Wednesday, January 2, 2019

কবিতা করিডোর জানুয়ারি সংখ্যা 2019

কবিতা করিডোর,  জানুয়ারি, 2019



প্রচ্ছদ শিল্পী : শিলাদিত্য বসাক 

সম্পাদক : শুভঙ্কর পাল 
সহসম্পাদক : সব্যসাচী ঘোষ 
উত্তর পূর্বাঞ্চলের সম্পাদক : রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ 

সম্পাদকীয় : ইতিমধ্যে আরো একটি শীত ঘরের আঙিনায় হানা দিয়েছে …ব্যক্তিগত জীবনে চোখের সমস্যা আমাকেও শীত ঘুমে পাঠিয়েছিল l আবার জেগে ওঠা l কোনো লেখা বাদ গেলে দুঃখিত l এটা অনিচ্ছাকৃত l আবারো কবিতা, গল্পের ও বুক রিভিউ নিয়ে হাজির l 

উত্তর পূর্বাঞ্চলের কবিতা


চিত্র ঋণ : পাবলো পিকাসো 

পটুয়া-কন্যা

চন্দ্রিমা দত্ত

নিজের মুদ্রাদোষে গিয়েছি ভেসে
অনন্য আলো যা ছিলো হারিয়েছে 
আমি তো পাখি ছিলাম,সাঁতারু বাতাসে
ময়ূরী ছিলাম বর্ষা-জলে
আগুনের বন্ধুও তো ছিলাম তখন
অসীম সাহসী, দূরন্তের ঢেউ..., 
চিনলো না কেউ....

এসব দু:খের কথকথা নয় বন্ধু,
সহজ উচ্চারণে জীবন...

আজও পটুয়া আমি,  এঁকে চলেছি মরণ...



উপেক্ষিত

দেবলীনা সেনগুপ্ত 

যারা সত্য বলেছিল
তারা কোন পুরস্কার পায়নি
তালিকাভুক্ত হওয়ার মত
যথেষ্ট স্নেহপদার্থ
ছিল না তাদের জীবন ও যাপনে
চোখে ছিল না রঙিন চশমা
চাঁদকে তারা সূর্য বলেনি 
অথবা অমানুষকে ঈশ্বর
তারা এক ঘরে একা হয়েছে
একা--একাতর----এবংএকাতম
তারা বিদ্রোহ করেনি
অধরোষ্ঠের সংগমে , প্রসারণে
ফুটিয়েছে উদাসীন উপেক্ষা
তারা বিপ্লব করেনি স্লোগানময়
দৃঢ়বদ্ধ চোয়ালে শুধু চলে গেছে
আলোকিত নক্ষত্রের পথে
একাই--- সত্য সাথে৷
একদিন বহুযুগ পরে
পৃথিবী আসর সাজায় তাহাদের তরে
বিজ্ঞাপনময়
পৃথিবীর বয়স বাড়ে

সত্য বিজ্ঞাপিত হয়৷



কথা-১

শিবাশিস চট্টোপাধ্যায় 

মুখভার করে আছে না-বলা কথারা
ভিতরে পাতা ঝরছে, কীটদষ্ট হলুদ...
কিছু কি বলার ছিল, ঘোমটার ভিতরে, 
ওগো মেঘলা আকাশ!
সব পাতা জড়ো করি না-বলা কথার
অন্তত দুটো চাল সেদ্ধ হোক অলীক সংসারে



অভিমন্যু

অভিজিৎ চক্রবর্তী

দরোজাকে গাছ বলে ডাকব। গাছকে দরোজা। তো দরোজাকে গাছ বলে ডেকে দেখি অজস্র পাখির বাসা। কিচির মিচির। পা ঝুলিয়ে বসতেই শুনতে পেলাম পাতার মর্মর। মেঘের গর্জন। এক্ষুণি বৃষ্টি আসবে। তখনো নিচে এক দু'জন লোক ছায়া পাবে বলে বসে আছে। ভ্রম। উপরে তো মেঘ, বিদ্যুৎ। ঝড়ো হাওয়া। তাণ্ডব। গাছকে দরোজা বলে ডাকতেই খুলে গেল সব। একটার পর একটা কপাট খুলে দেখলাম শুধু বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছি। রোদ জল হাওয়া খেলে যায় এমন প্রান্তর-- খুলে খুলে খুলে খুলে খালি বাইরে বেরিয়ে পড়ছি। দিন ঢলে বিকাল হয়ে আসছে। পাখিরাও ঘরে ফিরে যাচ্ছে একে একে। আকাশের মেঘ আরও লাল হয়ে উঠেছে। বোধহয় কোথাও আগুন লেগেছে। বোধহয় কোথাও সূর্যোদয় হবে আবার। আমার আর ফিরে যাওয়া হচ্ছে না। কেবলি বাইরে-- বাইরে থেকে আরও বাইরের দিকে ছড়িয়ে পড়ছি



কথা এবং না-কথার বর্ণমালারা

বিজয় ঘোষ

জলছাপ ভালোবাসা রং পালটে কামনা হয়ে যায়
কামনার ঈষৎ হলুদ-বর্ণ প্রজাপতির পাখায়।
পাখিদের পালক ভিজে যায় কুয়াশার প্রেমে---

প্রেম শব্দটি অতি প্রাচীন।
কেউ কেউ একে যৌনতা বলে...



সুখের অসুখ

আবু আশফাক্ব চৌধুরী

একটা গাছ আর আমি মুখোমুখি দাঁড়িয়ে
তার গায়ে লেপ্টে থাকা রকমারি পরজীবী
যেন আমার সংসার সন্ততি অথবা চারপাশে
ভিড় করা প্রতিবেশী হাত ক্লিন্নমুখ ভিখারি
পাতায় লটকে আছে কারো ঘরবাড়ি
বাবুই তার সুখের কথা শুনায় অন্য পাখিকে

আমার কোন গান নেই অযশ এই মুখে
শান্ত সৌম্য সুঠাম শরীর একমাত্র কামনা
প্রেম বলতে পাখিদের কিচিরমিচির অথবা
কোনকোন বিষাক্ত সাপের ফুঁসফাঁস ফণা
এরচে বেশি কিছু না হলেও তেমন দু:খ নেই
যেন জন্ম তার এজন্যে পরহিতে বিধ্বস্ত কাঁকড়ার বুক।
তার মতো আমারও শাখাপ্রশাখায়
অনেক নতুন মুখ পর্যায়ক্রমে
দীর্ঘায়ত ছায়াবন্ধে সুখের অসুখ।



পাঁজর

বিশ্বরাজ ভট্টাচার্য

যতক্ষণ না এফোঁড়-ওফোঁড় হবে
বুক, এর আগ অবধি-
এই বেশ ভাল আছি!

যাদের পাঁজর ভেঙে গেছে
রক্তে মিশে গেছে নদীর জলে
তারা জানে- 
বুলেট কখনও  নিরপেক্ষ নয়।

"ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই" 
রাজা, আর এ কথা আর বলো না

বুদ্ধিজীবী, এবার মাটির দিকে তাকাও!



সাদা কালো

কমলিকা মজুমদার

এক মেয়ের গল্প বলি
মাতাল আত্মঘাতী স্বামীর
মরদেহ চেয়ে যে বলেছিল
এতদিন (সব) জ্বালা জুড়ালো।
চিতাকাঠের ধোওয়া মেখে
বারোহাতি বৈধব্য সাজে
সরকারি অফিসে লিখিয়েছিলো নাম।

অনেক পরে জেনেছিলাম
সাদা শাড়ি পরিহিতা
একদিন শুধু ভালোবেসে ছেড়েছিল ঘর
সেই থেকে কত প্রেম রঙ
মিশলো এসে শাড়ির খাঁজে
বোকা শাড়িখানার তবু
রঙিন হয়ে ওঠা হলো না।



ছায়া

নীলাদ্রি ভট্টাচার্য 

লেখনীর জলে অভিমানী হয়ে ওঠে আঘাতের শ্রাবণ।
স্পন্দিত খেলার মাঠ একা ঘাসে ঘাসে গন্ধ শুঁকে, 
দাঁড়িয়ে থাকে নীল আকাশের প্রান্তিক মেঘসাজ।
একটি অনাথ রোদ্দুর পাখি হয়ে বসে 
বোধাতীত কুঁড়েঘরের পুরোনো জানালায়,
আলপথে ভিজে যাওয়া সময়ের ডানহাত।
পীঠের ঘাম. ....না..না...
সে হাঁসের অপূর্ব ঠান্ডা বাতাস,
সয়ে যাওয়া অবেলার অপরিচিত ভালবাসা।

যে নরম অস্তিত্বে গড়িয়ে যায় বৃষ্টি 
উঠোন ঢেকে রাখে কলজে নিধন,
আমি তার পায়ে মাথা ঠেকিয়ে যাবজ্জীবন হাসি,
নীলচে মানুষ জন্মের সমর্পিত ভাঁজে  
হাঁটু মুড়ে আশ্রয় খোঁজি নদীর প্রচ্ছদ।



মড়ক 

অমলকান্তি চন্দ 

তরমুজ পাতায় লাল পিঁপড়ের সারি 
আল বেয়ে দীর্ঘ রাতের মিছিল 
আধ বুজা চাঁদ পিঠে করে নিয়ে যায় 
উদোম সুরঙ্গ পথে, 
প্যাচানো লতায় উপুড় হয়ে চুমো খায় 
ফোঁটা ফোঁটা কোমল শিশির… ….

মাটিকে আঁকড়ে ধরে ছায়া শরীর 
কেবল অন্তরালে  হাঁটতে থাকে 
দীর্ঘ পথের শেষে 
দীর্ঘ রাতের শেষে 
বাতাসে ধেয়ে আসে অজানা মড়ক  …...



পবিত্রদুঃখ

তমা বর্মণ

দুঃখের কাছে কাদাজল হতে ভালো লাগে
সুখের মাপকাঠি নষ্ট করে নীরবতা
সৌন্দর্যপিপাসু মন ঝুঁকে যায়
না পাওয়ার কাছে,
খুঁড়ে আনা যাবতীয় তথ্য
যেখানে যত তোমার সুখের আর্তনাদ
অসুখের মায়া হাড়ের ফাঁক দিয়ে শুয়ে থাকে
দিনকে দিন মুঠোর মধ্যে শ্বাস--
রংমহল ছেড়ে রোদেলা দুপুর
নিসর্গতার কাছে বসে লেখে একটানা,
যে কথা বলা হয় না ভিড় ও শব্দে
কেউ বলে না ভুলতে না পারা নাম।
পরিশ্রান্ত দুঃখের জমাটি আসরে বসে পরমায়ু
হৃদয়ঘটিত রক্তাক্ষর
আমার কবিতাবাড়িতে তোমার ভালো থাকা,
ততদিন তুমি শান্ত থাকো দূর
তার কাছে



শব্দসন্ধান

সঙ্গীতা নাথ
                                
দাঁড়িয়ে আছি কবিতার পলেস্তার সামনে,
করছি অক্ষত শব্দের সন্ধান,
জানিনা শব্দরা আদৌ আছে কি টান টান  ;
শব্দঝড়ের তান্ডবে 
শব্দের ঠিকানা বদলে গেছে কিনা ;
তবু করে যাচ্ছি জীবন্ত শব্দের সন্ধান;
যদি পেয়ে যাই এমন একটা শব্দ ,
যার অভ্যন্তরে আজো জেগে আছে...
নয় এটা আমার আকাশ কুসুম চয়ন 
এ আমার বধির পথচলা আর নীরব শব্দ মন্ত্রণ ।



স্বগত-চার

দেবাশ্রিতা চৌধুরী

শীর্ষ বিন্দুতে পৌঁছে
পতনের ভয় থাকে না
কীইবা যায় আসে!
তবুও শহরের পিচগলা পথে
হেঁটে চলে নবীন যুবক
বুকে ধরে পিপাসা অক্ষরের,
কুটিল ভ্রূকুটি,অনাদর তাচ্ছিল‍্য
আজ আর ছোঁয়নি তাকে।

শ্রাবস্তী থেকে আঠারোর দূরত্ব
কঠিন, তবুও এপথে এগিয়ে সুজন।



প্রজন্মের ক্রুশ

ভাস্কর জ্যোতি দাস

অক্ষাংশের ব্যবধানে  পিলাতদের জয়যাত্রা,
প্রজন্মের তফাৎএ আলোর বার্তা,

এখনও যীশুরা ক্রুশবিদ্ধ হয়,
এখনও অমলকান্তি,
একটা অন্ধকার ছাপাখানায় কাজ করে।

অন্ধ পিলাত আর উলঙ্গ রাজা,
গলাগলি  করে বেঁচে থাকে।
যীশু ক্রুশবিদ্ধ, নীরেনবাবু অগ্নিদগ্ধ।

সে মিছিলের নাগরিক আমরা,
প্রতিদিন মাঠে খেটে খাই যারা,
আমরা চাই না অন্ধ পিলাত,
চাই না উলঙ্গ রাজা।

চাই সে শিশু,
যে নাকি "পাথর-ঘাস-মাটি নিয়ে খেলতে খেলতে
ঘুমিয়ে পড়েছে
কোনো দূর
নির্জন নদীর ধারে, কিংবা কোনো প্রান্তরের গাছের ছায়ায়"।
চাই সে মানুষ, যে জেরুজালেমের অন্ধকার ফুঁড়ে বেরিয়ে আসবে পৃথিবীর মাটিতে।

চাই তাদের যারা, ক্রুশকে ক্রুশবিদ্ধ করবে।
ক্ষমতার দলনে নয়,
প্রেম ভালোবাসার মিলনে।
কিংবা কবিতার কলমে।


পাগলি তোকে...

অধিষ্ঠিতা শর্মা

সহস্র আলোকবর্ষ দূরত্ব যত আছে
সবকিছু ফাঁকি দিয়ে সটান চলে আয়, 
আমার একলা রাতের নির্জনতায় 
বুকে জাপটে ধরে একটিবার বল,
'শোন পাগলী তুই শুধু আমার...'
সহস্র জন্ম মৃত্যুর দিব্যি! 
এক আকাশভরা জীবনের ভেতরে লুকিয়ে থাকা
সহস্র জীবনের প্রত্যেকটি হৃদস্পন্দন 
গোলাপের পাপড়ির মত তোর আকাশে
একটিবার শুধু বল, "শোন পাগলী
তোর সমস্ত পাগলামি জুড়ে 
শুধুই আমার অস্তিত্ব...আমাদের অস্তিত্ব।



মানুষ তোমার জন্য

দেবাশিস সায়ন চক্রবর্তী

এই যে বেঁচে আছি, বেঁচে থাকি চিরকাল,
প্রেমে-অপ্রেমে, সুখে-অসুখে, সুস্থ্-মাতাল,
স্বতঃসিদ্ধ জনতার সংলাপে। অস্থির প্রহরের রেলপথে
ভালো লাগে ঘর-ভাঙা ঢেউ, নৌকার গান ঢেউ ভাঙা,
ভালো লাগে কিশোরী চাঁদের সোহাগ, গোলাপের
ঘ্রান, স্বপ্নের বাগানে নির্ঝঞ্জাট পায়রার ঝাঁক,
প্রতিদিন-প্রতিরাত উর্দ্ধচারী আকাশ-চেরা
মানুষ, তোমার জন্য আমার ঘরে ফেরা।

মধ্যরাতে জানালায় চোখ মেলে অবিরাম
স্বচ্ছল অন্ধকারে নৈশব্দে শুনি বৃষ্টির গান,
বৃষ্টিতে ভিজে স্বপ্ন-গোলাপ, পাতা ঝরে, মৌন!
সার্সিতে সুরেলা কম্পন শেষে ঝরে সবুজ। 
                   সুন্দর তৃপ্তি অফুরান,
স্মৃতির ঈথারে বেজে উঠে স্বতঃস্ফুর্ত অবিরাম। 
বৃষ্টি-অফুরন্ত বৃষ্টি, বৃষ্টি শুধু বৃষ্টির বোবা গান।

কাক ডাকা ভোরে চায়ের পেয়ালা ঠোঁটে ছুঁয়ে
মানুষ, তোমাকে দেখি পৃথিবীতে আনন্দ-বিষাদে,
মৌনতায়, সংলাপে, তুখোড় আড্ডায়, জীবনের কর্মশালায়
জটিল বাস্তবে বেঁচে থাকায়-ভেতরে এবং বাইরে,
মানুষ, তোমার জন্য জাগরন এই ভেবে প্রতিদিন-প্রতিরাত।

যদি আসে ফের মৌসুমী মেঘ, স্বচ্ছল সুখ অনন্তের
ফসল-অমৃত সম্পূর্ণতায় ফিরে আসে জন্মান্তরে,
পাবো কি পৃথিবী, মানুষ, তোমাকে প্রেমে-অপ্রেমে ?



পাখিজাল

হারাধন বৈরাগী 

আকাশ ঢেকে গেলে বনের 
আড়ালে,তকসি উড়ে ঘরওবাইরে

সন্ধ্যা সেদ্ধ হলে থাপার আঁচে
রাত আচই'র বুকে---

চারপাশ থেকে ধেয়ে আসে
নিশিঘোর-ধুধু টিংটিং--

শেষপ্রহর ভেঙে গেলে তকের 
বাঙে-জারিত হয় দেহ বৃক্ষদাহে

মোঙ্গলীয় চাঁদ ঢুলে পড়ে 
গাইরিঙে-চুয়াকের ঘোরে

চোখ বোজে শুয়ে পড়ে জুমনীড়
আদর বিলায় অলকমেঘ

বনতট জুড়ে নেমে এলে দাবানল
ধূপ ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে 

মাথার ভেতর জ্বলে ওঠে আকাশ
উড়ে যেতে চায় তকসি --

একটি কাকতাল পাখিজাল 
ছড়িয়ে পড়ে এপার ওপারে



ই.সি.জি

আশফাক্ব হাবিব চৌধুরী

ক্যানভাসে যত ধারা পর্বতমালা হবে
জীবন ততটাই স্বতঃস্ফূর্ত... 

সেদিনের ইসিজির ব্যাখ্যায় ঔষধি কলম
আঁকলো হুবহু এমন লেখচিত্র...



তোমার শহর

শতদল আচার্য     

তোমার মনখারাপে লাল রঙ কোথায় যেন লুকায়
তোমার চোখের বৃষ্টি চেয়ে যায়

গানের কথার আড্ডা  মিস করি  ।
তোমার তানপুরার সুরে,
এ শহর আর আগের মত জেগে উঠে না.....



বক

রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ

তুমুল ব্যস্ততায় খুঁতখুঁতে
লোডশেডিং রাতে ডিপোজিট মন
উষ্ণ দ্বীপে পরিনাম ভুলে
পথ হারিয়ে যুগের ভ্রমণ ।

যা ছিল নিরিবিলি জন্মগত
শূন্য আর রৌদ্র মাখা তিলক
রঙিন যন্ত্রণায় মেঘেদের বেঞ্চে
স্বপ্ন বুনছে উলঙ্গ বক ।

সংস্করণ শেষে দশকের উল্লাস
প্রতারিত গ্রীবায় খুনসুটি প্রবাদ
রাধিকার প্রেমে পুড়ছে রুটি
প্রতি বিশেষণে অজানা খাদ ।
সুমন মল্লিক
রাত্রি পান করি


অন্ধকারের মন্ত্র-মোহানায় ভেসে ওঠে যেই সুদীর্ঘ নিরুদ্দেশ, রাত্রি পান করি সচেতন অবচেতনে ৷ লজ্জার গভীরে প্রবেশ করি ৷ চুমুকে চুমকে তৈরী করি সোহাগচারণের চারণভূমি ৷ নদী হয়ে নেমে আসে আভাসিত প্রশ্রয় অপেক্ষার সযত্ন-জমিনে ৷ অবলোকনে আছড়ে পড়ে সম্ভাবনার জলপ্রপাত ৷ আগুনের মাঝে ঝড় তোলে আগুন ৷

নজর ও আঙুলে সাজিয়ে রাখি পরশামৃতের প্লাবন ৷ মন ভেসে যায়, মন উড়ে যায় যেন নতুন পৃথিবীর শান্তি-পাতালে ৷ কী যত্নে শরীর দিয়ে শুষে নাও শরীরের কারুবাসনা ; শরীরের আতরবাসনা উজাড় করো শরীরে ! রাত্রি পান করি, রাত্রি পান করি, আর লালন করি শীতের শেষ উত্তাপ ৷


১) শৌখিন
     পিয়াল রায় 

পাহাড়ের দিকে তাকিয়েছ কোনোদিন? 
                    নিদেন একটা টিলার দিকে?

ঘাস ছাড়া সবই কেমন
              বিপুল ব্যর্থ মনে হয় না?  
মনে হয় না চূড়ার ওপর
  একটা প্রাসাদ থাকা দরকার ছিল
               যেখান থেকে পৃথিবীটাকে দেখাত
ঠিক একটা কোলকুঁজো পাশবালিশের মতো
এবং সম্ভব হলে তাতে
      ঝমঝমে দুটো একটা প্রায় পেকে ওঠা
ফুসকুড়ি সম বসন্ত

       
গাছই বলো বা পাখি
     গোটাটাই তো প্রবাবিলিটি

ধরতে গেলেই জ্বর গায়ে হাওয়া 

ঘরই নেই কোথাও
        তায় ঝুলবারান্দা ! 

যতসব বিদঘুটে শৌখিনতা সাজিয়ে বসে আছ
ভাঙা মোড়ের মাথায়

পাঁপড়ি গুহ নিয়োগীর কবিতা 

অন্তর্বাস শব্দটা আদতে এক সান্ত্বনা পুরস্কার

অন্তর্বাস শব্দটা আদতে এক সান্ত্বনা পুরস্কার, এসব বাচ্ছারাও জানে। আপনি বৃষ্টি বানান বা রাস্তা খেয়ে ফেলুন। পুরস্কারের দাগে কখনো পেয়ারাপাতার গন্ধ পাবেন না

আসলে দুরকমের যাতায়াত থাকে সিঁড়ি বেয়ে। ওই যে সব নীরব মিছিল বা উদ‍্যত হাত। বিজ্ঞাপনে দীর্ঘ হয় জুতোর আকার


জ‍্যোতির্ময় মুখার্জি
১০/০৮/২০১৮
কুচকাওয়াজ
শৌভিক দত্ত

যে যুদ্ধ আমার অংশ নয়
তার খোলা থেকে
অনুবাদফেরত থেকে
অমর লবণ
এতোটা টাটকা আর বিষণ্ণ
গড়িয়ে পড়া ছাড়া
কুচকাওয়াজের কিছু
যায় আসে না
গেরুয়া গাড়ীগুলো
নষ্ট গতির দিকে এগোয়
আর হাঁফধরা
জাহান্নম বিক্রী করে
দু একটা কষ্ট বুর্জোয়া
জাহাজনাভির কাছে আসে
বেশ সেক্সি খিদে হয় তাদের....

সীমা ঘোষ দে (সাঁঝ)

অবয়ব

কাপুরুষ কোথাকার!
বৌ যে কদিন প্রজাপতি হয়েছিল,
তোর শোবার ঘরের পর্দাটা যে কদিন ঘুমিয়ে ছিল,
সে কদিন প্রেমিক হয়ে সটান কাঞ্চনজঙ্ঘা ছুঁয়েছিলিস !

শ্রীনগরে বিতস্তার তীরে রুপোলি রঙের একটা মেয়ে,
অর্কিড হাতে রোজ রাতে তোর জন্য অপেক্ষা করতো!

তারপর...

হঠাৎ তুই কাপুরুষ আর ঐ রুপোলি রঙের মেয়েটি  রেশম পোকা হয়ে গেল।




জ্বরের ঘোরে

আমার তো মরুময় স্থলজ সঙ্গম
ফুল ফোটে না,
ফল ধরে না একেবারে !

তোর জানি জলজ বিছানা
তোর বৌ এর শরীরময় শালুক ফোটে।






শুভসন্ধ‍্যা

শুভসন্ধ‍্যা সন্ধান দেয় এক পর্যটকের, যার ঝোলার ভিতরে  পুঁতি-র মালা থাকার কথা আমরা সকলেই জানি, জানি না তার আলখাল্লা-র ভেতরে যে পুঁথিটি আছে, সেখানে যেসব পাখিদের উড়ান-বৃত্তান্ত মুদ্রিত আছে, সেগুলি প্রাগৈতিহাসিক, এই সন্ধ্যায় সেগুলির পাঠোদ্ধারের চেষ্টা করে চলেছি।


প্র: চৌ:
18/08/2018


ভুলে থাকা //  উপানন্দ ধবল 

একদিন এইখানে পুঁতেছিলে  একটি স্নেহবীজ
কোমল হাতে তুমি অল্পে অল্পে
                           ঢেলেছিলে তাতে ধারাজল ।
সেই স্মৃতি-ছবি নিয়ে আমি
তারপর চলে গেছি কবে বহুদূরে
সেই ছয়টি হাঁস আজ জানি না কোথায়
                                           কোনদিকে
শুধু জানি --
একদিন কথা দিয়েছিলাম তোমাকে :
              
                পঞ্চবৃক্ষের ঠিকানা
              অতিথি কখনো ভুলে না

তারপর বুক দিয়ে গেছে কত না অন্ধ বছর
দস্যু হাওয়া ভেঙে দিয়েছে ঘর
সময়ের স্রোতে হারিয়েছে তোমার আমার খবর

আজ বুড়িচাঁদ আর বেনোজলকে চমকে দিয়ে
আবার অদৃশ্য সুতোর টানে তোমার দ্বারে
নির্নিমেষ কৌতূহলে  কান পেতেছি
হাঁসের ডাকের প্রতীক্ষায়
আর পঞ্চবৃক্ষের পাতার গুঞ্জনে
তারা যেন ঐকতানে সুর তুলেছে :

আমরা কখনো ভুলে যাইনি
শুধু ভুলে থাকার ভান করি ।

উত্তরের জনপদ নিয়ে গদ্য 

নদীর কূলে কাশিয়ার ফুল,তুই খালু মোর জাতিকুল
সুবীর সরকার

১।
হেরম্ব হেঁটে যাচ্ছে শূণ্য সব মাঠপ্রান্তরের মধ্য দিয়ে। হেঁটে যাওয়াটা তার নেশা,জীবনের সাথে তীব্র জড়িয়ে থাকা; যেন অন্তহীন এক ভবিতব্য। হেরম্বর ঝাঁকড়া চুল সুপারিগাছের মতো পেশীবহুল নির্মেদ শরীর। ধারালো বল্লমচোখ। মঙ্গোলয়েড মুখ। দু’চোখে ঢের মগ্নতা আপাতবিষাদছোঁয়ানো। হেরম্ব হেঁটে যেতে থাকে মাইলের পর মাইল হেলাপাকড়ি বাঁকালী রামসাই জোড়পাকড়ি ভোটবাড়ি রাজারহাট চূড়াভাণ্ডার পদমতীর চর বরুয়াপাড়া জল্পেশ ছুঁয়ে ছুঁয়ে ধানপাটতামাকের অত্যাশ্চর্য জনপদগুলির মধ্য দিয়ে। হাঁটতে হাঁটতে ধরলা জর্দা বালাসন সানিয়াজান এইসব আঞ্চলিক নদীর জলে নেমে পড়ে সাঁতার কাটে, আবার কখনো ঘোড়াহাগা বিলে দু’দন্ড নিজের মুখ দেখে আবারো হাঁটতে থাকে হাওড় বিল কুড়া দহের দিকে। হাঁটাই হেরম্বের নিয়তি,যেন নিশিডাক। হাঁটা শেষ হয় না তবে একসময় হাঁটাটাই যেন এসে ঢোকে বিষহরা গানের আসর জল্পেশ মেলা কিংবা ভান্ডানী ঠাকুরের থানে। এইভাবে উত্তরের এক ভূমিপুত্র শ্রী হেরম্বচন্দ্র বর্মন তার আত্মপরিচয় ও উৎস খুঁজতে শুরু করে একধরণের ঘুমঘোরের বাধ্যবাধকতাহীন অনিবার্যতায়। তখন পাটখেত গমখেতে বৃষ্টির জমা জলে কিলবিল করে হেলেসাপ জলঢোড়া সোনাব্যাঙ কোলাব্যাঙ আর লোকজসুরের বহতায় বেজে ওঠে আদিঅন্তহীন সব গান। তিস্তাপাড়ের গ্রামে গ্রামে তিস্তার চরে চরে সারাটা বৈশাখ মাস জুড়ে তিস্তাবুড়ির গান জাগে,মেচেনী খেলায় মেতে ওঠে মেয়ে বউয়ের দল। অলংকৃত ছাতা মঙ্গলকলস দলবদ্ধ নাচের মোহগ্রস্থতায় সীমাহীনতায় হাই তুলতে তুলতে এগিয়ে আসে নদীজলবাহিত চিরায়ত কুয়াশার দলাপাকানো শূণ্যতারা। এতকিছু ঘটে যায় হেরম্বের আপাত নিরীহ পদযাত্রার প্রায় পুরোটা জুড়েই।
২।
হাট বসে হাটের মতো। হাটের পরিসর এসে, স্পর্শ করে মন্দির,বৃহৎ জলাশয়। হাতের মধ্য দিয়ে মেচেনী খেলতে যায় মেচেনী দল। ঢাক বাজে। মুখাবাঁশি। সানাই। হাটের নিজস্বতায় মিশে যেতে থাকে লোকবাজনার সমগ্রটুকু। এতসবের যথাযথ হেরম্ব এসে পড়ে। দু’দশ বিশ পঞ্চাশ হাটগঞ্জ ঘোরা হেরম্ব হাটের রকমফের ও বদলটুকু অনেক অনেক আগে কিছু কিছু হাটে সে দেখেছিল কোচবিহারের মহারাজার শিকারযাত্রার মিছিল, কামতাপুরের জুলুস, রাণী অশ্রুমতীর জলসত্র উদ্বোধন, নুরুদ্দিন জোতদারের সফেদ হাতি, ঝামপুরা কুশানীর কুশাণযাত্রা আরো আরো অনেক কিছু। আবার হেরম্বের সাথে জলধোয়া বসুনিয়ার প্রথম দেখাসাক্ষাত এরকমই কোন হাটে। হাটের খন্ড অনুখন্ড উপখন্ড জুড়ে কতরকমের মানুষজন কথাবার্তা খোসপাঁচালি। হাটের নিজস্ব ভাষায় হাট কথা বলে যায়। কথাবার্তার সূত্র ধরে না দিলেও কথাবার্তা গড়াতে থাকে যেভাবে রাত গড়ায়। সকালের হাট বিকেলের হাট সন্ধ্যের হাট সব ছাপিয়ে মুখ্য হয়ে ওঠে ভাঙা হাট। হাট ভাঙার অবসরে কূপির ছড়ানো ছড়ানো খন্ড আলোর দোলাচলে হেরম্বর মনে পড়ে জলধোয়া বসুনিয়ার গরুর গাড়িতে চড়ে আরো আরো পাইকার ব্যাপারীর সাথে ভাঙা হাটের ধুলো ও বিষাদ মেখে গন্তব্যহীন কোন গন্তব্যের দিকে চলে যাওয়া। হেরম্ব বসে থাকে না; দাঁড়িয়েও ন। আসলে থিতু হতে না পারবার অনাবশ্যকতায় সমগ্র অস্তিত্ব দিয়ে শরীরময় শ্যাওলার বহুবর্ণতা নিয়ে আবহমান জীবনের দিকে পা বাড়ায় হেরম্ব। তখন তার কোন অতীত বর্তমান থাকে না, ভাবনাস্রোত লুপ্ত হয়ে যায়। হাটের চারপাশে ধানমাঠসরসেবাগিচা পুকুরদহ সবই গ্রাস করতে এগিয়ে আসে গাঢ় এক অন্ধকার, যা চিরায়ত। হাট থাকে হাটের মতো। হাটের গভীর থেকে গহন এক হাটই যেন উঠে আসে।

৩।
ইতিমধ্যে দু’দশ বনভূমি পেরিয়ে আসে হেরম্ব।এই পেরিয়ে আসা অতিক্রমন মহাশূণ্যের মধ্য দিয়ে।মহাশূণ্যতাকেই সম্ভবত অস্তিত্বহীন করে তুলবার প্রয়াস চালাতে থাকে সে।বন্ধ হয়ে যাওয়া চা-ফ্যাক্টারীর সামনে দিয়ে এগোতে গিয়ে সে কিন্তু প্রকৃতঅর্থেই একধরণের শূণ্যতাকে অনুভব করে।এক্কা মিনজ ওরাও খেড়িয়াদের সাথে কোন কোন সাপ্তাহান্তিক হাটে তাকে নাচতে হয়।ভাষা অচেনা,কিন্তু কান্না-অনুভূতির অর্ন্তগত এক আবেগে মহাজীবনের মহাশূণ্যতাই এক অনুধাবনযোগ্য ভাষাসুত্র খুঁজে পেতে পারে।খুঁজে পেলেই জনজাতির গোষ্ঠীজীবনের যূথবদ্ধ কৌমতায় সে লীন হতে থাকে।আত্মপরিচয় হারানো একজন মানুষ এইভাবে নিঃসঙ্গতার ভেতর রোদ হাওয়ার আমন্ত্রণের স্বাছন্দের স্বাদ পায়।আত্মপরিচয়ের জরুরী প্রয়োজনীয়তার দোলাচলে থেকেও এমন এক মহাশূণ্যতার মাদকতা ঘিরে ধরে যার ভেতর হেরম্ব হেরম্ব নিজেকে সমর্পণ করতে চায়, আবাল্যের সারল্য ও সহজিয়া দর্শনের ব্যাকুলতায় এসে নিজস্ব ভাষাবিজ্ঞানের সুত্রগুলি পুনরুদ্ধারের প্রাণপন প্রয়াস চালায়।লোকজীবনের ব্যপ্তী পরিব্যপ্তী পরীসীমা অতিক্রম করে অর্ন্তবয়নের নিখুঁত নৈপুণ্যে মহাজীবনের শূণ্যতাকে মহাজগৎকথার প্রধানতম অনুষঙ্গ হিসাবে বারবার পুনঃস্থাপিত করতে থাকে।এই স্থাপন প্রতিস্থাপন পুনঃস্থাপনের অনন্য নকসার খুব গভীর সমান্তরালে প্রবাহিত হতে থাকে এক শূণ্যপুরাণ।শূণ্যপুরাণের প্রাকৃতিক হয়ে ওঠা শক্তির কাছে হেরম্ব তো আর হেরে যেতে পারে না!সে বরং হাঁটতে থাকুক।হাঁটতে হাঁটতে তার দু’পায়ে ধুলো কাদা লাগুক আকাশ মাটির মধ্যবর্তীতে মাঝে মাঝে সে উড়িয়ে দিতে থাকুক গাছের শুকনো পাতা।শূণ্যপুরাণ থেকে তো আর যথাযথ শূণ্যতা উঠে আসতে পারে না,বরং মহাশূণ্যতার দিকেই যাত্রা করুক শূণ্যপুরাণ!মেঘনদীর অন্তস্থলে বাজনা বাজুক;বাজনার আবহে চুপি চুপি জমাট বাঁধতে থাকুক মন্ত্রতন্ত্র সাপের ওঝা পেয়ারাকাঠের ডাল পরিচয়হীন সব মানুষেরা;আর এইরকম এক মহাশূণ্যতায় ডুবে যাক হেরম্বর চলাচল,যাত্রাপথ।

গল্প
মৃণালিনীর লেখা

             "চিতা থেকে বলছি"


      সবাই জিজ্ঞেস করে কবে থেকেলিখতে শুরু করেছিকেউ কোন দিনজিজ্ঞেস করেনি কবে থেকে তিলে তিলেপ্রশ্ন  তীক্ষ্ণ ব্যঙ্গবাণসমাজ পারিপার্শ্বিকতার স্লো প্রয়োজন শিরায়শিরায় জমে পলিমাটিতে ভরাট করেফেলেছে। বাবার মৃত্যুর পর সব হারিয়েএকমাত্র পরিবার। সমাজের সহানুভূতি,পুলিশের পকেট ভারী করে রিপোর্টে ঘুষনেবার সততা ভরা চোখের দৃষ্টি,রাজনীতিজ্ঞদের দরজায় ঘুরে পরমাত্মারউপদেশ "সব ভুলে যাওশুনে শুনে একটিমানুষ কী করতে পারে?

      বালিসের তুলো জমে শক্ত হয়ে গিয়েছ।ক্ষমতায় উপবেশনকারীদের দেখা যায়সমাজের জন্যে রক্ত দানবিভিন্ন স্কুলেগিয়ে প্রাইজ বিতরণস্টে জে সমাজ দেশের কল্যাণ সাধনে দামি সুটসোনারঘড়ি নাড়িয়ে নাড়িয়ে বক্তব্য মোড় বদল,বাড়িতে মহাধুমধামে কুকুরের জন্মদিনপালন করতে...আসলে দেশ দশের আত্মারশান্তি নয়আত্নপ্রচার।এক দু মিনিটেরমধ্যে কথাগুলো বলতে বলতে পুরোএকপাতা লিখে আমায় দেখিয়ে বলল, "নাও এই লেখা। বিশুদ্ধ সত্যএকবিন্দুডালডা নেই।"পরে দেখলাম প্রত্যেকটিলাইন ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা  সেই সময়েরবাস্তব দলিল।

        আমি লেখাটি ফিরিয়ে দিতেই বলল, "কেন ছোট হয়ে গিয়েছেছাপতে শুরুকরুকআমি মানে আমার সব সব ঘটনালিখলে একটা চমকপ্রদ উপন্যাস হবে।জানো তো সবাই জানতে চায় সত্যি কথা।মিথ্যে পরিবর্তন  সময় অনুযায়ী গতিশীলহলেও সবাই চায় প্রকৃত সত্য জানতে। তাইএই কাহিনি ছাপা হলে সময় মানুষ সামাজিক অবস্থায় উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।মানুষ জানবে এক অদ্ভুত সত্য কথা।"


            কাগজটি ফিরিয়ে দিয়ে বললাম,আমি তো সম্পাদক নই। একজন সাধারণলেখিকা। একটু হেসে বললামআপনারগল্পে বিশুদ্ধতার পরিমাণ এতো বেশি যেকোন সম্পাদকের হজম হবে না মানে তিনিমতেই ছাপতে রাজী হবেন না। যদি ছেপেওদেয় তাহলে পাঠকের কাছে মুখোরচকগল্পগুজব ছাড়া আর কোন প্রতিক্রিয়াপাওয়া যাবে না।বলে আমি উঠতেই যাবএমন সময়ে লক্ষ্য করলাম মুহূর্তের মধ্যেতিনি তার সামনের বড় বড় দাঁত বের করেরক্তাভ চোখে কর্কশ গলায় বললকাহিনিরশুরুর অংশটুকু পরেই হো্...  আমি আরতার দিকে তাকিয়ে দেখলাম না এবং আমিযে চলে যাচ্ছি এইটুকু  না বলে সোজাসামনের দিকে হাঁটতে হাঁটতে তারকথাগুলো শুনতে পেলাম। একবার মনেহল ফিরে যাই কিন্তু শীতের রাতে আবার,অনেকটা এগিয়ে এসেছি তখনও তিনিচিকার করে বলছে,যেদিন কাহিনির শেষলেখা হবে... আমার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেআমার জীবন আমার প্রতিবাদের সমাপ্তিএকটি যুগের সমাপ্তি রচিত হবে তখন এসেচাইলেও আমি দেব নাকোনমতেই দেবনা।