Monday, February 26, 2018

কবিতার সঙ্গে কিছুক্ষণ/  বেবী সাউ 

"ঈষৎ অলকানন্দা" 
কবি- যাদব দত্ত 
প্রচ্ছদ- অতনু বন্দ্যোপাধ্যায় 
প্রকাশক- এখন বাংলা কবিতার কাগজ ;
জলপাইগুড়ি

"আভূমি নাভি ঘর" 
তারপর শুরু এক বিরাট যাত্রা। পথ। জার্নি। দুধারে কাঁটাঝোপ। ক্ষুধার দোকান। কবি যেন ভ্রমণের জন্য ভ্রমণের গান খুঁজে বেড়াচ্ছেন। স্থির নন। আবার অস্থির হয়ে তাড়াহুড়োতে হারিয়েও ফেলছেন না চাবির রিং। বরং বলা যায়, তর্জণীর ফাঁকে চক্কর কাটছে কাল, সময়---ইতিহাস ভূগোল। 

" ঋতুমাস পেরিয়ে স্নানে ছড়ায়
আদুল গায়ের রাস্তারা 
আলিগড়ের বাটখারারা " ( বাঁশীর রাস্তা) 

তেমনি অজস্র তদন্তপুর পেরিয়ে, যোগফল ভেঙে কবি লিখেছেন ফেলেন ফর্সা জিভের সাহস। বাজে গালিব এর বাঁশি। জামশেদপুর তখন চুপ থাকে। শোনে আটাকলের ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর শব্দ। আর গরম হয়ে ওঠা হেমন্ত যুগের স্রোতে ভাসে। 

" তার ডাকনামের বিন্দুতে জন্মদিন হোঁচট খায় 
অনু শিশুফোটানো নক্সাকাঁথা জাগো 
ফস্কা গেরো কড়া নাড়বে 
বেলুনে এবার" ( ঈষৎ অলকানন্দা- এক) 

অথচ সেই কবি যখন দীর্ঘ সফর শেষে পৌঁছায় হৃদয়ের গভীর অন্ধ কুঠুরিতে, দেখেন --- 
" এই গালিব স্ট্রীট কখনো ভেঙে পড়ে না 
বেহালা কাঠের থাবা শুধু বাজাও 
...
... 
... 


ইতস্তত সমুদ্র উকি মারে 
বারান্দা ভাঙলেও অলকানন্দা থাকে 
রানিমৌমাছির একটা পাগল ঝর্ণা
......" (ঈষৎ অলকানন্দা- সাত) 

হৃদয়ের খোঁজ সহজ নয় বলেই হয়ত  সত্য এই পথপরিক্রমা। এই অন্বেষণ। শিসমহলে ঝলসে ওঠে নিজস্ব  অবয়ব। গৃহপালিত জোনাকির খোঁজে 
হেঁটে বেড়ায় জলবন্দী নূপুর। জলস্রোত ভেসে যায় দূরে। ভাসায় কাকে! আর তখনই কবি তৈরী করেন এলাচ দিঘি। 'রুটিনের জাহাজ', 'বানানো ঘর' 'আব্দার' 'ম্যাকগিল' 'জরুল' দুর্দান্ত একেকটি কবিতা। নতুন নতুন শব্দের ব্যবহার, ইমেজের ব্যবহার, ধ্বনি সৃষ্টি প্রতিটি কবিতাটিকে এক আশ্চর্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। সাজিয়ে তুলেছে। বহতা নদীর মতো। এরকমই একটি -- 

" বুনোদের  জ্যামুক্ত তীর হলুদের কৌটোয় মিশে যাচ্ছে 
রোদ থেকে বানানো শিশুর ছবিতে খুঁজছো একটা চেনা মুখ ... "


কাব্যগ্রন্থটি জুড়ে বসবাস করছে সাঁতারের অতল। প্রচ্ছদটি অপূর্ব। রঙ আর ইমেজের সঙ্গে ফুটে উঠেছে এক মোহমুগ্ধ অলকানন্দা। প্রাসঙ্গিকতা ভেঙে জেগে উঠছে মোহনীয় রূপের প্রকাশ। শব্দের অলঙ্কার ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রচ্ছদ এবং কাব্যগ্রন্থটিতে। নতুন এক পহেচান। তাই এখানে পাঠকও আবিস্কারক। নতুনভাবে, নতুন শব্দটোনায়। ঠিক যেন যাদু কাঠি ছুঁইয়ে দিয়েছেন কবি, মায়ার বন্ধকে। আর পাঠক হারিয়ে যাচ্ছে অপূর্ব ভালোলাগায়।

No comments:

Post a Comment