Wednesday, February 28, 2018


বাংলাদেশ বিভাগ : 



কবিতা করিডোর ( ফেব্রুয়ারি সংখ্যা )
মুখবন্ধ 
ফারহানা রহমান 

কবিতা এমনি এক নৈঃশব্দ্য আর নিঃসঙ্গ শৈল্পিক নির্মাণ যাকে তুমি অন্য কোন শিল্পকলার আলোর বিচ্ছুরণে চাইলেই প্রকাশ করতে পারনা । যে কথা গল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধে বললে ঠিক সম্পূর্ণ বলা হয়ে ওঠে না অথচ পুরনো পাতা ঝরার মধ্যে যে মন্দিরার সঙ্গীতের ব্যাকুলতা তাই তো শুনতে চায় মন । সন্ধ্যায় পাখিদের কিচিরমিচির মুখরতায় নিজ গৃহে ফিরে যাওয়ার যে আকুলতা , বহুদূর থেকে ভেসে আসা ট্রেনের হুইসেল অথবা রাতভর ফুলেদের একটু একটু করে পাপড়ি মেলার জন্য যে অপেক্ষা, এই তৃষ্ণা এই তীব্রতা মেটায় যে সে তো শুধুই  কবিতা ! কবিতা এমনই এক কুসুমিত সংগীত যাকে আঁকতে হলে তোমাকে মেঘদূতের আশ্রয় নিতে হয়, নিতে হয়  বিষণ্ণ সন্ন্যাস । পরতে পরতে চর জমে গেছে যেই নিষিক্ত বিশ্বসিক সেখান থেকেও ভেসে আসে ঠুমরীর সুর,   সেই সংগীতের মূর্ছনায় শ্বাস নিতে পারলেই তুমি শুনবে শিশিরের শব্দ, দেখবে জলের অনুপম ব্যাঞ্জনার মৃদুমন্দ বিস্তার, আলোআঁধারির জ্যোতির্ময় দিনলিপি ! 
যে প্ল্যাটফর্ম তোমাকে অপেক্ষা করতে শিখিয়েছে তার কাছেই তো তোমার হুইসেলের ঋণ। 

প্রতিবারের মতোই এবারো গুচ্ছগুচ্ছ কবিতার ডালা নিয়ে হাজির হচ্ছে কবিতা করিডোর... কবিতার সৌরভে বন্ধু তোমাদের জন্য রইলো অশেষ ভালোবাসা !   


অনন্তকাল ধরে ধুলোর ভিতর লুকোনো ছিল তোমার মুখ
( - ফারহানা রহমান ) 


১.
আয়না ঘষে ঘষে প্রতিধ্বনি মুছতে চেয়েছি বলেই
হেসে উঠেছে পশমিনার নক্সা
আমার হৃদয় যখন নেশায় ভিজে আছে 
আর মন কেমন করা এইসব বাঁধন
যাকে কখনো দেখা যায়না
কোথাও যার স্পর্শ পাওয়া হয়না , 
তারই স্কেইচ করে চলেছি সারাজীবন ধরে 
এই ভুল সময়ের বেদনাগুলোই ঘোরের মতো
দূর থেকে চেয়ে থাকে চোখের জলের ফোঁটা হয়ে

তবু এ শহরের প্রতিটি আয়নায় আমি শুধু মৃদুস্বরের মতো ভেসে থাকতে দেখি তোমার মুখ ।
২.
বালুকনার মজ্জায় যে বুঁদ বুঁদ আলো এসে জমে
তারই নির্যাস তুমি ছড়াচ্ছো আকাশ জুড়ে
হায় আশনাই!
কবিতার সাথে যখন একবার শুয়েছো
দুনিয়ার অন্য কোন বিছানায় কি তোমার ঘুম আসবে?
পাপের পথে হেঁটে হেঁটেই যখন পুণ্য খুঁজে চলেছো, জেনে রেখো গভীর আঁধারেও কখনো কখনো একটি জোনাকি জ্বলে থাকে... হয়তো ভেবেছো,
তুমি তাকে হাসির হল্লায় মাতাবে  আর বেণুনির মতো বুনে যাবে নক্সি কাঁথার গল্প

অথচ অনন্তকাল ধরে কোথাও না কোথাও আমি ধুলোর ভেতর শুধু তোমাকে একবার দেখবো বলেই লুকিয়ে ছিলাম ।
৩.

কোলাহলের ভিতর হারিয়ে গেছে পুরনো দস্তানা
আর ল্যাম্পপোস্টের এক চিলতে আলোতে
যখন হেলান দিয়ে বসেছে বসন্ত
ঝলমলে একটি দিনে এভাবে তুষার ঝরতে ঝরতে রাত গভীর হয়!
আজ অনেকদিন পর
বৃষ্টিতে ভিজতে চেয়েছিলো পাইনবন
তন্দ্রাহীন এই রাতে ফায়ারপ্লেসে জ্বলছে ক্যামেলিয়ার ধুপ!
সাঁওতালি নারীর মনে জ্বলছে অক্ষয় মালবেরি
গানের সুরে হারিয়ে যেতে যেতে ভাবি
আমাদের এই ধুলোমলিন গার্হস্থজীবনে
শেষ চুম্বন আর্তনাদ করার আগেই
আগামী পূর্ণিমাতে বালির সৈকতে নয়
নীল বাগানে যেতে চাই...

৪. 

এই শীতে পাখিরা নিয়ে গেছে উষ্ণতা আর
ভুল করে কিছুটা বাড়তি বিষণ্নতা
ফেলে গেছে পালকের সাথে
ছায়াদের দীর্ঘ হওয়ার মরসুমে
বদলে যায় কত ক্যামেলিয়ার চেনা ওম অথচ
পথচলার কথা ভেবে যেদিন প্রথম তোমার হাত ধরেছিলাম,

পরিত্যক্ত পালকের সাথে
ওরা ফেলে গেছে আমাকেও...

৫.

ক্ষুদা বা প্রেমে এই যে নৈসর্গিক যন্ত্রণা
এভাবেই নিজের ভেতরের অন্ধকার থেকে আরও গভীর অন্ধকারের দিকে ভ্রমণ
অথচ যে ক্ষতের সৌন্দর্য কখনো তোমার ছোঁয়াই হয়নি
বুঝতে পারছো হয়তবা তা তোমাকে শুধু বিভ্রান্তির ফাঁদেই ফেলবে
সুরাপাত্রের বর্ণীল চিত্রের মতো
বিস্ময়ের উদ্ভ্রান্ত চোখ নিয়ে আমি তাকিয়ে থাকি আয়নার দিকে
আর সেখানেও তুমি চাও রঙিন সুতোয় বোনা তসবির

কখনো তোমার জানাই হয়না
ঠিক কোন কথার ফাঁদে জড়িয়ে লাওয়ারিশের মতো পথে ঘুরে ঘুরে আঁজলা ভরে জমাচ্ছো ধুলো
যাদিয়ে তুমি দুহাতে নিজের শেষ মূর্তিটাই বানাবে...

No comments:

Post a Comment