Monday, July 8, 2019







চৈত্রের সঙ১
দেবাশিস মুখোপাধ্যায়

হেলমেট আর সূর্যমুখী থেকে সরছে না মাথা
যে নীল কুড়িয়ে নেব নীলকুঠির ওপার থেকে
বাজারে আঙুর এলে আপেলের দাম বেড়ে যায়
লোকেরা জানে তবুও শুকতারা কিনে ভোরে
বাড়ি ফিরে রোদে বিছিয়ে দেয় ঘামের জামা
নিজের গন্ধ থেকে মাঝে মাঝে পালাতে ইচ্ছে হয়
গা-র যেমন গান গাইতে ধারাজলের বাথরুমে

চৈত্রের সঙ ২


মুক্তো ভাবলেই সমুদ্রের আছাড়িবিছাড়ি
আঁচ করে নি আর একটা কাজুবাদামের
পাহাড়ের ভেতর বরফ খুঁজতে থাকি
যতক্ষন না চোখের লোনাজল গান করে ঠোঁটে
আর ঝাউবন ভেঙে দেয় বালিঘর

গাজনের জিভ ফুঁড়ে 

চৈত্রের সঙ ৩


মেঘলা  চিঠি লিখে বসে আছে সকালের আকাশ
এমন সন্ন্যাসী ভাব বল রে জবা বললেও
কথা ফুটছে না বলেই ভেতরের রক্ত আইস
দেখছে না চড়কের মেলা ভিড়ের সূচিপত্র
সরিয়ে ফেলেছে মাদলের ইতিহাস
আর মুখোশের উৎস কাহিনী

চায় না বলেই স্মার্টফোনই ঝুমুর গাইছ

চৈত্রের সঙ ৪


দশমী শেষ । বাসন্তী চলে যাওয়ার দিনে
জীববিদ্যার বই খুলে খুঁজে যাই বিলুপ্ত
জীবদের বৈজ্ঞানিক নাম আর জিভের
ভেতর লেগে আছে সেই কুমারী
যে ফুল তুলতে গিয়ে গল্পের কুমির
পেয়ে আর ফেরত আসে নি বিলুদের পাড়ায়
অস্তগামী পুকুরের আলোয় বৃষ্টি এলে
কাকভেজা শব্দে কাঁসর ঢাক বাজে
আর ঝাঁপের প্রস্তুতি চলে

চৈত্রের সঙ ৫


জোরালো খঞ্জনির শব্দ সন্ধ্যার বৃষ্টি ঢেকে দেয়
লালন লালিত কথা পলকা লালে ভিজে গেলে
হাড়ে হাড়ে ক্ষত ভিতর শরীর ক্ষেপায় আর নীল
শিবের অনুচর ভূত মাথায় খেলা শুরু করে
রণ পায় পায় ঢোল বাজে বোলান গানে গম্ভীরায়
পোশাক খসে গেলে বাতাসে বাতাসে বাতাসা লুট আর তালি


চৈত্রের সঙ ৬


খোলের চামড়ায় খোলে তারকব্রহ্ম নাম
ও পাড়ার রাধার কন্ঠি কেঁপে ওঠে
নতুন ব্রিজের নীচে তাকে কৃষ্ণ পেলে রা
ধ্যাণ করতে যায় সেলুনের ক্ষুরে

চাঁদের আলো মেঘলা মেখে
ছদ্মগানে সেফটিপিনে টাকা বেঁধে দিলে
চিৎ হওয়া শরীরে আনন্দের দীর্ঘশ্বাস
মাথুর শোনে একলা এপ্রিল

চৈত্রের সঙ ৭


এদিক সেদিক পড়ে থাকা ধুতুরা আকন্দে
মৃদু মৃদু মৃদঙ্গ বহুরূপী ভিখারি শোনে
ধূলা পাগুলি পেলে লুটিয়ে পড়ে হারমোনিয়াম
বটতলার সিঁদুর মাখা থানে নামানো কাঁচা আমবেল 
আর আড়বাঁশি কিশোরের হারিয়ে নূতন সড়কের
ওপারে বুক ধড়পড় গান বাজে ডিজে বক্সের
ছৌ নাচের রাবণ মাহাতো মরে গেলে
জাতীয় শোক না
হালখাতার উৎসবে লেখা বকেয়া

চৈত্রের সঙ ৮


করাতের কান্না শুনি
আর সাজিয়ে নি মরুদ্যান কল্পনার আঁকার খাতায়
ক্রমশ পাথর থেকে রজনীগন্ধা খসে পড়ে রজনী শরীরে
অন্ধরা তমসায় গেয়ে ওঠে সুন্দরের গান
সমবেত বাজনার সুরে এক নিরুদ্দেশ যাত্রায়
হারিয়ে যায় সিনেমা নায়িকা
ব্লেড দিয়ে শিরা কাটবার পর
গুণ টানে গানের পর্দায়, ওকে কাট

চৈত্রের সঙ ৯


জলেরও অভাব হয়
দ্যাখো চোখে মহুয়ার দেশে
মাইল মাইল ভারসাম্য রক্ষার সার্কাস
ভাদু বুনতে পারে না
অসময়ে শহর বেতারের ভাটিয়ালি শুনে
শুকনো মাই টানে মেদহীন ঝুলন্ত কুসুম
কামারের আগুনে
হাজার হাজার পাতা উড়ে জড়ো হলে
রামলীলার হনুমান লঙ্কা পুড়িয়ে
গরম ভাতে দিয়ে বুঝে নেয় হাভাতের স্বাদ

চৈত্রের সঙ ১০


কাঁচা আমকুচিরা নুন আর সরষের তেল পাচ্ছে না
জিভের ভেতর ইচ্ছা জমিয়ে রাখা
বেরোচ্ছে না রোদের পাঁচিলের পারে
পাখিটির ডানা খুঁজে নিতে চাইছে টুসুগান
গাছের শরীরে আর কোনো গাছ নেই
রক্তপাত আছে রক্তচাঁদ ছাড়া
এক গ্রাস খেতে গেলে চন্দ্রগ্রাস লাগে
কুচি খুলে গ্রহণের পরেও
নীল আলো সহ্য করে যায় অন্ধকার

No comments:

Post a Comment