Monday, April 30, 2018


প্রসেনজিৎ মুখোপাধ‍্যায়র কবিতা 
|| কবিতার তারাটা ||

"আমার সাঁজবাতির তারা,
তোর আকাশ সাজাই;  
তোর গভীর নিঃশ্বাসী রূপ, 
আমায় শেষের কবিতা শোনায়; 
ওরে মনের পেখম পাঁখনা, 
তোর রাত্রি ঘন চুল আমায় স্নিগ্ধ করতে চায়; 
তোর শরীরের সেই ঘ্রান; 
আমায় নীল নদের স্রোতেতে ভাষায়।"



জ‍্যোতির্ময় মুখার্জির কবিতা
আকাশগঙ্গা


ধরা যাক, আমি প্রেমে পড়লাম
ধরলাম এই কারণে যে, প্রেমে পড়ার আর তো উপায় নাই

যাইহোক, তখন গাছ-ফুল-পাতা থেকে
ঝড়ে পড়ল টুপটাপ বসন্ত
হয়তো অকাল বর্ষায় চাঁদমামা এসে টিপ দিয়ে গেল

এই সুযোগে, আমরাও মেপে নিলাম
আমাদের খুঁটির অজুহাত অযাচিত প্রশ্রয়ে

না-না, এইগুলো মোটেই গল্প নয়
বা, গল্প হওয়ার সুযোগটুকু মুছে ফেলে
তুমি ঝাঁঝিয়ে উঠলে
‘উফফ্, একটু সংসারী হও দিকি!’

ফুসসসসসসসসসসসস্……

অতঃপর, আকাশের দিকে ঠিক সাড়ে চোদ্দ ইঞ্চি
ঘাড় হেলিয়ে ভাবতে বসলাম,
আচ্ছা, সংসার আর প্রেমের মধ্যে কি
আকাশগঙ্গা থাকে ??




ব্রহ্মজিতের কবিতা 



বিদায় সম্ভাষণ
--------------------
উদয়ার্ণব বন্দ্যোপাধ্যায়



অভিনয়ে বন্ধ রেখে চল বেরিয়ে পড়ি, সারারাত নক্ষত্রদের পাশে প্রণাম, একা আমি কোন কারণই খুঁজে পাইনা বেঁচে থাকার, যে সময়গুলো ধারালো ইস্পাত হয়ে ওঠে, তুমি জানিয়ে দিও আমি এখন দ্বিতীয় শৈশবে

বড় অপদার্থতা সবকিছু নষ্ট হয়ে গেছে, নষ্ট হয়ে গেছে আমার অতীত পুনর্জন্ম, নষ্ট হয়ে গেছে আমার এ যাবৎ সফলতা-ব্যর্থতার ধারাপাত

সব নিংড়ে আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে চাই না কিংবা বসতে, হাত নাড়িয়ে এখন আর কবিতা বলতে চাই না, কিংবা বলতে চাইনা আমি জীবিত কিংবা মৃত, কিংবা কোন কিছুর বিরক্তিতে আমি আরো উন্মাদ হতে চাই

এক ঝাক কবিতার পৃষ্টা আমাকে বিমর্ষ করে, একঝাঁক হয়ে যাওয়া বিনিদ্র সংগ্রাম আমার মাথার ভেতর ফুটিয়ে তোলে জীবন্ত দেবদূত

আমি মানবিকতার কথা বলতে চাই না, আমি বন্ধুত্বের কথা বলতে চাই না, আমার দেশ...সমাজ.. পৃথিবী... বিরক্ত করে তোলে ঘুমের ভেতর...ঘৃণা দেয় এক লাঞ্ছিত আত্মার নিষিদ্ধ হবার ইতিহাস

আমি পুড়িয়ে ফেলতে চাই শিল্প-সাহিত্য 
আমি পুড়িয়ে ফেলতে চাই আমার কবিতার খাতা আমি পুড়িয়ে ফেলতে চাই মিথ্যা অহমিকা অপরাধ বোধ এবং আমি নিজেকে।



শম্পা মাহাতোর কবিতা 

ভালো থেকো
------------------
সরে আসি শুভকামনার ভিড় থেকে
যত দূর নীরবতা যায় শব্দ পারে না তত
মেঘ করে আসে সীমাহীন আপোষের
সীমানায়।

ভালো আছি। ভালোই তো আছি।
বিরতির সময়টুকু বিজ্ঞাপন হওয়াই নিয়ম
তেমনই দেখেও না দেখা মার্জিত রুচি

তাহলে, আমার যদি ইচ্ছে হয়
তর্ক করব বৃষ্টি ভিজতে ভিজতে
ভুলে যাব  বেমালুম
মিডিয়া প্রচারিত সম্প্রসারণ!

খবর
--------
খবরের গায়ে হাত রাখলে ঠান্ডা লাগছে
ডিপফ্রিজের ঠান্ডা

মাইক্রোওভেন ঝরঝরে করে দিল ভাত
একটা দানা আরেকটার গায়ে লেগে নেই
এখন আর।

তোমাকে মুখস্হ করব ভাবছি খাবার টেবিলে
মন বসছে না দেখা শোনা পড়ায়
সবকিছু এভাবে হচ্ছে যেন
হওয়ারই ছিল।

এমনই সময় তুমি বললে
বাথরুমের কলটা বন্ধ করে দিয়ে আসো
চৌবাচ্চা ভরে গেছে

আচ্ছা, পেট ভরছে না কেন! মন

আসন
-----------
শূন্যে ভাসমান সময় জানলায় ঢেউ আসে
মহাজাগতিক রশ্মি স্ক্যান করে পাঠায়
এই মুহূর্তে অপরাধীর সংখ্যা

শাস্তি কমে যায় তবু

অপরাধ একটা প্রবণতা মাত্র প্রমাণিত হওয়ার পর
নদীর ধারে আসন পেতে গল্প শুনতে বসি আমরা

আমরা ছেলেমানুষ।



রাজীব রায়ের কবিতা 


অনুভূতিমালা
২॥
সমস্ত পরিকল্পনা হাতে নিয়ে
বসে থাকে আমার মতো একটা দুপুর

স্মারক চিঠি আসে,
পরমায়ু দিয়ে অসুখ উড়ে যায়
মনে পড়ে—
কেউ কেউ দূরত্ব লিখেছিল

৩॥
সংংলাপ ও দৃৃশ্যাবলির পিঠে হাতপাখার হাওয়া

ইশারা বুঝি নি,
নিঝুম ছায়ার দিকে বৃৃত্ত সরে গেছে

দীর্ঘ অনুযোগের কাছে জমা থাকে মেঘ—
দূরত্বসূচক অনুভূতিমালা

কৌশিক দাসের কবিতা

গর্ভকেশর



বিরহী সমুদ্রের কাঁধে
প্রাত্যহিক নিয়মে
                রোদ ওঠে,
                         অন্ধকার নামে
এক একটি প্রশ্ন আছড়ে পড়ে তটে।
দূরত্বের সংজ্ঞা জানে নদী
ছুটন্ত ক্ষুরের মতো ধারালো
নদীর বুকে লুকিয়ে আছে
অজানা কতো টুকরো শ্লোক,
হিসাবের লাভ-ক্ষতি।

তবুও ঝাউবন ঘিরে থাকে
                       মোহময় টান।
কৃষ্ণচূড়া ঠোঁটের ছাপ সারা শরীরে
সমুদ্র ছুঁয়ে ফেলে সুরেলা পা
বেজে ওঠে জলতরঙ্গ,
গর্ভকেশর অপেক্ষা করে দু-জোড়া পায়ের।


শিরোনামহীন পাঁচটি কবিতা 
শিবু মণ্ডল 
১।
ঘোড়াগাড়ি ছুটে যায় বালির দিকে
কোকিলের শিস্‌ আর ঘোড়ার সহিস ডাকে মেঘ
মেঘ ডাকে বৈশাখ বনে
নিষিদ্ধ জল থেকে উঠে আসে বাড়িঘর
ঘরবাড়ি আর ক্রমশ বাড়তে থাকা বর্জ্য

২।
মুখ থেকে উঠে এলে রক্ত
বোঝা যাবে কত দম
ফুসফুস জুড়ে কান্নার অভাব
অনুলোম-বিলোমে যুক্তির জাল বোনা
ডাক্তারি পরিভাষায় যার নাম হাঁপানি

শুদ্ধ বাতাস সংবেদনশীল
এড়িয়ে চলে সমস্ত প্রণালী




৩।
তোমাদের মাপজোখ থেকে অনেক দূরে
যেখানে সাদা ঘোড়া খেলা করে
সহিস তার জলের খোঁজে
পৃথিবীতে জল নেই
শুধু বিষ শুধু বিষ

ফুটফুটে ঝর্নাটি চলে গেছে
মন্দির পেরিয়ে মসজিদ পেরিয়ে
জলের খোঁজে

মানুষের মাপজোখ থেকে অনেক দূরে

৪।
শিশুটি খেলে বেড়ায়
শিশুটি খেয়ে বেড়ায়
শিশুটি বড় হবে
শিশুটি বড় সামাজিক হবে
তারা ক্রমে ক্রমে নারী হবে
তারা ক্রমে ক্রমে পুরুষ হবে

তারা একটা অসুখ পাবে
একটা ব্যধি তাদের খেলনা হয়ে উঠবে
৫।
ছাগলের পাল এলে ঘণ্টা বাজিয়ে আসে
টিভির পর্দাজুড়ে ঘাস
টেবিলে রাখা স্বচ্ছ কাঁচের গ্লাস
কত মতবাদ কত প্রতিবাদ
গঙ্গার জল বয়ে যাবে কাবেরীতে
এই অপেক্ষাতে দুধে চা’পাতা ঢেলে বসে থাকি



দে ব জি ৎ

ঢেউ
____

কতোবার লালচোখে আহত
কিম্বা খুন
চুমুতে চুমুতে আবার জীবন

তারা গড়ানো ঢেউ
যে যে জল ভিজিয়েছিলো 

বহুবার বাদলা জ্বর
তাদের পাই
যেভাবে ফিরে পাই গোল্লাছুট

প্রিয় প্রিয় থমকানো সময়
জলপট্টি সাজায়

জ্বর সারতেই
সাপ নীলকণ্ঠ আকাশের নীল
ডুবে যায় চোখে

নতুন সিগারেট পোড়া ঠোঁটে...



অনুরূপা পালচৌধুরীর কবিতা 

ফেরেস্তা 
--------------------------------------------------------------

দুপুর ১২.৩২

মুনিয়া ডানায় বিপন্ন অবুঝ ধোঁয়া
ছুটছে।ছুটছে।দূরত্ব কমছে
সময় চেটে নিচ্ছে দুপুরের জৌলুস 
আদর স্ফুলিঙ্গে সাইকেল বেল




দুপুর ১২.৪৬

খসে যায় ট্রামলাইন। অন্ধ কুঠুরি ঘামছে
গিলছে জোলাপ
ক্ষুব্ধ নালী বেয়ে নামে ধূসর নিকোটিন
পোড়াঠোঁট।প্রথম দোয়েল চেনা




দুপুর ১২.৫০

গলা বেয়ে ওঠে পুরনো থুতু
সাদা সাদা তুলো।১ ফোট বিষরক্ত
চেটো ঘষলে বেড়ে যায় সুগন্ধি গ্যাঁজলা




দুপুর ১.০০

জরায়ু গলে গেলে নরম ঘাসে ফড়িং ফেরেস্তা
কোটরে মুখ ঢাকে সর্পিল স্নায়ু
ফাঁদ পাতা কল।দড়ি বায় জীবন
ফুটো ফুসফুস কামড়ে খায় অক্সিজেন পিন্ড




রাত ১০.০০

ঐতিহাসিক শূন্যতা। কাটা দুপুরের ০তায়
ঢুকে গেছে ধর সমেত মাথা
এবং আমি।শূন্যে জাগে বৃত্তাকার সূর্য 
খসে পড়ে আলো ফাটার শব্দ




রাত ১০.১২

বিচ্ছিরি।শূন্যতা চাটছে গোটা রাত
প্যাঁচানো অন্ধকার।কিছু গলা মোম
আদুরে আঙুল চালিয়ে দিলেই খই ফোটা শব্দচক্র
খসে পড়ে মেঘ।যোনিবিদীর্ণ ১ ফালি চাঁদ।চাঁদখিলান

                 

অন্য মা
রৈবতী বন্দোপাধ্যায় ( চক্রবর্তী)

আজ লিখব এক নতুন গল্প,
তিনি আমার জন্মদাত্রী নন।
কিন্তু তার স্নেহের পরশে আমার জীবন পেয়েছিল এক শীতলতা।
তার দেখানো আলোকিত পথে চলেছি এতদিন,
আজ তিনি নেই , শোকস্তব্ধ আমি।
ভাবছি সেই মায়ের কথা ,
সবারই জীবনেই হয়তো থাকে অন্য এক মা।

আগামীর আলো

বিকাশ সাহা
==============

অবক্ষয়ী সমাজে ক্ষয়িষু মানসিকতার,
ক্ষমতা দখলের এ এক নগ্ন লড়াই।
উন্মুক্ত আকাশের নিচে বারুদের খোল,
আর স্বজনহারাদের আর্তনাদ।
হার্মাদদের নৃশংসতায় বিদীর্ণ আজ,
নিষ্পাপের হৃদপিন্ড।
নরপিশাচের বর্বরতায়,
ভুলুন্ঠিত নারীর নিরাপত্তা,সম্মান আর সম্ভ্রম।
কলুষিত সমাজের হিংস্র থাবায়,
আক্রান্ত আজ মনুষ্যত্ব।
বর্বরতার সাথে অসম লড়াইয়ে,
পরাভূত আজ মনুষ্যত্ববোধ।
অন্ধকারে নিমজ্জমান সমাজে,
আলোর দিশারী হতে ব্যর্থ আজ
মোমের মিছিল।

এক নবসূর্য উদিত হোক,
উদিত হোক প্রতিটি হৃদয়ে।
হিংস্রতা আর বর্বরতার কালো ছায়া,
দূরীভূত হোক নবসূর্যের ছটায়।
রচিত হোক এক নতুন দিগন্তের
আগামীর তরে।।
জলীয় জীবন 
==========
রাজশ্রী ব্যানার্জী 



সময়ের ঢাল বেয়ে দিনগত পাপক্ষয় ।
লবণাক্ত সম্পর্ক চিনেছে স্বার্থের প্রতিবিম্ব,
রক্ত,মাংস ,মজ্জা ছিন্নবিচ্ছিন্ন প্রহেলিকা,
অভ্যাসের দাস হয়ে লড়াই করাকেই বলে বেঁচে থাকা,
ঘরে বাইরে এমনকি বিছানায়-ও চলছে একই ছকের খেলা,
জলীয় সম্পর্ক এক আধার থেকে আর এক আধারের রূপ নেয়,
বিবেকের পাশে শুয়ে থাকে অবাঞ্ছিত আকাঙ্ক্ষারা ,
চুলচেরা আপোস কাজিয়া নিরন্তর,
জিরোতে থাকা জীবন বন্ধ্যা নদীর মত ফুরিয়ে আসে,
তবু প্রতিদিন মনে হয় ধোঁয়াশা কাটলেই সকাল ৷


বিরহসংলগ্ন
----------------
বিপ্লব সসরকার

খোলা উঠোনের মতো 
আত্মকেন্দ্রিকতা নিয়ে বসে থাকি 

আমার আত্মমগ্নতাগুলো বাতাসে ঝাপটা মেরে 
উড়ে যায় ৯ নং ওয়ার্ড 

অগোছালো সম্পর্কগুলো নিয়ে রোজকার
মতো খেলা করে যখন ফুড়ুৎ পাখি--

                     মৌনকথার দাহ দেখি আচ্ছন্ন মেঘের বুকে 




মৃণালিনীর কবিতা 

“বাড়ি- গল্পের শুরু শেষের কথা কাহিনি”


১.উচ্ছ্বাস বাড়িয়ে তোলে ছয় বাই বারো পিলারের চারটি দেওয়াল
স্বপ্নগুলো কল্পনার রঙে সবুজ শ্যাওলা
আবেশের ঘোরে জমাট বাঁধতে বাঁধতে মহাসাগরে
                        ডুব দিয়ে তুলে আনি মুক্তো।

২.ঋতু বদল প্রকৃতির অমোঘ নিয়ম-বারোমাস্যা।
এক মিনিটেই পূর্ণ-অপূর্ণতার প্রতিফলন প্রতিসরণ
পাট ভাঙা শাড়ির নতুন গন্ধ মেখে ভেজা চুলের টপ্ টপ্
                    মাতাল ঝরা বিন্দু বিন্দু শিশির ফোঁটা
ডুবরীর ডুব চকচকে মুক্তোয় প্রশান্তিতে চোখের কর্ণিকা।

৩.দেওয়ালের হলদে দাগে কাঁচা পাকা রঙের ছবিতে কোলাজ
 সাক্ষী দেবদারুর কচি পাতা প্রসব মাতোয়ারা মন মেজাজ
               নম্বই দিনে জিহ্বার স্বাদ ৯০ ডিগ্রি বৈপরীত্য
চিলকা হ্রদে ঘোলাটে জল, ভুবতে চায় নতুন স্বচ্ছ ভালোবাসা।

৪.উত্তেজনার চেয়ে নীরবতা শ্রেয়, অপমান অন্তরালে মুখ উঁচিয়ে থাকে
নেতিয়ে যাওয়া ভালোবাসা লাউ গাছের ডগায় স্বপ্ন সাজিয়ে সাজিয়ে
নতুন পৃথিবীতে বেড়ে ওঠে- হিরণ্যজলে
আশার বিন্দু বিন্দু জমা হয় ভাঙ্গা মনের স্বচ্ছ দেওয়ালে।

৫.দেওয়ালে দেওয়ালে চির শব্দের ভূমিকম্পন মৃদু জোড়ালো চিৎকার।
হলদে কোলাজ। মেঝেতে শীৎকার! অব্যক্ত কথারা শূন্যময়!
শূন্যময় পৃথিবীর আশ্বাস ক্যানেলের পাশের সবুজে অসহায়।
শির ছেঁড়া চুলের পালতোলা জাহাজ খোলা হাওয়ায় ভাসে
গাছেরা এখন চুপ, চোখে চোখে কথা, গাছ মাটি আকাশ নীরব দর্শক।

৬.সূর্যের উদয় অস্ত ঋতু পরিবর্তনের কারণ হলে!
চাঁদের পূর্ণিমা-অমাবস্যা, গোলাকার বা কাঁটারি অঙ্কের দোড়গোরায়!
বাড়ির রূপ রঙ সাজগোছ বাস্তুর কী পজিসন?
সমাধানের তাগিদে অঙ্কের অন্দর মহলে নির্ভুল ফরমূলার অবৈধ প্রবেশ
জীবন নামক অঙ্কের সমাধান খুঁজতে খুঁজতে খন্ড ঈশ্বর আর পূর্ণ দর্শন।

৭.ভাব অঙ্কের সঙ্গম তেল আর জল
ধরে নেয়া যায় পুরোটা, অধরা ভাসমান। বিক্রিয়াহীন।
ক্যালেন্ডার ঝুলছে, ঝুলতে ঝুলতে শেষে- প্রস্হান
প্রবেশের পথে আলোতে উৎসুক দৃষ্টির শ্যেন।

৮.সরু দড়ি ছেঁড়ার গল্পগুলো পুরনো কোলাহল অনুররণ তোলে
ব্যর্থ মুখের হাই- ঘুম পাড়ানিয়া গান।
ছেঁড়া পাতে আজও হয়নি উচ্ছিষ্টের ভোজন
বাড়ি গুটিয়ে রাখে, ইঙ্গিত সারমর্ম।

৯.আকাশের তারা কাঁচ পোকাদের দীর্ঘশ্বাসে ঝরে পড়ে শুকনো রজনীগন্ধা
হাটবাজারে কাকতারুয়াদের ভিড়।
দুদিকে মুখোমুখি বাসিন্দা
একদিকের রাস্তা নির্দিষ্ট নিশ্চিত। আর অন্যদিকের শূন্যতাময় অনিশ্চিত!
১০.পালাবদলের দিন শুরু- স্বপ্ন থেকে গাঁটছড়ায় বাস্তব
রজনীগন্ধায় শুরু কিন্তু ফুলের দাম বেশি তুলনায় জীবন্ত নারীর
আবার অতীতের গল্প শুরু হয়
মন ভাঙ্গার সান্ত্বনার আস্তানা বাথরুম হলরুমে সম্মান হরণ
গায়ের হলুদ রঙ মিশে যায় চিরকালের ঘরোয়া দ্বন্দ্ব
স্মৃতির শুকনো গন্ধ জড়িয়ে থাকে
বাড়ির জীবন গল্পের শাখা-প্রশাখা চাপা আর্তনাদে
                   জড়িয়ে থাকে আদিম মাটিতে।

নীলাব্জ চক্রবর্তীর কবিতা 

সাদাকালো কয়েকটা বেলুন 



সেতু জুড়ে কয়েকটা সাদাকালো বেলুন
ভাঙা দশক
বাই বাই
সম্পর্ক ভেবে কুড়িয়ে আনা দুপুর
কেমন জড়িয়ে যাচ্ছে আঙুলে

***

সেভাবে ভাষার কাছে
ঘন হয়ে ওঠে সিনট্যাক্স
শব্দ
জুম
বড়জোর দৃশ্যগুলোর স্যোয়াপিং
এই যে জল-কে রঙ ভাবছি
চামড়া-কে রঙ ভাবছি
আর দেখছি
বিশ্বাস লিখে রাখা
প্রতিটা পংক্তিতে কেমন ফাঁপ ধরে আছে

***

ঋতু অবধি গড়িয়ে আসছে ব্যবহার
অথচ বোতামের আগেই
জেগে উঠল তার লালচে ঘর
সারাদিন ধরে
একটা টেবিল পেরিয়ে যাওয়া স্নায়ু

***

আমি তাকে ফেলে দিচ্ছি
পরিস্থিতি নামের একটা ঘন বারান্দা থেকে
সমকাল থেকে
লক্ষ করছি
অধিকারের মধ্যে পড়ে যাচ্ছে
একটা রঙ-করা দিন...

Sunday, April 1, 2018

কবিতা করিডোর , মার্চ সংখ্যা , ২০১৮

প্রচ্ছদ : অভিশ্রুতি রায় 
অলংকরণের চিত্রগুলো ইন্টারনেট থেকে নেয়া ও তার ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে 
সম্পাদক : শুভঙ্কর পাল 
সহ সম্পাদক : সব্যসাচী ঘোষ 
উত্তর -পূর্বাঞ্চল বিভাগের সম্পাদক - রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ 
বাংলাদেশ বিভাগের সম্পাদক - ফারহানা রহমান 

সম্পাদকীয় : 
থেকে থেকে ঋতু রাজের গায়ে দমকা হওয়ায় গা জুড়িয়ে আসে । মাথার উপরে নিরন্তর ঘুরে চলেছে সিলিং ফ্যান । পেয়ালার চুমুকে চুমুকে উঠে আসুক কবিতা , গল্প, অনুগল্প , মুক্তগদ্য , কবিতা বিষয়ক গদ্য , প্রবন্ধ , অনুবাদ কবিতা আরো অনেক লেখা । কবিতা করিডোর এর ব্যাপ্তি ক্রমশঃ ছড়িয়ে পড়ছে । তার সঙ্গে জুড়ে গেছে দুটি নতুন বিভাগ । আড্ডা করিডোর ও খনন করিডোর এই দুটি বিভাগকে সাজিয়ে তুলেছে সব্যসাচী । সবটা মিলে মন্দ কাটবে না এই বসন্ত । ইতিমধ্যে সিকিমের পাহাড়ে ছেয়ে গেছে গুরাস ও রঙের বাহারি মুখ । আর যদি কিছু ভুল ত্রুটি থাকে সেখান থেকেই নতুন করে শিক্ষা নেবো ।আর এমন দিনে একটু একটু সময় নিয়ে খুলে দেখি কবিতা করিডোর ।

ধন্যবাদান্তে
শুভঙ্কর পাল
সম্পাদক -কবিতা করিডোর
**প্রসঙ্গত উল্লেখ্য , কবিতা করিডোরে প্রকাশিত কোন লেখা সম্বন্ধীয় দায় সম্পাদকের নয় ।
অনুবাদ কবিতা 
শুভঙ্কর সাহা 
পার্থক্য 
                         রবার্ট কেলি


   কী ভাবে পার্থক্যটা তৈরি করতে পারি
   ভ্রূকুটি করে জানতে চাইল যুবক ছেলেটি
   যখন দুঃখ বেদনা আর যন্ত্রণা 
   ভরে দিচ্ছে  দিন প্রতিটি।
   অনিশ্চয়তায় ভরা একটা দেশ
   হাঁটু মুড়ে চলা একটা দেশ পিছে
   কী ভাবে পার্থক্যটা তৈরি করতে পারি 
   এটুকুই শুধু জানতে চাই তোমার কাছে ।

   পার্থক্যটা তুমি কী ভাবে তৈরি করবে
   কৌতূহলী বৃদ্ধ এবার চাইল জানতে 
   আমাদের মানুষেরা তো নুয়ে পড়া 
   বিচ্ছিন্ন সময়ের খেয়ালে।
   মানুষের হৃদয় সব অন্ধকারে মোড়া
   সূর্যালোক মিলিয়ে যায় ছায়ায় 
   তুমি কী ভাবে পার্থক্যটা তৈরি করবে?
   বদল কি আসবে, কোন আশায়?

   কী ভাবে আমরা তৈরি করব পার্থক্যটা 
   দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে সৈনিক ক্লান্ত 
   একটার পর একটা যুদ্ধ তো চলছেই
   উঁচু করে ধরে রাখা পতাকা অবিশ্রান্ত ।
   ধীরে সময় এগিয়ে চলে দেখি
   কেমন ভাবে বদলে যায় মরু বালি
   কী ভাবে পারি বদলাতে
   কী ভাবে পরিকল্পনার কথা বলি?

   কী ভাবে তুমি পার্থক্যটা তৈরি করেছিলে
   উত্তরে বলে ওঠে সেই প্রাজ্ঞ মানুষটি
   কোন স্মৃতি তুমি বয়ে নিয়ে যাবে 
   ভবিষ্যতের কোন প্রশান্ত আনন্দটি?
   যখন মাইলের পর মাইল জুড়ে শিশুদের হাসি
   আলো জ্বালিয়ে রাখবে এক একটা দিন
   তুমি জানবে তুমি পেরেছ পার্থক্যটা তৈরি করতে 
   নিশ্চিত যেন যাবার আগে আসবে সুদিন।

রবার্ট কেলি: একজন আইরিশ প্রতিরক্ষা বাহিনীর সৈনিক এবং কবি। যুদ্ধ এবং যুদ্ধের বাস্তবতা তাঁর কবিতার বিষয় । ২০০৭ সালে আফগানিস্তানে সৈনিক  হিসেবে কাজ করেছেন তিনি ।
   মূল কবিতা: A Difference