Tuesday, September 1, 2020

কোচবিহার জেলার শূন্য পরবর্তী দশক

 কোচবিহার জেলার শূন্য  পরবর্তী দশক 


১.

রহস্য বিধবা

পীযুষ সরকার 



টানা আটমাস খুব সন্তর্পণে খুন হলাম আমি । মরদেহে সামান্য মাটি বা আগুন দিল না কেউ । দিন তিনেক অশৌচ না , দুবেলা হবিস না ‌! আমার অতৃপ্ত আত্মা এখন ফনীর মতো উড়ে বেড়ায় । নিজের ঘর নিজে ভাঙে , নিজের গাছ উপরে ফেলে নিজের ভবিতব্যে । পরিবারের চোখে জল । ঈশ্বরের কপালে ভাঁজ । মৃত্যুর পর এই জীবদ্দশা ,এই অস্থিরতা অলক্ষুণে বৈকি !

ময়নাতদন্ত শেষ । হতোদ্যম পুলিশ কুকুর । 

কী শাস্তি ? কী বিধান ? এ ক্ষতির দায় নেবে কে বা ? 

খুনিও কাছের লোক ..

নিষ্পাপ । প্রণয়ী । রহস্য বিধবা..


** পরিচয়- কোচবিহার জেলার প্রান্তিক গ্রাম দ্বিতীয় খন্ড বাঁশরাজায় ১৯৮৭ সালের ১৯শে সেপ্টেম্বর জন্ম পীযূষ সরকারের। ইংরেজী ভাষা-সাহিত্যে স্নাতকোত্তর শেষে এখন পেশায় স্কুল শিক্ষক। প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ- 'সুতরাং শিস্ দিলাম'(২০১০, উত্তরের মুখ), দ্বিতীয় প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ- 'ভাঙা মানুষের রিংটোন'(২০১৬,লাইটহাউস), তৃতীয় প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ-'আমাছামা চান'(২০১৬, রাজবংশী ভাষা একাডেমি)। তার অবিমিশ্র যাদুকলমে উঠে আসে সহজাত ও আবাল্য লালিত গ্রামীণ লোকসংস্কৃতি এবং রাজবংশী জীবন চর্চার নানা অনুসঙ্গ; উঠে আসে আত্মবীক্ষণ ও আত্মব্যবচ্ছেদের মর্মভেদী ভাষা। গান লেখা, সুর করা, গান গাওয়ার পাশাপাশি কবির শখ দোতারা, সারিন্দা, ব্যানা, উকুলেলে, গীটার এবং অভাব বাজানো।

••

পরিচয় গাছ  

নিশীথ কুমার সেন 



কতবার ঘড়ির কাঁটা এসে দাঁড়িয়েছে

 রঙিন দেয়ালে 

 রক্ত লুকিয়ে পেরেক হয়েছি 

সময় আটকে গেছে

বুঝতে পারোনি 



 শালবাগানের মর্মর পাতার নীচে 

যে স্বপ্নগুলো পুঁতে দিয়ে গেছো 

সেগুলো গর্ভবতী হয়ে গেছে আজ 

দুদিন বাদে যখন 

দুহাত মেলে গাছ হয়ে জন্মাবে 

কোল বাড়িয়ে অক্সিজেন নাম দিয়ে যেও 

আমি শেকড় হয়ে মাটি মাটি কামড়ে থাকব 

প্রমিস

 কেউ বুঝতে পারবে না 


** পরিচয়- নিশীথকুমার সেন । জন্ম ১০ মে ১৯৯৫; কোচবিহার জেলার বামনহাটে । পিতা- নগেন সেন, মা- শোভারানী সেন । 

পেশা- অতিথি শিক্ষক 

বই- "মেঘ ও বৃষ্টি" (কবিতা ২০১৮), বামনহাট দর্পন (প্রবন্ধ ২০১৭)

পত্রিকা - অন্বেষণ মাসিক ব্লগজিন. 

•• 

ময়দান 

             দীপায়ন পাঠক 



অচেনা নয় লাশের গন্ধ 

এই মৃত্যুপুরীতে 


ধ্বজা পুরে গেছে সেই কবেই  

ধোঁয়ার মতো কিছু কুয়াশা 


যুদ্ধের ময়দানে লাখো  

অদৃশ্য  যোদ্ধা 


তবু শক্ত করে ধরে রেখেছি হাতের অস্ত্র



** পরিচিতি- দীপায়ন পাঠকের জন্ম 22 এ নভেম্বর কোচবিহারে। সংস্কৃতিক জগতের পরিচিত মুখ। ছোটবেলা থেকেই নাটকের সাথে জড়িত। রয়েছে নিজস্ব নাট্যদল। পরিবেশপ্রেমী। জঙ্গল ও লোকজীবনের সাথে রয়েছে নিবিড় যোগাযোগ। এছাড়াও নিয়মিত প্রবন্ধ, গল্প লেখেন।দেশের বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিনের পাশাপাশি বহুল প্রচারিত বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় লেখেন। ছবি তোলা তাঁর অত্যন্ত প্রিয় শখ। বইপোকাও বটে। প্রথম কবিতাবই 'মরফিন'। দ্বিতীয় কবিতাবই 'ব্ল্যাকহোল' । বিরক্তিকর পত্রিকার সম্পাদনার সাথে যুক্ত ।

দীপায়ন পাঠক 

দক্ষিণ খাগড়াবাড়ী 

শিলিগুড়ি রোড  

কোচবিহার - 736101

ফোন - 9614383949

ই মেইল - deep.cob007@gmail.com

••

# নেপথ্যচিত্র

সৈকত সেন 

-----------------------------------



কোন একদিন মধ্যরাতে একটি প্রবল জলোচ্ছ্বাস 

ঢুকেছিল আমার ঘরে।

ঘরের গুছোনো আসবাব,দীর্ঘ স্মৃতি

বেদনাচিহ্নিত জ্যোৎস্নারেখা সবকিছু কেমন 

ওলটপালট করে দিয়ে গেছে।

চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেছে যাপন কথা, জারজ ভাগ্য।


ভেসে যেতে দেখেছি আমার 

জটিল চাওয়া পাওয়া লিপিবদ্ধ 

বাদামি হিসেবের খাতা।

আমার টুকরো টুকরো ইচ্ছে 

আমার স্বপ্নমলিন চাঁদফালি 

আমার নিসঙ্গ গানের সুর 

জলের তোড়ে ভেসে গেছে সব।


আমি শুধু বাঁচার জন্য সম্ভাবনাময় কিছু

খড়কুটো আঁকড়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম,

এখনো আছি।

দূরে তোমার ঘরে আলো দেখে ভাবি

একদিন আমার এই বিপর্যস্ত কুটিরের গায়ে

হয়তো আবার জ্যোৎস্না পড়বে,

রমণীয় হয়ে উঠবে 

আমার দীর্ঘ প্রতীক্ষা।


এখন শূন্যতাই কাম্য

তুমি-আমি-আমাদের গৃহধর্ম 

সবকিছু অর্থহীন,নিরাসক্ত।

পড়ে আছে যে অবশেষ,

তার জন্য অপেক্ষমাণ সময়-জল-মাটি

ততদিন নেপথ্যে যত যাপনলিপিচিত্র

অলৌকিক বর্ণময় হয়ে উঠুক।


** পরিচয়- সৈকত সেন. জন্ম- কোচবিহার সত্তরের দশক। একাদশ শ্রেণী থেকেই স্কুল ম্যাগাজিন ও ওয়াল পত্রিকার দায়িত্ব সামলানো। পরে বিভিন্ন ক্ষুদ্র পত্রপত্রিকার সঙ্গে যুক্ত।  তারপর গল্প, অনুগল্প, কবিতা নিয়ে লেখার জগতে পা রাখা। নিয়মিত বিভিন্ন ম্যাগাজিনে কবিতা লেখা।

2018 থেকে তোর্সা সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদনার কাজ করে আসা। বর্তমানে নিজস্ব একটি ম্যাগাজিন "কথালহরীতে" যুগ্ম সম্পাদনায়  নিযুক্ত।

••

আমার ধানগাছ

বিকাশ দাস (বিল্টু)



আমার বুকের ভিতরের

ধানগাছটি প্রতিদিন বড় হয় 


অথচ এই বাড়ন্ত সবুজ সতেজতার

ভিতর আর্তনাদ করে 'মৃত্যবান'


মৃত্যু খুব কাছে জেনেও

ক্যামন হাওয়ায় দোলে

                আমার সেই ধানগাছ



উদ্বাস্তু



বুকে জমানো পাথর এর শেল

'শিকল ভাঙার গান' গেয়ে 

উড়ে যেতে চায় পাখির বেশে

                     মুক্ত আকাশে


আমার 

সম্মুখে প্রাচীর। পিছনে প্রাচীর

বন্দীদশায় গরাদের সেলে 

একা আমি সাঁতার কাটি

                    নিজের সাথে


দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে

পৃথিবী বুঝি এভাবেই

                 উদ্বাস্তু হয়ে ওঠে


** পরিচিতি- সোনার চামচ নয়, অনেকটাই বেতের চামচ নিয়েই জন্মগ্রহণ করা ০৩ রা এপ্রিল, ১৯৯৪। পিতা স্বর্গীয় নরেশ চন্দ্র দাস, মাতা প্রিয়াবালা দেবী। অভাবের সংসার। ৫ ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট। 

  পিতা বাংলাদেশ এর ময়মনসিংহ জেলা থেকে রায়ট এর সময় শরণার্থী হয়ে কোচবিহার জেলার এক অজ পাড়া-গাঁ তথা বোচাগাড়িতে নতুন আবাস গড়েন। সেখানেই বেড়ে ওঠা। পড়াশোনা। পড়াশোনায় মেধাবী থাকা সত্তেও নিত্য অভাব অনটনের জন্য ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হয়েও, অভিমানে ইংরেজিতে স্নাতক। এই অভিমান থেকেই লেখায় হাতে খড়ি। এরপরে কিছু প্রিয়জনদের মৃত্যু লেখার প্রতি ঝোঁক বাড়িয়ে তোলে। বর্তমানে গৃহ শিক্ষকতার সাথে যুক্ত। ২০১৪ থেকে লিখতে আসা। তবে এর পূর্ণতা পায় ২০১৬ তে। এখন কবিতায় যাপন, কবিতায় জীবন পাওয়া। অতীতকে ভুলে ,নতুন করে বাঁচতে শেখা। মাটির ঘ্রাণে সব খুঁজে পাওয়া। বাতাসে ,নদীতে নিজের জীবনকে পাওয়া।

এর মাঝেই সম্পাদনা করে চলা 'আল্পনার কবিতা'(২০১৮)। এভাবেই এগিয়ে চলছে গুণীজনদের সান্নিধ্যে সবার ভালোবাসার সে পত্রিকা। আত্মপ্রকাশ সংখ্যায় সবার সান্নিধ্য পাওয়া(২০১৯,২৪শে অক্টোবর)। 

যদিও হুজুগের বসে প্রথম বই করা। এখন বড্ড অনুশোচনা হয়।  সময় নেওয়া উচিত ছিল। যাইহোক প্রথম বই এর নাম:'বিরহী প্রেমের ঝংকার(২০১৯)'। এর পরের বই কবে হবে জানা নেই। তবে দাগ কাটার মতো কিছু করার ইচ্ছে। কবিতায় ডুবে কবিতার রসদ নেওয়ার পরেই সে সিদ্ধান্ত। 

••

রামধনু

সুজয় নিয়োগী 



নদীর ধারে হঠাৎ রামধনুর সাথে দেখা,

আকাশটাকে সাতরঙা করে

গন্ডি কেটে বসে আছে।

বেশ লাগছিল,


ও চলে যাবার আগে জানতে চাইলাম 

আচ্ছা ক্ষনিকের জন্য 

এই রঙ দেখিয়ে কি লাভ?

আসলে তো তুমি সাদা, তাই না?


হেসে বলল- আসলে মাঝে মাঝে

আমি জানান দিয়ে যাই----

সাদা বলে যাকে চেনো বা জানো

তা আসলে সাদা নয়,

ওই সাদার আড়ালে কত কত রঙ

লুকিয়ে থাকে তা যদি জানতে!


** পরিচয়- সুজয় নিয়োগী. ছোটবেলা কেটেছে জলপাইগুড়ি জেলার বেলাকোবায়।

জলপাইগুড়ির আনন্দ চন্দ্র কমার্স কলেজ থেকে বানিজ্যে স্নাতক।

পরবর্তীতে কোচবিহার নিজের শহরে পরিনত হয়।

স্কুল ম্যাগাজিন দিয়ে হাতেখড়ি। 

পরবর্তীতে কবিতা-ছড়ার টানে লেখালেখির চেষ্টা, মূলত প্রথম দশকে 

বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ছড়া ও কবিতার প্রকাশ।

••

ভাওইয়া

খোকন বর্মন 



মাঠ থেকে ফেরার পথে রোজ আমার দিকে আড়চোখে তাকাত।শরীরে কাঁদা দেখে গা ঘিন ঘিন করার মতো মেয়ে সে নয়। কিছুদূর এগিয়ে ভাবতাম তার চোখে মরুভূমির বালাই নেই একটা শান্ত নদী দীর্ঘদিন ধরে কি যেন খুঁজে চলেছে। আমার হাতে  তখন বিষণ্নতার দোতারা, মেয়েটির সারা শরীর জুড়ে ভাওইয়ার তীব্র গন্ধ।


** পরিচয়- খোকন বর্মন , জন্ম 2.12.1998 এ বলরামপুরের চেকাডারা গ্রামে

মাতা যোগমায়া বর্মন পিতা কমলাকান্ত বর্মন। বলরামপুর  উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা এরপর স্কুল  ব্রজেন্দ্রানাথ শীল মহাবিদ্যালয় থেকে বাংলা নিয়ে  বি এ কমপ্লিট করে এখন কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে এম এ পড়ছি।

••

সম্পর্ক

সপ্তর্ষি বনিক



তিন



দ্রুত সরে যাচ্ছে চাঁদ


রাত থেকে নামিয়ে আনছি স্বপ্ন


তারাদের দেশে ঘুমিয়ে আছে 


                   নাম না দেওয়া সম্পর্ক।



উনুন ধরাও, কারফিউ তে বিলি করো খিচুড়ি


ভিখারীকে দাও দু ফোটা জল


মদ ঢেলে দাও বড়বাবুর গ্লাসে



উন্নতি লুকিয়ে রাখো 


            তোমার দুটো অসম স্তনের মাঝে।



সম্পর্কে জল দাও


মিথ্যে থেকে বেরিয়ে এসে...


** পরিচয়- সপ্তর্ষি বনিক. জন্ম 21 সে অক্টোবর, 1999।

বর্তমানে বাংলা অনার্স নিয়ে পাঠরত।

লেখার শুরু 2017 সাল। 

বই হলো-আস্ত শহর ঘুম দেয় এক মিথ্যে সুখে-2019

আর

শহর অভিমান ভুলে-2020

••

প্রিয় বিষণ্নতা ও একটি অন্ধ চুম্বক

নীলাদ্রি দেব 



পাঁচ. 

তোর্সার জলে চিত্রকর ভাসিয়ে দিয়েছিল 

                            গোলানো অ্যাক্রিলিক 

তোমার যেমন ডাকনাম আছে, তেমনি রংএর 

এত নাম মনে রাখব না বলেও... 

                            ভুলে যেতে পারিনি আলো 

নদীর মাঠে তখন জেলেমাঝির গান 

আমাদের পাশে না বলা কথার ভিড় 

তখনও থার্মোমিটারের পারদ ঝুঁকে আসেনি


** পরিচয়- নীলাদ্রি দেব. 

জন্ম 14 এপ্রিল, 1995. কোচবিহার (পশ্চিমবঙ্গ).

শারীরবিদ্যায় স্নাতক. যুক্ত আছেন শিক্ষকতায়. 

কবিতায় এসেছেন প্রথম দশকে. 

কবিতাবই- ধুলো ঝাড়ছি LIVE, জেব্রাক্রসিং ও দ্বিতীয় জন্মের কবিতা, এবং নাব্যতা. 

সহ সম্পাদিত পত্রিকা- ইন্দ্রায়ুধ, বিরক্তিকর.

••

#ঘোড়দৌড়ের_বিকেল

#নাদিরা



আমাদের গাঁ উজাড় হয়ে গেছে ঘৃনায় 

একরাশ কাঠ জমিয়েছি, পোড়াবো বলেই.... 

পৃথিবী কখনো ভালোবাসতে গিয়ে গুঁড়িয়ে যাবেনা 

বরং তোমাদের লালসা ও নীল লালায় ফেটে যাবে। 

প্রপিতামহের মেরুদন্ডের মতোই 

বাঁকা - ক্ষয়াটে একটা ভবিতব্য নাচছে, 

ঘোলা চোখের মনির মতো ফেনিল সকাল... 

আমি কুড়িয়েছি ; কোনো দোষারোপ নেই আছে আফসোশ। 

নাভীজুড়ে সেগুন কাঠের গন্ধ... অথবা

চন্দনের..... যার ঘ্রাণ স্বপ্নে পাই মাঝেমাঝে 

মা বলে মৃত্যু ঘনিয়ে এলে লোকে ঘনঘন... 

ভয় পায়... আর্তনাদ করে... বালিশ জড়িয়ে ঘুমায়। 

এখন আমি স্বপ্নে ঘনঘন ঘোড়ার লাগাম দেখি... 

ঘুম ভাঙলে দেখি বিকেল হবার তোড়জোড় চলছে


** পরিচিতি- নাদিরা আহমেদ 

গ্রাম + পোস্ট-- বড় আটিয়া বাড়ি

থানা -- দিনহাটা 

ফোন নম্বর -- 9679949359

••

ঘোর

দেবশ্রী রায় 




চোখের তলায় সূর্যাস্তের মায়াকাজল

স্বপ্নহীন ঘুমে নিহত হই রোজ   

রাতের গাণিতিক স্নান সেরে জেগে উঠি আবার

                                   কোনো নিয়ম ছাড়াই 

বেঁচে আছি এভাবেই  

                                   শরীর যেন বুদ্বুদ 

একটা অস্পষ্ট কুয়াশার মধ্যে 

                                   হেঁটে চলেছি।                                 

ফুলতোলা বালিশের ভেতর ভেঙ্গে পড়ে আছে 

                                         স্থূল  বিশ্বাস।



জানিনা,এতটা নিঃস্ব হয়েও কিভাবে বেঁচে আছি

                            কিভাবে বেঁচে থাকা যায়?

হয়তো পায়ের নিচে গন্ধভরা ঘাস,

আগুন ঘিরে স্মৃতিজাগা রাত                                         

জলপ্রিয় পাখিদের গান 

                                     আর 

রক্তের ঢেউ এ অক্ষর সাজানোর 

                                      এক ঘোরই 

                          বাঁচিয়ে রেখেছে আমায়।


** পরিচয়- দেবশ্রী রায়. জন্ম- কোচবিহার, সত্তরের দশক। পেশায় শিক্ষিকা।

খুব ছোটবেলা থেকে কবিতার প্রতি প্রেম।বাচিক শিল্পী হিসেবে সামান্য পরিচিতি।নবম শ্রেণী থেকে একটু একটু লেখার চেষ্টা। তবে কবিতা নিয়ে সবার সামনে আসা দ্বিতীয় দশকে। নিয়মিত বিভিন্ন ম্যাগাজিনে কবিতা লেখা।খুব সাম্প্রতিক সম্পাদনার কাজে নিজেকে যুক্ত করা। পত্রিকা "কথলহরী"।

••

নেমো নাকো জলে চাঁদ

মাধুরী হালদার 



ওগো হেমন্তের চাঁদ!

দেখ তুমি সারারাত

নতমুখ ফসলের রূপ;


সারা মাঠ ভরে আছে

সোনালি ধানে


এতো রূপ দেখে তারপরে 

শেষ রাতে এসো তুমি নোনাই এর তীরে

সেখানে হরিণও নদীতে নামে,

হাতি জল খায়


ভোরের আলোয় আমি কলসী ভাসাব

বন ঝোপের আড়ালে তুমি চুপ করে থেকো


নেমো নাকো জলে চাঁদ!

আকাশে কুসুম কুসুম আলো

ডুবো নাকো জলে চাঁদ!

ছুঁয়ো না আমায়!


নোনাইয়ের জলে রাই কলসী ভাসায়


** পরিচিতি- মাধুরী হালদার--জন্ম দক্ষিণ ২৪পরগণার বহড়ু গ্রামে।বর্তমানে উত্তরবঙ্গের কোচবিহারের মহারাণী ইন্দিরা দেবী বালিকা বিদ্যালয়ের সহশিক্ষিকার পদে কর্মরতা।ছোটবেলায় মায়ের মুখের আবৃত্তি শুনতে শুনতে  কবিতার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন।অষ্টম শ্রেনীতে পড়াকালীন প্রথম কবিতা লেখার সূত্রপাত।তারপর থেকে নিয়মিত লিখতে থাকেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি ছাড়ানোর পর নানা কারণে তাঁর সাহিত্য চর্চায় ছেদ পড়লেও  মূলতঃ ফেসবুকের পাতায় তিনি আবার লেখালেখি শুরু করেছেন।

••

শুশ্রূষা

মনিমা মজুমদার 



একটিই রাস্তা

হেঁটে যাচ্ছি সবাই

শরীর থেকে খুলে রাখি যাবতীয় শোক

মুহুর্তে যেন কতকালের আলো

ঘাসের ডগায় চুম্বন এঁকে যায়

এত সহজ এই পথচলা

বুকের খাঁজে লুকিয়ে রাখা প্রিয় মানুষের গন্ধের মতো

একটু একটু করে শুশ্রূষা নেমে আসে 

চিরকালের এক পাপের শরীরে


** পরিচিতি- মনিমা মজুমদার, পেশায় শিক্ষিকা। ভালোবাসেন কবিতা, প্রবন্ধ লিখতে। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ 'ব্যক্তিগত বর্ণমালা'।

••


রাজীব পাল

বাড়ি হালদিবাড়ি

আমি ২০১৪ থেকে লেখা শুরু করি,

পড়াশুনোর পাশাপাশি,পত্র পত্রিকায় লেখালেখি করি এবং কয়েকজন মিলে আন্তরিক নামে একটি পত্রিকা বের করি। 

কবিতা আর কবিতা বিষয়ক কবিতা গদ্য পড়তে ভালোবাসি।



আড়াল

রাজীব পাল

--------------


নদীর কাছে যেতে ভালো লাগে....

খুব রাক্ষুসে হয়,পাড় গিলে খেতে ওস্তাদ।

অবশ্য আমি যে নদীটার কাছে বসি সেটি খোঁড়া,

বুক অব্দি বালি।


গল্প শুনেছি এই নদীটাও নাকি একদিন ডাকাতিয়া নদীটি ছিল।আস্ত আস্ত গ্রাম গিলে খেতো বর্ষায়।


এরপর সময় পাল্টেছে আর সাথে সাথে এত বিশ্রী ভাবে গুটিয়ে গেছে,

এখন চলতে পারে না ।



নদীটা মরে যাবে।খুব তাড়াতাড়ি মরে যাবে নদীটা।

ঠিক যেমন বাইজি পাড়ার বয়স্ক-মেয়েরা অবহেলা পেতে পেতে মরে যায়!


সৌমিতা মিত্র

লেখালেখি শুরু ২০১০ সালে দমকা হাওয়া পত্রিকায় লেখা দিয়ে। লেখা শুরু হয়েছিল শুধুমাত্র পত্রিকা সম্পাদকের অনুপ্রেরনায়


প্রিয় কবি- জয় গোস্বামী, ভাস্কর চক্রবর্ত্তী, রনজিৎ দাস

শখ- গান শোনা

বারান্দা বাড়ি

--------------------

সৌমিতা মিত্র




রোজ রাতে বসে থাকি

একলা বারান্দায় 

প্রতিটা বাড়িতে একটা

খোলামেলা বারান্দা দরকার।


একটা বারান্দা...

যেখানে অন্তত পাঁচ ছ-জন

বসতে পারে.....


রোজ রাতে বারান্দায় আসে

পরিচিত জোনাকি

জোনাকি গল্প শোনায়


জোনাকি গল্প শোনায়?

শোনায়, নিজের জ্বলে যাওয়া

নিভে যাওয়ার গল্প।


আর আমি আবছা অন্ধকারে

গল্পগুলো লিখে রাখি......


তারপর ঘুম গড়িয়ে এলে

ঘুমিয়ে যাই এক কোনে


একটা বারান্দাই ঘর

বাড়ি হয়ে ওঠে.....


নাম-হৃদয় হোম চৌধুরী

বসবাস-হলদিবাড়ী কোচবিহার

(বর্তমানে পড়াশোনার সূত্রে কলকাতা)

-উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগে স্নাতক হিসেবে পাঠরত


২০১৭ সাল থেকেই কবিতার জগতে

কবিতা কে ভালোবেসে কবিতায়


প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশ, মুকুন্দ দাস,শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সুবোধ সরকার, রাহুল পুরকায়স্থ...


আপাতত কোন বই নেই


বাতিল বাড়ি

     হৃদয় হোম চৌধুরী




বাতিল পোড়ো বাড়ির বুক চিরে

জীর্ণ জানালাটিও হওয়ায় সঙ্গী হবে না আর ;

শ্যাওলার সবুজকে আপন করে

মৃত আবেগের ভাবনায় অন্ধকার।


কখনো নিজেকে মৃত আবেগ

মনে হতে থাকে;কখনো বাতিল জানালা;

শ্যাওলার পাশে পড়ে থাকে প্রেম

মন বলে, থেকে যাওয়াই বেশ ভালো।


আমি খুঁজি রং, পোড়ো বাড়িটি যাকে ভুলে গেছে;

আমি খুঁজি হওয়া,ভুলে গেছে জানালা যাকে;

শ্যাওলা সিক্ত ছোঁয়ায় এসে

এখনো ধুলো মাখা আকাশের কবিতা খালি হাসে।


বাড়িটি ভেঙে গেছে,জীর্ণ জানালাটি 

হওয়ার সাথে প্রণয় করে হাসে;

শ্যাওলার গায়ে অভিমান তীব্র হয়

মাটির গন্ধ নারী শরীরেই ভাসে।


বিপ্লব সরকারঃ-- তরুণ কবির বাস উত্তরবঙ্গের একটি প্রান্তিক শহর মাথাভাঙ্গায়। ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর এই তরুণ কবির প্রকাশিত দুটি কাব্যগ্রন্থ "ওঁ চিহ্নের সন্ধি" এবং "চাপা পড়ে আস্ত শহর"। কবিতা লেখার পাশাপাশি করেন অনুবাদের কাজও। সম্প্রতি প্রকাশিত হয় কবি সন্তোষ সিংহের " স্বপ্নের কবিতাঃ সূর্যাস্তের ভাষা" কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদগ্রন্থ  "Poems of Dreams: Language of Sunset"।


দূরুহ গূঢ়তা 

বিপ্লব সরকার 



ইদানীং যা ধরা পড়ছে। বড়ো বেশি সহজলভ্য হলে আকাশ 

নিয়ে

এত মাতামাতি হত না। দূরুহ গূঢ়তার ভিতরেই সহজটান।

গভীর সন্ধান। জ্ঞাত বিধান জেনেই আমাকে কেমন বিষাদ লাগছে

আজ। প্রতিটা 

অক্ষরের পাশে শুয়ে থাকছে একটি গভীর পুকুর। ধূসর-রঙা

মার্বেল যেন কেঁপে কেঁপে উঠছে প্রতিটা বৃষ্টির ফোঁটায়


আচ্ছা সহজলভ্য বলেই কি তুমি সহজে

বদলে নিতে পারছো ধারালিপি? অভাবী রোদ্দুর জানে কতটা 

আকুতি দিয়ে

ধরে রাখতে হয় বটবৃক্ষচ্ছায়া



কবি পরিচয় : দক্ষিণবঙ্গ উত্তরবঙ্গ মিলিয়ে  আমার বেড়ে ওঠা। এখন উত্তরবঙ্গে  থাকি। পড়তে লিখতে ভালোবাসি। লেখায় আমার মুক্তি আবার লেখাই আমার আশ্রয়।

 আমার ২টি কাব্যগ্রন্থ  আছে : ১.সূর্যাস্তের খাতা (জানুয়ারী ২০১৯)

২.নাইট ক্রীম (জানুয়ারী ২০২০)


মেইল আইডি : mukherjeeminakshi26@gmail.com


নির্জন  দুপুর 

মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় 




ভাঁজ খুলতে থাকি

খুলতে খুলতে একদিন আয়নায় নিজেকে দেখি অস্থিসার দাঁড়িয়ে আছি

কথাগুলো হেঁটে  যাচ্ছে এ-ঘর থেকে ও-ঘর 

কিছু আবার হোঁচট খাচ্ছে চৌকাঠে 

আমি দেখি আর গাল বেয়ে গড়িয়ে নামে উষ্ণতা

 

হাওয়া বদলালে বুঝি বিকেল হয়

 

অস্থিতে বন্দী করতে থাকি বছর 

আর নদীর জলে অস্তমিত সূর্য


সুকান্ত দাস

জন্ম ১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৯১

অরুণাচল প্রদেশের ইটানগরে

ইতিহাস বিষয়ে স্নাতকোত্তর

সম্পাদিত পত্রিকা - শাঙ্খিক

প্রকাশিতব্য কাব্যগ্রন্থ - ম্যানিকুইন

প্রকাশিত গানের অ্যালবাম-শোরা


ঠিকানা - প্রযত্নে ডঃ নৃপেন পাল, হরেন্দ্র নারায়ণ সরণি, হাজরা পাড়া, কোচবিহার ৭৩৬১০১ ভারত

ই-মেইল-thesukantadas@rediffmail.com


সুকান্ত দাস

হেলানবাড়ি



১.

আঙুল ধরে বাবা বলছেন ধর নয়তো হারিয়ে যাবি। সে কোথায় তার খোঁজ বাবা জানেন। নিরুদ্দেশ হয়েছে বিকেল। বিকেলের হেলানবাড়ি। পাশের বাড়ির সুমন। এককাট্টা মাঞ্জা লাগাতো সুতোয়। মেঘের বিদ্রুপ সহ্য করতে পারতো। তারপর একদিন আলোচনা করে আমরা বড় হয়ে গেলাম। পা দানীতে এসে ঠেকল গন্তব্যের ট্রিগার। তারপর -

২.

এখন ছোট নেই ভাবতেই শরীর কাঁটা দেয়। রাক্ষুসে বাতাসে ঘুরে বেড়ায় সময়ের লেটারবক্স। মাপজোকের সিঁড়ি তুলে নিয়ে হেলানবাড়ি অপেক্ষা করে পরবর্তী ভ্রুণের

৩.

মায়ের ছবিগুলো ফ্যাকাশে হয়ে আসছে। অথচ বাবা চেয়েছিল মায়ের চোখে হয়ে উঠবে একান্ত ফোটোগ্রাফার। বর্ষা এসে যায়। মেয়ে ব্যাঙেরা চেঁচিয়ে ডাকে পুরুষজনকে।

ফোটোগ্রাফগুলো আরও ফ্যাকাশে হতে থাকে।

৪.

প্রতিটা মেয়েবেলায় জড়ত্ব লুকিয়ে থাকে। চর্যাপদ শেষ করে আর ধরা যাচ্ছেনা। অথচ দেখা হয়েছিল কোন এক রবীন্দ্র সন্ধ্যায়। বেণী দুলিয়ে গাইছিলে - আজ আমাদের ছুটি রে ভাই আজ আমাদের ছুটি  

৫.

আলো কমে আসে। তীর ফিরবেনা বলেই এখন তূণ ফাঁকা। বিপ্লব বিদ্রোহ শেষ করে হাতে তুলে নেব গাদা গাদা ওষুধর প্রেসক্রিপশন। হেলানবাড়ির খোঁজ করব। যদি শেষবার কোন বিকেল দেখা যায় ..


মানিক রায়ের কবিতা 



আলো


মাথার ওপর ঘুরে বেড়াচ্ছে
একটি অবিশ্বস্ত বাতাস
আর আমরা এক এক করে পার হয়ে যাচ্ছি নদী

আকাশের উচ্চতায় তুমুল বৃষ্টি
যা আমরা শুনতে পারিনি  

দিনগুলো ক্রমশ খসে পড়ছে
এবং আমরা হেঁটে চলছি
দূরবর্তী কোনও  এক আলোর দিকে






বৃষ্টি

যেখানে এসে দাঁড়িয়েছিলাম
সেখান থেকে হারিয়ে যাচ্ছে শহর
এবং রাত বাড়ছে

গাছের মাথাগুলো হাওয়ায় কাঁপছে
আর বৃষ্টি নামছে পাশের গলিতে  




পরিচয়

মানিক রায়। জন্ম ২ জানুয়ারি ১৯৯৪, কোচবিহার জেলার খলিসামারিতে। বাবা বিজয় চন্দ্র রায়। মা ঊষা রাণী রায়। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় 'স্বপ্নসন্ধানী' পত্রিকায় ২০১১ সালে। বাংলার পাশাপাশি রাজবংশী ভাষায় কবিতাচর্চা অব্যাহত রয়েছে।

মোবাইল: ৮৯২৭১১৬৩৩৯ 


 প্রত্যেকেই  ভবিষ্যতের একটা সরল অঙ্ক আঁকতে চায়

বর্ণজিৎ বর্মন 

প্রত্যেকেই 
ভবিষ্যতের একটা সরল অঙ্ক     
                          আঁকতে চায়

 শিরোনাম 
              জীবন বৃত্তের ব্যাস  ।

ইচ্ছার প্রতিফলন বড় হলে 
                             প্রতিছায়া 
                              মাতৃভাষায় 
ঘর সাজায় রজনী গন্ধা ।

সামুদ্রিক নোনা ঢেউ 
                        ঢোকে 
   বেখেয়ালি দরজায় 

ঘরময় ভাসে ইনপুট 
                 অবস্বাদ স্রোত 

সংসারের A 2 Z 
ভাসমান জাহাজ মনে হয় ।
                                      তখন 
চোখের দৃষ্টিতে 
            গন্তব্যহীন 
             হাজার নাবিক

ধ্রুবতারা খুঁজছে নিশানা তীরে  

ব্যর্থ চেষ্টার বাড়িতে 
              আঁকা হলো না         
            একটি সরল জীবন 
কবিতায় লেগে থাকে 
রেখার জীবাশ্ম ছাপ 
                   ভবিষ্যতের 
সরল অঙ্ক।


2.

অন্ধকারের রাত

নৌকাটি স্রোত ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে 

আলোমুখী জীবন পারাপার করে ।

কিন্তু ইজ্জতের নির্যাস দারিদ্রের কোনো ঢেউ 

ভাঙ্গতে পারেনি মাঝির ।

ভবিষ্যত রীতিমত এভাবে চলে কি ?

শেষ সম্বলটুকু চোখের জ্লে ভিজিয়ে 

গভীর অন্ধকারের রাত, বনলতা সেন পেরিয়ে 
আমরা চলছি চরম গন্তব্যে..

নমস্কারান্তে 
বর্ণজিৎ বর্মন 
দিনহাটা ,কোচবিহার 
8653189039



দে ব জি ৎ


কোয়ারেন্টিন


যাদের এখন অনেক রাতের বাহানা তাদের মুছন্ত স্মৃতিগুলো ইচ্ছামৃত্যুর অপেক্ষায়।
আমরা বাঁচাতে পারছি না যেমন পারিনি মাইকেল জ্যাকসন কিম্বা রাজপুত সুশান্ত।

তখন পুকুরভরা মাছ, জ্যোৎস্নাঝরা রাত।
গিটারে ঢেউ বাজালে তোমার সমুদ্র পেতো।
রাতগুলি সার্থক ছোটগল্পের উপসংহার।

'অনেক রাত।                                         ঘুমোবো।'

তোমার ভূমিকা লিখে চলে যাওয়া রাতের পূর্ণতা দিচ্ছি।
পরিচিত মেয়েটির লকডাউনে আটক বিবাহবাসরের স্বপ্ন ডানা পাচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপে।
প্রেমে বিজি বন্ধুর ফোনে আমি থার্ডপার্সন।
এক ভদ্র মাতালের স্টেপ জানান দিচ্ছে কিভাবে মিলিয়ে যায় কিছু কিছু ইয়ে।

জানা ছিলো না বাহানার অন্য নাম অজুহাত, ঘুমের অন্য নাম অনিচ্ছা..

জন্ম ও জন্মস্থান : ১১ মার্চ, ১৯৯১। কোচবিহার 
আত্মপ্রকাশ : প্রথম প্রকাশিত কবিতা 'সুখের সন্ধানে'। মোহনা, ২০০৮

আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার, রায়ডাক ও সংকোশ, পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম লাগোয়া ন্যাশনাল হাইওয়ের পাশেই  বাস ও বাড়-বাড়ন্ত। পালের ভেড়া নই তাই তথাকথিত অসামাজিক, একঘরে একলাটি..



উদয় সাহা      


বন্ধু 

মেসেজগুলো মুছে দিলে যে একটু সেন্টু হয়ে যায় 
তাকে তুমি বন্ধু বলে ভাবতেই পারো 

তোমার ডিপি ফাঁকা থাকলে যে কিনা
ঘ্যানর ঘ্যানর শুরু করে দেয় 
তাকে তুমি বন্ধু বলে ভাবতেই পারো

লাল পান বা লাল গোলাপ না-ই বা দিলে
একটা হলদে সূর্যমুখী দিতেই পারো 
আসলে এতটুকুতে কোনকিছুই বিপদসীমায় থাকে না

পাথরকুচির রাস্তায় তুমি কিংবা তোমার নাম 
সবটাই তো জলরঙে আঁকা... 

ওহে সাধুখাঁ, হাতে নখ রেখো না --
প্রত্যেক সৌন্দর্যই একসময় বিপজ্জনক, অন্যভাষায় 



উদয় সাহা      

জন্ম ও জন্মস্থান : কোচবিহার
শিক্ষা ও পেশা : স্নাতকোত্তর (ইংরেজি), বি.এড এবং শিক্ষকতা
আত্মপ্রকাশ  :  কলেজ ম্যাগাজিন
কবিতা ছাড়া অন্য মাধ্যম : গদ্য, নিবন্ধ,অণুগল্প
সম্পাদিত পত্রিকা : সহ-সম্পাদক হিসেবে 'মুজনাই ' এবং 'মোহনা '
বই :  পেজমার্ক (কাব্যগ্রন্থ ২০১৭)
সম্মান ও সম্মাননা :
রোববারের সাহিত্য আড্ডা
সম্মাননা, নক্ষত্র সাহিত্য সম্মাননা, কাব্যতীর্থ সম্মান






























সোমতীর্থ এর একটি কবিতা



পেছনের সিঁড়ি তে বসেই না হয় জল দেখবো
তুমি রইলে আগের সিঁড়িতে
আমি পেছনেই থেকে যাব।

জলের তল মাপতে থাকি
কতটা গভীর
সে কি অতল?

পরে যেতে পারি কি ?
পা পিছলে? না সামলে নেব।

সেই জলের বুকে সাঁতার
সে সব এ জন্মে আর হল না।
-------------------------------------------
সোমতীর্থ দে দাস, কোচবিহার জেলার হলদিবাড়িতে বসত।
জন্ম তারিখ- ২৮শে মে ১৯৯২, লৌকিক, আন্তরিক পত্রিকার সম্পাদনার সাথে যুক্ত। ২০১৩ থেকে লেখালেখি করছেন।


জীবন নদী
সুজিত শীল



উৎস থেকে মোহনার যাত্রায়
প্রবাহিত নদীর স্রোতের মতো,
জন্ম থেকেও মৃত্যু পর্যন্ত
জীবনটাও চলছে প্রতিনিয়ত ।

নদী কখনো চলে সজোড়ে
ভাঙে কখনো তীরের জমি,
আবার কখনো চলে ধীরগতিতে
গড়ে কখনো ব-দ্বীপভূমি ।

জীবনও যেন ঠিক সেরকমই
তারুণ্যের উদ্যমে ভাঙে সকল বাঁধা,
বয়স বাড়লে যদিও কমে কর্মক্ষমতা
অভিজ্ঞতায় সুখের করে গড়ে জীবনটা ।
...........................................…...............
কোচবিহার শহরের কবি সুজিত শীলের জন্ম তারিখ- ০৮.০৮.১৯৯।
লেখালেখি, ছবি আঁকা, হাতের কাজ করার পাশাপাশি বেড়াতে ভালোবাসেন। প্রথম দশকেই মূলত লেখা শুরু।


ফিরে দেখা(গল্প )
অপর্ণা রায়


…………………………………………………………………………………………………………………………………………………
অপর্ণা রায়, জন্ম তারিখ- ৮ মার্চ ১৯৮৩, প্রথম দশকে লেখালেখি  শুরু।
শিক্ষকতার সাথে যুক্ত।
কোচবিহারে থাকেন।

……………………………………………………………………………………
সুদীপ্ত চেয়ার টেবিলে বসে খবরের কাগজটা পড়তে পড়তে রমা চা টা টেবিলে রেখে
চলে যাচ্ছিলো। সুদীপ্ত রমার মুখটা হঠাৎ লক্ষ্য করলো বড্ড মলিন লাগছিল
রমার মুখটা। ও যে রমার মুখের দিকে কোনোদিন তাকিয়েই দেখে না, একটা দুটো
করে ত্রিশ টা বছর হয়ে গেল তারা একসাথে আছে। তবে দুজনের দুটো আলাদা
পৃথিবী। এইভাবেই ত্রিশ বছর যাবৎ রমা সুদীপ্তর সংসার সামলেছে, সেবা করেছে।
সুদীপ্ত কোনদিন রমাকে স্ত্রীর অধিকার দেয়নি। মুখ বুজে সব সহ্য করে সব কাজ
করে দিয়েছে। কোনো অভিযোগ না করে। আজ থেকে ত্রিশ বছর আগে দেখাশোনা করে
রমার সাথে সুদীপ্তর বিয়ে হয়, বাসর রাতের পরদিন যখন রমা স্নান সেরে ঘরে
ঢোকে তখন সুদীপ্ত লক্ষ্য করে যে এতো সেই মেয়ে নয় যাকে সে দেখতে গিয়েছিল।
এবং মনে মনে নিজের স্ত্রী রূপে কল্পনা করেছিলো, রমাকে দেখেই তো সুদীপ্তের
আকাশ ভেঙ্গে পড়ে।

রমাকে তখনি জানিয়ে দেয় তাকে তার স্ত্রী হিসেবে কোনোদিন তাকে স্ত্রীর
মর্যাদা এবং ভালোবাসতে পারবে না। রমার ইচ্ছে হলে বাপের বাড়ি চলে যেতে
পারে অথবা ভালবাসাহীন জীবন কাটাতে হবে। রমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লেও
সুদীপ্তের সংসারকে আপন করে নিয়েছিলো। তারপর সুদীপ্ত রমার কাছ থেকে জানতে
চাইলো ঐ মেয়েটি কে যাকে সুদীপ্ত কে দেখানো হয়েছিলো? রমা জানালো ওর নাম
'আশা'। আশা আর তার বাবা আমাদের বাড়িতে আশ্রিত নতুন বাংলাদেশ থেকে এসেছে
বাবা, অনেক সাহায্য করেছে ওনাদের। এদিকে আমি কালো, বিয়ের জন্য কেউ পছন্দ
করছিলো না। তখনি বাবা এমন একটা প্রস্তাব দেয় আমাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকার
জন্য তারা তখন না করতে পারেন নি। ভেবেছিলো একবার বিয়ে হয়ে গেলে সব ঠিক
হয়ে যাবে। রমা এও জানালো আশাও আপনাকে খুব পছন্দ করেছিলো, এই কথা শুনে
সুদীপ্তর বুকের ভিতর টা হু হু করে উঠলো।

এরপর থেকেই শুরু হলো ছন্নছাড়া জীবন কাটানো। আশার সাথে যোগাযোগ শুরু করলো
আশাও আর বিয়ে করতে পারলো না। চাকরি করে আলাদা ফ্ল্যাট নিয়ে থাকে। সেখানে
সুদীপ্ত মাঝে মাঝে রাত কাটিয়ে আসে। এই ত্রিশ বছরে তিন জনের কেউ সংসার
সুখ, সন্তানসুখ পেলো না। তিনটি জীবন ছারখার হয়ে গেলো। আজ যেনো ফিরে দেখা
রমার দিকে, আর মনে মনে ক্ষমা চাওয়া। রমাকে কতবার ওর বাবার বাড়ির লোক নিয়ে
যেতে চেয়েছিলো, আমার নামে কেস করতে বলেছিলো। তবওু সে কিছু করেনি, যার
জন্য রমার বাবার বাড়ির লোক ও অভিমান হয়ে আছে রমার উপর। আজ ত্রিশ বছর পর
ফিরে দেখে, কি পেলাম আমি? না একটা সন্তান, কি পেলো আশা? একটা সংসার না,
কি পেলো রমা? ভালোবাসা হীন জীবন। এভাবেই  এক অসময়ের ভেতর ঢুকে পড়তে থাকে
অসুখেরা।

No comments:

Post a Comment