Wednesday, February 28, 2018

কবিতা করিডোর ফেব্রুয়ারি সংখ্যা , ২০১৮

কবিতা করিডোর ফেব্রুয়ারি সংখ্যা , ২০১৮




সম্পাদকীয় :
শীত অনেকটা দূরে সরে গেছে । মনে মনে গুছিয়ে নিয়েছি শীতের পোশাক । ও মোর পোশাকি খাম গেয়ে ওঠো ফুল ও রঙের গান । জানি ফাগুনদিনে রোদ চমকে ওঠলে কৃষ্ণচূড়া ও রাধাচূড়া ফুটে উঠবে । কিছুটা পলাশের রং মেখে দিই তোমাদের গায় । এদিকে ভাষার জন্য সংলাপ উপেক্ষা করতে পারিনা । বরকত , রফিক ....ওরা সবাই যেন আমার আত্মার শরিক । বুঝতে পারি মায়ের জন্য অপুর মন কেমন করা । তোমার পায়ের কাছে কিছুটা ফুল রেখে দিলাম । মাতৃভাষার জন্য দুঃখ করবো কেন ? বইমেলা চত্বরে এতো এতো পাবলিশার্স , বই আলোর রোশনাই , মানুষের গমগম....সত্যিই কি ভাষার জন্য ? তবে হ্যাঁ লিটিল ম্যাগাজিনের সম্পাদকদের দেখে ভরসা হয় কি কষ্ট করে কতো দূর দূরান্ত থেকে শুধু ভালোবাসার টানেই তাদের ছুটে আসা । এসবের মাঝেও একটা দুঃখের আবহ থেকেই যায় । জানি কালের চাকাটা ঘুরিয়ে দেবার ক্ষমতা আমার নেই । তাই নিয়ম মেনেই এক একটি নক্ষত্রের পতন চাপা কান্নার সাথে মেনে নিচ্ছি । এভাবে ঘুমের দেশে টংঘরের কবির চলে যাওয়া মেনে নিতে কষ্ট হয় । কষ্ট আরও বেশি হয় যখন দেখি তাঁর শেষযাত্রায় শুধু গুটিকয়  মানুষের ভিড় দেখে । অবশ্য তাতে করে কবির কিছুই যায় আসেনি, বরং  এ আমাদেরি দৈন্য রূপ । কবিতা করিডোর পরিবার দূর থেকেই তাঁর প্রতি নিজের মতো করে শ্রদ্ধাটুকু নিবেদন করছে ।
প্রসঙ্গত বলে রাখি কবিতা করিডোর- এর এই প্রতিমাসে প্রকাশে যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে আমাকে সাহায্য করে যাচেছ তাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ । বিশেষ করে বাংলাদেশ বিভাগের ফারহানা রহমান ও উত্তর -পূর্বাঞ্চল বিভাগের  রাজেশ চন্দ্র দেবনাথকে অনেক ধন্যবাদ । ওরা না থাকলে আমার একার পক্ষে এই কাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো না ।


ধন্যবাদান্তে
শুভঙ্কর পাল

প্রচ্ছদ ও অলংকরণে : অনির্বাণ পাল 

সূচীপত্র : 

কবিতা ১ : রাহুল ঘোষ , শুভ্রদীপ রায় , সমিত ভৌমিক , অমিত দে , অনুরূপা পাল চৌধুরী , উদয়ার্ণব বন্দ্যোপাধ্যায় , সুপ্রিয় কুমার রায় , বিপ্লব সরকার , কমল সরকার , সুদীপ্ত মাজি , জ্যোতির্ময় মুখার্জি , বিকাশ সাহা , মিতালি চক্রবর্তী , অভিশ্রুতি রায় , রৈবতী ব্যানার্জি , সুলক্ষণা , দেবাশীষ বর্ধন , দেবারতি চক্রবর্তী , রঙ্গন রায়  , শুভ্র সরকার
গল্প : আফজল আলি

কবিতা ২ : নীলাব্জ চক্রবর্তী , সূরজ দাস , রাহুল গাঙ্গুলি , দেবাশিস মুখোপাধ্যায় , শুভময় সরকার , কুমারেশ তেওয়ারী , স্বপন রায় , প্রাণজি বসাক , বিশ্বজিৎ লায়েক , বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়

বিষয় নির্ভর গদ্য : গৌতম গুহ রায়

বাংলাদেশ বিভাগ : 
প্রবন্ধ : মহসীন হাবিব
কবিতা : ফারহানা রহমান , অপরাহ্ণ সুস্মিত  ,অনুপমা অপরাজিতা , জুনান নাশিত , নাজনীন খলিল , ফেরদৌস নাহার , রিমঝিম , মইনুস সুলতান , কচি রেজা , রাসেল রাহান , সালেহীন শিপ্রা , পিয়াস মজিদ , জাহানারা পারভিন , তুষার কবির , মাসুদুজ্জামান , তুহিন দাস , মিলটন রহমান , হাসান রোবায়েত , আসমা অধরা

ব্যক্তিগত গদ্য : প্রবীর রায় , অমিতাভ প্রহরাজ ,
অনুবাদ কবিতা : মানিক সাহা
উত্তর জনপদের গদ্য : সুবীর সরকার
মণীন্দ্র গুপ্ত স্মরণে : রমিত দে

উত্তর -পূর্বাঞ্চল বিভাগ : 
কবিতা---

রাজীব ভট্টাচার্য, বিজয় ঘোষ, আবু আশফাক্ব চৌধুরী, চিরশ্রী দেবনাথ, তমালশেখর দে, শতদল আচার্য, বিশ্বরাজ ভট্টাচার্য, হারাধন বৈরাগী, নীলাদ্রি ভট্টাচার্য, আশফাক্ব হাবিব চৌধুরী, নীলদীপ চক্রবর্তী, সৌরভ গোস্বামী, সুমন পাটারী, রাজীব মজুমদার, চিত্তরঞ্জন দেবনাথ, রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ, পিংকি পুরকায়স্থ চন্দ্রানী, অমলকান্তি চন্দ,

গুচ্ছ কবিতা---

অভীক কুমার দে, অনুরাগ ভৌমিক, অপাংশু দেবনাথ

আত্মস্বর কিছুতেই চাপা থাকে না : প্রদীপ চক্রবর্তী
ভাষা দিবস স্মরণে ব্যক্তিগত গদ্য : সব্যসাচী ঘোষ
কবিতা বিষয়ক গদ্য : অনিন্দ্য রায়
পাঠ প্রতিক্রিয়া : 
শুভঙ্কর পাল , সব্যসাচী হাজরা  , বেবী সাউ

**যাদের লেখা রাখা হলো সেক্ষেত্রে যদি কোন ভুল থাকে নিজেদের লোক বলে ক্ষমা করবেন । আর এখানে প্রকাশিত সবকটি লেখার দায় লেখকের । সম্পাদক কখনোই দায়ী নয়  ।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কবিতা বিভাগ :

মুখবন্ধ : 
মেঘের পাকস্থলী ও বাতাসার টংঘর...

দু'রাতে সাইবার ভাষা ছিঁড়ে জন্ম নিচ্ছে বালিকার কামশক্তি।আদিমতা বায়বীয় পদ্ধতিতে ছেঁটে নিচ্ছে জন্মের গন্ধ। শুকিয়ে যাচ্ছে কাকতাড়ুয়া কুয়াশা।আমরা সাংকেতিক খোঁজে বিলি করছি বিষ্ণুর আশীর্বাদ। শব্দের টুকরো ছিটিয়ে সাহসীকথার হাই তুলছি। বৈচিত্র্যময় ভূমিকা বিছিয়ে সংস্কারক  মেঘের পাকস্থলী ও বাতাসার টংঘরে হাতরে বেড়াই প্রশংসার কালশিটে দাগ।কাব্য চিতায় খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ফাটিয়ে গদ্যের শিরা উপশিরায় আজো বেঁচে আছে দশকের ধুমকেতুরা
         
          ----রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ
              আগরতলা, ত্রিপুরা


রাজীব ভট্টাচার্যের কবিতা :

পুণঃরাজা রাণী বিষয়ক 

মাথার উপর আশ্চর্য জ্যোতিচক্র
ঘুরতে দেখেছি উদ্বাস্তু শিবির থেকে
প্রথম অলৌকিক আলো দেখেছি বদ্ধ
সীমানা থেকে দূরে
তোমার রাজকীয় চামর দুলে
রেডকার্পেট রাতে বিলাস ভ্রমণে
অজস্র তারা খসে পড়ে
আহাঃ কী ফুলঝুরি আলো !

পরাজিত এক সৈনিক দীর্ঘ পথ হেঁটে এসে
তোমার রূপমদিরার শেষ বিষটুকু পান করে
অণু পরমাণুতে মিশে যায় ।

অর্থজয়ী রাজা নিপুণ কৌশলে প্রতিদিন
ভরে তুলেন তোমার ভাড়ার বৈভব
একটার পর একটা গ্রহ উপগ্রহ উপহারে
বিদেশী স্বপ্ন পালতুলে নৈশ টেবিল নৌকো হয়ে যায়
মিলিয়ন ডলারের সাথে সদাগরী  রমণ শেষে রাজা
অশ্লেষে লালাময় নিদ্রা গর্ভে চলে যান
তোমার জঠর ছুঁয়ে  ।

অন্যদিকে তুমি প্রতিরাতে স্বপ্নশিকারি হয়ে
ওঠো ঈশ্বরী স্পর্ধার মোহময়তায়
কাগজে কলমে কাব্যের পৃষ্ঠায়
ফাঁকা ক্যানভাসে কেবলই
'ময়না দ্বীপ' আঁকো আশ্চর্য মহিমায় ...
অলীক সে দ্বীপে কোনদিন যাওয়া হবে না
জেনেও পথভ্রষ্ট নাবিক ডুবে মরে যায়
আর তুমি দূর থেকে করুণা অশ্রুতে সিক্ত
কর তাদের ব্রাত্য আত্মা
ততক্ষণে ভোর হয়, পাখি ডেকে ওঠে
মুক্তির আনন্দে ,আকাশে ওড়ে যায়
এপার ওপার  ।

সকালের আলোর সাথে তোমার ঈশ্বরীয়
হাসি ছড়িয়ে পড়তে থাকে আনাচে-কানাচে
আমাদের ভাঙা ভাঙা 'ভুবন ডাঙায়' ... !

বিজয় ঘোষের কবিতা :

হলধরের বর্ণমালা কিংবা উনিশ-একুশের কথা




হলধরের বর্ণমালা একা একা হেঁটে যায় রাতের আঁধারে।
ভোরের আশায়।
অথচ যতটা সকাল সে চেয়েছিল পায়নি।
বর্ণমালার চেয়ে সত্য কিছু নেই।

উনিশ কিংবা একুশ দুটি বিন্দু পরস্পরের দিকে এগিয়ে এসে
একটি বৃত্ত রচনা করতে চাইছে

বৃত্তেরও বৃত্ত থাকে
যেমন অক্ষরের অক্ষর

 সংখ্যাটা চার পাঁচ কিংবা এগারো বারো ছুঁয়ে ছুঁয়ে দিগন্তে পৌঁছে যাচ্ছে

এ সব সংখ্যা মানেই এক একটা অক্ষর
যার এপার ওপার নেই-----

কেবল উনিশে মে
একুশে ফেব্রুয়ারি

হলধরের  বর্ণমালারা হেঁটে হেঁটে যায় আলোর দিকে।
অ-আ-ই-ঈ অনন্ত আকাশে পাখা মেলে।

আবু আশফাক্ব চৌধুরীর কবিতা :

ফুটন্ত অ-আ-ক-খ।



নীলাক্ষরে আঙুলের ডগা
লিখি নাম একুশের-উনিশের
হৃদয়ের নিভৃত কোণে বেধেছে যে বাসা
সেই পাখি ওড়ে গেলে পতিত পালকে
ভেসে ওঠে আমার আজন্ম ঋণ
লাল খুনে বিধৌত পরমপ্রিয়
বাংলা ভাষা....

ফুটন্ত অ-আ-ক-খ দোল খেলে
ভাসে জলে আকাশে হাওয়ায়
আমি তার অতন্দ্র প্রহরী
জন্ম জন্ম যুগ যুগ ধরি
স্মরণের সরণী জুড়ে অবিস্মৃত মাতৃভাষা
শহিদের দুর্দান্ত আত্মবলিদান
আজ খোলা মাঠে হেঁটে চলি
গড়ে তুলি হৃদয়ের বলয় বৃত্তে
অনন্ত সোপান।

দীর্ঘ কবিতা ...এক

চিরশ্রী দেবনাথ


এক প্রবল আলো এসেছিল, অবিশ্বাসী, ধুলোময়
আমাকে বলতে এসেছিল, আমি আছি, বিস্ফোরণে
আলোর মধ্যে দিয়ে গেলাম, লতানো নাগরিক সত্ত্বা
কেঁদেছিল করাতের বুক, তবে কি তারো আছে হৃদয়
 থমকে দাঁড়ালো মিছিল, মুখ নীচু করা অবয়ব
পাথর ভেঙেছে যারা, তাদের হাতে ফুটেছে জীর্ণগ্রন্থ
একটি পৃষ্ঠায় ঋতু ঝরে, অপর পৃষ্ঠায় বিকৃতি
প্রতিপালিত দাম্পত্যের মতো অভ্যস্ত রাতচূর্ণ
কখনো নির্নিমেষ তাকানো হয় না, গ্রীবাতেই পতন

সব ফিরে আসা যদি ভুলপথে ঘুরিয়ে দেওয়া যেতো
যেমন করে আকাশভর্তি নিম্নচাপ ভুলে যায়
নির্দিষ্ট সীমান্ত,
উচ্ছিষ্ট বস্তি হাসি ছড়ায় সাগর কিনারে,
অন্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ওয়াচ টাওয়ার
একবার যে চলে যায়, সে পায় বিরহের ঠিকানা
কত দুরন্ত বৃষ্টিতে লেখা হয়  ছাতা ভাগ করার গল্প

পুরোনো কথারা বেড়াতে আসে ঝিনুকের দোকানে
নিঃশব্দ বসবাস তাদেরও ছিল শক্ত ডানার নীচে
যেদিন থেকে ছড়ালো তারা অভিমানের বাজারদর
কেমন অনভিজাত ময়লা রঙ, গ্রাস করছে শ্বেত মুখ তার

আত্মগত হবার আগে ছেয়ে  যায়
 ধূপগাছে ভরা পাহাড়ী জনপদ
আগুনের গল্প শোনেনি তারা শুধু ভাঁপে জ্বেলেছে নবান্ন
পিঠে পাতে ভুলে যায় চাঁদশিশু ,
তার হাতে আছে পূর্বজন্মের নারী ও অস্ত্র
এতটা সরল জলও কখনো হয়নি,
অন্তরে রেখেছে শৈবাল ষড়যন্ত্র

এখানে হাজার হাজার মিথ্যার বারংবার চাষাবাদ
মেঘলা দিনে কালো ফসল জাগিয়ে রাখে
প্রতিহিংসার গুচ্ছ গুচ্ছ শীষ
হৃদয়ের কথা লিখতে পারা দেবদূত রেখে দেয় কলম
ঝকঝকে সবুজ ছুরিতে সে অগ্রন্থিত সময় কাটে
সাদা পাতায় অবিশ্রান্ত বিরোধ আঁকে
মৃত্যুুর কাছে থেমে থাকা তরুণী হাসতে থাকে
কত অপমানে অবশেষে সে সোনা হচ্ছে, জ্বলছে প্রদীপের মতো

 অসমাপ্ত দীর্ঘ স্তবকের সেগুনবাগিচার ছায়াঘন আশ্রয়
যে সুরে বিউগল বাজে, তার কাছে চেয়েছে নীরব প্রতিবাদ
বিন্দু বিন্দু ত্রাস জমিয়েছে অদৃশ্য সাগর ঝড়
অভ্রান্ত দিকনির্দেশনায় সেও জানে এসব কিছু নিতান্তই সস্তা
মুক্তো ব্যথা নিয়ে যে ঝিনুক তুলে দেয় আপনপ্রাণ ডুবুরীর কাছে
কন্ঠ জড়িয়ে থাকা মুক্তাসমূহ জানে শুধু  বিষাদ আর   নীল উল্লাস

প্রতি অপমানে স্নিগ্ধ হই, জ্বেলে দিই হোমের আলো
জ্বলতে জ্বলতে প্রলম্বিত অগ্নিকে দেখি কলমের মতো
ফিরে আসি, ফিরে আসি, অক্ষরের কাছে,
আরো কাছে, বার বার, বার বার, প্রত্যেক বার।

দাম্পত্য 

তমালশেখর দে


তার কাছে যেতে ইচ্ছে করে,
ইচ্ছে করে- - তাকে ছুঁয়ে বলি,
'এসো না - হুইলচেয়ারটা রেখে,
কোথাও একটু হেঁটে আসি, যেখানে ঘাসের সাথে ঘাসেরা কথা বলে !'


তোমার শহর

শতদল আচার্য


তোমার মনখারাপে লাল রঙ কোথায় যেন লুকায়

তোমার চোখের বৃষ্টি চেয়ে যায়

 গানের কথার আড্ডা  মিস করি  ।

তোমার তানপুরার সুরে,

 এ শহর আর আগের মত জেগে উঠে না...

ম্যাজিক

বিশ্বরাজ ভট্টাচার্য 


ঝিলাম, কাল মেঘপাহাড়ে চড়ে
 অপলক তাকিয়ে দেখেছি তোমায়,অনেকক্ষণ।
ওই দূরে তখন ছোট্ট পাখি
বানাচ্ছিল বসন্তের সিম্ফোনি
মুহূর্তে ভুলে গিয়েছিলাম
বরফ দিয়ে সিগারেট ধরানোর ম্যাজিক।

আসলে বসন্তকাল  বড্ড বেহায়া ঝিলাম
প্রতিবার তোমায় প্রেমিকের মত সে
ছুঁয়ে যায়...


বারণ করা সত্ত্বেও!

জুড়িনারী-তৈংতুইয়া

হারাধন বৈরাগী 


জুড়িনারী-লংতড়াইরেঞ্জের একটি ছড়ার নাম

তৈংতুইয়া-ছড়া জড়িয়ে থাকা পাড়ার নাম

একটি ভালবাসার-অন্তঃক্ষরণেরও নাম


একজন আরেকজনকে ছাড়া-ভাবতে পারে না

একজন আরেকজনকে ছাড়া বাঁচতে পারে না


একদা বুরাসার কোপে-লেবাঙবন্যা আসে

জুমের ফলন-কোরকেই নিকেষ করে

ওলাওটা শ্বাস ছাড়ে-তৈংতুইয়া জুড়ে

ভারী হয়ে ওঠে- জঙ্গলের শ্বাস


তৈংতুইয়া হারিয়ে যায়-অবশেষ

পালিয়ে বেড়ায়-ইতিউতি পাড়ায় পাড়ায়

জুড়িনারী-বিরহব্যাথায় কসমতিতে ডুবে


লংতরাই জুড়ে-জীবনজুয়াড়ি শোনতে পায়

"জুড়িনারী তৈংতুইয়া-সাপো কাকুইয়া

তংতো মাইনাইয়া"-জুম্মনারী গেয়ে যায়


*সাপো কাকুইয়া--তংতো মাইনাইয়া--একটি গান-নাগনাগিনার মতো একজন আরেকজনকে ভুলে থাকতে পারে না।


ধুলো

 নীলাদ্রি ভট্টাচার্য 


ফুটপাতে থেৎলানো মানুষের ঘাম
আমি চুপিসারে তার ছায়ায় আগুন মাখি|
ভাতের বাষ্প ঘাড় গুঁজে খোলস দিয়েছে আমায়
আমি তখন সমস্থ অভিঘাতে অভাবগ্রস্থ  কবি|


ইসিজি
আশফাক্ব হাবিব চৌধুরী।

ক্যানভাসে যত ধারা পর্বতমালা হবে
জীবন ততটাই স্বতঃস্ফূর্ত...

সেদিনের ইসিজির ব্যাখ্যায়  ওষধি কলম
আঁকলো হুবহু এমন লেখচিত্র।


তোমার কথা

নীলদীপ চক্রবর্তী

তোমার শরীর থেকে ঝরে পড়া ঘাম
তোমার মুখ থেকে নেমে আসা রক্ত
তোমার দুচোখ বেয়ে বয়ে যাওয়া জল
তোমার কথাগুলো ভীষন শক্ত !

তোমার শক্ত হাতে পড়ে  যাওয়া কড়া
তোমার চোখের নিচে জমে ওঠা কালি
তোমার পাঁজরের হাঁড় দারুন স্পষ্ট
তোমার অনেক টাকা? সেগুড়ে বালি !


প্রশ্ন

সৌরভ গোস্বামী 


পূর্বপুরুষের রক্তের দাগ লেগে থাকা কাঁটাতারের নাম স্বাধীনতা,
নেতার মিথ্যা ভাষনের পর প্রতিবাদের কন্ঠের ডাকনাম স্বাধীনতা,
শিক্ষার আলোয় একটি মেয়ের হাতের কলমে বাংলাক্ষরের নাম স্বাধীনতা।
স্বাধীনতা আমার-তোমার পেটেন্টের দলিল নয়,
ঐ নদীর ধারের বালুরাশির উপর চাঁদের আলোর
বিকিরন সেটাও ধরে নিতে পারো স্বাধীন-তা।
আবার মাছ ধরতে যাওয়া নেংটা ছেলেটার উচ্ছাসে বর্তমান প্রতীক রুপে।
বরফাবৃত ভূমি থেকে মরুদ্যানের ক্যাকটাস স্বাধীন সবাই,
তবু তার পরেও
পথের ধারে চার শিশুর এক থালে ভাত খাওয়ার লড়ায়ের নাম
জানো কি?
নির্মম গুলিবিদ্ধ সৈনিকের দেহের নাম জানা আছে কি?
বছরের পর বছর যায়,
টাকশাল টাকার পর টাকা ছাপায়,
তাহলে জানো কি দাড়িদ্রের শেষ ঠিকানা কোথায়?

সংসার 

সুমন পাটারী


আমি পারতাম, আচ্ছা বেশ--

এদিকে আসুন, এই আমার আর্তনাদময় সদর দরজা,
পা রাখুন, গা ছমছম করছে!
না, সামনে আসুন, এখানে এটা গোবরস্তুপ,
গন্ধ নয় আতর, আরেকটু আসুন,
এই এখানে আমার রান্না ঘর,
চুলার ধোঁয়া, প্রায়ান্ধ মার ইন্দ্রিয়,
কেঁচোর আখড়া,

এখানে ইটের স্তুপ,
এনে রেখে দিয়েছি দুবছর হলো, ঘর হয়নি,
আরেকটু আসুন, ওনাকে দেখে ভয় পাবেন না,
পিসিমা, জন্মপঙ্গু,
ভয়ঙ্কর শব্দে কাঁসছে বাবা,
ওদিকে যাবেন না, চ্যালা চ্যালা কফ, মাঝে রক্ত,

এদিকেই আসুন, এই আমার ঘর,
এই বন্ধন ব্যাঙ্কের সাপ্তাহিক বই,
রগরগে চোখে বলছে কাল শুক্রবার,

এগুলো দেখবেন না,
বন্দী আমার যৌবন বিলাস,
ঝলসে যাবেন এতো তাপ,

মায়ের গয়না নেই,
বেঁচে বোনের বিয়ে দিয়েছি,
ওনাকে বানিয়ে দেওয়ার স্বপ্ন
ঐ পিতলের তালায় আটকে রেখেছি,

এখানে জমি বন্ধকের কাগজ,
এখানে, সুদ। আসল ধানক্ষেতে।

জানালা খুলবেন না, দানব ঝিঁঝিসুর,

এই আমি মিছিলে যেতে পারিনি,
এই আমি বন্যা দূর্গতদের জন্য কিছু বলতে পারিনি,
এই আমি আপনার স্তাবক হতে পারিনি,

পার্টি অফিস, এই আমির জন্য কোনো অর্থ রাখছে না
কারণ বাবা ও পিসির ওষুধ, মায়ের গয়না আমাকেই করতে হবে।


রাধা 

রাজীব মজুমদার


পায়ের ছাপ রেখে গেছো
বকুল তলায় ...
পরজনমের রাধা তুমি
গতজন্মের সঙ্গম শর্তে
প্রতিজন্মে জাতিস্মর বানাও |


সালমা সরণি

চিত্তরঞ্জন দেবনাথ

এই রাস্তার নাম পাল্টে দিয়েছে সালমা
হ্যাঁ। আমি ঠিক বলছি।

কী অদ্ভুত মেয়ে সালমা আক্তার!
নাম রাখতে গিয়ে হয়তো ভাবেনি ওর আব্বু
এই মেয়েটা আস্ত আগুন খেয়ে আগুন উগলে দিতে পারে
নিজের অজান্তে নিজেকেই উড়িয়ে নিয়েছে ও ঝড়ের বেগে
ফুঁত্

কোন ভাবেই ওকে আর ফিরিয়ে আনতে পারছে না কেউ
মেয়েটা গায়ে আগুন মেখে
ঐ দিকে মিশে যাচ্ছে
একটু একটু করে ও অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে
নিভে যাচ্ছে।নিভু নিভু সালমা।
অস্পষ্ট  সালমাকে আমি স্পষ্ট দেখছি--
ও ক্ষয়ে যাচ্ছে

কেন বেমালুম আগুন মেয়েটাকে
চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছে
হে ব্রহ্মা...
অভিমানে দুর্বোধ্য ছাই উড়িয়ে দিচ্ছে আমাদের দিকে
শুধু ছাই।

দূরের বর্ষাবন, এতো এতো কুঁড়ি,  ফুল, পাতা
এভাবে পুড়ানো অনভিপ্রেত ছিল, অন্যায় ছিল
ও কি জ্বালিয়ে দিতে চেয়েছিল এত্ত সব?

সালমার ওড়া হলো না আর
আগুন খেয়েছে ওর কৈশোর
ওর জ্বলন্ত ডানা পুড়ে দিচ্ছে
আমাদের ধর্মগ্রন্থ
আমাদের ভালোবাসা
আমাদের বর্ষাবন
আমাদের উর্বর পৃথিবী

ছাই নেড়ে নেড়ে আমাকে লেখা সালমার শেষ চিঠির
যে কথাটা  উদ্ধার করেছেন অত্যুতসাহীরা
''চিত্ত, তুমি হিন্দু আমি মুসলমান''
................


১২ বছরের কালঘুম

 রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ 

মেঘের মুখ খুলে দাও আজ
নেমে আসুক অপমানের ঘাম
১২ বছরের কালঘুম ভাঙিয়ে
লিখে রাখি অসমাপ্ত বদনাম
প্রেমের নামাজে পাপ ছিলনা
ছিলনা রক্তে বর্বর চুম্বন
আদিম বানে কেঁদেছি সারারাত
ধোঁয়ায় উড়িয়ে বৈষ্ণবী মন
ছুঁয়েছি শ্মশান পাড়ায়
ক্ষত বিক্ষত অসতী ঠোঁট
যে আচল ছিলনা আমার
সেই কেড়ে নিল সমস্ত প্রতিশোধ
তুলসি তলায় মাটি ফুঁড়ে
ছিল যত ব্যথা
সযত্নে পুঁতে রেখো
এক জীবনের শেষ কথা

সত্যবচন

 পিংকি পুরকায়স্থ চন্দ্রানী


মাঝে মাঝে কবিকে লুকিয়ে রাখতে হয়,
নইলে মৃতদেহ হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেড়ে যায়।
ভর দুপুরে নিজের আত্মাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখতে হয়,
নইলে অপরাধের কালো সাপের বিষে ,
ঢলে পড়ার দিন খুব তাড়াতাড়ি চলে আসে দোরগোড়ায়।
বাঁচতে হয় গান্ধীজীর সেই তিন বিখ্যাত বাঁদরের মতন।
চোখ কান মুখ বন্ধ করে,  নইলে কেউ না কেউ দয়া করে,
শ্বাসটুকু ও বন্ধ করে দিয়ে যায়।
আসলেই কি বিচিত্র এই দেশ সেলুকাস,
রঙ্গমঞ্চের বেশভুষায় জীবন কেটে যায়।


সকাল 

অমলকান্তি চন্দ


লতানো লাউয়ের সোহাগী ডগায় জড়িয়ে থেকে থেকে
কত অচেনা পাখীরা ভীড় করে এবেলায়
ঘুঙুর পায়ে নাচতে থাকে ভোরের বাতাসে।

বাতাসেরা লাউয়ের মাচানে মাচানে
এগাঁও ওগাঁও ঘুরে বেড়ায় তোমার সাথে।

পাখায় লুকানো  মুঠো মুঠো আলো
ছড়িয়ে দেয় গাছেদের মাথায়।

তোমারই করতলে একলা আকাশ
ঘোমটার আড়ালে সকাল ,
কলসী কাঁখে ছুটে যাও জলের ঘাটে।




গুচ্ছ কবিতা :

ল্যাবরেটরি


অভীক কুমার দে


একটা পৃথিবী ইতিহাসের পাতায় ঘুমিয়ে
মাটি ঘেঁটে ঘুমপাড়াতে আসে কোন গবেষক,
সেই পৃথিবীর মুখোমুখি হলেই
কেমন বোকা বোকা আদিম চোখ
আমাকেই খোঁজে ইতিহাসের ভেতর।
.
আরেক পৃথিবীর জলন্ত মুখ
বাতাসের কাছে রেখে গেছে ওরা,
একটু একটু করে ঝলসে যাওয়া ভেতর
কাঁচাদৃষ্টি
রোগাক্রান্ত সময়
আকাশের নিচে রঙিন স্বপ্ন আঁকে।
.
বিকলাঙ্গ ভ্রূণের ক্রমবিবর্তন দেখে
প্রশ্নচিহ্নে ভাঙাবুক অবশেষে লুকায় নথি।
..........
কষ্ট


চোখে জল এসে চলে গেলে
তেমন কষ্ট হয় না,
কষ্ট হয় তখন--
যখন চোখ থেকে জল উল্টো বয়,
ভেতরবুকে নেমে আসে
এসিড বৃষ্টির মতোই,
প্রতি ফোঁটা জল
নরম কলজেটা ফোঁড়ে,
কেউ দেখে না
কেউ শোনেও না
যদি না জ্বলে যাওয়া খবর
মুখের আয়নায় ছবি হয়।

চোখে জল এসে চলে গেলে
তেমন কষ্ট হয় না,
কষ্ট হয় তখন--
যখন সব জল উল্টো বয়ে যাবার পর
শুকনো চোখ আলো ভুলে
চেয়ে থাকে নিষ্প্রাণ ভেতর।
............

আমি পথে পথের ছায়ায়



গুহার ভেতর আমি।
একদিকের প্রবেশদ্বার সামনের দিকে
অদ্ভুতুড়ে শুয়ে এক কাঙাল পথ
অন্ধকার মেলে ধরেছে পথে।
.
সামনে বহুদূর, হতে পারে অসীম।

দুপাশে কংক্রিটের বুক
গোলাপকাঁটার মতোই প্রহরী,
মাঝে গা ঘেঁষা অন্ধকার
পায়ে পা রেখে হাঁটছে প্রেমিকের মতোই
ছন্দ জানে,
জানে-- সামনে অজানা পথের দূর।
.
অনেক চলার পর যদি গুহামুক্ত আমি,
যখন কংক্রিটের দু'পাশবুক আর গোলাপকাঁটা নয়,
তখনও কালো থাকে
গুহাজীবনের ছায়ায়।

হয়তোবা আলো দেখি
যেখানে গুহাপথ শেষ,
যখন অশরীরী আলো অপ্রয়োজন
.
জীবন আবার গুহামুখে আসে এবং
আমি পথে পথের ছায়ায় ।
...............

তরল সংকেত 



নিঃসঙ্গতাকে ভালোবাসি না বলেই
তোমার ভেতর সঙ্গী খুঁজি, ভেতরে যাই,
যতই যাই নিঃসঙ্গ আরও আরও...
অজানা অন্ধকার,
আঘাত আর আঘাতের অপেক্ষা,
মোড়ের পর মোড়, তবু মনে হয়--
আঘাতেও সুখ তোমার রোদ বৃষ্টি ছায়ায়।

কখনো আবার বিদ্রোহ দেখি শরীর আর নিঃসঙ্গতার
আনুপাতিক গণনায় ভেতর ভেতর
তুমি আমি কোনো অসময়ের কাছাকাছি।
তুমিও জানো ভেতরে কোন নীল তিমি ডুবে নেই,
ডুবে থাকে ভাবনার অসম যত আচরণ,
বৈশিষ্ট্য অথবা অবশিষ্ট সব এভাবেই তোমার ভেতর
নিঃসঙ্গ হতে হতেই অবসাদ
ঢলে পড়ে একেকটি মরণ
হয়তো তুমিও দেখো, অন্যভাবে।

জানি, তুমিও লাশঘর হতে চাও না,
সঙ্গী খোঁজো,
আরও গভীরতায়
এমন চলন থেকেও জেগে ওঠে কোন গোপন ঢেউ,
জোয়ারে লুকায় জীবনের তরল সংকেত।
............

অভাবের লু



আমার বসন্ত নিয়ে গেছে অভাবের লু,
মটকা পড়া শরীর এখন মরুপথেই হাঁটে
বুকের ভেতর গোছানো আকাশ,
মেঘ এসে জমা হয়,
সবটা আকাশ ঢেকে দিলে
উষ্ণতা বাড়ে;
যতসব মিথ্যে প্রতিশ্রুতির কালো ছায়া।

ললিতসুরে ডেকে ওঠা ভোরের কোকিল
মুকুলবৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া চাতকের চোখ
রঙিন পলাশের ছবি আঁকে না এখন,
উড়ে উড়ে দূরে যায় মেঘের বিনুনি
বিশ্বাসী মাটি খোঁজে,
পিছে পিছে বালিয়াড়ি;
ভেসে ওঠে হতাশার মরীচিকা।



অনুরাগ ভৌমিকের গুচ্ছ কবিতা

(এক)

অন্তর্গত,তবু হাহাকার আছে
ফুলের দীর্ঘশ্বাস মায়া
অন্ধকারে,
গল্পের আলোয় কিছু কাচপোকা
প্রেম নিবেদন, আত্মবিস্মৃত সুর...

(দুই)

ইশারা বুঝিনি, বুঝেছি মুহূর্তের সুখ,
পৃথগন্ন প্রেম, সঞ্চিত আনন্দ,
তল জল,ঝাঁপাতে ততপর-
তুমুল সম্পর্ক,সরু শীতের পথে...

(তিন)

এসব লক্ষ্মী-নাচ,শহর থেকে গ্রাম,
চোরা নীতির টিকি ধরে থাকে হাত।
হিংসার আলোয় গা ভাসায় কবুতর,
সজাগ পা জানে কীকরে আঁধারে হাঁটতে হয়...

(চার)

এই প্রকাশ কে অস্বীকার করা যায়না,
কিছু শব্দ দাও,ছড়িয়ে দিই আকাশে।
কিছু দিয়ে রচনা করি নৌকো,
চলে যাই জোছনা বিছানো বাঁকে...

(পাঁচ)

অন্য পারে সুখ, কবিতা উড়ে যাও,
আমি শব্দ হন্তারক,
অনটনের সংসার,
হাড়িতে ফোটাই উদ্বাস্তু প্রেম...

(ছয়)

প্রহেলিকা,ঝাপসা জিজ্ঞাসা,
যদিও চুম্বকের মতো সুন্দর।
রঙিন শব্দেরা পাখা মেলে-
উড়তে উড়তে ক্লান্ত হংসী স্বপ্ন-দ্বারে...

(সাত)

রূপ ও রঙের সংসারে আমি দৃষ্টিহীন,
রতিশাস্ত্রে পাকা হবে এই আশায়-
বুক দেখায় দেশীয় পাখি।

এভাবে দুপুর বর্ণনা করে ক্লান্ত এক মাঝি...

(আট)

দক্ষ, স্বপ্ন সঙ্গমে,
নিরপেক্ষ আনন্দ গুনে,দেবী।
এ রস মায়া, উড়ন্ত বক,
শ্যামবর্ণা,রাত্রি-ফুল...

(নয়)

প্রেমের বীভত্স শাসন
বলোনা,
মন্দিরের দেহ ভেঙ্গে গেলে-
পড়ে থাকে অসহায় পাথর গুলো।
তুমি প্রতিচ্ছায়া মাত্র,এই আলোর বিপরীতে...

(দশ)

মাপকাঠি নিয়ে এসোনা,
এই উদ্দমতা নদীর দিকে যাক।
দেখো, স্ফূর্তি শাস্ত্রের নিষিদ্ধ ফল-
সজীব আচরন ফেরী করে...


অপাংশু দেবনাথের গুচ্ছ কবিতা 

পরীক্ষা ও ছায়াসংকট



--------------------------

প্রতিদিন মানুষ নতুন একটি পরীক্ষার মুখোমুখি হয়।


মিছিল করেই ছত্রাকারে ছড়িয়ে পড়ে আপন মায়াবন থেকে দূরে,

সংকট ও সম্ভাবনা নিলয়ে বহন করে পৌঁছে দিঘল পরীক্ষামুখী।


সাঁতার জানেনা কেউ,কেউ জেনেও ডুবে মরণ দেখে  সন্নিকটে।

গায়ে, মাখে পঙ্কিল-পারদ।

পারদ ও জল এক নয় জেনেও নির্মল জলগামী হতে পারে কোথায় মানুষ !


ওই দূরে, প্রতিপদক্ষেপে সংকটে রাখে ক্লান্ত পা,

সেও কি জানে একদিন বৃষ্টি এসে ধুয়ে মুছে দেবে সব অম্লঅহংকার।

সকল অহম মাটি হলে তুমি তখন দাঁড়াবে কোথা?

বালি বালি ছায়ার সড়ক ভেঙে ভেঙে ভরাট করবে

সকল শূন্য খয়েরিখাদ।

কেউ চিনবে কি বলো বটবৃক্ষ-চক্ষু খুলে, তুমি তখন অসীম আলো,

প্রণয়িনীর সকল ভাষা ভুলে নির্জন সে, ছায়াসঙ্গীত রচনা করে যাবে মস্তক উন্নত করে।


প্রেমহীন কোনো বৃক্ষ বাঁচেনা খুব বেশীদিন

জলহীন হতে পারেনা কোনো ছায়া সঙ্গীত।


ঈশ্বরের দরবার বলে কিছু নেই যা কিছু এ বন ও মানুষের মায়ায় সাজানো রকমারি ছায়াসংকট।

.....

বরং চলো

--------------------------

বরং চলো একটু ঘুরি বন্যাজলে,

ডুবন্ত সে ধানের ক্ষেতে একটু শুনি

বীজের কথা।


নয়তো চলো শহর ছেড়ে অন্য কোথা।

কিংবা চলো মেঘের দেশে বৃষ্টি আনি গুমোট পথে।


শিকল ছিঁড়ে উদোম গায়ে ছুটতে থাকি

থাকুক তবে ছল চাতুরি পায়ের কাছে মগজ খুলে।


মেজাজ খুলে রাখতে পারি

ইচ্ছে হলে ধারণ করে কে আছে আর?

পাথর গুণে রাখছি তবে

বুকে আগুন জ্বালিয়ে রাখি হঠাৎ যদি ইচ্ছে করে

এসো তখন শীত দুপুরে,

সকল কাঁটা তারের বেড়া ছিন্ন করে।

খোলা মাঠেই ছড়িয়ে দেবো

মনের মতো সেঁকতে পারো

তোমার বুকে মরতে থাকা বেলুনগুলো।

আর কতো যে খেলবে খেলা

পক্ষীবেলা আর কি আছে উড়ান দেবে?


বরং যদি মানুষ হতে

ঘুরিয়ে দিয়ে স্রোতের ধারা

তোমার সাথে স্বপ্নগুলো  নিতাম তুলে ফল্গুরাতে।

ফড়িং ওড়ে বুকের মাঝে

তুমি তখন আকাশ দেখো

সিঁদুরে মেঘ আসছে ধেয়ে অহম-নায়ে---


.....

মনে করো


------------------------

ইচ্ছে করলেই তো মানুষ পারেনা ঘুমোতে!

বলতে পারেনা কোন্ ঘুম প্রয়োজন তার।


মুদ্রা বদলে যেতে দেখেই, তোমার নয়ন

পদ্মফুল হয়ে ভেসে আসে চোখের তারায়।


সকল ক্লান্তি,মোহ, ঘ্রাণ আমার রোদের মেঘলা

দিন।মাটির দিকে তাকিয়ে জেনেছি এবেলা,

বুকের ভেতর এক পাখি ডানা মেলে ওড়ে---

রঙীন দরবারে পালকে সোনার ফসল

তুলে, রাত্রির সঙ্গীতে লেখে উজ্জ্বল প্রভাত।


আমি সেই প্রভাতের দিকে কান পেতে শুনি

মাথার উপর মাদলের মৃদু রণধ্বনি।

এমন দ্বিচক্র যান ছুটে তোমার ছায়ার

দিকে,বৃক্ষের কাছে বলেছি সব ছায়া নিয়ে

প্রান্তরে ছড়িয়ে দাও, শুধু, অকৃপণ রোদে

জ্বলে যায় ঘাসেদের বুক, আমি ঘাস হয়ে

আদিম স্বপ্নেদের তুলেছি জাগিয়ে নীরবে।


স্বপ্নরা এখন আমাকেই টেনে তুলে রোজ,

কিছু স্মৃতির কোলাজ এসে বাথরুমে বসে

খোলা চুলে,বুকে লিখে যায় রক্তিম প্রণয়।


শঙ্খচিল হই, দেখি, ভেজা ভেজা তট।


এ চরেই দাপুটে দুপুর লিখেছে কখনো

আমাদের বিরহ-বিবাদ,প্রহরীর পর

দরোজা পেরিয়ে গেছি ওই সিংহদুয়ারের

সোনালি সাগরের নিকটে।সেই ঢেউ তুমি,

তরঙ্গের পর উচ্ছ্বাস তুলে কাঁপিয়েছো এই

মৃত্তিকার তৃষিত হৃদয়। অত:পর সুর

জাগে,কখনো সন্ধ্যায়, ভোরে,সৃষ্টির প্রান্তরে,

সড়কে। এ নগরের পথে দেখেছি প্রণয়

অপেক্ষার এলোমেলো ধুলো ফুটপাথ জুড়ে।


রঙীর পালক ওড়ে যদি মাথার উপর

মনে করো বিশ্বাসে জাগি রাত্রির প্রহর।


.....
উজ্জ্বল দিনের কাছে


--------------------------

উজ্জ্বল দিনের কাছে ঘাম বন্ধক রেখে ছুঁয়ে এলাম তোমার হৃদয়।

হেঁটে দেখে এলাম গণকবরের ঘাট।

কবর থেকে কেউ উঠে এসে বলবেনা রৌদ্রের প্রখরতা কতোটা প্রবল।


এভাবেই হাঁটতে হবে আমাকে।


ফিরে এসে কেউ কেউ অকারণ লাটিম ঘুরাবে বুকে,

অথচ তাদের চেয়ে বেশী ঘামতে হয় আমাকেই।

ঘর্ম ও বিষাদে জেনে নিতে চাই কতোটা রোদে,

যে কোনো কর্মীর শরীর থেকে ক'গ্যালন ঝরে তরল।


ইচ্ছে করলে না-কারণেই মাথার উপর পারতাম ছুটাতে হাওয়া

বাইরে হাওয়া পাবে কোথায় বলো ভেতরের স্রোত থেমে গেলে?


প্রতিবার ভিড়ে মিশে যাই, ভিড় ছাড়া এতো

এতো মানুষের হৃদয়ের শব্দ শুনবো কোথায়?

এতো মানুষের সঙ্গ পাবো কোথায় বলো?


একটি জমায়েত ভেঙে গেলে শূন্য চেয়ারে লেগে থাকে অতৃপ্তির ছায়া।

এমন ছায়ার দিকে যেতে পারে ক'জন বলো?


অনেকেই আলোয় খুঁজতে পারে ফাঁড়িপথ।

পায়ে মেলাতে পারে পা ক'জন!

আমাকেই ছায়া খুঁজতে হবে তোমার জন্য যতোই ছড়াও আগুন---

......

ছটফটানি ও বিধর্মী-শরীর


--------------------------

এতো ছটফটানি হচ্ছে কেনো!তার আগেও তো লাশে,

ফেঁপে ফুলে পুঁজ রক্ত বয়ে গেছে কৃপণ নদীর

জল,

দ্রুত সনাক্ত করো আমাকে, বন্ধ হয়ে আসছে নি:শ্বাস

ওহে সময় আমার,মাথার উপর নক্ষত্রেরা ঘুম ভেঙে চেয়ে আছে।

গাছের টুকরোর মতো পড়ে আছি পথে।

দেখো---তোমাদের যৌথ এই মালিকানা, ইচ্ছে-আগুনের

তাপে, পুড়ে জ্বলে গেছে বলে, আমাকে সনাক্ত  করো প্রজ্ঞা,

দুর্গন্ধে ছেয়ে যাচ্ছে অরণ্য,তরল-সময়ে অন্য কিছু

ভাবার কথা নয় আমার।


এসব কান্নারা আমাকেই কেন ঘিরে ধরে মন্দিরের

নব-নির্মীত সিঁড়িতে।

অমনি আজান ধ্বনি বাজে,

অথচ হাওয়ায় সকল আহ্বান ম্লান হয়ে আসে


অকস্মাৎ আমি ঢুকে পড়ি মেঘের ভেতর, স্তরে স্তরে,

 নরশরীরের ভাঁজ গুণে নেয়া য়ায়, পূর্বে এসেছিলো যারা

তাদের কাম ও শ্বাপদীয় দন্তচিহ্ন স্পষ্ট

অভিমানে মেঘ ঝরে পড়ে লাশেদের মুখে।

ধর্ম বালিয়াড়ি হয়ে দূরে,চিক চিক করে

যেন অনাদি কালের সেই

মরুসৈকত।ভ্রমে তৃষ্ণার রকমারি ঢেউ ওঠে বুকে।

এতো ছটফটানি হচ্ছে কেনো সময়ের দাবানল বুঝি!


পৃথিবীর চারিদিকে ভেসে যায় আমার বিধর্মী এ শরীর!
রাহুল ঘোষের দুটি কবিতা 
সেরা 

এক কামড়ে গ্রামটা শহর হয়ে গেল।                                                                                                                 বন্ধুরা সব বন্দুক হয়ে গেছে আজ।

বাড়ির পরিবেশ ভদ্র হয়ে ওঠেনি এখনো!                                                                                                         সবাই আমরা ভালো থাকতে চাই।                                                                                                                   আমার স্মৃতিতে –                                                                                                                                    তুলসীগাছ হওয়ারও জায়গা নেই আজ।

হাতে হাতে পৌঁছে যাব একদিন                                                                                                                      আমরা যারা ভালো,আমাদেরই ঝড়                                                                                                                         সব ভূত ঘুরছে চারিপাশে,                                                                                                                             সায়নীর গা থেকে দুধের গন্ধ ওঠে এখন।

আমি আর চা খেতে চাই না।

বিসম্বাদ

কখনো কখনো নিজের পা ছুঁয়ে দেখতে                                                                                   
                                     ইচ্ছে করে।                                                                                                         রাতের আকাশে মেঘ বোঝা যাচ্ছে না।                                                                                                                 আমরা অপেক্ষা করে আছি                                                                           
                                    সবার জন্য।

কিছু সহজ হয়না আর                                                                                                                                   কঠিন হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ                                                                                                                            ছোটবেলার রবারের গন্ধ

কালো কালি থেকে হঠাৎ নীল কালি                                                                                                                                          হাতে পড়ে গেল আজ।
শুভ্রদীপ রায় 

কবিঃ আমার নিজস্ব হ্যালুসিনেশন

কবি চরিত্রটা একটা hallucinatory object. আমার নিজস্ব delirium থেকে সৃষ্ট Mr. Jekyl. তাকে কেউ দেখেনি আগে, কেউ চেনেনি কোনোদিন। তবু চতুর্দিকে তার উপস্থিতির সুবাস। আমার যাবতীয় anti-matter পুঞ্জীভূত হয়েই তার অবয়ব ধারন। যেই যেই মুহূর্তে আমি অন্ধের অভিনয় করি, ঠিক সেইক্ষনে সে চক্ষুস্মান হয়ে ওঠে। মাঝে মাঝে ভাবি, সে আমারই alter-ego -- ইষৎ crooked. খুব গুঢ় কৌশলে আমার উপস্থিতিটাকে দখল করতে চাইছে নিজের সর্বজনগ্রাহ্য appearance দিয়ে। ধীরে ধীরে জড়িয়ে যাচ্ছি তার বিছানো চ্যাটচ্যাটে জালে-- অষ্টপদ বিস্তার করে কবি দ্রুত এগিয়ে আসছে আমার অস্তিত্ব আত্মসাৎ করতে।

আমার ঘর সংসার,বন্ধু বান্ধবী, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট-- সবার প্রতি তার অদম্য ঘৃণা। পরিচিত প্রতিজনকে বেছে বেছে সে বন্ধুত্বের কুহক হাতছানি পাঠায়। তারপর একএকটা possessed সত্তার মত তারা ওর অঙ্গুলিহেলনে চলতে শুরু করে। আমি আজকাল অনেকটা দূরত্ব বজায় রেখে চলি কবির থেকে। তবুও কোনো এক গোপন সূত্রে আমার সমস্ত খুঁটিনাটি ওর নখদর্পণে।

আমার প্রেমিকার বেজায় পছন্দ কবির অর্ধ-উন্মিলীত চাউনির মাদকতা। অর্ধস্ফুট শব্দের সাহায্যে প্রকাশ্য- অপ্রকাশ্য যাবতীয় কথা জাগলারীর প্রতি তার অদম্য আকর্ষণ।আমি বহুদূর থেকে টের পাই আমার প্রেমিকাকে চুমু খায় কবি,আমারই মত করে, আর তার নাম দেয় শিল্প। প্রেমিকার শরীরের ১০৮ টা রহস্যস্থলে সে অধিকার জমায়। অক্লেশে হাত বাড়িয়ে তুলে নেয় তার যৌবনের লুক্কায়িত জলপদ্ম টিকে।আমি সবই দেখি, কিন্তু কবির মায়াজালে আটকা পড়ে থাকি,তারই শরীরের ভেতর। তার সৃষ্ট কৃষ্ণগহ্বরে এক এক করে টেনে নিতে থাকে আমার পরিচয়,আহ্লাদ,উৎফুল্লতা। শুধু অপবাদ,কুৎসা, কেচ্ছা-- এগুলোই রেখে যায় আমার সাভিংস অ্যাকাউন্টে।

যে মুহূর্তে আমাদের মাঝে বিবাদের ফুলকি উঠতে থাকে সেই মুহূর্তে কবি আমাকে একা রেখে পালিয়ে যায় নিশ্চিত hibernation এ। আর আমি দাঁত নখ বের করে চরম আক্রোশে ঝাঁপিয়ে পড়ি প্রেমিকার ওপর-- তার নরম মাংসে আমূল গেঁথে দিই আমার বিতৃষ্ণার ছুরিটাকে। দমকে দমকে রক্ত বেড়িয়ে আসে সম্পর্ক নামের সেই ক্ষতস্থান থেকে। কবি দূর থেকে সবই দ্যাখে অথচ আমার অমানুষিক ক্রোধজালে আটকে যায় তার সৎ প্রচেষ্টা। অবশ্য খানিকক্ষন বাদেই কবি ফিরে আসে নিজের স্থানে। যাবতীয় যুক্তিসহ বোঝাতে থাকে ভাঙা স্থানে weilding এর উপায়,অথচ একটা অপচ্ছায়া আমাদের মাঝে ঘনান্ধকার দেওয়াল তুলে দেয়। হঠাৎ T.V তে গেয়ে ওঠেন আনুশাহ--- " সে আর লালন একসাথে রয়,মাঝে লক্ষ যোজন ফাঁক রে..."

তারপর আমি cold bloodedly খুন করি কবিকে। প্রতিবারের মত; আর আমি নতুন করে আবার লিখে ফেলি-- " কবি চরিত্রটা একটা hallucinatory object..."

নির্বাণ


ঝরে পড়ছে বোধ ও অনুভব
এক একটা উচ্চারন প্রজাপতি হয়ে ছুঁয়ে দিচ্ছে
সমস্ত অবিদ্যা কে, আর জন্ম নিচ্ছে লাইটহাউস।
কিছু মানসিক বিকলাঙ্গদের জালে ধরা পড়ছে অহং
কারন প্রজাপতিরাও ভয় পায় সেইসব সূর্যশিশিরদের
যারা বোঝেনা, যে অস্মিতা প্রজ্ঞার তা তো আলোকবর্তী হবেই।

একটা পিন ও পতনের সুযোগ পাচ্ছেনা
প্রত্যেকে আবেশিত হয়ে আছে চৌম্বকীয় সম্মোহনেঃ
কেউ খুঁটে নিচ্ছে অসামান্য বিশ্লেষন
কেউ কুঁড়িয়ে নিচ্ছে অসুস্থতার অশ্রুতপূর্ব সংজ্ঞা!
কোথাও দর্শন এসে হাত বুলিয়ে যায় সাহিত্যের ব্যাখ্যাতীত পিঠে
কোথাও বা কবিতা শান্ত করছে দার্শনিক প্রক্ষোভ।

এভাবেই আমার পাঁকদহে বসত গড়লেন বুদ্ধ
বন্ধুর মন্দ্র মন্ত্রোচ্চারনে--
    " দত্তা।  দয়দ্ধম। দময়িতা। "
দিনগুলো
সমিত ভৌমিক


মাঝে মাঝে দিনগুলো ফেরিওয়ালা হয়

এ বাড়ি হতে ও বাড়ি
                              এ ঘাট হতে ও ঘাট
                                                     এ বন্দর হতে ও বন্দর

ঘুরতে ঘুরতে
জীবনের সব গোছানো হিসেব
এলোমেলো হয়ে যায়।


তখন আমার চোখ
প্রখর রোদেও ঝাপসা ও কুয়াশাময়।

অনুরূপা পালচৌধুরি



নীলাভ মেঘের আড়াল থেকে
---------------------------------------------

                    
অ ভেদ্য  খা       গ্রা   
                  দ    হ
                     ক+

বৈধতার দেওয়ালে মসৃণ আদিমতা →অন্তর্জাত
সুপ্ত আকাশ চিরে নেয় ঈ গল পোষা বুনোঘাস
শিশি | র ডানায় কমল(আ) ভোর
                 টি      টি
                     (প) লক ভেজা →কৌনিক দূরত্ব

নখপ্রণালী : লোমশ যৌ ব ন : নিষিক্ত মেঘচাদর
উড়ন্ত বাষ্পে ০-ঠিকানা ভুলে যায় আলোর মায়া
মাংসল সমুদ্র টেনে নেয় Bকালের দ্রাঘিমা


দীর্ঘ স্বীকারোক্তি কিংবা আত্মপক্ষ সমর্থন
_____________________________________
উদয়ার্ণব বন্দ্যোপাধ্যায়



ঘুমিয়ে পড়া সূর্যের ছবি আঁকতে গিয়ে কবি আঁকছেন অঙ্গার। পৃথিবীর কথা ভাবতে গিয়ে এক ফালি তরমুজ, যার শীতলতায় ছোঁয়া আছে যুদ্ধের ঘোষণা কিংবা এক বিরাটমুখীএলার্ম।

কবির পৃষ্ঠার ওপর ভিড় করে বসে আছে ভোরের ক্ষিপ্র আঁচ। হয়ত রোদেলা ফসলের মুখ। ধান বা গমের গল্পে উপচে পড়ছে এক অসহায় শ্রেণীর কাতরতা। কবি আঁকছেন হাওয়ায় পরিমিত শোক।

কবি লিখেছেন নিঃসঙ্গ দেয়ালের কথা। যার ভেতর জমে আছে বরফের ক্ষেদ। যেন ঠাণ্ডায় এক ঝাঁক বালিয়াড়ি হাঁস যুদ্ধ বিরোধিতায় গেথে চলেছে চলমান তাঁবু।

কবি জানেন এর শহর তার কাছে বড়ই। যেমনটি নয় দেশ। দেশ শব্দের প্রকৃত মানে কবির কাছে ঠিক পরিষ্কার নয। কবি জানেন হয়ত একদিন স্বাধীনতার অপেক্ষায় পুড়িয়ে দেয়া হবে গোটা শরীর। থেঁতলে দেওয়া হবে হৃদপিণ্ড। নয়তো বুর্জোয়াদের জুতোর ছবি আঁকতে গিয়ে কবি হারিয়ে ফেলবেন নিজের সংগ্রামে অস্তিত্ব।
সুপ্রিয় কুমার রায়ের কবিতা 

পূরণের
,,

ঘুরতে ঘুরতে বৃত্ত হলো
তুমি বিন্দু
এমনিই ।
কত মাটি লেগে থেকে লাল মাটি শুধু মনে থাকে
তোমার থেকে বিচ্ছেদে ঈশ্বর
ঈশ্বর থেকে বিচ্ছেদে
সোহিনী থেকে পাতা পরে আর পরে,,,,


[18/02 19:04] supriyakroy: তোকে

এরপর বন্ধুত্বই পারলো নির্মোহ চেয়ে থাকতে
জানা গেল
সোনা ভুলে গেলে
মানুষ হয়ে উঠতে পারে মন্দির

দুটো কবিতা // বিপ্লব সরকার 
--------------------------------------------
হেঁশেল
----------

কোনো এক হেঁশেল থেকে ভেসে আসে উইপোকা-যাপন
যতবার হাঁটি সেই পথ
প্লেগবাহী ইঁদুরের গন্ধ এসে লাগে নাকে
বদ্ধ কারখানার ভেতর থেকে দেখি 
একে একে বের হয়...
সদ্য বালিশ ছিঁড়ে আসা অহংয়ের দল


শরবিদ্ধ আয়না 
-----------------------
দৃশ্যমানতার কাছে স্তাবকতাগুলোর কিলবিল
কবির শরবিদ্ধ আয়না থেকে ঝরে পড়ে দুপুর-ঘাম
আসলে, বাধ্য কবি তবু বলতে পারেনা--
স্তাবক, তুমি পাঠক হও!
আমাদের সকলের নৌকোতলে জন্মগত ফাঁকি লেগে আছে
                                             
কমল সরকার



বিশ্ববিদ্যালয়কালীন কিছু অসেচনক মুহূর্ত

(১)

ল'মোড় থেকে সরে গেছে সুদর্শনদার চায়ের দোকান ,
... তার সাথে আরো কিছু ছোটখাটো স্টল ---
কেক-বিস্কুট , বিড়ি-সিগারেট , আলুকাবলি ও ফুচকার ।
এখন সন্ধের পর
মৃত হ্যালোজেন আলোয় দিনের চাকচিক্য ঢেকে
নিঃশব্দ নিস্তব্ধ পড়ে থাকে ল'মোড় ।
...
অথচ এখানে একদিন
উৎসব লেগে যেত প্রতি সন্ধ্যায় ---
সুদর্শনদার চায়ের কাপের চুমুকে চুমুকে
দর্শনের ছেলেদের অন্তহীন অর্থহীন তর্কের ঝড় ,
'রানী ভবানী' ও 'পূর্ণেশ্বরী'র মাঝখান দিয়ে
হাইওয়ে উঠে গেছে যে গলিপথ
অমোঘ আনন্দধারা বিছিয়ে দিত সে পথে
বাংলা বিভাগের নবাগত ছেলেমেয়েদের
হাততালি ও গানের আসর ।

আর এইসব আপাতমুখর উৎসবমুহূর্ত হেলায় তুচ্ছ ক'রে
আঙুলে জ্বলন্ত সিগারেট নিয়ে হেঁটে যেতেন
রসায়নের দীর্ঘদেহী গুরুগম্ভীর প্রফেসর ।

এখন সান্ধ্যভ্রমণকালে দেখি
নির্জন গলিপথে পড়ে থাকা হলুদ পাতারা শুধু
আবছায়া আলো গায়ে মেখে নিয়ে
মৃদু হাওয়ায় কেঁপে কেঁপে ওঠে অনুঃস্বর ।

আমি হেঁটে এসে দাঁড়াই মাগুরমাড়ির ব্রীজে,
বিদ্যাসাগর মঞ্চের পাশের মন্দির থেকে
কীর্তনিয়া সুর ভেসে আসে ,
আসে অদূরের শালবনের পাতার মর্মর ।
আর তখনই কানের কাছে কে যেন হঠাৎ বলে ওঠে ---
"এই যে ! কেমন আছো ? কী খবর ? "


বিশ্ববিদ্যালয়কালীন কিছু অসেচনক মুহূর্ত
(২)
বস্তুত ওভাবে কেউ ডাকে না আমায় ।
কেউ ডাকেওনি কোনদিন ।
আমি শিবমন্দির থেকে ল'মোড় ভায়া
... আপাত-উদ্‌ভ্রান্ত একলা হেঁটে যাই
'সি পি এম' মোড় হয়ে রসায়ন বিভাগের পথ ।

এখানে এসে স্থানীয় নিরাপত্তার খাতিরে
জোড়া জুটিয়ে নিয়েছে যারা
তারা তো চক্ষুহীন তখন !
আর সদ্য খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে
যেসব প্রজাপতি-তরুণীর দল
ওরা আচমকা-পেয়ে-যাওয়া ফুরফুরে ডানায়
নির্ভার স্বপ্নের উড়ানে বিভোর ।

আমি একা একা হাঁটি ।
হাঁটি আর দেখি
এইসব শিশুসুলভ তরল তরুণীরা
চিরাচরিত ঘরোয়া শাসন বেমালুম ভুলে গিয়ে
কী অনাবিল পুলকে
নিজেদের চোখেমুখে মেখে নিচ্ছে অযুত আকাশ ,
বহু ...... বহু দিনের পর ।।


বিশ্ববিদ্যালয়কালীন কিছু অসেচনক মুহূর্ত
(৩)
আর.কে. হোস্টেলের ছাদে উঠে উত্তরে তাকাতেই
দু’চোখে অপার বিস্ময় ---
আলোর দীপমালা জ্বেলে শুয়ে আছে
... দূরবর্তী পাহাড় ।
অতি নীরস যে ছেলেও চাঁদ দেখেনি কোনদিন ,
কখনো ঘাসের শিশিরে ডোবায়নি পা
কিংবা ঝড়ের দিকে বুক চিতিয়ে
দাঁড়ায়নি একপল ,
এমন অবর্ণনীয় নিসর্গ দেখে সেও
চিৎকার ক’রে ওঠে , ‘স্বাগতা ! আই লাভ্‌ ...’
ইউ-টার্ন নিয়ে রুমে চলে আসে আমাদের কালীচরণ ।
দেয়ালে টাঙানো স্বাগতার ছবি ,
তাতে বাসি ফুলের মালা ,
সামনে জ্বলে ধুপকাটি ক’টা
আর আমাদের এক মিনিটের নীরবতা পালন :
অমর রহে কালীচরণের প্রেম ।
অতঃপর সব ভুলে শুধুই অধ্যয়ন ।

দৃশ্যতঃ অসম্ভভ অধরা
বিজ্ঞান বিভাগের মেয়েরা সব ---
ওদের জীবনে গান নেই , কবিতা নেই ,
প্রেম নেই , আনন্দ নেই ,
ফলতঃ নেই জীবনের প্রতিফলন ।
শুধু মাটির ব্যবধানে পা ফেলে চলা
এক অদ্ভুৎ জীবনচেতনা
যেন তারা উদ্‌জান-বেলুনে চড়ে
দেখে ফেলেছে দূরবর্তী আকাশে
কাঙ্ক্ষিত স্বর্গের ঠিকানা ।


বিশ্ববিদ্যালয়কালীন কিছু অসেচনক মুহূর্ত

(৪)
অ্যানুয়াল সোসালে রঙিন প্রজাপতি-ডানা মেলে ধরত
কলা বিভাগের মেয়েরা ।
... গান , কবিতা ও নাচের অনুষ্ঠানের বিচারক শুধু
অর্থনীতির অধ্যাপক-অধ্যাপিকা ।
ফলতঃ সব পুরস্কার চলে যায়
একটিই বিভাগের নামে
ঈর্ষনীয় পক্ষপাতিত্বে ।

অনুপম সুললিত কন্ঠে কবিতা শুনিয়েও
বিজয়িনী নয়
দর্শনের সোমা দত্ত ।
তবু দেখি তার চোখের কোণে
অদ্ভুৎ খুশির ঝিলিক ,
অবাধ্য ওড়নায় সে বেঁধে নেয়
দর্শকাসন থেকে ছুঁড়ে দেওয়া তার প্রেমিকের
একান্ত করতালি ।

খুব জানতে ইচ্ছে করে
আজ এতগুলো বছর পরে
কেমন আছে সোমা দত্তরা সব !
ওদের কন্ঠে এখনো কি কবিতা আসে
সময়ে বা অসময়ে ?
এখনো কি হাতে পেন্সিল নিয়ে বসে থাকে
কোন জাজ-দিদিমণি
ইচ্ছাকৃত ওদের হারিয়ে দেবে বলে ?
থাকে কি কোন দর্শকাসন
আর সেখানে বসে ওদের অনিন্দ্য প্রেমিকপ্রবর
একান্ত করতালি দিয়ে
ওদের স্বীকৃতি দেবে বলে ?

খুব জানতে ইচ্ছে করে
আজ এতগুলো বছর পরে
সোমা দত্তরা কোথায় কী করে ।।


বিশ্ববিদ্যালয়কালীন কিছু অসেচনক মুহূর্ত

(৫)     ( সমাপ্তক )
সন্ধে নামতেই ভ’রে উঠতো
পি.জি. ক্যান্টিনের গাছতলা ,
... গেস্ট হাউসের কাছের বিশ্রামাগার ,
সংসদ কক্ষের পেছনের বারান্দা
এবং আরো যেসব অলিগলি কোণাকাণার থেকে
মুখ ফিরিয়ে রাখতো
সোডিয়াম ভেপারের হলুদ আলো ।
পরস্পর ছুঁয়ে থাকা সেই সব যুগল
আবছা আলোয় আবছা অন্ধকারে
অনন্ত দাঁড়িয়ে থাকে নির্বাক
যেন কোন স্বর্গীয় ভাস্কর
অনুপম শৈলীতে গড়ে তুলেছে
এ যুগের পরিশীলিত খাজুরাহো ।

এখন সন্ধে নামলে
সেইসব স্বর্গীয় উদ্যানে
ঘুরে বেড়ায় পুলিশের পেট্রল ভ্যান ।
তবু , প্রেম কি ঠেকানো যায় কোনভাবে ?
নাকি গেছে কোনকালে ?
সেইসব উদ্বাস্তু যুগল খুঁজে নেয় ঠিক
নিজেদের নতুন ঠিকানা ,
গড়ে তোলে নিজেদের স্বর্গ
অন্য কোনখানে
যেমন এখন দেখি
স্ট্যাট ব্যাঙ্কের আলোহীন নির্জন গলি
ভরে ওঠে অন্ধকারে , জোনাকিতে
আর সারি সারি দাঁড়ানো যুগলবন্দীতে ।

...............................................................................

সু দী প্ত  মা জি 
........................
বৃষ্টিবিকেল, চিলাপাতা 
..................................
পাতার নীচে সবুজ অন্ধকার 
হাওয়ার ফানুস উড়ছে

বিষণ্ণতার খোলামকুচি ছড়িয়ে থাকা পথে 
তোমার সঙ্গে কথা বলছে দীর্ঘশ্বাস

একলা বিকেলের আলো 
আর 
শ্রাবণমেঘের সোপান 
তোমার গানের সঞ্চারীর সিঁড়িতে বসে আছে

দোহারা একটা অন্ধকার ঘনিয়ে উঠছে তোমার 
                                           মনের পাঁজরে

জ্যোতির্ময় মুখার্জির কবিতা 
আশা’লীন সমাচার


প্লিজ্ এভাবে তাকিয়ো না
এভাবে এসোনা কাছে
.
শুধু গন্ধ নয়
শুধু স্পর্শ নয়
তুমি দৃশ্য হও
.
এভাবেই খ’বর হোক
আমাদের আশা’লীন সমাচার


নগ্ন শীতবিতান


ধরো, তোমার ঠোঁটে ঠোঁট রাখলাম। আর পাখি হয়ে উড়ে গেল রাত। ক্রমশ কানের লতি ছুঁয়ে। গলা-ঘাড়-পিঠ বেয়ে নেমে গেল পুরুষ্ট কমন্ডুল
.
তোমার নিখাদ স্তনে তখন। তুলতুলে অসুখ। তুমি জড়িয়ে নিলে। বৈধতার মৌনস্নানে। সধবা জেহাদি
.
সন্ধ‍্যে নামার মতোই। আলুথালু শরীরী ভিতরবাড়ি। দরজা খুলে দিয়েছিলে তুমি। পর্দা’ও। বলেছিলে। কাছে এসো
.
অতঃপর, নতজানু নাভিঘুমে। মধুক্ষরা চাঁদ। আদুরে বিষদাঁত ভেঙে। আমাদের নগ্ন শীতবিতান

আগন্তুক
--------------------
বিকাশ সাহা

হঠাৎ কলিং বেলের শব্দটা 
সমস্ত ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়ে এক লহমায়
আছড়ে ফেললো রুঢ় বাস্তবের মাটিতে।
কল্প-জগতের আগন্তুক তখন,
স্বপ্নের পাট চুকিয়ে নিজ-রাজ্যের পথে
প্রত্যাগমনের অপেক্ষায়।

ক্ষনিকের আবির্ভাবে অপূর্ণ সব প্রত্যাশাগুলোতে
জাদুর কাঠি ছুঁইয়ে দিয়ে রাঙিয়ে তুলেছিলো সব।
মনের গভীরে কষ্টের চোরাস্রোতের প্রবাহ থামিয়ে দিয়ে,
সুখস্রোতের তরঙ্গ তুলেছিলো মনে।

আপাত নঞর্থক সব ভাবনা গুলির আড়ালে
লুকিয়ে থাকা সদর্থকের পথ চিনিয়েছিল।
কষ্টের মাঝেও লুক্কায়িত রসদের সন্ধান দিয়ে
শিখিয়েছিল বেঁচে থাকার শিল্পকে।

সমস্ত আলোগুলিকে এক ঝটকায় নিভিয়ে দিয়ে,
সমস্ত ভাবনাগুলিকে  নিষ্প্রভ করে,
স্রোতস্বিনীর প্রবল প্রবাহে কষ্ট গুলিকে চালিত করে
প্রহমান অন্ধকারে নিক্ষেপ করলো আমায়।

হে আগন্তুক, পুনঃ ছোঁয়াও তবঃ জিয়ন কাঠি
আমার স্বপ্ন ছটায়।।
মিতালি চক্রবর্তীর দুটি কবিতা 

আকাঙখা


তামসী,,,,,,,আজও একইরকম
ঠোঁটের পরশ বুকের ভাঁজে পৌঁছয় নি,
সুদূর পরাহত যাপন
আজও ভাবায়.......
অন্ধকারের আড়ালে
নিশ্বাসের দুরত্ব ভেঙে
শ্রান্তির শিখরে,
স্বজন যখন শ্রান্তি তখনও
আলেয়া...
.....তামসী আমার
তোমাকে দেখা হয়নি
তমস অনাবৃতা....!

আমণ্ত্রণলিপি

তোমার পাঠানো ভালবাসার রং মেখে
খোলাচুলে আমি.....
তোমার চোখের ইশারায়
আমার ভ্রুভঙ্গিমায়
ফুটে ওঠে কপট রাগ....
তুমি ঠোঁটের কাছে খুব কাছে
কোন এক হৈমন্তী দিনে
কিংবা কোন শারদীয়া সন্ধ্যায়
হেঁটে যাব.... শিশিরে
ভিজে,যাবে....যাবে তুমি অকরুন জ্যোৎস্নায়!!!

পালিত কাল

অভিশ্রুতি রায়
-------------

যেভাবে হাসছো

তার সোহাগে অনেক মেঘ ভাঙছে

যেভাবে কাশছো

তার আওয়াজে অনেক শীত বেরিয়ে পরছে

কুয়াশা জমাচ্ছে

আদর করছে

অথচ এখন তীব্র বিরামের দিন

 উঁচু উঁচু ফোয়ারা মাঝখান দিয়ে উড়ছে

আজকাল ঘুমোতে পারিনা

কারণ ঘুমের ভেতরে আত্মা থাকেনা

মন থাকেনা

তাই প্রেমও থাকেনা

যাকিছু থাকে সবই অবৈধতা

ঈশ্বরাধীন উপভোগ মাত্র

তবুও ক্লান্ত হইনা

 দেহের উপলব্ধি

যেখানে ঘুমের জন্ম দেয়

সেই প্রসবকাল থেমে গেছে

                    থামিয়ে দিয়েছ

আগামী

রৈবতী ব্যানার্জি 

ঈশ্বর করাঘাত  করে চেতনার দরজায়,
আমার মনের গভীরে বিবাগী লালন গান গায় বিষাদের সুরে,
অনেক স্বপ্নভঙ্গ এর কাহিনী দেখতে দেখতে জীবনের পথে-  স্বপ্নের ফেরিওয়ালা  এসে ফিরে যায়,
শিশু আটকে থাকে শাসনের বেড়াজালে,
আনন্দের জোয়ারে ভাসে না কেউ,
অহংকারী দানব দাপিয়ে বেড়ায়
সমাজের খাঁজে খাঁজে..
নগ্ন বিলাসিতার আভরনে,
সততা বিঘ্নিত কুৎসিত
মুখোসের আড়ালে..
পিপাসার্ত মানুষ শান্তির অপেক্ষায়,
আমি দেখব এক নতুন আগামী কবে
চেতনার জোয়ার ধোয়াবে মূল্যবোধের রথ।

কলিং বেল

সুলক্ষণা


তোমার স্পর্শের সুরে
বেজে ওঠে গ্রামোফোন।
অদ্ভুত গন্ধে ভরে যায়
শরীরের ভাঁজে লুকিয়ে রাখা গল্পগুলো।
তোমার ঠোঁটের এই উষ্ণতার গন্ধ
আমার অনেকদিনের চেনা।
দেখো
এলোচুল ওড়ে বারান্দায়,
আর অস্তগামী সূর্য রাঙায় ধ্যানবিন্দু।
তোমায় প্রেম উৎসর্গ করতে গিয়ে
কবে যে করে ফেলেছি তোমারই জপ...বুঝিনি ...!
দেখি - 
সঙ্গীহীন দুপুর ভরে যায় ঘুঘুর ডাকে।
আর নিঃস্বাস বলে দেয় দূরত্বের  মাপ।
সে রাস্তা ফুরাতেই চায় না . . .।
দুপুর আরও দীর্ঘতর হয়।
স্বপ্নেরা ওঁৎ পেতে থাকে রাত্রির অপেক্ষায়। 
আমিও মুহূর্ত গুনি রোজ ক্যালেন্ডার বদলিয়ে,
আর তোমাকে দেখার ফুরসৎ খুঁজি স্বপ্নে।
তবে, 
যদি স্বপের বাড়িটায় আসো 
আর, কলিং বেল বাজিয়ে
শুধু আমায় ডাকো  
তবে,জেনো .......
আমি বাড়ি নেই !

কাজ

দেবাশিস  বর্ধন


সকাল থেকে রাত অবধি
আপনি কাজ করেন
কাজ ছাড়া একদম থাকতে পারেন না 
ছোটো ,বড়, মাঝারি ,সাদা-মাটা সব ধরনের
কাজে উৎসাহ পান আপনি
কেউ কেউ আপনাকে হিংসে করে
গালি দেয়
আপনি কানে বা মাথায় লাগান না
একমনে কাজ করেন
বুকের ভিতর আপনার আগুন জ্বলে
চোয়াল শক্ত হয়
দ্বিগুণ উৎসাহে কাজ করেন
কোনো বাজে শব্দ আপনি আর শুনতে পান না
নতুন এক দক্ষতা অর্জন করেন
কোনো প্রকার উদ্বেগ ছাড়াই...
                 -----------------
মাছ ধরা


আমি মাছ ধরতে ছিপ ফেলি পুকুরে
অনেকটা সময় চলে যায়
বসে বসে ঝিম ধরে
ছিপের মাথায় দুইটি বাঘা ফড়িং
বারবার উড়ে উড়ে গিয়ে বসে
ছিপে টান লাগে না
বড় মাছের আশা নাই
ছোটোগুলোরও খোঁজ পাই না
চারপাশের মাটি দেখি , গাছ-পালা দেখি
বাতাসের গন্ধ নিই
বুঝি
আমি একদম বেমানান এইখানে
মাছেরা টের পায় সেটা
আর তাই খালি হাতে বসে থাকা
উঠে ফিরে আসি
কাদা-মাটি মেখে পুকুর ঘাটে বসব বলে...

বেরিয়ে পড়া
                 দেবারতি চক্রবর্তী

পাতার ফাঁকে ফাঁকে জলের কণা ঝুলে
পাখির ডানার কতই না ভাঙা ভাঁজ
লাল পিঁপড়ের ঘরবাড়ি যত্নের
স্বপ্ন বেশ চলছে
কালচে রাত্রির ওই ফাঁকা স্টেশন মনে করায়
বিড়াল কুকুরের ঠান্ডা লড়াই
কুয়াশার খোঁজে হেঁটে চলি অজানায়



একইরকম
          

বৃষ্টি শুরু হয়েছে
গোটা সপ্তাহ ধরে বৃষ্টি
শান্ত হওয়ার লক্ষন নেই
বারান্দার জানালা বন্ধ
চুপ করে বসে আছি নিজের মধ্যেই
নিলয় অলিন্দে খামখেয়ালি প্রবল
ইমোশনের ঝড় নেই
অসহায় গাছ গুলো ভিজছে প্রতিদিন
যখন বয়স পেরোচ্ছে টিনএজ ...
রঙ্গন রায়

সেই যে শীতের দুপুরে বাসের স্টিয়ারিং লক হয়ে গেলো ,
আমরা একটা গাছতলায় দাঁড়িয়ে আছি
দূরে অনেকদূর অবধি ছড়িয়ে আছে নাড়া ওঠা ধানক্ষেত -
পরবর্তী বাসের অপেক্ষা।
হালকা রোদ্দুরে হেলান দিয়ে পিতা সন্তানকে তেল মাখিয়ে দিচ্ছে ,
যেন চকচক করছে আমার শৈশব , এক্ষুনি মুখ দিয়ে
শিশুর গন্ধ ভেসে উঠবে - দুহাত ভর্তি আলো নিয়ে
বাবা এগিয়ে আসবেন আমার দিকে ...

সাঁকো
শুভ্র সরকার 

সম্মোহনের চোখে চেয়ে আছে পলকহীন অন্ধকার। আরো কিছুটা পথ এগোলে একটা সাঁকো বার্ধক্য নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে— পারাপারহীন।
কখনো আঁজলা ভরে বর্ষা ভিজিয়ে দেয় সাঁকো। জলফুল ফুটে থাকে তার চোখে। আবার কখনো কুয়াশাপাখি তার বুকের পাঁজরে এসে বাসা বাঁধে। তারপর একদিন উড়ে চ'লে যায় রোদরেখার পথ ধ'রে। শুধু রেখে যায় ছায়া।
এভাবে ছায়া কুড়তে কুড়তে একদিন সাঁকোর অবয়ব নিয়ে; ধূলিমেঘ উড়িয়ে চলে যায় মায়ারথ। সাঁকোটা দাঁড়িয়ে থাকে অবিরল— অবয়বহীন।

                 
গল্প :

 হাঁটু সংক্রান্ত অব্যক্ত ছায়া 

আফজল আলি 

         


যে স্বপ্নের কথা বলব ভেবেছিলাম সে সব আজ থাক।আজ মাখনের কথা বলি আর খুনিদের চিহ্নিত করার কিছু কারুকাজ । তোমরা জানলে খুশি হবে এরকম শনিবারেই আমি লিকার চা খাই  ও গল্পের স্থানান্তর করতে করতে অজানা তথ্যের উপর নির্ভর করি বেশি । এমন দিনে সত্যিই মেঘলা করে কিনা তা জানি না । উপর থেকে দেখলে মনে হবে মানুষগুলো এখনও ঘুমাইনি এবং তাদের পরিকল্পনাগুলো অনেকটাই সফল। ঠিক কী কী কারণে আজ অনেকেই বাড়ির বাইরে আসেনি তাও বোঝা যাচ্ছে না । কাল কিছুটা প্যাচপেচে আবহাওয়া ছিল । গুমোট আর প্রচন্ড গরমে অস্থির গাড়ির টায়ারগুলো।


কদিন ধরেই দেখছি আমি গল্পের ফাঁকগুলো নিয়ে বেশ চিন্তিত এবং শেষমেশ আমাকে মেনে নিতে ই হল আমার তীব্র কল্পনাশক্তির চেয়ে ওই ময়লাফেলার দৃশ্য কম সুন্দর নয় । আসুন এইবার একটু ডানদিকে ঢুকি। কাল যে দু জন এখানে রোমান্স করছিল তাদের পুলিশের লোক ধরে নিয়ে গেছে ।

বৈধ কাগজপত্র দেখা জন্য । কিন্তু কাগজপত্র কী দেখাবে । আসলে কিছু মাল্লু চায় । চলুন বিনুনিখোলা মেয়েটিকে দেখে আসি ।তাহলে সঠিক বুঝতে পারবেন এই রাস্তা দিয়ে আর কী কী যানবাহন চলতে পারে । এতক্ষণ ভাবছিলাম সেই সিনেমার দৃশ্যে কোথাও বিজ্ঞাপন বিরতি ছিল না ।


     প্রথমত ছবিটা ছিল কয়েকটি রগরগে যৌনছাপের  ,  দ্বিতীয়ত প্রেমিকির চুল সোনালি রঙের এবং তৃতীয়ত শেষ দৃশ্যে তারা ফাটলগুলো বোজাতে চাইছিল । এর বাইরে আর যে সব ঠিক  ,  বেঠিকভাবে সাজানো ছিল সেগুলো নিতান্তই দুর্বল । অর্থাত্ আজ আমি গল্পের কিছু ফাঁক তোমাদের বলব।


পশ্চিম দিকেই মুখ করে দাঁড়িয়ে ছিল ছাগলগুলো । ওরা জানতো ওদের পরমায়ু নিঃশব্দে জাবর কাটছে । ঠিক সেই সময় মেয়েটি হাঁফাতে হাঁফাতে এলো। চোখ দুটো ঈষৎ লাল । চুল উল্টোদিকে ছায়ায় ঘন হয়ে গেছে । কিছু একটা ভাবনা ভিতরে প্রথিত হতেই দেখল ছেলেটি চলে এসেছে কাছে । মাংসের দোকান,   তেলেভাজার স্টল ও মোবাইল কর্নার পাশাপাশি । শব্দ বিন্যাসের আগেই ও বলে উঠল

      -  ঘরে মা বোন নাই ?  শয়তান ছোটলোক

       -  না নাই

        -  সেই জন্য তো দরদ বুঝিস না । আর থাকলেও বুঝতিস না । লোফার জানোয়ার

ছেলেটি মেয়েটিকে বোধহয় তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল বন্দুক ঠেকিয়ে । কিন্তু এত লোকের মাঝে  । তাজ্জব  !!


         ঠিক এ সময় একটি পুলিশের ভ্যান এসে দাঁড়াল । অসহায় মেয়েটিকে আর কেউ বাঁচাতে চায় নিয়ে তবু এ যাত্রায় রক্ষা ।


উদ্যোগ সামনে চলে আসছে । ঠিক এ সময় আমার চোখ দুটো লাল। ধক ধক শব্দে হৃদয় মোটরবাইকের সমান কিনা । মস্তিষ্ক তার ক্ষরণ সম্পর্কে সন্দিহান ছিল   জাদুবাস্তবতার উপরে ডানদিক । আর একটু সরে এসে দরজাটা খুললাম। গুমোট আবহাওয়ায় এত মনকেমন কী করে আসছে জানি না,   তবে প্রকৃতপক্ষে আমি লুকিয়ে রাখতে চাইছি কিছু । মেয়েটি এসে পৌঁছাল । আত্মীয় পরিজন নাই ,  বন্ধু বান্ধব নাই । তবু একাকিত্ব থেকে আমি মাথাকে বাঁচাতে চাইছি। দরজাটা ভিতর থেকে বন্ধ করা হল।

  -  আচ্ছা সে দিনের পর আজ কিছু হয়নি

  - কোন দিনের পর

  - কেন সেই যে মস্তান মার্কা ছেলেটি তাড়া করতে করতে তোমাকে ধরে ফেলেছিল আর পাশাপাশি মানুষগুলো সব হ্যাঁ করে দেখছিল,   প্রতিরোধ করার পরিবর্তে ।

 -  হা হা হা  । আমি তো ভুলেই গেছি। হ্যাঁ বেশ কয়েকবার আমার পিছু নিয়েছিল । কিন্তু একদিন রাগে ওকে আমি খুন করে দিয়েছি। ওহ্ সে কী অবস্থা । কিন্তু খুনের এখনো কোনো কিনারা হয়নি এতেই রেহাই ।

   -  সে কী । তাজ্জব ব্যাপার । পুলিশ এ রিপোর্ট হয়নি  ?

  -  হয়েছে । সব কিছু ই । তবে এখনও ধোঁয়াশা আছে । আর আমি তো স্বেচ্ছায় শুধু শুধু খুন করিনি । সেদিন ছুরিটা ভাগ্যিস আমার কাছে ছিল তাই । আচ্ছা আপনি কি এখন এই ঘরেই থাকবেন ?

  -  আরে আমার ঘরে তো আমিই থাকব

  - হ্যাঁ তা ঠিক । তবে আমি একটা গল্পের প্লট তৈরি করতে চাইছি যার জন্য আমার কিছুটা নিরিবিলি দরকার । আমার আগের বিষয়বস্তু থেকে আলাদা । কিছুটা মেঘ ধরে ধরে ছুরি দিয়ে কাটার মতো ।

 -  বুঝলাম না

 -  বুঝতে হবে না  । আমি এখন আসছি ok

সীমানা বরাবর ভেদরেখাগুলি এইভাবে চলবে। বিন্দুমাত্র সংশয় নেই । ঠিক একই কারণে লোকগুলোকে জড়ো হতে দেখলাম এবং উচ্চস্বরে কথা তারা বলছিল একে অপরের দিকে । যারা একটি একটি তান্ডবের পিছনে ধাওয়া করছিল তারাও হাজির  ;  কমসেকম  বিতর্ক কিছু ঘটবে।বিপদ বুঝে রেটিনা  ঠিক থাকতে পারছে না । আমি পাশবালিশটিকে ধরলাম । হঠাৎ ই মেয়েটি আবার ঢুকল হাঁফাতে হাঁফাতে । দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে বলল

-  চুপ করুন  কোনো আওয়াজ করবেন না । ওরা আমায় ধাওয়া করেছে

   -   কারা ?

-    পুলিশ

 -  কী করে ঢের পেল

-  জানি না

শুনুন আমি খাটের নীচে শুয়ে পড়ছি  । বাকিটা আপনি সামলে দেবেন।

 -  খাটের নীচে নিরাপদ নয় । এই বিছানায় তোষকের কিছুটা তুলে শুয়ে পড়ো। আমি পাশে স্বাভাবিক ভাবে শুয়ে থাকি।

 -  আচ্ছা তাই


কাগজের পৃষ্ঠা ভরানোর জন্য আমি লিখছিলাম অন্য একটি গল্পের উপসংহার ।

বন্ধুকবাজদের দখলে  চলে যাচ্ছিল এলাকাটা । বাসের হর্ন ও যেন অতটা নেতিবাচক নয় । বেচারা পলিটিক্যাল নেতৃত্ব   ও  পুলিশ  -  দু পক্ষই । কৃষ্ণপক্ষের শুরুর অন্ধকার । ব্রিজ মেরামত করতে যে লোকগুলো এসেছিল তারা খুব পজিটিভ । কোনও ইসু যাতে না হয় -   চারপাশটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে স্বপক্ষের পেশাদারিত্বে শান দিচ্ছিল। এমনিতেই এলাকাটা বেশ জনবহুল ।

     পরশু একটি মিছিলে কত রকম স্লোগান উঠেছে । এখনও দেখছি কালো হাত ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও বলছে।


বেপরোয়াভাবে মোটরবাইকটি । আরোহী তিনটি তরতাজা ছেলে । অনেকটা নিজেদের দোষে তারা গেল । আমি বিচ্ছিন্ন হতে চাইছি বুঝে কলম গুটিয়ে রাখলাম ।

দরজায় ঠক ঠক আওয়াজ

 - খুলুন

 - হ্যাঁ বলুন

 -  এখানে একজন মেয়ে আসেনি  ?  খুব বেশি বয়স নয় । জিন্স পরা

 - না না এখানে কেন আসবে । এটা তো আমার শোয়ার ঘর । এসে থাকলে আমি তো জানব ই । না হলে আপনারা একটু দেখুন ।

সন্দেহের দৃষ্টি যেন কীরকম ফিকে হয়ে গেল ।

 -  আচ্ছা  ok


ওহ্  বুকেও থার্ড ডিগ্রি হয় জানলাম

- এই যে এইবার বেরিয়ে এসো

 - খুব বাঁচালেন । আর একটু থাকি । তারপর বেরিয়ে যাব । এক কাপ চা খাওয়াবেন ?  ঠিক আছে আপনি বসুন আমিই তৈরি করে খাওয়াচ্ছি । সুযোগ দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ ।


সেই নিরুপায়ের দৈর্ঘ বরাবর যে মানুষগুলো জড়ো হয়েছিল তারা ফাঁকা হতে লাগলো একে একে । অনেক দূরে মাইকের আওয়াজ । আমি কয়েকটি সাবানের কথা ভাবছিলাম । পরশু ফেসবুক এ একটি status দেওয়া হয়েছিল একটি সদ্যজাত শিশুর ছবি সমেত  -   আকুল আকুতি সেই ময়লাফেলার ড্রামে ফেলে রেখে যাওয়া শিশুটির মায়ের স্মৃতি । দয়া করে যেন নিয়ে যান শুধু শিশুটির মুখ চেয়ে ,  সেই নিষ্পাপ শিশুটি যেন মাতৃত্বের স্বাদ না হারায় । প্রয়োজনে সমস্ত খরচ দেওয়া হবে মা কে অথবা আত্মীয়দের ।


আমার সাবানের ভাবনার সাথে এই ভাবনাটি এই ভাবনাটি মিলল না কারণ একটি খুব তুচ্ছ এবং অন্যটি মহৎ। শিশুটি আপাতত থানায় রাখা আছে । পরে হোমে পাঠানো হবে ।

 -  চা নিন

  - ফাইন। আচ্ছা এত চাপের মধ্যে কীভাবে চা করলে

 -  আরে চাপ তো আপনি সামলালেন । আমি তো শুয়ে ছিলাম ভয়ে ভয়ে ।

 -  খুব অদ্ভুত লাগছে

 -  তাই ?

 -   হ্যাঁ । কিন্তু আজ হোক কাল ওরা তো ধরবেই। তারচেয়ে বরং নিজেই ধরা দাও । বলো তোমাকে রেপ বা মার্ডার করতে চেয়ে ছিল ওরা। আত্মরক্ষার তাগিদে হয়ে গেছে । অনিচ্ছাকৃত  ।

 -  না  আপনি জানেন না । আমি খুন ই করতে চেয়েছিলাম । আচ্ছা আমি তাহলে আসি । খুব  উপকার করলেন ।
হাওয়াতে ছায়া মিলিয়ে গেল না । কিন্তু মেয়েটি মিলিয়ে গেল। এর পরের অংশটা শুরু হয়েছিল ঠিক সাতদিন পরে এবং আমি নিজেও খুব ব্যস্ত হয়ে পড়ে ছিলাম আমার ব্যক্তিগত কিছু কাজে তাই শেষমেশ ঠিক  কী হয়েছিল বলা যাচ্ছে না । গত দশ পনেরো দিন পুলিশের গতিবিধি আমি নজর রাখিনি । আমার রাখার কথা নয় । কিন্তু কাগজে একটি খবর দেখে চমকে উঠলাম  -   যুবক খুনে গ্রেফতার যুবতী । তথ্য প্রমাণের অভাবে পরে জামিনে মুক্তি ।

     বিস্মৃত হলাম । কীভাবে ই বা খুন করল যার কোনও প্রমাণ নেই । পেশাদার খুনি হলেও ধরা পড়ে । তাহলে কি ও খুন করেনি । বা অন্য কিছু


জানালার পাল্লাগুলো খোলা আছে । রাস্তা দিয়ে যতদূর দেখা যায়  আজ একটু ফাঁকা । আখের রস বিক্রেতা,   পল্টুর পানের দোকান  ,  ঝিলমদির এগরোল স্যস মাখানো সব ই তো ঠিক আছে । তাই গল্পটা একটু বাঁ দিকে সরতে চাইছে । ওদিকে সন্ধে নামলে টর্চের আলো ফেলতে ফেলতে এগিয়ে আসেন বিশ্বরামবাবু। বিশ্বরামবাবুর চোখ নিশিতে পায় । তখন কোমর পর্যন্ত ধুয়ে নিয়ে সবিতা বৌদি । টিভি তে যে খবরগুলো কভারেজ পায় না তা হল খুব শান্তিতে থাকতে চাওয়া মানুষজনের দৈনিক লিপি ,  মনস্তাত্ত্বিক সংযোগ,   হেটেরোজিনিয়াস টেনশন । ঘড়িতে এগারোটা দশ । আমি ঘুমাতে যাব কিনা । এখন তিন ধরনের  option থাকতে পারে ।

1 : ঘুম না হতে পারে

 2 : গাঢ় ঘুমে উল্টোপাল্টা স্বপ্ন দেখতে পারি।

 3 : মেয়েটি ফিরে আসতে পারে আবার


মনের বিকল্পে যে মুখ এগিয়ে আসছে তা ওই মেয়েটির নয় ,  পুলিশগুলোর নয় ,  জবাই হওয়া ছাগলের নয় । তা হল আমার হাঁটু সংক্রান্ত অব্যক্ত ছায়া ।


সুধী পাঠকগণ,   এই sms টি সংরক্ষণযোগ্য হলে রেখে দেবেন -

যা এই মাত্র এল আমার মোবাইল এ

-   আজ তিনদিন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছি। প্রচন্ড ঝড়ে সব তছনছ । নিজস্ব আলাপচারিতায় ঢেউগুলো পাথর । কাছে টাকাকড়ি বেশি নেই । যদি আবার বনধ হয় তাহলে দুর্ভোগের শেষ থাকবে না । ফিরে যাওয়া ও দূরস্থ -


অচেনা নাম্বার । যা বাব্বা !  এভাবে whatsapp  এ কে  sms পাঠালো। কিছুক্ষণ ভেবে সাব্যস্ত করলাম  এ  রং নাম্বারে ঢুকে গেছে । হয় এরকম । ok no problem.  চলো


আবার sms tone   আর একটি  sms ঢুকল -   সেই নাম্বার !

    -   খুনের কিনারা কিছু পেলেন  ?  ও সরি  ,  আপনি তো ভুলেই গেছেন । পুলিশ কিছু খুঁজে পায়নি । আমি আপাতত মুক্ত ।

-   -      -                -          -           -       -


একটি স্বপ্নের মালিকানা আমি কাকে দিয়ে যাব  ভাবতে ভাবতে দেখছি আমার ঘরে কোনো ছায়া পড়ছে না । স্বপ্নের পিছন দিকটা অন্ধকার । আমি বাঁ দিকে ঢুকলাম


দূরত্বের ভেতর / নীলাব্জ চক্রবর্তী



কমলা গন্ধের দিন
হাইওয়ে
কী একটা ভাষা হোলো
স্থির ফ্রেমের মধ্যে
চিঠি বদলে নেওয়ার কথায়
একটা ভারী দৃশ্য ছিঁড়ে ফেলা
বিভ্রান্ত একটা সমকাল
মেকিং অফ আ পোয়েম শিখতে এসেছে
একটা গলি
ফুলে উঠছে অতয়েব
কাঠের বাগান ফুলে উঠছে আয়নায়
এভাবে একটা দরজা আঁকা হোলো
ঋতু ভেবে
দূরত্বের ভেতর
রেখে আসা হোলো চিহ্নের বিস্ময়গুলো...

হাঁটু মুড়ে এই জীবন 

সূরজ দাশ 


উচ্ছন্নের কাছাকাছি যেতে যেতে
দেখা হয় তোর সাথে


কোলাহলে ক্রমাগত
অন্যমনস্কতা ঘিরে
কিলবিল জমে যায় এই দেহ


দূরের আকাশ থেকে নামে
বাণিজ্যিক ছাই


দল বেঁধে ঘোরাঘুরি
শ্রমিক জীবন
কেবলই নামতে জানে
কেবলই ডুবতে জানে
এলোমেলো ঘাসের ভেতর
এই জীবন
হাঁটু মুড়ে
কেবলই লুকোতে জানে


পুরাকাল থেকে ওঠে আসা
এই দেহ দেহান্তর
উচ্ছন্নের কাছকাছি থিতু হয়


জমাট বাঁধার পর দেহ ঘিরে কিলবিল
ছটফটানি সামাজিক ঘুমের আকাশে
জাল বোনে, গান গায়
স্বাস্থ্য কথা হয় বিকেলবেলার !


কাঙাল নদীনালা


সমস্ত মেলামেশা ভেঙে দিয়ে যে সব রাস্তারা
চলে গেছে স্বপ্নের হলুদে
সেখানে মেঘ – বৃষ্টি এলে সাঁতরাই দুজনে
চেনামুখেদের কাছাকাছি গাঢ় হই হাসিমুখে
যেভাবে জলের বুদবুদ নিরাপদে ভাতঘুম দেয়
সেভাবে উড়ছে এই কাঙাল নদীনালা
এই তা – থৈ একাকীত্ব বাউলপাড়ায়

দৃশ্যবার্তা কোলাজ সিরিজ 
রাহুল গাঙ্গুলী




মাঝামাঝি অবস্থান ~ ১টি দৃশ্যবার্তা কোলাজ
------------------------------------------------------------------
আপাতত ~ চওড়া পথ : স্থান ~ ব্যান্ডামুরালঙ্কা
অক্ষাংশ : ৮১.৯৫৭১৫
দ্রাঘিমাংশ : ১৬.৪৪২৯১

সময় ~ অভিন্ন বুদবুদ।ব্লাউজ খোলা রাস্তা
নিগার ~ নিগার ~ নিগার ~ ব্ল্যাক্-ডায়মন্ড
হ্যান্ড ওভার্ : রাস্তা ~ খুঁড়ে / নিংড়ে / কাঁচিয়ে ~ ক্রমশঃ গোপন-উপত্যকা-র সমতল সমীকরণ।এগিয়ে যাচ্ছি ~ এগোলেই ~ '১ম সূত্র গাছ বাঁচাও : জল বাঁচাও'।এখন সময় সকাল ১০-০০।২১/০২/২০১৮।প্রভাতফেরী গাছেদের সাথে শেষ হলো ~


রাহুল : শিকড়ে ভিজিয়ে নিচ্ছি শরীর।টানা জ্যামিতিক রেখায় ~ তুমিও কেবলিই আষ্টেপৃষ্ঠে দরজা খোলা পৃথিবী 

গাছ : মতামত ব্যক্ত করি।আমার ভিতরে অব্যক্ত নিষেক।নিষেক-জল ~ স্নান করে রোদ / পাখি / ছায়া।তোমাদের যাবতীয় কচিকথা ~ বিদ্যুৎ নেশাভীড়ে মহাজাগতিক

রাহুল : তবে যে শিখিয়েছো জন্মহীন নিরাকার বাসস্থান।কতো রূপে ভীড় করে জানলাহীন ঘর।ঘরেরও ২টো চোখ ~ ১টা নাভি ~ পিচগলা ফুসফুস

গাছ : আসলে কি জানো ~ কিছু বললেই শয়তান ও ঈশ্বরের ভিতর গাছগাছড়া খেলা।খেলা ভাঙে ~ শরণার্থী শিবিরে চলে উল্লাসের সংকট।সাক্ষ্য-প্রমাণ তোমাদেরই ~ অনুবীক্ষন চওড়া হয়

পাখি আসছে পাখিঘর থেকে ~ উুঁকিই ~ টুকিই ~ আপাত ১টি ক্রোমোজোম অথবা আংশিকভাবে চুম্বক্

পাখি : চূড়ান্ত পালক_____ / ব্যাসার্ধ ____ ওমজ্বর /
হলদেরঙা নদীকুসুম______

রাহুল : এই যে সীমাবদ্ধ সময় ~ যেখানে তুমি-আমি কেউই পরিচিত নই।শুকনো পাখিদ্বীপ ~ ('শ' ~ 'ব' ~ 'হ') ~ উপঘাসে চন্দনফোঁটা

পাখি : তবে কেনোই বা উড়তে চাইছো না।শুধু কি ডানা থাকলেই ওড়া যায়।সীমাবদ্ধ চিরকুট ওড়াও ~ দেখো : তোমরা ঠিক নদী হয়ে গেছো

গাছ : নদীমাতৃক উপনিষদ ~ অন্ধকার কেটে সম্পূর্ণ করি প্রিজম-বুদবুদ।অথচো জানি, লোহার আকরিক ~ শেষ ঠিকানা।তবু কোনো উপ-অপ-আঘাতহীন শান্তি পতাকা।আনন্দে পতপত্ ইপ্-শিরার আগমনী দাহ ~ আদুরে পাথরের ভিতর দাবানল

পাথর : কি মজা আমিও তোমাদের ভিতর আছি ~ আমার আদর।জলে ধোয়া মেঘ।মেঘের ওপারে গাছমতি বসৎ।তারপর ~ মিঠে আলোর খনিজ আশ্রয়।এসো ~ একসাথে খুঁজি

রাহুল : এযাবৎ আশ্রয় খুলে ~ মিথোজীবী অলংকার।প্রতি সমান্তরাল যাবতীয় : সুখ-অসুখ-ভ্রূণ-শরীর-জয়-পরাজয়।আগ্নেয়গিরি শান্ত হোক

পাখি : আসলে বলছো না সমাপ্তিকথনের প্রি-ডেটাশিট্।কেবল ~ ঘুম-অতিঘুম-পরাঘুম : হাতড়ে যাচ্ছ নুনমাটির আশ্রয়।বলছো না ~ ১ফোঁটা জল ~ তৃষ্ণার্ত কঙ্কাল ~ গোটা ব্রহ্মাণ্ড ~ শুরু থেকে ঘোরে ~ ঘূর্ণনমান = ০-দশায় অসীম


আরো ১টু হেঁটে চলি।অভিন্ন সৌরমাস।সময় দুপুর১২-০০।গন্তব্য সমুদ্র।সামুদ্রিক ঠিকানা।পাহারায় ক্যানভাস ~ মিশে যাচ্ছে গাছপাখি ~ গলে যাচ্ছে রুমালের মোম।পাথর + সমুদ্র ~ প্রবল উত্তাপ বিনিময় ~ ব্যক্তিগত জ্যামিতির নিঃসরণ 


শব্দরূপ : রাহুল

(দৃশ্যবার্তা নিয়ে কাজগুলোর আরেকটু এগিয়ে যাওয়া।এই কাজটির মূল উদ্দেশ্য হলো ~ মহাব্রহ্মান্ডের অন্তর্নিহিত প্রকৃতির ভিতর প্রবেশ এবং তার উপাদানগুলির সাথে আত্ম-উপলব্ধির সংযোগ স্থাপন ~ বার্তা বিনিময় মাধ্যমে।প্রকৃতির এমন কোনো উপাদান নেই, যা প্রাণস্পন্দনহীন এবং যা আমাদের উপকার করতে চায় না।ক্রমশঃ)


দেবাশিস মুখোপাধ্যায়ের  গুচ্ছ কবিতা :

অন্তর্বাসের রিংটোন
দেবাশিস মুখোপাধ্যায়

১ .
রাতকে কোকিলে পেয়েছে । বসন্ত
মেখেছে সারা গায়ে । অন্তর্বাস
খুলে রোদস্নানে ডালিয়া ও চন্দ্রমল্লিকা ভোর ভোর।  রিংটোন বাজে চোখের অর্কেস্ট্রায় । অসুখের বাইরে ডুব মারি সুখনামা মোহ
মোহ দেহে

২.
পার্কের বেঞ্চিতে শুয়ে আছে হলুদ
পাতার মাঘমাস । তার শিরায় উপশিরায় উপোসীর বারমাস্যা ।
বুকের গভীরে ক্ষত । নীলাভ 
আলোয় পাণ্ডুর । আশ্চর্য তবুও
নড়ে । পাশ ফিরে শুলে চোখে
ভাঁটা লাগে আর ঠোঁটের ভাটিয়ালি
চুপ মেরে যায় 




৩ 
ভাঙা আয়নায় তুমি  ছড়ানো । পাথর আকবর বাদশা গলে
যায় ভোরের আনারকলিতে ।
জীবন্ত সমাধির থেকে উড়ে আসে
কান্নার ডানা । ছায়ার নাচের
পর তুমির শীতল হয়ে যাওয়া 
বোঝে না ময়ুর সিংহাসন 

৪.
যমুনার জলে তাজের শ্রমিকের
কাটা আঙুলের আর্তনাদ । ফ্যাকাশে
মার্বেলের মুখ জোছনার গা ছুঁয়ে ।
নিঃসঙ্গ প্রেমের আত্মা মুক্তির
পিয়াসী কালো শ্যাওলায় । পাষানের ক্ষুধা মেহের আলিকে জাগায় । তফাতে পাখির বাসায় ডিম ফোটে । নতুন অতিথির কিচিরমিচির যেন আরেক নতুন ইতিহাস



৫.

শামুকজীবনে চলে যায় দেয়ালে
দেয়ালে । লেখা দেখি । সে দেখে ।
তাকে খুলে দিলে লজ্জা নেই । সে
জানে বিবাহিত মানে । পাঁজাকোলা
করে তাকে তুলি  । তুলি রঙে ভরে
যায় । আলাদিনের দুপুর প্রদীপ জ্বালিয়ে সাধ মিটিয়ে নেয় । শুঁড়
বার করে পাতার সাথে আলাপ
মাঝে মাঝে । তারপর ভিতর ঘরে
আলাপন নিজের সাথে একা আবার
যুদ্ধও

৬.

কুড়াল নিয়ে ঘুমিয়ে আমার আমিষ
চোখ । বল্কলের নীচে তুমি রেখেছ
মাংস ও দুধ । ধারালো স্বপ্নে তাদের
ছিঁড়ে খাই । পাতা পাতা মরমিয়া
কথা ওড়ে । পাখির সংসার আছড়ে  ব্যথা ওঠে শিকড়ের । মাটিকে  বোঝাতে পারি না আমার ভয়ঙ্কর
খিদে আর মন সে তো লোহার
চাদরে মোড়া কঠিন নির্জীব


৭ .
শোকার্ত ভোরটির মুখে চাইতে
পারি না । রোদ্দুরের অভাব পাই।
শীতের পোশাক হেঁটে যায় কিছুটা
ফিকে । ভাঙা স্বরে ভরে আছে বাতাস। বসন্তের দেবীটি গলে জল ।
বাঁশবনে পড়ে থাকা তার ছেঁড়া
ওড়নায় হুমড়ি খেয়ে পড়ে ভাঙা
ঘট। ঘটনা যাই হোক না কেন যেন
আজ পাড়ায় অরন্ধন 

৮.

নিভে আসছে  বিকেল পার্ক । কাঁটাঝোপে পড়ে আছে সন্ধ্যার
ডিম । মৃত শিশুটির মুখ কুয়াশায়
মাখা চারার উপর । নির্জনতার রঙ
ধূসর। বিলে নেমে আসা পরিযায়ী
উড়োজাহাজ সাজ পরে নেয় । আকাশের লণ্ঠনটি দুলে যাচ্ছে
মৃদু ছায়ার পাশে আর ফিরে আশা
শুকনো ডালের ওপর গাছের শীতল শ্বাস




৯.
এ দেশের ভূগোলে কেঁদে উঠেছে দিন । লাঙলের ফলায় কুরুক্ষেত্রের রক্ত। ধর্ষিতা মাটিকে  বলতে পারছে না কংক্রিট হয়ে যাও । উপবাসের বাস ছড়িয়ে পড়ছে । বাসাগুলি লালন করছে পাথর আর মানিপ্লান । পরজীবী লতারবাড় শুষে নিচ্ছে রস । রসিকতাহারিয়ে পড়ে আছে নীরস নিরসনের কোনো উপায় নেই জেনে । মেগাসিরিয়ালের গল্প স্বপ্নের হাট খুলেকেড়ে নিচ্ছে একটা আস্ত তুমি আর ক্রমশ বিষাক্ত এক ছোবল নীল করে দ্যাখো দুর্বাদলশ্যাম
বিশ্বরূপের আসরে মেতেছে


১০.

খেয়ালে বেখেয়ালে চাঁদ বারান্দায়
ভালোবাসা। তরুণীর সে পসরায়
হাত রাখি । খিদে চাগিয়ে ওঠে । ঠেলে দি ক্রমশ  নিন্মাঙ্গ। গমনের
এই পথ বর্ণাঢ্য । তুলসিপাতায় ভেজা মুখোশটি ছেড়ে রঙিন 
মাছটি কাচের অন্তর্বাসটি  আকোয়ারিয়ামের ছিঁড়ে ফেলে । সে
জোছনায় আঁশগন্ধ মাখি । সে কুঠুরি
একা ভোগ করি আর দেখি সমস্ত
ভুলের ঠোঁটে ভাসান নাভি পদ্মের