়ে যেতেদেখলে
তুমি কি ঝুল বারান্দায় উদাস নক্ষত্রের নিভু আলোয়
নিজস্ব ব্রনদের কাছে জমা দেবে আত্মহত্যার কাহিনী।
না এই সব ষোড়শ সর্গে লেখা থাকেনা।
লেখো কালিদাস লেখো---
মশারীর বাইরে অসতর্ক কোলাহলের রোজনামাচা।
কোলবালিসের ভেতর মৃতপ্রেমিকদের হাড় থেকেজন্মনিচ্ছে
অসতী কথন।
২
মেসোপটেমিয়ার সেই মেয়ে যে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে
বৃষ্টির রূপরেখা পাঠ করে।
মোঙ্গোলিয়ার সেই পানপাতাধর্মী সুবালিকা
বৃষ্টির মধ্যে তার তুমুল বিনুনী বাঁধা যার অসামান্যকার্যক্রম।
যাকে তুমি নিষিদ্ধ রূপোর কৌটোয় উপহার দিয়েছিলেফোঁটা ফোঁটা অনৃত কথন।
সেই অপ্রেমিকা যার গুপ্ত অস্ফুট সংলাপ
পাহারা দেয় এক অক্ষৌহিনী মেঘ।
মেফ্লাওয়ার রোডে এরা সবাই এক যুবার সন্ধানেবেরিয়ে ঘরে ফেরেনি।
চিল্কা হ্রদে এদের দেখা গেছে তিন তিনটে পানসিতেচড়ে বসতে।
এরা কি জানতেন সরোবরজলের গতিধর্ম।
এরা কি জানতেন পাইলট পানসিতে সেইস্বপ্নেররাজপুত্রটি
তাদের নিয়ে চলেছে বৃষ্টির অনির্নেয় গন্তব্যে।
আমরা শুধু দেখে যাই আকাশের মরুদ্যানে
কলহপরায়ন মেঘের সিদুর খেলা।
এস ঋতু, স্বমহিমায় দুয়ারে দাঁড়ালে
সম্বোধন খোলামকুচি।
ভিতরে ভাল্গার স্তুপ বাহিরে অদৃশ্যকথন।
এসো বর্ষা এসো পতিত জল
প্রতি রোমকূপে এসো।
এসো বসতভূমির সততপুরাণের পাতায় পাতায়।
কি ভেজাবে ধর্ম না ধারক।
কোন জলছবি দিয়ে এঁকে দেবে বিমূর্ত প্রেমের কথন।।
শ্রাবণের পরিত্যক্ত পাতারা এসো
এসো কুলোর বাতাস অধার্মিক আলো
জলের বর্নণায় ভেজার প্রকৃত আরন্যক মন থেকে
যে পেঁচা উড়াল দিলো
তার শিকারভূমিকে সাক্ষি রেখে ভিজিয়ে দাও চরাচর।
আজ জলের জন্মদিন।
জাইগোটে জাইগোটে শ্রাবণের কেকাধ্বনি।
এসো শ্রাবণ প্রনম্য ঔরসে।
নিহিত কার্নিশের স্মৃতি ভাসিয়ে
জেগে ওঠো গুপ্ত পুরাণে।
৪
জাদুবিদ্যার গূঢ়কথন গুলোর মতো বৃষ্টি শুরু করলোসেই ভঙ্গিমা।
গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিকণার মন্ত্রধ্বনি
কাটা মুন্ডুর আবেশী তান্ডবে ভেসে যাচ্ছে পান্ডুলিপি।
তুমি কি মিথ্যে ভেসে যাও।
উপদ্রুত অক্ষর তুমি কি বাজার ফেরতা অটোচালকেদাঁড় করিয়ে
কোন তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রক গাড়িতে নিরুদ্দেশ।
পান্ডুলিপির সব অক্ষর কোন জাদুদন্ডে
নিথর শুয়ে আছে শবের মতো।
কোন পাখির শিষ নেই
শঙখ কুমারী নেই
হে বারিষকণা তুমি কি জন্ম শত্রুতায়
আমার ধর্মপত্নীর অর্ন্তবাস ভিজিয়ে
এক দুর্যোগতম নিশা উপহার দেবে।
এসো সাদা পৃষ্ঠা পান্ডুলিপির বিদেহী অক্ষরে।
এই সিঁদুরে টিপ পরে
আমি তো প্রস্তুত হাঁড়িকাঠে।
আর কত ভেজাবে এই সিক্ত ধর্মে নিষাদ মোহনায়।
Subscribe to:
Posts (Atom)
-
টংঘরে রাজা প্রথম মনীন্দ্র গুপ্ত রমিত দে ...” জন্ম থেকে এই জগৎকে পাঁচ ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব করেছি, আর তাঁর বিচিত্র অর্থ মনের মধ্যে উঁক...
-
চোখ নীলাব্জ চক্রবর্তী ক্যামেরা অর্থে কোনও কাগজের চোখ ঠাণ্ডা দেখি সম্পর্ক একটা গাছ ফেনার ভেতর কে একটা দশকের বারবার নাম বইছে কাঁচের...
-
গানদীঘির কবিতা সুবীর সরকার ১. রাজবাড়ীর আলো সাগরদীঘির জলে পৌষের ঘন হয়ে ওঠা শীত শহরে ছড়িয়ে পড়ে সুরেন বসুনিয়ার ভাওয়াইয়া ঘোড়া ছোটাচ্ছ...