Thursday, June 29, 2017

শুভঙ্কর পালের কয়েকটি অনুগল্প

চাঁদের কোন কলঙ্ক নেই / শুভঙ্কর পাল
কে গো ?
কে আবার রমলাকান্ত  উট নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে । ছায়া মেপে দেখলে বিকেল  গড়িয়ে গেল । নিবিষ্ট সকালে শিশিরের আঘ্রাণ এখনো লেগে আছে ওর মুখ । মুখ আর মুখোশ দুই মানুষে মনু জাত । জন্মেই আড়াল আবডাল সহযোগী ।
ভোটের আগে আর ভোটের পরে কে কার ছায়া মাপে । জোড়া হাতে কখনো চরণ ছুঁলেও জাত যায়না এমনি বালাই । মেগা সিরিয়ালের তাবড় তাবড় নেতারাও ঘোল খেয়ে যায় । খাবেন নাই বা কেন ? এমন গরমে নাকাল মানুষের তাৎক্ষণিকের সুখ যে মুখ্য হয়ে ওঠে ।

রামলাকান্ত এবারও হেঁটে যায়  । এখন আর ছায়া মাপে না । রমলার স্ত্রীর ভীষণ অসুখ । সে রক্তের জন্য দরজায় দরজায় ঘোরে  । হাসপাতালের বেডে করিমের রক্ত মিশে যায় । এখানে  মনু ও মানুষে প্রভেদ নেই । রামলা তাই ঈদের দিনে করিমের ঘরে পাত পেতে  জাত ধুয়েমুছে সাফ সফেদ করে দেয় । জানালা দিয়ে দেখা যায় করবাচদ আর ঈদের চাঁদ কোলাকুলি খাচ্ছে ।




অনুগল্প 
ভিখু < চাঁদ = জোছনা 

আহা ! লাউ বলিলেই কণ্ঠে গান আসে । ' সাধের লাউ বানাইলা মোরে ডুগডুগি ' 
গেয়ে দেখেনি রজকিনী কোনদিন । বরং জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে দেখে কি করে দিনদিন বেড়ে ওঠে লতায় লতায় । জানালা দিয়েই অনেকদিন দেখেছে ভিখু বৈষ্ণবী  রাঙা মাটির পথেই শহরে চলে যায় ।লাউয়ের সবটুকু নিংড়ে খোলের মধ্যে ভিখান্ন রাখে । খঞ্জনি  বাজাইয়া গান ধরে - 'গুরু না ভজি মুই সন্ধ্যা সকালে'.....দূরে তখনো সূর্য হামাগুড়ি দিয়ে আকাশে উঠছে । 
ভিখু নিজেও খুঁড়িয়ে চলে । সেই কবে পোলিওর অভিশাপ তার জীবনে  আঁধার নিয়ে এসেছে । আকাশে চাঁদ ওঠে , জোছনা খুলে দেয় মিহি আলোর সুখ । কেবল ভিখু ছায়া মেপে ঘরে ফিরতে থাকে । বাঁশ আর মাটিতে লেপা খুদে কুঁড়ে ঘরে ।
রজকিনী গুনগুনিয়ে ওঠে ' চাঁদ কেন আসেনা আমার ঘরে ' । দূরের চাঁদেলা ছায়ায় ভিখুর যৌবনে চাঁদের জোছনা খেলেনি আজও ।



চিত্র ঋণ : ইন্টারনেট