Tuesday, February 27, 2018

জাহানারা পারভিনের কয়েকটি কবিতা  

১. বন্ধুত্ব....
সেরে ওঠার পর শুধুই জাউভাত, ধনেপাতার স্যুপ.
সেরে ওঠার পর চৌরাস্তার মোড়ে দেখতে পাইনি লাল ঘোড়া;

যুদ্ধাহত সৈনিকের পায়ের নখে গজিয়ে ওঠা ফোড়া
      লাল দিনে পাহাড়ের খুপড়িতে ফেলে আসা
        নেপালী মেয়ের একা থাকার চেয়েও সহনীয়
            কে সেখানে রেখে গেছে পরিত্যক্ত শার্ট?

শার্টের পকেটে রানসরা গ্রামের টিকেট
হাতের পিঠে মানচিত্র, গরমে ঘেমে ওঠা পতাকা;
রোদে পোড়া, বৃষ্টিতে ভেজা,তালি দেওয়া কাপড়কে
কাফন ভেবেছিলাম একদিন,গীর্জার ঘুম ভাঙার পর
সেই ধারনা ডুবে গেছে তুষারঝড়ের উদ্যানে..

আজকাল আর নখে ময়লা জমতে দেই না,
বাড়ি ফেরার পর, গরম জল তোমাকেই বন্ধু মনে হয়...

২. বোতলে ভরা ভূত...

হারিয়ে ফেলার পর খুজে পাওয়া যায়, বেতফলের ঝোপ?
হাতের আয়ু রেখা, গাঙে ডুবে যাওয়া সুহাসিনী গ্রাম!

বাধা নৌকার কাছে সব প্রতিশ্রুতি আদায় হলে,
গলুইয়ে ওঠা জল সেচে মিটিয়ে দিও বৈঠার দাবি;
ক্ষমা চেয়ে নিও, ইনকাদের গ্রামে হাসের মমির কাছে
শিকারীরা যাকে গুলি করেছিল দুর্ধর্ষ রাতে
তুমি তো জান যাদুঘরের স্বভাব,
     ইতিহাসের প্রতি একমুখী মুর্খ প্রেম....
এই প্রেমের কাছে নতজানু চোখের জল ঢেলেছি
          তৃষ্ণার্ত আগরের বনে, সুগন্ধের নাম গন্ধ নেই..

পানশালায় বসে থাকা বৃদ্ধদের দীর্ঘশ্বাস গুনতে গিয়ে
গণিতে কাচা আমি বোতলে ভরে নিয়ে এসেছি
বাতাসে ভাসা প্রত্নহাসি, একটি দুটি দলছুট জোনাক...

৩. নদীজন্মের আগের কথা

কেউ একজন বলেছিল,
হাতের তালুতে ধান রাখলে গজাবে নতুন চারা
আকাশে ভেসে উঠবে ফসলের সমার্থক নাম
বৃহণ্ণলা গ্রামে জন্ম হবে সুস্থ শিশুর

রুপকথার গল্পে মরচে ধরেছে এখন
হাশরের মাঠ, পুলসিরাতের সাকোর কথা উঠেছিল যেদিন
সেদিন ভাসমান বেদেদের বহর সরে গিয়েছিল দূরে
 শহুরে ভাটফুল আর নদীজন্মেরও অনেকটা পেছনে

ঘৃণার জলে খুব তাজা থাকে স্মৃতির শাপলা
শালুকের তাতে কিছু এসে যায় না...

৪. সাপ   
করিডোরে পড়ে আছে সাপের খোলস
                     তার মানে,  উপদ্রপ এখানেও
উপদ্রুত এলাকা থেকে এসেছিল যারা,
যারা অলস মফস্বলের জলে কেটেছে সাতার
তাদের সহবাসে জন্ম যে নতুন প্রজন্মের,
                         তারাও রেখে গেছে বংশবীজ

পরিত্যক্ত খোলস দেখে ভাবি,
এই পোশাকের জন্য শোক আছে কোনো, কিংবা স্মৃতি?
যেমন স্মৃতির ভেতর ফোটে হলুদ শর্ষে
পাকা শর্ষের তৈলাক্ত হাসি, তার রঙকি বৃদ্ধ গ্রামে
তিলক্ষেতে থাকা সাপের রঙের কাছাকাছি?
হাসি দেখে আজকাল কিছুই  মনে হয় না,
কোনো মুগ্ধতা, বিস্ময়, বিরাগের কাছাকাছি নেই বলে
অন্ধকারে জ্বলে ওঠা সাপের মনিটিকে চেনা যায়,
চেনা যায় পোষা কবুতর,
        সাপের মালা পড়ে, পায়ে, উড়ে গেছে নির্ভয়ে 
এসব উড়াল অবমুক্ত করা হবে না? ছাপা হবে না,
 রক্তাক্ত পায়ের জলছাপ, আকাশ থেকে ঝড়ে পড়া রক্তের চিহ্ন?

No comments:

Post a Comment