Wednesday, September 2, 2020

কবিতা করিডোর , আগস্ট সংখ্যা সংখ্যা , 2020

  কবিতা করিডোর  , আগস্ট সংখ্যা সংখ্যা , 2020

প্রচ্ছদ -কৌশিক বিশ্বাস

সম্পাদক -শুভঙ্কর পাল 

সহ-সম্পাদক সব্যসাচী ঘোষ 

বাংলাদেশ বিভাগের সম্পাদক -ফারহানা রহমান  

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সম্পাদক -রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ 


জেলা ভিত্তিক শূন্য দশক এবং শূন্য পরবর্তী দর্শক নিয়ে কাজ করার একটা ইচ্ছে সব সময় ছিল |এই সংখ্যায় আলিপুর কোচবিহার জেলা নিয়ে কাজ করা হলো |অনেকেই লেখা পাঠিয়েছ কিন্তু অনেকের লেখা বারবার চেয়েও পাওয়া যায়নি |আলিপুর থেকে সুব্রত সাহা  ,শৌভিক বণিক ও অম্বরিশ ঘোষ লেখা পেতে খুবই সাহায্য করেছে |কোচবিহার থেকে নীলাদ্রি দেব ও ব্রহ্মজিৎ সরকার যথেষ্ট সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে |কিছু অপূর্ণতা হয়তো থেকেই গেল |তবে একটা চেষ্টা হিসেবে দেখলে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ |প্রসঙ্গত উল্লেখ্য |
ধন্যবাদান্তে -শুভঙ্কর পাল 
সম্পাদক- কবিতা করিডর 


 ঘরে বাইরে




সোমা সাহা পোদ্দারের মুক্ত গদ্য

সোমা সাহা পোদ্দারের জন্ম ৮ই মে ১৯৮৫। শূন্য দশকের শুরুর পর্বে ওর
লেখালেখির শুরু। প্রথম লেখা প্রকাশ পায় "অথবা" পত্রিকায়। তারপর "মোহনা",
"এখন" বাংলা কবিতার কাগজ সহ দুদশক ধরে প্রচুর কাগজে লেখালেখি প্রকাশিত।
মূলত কবি। পাশাপাশি মুক্ত গদ্য লেখেন। আবৃত্তি করতে ভীষণ ভালোবাসেন।
বারবিশার মেয়ে বিবাহসূত্রে প্রবাসী। একমাত্র কাব্যগ্রন্থ  "চলো সিগন্যাল
পেরোই" ২০১১ কলকাতা বইমেলায় এখন বাংলা কবিতার কাগজ প্রকাশনী থেকে
প্রকাশিত।
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..

বইয়ে দাও ধারা
সোমা সাহা পোদ্দার


কবিতার কি কোন দিক বা কোণ হয় ? কবির যেমন দশক ভাগ করা হয়ে থাকে - নব্বই
দশক ,শূন্য দশক,শুন্য পরবর্তী। সময়ের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি স্থানিক দিক ও
কোণ দর্শনেও ঋতুর রূপ পরিবর্তিত হয়। প্রবাহমান লেখা পাঠশালা থেকে উপরের
স্তর বিন্যাসেও ভিন্ন ভাবনায় দরজা খুলতে থাকে। চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে আলোর
বিন্দু থেকে কবিতার ঘ্রাণ। ভাংচুর করে তোলে দিন রাত। নিষেধাজ্ঞা কেমন
স্পষ্ট ভেসে আসে। অস্বস্তি হয় বেপরোয়া চলন খুলে গুছিয়ে অন্তরালে হাঁটতে
থাকা। দক্ষিণী ছাঁদে দিনের শুরুয়াত। মাঝে মাঝে দিক নির্ণয়ে টেনে নেয়
গভীরে । বদল হতে থাকে পরিভাষা। ইতিহাসের চোখে খুঁজি সাহিত্যে নিবিড়তা।
কোথাও দর্শনের দৃষ্টিতে যৌক্তিকতা প্রাধান্য পায় কখনোবা বাংলার চেনা সুর
আরোও আবেগী করে তোলে। কোনো নির্দিষ্টতা মাপা নেই পালা বদলের। ফ্রেমবন্দী
হতে থাকে সময় চিহ্ন।

আমরা এগোতে থাকি এক দশক থেকে আরেক দশকের দিকে। আপাতদৃষ্টিতে শূন্য দশক ও
তার পরবর্তী দশকের মাঝে একে অপরের পাশাপাশি হেঁটে যাওয়ার ব্যবধান দ্রুত
সরে আসে। পৃথিবীর অগ্রগতিতে ক্লাইমেটের পরিবর্তনের ধারায় মেলে ভালো না
থাকার ইঙ্গিত। বিশ্বজুড়ে নেমে আসা সংকটে বাস্তবাহিত হচ্ছে পারিপার্শ্বিক
অবস্থা। ভারী হয়ে আসে হাত, আলগা চলন, ফাঁকা ফুটপাত, শূন্য চোখ, ভেঙ্গে
চুরে যাওয়া সময়, বন্ধ শ্বাস, বেড়ে চলা দূরত্বেও আঙ্গুলে পিয়ানোর গতিবেগ।
জমে যাওয়া কলম ফিরে পায় ভাষা।

বিশ্ব ভাবনাও আজ প্রবাহমান ধারায় বইছে।যা সমান ভাবে সাহিত্যেও প্রতিফলিত।
সাবেকি মাধ্যম ছেড়ে বহু পত্র পত্রিকা নতুন ধারায় নতুন স্রোতে
আন্তর্জালমুখি হয়ে উঠছে সময়ের দাবী রেখেই। আমরা যারা প্রবাসী বাঙলার
বাইরে কিংবা দেশের তবু উপস্থিতির ওপারে থেকেও হাতের নাগালে ,- বিভিন্ন
আন্তর্জাল পত্রিকায় কবিদের লেখালেখি। নানান দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সাহিত্যে
আড্ডা ও অনুভব। আমরা  দিন দিন অভ্যস্ত হয়ে উঠছি। পছন্দের বইও সহজলভ্য
অনলাইনের মাধ্যমে। তবে এই সুযোগ আগে থাকলেও বর্তমানে বহুগুণ বেড়েছে।
শূন্য দশকের পরের দশক ও প্রায় শেষের দিকে । নানা ধারায় নিজেদের উপস্থাপিত
করছি। পর্দার আড়ালে ক্ষতচিহ্ন রেখে এই সময়ে যা প্রাপ্তি বা গ্রন্থিত তা
পরবর্তী দশক পেরিয়েও বয়ে যাক। তবে বাঁক বদলের স্বাভাবিকতার তলদেশে থাকবে
নিবিড় সম্পর্ক।
 …………………………………………………………………………………….

 


ঘরে বাইরে
...................
লতিকা পন্ডিত (দেবনাথ) বিবাহসূত্রে এখন জলপাইগুড়িবাসী। শিক্ষকতা করেন। জন্মঃ ২১.১০.১৯৮১।
...............................

প্রয়োজন
লতিকা পন্ডিত (দেবনাথ)

ভালবাসা কথার অর্থ কি জানিস
               জানিসনাতো, তবে শোন
                                     প্রয়োজন

কিরে অবাক হচ্ছিস?

কেউ একটা লাল গোলাপ নিয়ে এসে বললো
                   আমি তোমাকে বড্ড ভালবাসি
আবার যদি বলে, তোমাকে আমার খুব প্রয়োজন
এটাইতো আসলে সত্যি...

আমারও তোমাকে খুব প্রয়োজন
বলতে পারিস মা ও সন্তানের ভালবাসা...
                              এখানেও প্রয়োজন

প্রকৃতির নিয়মে সাড়া দিয়ে
সন্তানকে পৃথিবীতে নিয়ে আসা
নিজের অবর্তমানে একটা অবয়ব
                              রেখে যাওয়া
মায়ার বাঁধনটাকে আরেকটু মজবুত করা
স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে আরোও
                 বেশী প্রয়োজন

তুমি অর্থ উপার্জন করবে
আমি ঘরকন্নার কাজ করব
দ'জনকেই দুজনার বড্ড প্রয়োজন

সত্যিটা বলতে এত কষ্ট কেন?
এখানে সবটাই প্রয়োজন

পরিপুরক হয়ে বাঁচি এসো
বলি, তোমাকে আমার
           বড্ড প্রয়োজন...


ঘরে বাইরে

 ঘরে বাইরে 



ছায়াপথ
মোনালিসা রেহমান 


মনখারাপের একধাপ অশ্রু থেকে 
চান্দ্রমাসের নিখুঁত আয়োজনও বৃথা হয়।

ক্লান্ত দিনের ধূসর পৃথিবী 
আগে পিছে নিরাকার পল্লবিত 
জন্মান্তরের হিসেব কষতে থাকে,
এক ম্লান ছায়াসরণীর মতো
দীর্ঘসুত্রিতা...

জলের আয়নায় লেগে থাকে
সেই কাঁপা কাঁপা ভোর।


 কবি মোনালিসা রেহমান প্রায় দু'দশক ধরে কবিতা লিখছেন।কবির জন্ম আলিপুরদুয়ারে।এখানেই বেড়ে ওঠা,পড়াশুনো। অনেক পত্র পত্রিকায় কবি লিখেছেন, তার কবিতার ভাষা অত্যন্ত প্রাঞ্জল হলেও কবিতার বিষয়ভাবনা অতীব গভীর, ও ব্যঞ্জনাপ্রধান।এখনও পর্যন্ত তার বেশ কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে ।" মোম জ্বালতে জ্বালতে","মেঘেরা হাওয়ার ফানুস","চৌকাঠ ডিঙিয়ে দশবার ভাবতে নেই"," মৃত্যুর মাঝে ফাঁক নেই " প্রত্যেকটা কাব্যগ্রন্থ স্বকীয়তার দাবি  রাখে।বাংলাদেশ থেকে যৌথভাবে  প্রকাশিত হয়েছে "তার ভালোবাসার সাতকাহন "।
পেশায় শিক্ষিকা এই কবি চাকুরিসূত্রে ফরাক্কায় থাকেন।অচেনা অক্ষর নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেন।

আলিপুরদুয়ার জেলা শূন্য পরবর্তী দশক

 আলিপুরদুয়ার জেলা শূন্য  পরবর্তী দশক  

শান্তা ভৌমিকের জন্ম আলিপুরদুয়ার শহরেই ।স্কুল , কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় এই উত্তরবঙ্গে ; বর্তমানে আলিপুরদুযারের বাসিন্দা । স্কুল জীবন থেকেই কবিতা লেখার সূত্রপাত শুধুমাত্র নিজের ভালোবাসা লেখা বলেই । প্রথম লেখা বের হয় 'উনিশ কুড়ি ' ম্যাগাজিনে ।তারপরে অনেকটা বিরতি , পড়াশোনা শেষ হবার পরে আবারো পথ চলা শুরু কবিতাকে সঙ্গী করে ...অন্য নিষাদ , উত্তরের কবিমন , অপরাজিত এবং উত্তরবঙ্গ সংবাদের পাতায় কবিতা প্রকাশিত হয়েছে

মেয়েদের নিয়ে এবং সমাজের কিছু বদ্ধ মানসিকতার বিরুদ্ধে মানুষের সূক্ষ্ম অনুভূতি গুলো নিয়ে লিখতে আগ্রহী।



আলাদা পৃথিবী


শান্তা ভৌমিক 



ঘুম থেকে উঠে রোজ জানালা খোলার মধ্যে ভালোলাগা তৈরি হয়েছে ;


বাইরের  পৃথিবীর ধ্বংস কাহিনীর সাথে আমার পৃথিবী কথা বলে ...


মাঝে মাঝে মনে হয় আকাশের আলাদা কোনো রং নেই;


বৃষ্টির আগে যেমন সব কিছু গুলিয়ে যায় ,


দেহাবশেষের মধ্যেও তো অভিমানের রঙ নিশ্চিত ভাবে খুঁজে পাওয়া যায় ।


কতোগুলো অনুভূতি শুধুমাত্র সময় হলেই আসে ...


দিনের শেষে আমাকে আলসেমি গ্রাস করলে মনে হয় সব স্বাভাবিক ;


হারিয়ে যাওয়া ; অচেনা হয়ে থাকা ।


ভালোবাসা লাস্য সমেত মিশে গেছে শঙ্খচিলের আস্তানায় ...


জন্ম ও জন্মস্থান : ১১ মার্চ, ১৯৯১। কোচবিহার 

আত্মপ্রকাশ : প্রথম প্রকাশিত কবিতা 'সুখের সন্ধানে'। মোহনা, ২০০৮

আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার, রায়ডাক ও সংকোশ, পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম লাগোয়া ন্যাশনাল হাইওয়ের পাশেই  বাস ও বাড়-বাড়ন্ত। পালের ভেড়া নই তাই তথাকথিত অসামাজিক, একঘরে একলাটি..


দে ব জি ৎ

কোয়ারেন্টিন


যাদের এখন অনেক রাতের বাহানা তাদের মুছন্ত স্মৃতিগুলো ইচ্ছামৃত্যুর অপেক্ষায়।
আমরা বাঁচাতে পারছি না যেমন পারিনি মাইকেল জ্যাকসন কিম্বা রাজপুত সুশান্ত।

তখন পুকুরভরা মাছ, জ্যোৎস্নাঝরা রাত।
গিটারে ঢেউ বাজালে তোমার সমুদ্র পেতো।
রাতগুলি সার্থক ছোটগল্পের উপসংহার।

'অনেক রাত।                                         ঘুমোবো।'

তোমার ভূমিকা লিখে চলে যাওয়া রাতের পূর্ণতা দিচ্ছি।
পরিচিত মেয়েটির লকডাউনে আটক বিবাহবাসরের স্বপ্ন ডানা পাচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপে।
প্রেমে বিজি বন্ধুর ফোনে আমি থার্ডপার্সন।
এক ভদ্র মাতালের স্টেপ জানান দিচ্ছে কিভাবে মিলিয়ে যায় কিছু কিছু ইয়ে।

জানা ছিলো না বাহানার অন্য নাম অজুহাত, ঘুমের অন্য নাম অনিচ্ছা..

কবি পরিচিতি :--

সন্জু কুজুর , পিতা - শ্রী ঁজোয়াকিম কুজুর , মাতা- শ্রীমতি বেলশ্রী কুজুর l গ্রাম - ছোট পুখুরিয়া , পোষ্ট - তালেশ্বরগুড়ি , থানা - শামুকতলা , জেলা - আলিপুরদুয়ার l স্কুল জীবন থেকেই লেখালেখির শুরু l 'মেগাছ ' কবিতা দিয়ে প্রথম আত্মপ্রকাশ ২০০৭ সালে "অথবা" ( বাংলা ) পত্রিকায় l সেই থেকেই বিভিন্ন বাংলা এবং সাদরি পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি চলছে l সম্পাদিত পত্রিকা "মাঠের কাগজ" ( ২০০৭ )



অক্সিজেন ও রক্ত 
            - সঞ্জু কুজুর 
১.       
প্রথম প্রথম অনুভূতিটা কাঁচা ছিল  
তাঁর জলরঙের মৎস্য চোখ ভেসে উঠতো 
আর কেঁপে উঠতো আমাদের শহর  
          
তিস্তার অন্ধকামাখা জলছবিতে আশার জ্বলে ওঠে 
আড়াল-আবডালে বেজে ওঠে পাখির গান 
এই তো সেদিন হঠাৎ তুই থেকে তুমি হলে 
                                    পরে শেষে হলে জান । 

২.       
চেনা আশৈশব জুড়ানো খোলামেলা পৃথিবীটা আর থাকে না 
চলাফেরার পরিধিও ধীরে ধীরে 
            নির্দিষ্ট ও বৃত্তায়িত হয়ে আসে  

তোর উপস্থিতিকে অক্সিজেন মনে হয়  
তোর কথারা দিনে দিনে ক্রমশঃ ধমনীর রক্ত হয়ে ওঠে 
আজ বালিয়ারিতে কান পাতি আর শুনি তোর নূপুরের  আওয়াজ ।


পরিচিতি : খুরশিদ আলম এর জন্ম ১৮-ই ফেব্রুয়ারি ১৯৯২, আলিপুরদুয়ার জেলার দক্ষিণ পারোকাটা গ্রাম। পিতা বুলবুল ইসলাম এবং  মা জামিলা বিবি। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতক পরবর্তীতে কানপুর বিশ্ববিদ্যালয় (উত্তর প্রদেশ )থেকে  স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লিখে যাচ্ছেন। প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ"তোমার শরীর ছুঁয়ে "



কলঙ্ক 
        খুরশিদ আলম 

যাবতীয় কলঙ্ক নিয়ে ডুবে যেতে চাই 

বিষাদ ছুঁড়ে যেভাবে ছুটে আসে হরিণ

সেখানে নির্বাসন বলে কোনো কিছু থাকে না

যাকে তুমি আকাঙ্খা বলে ভাবো সে আসলে মায়া অথবা মোহ 

আগুনে পোড়ার ঠিক আগে 

অন্তত একবার তোমাকে ছুঁতে চাই


উপশম
শুভদীপ ঘোষ


সান্স ক্রিমের বিজ্ঞাপন থেকে মুখ ঘুরিয়ে দেখি
               দীর্ঘ ছায়ার ভিতর ক্লান্তি জমে আছে

 জীবনের গভীরে ভালোবেসে নিয়েছি
                        ম্যাজিসিয়ানের টুপি 
 
হাতের দাগ মুছে  যায় নরম তোয়ালায় 

প্রেক্ষাগৃহের অন্ধকারে
      জোনাকি ক্ষেতের ঘুম নিয়ে আসে ফ্যান্টাসি

গ্রিভেন্স বাক্সে ফেলে এসেছি 
                    চিরকুটে লেখা কবিতা




শুভদীপ ঘোষ
আলিপুরদুয়ার জেলার ছোট্ট চাবাগান ঘেরা জনপদ জটেশ্বরে বেড়ে ওঠা ও স্কুল জীবন।
পরবর্তীতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে।
২০১৯ ও ২০২০ তে দু'টো কাব্যগ্রন্থ বের হয় যথাক্রমে *ধ্বংস চুমু আঁক*  ও *প্রেমিকজন্ম ও হাঁসুয়া চাঁদ*
২০১৪ সালে *মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা* থেকে লেখার আত্মপ্রকাশ ঘটে।


জন্ম ১৯৯১ সালে, উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার শহরে। পড়াশোনার জন্য কলকাতায় আসা। ২০১১ সালে কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্র থাকার সময় ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রথম কবিতা প্রকাশ। বাংলা কবিতা নিয়ে গবেষণা করেছেন। পেয়েছেন বর্ণালী স্মৃতি পুরস্কার, উড়ালপুল পুরস্কার, সৌমেন বসু পুরস্কার এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর স্মৃতি পুরস্কার।  চারটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে— ‘সবুজ পাতার মেঘ’(২০১০), ‘দিনান্তের ভাষা’(২০১৫), খামখেয়ালি পাশবালিশ (২০১৮) স্নিজার সঙ্গে জোড়াসাঁকোয় (২০২০)। পেয়েছেন সাহিত্য আকাদেমির ট্রাভেল গ্র্যান্ট।



মিথ
অরুণাভ রাহারায়

ঠিকমতো আঘাত পেলে দূরে সরে যাব।
দাঁড়িয়ে হেলান দেব আকাশের গায়ে

এতটা নীরব তুমি? এতটা গভীর...
সামান্য জল হয়ে নীচে পড়ে আছো।
এই জল আজ
জলঙ্গী নদীতে নেমে কুড়িয়ে নিলাম।

আকাশে দাঁড়িয়ে আমি তোমাকে বোঝাবো--
তুমি জল!

বাঁকানো কাকের মতো মাটির কলসিতে
একটা একটা করে নুড়ি ফেলে দিয়ে
তোমাকে ওপরে তুলে আনবো একদিন।

তুমি জল...



পরিচিতি:

কাব্য: ‘মদীয় ফ্যান্টাসি’ (সৃষ্টিসুখ, কলিকাতা), ‘ব্লিডিং বরষে হৃদি’ (প্রকাশিতব্য, শাঙ্খিক, কোচবিহার)

সম্পাদক: ইবলিশ

 

যোগাযোগ:

গ্রাম: দেওগাঁও। পোদেওগাঁও। থানা: ফালাকাটা।

জেলা: আলিপুরদুয়ার। পিন: ৭৩৫২১৩। মো৭৬৯৯২২০৯৫৪।

ই-মেলrahebulrahe@gmail.com

 


রাহেবুল এর কবিতা

 

তাড়ুয়া           

 

সাদা রুমালের স্যাঁতস্যাঁত ভেজা, গলানো নাকের কথা মনে করায়।

উঁকিটুকু কেটেছেটে উসপার। রুমালের মুখে চিকচিক সুরম্য গৃহস্থালি

 

বেখবর এক বাউদিয়া আর তার অগোছালো পাড়বাঁধ ... 

 

তখন পাওয়া যায়না রেলেকাটা মুণ্ডু।

তারপর সমঝোতা এল, পাকাচুলের সূর্যাস্ত নাগাদ

জরুরি মনে করে শেখা সঙ্গে সিঁদুরে আহ্লাদ, পারাপারের ব্রিজ-কোর্স

 

 কুংয়ের ফুঃ তে পা হড়কাই মুঁই। সাধ্বী হয় সই।

 

ধানের শিষ, তার ওপর বসা সুঠাম শিশির। কেমন যেন সার্ধনারীশ্বর জল্পনা করি।

তাতে দু-বিন্দু গরম হাওয়ার ধারণ, ঠেলে বেরিয়ে আসে, টিপটিপ নিচু।

গায় তার তোমার গতরের গন্ধ।

 

সবে বিস্মরণ; ঘাম-ভেজা চুড়িদার ঢলে কাকতাড়ুয়ার গায়ে

 

[রচনাকাল: ০৬.১০.২০১৭]



উচ্চারণ কর
তাপস দাস



তোমার ঠোঁট থেকে আমার জীবন পড়ে নষ্ট হয়ে যায়
যেন সে ব্যকরণহীন
ফ্যাকাসে,  অথবা
কয়েদখানার সুখ থেকে বিতাড়িত হয়ে
একা একা ঘুরে বেড়ায়!
প্লিজ,  আরো একবার আমাকে উচ্চারণ কর
শরীরে আরো খানিকক্ষণ জ্বলে থাকুক
পূণ্যফলের চিতা...

.........
আমি

১.
আমি খুব গরীর। একেবারে স্যাতসাতে গরীর।
শরীরের ওপর একপ্রকার ছত্রাক জন্মে যাচ্ছে, একপ্রকার
মাছির সাথে বন্ধুত্ব হচ্ছে, ছত্রাকের পুরো শরীরই ফুলের
মতো,  সবাই দেখতে আসছে,  মাছিদের অনেক চোখ,
মাছিদের চোখ দিয়ে তাদের দেখছি। স্বপ্ন দেখা মানুষের
চোখে সমুদ্র আর পাহাড়ের হাসি...

২.
বাবার বয়সি গাছেদের  সাথে গল্প করি। বাবার বয়সি
ছায়ায় বসে কবিতা লিখি। গাছ আমাকে ঘর বানিয়ে দেয়।
অক্ষরের ঘরে বসে ছেঁড়া মানচিত্র জোড়া দিই। কোন যুদ্ধ
নেই কোথাও, কোথাও নেই বারুদ শিল্পীর সংবিধান...

৩.
তল কোথায়, কোথাও তল নেই। বোতল আছে
স্তন পানের বোতলে মা লিখে দিই আঙুল দিয়ে, পাঁচটা
আংগুল দিয়ে পাঁচ প্রকার মা লিখতে পারি আমি।
পাঁচবার নামাজ পড়ার মতো পূণ্যলাভ হয়।
..................................................................
প্রথম দশকের শুরুতেই তাপস দাসের লেখালেখি। জন্ম তারিখ- ১৫/০১/১৯৯০, থাকেন তপসীখাতা বসটারী, আলিপুরদুয়ারে।
কাব্যগ্রন্থ- ঈশ্বর পেয়েছি এক বুক, ভাতের কস্টিউম, মৃত্যুতে ছায়া থাকবে না।
সম্পাদনা করেন "চা পাতা" ওয়েব সাপ্তাহিক। ঘুরে বেড়ানো, গান শোনার পাশাপাশি কবিতা চর্চায় মগ্ন।


দীপান্বিতা রায় সরকার, জন্মদিন- ৫.১.৮৩, থাকেন আলিপুরদুয়ারে। শিক্ষকতার সাথে যুক্ত।
কাব্যগ্রন্থ- গান হবে তোর নৈঃশব্দ্য, যারা যাপনে নেই।
ভালোলাগা - লেখালেখি, গান শোনা, রান্না করতে।
........................................................



প্রিয়তা
দীপান্বিতা রায় সরকার

আমি আমার প্রিয় ফুলগুলো দিব তাকেই,
জানি প্রিয়তা মানে সুগন্ধি বিশ্বাস।
ঢালু পথে ফিরে এলে ,যারা বুকে দরবেশ রাখে,
যারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায় খেয়ালী  আবেগ।
নতজানু প্রেমে হয় না তো সম্মত,
প্রিয় ফুল শুধু তাকে দিব।

দ্বিধাহীন ভাবে মেলে দিবো রাত,
ভরে দেবো তার শূন্য আখর  গোপনে।
স্বঘোষিত কোন পাশার যূপকাঠে,
পণহীন সমর্পণের রেখে যাব হৃদয়।

এই সুর গুলো শুধু তাকেই দিব,
যে আমায় দিয়ে যাবে গান, আগামীর সম্বল
নিষিক্ত  চুম্বনে রেখে যাবে গৈরিক জয়
বলে যাবে প্রিয়তা মানে সুগন্ধি বিশ্বাস।



অভিষেক মল্লিক 
জন্ম ডুয়ার্সের মধ্যমনি শহর অলিপুরদুয়ারে। ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনার পর বর্তমানে ভূমি এবং ভূমি সংস্কার বিভাগে কর্মরত। মূলত কবিতা আর গল্পের সুবর্ণরেখা ধরেই অগ্রসর হচ্ছে জীবনের সন্তোষপূর্ণ মুহূর্ত। কাগজে ও পত্রিকায় সৃস্টি প্রকাশের অবকাশ হয়েছে বেশ কয়েক বার। অক্ষরশিল্প ছাড়া, সময় কাটাতে ভালোবাসেন বাংলা সিনেমা, গান আর বইয়ের হাত ধরে।



দস্তর

ওদের শরীরের দরজাগুলো, 
খুল জা সিম সিমের মতোই অবিকারী।
চাইলেও মানুষ বদলে দিতে পারছে না,
কোটি বছর পুরোনো রীতির শারীরিক ধাত।
দায়গ্রস্থতা ঠিক দাড় করিয়ে দিচ্ছে দ্বারদেশে।
পছন্দের মুদ্রায় বদলে যাচ্ছে মুদ্রার উমান।
অলিন্দে রাখা মুখগুলোতে,
উল্টে দেওয়া হচ্ছে দামী লিকারের মুখ।
ছয়ে নয়ে গোজামিল দিয়ে মিলিয়ে দিচ্ছে সব।
তবু ,চারটে দেওয়াল আর ছাদ মিলেও,
একটা ঘর হচ্ছে না কিছুতেই।
দরজায় কে যেন কড়া নাড়ছে আবার,
কে? কে ডাকছে?
কে আবার, কোনো মানুষই হবে।

তোমার জন্য এক ফালি রোদ

কৃষ্ণ দাস 



(১)
নিজের সাথে মস্করা করে
নিজের থেকে বেড়িয়ে পড়ি রোজ।
আমি তোমার মত হই।
তোমার সুরে সুর মেলাই।

আমার দুহাতে স্পর্ধা ভরে তুমি পালিয়ে যাও দূরে।
আমি শান্ত হয়ে শিবের মত,শবাসনে শায়িত হই।
আমার সমস্ত জুড়ে তোমার তান্ডব নিনাদ!
আমার আকাশ জুড়ে রক্ত শ্রাবন।
আমার মেদিনী ভরে ওঠে তোমার স্বেচ্ছাচারে..

(২)তুমি করুণ সুরে ডেকে ওঠো,
বারংবার ডাক দিয়ে বলো.....

আমারে সংবরণ করো,আমারে প্রেয়সী করো।
তুমি জানো না,দারুণ স্বেচ্ছাচারী নারী আমি....
তিলাগ্র প্রেম পেলে,আজীবন দাসত্বে রাজী!!

আমি তৃতীয় নেত্র খুলি...
ধ্বংসের নয়।নতুন সৃষ্টির!!
নব কুসুমের গুচ্ছ ভেঙ্গে,সাজিয়ে তুলি তোমার করবী।
তুমি তখন বৃষ্টি স্নাতা হয়ে এক ফালি রোদ্দুর!.....

কৃষ্ণ দাস, জন্ম ১৯৯৪।  ইংরেজিতে স্নাতক। বি.এড প্রশিক্ষনরত। লেখালেখি স্কুলজীবন থেকে। 'আকর' সাহিত্য পত্রিকার কার্যকরী সম্পাদক। আপাতত ইচ্ছে সুপাঠক হয়ে ওঠা।

 জন্ম আলিপুরদুয়ার জংশন , ভালোবাসি গাছ , নদী ,পাহাড় । কবিতার মতো কিছু লেখালিখির চেষ্টা করছি আড়াই তিন বছর থেকে।



স্বপ্ন, দুঃস্বপ্ন
অনিরুদ্ধ দেব

বৃষ্টি নামলেই মৃত নাবিকের বুকের ভেতর থেকে ভেসে আসে ভাঙা মাস্তুলের গান

করিডোরে মেঘের আনা আর তুমি পালক হয়ে ভেসে যাচ্ছ মায়া নগরীর দিকে

রমণীর নাভিদেশে সভ্যতার খিদে

অলংকার এঁটে বসে আছে কাঠের বেড়াল।


সেতু -১

-অভিষেক সাহা

 


বৃষ্টি ভেজা দিনে পাশে ছিলেম বলে

তোমাতে চুমু না খেয়েই উড়ে গেল পাখি

ফোন আসছে নাফোন যাচ্ছে না

ক্ষুৎপিপাসা নেই বিকেলবেলার

একটু বাদে মুখ ঘুরে শুয়ে থাকবে

নাভির নিচের ট্যাটু

 

শুষ্ক বাতাসএত স্নেহ !

সুজ্জাস্ত  তোমার ভেতর

অবিশ্রান্ত হুড়োহুড়িতে

চুল খুলে দিল শালবন

জল থেকে উঠে আসা স্মিতি

জমজ লালরং আর

সাদা দেয়ালে নাকমতি আগুন

 

বিশ্বব্রহ্মাণ্ড+

সরলতার  ব্ল্যাকহোল

তাঁর ভেতরেও অভিসন থাকতে পারে

সেই সন্ধ্যাকাটাকুটি খেলা

চারটি পা

একটি চলচ্চিত্র

কালকের আফিস

যোগবিয়োগের শক্তিক্ষেত্র

দু-দুবার দশের ঘাড়ে এগার

এক-পা দু-পা করে পিছপা হচ্ছে আয়ু

ফ্ল্যাশলাইটের মত নামছে

 


শুভময় দত্ত।জন্ম 31 মার্চ 1994।আলিপুরদুয়ার।ইতিহাসে সাম্মানিকসহ স্নাতক।স্নাতকোত্তরে  অর্থনৈতিক ভারতের ইতিহাস নিয়ে বিশেষ পড়াশুনো।  অনুসন্ধিত্সু গবেষক,প্রাবন্ধিক, কবি,সংবাদপত্রের বিভাগীয় লেখক ও সামাজিক সংগঠক।বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় বহু গবেষণাধর্মী লেখা প্রকাশ হয়েছে।প্রথম বই রবীন্দ্রনাথ:সৃজনের বহুবর্ণ।


অপেক্ষা     

                         অপেক্ষা আর অপেক্ষায় থাকবে না
দূরের বন্ধু কবে কি আশ্বাস দিয়েছিল ঘোরতর স্বপ্নের মাঝে-
অনির্দিষ্ট স্মৃতির মোরাম বিছানো পথে এখনো কি তুমি অন্যের হাত ধরে ,চোখ রেখে হাটো-
হারিয়ে যাও কৃষ্ণচূড়ায়।

ভোরের স্বপ্নে কালঘাম মুছে নিতে পারিনা তখন বড়ো নিষ্ঠুর মনে হয়।
সাত শতাব্দী পর দেখা হলে হেসে উঠবে,আমি তখন সময় চাইব না মাথা রেখে প্রশান্তি নিতে।
এইজন্মের সহস্র সংলাপ তখনও বুকে বাজবে স্রোতের মতো।                         বেমানান উর্দুর শায়েরিতে ডুবে থাকা বিষাক্ত রাত আমার,আশ্রয়হীন নেশাতুর কবিতারা।
ওপারে ফুলের উপর তোমার ঘুম নীল পদ্মের অঙ্গীকার করবে।
দেখা হলে পরখ করে নেবো তোমায় সেই তুমি আমার আছ নাকি? বিদায়ের 
পালকি এসে বুকে দাঁড়ালে আপসহীন চোখে চেয়ে থাকি।ফুরিয়েছে যা সব................


স্বাতী গুপ্ত জন্ম মালবাজার, প্রকৃতির কোলে শৈশব কৈশোর কেটেছে পিতার কর্মসূত্রে রানিচেড়া চা বাগানে। একটি কুঁড়ি দুটি পাতার কোলে বেড়ে ওঠা। ভূগোল  অনার্স সহ স্নাতক, প্রকৃতির টানে। দীর্ঘ হোস্টেল এর জীবন মানুষ এর ভিতরে প্রবেশ করার আগ্রহ জাগায়। বিবাহ পরবর্তী কালে কালচিনি আটিয়াবাড়ি চা বাগান । দীর্ঘ দশ বছরের শিক্ষকতা আর এর পর স্বাস্থ্য বিভাগে চাকুরি ।
প্রথম কাব্যগ্রন্থ  "চৌকাঠে পা" প্রকাশিত 2017 সালে। সবুজ প্রকৃতির নির্জনতা জীবনের অনুভূতির শব্দ মালা কবিতা লেখার প্রেরণা।







Tuesday, September 1, 2020

আলিপুরদুয়ার জেলার শূন্য দশক

 আলিপুরদুয়ার জেলার শূন্য দশক 


সঞ্জীব সাহা, শুন্যতার মাঝে শূন্য খোঁজেন। বারবিশা রামপুরের কবি
বর্তমানে থাকেন ফালাকাটায়। শূন্য দশকে লেখালেখি করলেও মাঝে তা থিথিয়ে।
তার লেখা কিছু নাটক মঞ্চস্থের অপেক্ষায়।
.........................................................................................................................................................

সঞ্জীব সাহা
জীবন




জীবন বদলে ক্লাসরুম থেকে অফিস
বইয়েরা ভালোবেসে ফাইল
জিন্স! আপটুডেট ফর্মাল
পকেট মানি হয়ে গেছে স্যালারি
বান্ধবী! রূপান্তরওত ঘরণী!

ক্ষণিক


টুকটুকের হাতলগুলো ফাঁসির দড়ির মতো ঝুলছে
তাতে হাত গলিয়ে পরিচিত ল্যাম্প পোস্ট,
কৃষ্ণচূড়া মোড়, কোলাপসিবল গেট
চাবি হাতে, ঠোঁটমুখ লাল করে মা।
দোতলায় আলতো আদরে রোদ
আবীর রঙা স্বপ্ন বুনছে ওদের গায়
বাকী দশটা ছাপোষা বাঙালীর অমলিন স্বপ্ন!
"আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে"-
অদৃষ্ট,  দুধেও বিষ!


ওয়াহিদার হোসেন এর কবিতা

 


দুঃসাহসিক

 

চুপি চুপি দুঃসাহসিক

 

কোথায় আছঘুমের পাশ থেকে কোথায় উঠে গেছ?

সারা আকাশ যখন ভেসে গেছে চাদের বন্যায়

 

রোজ রোজ বালিকার মতো কোথায় পালাও?

 

বুকে আর মাটির ভেতর কারা লাগিয়ে দিয়েছে জোতস্নার আগুন?

 

 

ভোমরা

 

তুমিও কি আমাকে ভাবো?

 

দুপুরে

 

দুপুরের রোদের ভেতর

হাটাচলার ভেতর?

 

গান কি তোমাকে স্তব্ধ করে দেয়?

 

আর পরাগের সেই সব গোপন

তুমি জানো?

কালো ভোমরার ডানাটি???

 


পাথর প্রেম
অভিজিৎ দাস



বোবা পাথর চুপ করে বসে নেই
ভাবতে শেখায়...
তারা দিনদিন বেশ হচ্ছে বড়
নিজের ইচ্ছেগুড়িতে ভাসছে অনন্তকাল ।

সময়ের তালে তাঁদের বেশি প্রয়োজন
জলের সঙ্গে ছোঁয়াছুয়ি খেলায়,
শ্যাওলা জড়িয়ে এলোকেশী সেজে ওঠে
প্রকৃতির নিটোল আলোকমালার রাম্পে হেঁটে চলে

বুদ্ধিদীপ্তের কথা শুনে হেসে ওঠে
বালুকণার পাশ ঘেষে মুখ লুকোয়,
নির্বাকহীনতার মাঝেও ভাষা বোঝায়...
ভালবাসার সহজপাঠ শেখাতে চায় ।
...............................

অভিজিৎ দাসের জন্ম- ৩০.৬.৭৬, আলিপুরদুয়ার জেলার ভাটিবাড়িতে থাকেন। শিক্ষকতা করেন। কাব্যগ্রন্থ - রূপসী ডুয়ার্স (কাব্য পত্র) ২০০৬, নীরব আঁধার (কাব্য গ্রন্থ ) ২০১০ এ প্রকাশিত। সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক পত্রিকা "দিগ্বাস" সম্পাদনা করছেন দীর্ঘদিন। শূন্য দশকে লেখালেখি শুরু। কবিগুরু স্মারক সম্মান আকাদেমি অফ বেঙ্গলি পোয়েট্রি, কোলকাতা থেকে ২০১১, ২০১৬ তে কবিথান উৎসব সম্মান পেয়েছেন।


আলিপুরদুয়ার জেলার বারবিশার কবি রামকৃষ্ণ পালের জন্ম ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭৬,
সম্পাদনা- মোহনা ১৯৯৮ সাল থেকে, লেখার শুরুয়াদ শূন্য দশকের শুরুতেই।
পাশাপাশি কবির নেশা বলতে পাহাড়, সাগর কবির পছন্দের জায়গা। বইপড়া,
রবীন্দ্র সঙ্গীতে তাঁর মনে পড়ে থাকে।
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

পরিযায়ী
রামকৃষ্ণ পাল

ঠিকানার সন্ধানে হেঁটে চলছে
পরিযায়ী মন
আসলে কেউ পরিযায়ী নয়
আমাদের আপনজন
ক্ষিদের জ্বালায় কাঁদছে তারা
ডাকছে নাড়ির টান
তবুও তারা হেঁটে চলেছে, ওষ্ঠাগত প্রাণ
আকাশ বাতাস সাক্ষী আছে
ওরা সকলেই ভারতবাসী
দারিদ্র কেড়ে নিয়েছে ওদের মুখের হাসি
কাজের সন্ধানে দিয়েছিল পারি
সাত সমুদ্র পার
অধরা স্বপ্ন বুকে বেঁধে
ফিরছে বাড়ি যে যার...





মনের বনে চলেছি ভ্রমণে
.....................................



বাঘ সুমারি ও খাপাঙ্গি ঝোরার দিনগুলি
অভিজিৎ চক্রবর্তী

কয়েক বছর আগের কথা। বন্ধু রঞ্জন বলেছিল টাইগার সেন্সাসে যাবি? এন জি ও থেকে প্রতিনিধি নেবে, আমি এক কথায় রাজি হয়ে গেলাম। রোমাঞ্চকর এই সুযোগ হাতছাড়া করা একেবারে উচিত হবে না। তাছাড়া জঙ্গল  আমার খুব প্রিয়। সেখানে বন্য পরিবেশে এক সপ্তাহ কাটাবো ভাবতেই সারা শরীরে শিহরণ বয়ে গেল। নির্দিষ্ট দিনে আমরা সবাই গন্তব্যে রওনা হলাম। সবুজের বুক চিরে কালো রাস্তাটায় এগিয়ে চলেছে আমাদের গাড়ি। ক্রমশ ঘন হচ্ছে ঝিল্লির কলতান। একে একে কয়েকটি ছোট্ট জনপদ পেড়িয়ে রাজাভাতখাওয়া। আমরা যেহেতু বন দফতরের সাথে যৌথ উদ্যোগে কাজ করছি তাই একটি বিশেষ অনুমতিপত্র দেখিয়ে প্রবেশ করলাম বক্সা বাঘবনে। বক্সা মোড় থেকে বক্সা হয়ে সানতালাবাড়ি রেন্জ। সেখানে গিয়ে দেখি আমার জন্য যে দল নির্দিষ্ট ছিল, দেরী হওয়ায় একটু আগেই  তারা চলে গেছে। খুব খারাপ লাগেছিল। তবে কি আমার আর যাওয়া হবেনা? অফিসে কথা বলে জানা গেল খুব তাড়াতাড়ি জয়ন্তী গেলে হয়তো কোন দল পাওয়া যেতে পারে।

ফরেস্ট অফিসের একটা গাড়ি রাজাভাতখাওয়া যাবে। তাতে করে বক্সা মোড়ে নেমে ভারি ব্যাগ নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বালা পেড়িয়ে জয়ন্তীর পথে। পথে হাতি। একটুখানি দাঁড়িয়ে আবার চলা। অবশেষে একটি দল পাওয়া গেল, খাবার সময় নেই এক্ষুনি রওনা হতে হবে। তাতেই রাজি হলাম। যদিও সকাল থেকে খাওয়া হয়নি, তবুও এ সুযোগ কিছুতেই হাতছাড়া করা যাবে না।

একটি দলের সাথে বনদপ্তরের গাড়িতে রওনা দিলাম। পুখরির রাস্তা থেকে অনেকটা দূরে, গাড়ি থেকে নেমে মালপত্র সহ সকলে হেঁটে রওনা হলাম। গাড়ি চলে গেল। আর গাড়ির পথ নেই। আমরা আটজন, আর সাথে দুজন বাহক। তাঁবু সহ খাবার জিনিস সকলে ভাগ করে জঙ্গলের পথে হেঁটে চলেছি। প্রায় দু ঘন্টা জঙ্গলের পথে হেঁটে বিভিন্ন ঝোপঝার পেড়িয়ে মানুষের সমাজ থেকে অনেকদূরে নির্দিষ্ট একটি জায়গায় পৌঁছলাম। ছোট্ট পাহাড়ি নদী খাপাঙ্গি পেড়িয়ে পাহাড়ের উঁচু  জায়গায় আমাদের তাবু খাটানো হলো। পাশেই খাপাঙ্গি ছল্ ছল্ সুরে সুরে আমাদের বরণ করে নিয়েছে। সবকিছু রেখে  সবুজ ঘাসে গা এলিয়ে দিয়ে ক্লান্তি ভুলে অপরূপ শোভা দেখছি। সন্ধে হয়ে এলো। আগুন জ্বালানো হয়েছে, যাতে হাতি ক্যাম্পের সামনে না আসে। দুটো দেশি মুরগি ছিলো, তা রাতে রান্না হল। খেয়ে দীর্ঘ ক্লান্তি ভুলে গভীর ঘুমে ঢলে পড়া।                 

পরদিন ভোরে উঠে দুজন ক্যাম্পে রইল রান্না করার জন্য, আমরা ছয় জন বেরোলাম। জঙ্গলে হেঁটে চলেছি, ঘন্টা দুয়েক হাঁটার পর পাউরুটি কলা দিয়ে টিফিন সেরে একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার পথচলা শুরু। এবার একটি ঝোরার নীচে বাঘের পাগমার্ক দেখা গেল। তাড়াতাড়ি ক্যামেরা দিয়ে কয়েকটি ছবি তুলে, ঐ জায়গাটা প্লাস্টার অফ্ প্যারিস দিয়ে গোল করে তার একটি ছাপ নিলাম । দুপুরে ক্যাম্পে ফিরে খাপাঙ্গি নদীতে স্নান সেরে খেয়ে ঘুম। মোবাইলে নেটওয়ার্ক নেই, অন্য কোন মানুষের দেখা মেলে না। সভ্য সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন বহুদূরে কদিন স্বপ্নের মতো কেটে গেল।

একদিন মনোজ আর আমার রান্নার দ্বায়িত্ব ছিল। আমরা খাপাঙ্গিতে স্নান করতে গিয়ে দেখি কত মাছ! সেই তাজা মাছ ধরে রান্না করেছিলাম। আহঃ কি স্বাদ! এখনও মুখে মুখে লেগে আছে। সন্ধ্যায় আগুন জ্বেলে সবাই শরীর গরম রাখার চেষ্টা করছি। একে একে সবাই শুতে গেলেও টিম লিডার টোপ্পোদা আর আমি অনেক রাত অবধি  জেগে গল্প করে কাটিয়ে দিই। রাতে জঙ্গলের শোভা ও রাতচরা পাখিদের গান বড়ো মোহময়। পরদিন ভোরে আবার পথচলা শুরু। অনেকদূর বেড়িয়ে কোনো কিছুর দেখা না পেয়ে হতাশ হয়ে এক জায়গায় বসে চিঁড়ে গুড় পেটে চালান করে রওনা দেবো ভাবছি, দেখি একটা চালতা গাছ থেকে চালতা তুলে মুখে পুরে দিলো গজরাজ। আমরা দাঁড়িয়ে পড়লাম। একটু পরে ও জঙ্গলে ঢুকে পড়ে। পাশ কাটিয়ে আমরা চলতে শুরু করি।এদিন চলতে চলতে পাহাড়ের মাথায় পৌঁছে যাই। ফেরার পথে পাহাড়ের রাস্তায় ধ্বস নেমেছে। খাড়া পাহাড়ের ঢাল বেয়ে গাছের শেকড় ধরে পার হতে হবে। তিনশো ফুট নীচে গভীর খাদ। মৃত্যু ওত পেতে রয়েছে। একে একে সবাই পেড়িয়ে গেলো। মোটা নেপালি গার্ড দুজনও পেরোলো। শুধু আমি একা বাকি। খুব ভয় পেয়েছিলাম। রোমাঞ্চের বারোটা বেজে গেছে তখন। পরে ওপার থেকে টিম লিডার টোপ্পোদা দেখিয়ে দিলেন কৌশল । শেষে শংকরের কথা ভেবে মনে সাহস নিয়ে এগিয়ে চলি। এটুক পেড়িয়ে এসে মনে হলো যা বাঁচা বেঁচেছিরে বাব্বা! বুকের ধুকপকানিটা বেড়ে গিয়েছিল কয়েকগুণ। পরদিন আর যাইনি, থেকে গেলাম রান্না করবো বলে। আজ ছয়দিন, সব্জি শুধু আলু। তাই ডিমের ঝোল আর ডাল রান্না হয়ে গেছে। সবাই এলে স্নান খাওয়া সেরে শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে। আমি বিকেলে তাবুর ভেতর বই পড়ছি। পড়ন্ত বেলা, গাছের ডালের ফাঁকে সূর্য লুকোচুরি খেলছে। মাথার ওপর দিয়ে উড়ে গেলো ধনেশ পাখির দল। এবার সন্ধ্যে হয়ে এলো, হটাত দেখি ক্যাম্পের পাশ দিয়ে সবেপে একটি বুনো শুয়োর দৌড়ে যাচ্ছে আর পিছনে কয়কটি বুনো কুকুর তাড়া করেছে।আমার চিৎকার শুনে সকলে তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে এলো। একজন পটকা ফাটিয়ে দিতেই, পাশের  পাহাড়ে একটা গোঙানির শব্দ। টর্চ হাতে সবাই ছুটে গেলাম ঐ আওয়াজ লক্ষ্য করে। এরপর যখন শুয়োরের দেখা পাওয়া গেল তার বেশির ভাগই বুনো কুকুর খেয়ে ফেলেছিল। দলের কয়েকজন শুয়োরের মাংস খাবার জন্য উতলা। তারা সেটাকে নিয়ে এলো। রান্না করলো মনোজ। টোপ্পোদা ও আমি ছাড়া সকলে খেয়েছে সেই মাংস। বুনো শুয়োরের মাংস সেই নাকি স্বাদ!

পরদিন ক্যাম্পের শেষ দিন। সকালে বেড়িয়ে হেঁটে চলেছি ভুটানের কাছ দিয়ে। তেমন কিছুই পেলাম না। কিন্তু হঠাৎ ঘটলো এক বিপত্তি! পাহাড়ের উপর থেকে একটি শুকনো নালা দিয়ে ফিরছি। হঠাৎ খস্ খস্ করে কি দৌড়ে যাবার শব্দ! কি যেন ডোরাকাটা অংশ এক পলকে জঙ্গলে মিশে গেল। আমরা পাগমার্ক খুঁজতে ব্যস্ত। পদ্ধতি মতো কাজ করে ফিরে এলাম ক্যাম্পে। স্নান খাওয়া সেরে সব গুটিয়ে ফিরে চলার পালা।

সত্যি এই সাতটি দিন স্বপ্নের মতো কেটেছিল। দলের সকলের সঙ্গে একটা সুসম্পর্ক  তৈরি হয়েছিল। এবার হেঁটে ফিরছি। যত দূরে যাচ্ছি ক্রমশ কমে আসছে খাপাঙ্গির সুরমূর্চ্ছনা। জঙ্গল যেন ডাকছে... কিন্তু আমাদের ফিরতে হবে। তবুও রয়ে গেল রেশটুকু। এই আবেশেই আবিষ্ট হয়ে রই।

.................................................................
অভিজিৎ চক্রবর্তীর জন্ম ২২.২.১৯৭৯তে। শিক্ষকতার সাথে যুক্ত। থাকেন আলিপুরদুয়ার জেলার পাটকাপাড়া চা বাগানে। সম্পাদনা করেন "মহুয়া" পত্রিকা। ভালোবাসেন পাহাড়, জঙ্গল, সমুদ্রে বেড়াতে। ২০০৪ থেকে লিখছেন।


তাপস দেবনাথ লিখছেন শূন্যের মাঝামাঝি সময়ে। জন্ম- ২৮.১০.১৯৮৬, থাকেন আলিপুরদুয়ার জেলার শামুকতলায়। শিক্ষকতার সাথে যুক্ত।
…..................................



নির্বাণ
তাপস দেবনাথ

যৌবনের গোধূলিলগ্নে আজ,
ভেসে আসে নিধেয় স্মৃতি
স্যাঁতস্যাঁতে মন ডুব দেয় গাঢ় কন্দরে;
আরশিতে ভেসে ওঠে প্রেতাত্মার অবয়ব
দশাননের ন্যায় ভয়ানক!

সতেরো বছর প্রতীক্ষার পর - আজ
বৃষ্টিভেজা বারান্দায় চিৎ হয়ে,
আমি আর 'ডাকঘরে'র অমল,
একাসনে!
অদৃশ্য এক শেঁকল দিয়ে যেন বাঁধা
হাত-পা-ডানা।
অথচ শৃঙ্খল ছিল না এতটুকু,
দড়গার আতঙ্ক অথবা ধর্মের বেড়াজাল,
তবু পারিনি...

স্কুল... কলেজ... ইউনিভার্সিটি...
পঁচিশশো ছাপ্পান্ন দিন কেটে গেছে,
তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমোতে পারতাম অনায়াসে
কিন্তু পারিনি...

কে না জানে-
সরোবরে জমে থাকা জল
বৈশাখের দুঃসহ দাবদাহে
বাষ্প হয়ে উড়ে চলে যায়
আকাশের শূন্যতার দিকে!


রঞ্জন দেবনাথের লেখালেখি ২০০৭ এ। জামালদহ তুলসী দেবী হাই স্কুলে বাংলা বিষয়ের শিক্ষক। থাকেন আলিপুরদুয়ার জেলার পশ্চিম চেপানী  গ্রামে।
.......…...........................................



রঞ্জন দেবনাথ
জন্মান্তর

পৃথিবী জন্মানোর আগেও বোধহয় ছিলাম
নাম না জানা শ্রেণীর অন্তর্ভুক্তি হয়ে
কোনো এক অপ্রত্যাশিত জায়গায়।
যদি ক্ষমতা থাকতো ইতিহাসের
তাহলে নিজের ইতিহাস নিজেই জানাতাম,
প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতাম টিকে থাকার গল্প;
কষ্টগুলোকে শাকপাতায় ঢেকে
সুখের ভাগ দিতাম সভ্যতাকে।

খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসা ভাবনায়
পাড়ি জমায় ব্যক্তিকতা
স্বার্থপরের মতন।

জন্মান্তর থাকে যদি
কোন একদিন সঙ্গী হয়ে হাঔষ মেটাইবো
তোমার আক্ষেপ আর না পাওয়ার কারণের সঙ্গে।
নগরীর প্রাচীন ঐতিহ্যের কানে শুকনো পাতার মর্মর
দুর্নিবার আকাঙ্খার গর্ভে নতুন ভোর
আর ছোট বড়ো মাঝারি মাপের
রঙিন হরফ আ-ম-রা।


রবীন্দ্র মালাকারের জন্ম ১৯৭৯ সালের ৭ই জানুয়ারী। থাকেন আলিপুরদুয়ার
জেলার কামাখ্যাগুড়িতে। শূন্য দশকের শুরুর দিকেই কবির লেখালেখি। সম্পাদনা
করেছেন "কাল কল্লোল"। লেখেন কম। পাশাপাশি ছবি আঁকেন, কিছুটা ভাস্কর্যের
দিকেও হাত বাড়িয়েছেন। ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে নাটকের দল গড়ে নাট্য আন্দোলনকে
এগিয়ে নিয়ে যেতে চান। থাকতে চান মানুষের পাশে।
………………………………………………………………………………………………………….



নীল আকাশ
রবীন্দ্র মালাকার

সেই দিন ভালোই ছিলাম
আমার আকাশ অল্প নীল নয়
সম্পূর্ণ আকাশ নীল
পেঁজা তুলোর মতো এধার থেকে ওধার
ছুটে বেড়ানোর দিন
সত্যিই সেই দিন ভালোই ছিলাম
জ্যোৎস্না মাখি গালে-মুখে,
সেই দিন ডাঙা থেকে ঘোড়ামারা-র জলে
ভোল্ট দেওয়ার দিন
কিন্তু! পাখিদের কোন সেফ্ হাউজ নেই
কোয়ারান্টাইন জীবনে
প্রজাপতি লাশ হয়ে ফেরে
আমার আকাশ অল্প নীল নয়
সম্পূর্ণ গাঢ় নীল



শুভঙ্কর পাল এর কবিতা 

বিন্যাস ও নদী 



আহা !  ভার্সের সেই লাল পরীদের দেশ ।  পাহাড়ে পাহাড়ে আগুন লাগা দিন । 

একটু একটু ডানা মেলে উড়তে থাকে গুরাসের কণারা । 



ওখানেই স্বর্গের সিঁড়ি ,  উঠে গেছে হাওয়া ও আকাশের মিতালি নিয়ে  । 

হাওয়ার ঠোঁটের ভিতর জিব পুড়ে দিয়েছি ।  আদিম জিব । 

জিবের লালায় রিবন টেনে নিয়েছি । 




ওইটুকু স্পর্শের ভিতর নদী হয়ে ওঠা । 


গল্প 

মেরু বদল 

                  অম্বরিশ ঘোষ



আজ পাঁচ দিন হলো এটা । লোকটা রীতাকে ফলো  করছে নির্লজ্জের মতন । লোকটার বয়স হয়েছে কিন্তু নষ্টামির মনোভাব যায়নি ।  প্রথমদিন ব্যাপারটাকে রিতা ততটা আমল দেয়নি । অফিসফেরত বাস থেকে নেমে দোকানে সন্দেশ নিচ্ছিল রীতা । ছয় বছরের ছেলে অরিত্রর জন্য এটা ও মাঝেমধ্যেই নেয় । দোকানে ঢোকা থেকে বের হওয়া --  সারাক্ষণ লোকটা হা করে তাকিয়ে রীতার মুখের দিকে । তেমন একটা সম্ভ্রান্ত নয় লোকটা । জামাকাপড় পুরনো হয়ে কুঁচকেও গেছে দু - চার জায়গায় । বাস থেকে নেমে আধ কিলোমিটার হেঁটে বাড়ি ফেরে রীতা । শরীরটা একটু ফ্রি থাকে তাতে । তৃতীয় দিন তো লোকটা পিছু নিয়ে বেশ কিছুটা গিয়েও ছিল ওর পেছনে পেছনে সন্ধ্যার নির্জনতায় । কিন্তু আজ অতি বাড়াবাড়ি । একদম কম দূরত্বে পিছন পিছন হাঁটতে  হাঁটতে লোকটা অবশেষে যখন ডাকলো রীতাকে , তখনই ধৈর্যচ্যুতি ঘটে রীতার । আরও ছয় সাত পা হেঁটে লাইট পোষ্টের নিচে গিয়ে দাঁড়ালো রীতা । ভয় সরে গিয়ে মাথা রাগ ভর্তি হয়ে উঠল । ঠাঁটিয়ে একটা চড় মারার জন্য তৈরি হচ্ছিল রীতা । কিন্তু লোকটার চোখে চোখ পড়তেই থেমে গেল । জল গড়িয়ে পড়ছে লোকটার দু'চোখ থেকে । দু'চোখে যেন কত দিনের একটা জমাট বাঁধা বেদনা ।  কাঁপা কাঁপা গলায় লোকটা মুখ খুলল । বলল , "মা রে !  তোর মুখটা অবিকল আমার অসুখে মরা মেয়েটার মতন । ওর মা মরে যাওয়ার সময় বলেছিল , আমি যেন বিয়ে দেবার সময় মেয়েটাকে এটা দিই । মেয়েটা মরে যাওয়ার পর থেকে এই সোনার চেনটা  বয়ে বেড়াচ্ছি । আর সহ্য করতে পারছি না এর ভার । তুই এই অভাগা বাবার থেকে এটা নিয়ে আমায় মুক্তি দে । "  রীতার হাত ধরে একটা হালকা সোনার চেন তুলে দিল লোকটা । হতভম্ব রীতা কিছু বলার আগেই হনহনিয়ে চলে গেল লোকটা । সেদিনের পর থেকে আর কোনদিন রীতা লোকটাকে দেখেনি ।