Wednesday, October 2, 2019

কবিতা করিডোর , পুজো সংখ্যা , অক্টোবর , ২০১৯

কবিতা করিডোর একটি অনলাইন ওয়েবজিন 




প্রচ্ছদ : পবিত্র মজুমদার 
ফটোগ্রাফি : পবিত্র মজুমদার 
অলংকরণ : শুভঙ্কর পাল ও পবিত্র মজুমদার 

কবিতা করিডোর 
পুজো সংখ্যা , অক্টোবর 
২০১৯
সম্পাদক : শুভঙ্কর পাল 
উত্তর পূর্বাঞ্চলের সম্পাদক : রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ 
ইমেল : subhabrb@gmail.com 
মুঠোফোন : ৯৯৩৩৭৭০৫৪১


সম্পাদকীয় -

রাত পোহালেই মন্দিরে মন্দিরে দেবীর মূর্তি এসে যাবে । অশুভ শক্তির নাশ করতেই তিনি আসেন প্রতিবার ।  অথচ ভয় হয় বাড়ির বাইরে আমার মেয়েটি নিরাপদ আছে কিনা এই ভেবে ।  এক আশ্চর্য বোধের ভিতর আমরা শিউরে উঠি ।  মানুষ নিজের দেশেও আজ বিদেশি তকমা পাচ্ছে ।  কেউ পরিবার হারাবার ভয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে ।  এই অশনি সংকেতের মধ্যেও একটু বেঁচে থাকবার আলোর কথা ছড়িয়ে দিতেই এসে গেলো কবিতা করিডোর পুজো সংখ্যা ।  অনেকের লেখা চেয়ে না পাবার দুঃখ রয়ে গেলো ।  তবে আশা করছি পরবর্তী সংখ্যায় তারা লেখা দেবেন ।  কিছু ভুল ত্রুটি থাকলে সেই দায় নিজের কাঁধেই নিচ্ছি ।
                   ধণ্যবাদান্তে
শুভঙ্কর পাল
সম্পাদক: কবিতা করিডোর


সূচীপত্র :
বাংলাদেশের কবিতা :
ফারহানা রহমান , নৈরিৎ ইমু ,নির্ঝর নৈঃশব্দ্য
কচি রেজা

পশ্চিমবঙ্গের কবিতা : 
রিমি দে , মানিক সাহা , সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায় ,  অর্ক চট্টোপাধ্যায় ,  চিরঞ্জীব হালদার , অভিশ্রুতি রায় ভট্টাচার্য , সুদীপ্ত মাজি ,  উদয়ার্ণব বন্দ্যোপাধ্যায় ,  সুকান্ত দাস ,  জ্যোতির্ময় মুখার্জি , শান্তা ভৌমিক ,  অনিরুদ্ধ দেব , নীলাদ্রি দেব , মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় ,  সুবীর সরকার ,  পাপড়ি গুহ নিয়োগী ,  মণিমা মজুমদার ,  বাবলি সূত্রধর সাহা ,  অরুনাভ ভৌমিক ,  গায়েত্রী দেবনাথ , নীলাব্জ চক্রবর্তী

কবিতা বিষয়ক গদ্য : আফজল  আলি
ছোটগল্প : সত্যম ভট্টাচার্য
অনুগল্প : শুভঙ্কর পাল

উত্তর পূর্বাঞ্চলের কবিতা :


স্বাতী ইন্দু , বিশ্বজিৎ দেব ,  অশোকানন্দ রায় বর্ধন ,  শুভেশ চৌধুরী ,  নীলাদ্রি ভট্টাচার্য ,  দেবাশ্রিতা চৌধুরী , তমা বর্মণ , বিজয় ঘোষ ,  শতদল আচার্য ,  শিবাশিস চট্টোপাধ্যায় ,  কমলিকা মজুমদার ,  বিশ্বরাজ ভট্টাচার্য , অমলকান্তি চন্দ ,  অপাংশু দেবনাথ ,  রাজীব ভট্টাচার্য ,  আবু আশফাক্ব চৌধুরী ,  নবীনকিশোর রায় ,  পার্থ ঘোষ ,  ভাস্কর জ্যোতি দাস ,  রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ

ডার্ক চকোলেট

সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়


মেঘ আর দার্জিলিংয়ের মধ্যে ভেসে আছে ডার্ক চকোলেট
গ্লেনারিজ থেকে হেঁটে বেরিয়ে পড়ছে ধূসর দিনের  মায়া
লাডেন-লা রোড বেয়ে চকিতে নেমে গেল যে বাদামি জ্যাকেট
তাকে আমি দেখেছি আগেও, খাদে পড়ে যাবার আগে
শেষবার বলেছিল "ভালোবাসি...." , আর পাহাড়ে
বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছিল একটানা
যে হোটেলে কেউ নেই, সব ঘর প্রাচীন দীর্ঘনিঃশ্বাস
দেখা হয় তার ফাঁকা করিডরে , যেন পাইনের বনে
হাওয়ায় দুলে ওঠে মুখ ...
ক্লান্ত ঘোড়ার পিঠে আনাড়ি টুরিস্ট -
পৃথিবীর সমস্ত সাধারণ ভালোলাগাগুলো
ফায়ারপ্লেসের সামনে চুপ করে বসে আছে হাজার বছর
মেঘ আর দার্জিলিংয়ের মধ্যে ভেসে থাকা ইনোসেন্ট ডার্ক চকোলেট
রাংতা-জীবনে মুড়ে চলে গেছে কেউ ...


মানিক সাহা
তোমাকে দুপুর মনে হয়


এখন শরৎকাল। পুজোর মায়াটান মেঘরোদে খেলা করে।
তোমাকে দুপুর মনে করে আমি হাঁটতে বেড়িয়ে যাই। পরিস্কার শুনতে পাই মাথার ভেতর ফড়িং উড়ে বেড়াচ্ছে। বাচ্চাদের স্কুলের পাশ দিয়ে হাঁটি৷ তাদের কথার মধ্যে চকচকে নীল পোশাক পরা একটি পাখি এসে বসে।
নীল পোশাক পরা তোমার স্বামীর কথা ভাবি। যে কেবল ট্রেনের হিসেব রাখতে রাখতে বুড়ো হয়ে যাচ্ছে। অথচ তোমার বয়স বাড়ে না। জলের শব্দ পেলে নেচে ওঠো আর বয়স পালিয়ে যায়। সমাজ আমাকে তোমার কাছে নিষিদ্ধ করে রআখে।
সুযোগ পেলে তাজা বোমা বের করে ছুড়ে দেবো সামাজিক বিধির দিকে। কাগজে বিস্ফোরণের খবর ছাপা হবে৷ যদিও সে কাগজ তোমাদের শহরে পৌঁছয় না। আমি ফোন করবো বলে অজুহাত খুঁজবো। অজুহাতের বিকল্প হিসেবে একটা ফিনফিনে আলোর দুপুর বেড়িয়ে আসবে।
মাঝে মাঝে তোমাকে দুপুর মনে হয়। জড়িয়ে ধরলেই ঘুমে চোখ জুড়ে আসে।
সুবীর সরকারের দীর্ঘ কবিতা 
গদাধরের পাড়ে পাড়ে রে


জলাভূমিতে গা ডোবানো অনন্ত মহিষ
মুছে যাওয়া পায়ের ছাপ ঘুঙুর হয়ে বাজে
ব্রহ্মপুত্রের জলে আমি মিশিয়ে দিয়েছি চোখের
                                                   জল
গদাধরের পাড়ে পাড়ে সে এক জীবন ছিল!
লাউখোয়ার বিল থেকে  বাতাস
                                 উঠে আসে উঁচু টিলায়
তিনশো বলির দুর্গাপুজোর দেশে ঝাঁক ঝাঁক
                                           লাল টিয়া
কুমার প্রমথেশচন্দ্র বাড়ি ফিরছেন
রানী সরোজবালা নামঘোষা শুনছেন
আসারীকান্দি থেকে লোকমুখোশ নিয়ে
                             আসছেন নীহার বড়ুয়া
আর আনারস বোঝাই নৌকোগুলির দিকে
                          তাকিয়ে আছে জংবাহাদুর
রূপসীর জমিদার সারারাত ধরে গান শুনলেন
হাতিক্যাম্পের ফন্দি মাহুতেরা সারারাত জুড়ে
                                           কেবল নাচলেন
বন্দুক ও দোতরা নিয়ে
হাতি ও হাততালি নিয়ে
মেলা ও মহোৎসব নিয়ে
অসামান্য এক রূপকথার জীবন কাটিয়ে গেলেন
                                      লালজি রাজা
এখন টানা বৃষ্টি গিলে খায় গৌরীপুরের হাট
রাজবাড়ীর পুরোন দেয়ালে সেতার ঝুলিয়ে                                              রাখেন কুমার শ্যমলেশ
নিশা রাইতে সারিন্দা বাজান সিতানন্দ
কাঠিঢোল কাঁধে গানবাড়ির দিকে ছুটতে থাকে
                                              বসন্ত মালী
হাতিমাহুতের গান নিয়েই তো অভিমান ভুলতে
                                           হয়েছিল তাকে
চাপা হাসির পাশে সোনার পিকদানি
জনপদের প্রতিটি গল্পের ভেতর ঢুকে পড়ে
                                                  গান-
'ও মোর সারিন হাতির মাহুত রে
মোক ছাড়িয়া কেমনে যাইবেন হস্তীর শিকারে'
পাপী ও পাগলের মত আমি সেই স্মৃতিকাতর
                                শহরে ঘুরে বেড়াই
হেসে ওঠে বিন্নি ধানের খই
থোপা থোপা কাশিয়ার ফুল
হাটে হাটে বিকোতে থাকা শালী ধানের
                                          চিড়া
আমি অন্ধের মতন লিপ্ত হতে থাকি বিলুপ্ত এক
                                         সময়ের সাথে
আর কুয়াশায় ঢেকে যায় প্রতাপ সিং-এর
                                             সমাধি
আর হাতির দাঁতের সেই চিরুণী দিয়ে তুমি চুল
                                        আঁচড়াতে থাকো

অরুণাভ ভৌমিকের কবিতা


১।  স্মৃতি


পুরনো জানালায় ভাসে মেঘ ও রোদ্দুর
বাতাসে গড়িয়ে যায় নির্জন হেমন্ত

সারাদিন তবু দুয়ারে দাঁড়িয়ে মেয়েটা।

২। অভিমান


প্রেমিকারা বড় অতিথি বৎসল
যেন সাদাভাত, যেন ঝমঝম বৃষ্টি

সারাদিন একা একাই মেঘ, কত যে মেঘ!

৩। একটি প্রেমের গল্প
      

অপেক্ষা থেকে উঠে আসে আড়াল
অনাবৃত দুই স্তূপ ঝুঁকেছে নীচের বাঁকে

তখন ঘুমিয়ে পড়েছে পাশের বাড়ি।

৪। অরণ্য ও শৃঙ্গার কথা
       

বিতান আর বর্ষা পাশাপাশি বৃক্ষ হতে চায়

মাঠের ওপাশে জারুল গাছ
তার নিকাশিতে বহুকাল আগের শৃঙ্গারের গন্ধ।

জল 
 নীলাব্জ চক্রবর্তী



জুট মিলের কাছে
এই প্রথম
সন্ধ্যা আসে
এইসব ছদ্ম বৃষ্টির ওপর
কমলা রঙের একটা কালো বাক্স
কোথাও কিছু নেই
অর্থাৎ
একটা কাল্ট সুর
সারাদিন আমার ভেতর এক নীলগঞ্জ রোড
ঝরছে
তার
খুব অন্যমনস্ক আঙুল হয়ে
ফাঁপা শব্দগুলোর ভেতর বৃন্ত হয়ে
যেভাবে
ভাষার কাছে ফিরে গেছে জল...


সু দী প্ত  মা জি 

যাপন 




শান্ত হয়ে আছে দিন
শান্ত হয়ে আছে রাত্রি
                              আর
ভিতরে ঝড়ের ঝাপটা
বুকে খুব ঘন অন্ধকার



এক চিলতে রোদ্দুরের স্বপ্নটুকু
                               মৃত তটে
                  একলা পড়ে আছে... 
চিরঞ্জীব হালদারের কবিতা 
 উন্মাদ আশ্রমের আলো


উন্মাদ আশ্রমের আশে পাশে আমাকে ঘুরতে
দেখেছেন?
বুনো তিতির পাখির ডিম  বা শংসাপত্র খোয়া এক পাগলীর সাথে দেখা হবার কথা ছিলো।
আমাদের দ্বিচক্রযান কোন বৈধ কাগজ ছাড়াই
বুনো পথ চিনে নিতে পেরেছিল।
অথচ সফর এক গোলকধাঁধা।
বলতে পারিনি ঠিক কোন দরজায় পা দিলে
বাবুলালকাকার নীল লুঙ্গীর গীতবিতান
দেখতে পাবো রোদদূরে।
ভারি শেকলের শব্দে দিসেহারা দ্বিচক্রযান
হারিয়ে ফেলে নবীকৃত না করা বৈধতা।

একজন বলেছিল আমার ভিজে যাওয়া বৈধতা
বুকের খাঁজ থেকে বের করে এক পাগলী
জ্যোৎস্নায় শুকোতে দিতো।
জ্বালানী না ফুরানো বাইক উন্মাদ আশ্রমের
পরিত্যক্ত শিকলকে নিয়ে জ্যোৎস্না নিভে গেলে
পাগলীকে খুঁজতে বের হয়।

আমার হাতে যে টর্চ দেখছেন সেটা পাগলী
আমাকে পাঠিয়েছিল এটা কি আপনাদের
জানানো ঠিক হবে।
অর্ক চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা 

1.
নিশুত রাত হলে,
বিকেলবেলার আলো পড়ে, 
ভোরের আসবাবে।
নাম তার দিই
অবগাহন কোণ।।
2.
কথা বলো, বোলো না কথা।।
যৌবনের কথা, অতলজলের কথা, 
অস্থিস্পর্শ দিয়ে বলো,
ঠোঁটের আড়াল রেখে বোলো না।।
3.
সঙ্গস্মৃতির রেশম,
বুনে চলো হাওয়া।। 
দেখা কোরো বনান্ধকারে,
যেখানে অতীতের নামে,
রাখা আছে অবর্তমান।।


সাদা পাতার ফাইবারে, 
চলকে ওঠা বোতাম-মুখ।। 
চোখ বন্ধ হয়ে নেমে গেছে, 
ভেতর পর্যন্ত।। 
বোতামের উপর রাত নামছে, 
সন্ধ্যেবেলা। 
খেলা 
রিমি দে 

অন্ধকারের পাশে একমুঠো শিউলি
লুকিয়ে রেখেছি
সাজানো গোখরো গোপনে সেখানে
আলো রাখে
জোনাকিরাও কাছে এসে বসে
পাতারা শাদা খুলে দেয়

কালো নদি বয়ে চলে অগাধের পথে


নেক্রপলিস  ১
পাপড়ি গুহ নিয়োগী


নেক্রপলিসে ঘুরে বেড়াই
বহু তালির ঢিলে পাজামা পরে

তুমি প্রাচীন স্থাপত্যের বুক হাতড়ে
বোঝাতে চাও আমরা এখন অনেক এগিয়ে

আগাছায় থমকে দাঁড়ায় ইতিহাস
লুটেরার হাঁ-মুখে

এখানে উৎসব হরিণের সাথে

দেশের ভেতর দাবার বোর্ড ঢুকে পরে
হাসতে হাসাতে খেলার ঘুঁটি হয়ে যাই


ওয়েসিস
         গায়েত্রী দেবনাথ


আধুনিক জীবনের ওয়েসিসে
লুটোপুটি স্যম্পেন মিশেছে
ঘরের মেঝেতে আগাছা গুল্মের বাগান
দেওয়ালের চির বেয়ে
রাজকাহিনী লিখে চলে
ইনসোমেনিয়ায় নিকষ রাত্রি
হীড়ের নোলক লাগিয়ে
তারাদের পথে হাটি।
স্বরবর্ণের দেওয়াল
বাবলি সূত্রধর সাহা

আপনাকে বলছি ,
        বিদ্যাসাগর মশাই!
বীরসিংহ থেকে যে জ্যামিতিক কম্পাসে
পাড়ি দিয়েছিলেন কলকাতায়,
সেই মাইল স্টোনেই ভাঙা হলো
             আপনাকে!
সেই যে ল্যাম্পপোস্টের বর্ণহীন আলো,
ওখানে আজ বর্ণ পরিচয়,আখ্যান মঞ্জরী আর
কিছু ঘোলাটে চোখ স্বপ্নের সনেট লিখে যায়;
    কার্মাটারের বাড়িটিতে সাঁওতালরা
একপেট খিদে নিয়ে আগুন জ্বালাতেও আসেনা ,
     আপনাকে বলছি ....
              বিদ্যাসাগর মশাই
একটু পা চালিয়ে
চলে আসুন আমাদের মিছিলে....
তাহলে আর  ভাঙবেনা স্বরবর্নের দেওয়াল








নোনা গন্ধ
মনিমা মজুমদার 


আমার শরীরের চারদিকে একটি বাড়ি তৈরি হয়েছে,
কিছুটা দূরে একটি সমুদ্র।
প্রতি জোয়ারে বাড়িতে নোনা জল আসে,
আমি আঘ্রাণে গন্ধ নিয়ে বেঁচে থাকি,
আর প্রাণপনে খুঁজে চলি
বালিতে নোনা গন্ধের পায়ের ছাপ অন্তহীন


নিষিদ্ধ 
           দীপায়ন পাঠক


ঠোঁট নিষিদ্ধ নয়, চুমুও
বুকের সাথে লেগে থাকা
নরম মাংসও নিষিদ্ধ নয়
গলে পড়া জিভের লালা
শক্ত হয়ে ওঠা স্তনবৃন্ত
নিষিদ্ধ হবার ঠিকানা খোঁজে না

মনের ভয়ও নিষিদ্ধ নয়
নিষিদ্ধ নয় শিশ্নের আকুতিও
বিছানার উষ্ণতা, ক্রমাগত নিষ্পেষণ,
ভীরু অর্গাজম ,নির্বাক পিপাসা
সেও নিষিদ্ধ ইশতেহার নয়

তবুও আমার খুব ভয় হয়




সৎকার

মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়


কান্নার গাণিতিক  দাগ
মনে করিয়ে দেয় গাছের জীবনী
পথিকের টুকে রাখা ঠিকানায়
 চার দেয়াল রাস্তা মাপে
ইঁদুরের গর্তে ঈশ্বর  - চুপ
শিৎকারের ভেতরেও থাকে সৎকার

চাঁদ ও সূর্যের কোষে কোষে
            অথবা
 মৃত কুয়াশায় ছোঁয়ারা ছোঁয়াচে

ডায়েরি 
নীলাদ্রি দেব

অসংলগ্ন গল্পের দিকে উড়ে আসে মেঘ
মেঘ নয়, ক্লান্ত দুপুর
চারপাশে কুশহীন কুশের পুতুল
মেরুদণ্ড বেঁকে যায় শাসকের কাছে
পরিচয় পত্রগুলো নিজেদের সাথে জুড়ে নিয়ে
              কেউ তো বিক্রি করে সাপের খোলস
ট্রায়াল রুমের কাছে লাল সর্তকতা
বিষ দাঁত মেজে সাদা... আরো সাদা হয়ে ওঠে

উদয়ার্ণব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা 

গল্পের অভ্যুত্থান






একটা হত্যা চাই
একটা হত্যার প্রতিবাদ
আরো একটা সকাল ঘনিয়ে আসছে চাতকের চোখে

আমাদের লিঙ্গ বৈষম্যের ভেতর অহরহ ঘূণপোকা
শরীর আস্তানা খুবলে খাচ্ছে শান্ত স্বভাবের মানুষ
আমরা মানুষ ভাবছি
আমরা চাইছি দু-পায়ের জীবের ভেতর একটা আশ্রয়


একটা হত্যার চিঠি লিখব
একটা প্রতিবাদের গন্ধ ভরিয়ে তুলবে
কবিতার শিল্পাঞ্চল
কবিরা শিখুক কবিতা লেখা বাদ দিয়ে
একজন প্রকৃত মানুষ কি করে হওয়া যায়



অনিরুদ্ধ দেবের কবিতা 

উপঢৌকন



সূর্যাস্ত থেকে কিছুটা সময় ধার করে এনেছি
তোমার পাশে বসবো বলে

নৈঋত কোণে মেঘেদের জলছবি থেকে ভেসে ভেসে আসছে ইমন ও শায়েরি

সময়!
কিছু ব্যাক্তিগত গল্প উপহার দিও সময় করে
মাঝরাতে আমিও তো একাই জেগে থাকি।
প্রেম
শান্তা ভৌমিক


শতাব্দী পূর্বেই প্রেম নিষিদ্ধ ,

আদম ইভের ঠোঁট থেকে ক্রুশ ;

এর মাঝে আমরা সবাই কেমন ভালো রয়েছি !

সভ্যতার নিরাপত্তা পায়ের নিচে জড়িয়ে থাকে সীমাহীন ...

কতকাল ;

আমাদের মধ্যে ফিরিয়ে নেবার প্রথা !

আর তাই গল্পের প্রথম থেকে শেষ অবধি দেখা হয় নি ।


কবিতা হিসাবে
জ্যোতির্ময় মুখার্জি



যা সব লিখে চলেছি, তার প্রকৃত ঠাঁই হবে গারবেজে
অথচ লেখার কোনও বিরাম নেই
ভেড়ার পালের মতো কবিতা আসে
আর আমরা তাকে টেনে হিঁচড়ে বড়ো করে
মাথায় লাগিয়ে দিই দুটো শিং
তারপর একটা বড়োসড়ো লেজ সেঁটে দিতে পারলেই


কবিতা কমপ্লিট

যার লেজ যত বড়ো, সে তত বড়ো কবি
পূজা পাবার তার তত অধিকার
শিং নেড়ে সে হাম্বা ডাকে
লেজ নেড়ে তাড়ায় মাছি

আর এইভাবেই শুরু হয়ে যায় একটি গোরুর রচনা
যে রচনার শেষে, গোরুকে কেন্দ্র করে হাট বসে
চলে বিকিকিনি

চলে বাংলা-কবিতার খোলা বাজার

সুকান্ত দাসের কবিতা 

কহেন কবি কালিদাস



এ আসলে অন‍্য সিলেবাস
পরের দাবানল জাগিয়ে রাখা

কোথাও হারাইনি আমি
যুদ্ধ শেষে শ্লাঘা বিনিময়

পাপের ভেতর দর্শন কাজ করে

পরবর্তী ভোরের আগে
শিবিরে এসে গেছে বেনিটোর কবিরাজ

আমি?
নখ খুঁটাই

কুয়াশার আবেগ আছে
শীত ও পড়ছে খুউব ..






ঠিকানায়

অভিশ্রুতি রায় ভট্টাচার্য


যেই আকাশ বৃষ্টি দেয় তাকে বলে রাখি কিছু রেনুর কথা। কত কত বন্ধু শুধু আওয়াজের তীব্রতা থেকে চুরি করেছিল ঢিপি ভরা উইপোকা আর ঘুমের আদিম। হৃৎপিন্ডের যত কাছে এসে গাছে ফুল ফোটে, তত কাছে কোনো জেব্রা ক্রসিং নেই। নেই কোনো স্থির চিত্র। এই সবকিছু বিশেষণ পদ ধরে  হরফে হরফে পতঙ্গের মতো অস্পষ্ট করছে উচ্চারণ অথবা  অলংকার রীতি। কখনো জলের দাগ থেকে জন্ম নিচ্ছে আয়ু ও অপরাগ। ঝিমঝিম শব্দে আর কোনো নগ্নতা নেই। নেই কোনো আক্রমণ,  কথাজাল। সব কিছু খুলে গেছে একএকটা বাঁকে। যেখানে তোমার অজস্র পরমাণু কাগজের নৌকা করে   পাড়ি দিচ্ছে জোনাকি পথে

দীর্ঘশ্বাস 

 কচি রেজা


জ্যোৎস্না সবুজ হতে শুরু করেছে, আমি সন্ধ্যার সাথে 

সেলাই করছি নিজের দীর্ঘশ্বাস

কেউ দেখেনি ভুরুর নীচে, শান্ত ছাতিমের গায়ে

 এক অর্ধেক ঈশ্বর এসে দাঁড়ালেন

পাথরের পাল্লায় ওজন  করে দেখি, নিজেকে বিয়োগ করছি

 সূর্যের সাথে

এখন সন্ধ্যার মুখে হরিণ গেঁথে গেঁথে দীর্ঘ করছি

 অবশিষ্ট দীর্ঘশ্বাস।





ভবঘুরে 



দু’জন ভবঘুরের আলিঙ্গনে বেজে উঠেছে যে নিঃসঙ্গতা

যৌথ মেঘে্র নীচে যেভাবে ভিজছে তারা

একদিন আমরাও ভিজতাম, দিশেহারা হয়ে বাজাতাম

মৃদু অন্ধকার

আজ হৃদয় হাতড়ে দেখি, মেঘ নেই, অভীপ্সার টুপ টাপ নেই।

নির্ঝর নৈঃশব্দ্য


ভাগাড়

সে ছেড়ে গেলে দীর্ঘ হয় ভাগাড়ের পরিসর
সে রাতভর জেগে ভূত শিকার করে
সে তুলতুলে ত্বকে শ্যাওলার বিস্তার চিনে চুর
সে একা উদ্ভিদ রূপে বেড়ে নুয়ে পড়ে এখানে
সে কান্না আর উল্লাসের প্রতিবিম্বে বেগুনি কীট
সে আর লিখেনি সজলপত্র হরিৎ শয্যাগন্ধ 
সে ধীরে প্রতিস্থাপন করে সূর্যের মধ্যে সুধা
সে ধীরে ধীরে রাত ভেঙে কয়লার পাশে রাখে
সে কয়লার প্রেত ছিঁড়ে তাকায় ধিকিধিক

সে দাঁড়িয়ে থাকে সুন্দরের বিপরীতে আনত
সে ভাগাড়ের পেটে অর্ধমিথ্যা হয়ে উদ্গত




প্ররোচনা

যে প্ররোচনায় আমি খুলেছি অক্লেশে
খুলেছি শিকড়ের অতল শিকল
খুলেছি শাদা মেঘের ভস্ম বাকল
খুলেছি নদীমুখি রাতের করাত
খুলেছি কারো চোখের কাজল
খুলেছি সপ্তগন্ধ তারার হাসি ও কান্না

আমার হাত আঙুলবিহীন
শিকড় খুলে বুঝেছি কীভাবে গাছবন
বাকল খুলে বুঝেছি মেঘের শুদ্ধতা
করাত খুলে বুঝেছি ঘাতকের যন্ত্রণা

যখন কাজল খুলেছি
কাজল হয়েছে দিঘল রাত্রির অভিমান
অভিমানের অধরে নক্ষত্রের ক্ষত
সে রাত্রির দীর্ঘশ্বাস

যে প্ররোচিত করেছিলো
সে কার ছিলো বলেনি তখনো 
নৈরিৎ ইমুর কবিতা 

১ ক্ষুধা 

ক্ষুধা এক ফুলের বিস্তার
আমি তার সৌন্দর্যকে অবজ্ঞা করে
যন্ত্রণা উপভোগ করি

ভাবি, গর্ভে উৎপন্ন মধু
খেয়ে যাবে কৃষ্ণভ্রমর



২ নমস্য মানুষ 

এই তো তোমার মানুষ
তারে ঘৃত-দুধে স্নান করাও

নীলকণ্ঠ ফুলে, বেলপাতা ছোয়াও

ডাকো— ওম্ নমঃ মনুষ্য নমঃ

দেখো সে হৃদয় খুলে দিয়েছে উন্মুক্ত বৃক্ষের মতো 

ফারহানা রহমানের কবিতা 

রাত।।

এখানে অনেক রাত
বিছানা পেতেছে অন্ধকার
চোখের ভেতর জড়িয়ে যাওয়া রাস্তা
সাদা শালুকের মতো ভেসে থাকে
সিঁড়িতে ঝুলন্ত ঘুম
দু'চোখের বিস্মৃতিতে ডুবে গেছে

অস্তিত্ব উপড়ে ফেলে
এতো আলো জ্বেলো না ঈশ্বর
স্মৃতি এসে ওষ্ঠ ও অধরে আশ্রয় নিলে
ব্যাকুলতা লীন হয়ে যায় জেনেও
কি করে ললাটের রেখাগুলো মুছে দিতে চাও?


ক্ষয়িষ্ণু প্রেমের দিনগুলোতে ।।

ক্ষয়িষ্ণু প্রেমের দিনগুলোতে
সময়ের জাল বুনে বুনে
নির্জলা মৌয়াল হয়ে
বিন্দু বিন্দু করে
নিজেকে বেঁধেছি যখন
তন্দ্রার অঘোরে
বেআবরু হয়েছে অতীত
বৃষ্টিভেজা রাতে
ছেড়ে গেছ পোয়াতি মাছের ডিম
ফুটপাতে বেছান জ্যোৎস্নায়
আশ্রয় নিয়েছ
ভাবনার নিস্তরঙ্গ স্রোতে
ব্যক্তিগত মগ্নতায়
নতুন পাখির ঠোঁটে
অমরতার ফানুস হয়ে
সেইসব বৈষম্যের কালেও আকুল
হয়েছে তোমার আদিম লাটিম
বেঘোরে বাতাস ছোটা কোনো এক
ভীষণ শীতের দিনে,
তবু স্রোতস্বিনী নদীর বিষাদে আমি
পুড়ি গেছি মহাশ্বেতা হয়ে
আজন্ম তৃষিত জ্বরশোকে

উত্তর পূর্বাঞ্চলের বাংলা কবিতা 

গরীয়সী 

স্বাতী ইন্দু

সব হিসেব দেখলে মা
হৃদয়ের দাগ দেখলে না।
একটুকরো অপমান কালো
জ্বলে উঠলো অঙ্গারের ফণা!
তোমারের রাজত্বে মাগো
মাথানত,সম্মান বাঁচেনা।
কবিরা চেয়ার মোছে, মানী
নিয়মিত করে আনাগোনা ।
প্রান্তিকতার দ্বারে হাত পেতে
আর তার অহংকার সাজেনা।
সব হিসেব দেখে ফেললে
হৃদয়ের দাগ দেখাবো না।


শ্রাবণ

বিশ্বজিৎ দেব 

শ্রাবণের বিচ্ছেদের গানগুলি নিয়ে
সন্ধ্যের দাওয়ায় বসেছে একটি
সেলাই মেশিন, খট খট আওয়াজের দিকে
নেমে আসছে সুতো, টুকরো টুকরো মেঘে
জুড়ে দিচ্ছে অঝোর সাটিন, বাতাসে
আর্দ্রতার তারতম্য অনুযায়ী তার পাশে
এসে বসে একটি নিরুপায় হাতপাখা
খানিকটা উপরিতল নিজের জন্য রেখে
এর দুদিকেই উপচে পড়ছে জলের মরশুম

শ্রাবণের বিচ্ছেদের টানে কে তাকে বিলিয়ে দিচ্ছে ঢালু,
গোটা ভাটিদেশ, সাটিনের রঙে
এঁকে দিচ্ছে মেঘ , মাছভেরী আর জোয়ারের টান!


তাপমাত্রা

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

তুমি সেদিন আহ্লাদে আমার ভাইয়ের বুকে চাঁদমারি খুঁজেছ
আমি সেদিন সোল্লাসে তোমার বোনের শরীরে মানচিত্র এঁকেছি ৷

তোমার সমারোহ তোমার মহল্লায় জয়ের হুল্লোড় করেছে ৷
আমাকে ভ্রূকুটি করেছে তোমার বাহিনী
আমার অশ্লীল শল্যচর্চায় জয়ন্তীজিগির চলেছে আমার বস্তিঘরে
তোমাকে নস্যাৎ করেছে আমার অক্ষৌহিণী

শুরুতেই থামতে শিখিনি আমরা দুজনেই ৷ কেউ আমাদের থামতেও শেখায়নি ৷ শুধু হাততালি দিয়েছে যার যার সীমানার ভেতর ৷ আর জড়ো করেছে বিরল আশরফি নিজেদের ঘরে ৷

এখন শান্তির প্রস্তাব উঠলে কেউ কাউকে মানিনা ৷ তুমিও না ৷ আমিও না ৷ কেবল একে অন্যের অতীত খুঁড়ে দুষ্ট কয়লা তুলে আনি ৷

এখন আমাদের উপত্যকা আর শান্ত হয়না ৷ তাপমাত্রা বাড়ে প্রতিদিন ৷ তাপমাত্রা বাড়ে প্রতিদিন ৷


স্বপ্ন 

শুভেশ চৌধুরী

হবে । সত্যি হবে
না হলে মনে স্বপ্ন বা সেই দূর ঘটনা যা একদিন সত্য হয় কেন এত নিকট হল ।
স্বপ্নের ভিতর পাপ ও আছে , আছে অন্ধকার , বুঝি আমার ভিতর আছে কষ্ট কল্পনা ।
স্বপ্ন দেখতে ওই দূর চাঁদের মত , প্রিয়
ভাবি যদি প্রতিবেশী হয়
স্বপ্ন চাঁদ ও আমরা  তিন সত্য , হবো


আশ্বীনের আলো

নীলাদ্রি ভট্টাচার্য 

দুর্গাদি তুই কুমারটুলির আধশুকনো রোদে এসে দাঁড়ালি
আমাকে চিনতে পারছিস ?
আমি ....অপু ,তোর অ....পু....রঙের   অপু।

শরৎ এসে গেলো
হৃদয়  ভিড় করে আছে এলাচ গন্ধের কাঠাম মাটি
তুই তবুও চিনতে পারলি না ...আমি অপু
সত্যি আমি অপু।
আসলে দিদি আমি এখন বড্ড বড় হয়ে গেছি
আমাকে ফেলে তুই চলে যাওয়ার পর
আমি অনেক বেশী বড় হয়ে গেছি
আর ছোট্ট হতে পারছিনারে।
তুই ঠিক আগের মতোই
যেমনটি ছিলি তেমনটি....একদম নিশ্চিন্দিপুরের সেই মাঠের বালিকা দুর্গাদি।
ছুঁয়ে যাওয়া রেলের হলুদ শব্দে
তোর ইছামতী শ্রোত আর ....আর....
তোর লাল চন্দন বাটার মতো শাড়ির আঁচলে হাজারটা কাশফুলের কুয়াশা পোহানো গন্ধ
আহা পুজো এসে গেছে দুর্গাদি তাই তোর সেই আকাশের মতো শাড়ির কাছে একটা পথের পাঁচালী উপহার দিতে চাই আর সারাদিন বাতাসের নাতিশীতোষ্ণতায় উড়তে চাই আমাদের উঠোন ভর্তি  হলুদ ডানার পাখি হয়ে।


অনন্ত

দেবাশ্রিতা চৌধুরী

মৃতশরীরে মুখাগ্নির সময়
নারীচোখে দু'ফোঁটা" নগ্নজল!"
সমস্ত ইতিহাস ও দু'ফোঁটায়
উন্মোচন করে কী লাভ!!

আগুন নেভাতে একঝাঁক
বৃষ্টিইতো ছিল অপরিহার্য।


চিত্রনাট্য 

তমা বর্মণ 

অতঃপর হাতগুলি জড়িয়েই ভেঙে পড়ে
উন্মুক্ত
রাজপথে
অপসৃয়মান ছায়ায় সেবাদাসরা কুড়িয়ে নিয়ে যায়
চালাচালি করে প্রেক্ষাপট ধরে সংলাপ-কাহিনি
ধুলোর শতরঞ্জিতে দু-এক মনোযোগী শ্রোতা নির্বাক
কোনো চরিত্রকে ছুঁতে পারে না স্বপ্নের চেয়ে সুন্দর
হৃদয়ে
বিশ্বাসে
তাদের অজ্ঞতা দিয়ে ভাত মেখে খায় জ্ঞানী ও দ্রষ্টা
বাড়াবাড়ি রকমের ভিড় সব একপাক্ষিক গল্প...


মনোভূমি কিংবা লীলাবতী কথা

বিজয় ঘোষ

১.

রাত্রির রঙে ডুব দেয় ইশারা...
ক মানে কৃষ্ণ ক মানে কারুবাসনা

ঈশ্বরীর চোখে কাজল ঠোঁটে লিপস্টিক

২.

সেই পাগলি  ছুঁয়ে ছিল
তারপর  বৃষ্টি বৃষ্টি বৃষ্টি

এবার  মনোভূমিতে কৃষিকাজ হবে

৩.

কত দূরে ঈশ্বরীর বাস
স্বর্গ সুখ কাকে বলে

লীলাবতী জানে আঁধারের প্রিয়রূপ
ছলাকলা...


অনামিকা-৬

শতদল আচার্য 

ভীষণ মনে পড়ছে তোমার কথা
কেমন আছ এই বরষায়
জানি ভীষণ একটা আলো আসছে
সাথে অপূর্ব এক বাতাস
কতকাল এমন হয়নি ।

নিজস্বতা বলতে আজ
চুপি চুপি গলির রাস্তায়
একা একা তোমার কথা
ভেবে পথ চলা ।
কবে বাবার সাথে হেঁটেছি
সেই থেকে এই চলা শুরু
একটুক ও  থামিনি


কথা-২

শিবাশিস চট্টোপাধ্যায়

রেল লাইন পাতা ছিল, বুকের ভিতর। সরল ও সর্পিল। ফিসপ্লেট খুলে নিয়ে রিকেটি সর্ষেখেতে লুকিয়ে থেকেছি। তুমি আর আমি। প্রেম হয়নি, দুর্ঘটনার বগিগুলি সর্ষেঢেউ পিষে দিয়েছিল। এইভাবে নিজের ভ্রমণ নিজেকেই সেরে নিতে হয়। মঘা নক্ষত্রের আলো এলোচুল বারান্দায় খুলে। রমণ ও রাতের ক্লান্তি ভুলে। কার ঢেউ ছুঁয়ে কে যে পাষাণ হয়ে যায়!


রনো ও আমি ১

কমলিকা মজুমদার

নির্ভীক প্রেমে বুকের পাটা দরকার;
আমার রিব-কেজ গড়া সকল মাটি
রনো নিজ হাতে শাবল চালিয়েছে
কোটর মাঝে রেখে গেছে
কিছু উডরোজ ও অক্ষরজাল,
এখন আমি শুধু লুকিয়ে দেখি
সুদীর্ঘ কালো শঙ্খচূড়ের মতো নিশ্বাস
দেখি আর বসে থাকি অপেক্ষায়
এক অশান্ত শ্রাবণ বৈশাখীর-
মানুষভর্তি রাস্তায় বেরিয়ে পড়বো একা
শহরের পাথুরে মাটি লেপবো বুকে
নতুন সফেদ হাড় গজাবার মন্ত্র
লিখে রেখে যাবো আরেক পাঁজর কোঠায়।


জন্ম

বিশ্বরাজ ভট্টাচার্য

নৈঃশব্দের গভীরে
যে শব্দ-ভ্রূণ
খেলা করে
তার শরীরে
লেখা আছে
কোলাহলের কাহিনি!


যে পথ 

অমলকান্তি চন্দ

যে পথ শেষ হয় গুলঞ্চ ঠিকানায়
বহু দূরে তার খোলা দ্বার
রাতের গভীরে
পাখি মায়া জড়িয়ে ধরে বুকে…

যে পথ মোহন বাঁকে যেতে যেতে
পাহাড়ের ঢালে কোন বৃক্ষের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়…
মাথা নত করে উড়াল আকাশ
বিচিত্র ডানা তার, ভবঘুরে সকাল ...

দু'পায়ে দাঁড়িয়ে থাকে বৃক্ষ
দেখে যায় দৃশ্যের ভেতর অচেনা মানুষের উল্লাস…


স্বাক্ষরহীন উত্তরসূরি

অপাংশু দেবনাথ

হলুদ পাতার থাকে এক অন্তর্মুখী ইতিহাস।

গাছ জানে কোথায় রেখেছে বোঁটার ক্ষত প্রশ্বাস।
না-উইলকৃত জমি তাই পড়ে থাকে খাস-বৃত্তে,
কখন জুমিয়া, ভাগচাষী, চালায় লাঙল।

স্বাক্ষরহীন এ পথ উজ্জ্বল---উন্মুক্ত তোমার গানে,
প্রেম আমার, অখন্ড সূর্যোদয়।

আমার কাজের কোনো থাকবেনা স্বাক্ষর।
স্বাক্ষরহীন কর্মের জীবনে,ধারাপাত রেখে গেছে যারা,
তাদের উত্তরসূরি আমিই


পাষানের এপিটাফ 

রাজীব ভট্টাচার্য

জিদের উল্টো পিঠে কী নির্বাক ঘৃণার লালন !
এতো পাপ জমে ছিলো, এতো তিমিরে, এতো অন্ধকার ?
এখন মেধার স্খলন দেখি, দেখে ফেলি
মুখোশের মুখ ,
সম্পর্ক দূরে দূরে হাঁটে,সমস্ত তিতিক্ষাকে
তীরবিদ্ধ করে
নিজের জন্য রচিত স্বাধীন আকাশ
মুক্তির আলুলায়িত স্বাদ জুড়ে সাজানো অভিমান !
তারপর একদিন আমাদের চেতনার পাখি ফুস্...

মুক্তির স্বাদ লেহন করা ক্ষুধিত রসনায়
সমস্ত বাসনার উদগ্রীব উদযাপনে
মস্ত জিও , অগভীর অলীক যাপনে
এরই নাম বুঝি ভালো থাকা !

যাদের কোন মাঝরাত নেই ,
মাঝ দরিয়ায় ডুবে যাওয়া নেই ,
নিজের সাথে নিজের সংঘাত অবান্তর মনে হয়!

আনন্দ আসলে এতোটাই গোলাম
যে তাদের চরণ চুমে যায় বারবার...।


আমি মৃতবৎসা নই

আবু আশফাক্ব চৌধুরী

সবুজ ঘাসের উপর শুয়ে শুয়ে দেখছি
কাজল মাখা আকাশ হরিণা চোখ
সন্তর্পণে মেঘের মত ওড়ে যাচ্ছে
বনেদী পাহাড়ের গায়ে চুমু খেয়ে
ফিরে আসছে কান্না ভরা চোখ

আমাকে সে দেখেনা অথচ
আমি আড়ালে নই
এ কথাও সে জানেনা আমি তাকে চাই
তাকে ভীষণভাবে ভালবাসি। মঙ্গল কামনায়
দু হাত জুড়ে আমি স্থির হয়ে তার দিকে তাকাই

একঝাঁক ধোঁয়াশা মাঝপথে দৃষ্টি হারিয়ে ফেলে
অহেতুক বিদ্যুৎ চমক আঁধার বাড়িয়ে তুলে
আমি মৃতবৎসা নই
কারাগারে বারবার বন্দি করে রাখো তবু
একরাতে হাজার কৃষ্ণের জন্ম দিতে পারি
অকুতভয়ে...।



নির্জন দ্বীপ 

নবীনকিশোর রায়

বয়ে যাওয়া তরী মধ্য দরিয়া পার হয়ে  অন্তিম বিকেলে পৌঁছায়,
সমাসন্ন  অস্তমিত বসত বেলা---
ঘনিয়ে আসা গন্তব্যে মাঝি একা, আড়ালে সূর্য ডুবে যেতে দেখে;
দেখে,---নিঃসঙ্গ  তীরভূমি,--- বহুদূরে পড়ে  আছে ফেলে আসা দিন !

অচেনা  ঘাটে ঘাটে নোঙর করে,
রঙিন পালে  লেখা নাম হৃদয় অক্ষরে  আসন-পাতা
খোঁজে ফিরে "দূর দ্বীপ বাসিনী"!

যুগান্তর ব্যাপী সকাল
দিনে দিনে ফুরিয়ে যায়
মুছে যায় প্রতি পাতায় লেখা,পাঠ...

পেছনে ফেলে আসা দিনের মায়াময় খেলাঘর আপন পর  স্বপ্নের জগৎ তীর-জুড়ে লীলাভূমি,গোধূলির নিরঞ্জনে ক্রমশ ম্লান হয়ে আসে দৃশ্যমান তীর, নির্জন দ্বীপ!


ফিরতি রথ

পার্থ ঘোষ

যে ভাবে গর্জন শুনি শূন্য আকাশের
ভাবি, এই বুঝি তুমুল প্রলয়
ভেসে যায় মালা
চন্দন-নকুলদানা সহ লোটের বাতাসা...

যেভাবে শুভদ্রা জগন্নাথ আর বলরাম হাসে
শুকিয়ে যাওয়া ফুল ফিরতি রথের দিকে
নরম বিশ্বাসে
আড়ালে কে যেনো আবার তাকিয়ে থাকে স্থির...

দ্রাবিত সময় বয়ে চলে যায়
দু'হাতে রথের দড়ি, দোলাচলে চাকা
এভাবেই ঘুরে যায়- আসছে বছর


ভাষানাদ 

ভাস্কর জ্যোতি দাস

পদাতিকদের রক্তে, এ উপত্যকার ইতিহাস,
ভূমিতে কৃষ্ণচূড়া আজও বিপ্লবের মাসেই ফোটে ।
বিঁধে গিয়েছিলো কিছু স্বপ্ন অবশ্য,
রাজনীতির লাঠালাঠিতে...
কিন্তু এ উপত্যকা জানে, স্বপ্নের স্বাধীনতায়,
পথে নামতে হয় মিছিল করতে হয়।

পথের আল্পনা এখানে মাতৃভাষায় কথা বলে,
'উনিশ' হয়ে উঠে উপত্যকার পবিত্র শব্দঈশ্বর।


নার্সকে ভালোবাসতে গিয়ে...

রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ

সব ফর্মুলা ভুলে
ছুটে যাই জ্যামিতিক কায়দায়

নার্সকে ভালোবাসতে গিয়ে
শব্দের ধর্ম গাঢ় হয়
রাতের যন্ত্রণায় নেমে আসে ছন্দের দস্যিপনা
মানচিত্রের শুশ্রূষায় তখন লৌকিকতা
হাসপাতালে কবিতায় কবিতায় সে সারিয়ে তুলে
উচ্চারণের সমস্ত দ্বন্দ্ব

শুভঙ্কর পালের অনুগল্প 


টায়ারের দাগ 

শুভঙ্কর পাল 

এই রাস্তা আমার চলাচলের ।  পূব কখন যে ফুরিয়ে আসে তা ঢলে পড়া সূর্য্যের রং দেখেই বুঝে নেয় ঘরে ফেরা পাখি । সেই কবেকার মাস্তুল ডিঙিয়ে চলে যাওয়ায় গল্পের ভিতর এখনও  বৌরেলি মাছের গন্ধ লেগে আছে । আহা ! মায়ের জল ভেজা হাতের সেই গন্ধ এখন শুধুই আমর স্বপ্নের ভিতর খেলা করে । কেনো যেনো বারবার মনে হয় এই বুঝি মা আঁচল পেতে রেখেছে দুপুরের ভাতঘুমের ।  এই না পাওয়াগুলোই  আজ আর ঘুমোতে দেয় না ।

অনুভব না অনুভূতি কার ভেতর কতটা সুখ ? এই অন্তহীন জিজ্ঞাসার ভিতর তুমিও নদীর মতোই বয়ে চলা এক প্রবাহ মাত্র ।  জানালার ওই ধারেই কতদিন মা বিনুনি কেটে দিয়েছে দিদির । আমি তখন রেগে গিয়ে দিদার কোলে মাথা রাখতাম আর কতো রূপকথার গল্পের ভিতর নিজেকে রাজকুমার সাজিয়ে উড়ে গিয়েছি তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে । ধীরে ধীরে কখন চোখ বুঁজে আসতো বুঝতেই পারতুম না ।

আজ সারাদিন আকাশ যেন মুখ হাঁড়ি করে বসে আছে ।  বলা নেই কওয়া নেই দুম করে নেমে আসে । এই মাত্র যে পাখিরা বেরিয়ে এসেছিলো ,  কেমন যেন ঘাবড়ে গেছে ।  কী করে নিজেদের আস্তানা বাঁচিয়ে রাখে আর কী করেইবা ছানাপোনা বাঁচিয়ে রাখে ,  কী বা খেতে দেয় এই হাজারো ভাবনা ওদেরও গিলে খায় ।  এদিকে আমি সবে জানলায় চোখ রেখে দেখতে পেলাম আমাদের ট্রেকিং এর রাস্তায় টায়ারের দাগ ।  বৃষ্টি একটু ধরে এলে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে আমিও বেরিয়ে পরি । 
সত্যম ভট্টাচার্যের গল্প 



জাল
  সত্যম ভট্টাচার্য

  গ্যারেজের চাবিটা  হাতে নিয়ে সিড়ি দিয়ে দুদ্দাড়িয়ে নামছিলাম।মাথায় ছক কষা চলছিলো যে আজ কোন কোন ক্লায়েন্ট মিট করতে হবে,কোন প্রিমিয়ামের টাকা দিতে হবে,কোন লোনের টাকা দিতে হবে,কিভাবে অফিসে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে ওপরে ওঠার পথ সুগম করতে হবে, কাকে কড়কে দিতে হবে কথা বেশী বলার জন্য।আবার ভাবছিলাম শুধু এসব করলেই তো হবে না,জায়গামতো তৈলমর্দনও করতে হবে।আমার তো লক্ষ্য শুধু এই অফিস বা এই এরিয়ার বস হওয়া নয়।আমার লক্ষ্য আরো অনেক অনেক উপরে।তাই এই সেক্টরে নাম করতে হলে এসব করতেই হবে।কম্পিটিশনে টিকে থাকতে গেলে এটাই এখন পথ।
  গেট দিয়ে বের হয়ে যখন রাস্তায় নামলাম মেয়ে উপরের ব্যালকনি থেকে ডেকে বললো-বাবা বাবা,তারে বসা মাছরাঙাটাকে দেখো।আমি চট করে একবার ঘাড় ঘুরিয়ে একঝলক মাছরাঙাটাকে দেখে নিয়ে ও ওকে হাত দেখিয়েই ছুটতে লাগলাম গ্যারেজের দিকে।গ্যারেজটা আমার একটু এগিয়ে একটা বড় ফ্ল্যাটের নিচে।বাবা পুকুরের ধারে কানাগলিতে এই ছোট্ট এপার্টমেন্টে ফ্ল্যাটটা নিয়েছিলেন নির্জন দেখে।তখন আমাদের গাড়ি ছিলো না।জানালার পাশে বসে সারাদিন পুকুরের মাছরাঙা দেখতাম।মেয়েটার কথায় এসব মনে পড়ে গেলো।কিন্তু আমাকে তো এ নিয়ে পড়ে থাকলে হবে না।
  ছুটতে ছুটতে গ্যারেজে পৌঁছে তালাদুটো খুলে যেই না ভেতরে ঢুকেছি ওমনি একটা ঘন ভারী কালো মাকড়সার জাল ছাদ থেকে আমার ওপরে ঝপ করে নেমে এলো।নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে লাগলো আমার ধীরে ধীরে। 


আফজল আলির গদ্য 


চিন্তা প্রসারণ এবং কবিতায় ছক ভাঙা 
     (একটি দার্শনিক পর্যবক্ষেণ)

আফজল আলি 

Dubito Ergo Cogito Ergo Sum - এটি দার্শনিক গণিতবিদ রেনে দেকার্ত র কথা । Latin ভাষা থেকে ইংরেজিতে এসেছে এইভাবে - I doubt , therefore I think , therefore I am . অর্থাৎ কোনো কিছুকে সন্দেহ করা থেকে নতুন করে চিন্তার সূত্রপাত হয় এবং চিন্তা করার মধ্যে দিয়ে মানুষের অস্তিত্ব । দেকার্ত অবশ্য বলেছেন ব্যক্তি সব কিছুকেই সন্দেহ করতে পারে , কিন্তু সে নিজের অস্তিত্বকে সন্দেহ করতে পারে না । সন্দেহবাদ এর প্রবক্তা রেনে দেকার্ত র মতে - মানুষের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত অজ্ঞানতা থেকে মুক্তি লাভ করা । 

অজ্ঞানতা থেকে মুক্তি লাভ করার কথা শুধু দেকার্ত ই বলেননি , অনেকেই বলেছেন , এখনো বলে যাচ্ছেন। 
চিন্তা করার মধ্যে দিয়ে মানুষ তার অবস্থান পরিবর্তন করে ফেলতে পারে । মানুষ চিন্তা করে তার বর্তমান অবস্থানকে পাল্টানোর জন্য । তা সে সমস্যা থেকে মুক্তি হোক বা উন্নত বিকল্পে পৌঁছাতে অথবা উন্নত বা কল্পিত চিন্তার বাস্তবায়নে । প্রতিটা ক্ষেত্রেই তা হল অবস্থান পরিবর্তনের লক্ষ্যে । এটি বিজ্ঞানেও স্বীকৃত । নিউটন তাঁর গতিসূত্রে বলেছেন বাইরে থেকে কোনো বস্তুর উপর বলপ্রয়োগ না করলে সচল বস্তু চিরকাল সচল বা অচল বস্তু চিরকাল অচল থাকবে। সচল বস্তুর চিরকাল সচল থাকার বিষয়টি কেবলমাত্র একটি কাল্পনিক স্থল বা মহাকাশীয় অবস্থান যেখানে কোনো বিরুদ্ধ শক্তি নেই গতিকে দমন করার। বাস্তবে বা এই পৃথিবীতে সর্ব ক্ষেত্রেই থাকে নানান প্রতিকূলতা যা গতিশীল বস্তুকে গতিশীল রাখতে দেয় না । আমার বক্তব্য হল বস্তুর অবস্থান পরিবর্তন করার জন্য যেমন বলপ্রয়োগের ব্যাপার থাকে , মানুষের অবস্থান পরিবর্তন করার জন্য চিন্তা একটা বড়ো factor. চিন্তার কথাটা বললাম , আসলে চিন্তার সাথে যুক্ত হয়ে পড়ে বুদ্ধি মেধা জ্ঞান বিদ্যা এবং বাস্তবায়নের পন্থা । বিজ্ঞান বা দর্শন বা নীতিশাস্ত্র সবের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে চিন্তা বা প্রজ্ঞার শ্রম। এটা খুব ই সরল বিষয় সভ্যতার ক্রম বিকাশে মানুষ নিজস্ব টিকে থাকা এবং বিস্তারের জন্য নিজস্ব চিন্তার নিগূঢ় ছাপ স্পষ্ট রেখেছে , নচেৎ এই বিপুল সম্ভার নিয়ে পৃথিবী মান উন্নয়ন করতে সক্ষম হতো না । 

এই চিন্তার সূত্র ধরেই বলতে পারি যে জ্ঞান সামগ্রিক ভাবে ক্রম বর্দ্ধমান এবং জ্ঞানের বিভিন্ন শাখা একে অপরের সাথে interlinked. অর্থাৎ জ্ঞান ক্রম বিকাশমান একটি বিশাল ইউনিট যা ভিতর থেকেই পরিবর্তন বা সংযোজন হতে চায় । যেকোনো মানুষের অধিকার থাকে অবস্থার পরিবর্তন না করা , জ্ঞানের ক্রম সংযোজন এবং প্রসারণে অংশগ্রহণ না করা। যদিও সামগ্রিক ভাবে একক কোনো মানুষ তা সক্ষম হয় না কারণ system তাকে অংশীদার করে তোলে। কিন্তু জ্ঞান প্রসারণ সংযোজন হয়েই চলে । এটা একটা continuous process. মানুষের দ্বারাই ঘটে এই প্রক্রিয়া । দার্শনিক বিজ্ঞানী থেকে শুরু করে অর্থনীতিবিদ এবং সমাজবিজ্ঞানী , চিন্তাবিদ, এমনকি কৃষক শ্রমিক পর্যন্ত এই প্রক্রিয়ার শরিক । একজন কবি যখন কবিতা লেখেন তখন তার প্রাথমিক সূত্রে থাকে চিন্তা শক্তির প্রতিফলন ; তার নানান মানসিক পর্যায়ের ভাষাগত এবং কাব্যিক প্রতিফলন হল কবিতা । কবিতার ক্ষেত্রে স্বতঃস্ফূর্ততার পটটি পাশাপাশি সংযুক্ত হয়েছে ।

তমসার স্নিগ্ধ জলে অবগাহন করতে এসে ঋষি বাল্মীকি যখন দেখলেন ব্যাধ কর্তৃক পুরুষ ক্রৌঞ্চের তিরবিদ্ধজনিত ছটফটানি এবং সেই হৃদয় বিদারক দৃশ্য দেখে তাঁর মুখ থেকে নিঃসৃত হয়েছিল পৃথিবীর প্রথম শ্লোক তথা কবিতা " মা নিষাদ প্রতিষ্ঠাং ত্বমঃ অগমঃ শাশ্বতী সমাঃ
যৎ ক্রৌঞ্চমিথুনাদেকমবধিঃ কামমোহিতম " । এই শ্লোক স্বতঃস্ফূর্ত উচ্চারিত হয়েছিল । কিন্তু যদি একটু analysis করা যায় তাহলে বুঝতে পারব সেই মুহূর্তে বাল্মীকি শোকের মধ্যে মুহ্যমান হয়ে গভীর চিন্তাক্লিষ্ট হয়ে পড়েছিলেন এবং সেই চিন্তারই স্বতঃস্ফূর্ত বহিঃপ্রকাশ এই কবিতা । যদিও এটি রামায়ণের প্রথম শ্লোক নয় , কিন্তু কাব্যশ্লোক হিসেবে প্রথম । অর্থাৎ এখানেও সেই অনুঘটক হল চিন্তা , গভীর চিন্তা এবং চিন্তা নিঃসৃত জ্ঞানের আহরণ ও প্রতিফলন । কবিতার স্বতঃস্ফূর্ততার বিষয়টি এভাবেই এসেছে যেখানে চিন্তা এবং একাগ্রতা মস্তিষ্কে hammer করে শব্দ নামিয়ে আনে। বাল্মীকির কবিত্বশক্তি প্রথমে জানা ছিল না , কিন্তু পরবর্তীতে তা প্রকট হয়েছে। 

চিন্তা প্রক্রিয়ার সাথে নানাবিধ বিষয় জড়িয়ে থাকে। অগ্রগতির প্রক্রিয়া যেমন একজন মানুষ তার good being এর জন্য কীভাবে নির্ধারণ করবে সেই নিরিখে অগ্রসর চিন্তা এবং বাস্তবায়ন । তেমনি কবিতার ক্ষেত্রে একজন কবির কাছে এসে হাজির হয় নানান অনুষঙ্গ উপকরণ উপাদান । কবি কীভাবে লিখতে চাইছেন , কবির ভিতরে লুকিয়ে থাকে তাঁর নিজস্ব সহজাত বহিঃপ্রকাশের ধারা অথবা কবি নিজেকে বদলের মধ্যে নিয়ে যেতে চান কিনা । বেশির ভাগ কবি চান নিজস্ব একটি signature তৈরি করতে , সেই style এর বাইরে তাঁকে দেখা যায় না বেশি । আবার অনেকে চান signature না তৈরি করে নানারকম লেখনী ভঙ্গিমায় থাকতে । এটা কবির নিজস্ব চাওয়া ও বোধের উপর নির্ভর । কিন্তু প্রত্যেক কবির শব্দ প্রয়োগের কৌশল স্বতন্ত্র থাকে , এটা কবির ভিতর থেকে উঠে আসা এক প্রবণতা যা পর্যবক্ষেণ করলে কবিকে চেনা যায় । কেউ কেউ আবার সজ্ঞানে নিজের ভিতরের style ভাঙতে ভাঙতে যান , পছন্দ করেন। 
এজরা পাউন্ড ছিলেন নিরীক্ষাধর্মী কবি , সাহিত্য জীবনের পুরো সময়টাই কবিতার বিভিন্ন সম্ভাবনা নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করে গেছেন । আর এর ফলস্বরূপ তাঁর প্রতিটা কাব্যগ্রন্থ ই আমাদের নতুন নতুন অভিজ্ঞতার সামনে দাঁড় করায়। এ প্রসঙ্গে T S Eliot বলেছেন - পাউন্ডের কবিতা যেমন ভাবা হয় তারচেয়ে অনেক বেশি বৈচিত্র্যপূর্ণ ই নয় , বরং তা ধারাবাহিক উন্নতির চিহ্ন রেখেছে। - 
এজরা পাউন্ড নিজে বলেছেন - " ত্রিশ বছর বয়সে এসে সিদ্ধান্ত নিলাম, কবিতা বিষয়ে যে কোনো জীবিত ব্যক্তির থেকে আমাকে বেশি জানতে হবে, কবিতার পরিবর্তনশীল উপাদানগুলি বুঝে নিতে হবে এক্কেবারে খোলস থেকে । কবিতার কোন অংশ অবিনশ্বর , কোন অংশ অনুবাদে হারিয়ে যায় না , এবং যা কোনো অংশেই কম গুরুত্বপূর্ণ নয় , কোনো ফলাফল কেবল এক ভাষাতেই পাওয়া সম্ভব , অন্য ভাষাতে নয় । এর খোঁজে কম বেশি নয়টি বিদেশি ভাষা রপ্ত করেছি , অনুবাদের মাধ্যমে পড়েছি ওরিয়েন্টাল সাহিত্যকর্ম । প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিবিধান ও অধ্যাপকদের সাথে লড়াই করেছি যারাই এই ব্যাপারটি ছাড়া অন্য কিছু শেখানোর চেষ্টা করেছে আমাকে , কিংবা জ্বালাতন করেছে ডিগ্রির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে । অবশ্যই কোনো পরিমাণ পাণ্ডিত্য ই কাউকে কবিতা লেখায় সাহায্যে করে না , এটা এমনকি বিশাল একটা বোঝা মনে হতে পারে , কিন্তু বেশ কিছু ব্যর্থতাকে এড়িয়ে যেতে সাহায্য করে তা । দ্বিতীয় শ্রেণীর কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা আমি ঘৃণা করি - "

অর্থাৎ এজরা নিজে স্বীকার করেছেন যে নির্দিষ্ট একরকম লেখা বা ধারাকে তিনি পরিহার করতে চান , ঠিক যে কথাটা আমি চিন্তার প্রসারণের ক্ষেত্রে বলতে চেয়েছি । চিন্তার প্রসারণ এলেই কবি তাঁর নিজের ছক বা গন্ডিকে নিজেই ভেঙে ফেলবেন । তখন signature কথাটি অবান্তর হয়ে ওঠে । চিন্তার প্রসারণের ক্ষেত্রে অবশ্যই চলে আসবে জিরো বাউন্ডারি ধারণা যা আমি বলেছি বা লিখেছি । অর্থাৎ চিন্তাশীল ব্যক্তি এগিয়ে যাবেন তাঁর অভিপ্রায়ে । কবিরা চিন্তা প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকেন বলেই তাঁরা পারবেন তাদের লেখনীর ছাঁচ ভেঙে ফেলতে । এটি যদিও খুব কঠিন কারণ আমরা কেউ ই বেরিয়ে আসতে পছন্দ করি না যা আমাদের favorable zone বলে মনে করি। চিন্তা প্রসারণের বিষয়টি চিন্তাশীল ব্যক্তির ভিতর থেকে আসতে পারে আবার বাইরের উপাদান থেকেও আকস্মিক ক্রিয়া করতে পারে , যেন হঠাত্ কোনো ঝলক এসে খুলে দিল দ্বার। 

নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ " কবিতাটিকে রবীন্দ্রনাথ তাঁর সমস্ত কাব্যের ভূমিকা হিসেবে গণ্য করেছেন । এই কবিতাটিকে রবির প্রথম আলো বলা যায় । 
" কেন রে বিধাতা পাষাণ হেন
চারিদিকে তার বাঁধন কেন 
ভাঙ রে হৃদয় , ভাঙ রে বাঁধন
সাধ রে আজিকে প্রাণের সাধন
লহরীর পর লহরী তুলিয়া 
আঘাতের পর আঘাত কর " 

কবি লিখেছেন - " একটি অদ্ভুত হৃদয় স্ফূর্তির দিনে নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ লিখেছিলাম কিন্তু সেদিন কে জানত এ কবিতায় আমার কাব্যের ভূমিকা লেখা হইতেছে " 
কুড়ি বছর বয়সে লেখা কবিতাটিকে কবি তাঁর সমস্ত কাব্যের ভূমিকা হিসেবে গণ্য করেছেন । অদ্ভুত এক আবেশ কাজ করেছিল এই কবিতাটি লেখার সময় । এক সকালে কলকাতায় বসে সূর্যের আলো এসে পড়ার সাথে সাথে কবি বোধ করলেন যেন তাঁর চোখের থেকে একটা পর্দা সরে গেল , একটি অপরূপ মহিমায় বিশ্ব সংসার আচ্ছন্ন হয়ে গেল । কবি বললেন -" আনন্দ এবং সৌন্দর্য সর্বত্র তরঙ্গায়িত হইতে লাগিল- আমার মনে স্তরে স্তরে যে একটা বিষাদের আচ্ছাদন ছিল তাহা এক মুহূর্তে ভেদ করিয়া অন্তরের মধ্যে বিশেষ আলোক বিচ্ছুরিত হল " । কবি আলোকিত হলেন , চোখ গেল খুলে । যা আমি বলেছিলাম বাইরের উপাদান থেকেও আকস্মিক ক্রিয়া করতে পারে । 
কবি ভাঙার ডাক দিয়েছেন , চারিদিকে বাঁধন ভাঙার ডাক , লহরীর পর লহরী তুলে প্রাণের সাধন করতে বলেছেন , আঘাতের পর আঘাত করতে বলেছেন । এই আঘাত নিজের বোধ ও চেতনার কাছে , মানুষের কষ্ট যন্ত্রণা দুঃখ দুর্দশা নিপীড়নের বিরুদ্ধে এবং কবি হয়ে উঠলেন দার্শনিক । কবি স্থিতির বিরুদ্ধে মত জারি রাখলেন । রবীন্দ্রনাথের এই ভাবনার সাথে এজরা পাউন্ডের ভাবনা মিলে গেছে , স্থবিরতার বিরুদ্ধে , signature তৈরি করার বিরুদ্ধে । ডেকার্ত বলেছেন অজ্ঞানতা দূর করার মধ্যেই মুক্তি। কবিও তাই বললেন । 

এ সম্পর্কে কবি নজরুল ইসলামের কারার লৌহকপাট ভাঙার আহ্বান - 
" কারার ওই লৌহ কপাট 
ভেঙে ফেল কর রে লোপাট
রক্ত জমাট শিকল পূজার পাষাণ বেদি " 

বৃটিশ-কারার লৌহকপাট এর পরিবর্তে যদি মনের কপাট , সাম্প্রদায়িকতার কপাট , বিষাক্ত মন ও সমাজের কপাট , রাষ্ট্রের চাপানো অত্যাচারের কপাট ভেঙে সমতার নতুনত্বের দিকে এগিয়ে যাওয়া হয় , তাহলে এই কবিতাংশ যেন আজকের দিনের জন্য । Great man think alike - কবি এবং দার্শনিকের ভাবনার মধ্যে মিল থাকে , মিল থেকেই যায় কারণ সুক্ষতম ভাবনায় দৃষ্টিভঙ্গি প্রায় এক হয়ে যায় । এটিই হল জ্ঞান এবং প্রজ্ঞার সার্থকতা । 
কবিতার নিজস্বতায় রয়েছে diversity এবং বিবর্তন । কত রকমের কবিতা , কত রকমের ভাব , বিনিময় এবং অনিবার্যতা । কবির মধ্যে যদি উত্তাপ না কাজ করে কবির ভাষা স্তব্ধ হয়ে যাবে । কবির থাকে হতাশা , জীবন বোধের অনিশ্চয়তা , কিন্তু এ সব ছাপিয়ে তাঁর কলম ,তার চিন্তা, তাঁর দর্শন তাঁকে টেনে নিয়ে যায় , মান নির্ণয়ের ভূমিকায় কে গ্রহণ করল , কে করল না তার পরোয়া নেই। এক দূর দ্বীপবাসিনী তাঁকে হাতছানি দেয় , " মম জীবন যৌবন , মম অখিল ভুবন " - সে হেঁটে চলে বহে চলে । কবি কাজের মধ্যে থাকেন , কবি সংসারে থাকেন , তদুপরি কবির মাথার মধ্যে এক বোধ কাজ করে । 
" অর্থ নয় ,কীর্তি নয় ,স্বচ্ছলতা নয় , - আরো এক বিপন্ন বিস্ময় 
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতর খেলা করে 
আমাদের ক্লান্ত করে , ক্লান্ত - ক্লান্ত করে " 
এই বিপন্ন বিস্ময় যা মৃত্যুমুখী এক বৈভব , অনিশ্চয়তার মুকুট আমাদের বোধের মধ্যে তীব্রতর হয়ে জন্ম দেয় কবিতার উৎসরণ । নিজের ভিতরে নিজের প্রজ্ঞা গড়ে তুলি , জীবনের দৌড়ে নিজেরাই হয়ে উঠি দার্শনিক । আমাদের ভিতরে জন্ম নেয় চিন্তার প্রসারণ , বিকশিত হই , নির্মোহ হই , আরো কদম এগিয়ে যাই - এক অমোঘ নিয়তি ছাপিয়ে যাওয়ার প্রয়াস । 

কবিতার বাঁক বদলে , বিবর্তনে নানা প্রকরণ আমরা দেখতে পাই যা সময়ের প্রেক্ষিতে পরিবর্তন হয়েছে । দেখতে পাই কবিতার নানান রূপ ও ডাইমেনশন । বিভিন্ন ইজম মতবাদ , বিভিন্ন দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কবিতার নানান রূপরেখা এবং সেই কেন্দ্রিক লেখার গতিপ্রকৃতি সামগ্রিক ভাবে সাহিত্য শিল্প তথা কবিতার ভান্ডারকে সম্পদশালী করেছে। কালের স্রোতে তারা টিকে ও আছে , গ্রহণ বা বর্জন ব্যতিরেকে । এই সব ইজম আন্দোলন রূপরেখার মধ্যে না ঢুকে একটা কথা অবশ্যই বলা যায় যে কবিতা static থাকেনি কখনো । Static থাকতে পারে না কারণ মানুষ তথা সৃষ্টিশীল বুদ্ধিজীবীরা তাঁদের ভাবনা প্রসারিত করে গেছেন বা চলেছেন তাঁদের ই তাগিদে যা ভিতরের স্পন্দন , চিন্তা প্রসারণের প্রক্রিয়ায় । পূর্ববর্তী দলিল হাতে নিয়ে বা পরিচিত হয়ে শিল্পীরা আগমনীর সূর আঁকেন , কবিতার ছক ভাঙার সাহস দেখান । শিল্পের ক্ষেত্রে শুধু ছক ভাঙলে ই চলে না , নতুন সেই ভঙ্গিকে হয়ে উঠতে হয় , না হলে তা মান নির্ণয়ে গ্রহণযোগ্য হয় না । হয়ে ওঠার ব্যাপারে ও দৃষ্টিভঙ্গির তারতম্য রয়েছে সেটা বিতর্কের । তবুও আমাদের চেতন অবচেতনে আমরা সক্ষম হয়ে উঠি ব্যাপকতার নির্ধারণ কেমন হতে পারে । আমাদের মধ্যে যদি কেউ প্রশ্ন তোলেন এই সূর্য চন্দ্র পৃথিবী গ্রহ নক্ষত্র মানুষ প্রকৃতি জীবন মৃত্যু শোক দুঃখ স্থিতি বিনাশ - এ সবই তো চিরন্তন , এগুলো তো তেমন বদলায় না । তাহলে এই সব অনুষঙ্গ থেকে সৃষ্ট শিল্প কেন বদল হবে। এর উত্তরে বলা যেতে পারে শিল্প হল সৃষ্টির ভিতরে সৃষ্টি । প্রাকৃতিক ভাবে যা সৃষ্টি হয়ে আছে এই ব্রহ্মাণ্ড বা জীবনের আধার জনিত অন্যান্য সমাবেশ , তা আমরা পরিবর্তন করতে পারি না, তার বিরাটত্বর কাছে মানুষ নগণ্য । কিন্তু মানুষ সেই অসীম সৃষ্টির ভিতরে বসে সসীমের বিস্তার করতে পারে । এটিই হল শিল্প । এই সসীমের মধ্যেই চলে নানান প্রক্রিয়া , খেলা , ডাইমেনশন যা আমাদের সাধ্যে । আমরা খোদার উপর খোদগারি করতে পারি না , কিন্তু নিজের উপর নিজের জানার তরঙ্গে আঘাত হানতে পারি , কৌশল নির্মাণ করতে পারি ।

অগাস্ট কোঁত বলেছেন - নিজেকে উন্নত করতে নিজেকে জানুন । 
স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন - আত্মশক্তিতে বলীয়ান হতে 
জ্যাক লাকা একটা অদ্ভুত কথা বলেছেন - পৃথিবীর সব কিছু ই আয়নার মতো ব্যবহার করে । 
এ সম্পর্কে বিতর্কের মধ্যে না ঢুকে একটা বিষয় ভাবতে পারি যে আমাদের নাগালে সব বস্তু বা প্রাণের সমাহার থেকে আমরা কিছু না কিছু দেখতে পাব যা আমাদের মধ্যে সঞ্চারিত হতে পারে আমাদের স্বরূপ পরিবর্তনে বা সাধনে । অর্থাৎ জ্ঞানের উপাদান আমাদের চারপাশে এবং সামগ্রিকতায় । আমাদের নিজেদের মধ্যেই প্রথিত আছে অনেক কিছু । আমরা তা জানি না , জানার চেষ্টা করি না । তাই নিজের স্বরূপ জানার মধ্যে ই চিন্তার প্রসারণ লুকিয়ে থাকে । তাই মানুষ তার চিন্তা শক্তির জন্য আলাদা অন্যান্য প্রাণী থেকে , বলা হয় শ্রেষ্ঠ । মানুষের বৈশিষ্ট্য তার bi-pedalism . মগজ এবং হৃদয় এ দুটো মানুষের super সম্পদ । একজন কবি তো মগজ ও হৃদয় দিয়েই লেখে , কখনো কখনো অতীন্দ্রিয় কিছু , তাই কবিদের মধ্যে চিন্তার প্রসারণ অত্যন্ত সক্রিয় । বুদ্ধি এবং বোধ না থাকলে কবিতা লেখা যাবে না । 

এখন প্রশ্ন উঠতে পারে চিন্তার বিষয়টি আসছে কেন । মানুষ মাত্রই চিন্তা করে , চিন্তার মধ্যে নুব্জ , তার আশপাশের পরিমণ্ডল নিয়েই তো ব্যস্ত থাকতে হয় যা তাকে চিন্তার মধ্যে নিবিষ্ট করে। নৈমিত্তিক যাপনের জন্য একটা মানুষকে চিন্তা তো করতেই হচ্ছে । তাহলে নতুন করে আবার কী করবে । উত্তরটা হচ্ছে চিন্তার প্রসারণ । গন্ডিবদ্ধ বা গতানুগতিকতার বাইরে expansion করা যা তাকে নিয়ে যাবে অন্য আধারের দিকে , সে আলোকিত হবে to be enlightened. যতটা জানা আছে তার বাইরে গিয়ে আহরণ করা। নিজস্ব কর্মের periphery র বাইরে অথবা নিজস্ব বৃত্তের মধ্যে ই নতুন অভিমুখ তৈরি । বুদ্ধি expand হতে চায় । এমনটা নয় সব মানুষ ই এই কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়বে । কিন্তু কবিদের ক্ষেত্রে এটা জরুরি কারণ কবিরা নতুনের পূজারী , নতুন সৃষ্টির আনন্দে মাতোয়ারা । তাই তাদের ক্ষেত্রে চিন্তার প্রসারণ অত্যন্ত জরুরি । কবিতার উপাদান হল শব্দ । শব্দ তার অন্তর্গত স্থবিরতা ছেড়ে বেরোতে চায় । সেই স্থবিরতা হল জাড্যধর্ম অর্থাৎ নতুন ভাবে নতুন চিন্তনে নতুন রূপে ব্যবহৃত হতে চায় । কিন্তু এই নতুন রূপে ব্যবহারের জন্য চাই শক্তি প্রয়োগ । শক্তি প্রয়োগ muscle power নয় , মেধা শক্তি এবং কাব্য শক্তির দ্বারা শব্দের অবস্থানকে নাড়িয়ে দেওয়া । জ্যাকস দেরিদার deconstruction তত্ত্ব থেকে আমরা অনেক আগেই জেনেছি the relation between text and it's meaning. জেনেছি signifier এবং signified এর মধ্যে সম্পর্কটা endless. তাই শব্দে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে আমরা নতুন দ্যুতি নতুন উপস্থাপন পেয়ে যেতে পারি, অতিক্রম করে যেতে পারি তথাকথিত কাঠামোর বাইরে পরিবর্তন । পরিবর্তন করতেই হবে এমন দিব্যি কেউ দেয়নি , কিন্তু পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী কারণ জ্ঞান থেমে থাকবে না , যুক্তি তার চোখ ঘোরাতে থাকবে । 
,পরিবর্তন যে অবশ্যম্ভাবী তা রবীন্দ্রনাথ টের পেয়েছিলেন । তাই কখনো বলেছেন -
" ওরে নবীন , ওরে আমার কাঁচা 
ওরে সবুজ ,ওরে অবুঝ 
আধমরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা " 
রক্ত আলোর মদে মাতাল ভোরে 
আজকে যে যা বলে বলুক তোরে 
সকল তর্ক হেলায় তুচ্ছ করে 
পুচ্ছটি তোর উচ্চে তুলে নাচা " 

কখনো গেয়েছেন - " আমি চঞ্চল হে , আমি সুদূরের পিয়াসি , দিন চলে যায় , আমি আনমনে তারি আশা চেয়ে থাকি বাতায়নে - " 
স্পষ্ট করে বলার অবকাশ রাখে না কবিও হাত বাড়িয়ে ছিলেন । কী সেই সুদূরের পিপাসা 

এই প্রসঙ্গে অবশ্যই চলে আসবে জিরো বাউন্ডারি কনসেপ্টের বিষয়টি যা বলেছে এই পৃথিবীতে কোথাও কোনো বাউন্ডারি নেই নিজস্ব বা ব্যক্তি ইউনিটের বাইরে । আগে ছিল বাউন্ডারি ভাঙার কথা , এখন তা হয়ে উঠল বাউন্ডারিহীনতা । আরো স্পষ্ট করে আরো জোর দিয়ে মানুষের প্রয়াসকে কুর্নিশ জানিয়ে পৃথিবীকে এক করে দিতে ভালোবাসা যুক্ত এক বিশ্ব-গ্রাম , Global Village