Sunday, August 5, 2018

কবিতা করিডোর , জুলাই সংখ্যা , ২০১৮

কবিতা করিডোর জুলাই সংখ্যা 


সম্পাদকীয় :
এ এক অস্থির সময় । অস্থির এই কারণে কখন বৃষ্টি কখন রোদ এ বলা মুশকিল । যদিও মূয়র পেখম মেলে দিয়েছে তবু যেন স্বস্তি নেই । মন জুড়ে কাজ করার ইচ্ছে প্রবল তবুও কেনো যেন সময়ে সব হয়ে উঠছে না । এই সংখ্যায় আড্ডার বিভাগটি না করতে পারার দায় নিজের ঘাড়েই নিচ্ছি । নিজের কোন লেখাও দিতে পারিনি । আলাদা করে বুক রিভিউ সেটাও হলো কই । শেষ পর্যন্ত দেরীতে হলেও জুলাই সংখ্যা প্রকাশ পাচ্ছে । একরাশ দুঃখ থেকে গেলো এই কারণে শ্রী  রমাপদ চৌধুরীর মৃত্যু আমাদের যেমন শোকাহত করেছে তেমনি শোক বয়ে নিয়ে এলো সদ্য প্রয়াত কবি নিত্য মালাকারের চলে যাওয়া । এই দুই ব্যাক্তিত্বই আমাদের মতো নবীনদের পথ দেখিয়ে চলেছেন । নমস্য , চির নমস্য তাঁরা ।
এই সংখ্যায় যাদের লেখা স্থান পেল তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই । প্রসঙ্গত : উল্লেখ্য লেখা সংক্রান্ত সমস্ত দায় লেখকের ।  সম্পাদক কোন ভাবে দায়ী নয় ।
প্রতি সংখ্যার মতো সহ সম্পাদক সব্যসাচী ঘোষ খনন করিডোর এর দায়িত্ব পালন করেছেন । উত্তর পূর্বাঞ্চলের সম্পাদনা করেছেন রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ এবং বাংলাদেশ বিভাগের দায়িত্ব পালন করেছেন ফারহানা রহমান । প্রত্যেককেই কবিতা করিডোর পরিবারের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ।
আর প্রচ্ছদ অঙ্কন করে সহযোগীতা করেছেন সমীরণ ঘোষ । বাংলাদেশ বিভাগে অলংকরণ করেছেন তপন দাশ ।

ধন্যবাদান্তে
শুভঙ্কর পাল
সম্পাদক : কবিতা করিডোর 

খোঁজ 

অনিরুদ্ধ দেব

হারিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ উঠলেই
চোখের সামনে ভেসে ওঠে তিনটে ধূসর প্রেক্ষাপট -
ঝাপসা কুয়াশা, গাঢ় লাল রাত্রি আর সমান্তরাল রেল লাইন
তারপর..........
শুঁয়োপোকার গুটি কাটে শুভ্র প্রজাপতি
একটা সোনালী রোদ্দুর ছুটে যায় শ্মশানের দিকে
নতুন ভোরের খোঁজে।
সৌমিত্র সেনগুপ্তের কবিতা 
অবশেসন - ৪১


এভাবে কখনো মৌসম চলে যায় আঙুল ছুঁয়ে
ঘুমে লেগে থাকে গোলামচোরের লাচার স্বর
পিছল সামলে পুজোগাছের মৌনতায় দেখা 
ঝাপসা বিবাহবার্ষিকীতে স্নান সারে মানচিত্র
জেহাদ জানায় মোমদানের কাঁপা ছবিদের

দরজার খিল খোলে খয়রাতের দুব্বোঘাস
দশমিককের জায়গা নেয় চিবুকের তিল
অনুসন্ধান রাখে শুক্লপক্ষ খোলা তারানায় 
সালোয়ারে ফিরছে চাঁদনী নীলিমার গোধুলি
ক্যামেরা-প্যান কমিয়ে আনছে রাতচরিতে

ছিলিমের রাতেও বেপরোয়া নয় অনাহুতরা
ধোঁয়া কমে আসলে খুলে যায় তৃতীয় নয়ন
লালিমায় নামা সঙ্কোচ চেনায় মুসাফিরকে
ঘাসজমিনের বুখার মানসী হয় নিরালায়
ঢেকে রাখে পুরনো ক্যাম্পফায়ার ক্ষতদের
অনিন্দ্য রায় 
কার্ল কেম্পটনের কবিতার অনুবাদ 


যেভাবে কাক ওড়ে
কার্ল কেম্পটন

 কার্ল কেম্পটন (জন্মঃ ১লা জুলাই, ১৯৪৩) আজ আমাদের কাছে পরিচিত নাম। অঙ্ককবিতা, দৃশ্যকবিতার বিশ্বে অগ্রগণ্য কার্ল লিখেছেন শাব্দিক (Lexical) কবিতাও এবং সেখানেও অনন্য তাঁর উচ্চারণ, বিজ্ঞান ও আধ্যাত্মিকতায় একীভূত। 
১৯৬৬-তে প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়, তখন তিনি সেনাবাহিনীতে।
বর্তমানে থাকেন ক্যালিফোর্নিয়ার ওসিয়ানোয়, সঙ্গে জীবন ও মননের ঘরণী রুথ। কবিতার পাশাপাশি সূর্যমুখীর চাষ আর পরিবেশ আন্দোলন। এ পর্যন্ত ৪৫টি বই প্রকাশিত, অসংখ্য অ্যান্থোলজিতে সংকলিত তাঁর রচনা। 
১৯৯৪-এ প্রকাশিত ‘ যেভাবে কাক ওড়ে’ ( AS THE CROW FLIES )  বই থেকে কার্ল কেম্পটনের কয়েকটি কবিতা   

কাকের জিভ
[TONGUE OF CROW]

নীল গম্বুজে
অপরাহ্ণ যখন গুটিয়ে নেয় নিজেকে 

নীচে পিছলে-চলা মেঘের ভেতর 
রুপোয় রং করে সমুদ্রকে 

মাঝ বরাবর শীর্ণ পঙ্‌ক্তি

ধাতু-গলানো চুল্লির জিভ দিয়ে
কাক জলে-জলে ঝালাই চেটে নেয়   

রং
[COLOR]

সব রং যোগ করলে কালো

সাদা, বিয়োগ করে পাওয়া এক বিশুদ্ধি
এক অনুপস্থিতি
এক পরিহার
এমনকি অচৈতন্যের মননক্ষেত্রে
তাপ শোষণের এক অনিচ্ছাও

এতো সাদাকালোর বা সাদার বা কালোর
কোনো প্রশ্ন নয়, উত্তরও নয়
কারণ আলোর তো আছে নিজস্ব আয়না

অন্তর-পুষ্পের পরিপার্শ্বে
নির্মলতার তুলে-রাখা হাত
যে পথে অনন্তের মুহূর্তে
আগুপিছু ঊড়তে পারে কেউ

কাকের পালক
[CROW FEATHER]

অভিধানের আয়তন
আমাদের অজ্ঞতার
সমানুপাতে বাড়ে 


 

উত্তর পূর্বাঞ্চলের কবিতা 

শক্তি নন, শক্তিপদ

বিশ্বরাজ ভট্টাচার্য

স্বপ্ন আর সম্বিতের মধ্যে
খানিকটা ফাঁকা জায়গা;
সেখানেইতো তাঁর বসত-বাড়ি।
বিকেলের গায়ে সন্ধেরা নামলে
ঘরে ফিরতেন তিনি।

কাঁধের ব্যাগে দিস্তা দিস্তা ভাবনা
শব্দরা উড়ত জোনাকির মত 
কবির পায়ের ছাপ
শহরের বুকে আজও অক্ষত

বৃষ্টির মতন কবিতা ঝরে
শিলচরে বারোমাস
মেঘ এখানেও  চড়ে গাভির মত!
তুমুল ভিজে এতে
শক্তি নন,এখনও বাড়ি ফেরেন
আমার শক্তিপদ...


এপিটাফ

দেবলীনা সেনগুপ্ত

ভালবাসার শবদেহ
বহনে  ক্লান্ত কবি
খুঁজে বেড়াচ্ছেন
একফালি  নাবাল জমি,
যেখানে গাছের ছায়া
ঝুঁকে থাকে রোদ মেখে,
বৃষ্টির জলধারা পরিখা আঁকে
নিশ্চিন্ত ভরসার
নিবিড় আলোর তৃষায়
জেগে থাকে রাতের আঁধার ।
সেইখানে
সেই পবিত্র মৃত্তিকাভূমে
তিনি পরম মমতায়
শুইয়ে দেবেন
ভালবাসার নিথর শরীর।
নিথর অথচ পচনশীল নয়,
তাকে আগুন দগ্ধ করে না 
বাতাস বিদ্ধ করে না
 এমনকি,জলও আর্দ্র করে না ।
তারপর...
কবি মগ্ন হবেন
প্রেমহীন যাপনে
এক নিজস্ব এপিটাফ লেখার জন্যে...।


আশপাশ বৃষ্টি 

নীলাদ্রি ভট্টাচার্য 

বর্ষার জল বৃষ্টি আশপাশটা
ঘাড়ের কাছে দড়িপাকানো মেঘলা ছোঁয়া
আকাশ মিলন ঝুলন্ত আলোড়ন
অলীক আনাগোনা একান্ত রিমঝিম শব্দদানা।

পাশে অভিমান দর্শন কাঁদা জানালা
জমা মরশুমে বৃষ্টিজব্দ পোঁতা প্রেম আবরণ
ঠোঁট কাঁপা ঠিকানা বন্দী জলকথা
আমার ঘর ঘিরে পুরোনো স্কুলবেলার গুরুপাক আন্দোলন।


তরতাজা।তেজি।কালো ঘোড়া।

বিজয় ঘোষ

ঘোড়া পুষব ভেবে একটা ঘোড়া কিনে ছিলাম।তরতাজা।তেজি।কালো ঘোড়া।অথচ কিছুতেই তাকে পোষ মানাতে পারছি না।ঘোড়াকে আদর করি।ঘোড়া পিছনের পা দিয়ে চাটি মারতে উদ্যত হয়।ফলত আমি নিজেকে সরিয়ে নিই। ঘোড়ার দিকে রাগত ভাবে তাকিয়ে ভাবি হয়তো এই রকম অনেক ঘোড়ায় চড়ে যারা এসেছিল সহস্র সহস্র বছর পূর্বে তারাই ধ্বংস করেছিল সিন্ধু সভ্যতা! ঘোড়া নির্বিকার ভাবে দাঁড়িয়ে।যেহেতু রাত্রি। কালো ঘোড়া মিশে আছে কালো রাত্রির গর্ভে। তবুও কিছু বেদনা যেন ছেয়ে থাকে ।চারিদিকে।আকাশে অতি ক্ষীণ চাঁদ। যথাসাধ্য আলো দিয়ে যাচ্ছে।ঘোড়া।একটি যুবা-ঘোড়া। একা একা দীর্ঘশ্বাস ফেলছে।

কোন এক যুবতী-ঘোড়ার আকাঙ্ক্ষায়।

লন্ঠন
অপাংশু দেবনাথ

মানুষটি লন্ঠন জ্বালিয়ে আলো দিতো পথে,
                                তুমি বুঝতে পারোনি।
স্বেচ্ছা নির্বাসনে ছুটে গেছো, আরও সুখের খুঁজে
ছেড়েছো সরল নগরী ।

এ সড়কে সকাল বিকেল রেল আসে, রেল যায়।
মর্দিত নারীর মতো পড়ে থাকে জোড়া লৌহপাত
দুজনেই একই আকাশ দেখে, যেন বিরহী হৃদয়।

মানুষটি লন্ঠন জ্বালিয়ে লেবাংবুমানীর সুরে গায়,
এ সড়কে সকাল বিকেল রেল আসে, রেল যায়
কারা যেন সিট বদলায়,উড়ায় রঙিন ঘুড়ি
                            মানুষটি লন্ঠন জ্বালায়


সান্ধ্য খবর 
অমলকান্তি চন্দ 


চোখ দুটো রোজ উড়ে যায় পাখীর ডানায়
হাট বারে কখনো কখনো পয়চারী করে এদিক ওদিক
শাল পাতায় মোড়়া ,জল শামুকের ভীড়ে
গোটাকয়েক ব্যাঙাচির আকাশ দেখা হয়ে গেলে
ভীড় ঠেলে ঠেলে ঢুকে পড়ি পাচু মিঁয়ার চায়ের
স্টলে, সিঙ্গারায় অবিকল আঙুলের প্যাচ ………

চায়ের ধোঁয়াতে ভাসতে থাকে সান্ধ্য খবর
বুকের খাঁচায় গোটা দুয়েক বুলডজার
খাবলে খেল কিশোরীর নরম স্তন যুগল আর বোবা যোনী….


ভালো থাকো, অন্যকে ভাল থাকতে হবে

শতদল আচার্য

বন্ধু থেকে বন্ধুর আসা পথে
বিশ্বাসঘাতকের ছুরি মনকে করেছে বিষণ্ণ
আর, বিষণ্ণতা সুস্থ  মানুষের লক্ষণ নয়।
আদিমকাল থেকে জয়ের বাসনা জাগানো
যুদ্ধের কথা না  বলা , এদিকে যুদ্ধই শান্তি আনে
সবই মানুষের উচ্চারণ
সুবিধা মতো জায়গায় সঠিক শব্দ বসিয়ে দিয়েছে
ঠিক দাবা খেলার মতো—
বন্ধু তুমি জানো ?
তোমার ধারালো ছুরি ক্ষতবিক্ষত করেছে সময়কে ,
সাপ হলাম না।
                      জানি আমার ঈশ্বর আছেন
                    জয় আমার সহপাঠী
                     একদিন জয় আসবে ।
সময়কে তুমি ধরতে গেলে
সময় ছিটকে মাটিতে হামাগুড়ি দিলো ,
দাঁড়াতেই পারলে না । বন্ধু তোমার উৎফুল্লতায়
তোমাকে একটা লাল গোলাপ পাঠাবো আর লিখব


টইটম্বুর 

সু চক্রবর্তী 

তুই তুই করে বছর কাটে
ধান থেকে চাল, চাল থেকে ভাত
অযোনিফলের গন্ধ ধরে চারপাশে
বাঁজা জমির উপর জল ওঠে টইটম্বুর

লাঙল ফলায় আগুন লাগে





তুমি তুমি করে ভাত পুড়ে

পুড়ে
পুড়ে

আংগড়া, কাঁকড়,  কড়কড়

জীবন মানেই...

আবু আশফাক্ব চৌধুরী

দরজায় ঠুকা দিয়ে ফেরিওয়ালা নমস্কার করে বলল- উড়িষ্যা থেকে এসেছি...খদ্দর কাপড়...  একেবারে সস্তায়। লাগবে বাবু? এই দেখুন - নিজের চোখে পছন্দ করুন।
মাঝেমাঝে আমার গিন্নী বাজার থেকে দৃষ্টিনন্দন মাল এনে পরে পস্তায় ভেবে তাকে খাটাং বলে দিলাম -লাগবে না কিছু। তবু কাছুমাছু  করে বারবার তার বস্তুগুলোর তারিফ করে আমাকে সমঝাতে চায়... মানে টুপি পরাতে। একবার পারলেই কেল্লা ফতে।
কোনমতে বিদায় দিয়ে ভাবলাম জীবনে কতবার কতো টুপি পরলাম - কতো পরালো... এখনও পরে যাচ্ছি তার কী হিসাব রাখছি!  জীবন মানেই টুপি পরানোর খেলা।

জানালা 

রাজীব ভট্টাচার্য 

দরজা বন্ধ থাক
জানালা দিয়ে ঠিক বেরিয়ে পড়বো
এই গোপন কথঞ্চিত রূপকথা কেউ জানবে না
নতুন এক আকাশ মেঘ সাজিয়েছে অপেক্ষায়
চলো ভিজি
ধুয়ে ফেলি সমস্ত বিষন্নতা  ।


সন্তান

রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ

মনুষ্যত্ব মরে গেলে টিকে থাকে
ধর্মের কিছু বিবর্ণ সন্তান
পচা ভাতের লড়াইয়ে ছিঁড়ে
যায় ঈশ্বরের চামড়ার বান

প্রেমিকের ফিনিক্স-চোখে

মেঘমালা দে মহন্ত

কাজগুলো ইদানিং মাঝ রাতেই হয়
অন্ধকারের আড়াল গায়ে মেখে।
চোখ জ্বালা করা অন্ধকার।

মোম আরও কতো  কী র আদরে আদরে
সাপের মতো পিচ্ছিল করে তোলা দড়িটায়
কেন যে কচি সোহাগি বউটার গন্ধ..
পোয়াতি বাপের বড্ড বমি পায় আজকাল।

এও নাকি প্রেমিক ছিল -
প্রেম কিংবা প্রেমিকার খুনি!

আবারও সেই অসহ্য অন্ধকারে
সব আলো ঢেকে দিতে দিতে জ্বলে যাওয়া চোখ দেখে-
প্রেমিকের ফিনিক্স-চোখে  একরাশ স্বপ্ন-জল।

পিচ্ছিল সাপের শেষতম আলিঙ্গনপাশে
মুক্তি ছড়িয়ে  জ্বালা করা চোখ পা বাড়ায় -
পরনে ঢাকাই আর কপালে সিঁদুরের
বিরহ-প্রতীক্ষা পথে।

ফাঁসুড়েটা কচি সোহাগের দু চোখে সাজাবে আজ
কিছু চুরি করা স্বপ্ন-প্রেমের ঝাপসা জলছবি।
কবিতা করিডোর ( জুলাই- ২০১৮) 
বাংলাদেশ বিভাগ 

ফারহানা রহমানের কবিতা 


তোমাকে দেখে না মন

এ হৃদয় এক কোমল পাখি কখনো বন্দি হয় খাঁচায়
কখনো উড়ে যায় আকাশে
বুনোহাঁসের মতো কুয়াসায় ডুব দেয় যখন তোমাকে দেখে না মন

পরন্ত বিকেলে বিপন্নতা ফিরে এলে
তুমি হয়তো ভাবছো
এই নিদারুণ আধুনিক দিনে 
প্রাচীন কোন মুখোশ পরে
কোনদিন হেঁটে যাবে নষ্ট সহবাসের দিকে
সুগন্ধি আঁতরে ঢেকে দেবে পাশবিক সুখ
তখন কেউ জানবে না
কেন ব্রোথেল ছেড়ে রথে চরে বেড়িয়ে এলো মিসরের দেবী...

অথচ প্রতিটি শ্রাবণেই সন্ন্যাস এসে উন্মোচিত হলে 
বৃষ্টিতে ভিজে যায় শত শত উলঙ্গ জোনাকির দল... 

অনলের দাবদাহ 


এ বিমূর্ত সকালের গায়ে ঢেউ তোলে রঙধনুর স্বপ্ন ক্যানভাসের গ্রীবায়। গমরঙা মায়াবী সংঘাত ভেসে থাকে নাভিপদ্মে ।  সূর্যকনার মতোই মানবজন্ম বিশুদ্ধ হয় মধ্যরাতে। 
এভাবে হৃদয় নিংড়ানোর মতো ফোঁটা ফোঁটা অহংকারে আকুলমায়া জমে আছে 
ডাহুকডাকা অনাদি ভোরের বিষণ্ণ আলোর কণার উৎসমুখে !

তুমি কী দেখেছো ?

কতো জলজ কন্যারা যেখানে নিরুদ্দেশ হয় মহাশূন্যের স্ট্রাটোস্ফিয়ারে....!! নীল চৈতালি বাতাসে মুখ লুকায় বারবার কুয়াসা মানবীর মতো ;
আমিও তখন নদীর অলস নীরবতায় ভেসে থাকি......
তীব্র অনলের দাবদাহে।।


মীর রবির কবিতা 


পিঁপড়ে 


 কালো পিঁপড়ের দল ফেলে দেওয়া নারিকেলে খুঁজে পেয়েছিল যে নিরাপদ আশ্রয়- আমরা তাও একদিন ভেঙে দিয়েছিলাম পুতুল খেলার ছলে। বুঝে উঠিনি- কিভাবে ভেঙে গিয়েছে পিঁপড়েদের সংসার ; কতটা অসহায় হয়েছিল তারা, জানা নেই তারও কোনো পরিসংখ্যান। মানুষতো বুঝতে পারে জমির খতিয়ান, দাগ নম্বর তার কত, কিন্তু- পিঁপড়ে সব জানতো কি, মানুষের পৃথিবীতে কি তার অধীকার? জানা না জানা নিয়ে আমি এখন গবেষণাপত্র জমাই, কালো অক্ষরে দেখি পিঁপড়ের মিছিল- দৃশ্যপটে এঁকে যাই ছবি, পিঁপড়েরা টেনে নিয়ে যায় মানুষের শব, উৎসব করে প্রকৃতি।


ক্রসফায়ার কিংবা বন্দুকযুদ্ধ 


হন্তাকারক প্রতিটি রাত ঝুলে থাকে দণ্ডাদেশ প্রাপ্ত কয়েদির উপর, ক্রসফায়ারে চলে যায় নৈমেত্তিক ব্যঞ্জন। আমরা মানবাধিকারের অঙ্ক কষতে কষতে ফেনা তুলি মুখে, রাষ্ট্র গুণতে থাকেন নাগরিক কফিন। সংবিধানের পোকায় খাওয়া হরফ মুছে যায় স্লেটের মতো করে, বিচারিক অধিকারে উড়ে যায় হাওয়াদের দেশে। বাড়তে থাকে আমাদের বেগতিক দিন, বন্দুকযুদ্ধ- খবরের কাগজের দৈনিক শব্দ মাত্র। গুলি ও বুলেটের আওয়াজে বাজতে থাক শুধু মাদকাসক্ত সংলাপ।

ফেরদৌস নাহারের কবিতা 


একটু ধোঁয়াটে

মুছে যাচ্ছি ধীরে ধীরে। মুছে যাওয়া আসছে ফিরে ফিরে
চোখের উপরে হাত রেখে অন্ধকারের পরিবর্তে ছবি দেখি
কতকাল এভাবে চলবে জানি না

ডাক দিচ্ছ। শুনতে পাচ্ছি না। শুনতে চাই না। অভিযোগ নেই
অভিযোগ না থাকাও একরকমের অভিযোগ, এসব জেনেছি
নিঃশ্চুপ থাকা থেকে

তীর্থে আছি। ফিরে এসে বলব, কেমন কেটেছে দিন, কেমন ছিল
মাঝরাতের ঘুম ভাঙা বৃষ্টি। অসভ্য ইঙ্গিতে কী কী ঘটেছিল সব বলব
এখন দেখ তো চিনতে পারো কিনা

মৃত্যু রেসেপি 

এখনো আমার একুশ বছর বয়স
অভিমানের জামা এখনো নামাইনি গা থেকে। মুছে যাচ্ছে লেবুঘ্রাণ
পিয়াজু বুটের ইফতার সন্ধ্যা। ওই তো মা জায়নামাজে
পিছন থেকে দেখতে দেখতে পালিয়ে যাচ্ছি ছাদে
এখন আমি খুবই নিজের, মৃত্যু রেসেপি শেখা

তুমি আমাকে মৃত্যুর রেসেপি দাও আর আমি মৃত্যু রান্না করি
কাল আকাশে চাঁদের অসুখ তীব্র অভিঘাতে
টুকরো টুকরো জ্যোৎস্না হয়ে ছড়িয়ে পড়ল ঘাটে
সেখানেও দড়ি-কলসি অপেক্ষাতে
সারাটা দিন কেটে গেল, মৃত্যু এসে নামে সন্ধ্যার ট্রেন থেকে


অনুপমা অপরাজিতার কবিতা 


১অগ্রন্থিত পত্র


পৃষ্ঠা ভর্তি কানামাছি মিথ্যে কানামাছি
সত্যি নিয়ে
কী যত্নে গুছিয়েছি সেদিন হলদে পোশাক
রিক্সার প্যাডেল ঘুরতেই
ঠা ঠা রৌদ্রকে ভিজিয়ে দেয়
হঠাৎ বৃষ্টি।

ঝাঁক  ঝাঁক নাগরিক চোখ
উপচে পড়া ঈগলছোঁ দৃষ্টিকে মাড়িয়ে
কাকচোখ এঁকে বেঁকে স্পর্শের আহ্লাদ।
রিলকের কবিতাকে ছাপিয়ে
অগ্রন্থিত কয়েক পৃষ্ঠা পত্রপাঠ
অতঃপর অন্য ডাকবাক্সে
রানার ছোটে রানার রঙিন ভার্সনে।

২স্কেচ

দূর্বার সবুজে চিত্রিত শব্দগুলো
 ঝলসে ওঠে--
ওখানে কখন যেন আমি রেখে এসেছিলাম
আমার বেদনা আর বাসনার সুগভীর
নগ্ন নির্জনতা
 আর সবগুলো আঙুলের জলছাপ!



স্নিগ্ধা বাউলের কবিতা 


কবিতাঃ ১ 

দৈবের অভিস্মপাতে ঘুরে আসি
জন্ম জন্মান্তরের খেয়া নৌকা
মহাকাল, যোজন-অভিযোজন
অতঃপর সংসার মিলে
সে এক বিশ্রী কারবার;
মরে যাবার মতো ভয়ে
দারুন সুখ মিলে গুরুবাদের তরীতে
বটবাদ আর অশ্বত্থের মায়া জাগে ওখান
জানতাম মায়ের স্মৃতি থেকে স্ত্রৈণকাল
সমস্ত জুড়ে জরায়ুর মায়া-
রাধিকার জলকেলি ব্যখ্যায় সাধ হয়
একগুচ্ছ চুলের বিনিময়ে পরমেশ্বরী হই
আর জনমে রাধা, মেনে রাখি
এক হোম বহু শ্যাম
সঙ্গমে আসুক বহুতর
পুত পবিত্র হয়ে স্নানের মতো তবে
কৌটিল্য আমার জতিলতায় রয়ে গেছে
নারী জন্মের সাধ!
ভাঙি চল নারীর ভান্ডার, ওখানে যত বীজ
 হয় বপন কৈবর্তকালে
নরম ওমে-
যৌবন ধায় ভোগে , অভিলাসী হয়ে
আমি দৈব অভিসম্পাত  চাই মেঘরাজ
তোমার কপটতা আমায় ধার দাও ওগো
অঙ্গের দানরুপ আমি মাথা পেতে নিব।

কবিতাঃ ২ 

গেলো শীতে বুণেছিলাম বীজ
ভেজা আকাশের চোখ টেনে
বরাহ দেবতার আসনে প্রার্থী হয়ে
চেয়েছিলাম হেমন্ত;
এই আকাশের চোখের জল নেমে আসে
দিঘীর ঢেউয়ে, মাঠেলী ঘাসে
বিস্তারিত নিলামী একাকীত্বে। 
হেমন্তের ঘ্রান পাই, সীতার আঁচলে মুখ রেখে,
মা যেন সীতা আর লক্ষি পেঁচার চোখ,
সিথানো সিঁদুরে তার
জন্মে এক পুষ্ট ধানের ছড়া-
বেঁচে থাকে কয়েক পুরুষ আর হাজার বছর।

আসছে শীতে বুণে রাখবো আরো হেমন্তের বীজ।

জুয়েল মাজহারের কবিতা 

কোকিলের বনে
-----------------------
জিরোবার ইচ্ছে হলো মন খুলে কোকিলের বনে।
কুডুরাফলের মতো জীবনের পাকা অবসাদ
মরমের এই দু:খে হৃদয় কাতর!
সূর্যদিন ডুবে গেলে নদীতীরে একা বসে ভাবি:
রক্ত, যুদ্ধ, ভয়াবহ মেশিন, দামামা
খুনির কাহিনি দিয়ে গড়া
কেবলি মেশিন বাজে! সকাতরে আজ তাই বলি:
মেশিনের চেয়ে ঢের খাঁটি এই পাতাটিকে মানুষ দেখুক
রক্তদৃশ্যে ভরা এই নাটক এড়িয়ে আমি দেখতে চাই
তোমার হৃদয়ে কতো ফলের বুদ্বুদ
কতো গান উচ্ছ্বসিত, মর্মরিত
বসন্তের বনানী-কেবিনে
তাই এতো কাছে আসি, তাই আজও জিরোবার ছলে
কতো কতো বনানীবিলাস
মেশিন ছাপিয়ে উঠে বুকে এসে ঝাঁপ দিতে চায়

সোহেল হাসান গালিবের কবিতা 

ভুল 

একটা বিষণ্ন কদম গাছ।
গাছের গায়ে আঁচড় কেটে কেউ 
লিখে গেছে 'জুই'।

যেন ভুল বানানে ফুলের ভুল নামকরণ।

ঐ নামের গভীর ক্ষত বেয়ে আজ নামছে
বৃষ্টির নরম শীতল ফোঁটা।

দূরে আমি দাঁড়িয়ে আছি
পকেটে চন্দ্রবিন্দু নিয়ে। দাঁড়িয়ে আছি
সমস্ত জীবন।

নির্বাসন

অনেক উঁচুতে উঠে গিয়ে হঠাৎ যে পাখিটির
ইচ্ছে হলো, এবার গুটিয়ে নেবে ডানা—তারও চেয়ে
বিপন্ন কি তুমি? ‘আরক্তিম’ শব্দটির মতো, ধীরে,
ফুটিল যে লজ্জাবতী—যদি বলো তারই কাছে গিয়ে
না হয় শুধাব সব কথা। আমারও যে কী হয়েছে—
জ্বর কিংবা জ্বর নয়, কেবলই কাঁথার মধ্যে ঢুকে
শুয়ে থাকতে ইচ্ছে হয়। কর্মফল-প্রাজ্ঞ কোনো এক
শামুকের মতো আত্মলীন হয়ে শুনে যাই শুধু
অপরের কলরব—এও এক নির্বাসন—নয়?

উল্টে যাওয়া কচ্ছপের চেয়ে অসহায় এ জীবন—
পড়ে আছি চিৎ হয়ে, উদভ্রান্ত জাহাজের ডেকে।
চোখ বন্ধ করে ইস্পাতের গায়ে রৌদ্রের মেজাজ
ঠিকই টের পাই আমি। কিছুই করার নেই তবু!
কানে পৌঁছুবার আগে কথাটাকে কান ধরে টেনে
ফিরিয়ে আনার মতো সবই কি অসাধ্য হয়ে গেছে!
স্রোত কিন্তু ঘুরে দাঁড়াবে না, হে তরণি, এ অবাধ্য
ঢেউয়ের ডগায় উঠে সরু সাপিনির মতো তুমি
জলের জমিনে দেখি, ছোবল বসাও একবার...

মাহদী হাসানের ছড়া 

কোপাই


এই হৃদয়ে বাজছে আজও কোপাই নদীর সুর,
ভালোবাসার বসত ভিটে মনটানে লাভপুর।
ছিপছিপে তার গায়ের গড়ন দৃষ্টি মনোহর,
প্রতি ঘাটের মাতাল হাওয়ায় কোপাই স্বনির্ভর।

গ্রীষ্ম এলে বুক ফেটে যায় হাঁটুর সমান জল,
শীর্ণ বুকে খেলায় মাতে খোকাখুকুর দল। 
বর্ষা মেয়ে ছন্দ তোলে— যেনো নূপুর পায়,
আমার ভেতর একটা কবি খুব কাঁপে লজ্জায়।

পড়ছে মনে— কাহারপাড়া, সেই অমলিন ঢং,
দাওয়ায় বসে পা দুলিয়ে থাকতো মেখে অঙ।
শরৎ এলে খোঁপায় গোঁজে শুভ্র কাশের ফুল,
মনটা আমার সাতার কাটে আনন্দে মশগুল।

অবসরে পড়ছে মনে— সেই হাঁসুলি’র বাঁক,
সন্ধ্যে হলেই সেথায় নামে বাউল পাখির ঝাঁক।
সেই পাখিরা গাইতো দুলে জীবনবোধের গান,
কোপাই নদী সুর মেলাতো জুড়িয়ে দিত কান।

ওর নাড়ীতে ঘুম এসে যায় উদার বালুর চর,
লাল আঁচলে মায়ের গন্ধ সইতো না আর তর।
তৃষ্ণা মনে আসতো নেমে চোখের পাতায় ঘুম,
এই কপালে জুটত আমার— মন্দাকিনীর চুম।

ভাটার টানে যায় হারিয়ে উদাস মনের দুখ,
শান্তিনিকেতনের সুরে জোয়ার আনে সুখ।
স্বচ্ছজলে সাতার কাটে সাঁওতালি সব ফুল,
ধন্য কোপাই ভিজিয়ে দিলো কোমর সমান চুল।

একটা রবি স্বপ্ন বোনে কলম হাতে তার,
শণের ফাঁকে ছন্দ তোলে সেই পাহারাদার।
একলা পথিক রাত জেগেছি পার করেছি দিন,
মৃদু ঢেউয়ে তৃপ্ত হিয়া বাড়ায় কেবল ঋন।


মোহাম্মদ জসিমের অনুগল্প 

নদীভাঙন

শহরটিতে কোন নদী নেই। নদীর গল্প শুনেছে সে। অনেক গল্প। 
একদিন শহরটি অন্য আরো অনেক ছোট-বড় শহরের বুকের উপর দিয়ে হেঁটে হেঁটে নদীর খোঁজে গেল। ‌নদী দেখতে সুন্দর—নদীতে ঢেউ, জেলেনৌকা, মাছের গদি, ঠান্ডা হাওয়া, কাশবনে পাখি, নীলাভ আকাশ। এইসব গল্প তার মাথার মধ্যে ঘুরছে।
বহুদিন হেঁটে শেষপর্যন্ত নদীর দেখা পেয়েছিলো সে। মিথ্যে শোনেনি সে। নদী আসলেই সুন্দর। নদীপাড়ের গ্রাম আর শহরেরা আসলেই সুখি। ভাবলো সে।
একটু পড়েই নদী শুরু হলো নদীর পাগলামি। একেক খাবলায় অনেকটা করে শহরের শরীর কামড়ে খেতে লাগলো। ধিরে ধিরে গ্রাস করতে লাগলো পুরো শহরটিকে।
শহরটি অবাক! ধুর শালা! এত কষ্ট করে নদী দেখতে এসেই নিজেই নদী হয়ে যাচ্ছি এখন...
----
শয়তানঃ০১
শয়তানের সাথে আমার প্রথম দেখা একদম শৈশবে। কেবল হাঁটতে শিখেছি, দৌড়ের অভ্যাস করছি। আমার সমবয়সী ছিলো দিলু কাকার ছোট ছেলে রতন। আমরা একসাথে খেলতাম।
শয়তান এসেছিলো বৃদ্ধের ছদ্মবেশে। রতনের ছিলো একটা লাল রঙের বল। বলটির প্রতি আমার বিশেষ কোন লোভ ছিলো না। একসাথে খেলতে পারলেই খুশি। 
বৃদ্ধটি আমাকে বললো- নে, বলটা ছিনিয়ে নিয়ে দৌড়ে পালা। বলটা তোর হয়ে যাবে।
আমি কোনদিনই কিছু ছিনিয়ে নেয়ার মতো সাহসী ছিলাম না। তবু শয়তানের কথায় প্ররোচিত হয়ে চোখ বন্ধ করলাম, বলটিকে হাতের মুঠোয় নিয়ে দিলাম দৌড়। সম্বিত ফিরতেই দেখি- বল না, বৃদ্ধের হাতটিকে মুঠোয় নিয়ে দৌড়ুচ্ছি আমি।
আমার দ্বিধান্বিত মুখ দেখে মিটিমিটি হাসছেন বৃদ্ধ। যা-ই হোক, বল ছিনিয়ে নিতে না পারলেও আমার হাতটি যে ছাড়িসনি এটাই অনেক।
বৃদ্ধের এই রহস্যময় হাসির অর্থ বুঝতে পারিনি তখন।



ইকোগুলি
তুহিন দাস

*
নোয়ানো হাওয়ার দিনে লিখি, এ কাব্যচিৎকারে লেগে
আছে কবেকার ধুলো, লিখি তার কথা যে শাদামাটা
পাথর রং করে দু’বেলা, লিখি কাঁচের ভেতর নক্ষত্রের ছবি,
লিখি অকপটে নিজের মুখোশ ধুয়ে আজ শুকোতে দিয়েছি

*
শান্ত থাকুন, আপনার কল্পঘোড়াটি হারিয়ে ফেলার পরও
শান্ত থাকুন, কেউ ছায়ার মতো হতে চায় শুনলেও
কেননা ছায়াদের কোন বিরোধ নেই, থাকুন হারানো বোতামের
মতো ঘরের কোণে পড়ে, শান্ত থাকুন—জুন মাস চলে যাক একা

*
কেউ বলে আর কোন বিচ্ছিন্নতা নয়, আমি বলি
সেই তো ফিরে যেতে হবে তার আগে কিছু বিচ্ছিন্নতা
জেনে রাখা ভালো, যেভাবে দেয়ালের গায়ে এসে ভেঙে পড়ে
দু’রকম হাওয়া ভাস্কর্য—ভেতরের ও বাহিরের, দেয়ালের কোন ভাষা নেই

*
অসংখ্য তর্জনীর প্রতিবিম্বে ছেয়ে থাকে দিন, শীতের হিম
কাঁচের স্মৃতি মনে পড়ে এ গ্রীষ্মে-ও, হঠাৎ দৃশ্যে মৃত প্রজাপতি
ফুটে ওঠে, আমি তখন ভাবি মৃত শরীরের অভিভাবকত্ব
কে করে? চলো যাই দূরে, নতুন মানুষ যায় বহুদিনের পুরনো ট্রেনে

*
আকাশে মেঘের তিল, কবিতা লেখার দিন, আজ নিসর্গের ভেতর
পড়ে আছে ইস্পাতের স্মৃতি, বিশেষ চশমা পড়ে নিলে হাওয়ায়
আমাদের আঙুলের ছাপ দেখা যায়, শব্দকে মোজাইক করে
লিখে রেখে যাচ্ছি আমার নাম, কখনো ফ্লাশ করছে বৃষ্টি

তন্ময় ধরের কবিতা  


শিলালেখ ১


আদতে দুর্বল চুনাপাথর। তবু এক্সকার্শনের নামে প্রায় একশো ছাত্রী ভেতরে ঢুকে এল, সেলফি তুলে ফেলল। ওদের তাচ্ছিল্যে ঠান্ডা হয়ে গেল আমাদের প্রাগৈতিহাসিক বিবাহবার্ষিকীর খাবার ও ফুল। তোমার জন্যে সহজ একটা অঙ্ক রেখে গেল ওরা।
সময়ের আলোর ওপিঠে তৃষ্ণা একা। সংসার চুঁইয়ে সামান্য জল, এত পাথরকে কে রূপকথা শোনাবে? সতেজ দগ্ধ খাবার থেকে পাথুরে রাস্তা চলে গেছে বহুদূরে। ওল্টানো জিভে, দাঁতে, কামড়ে- সমস্ত পাতাল ভুবনেশ্বরে একই কৌশলে মরে যাচ্ছো তুমি। নীচু হওয়া পূর্বাস্য আকাশ- তারও প্রয়োজন মিটে গেছে
স্পর্শেরা তো যায় নি কোথাও। এখানে ধুলোয়-অন্ধকারে এত রঙ, এত আলো কেন? মাংসের ভাষা থেকে তোমার দীর্ঘতম চুল অগণিত হাঁটছে প্রতিফলিত শয্যাদৃশ্যে। রেসিপির দূরত্বে অল্প অল্প করে জমছে বন্যতা, তোমার কন্ঠস্বর ছাড়াই। এবারে প্রাচীন দুধে ভেসে উঠছে কলিফর্ম...


শিলালেখ ২

এইভাবে আরো একটা শব্দহীন শব্দ ব্যবহৃত হয় আমার মিউজিয়ামে। কাঁচে প্রতিবিম্ব পড়ে মৃতের উদ্দেশ্যে রাখা ক্ষুধা, জীবাশ্ম ও অস্ফুট দন্ডের। এত গভীর সেজেছো কেন তুমি? কি নাম এই শাড়ির? তৃষার্ত সিল্ক মথে উ-কারান্ত সৃষ্টিরহস্য... গাইড যদিও বললেন, সময় অপচয় করে ফেলেছি আমরা
একটু একটু করে আগুন চুরি করে পালাচ্ছি... অবিশ্বাস্য খানিকটা সিল্ক রুট দিয়ে... জলের চিহ্ন নেই, মৃগতৃষ্ণার চিহ্ন নেই... নিজেদের ছায়ার ভেতর বমি করছে খিদে ও অ্যাসিডিটি... ধূসর মথ দিক পালটে নেমে আসছে অন্য প্রতিসরাংকে... আমি পৃষ্ঠা মুড়ে রাখি রদ্যাঁ ও ক্যামিই ক্লদেলের প্রেমকাহিনীর
ফরম্যালিনের গন্ধ থেকে অবুঝ একটা ছবি আমাদের ঢেকে রেখেছে। খিদের মুখে ভুল হয়ে যায় বর্ণমালায়। আহ, চেপে ধরো এই ঐশ্বরিকটুকু। স্বরসন্ধি ভেঙে একটা ভয় গড়িয়ে পড়ছে। কীটপতঙ্গের সাহসে সেই প্যালিওলিথিক সূর্য প্রবল 
তন্ময় ধর
শিলালেখ ১
আদতে দুর্বল চুনাপাথর। তবু এক্সকার্শনের নামে প্রায় একশো ছাত্রী ভেতরে ঢুকে এল, সেলফি তুলে ফেলল। ওদের তাচ্ছিল্যে ঠান্ডা হয়ে গেল আমাদের প্রাগৈতিহাসিক বিবাহবার্ষিকীর খাবার ও ফুল। তোমার জন্যে সহজ একটা অঙ্ক রেখে গেল ওরা।
সময়ের আলোর ওপিঠে তৃষ্ণা একা। সংসার চুঁইয়ে সামান্য জল, এত পাথরকে কে রূপকথা শোনাবে? সতেজ দগ্ধ খাবার থেকে পাথুরে রাস্তা চলে গেছে বহুদূরে। ওল্টানো জিভে, দাঁতে, কামড়ে- সমস্ত পাতাল ভুবনেশ্বরে একই কৌশলে মরে যাচ্ছো তুমি। নীচু হওয়া পূর্বাস্য আকাশ- তারও প্রয়োজন মিটে গেছে
স্পর্শেরা তো যায় নি কোথাও। এখানে ধুলোয়-অন্ধকারে এত রঙ, এত আলো কেন? মাংসের ভাষা থেকে তোমার দীর্ঘতম চুল অগণিত হাঁটছে প্রতিফলিত শয্যাদৃশ্যে। রেসিপির দূরত্বে অল্প অল্প করে জমছে বন্যতা, তোমার কন্ঠস্বর ছাড়াই। এবারে প্রাচীন দুধে ভেসে উঠছে কলিফর্ম...
শিলালেখ ২
এইভাবে আরো একটা শব্দহীন শব্দ ব্যবহৃত হয় আমার মিউজিয়ামে। কাঁচে প্রতিবিম্ব পড়ে মৃতের উদ্দেশ্যে রাখা ক্ষুধা, জীবাশ্ম ও অস্ফুট দন্ডের। এত গভীর সেজেছো কেন তুমি? কি নাম এই শাড়ির? তৃষার্ত সিল্ক মথে উ-কারান্ত সৃষ্টিরহস্য... গাইড যদিও বললেন, সময় অপচয় করে ফেলেছি আমরা
একটু একটু করে আগুন চুরি করে পালাচ্ছি... অবিশ্বাস্য খানিকটা সিল্ক রুট দিয়ে... জলের চিহ্ন নেই, মৃগতৃষ্ণার চিহ্ন নেই... নিজেদের ছায়ার ভেতর বমি করছে খিদে ও অ্যাসিডিটি... ধূসর মথ দিক পালটে নেমে আসছে অন্য প্রতিসরাংকে... আমি পৃষ্ঠা মুড়ে রাখি রদ্যাঁ ও ক্যামিই ক্লদেলের প্রেমকাহিনীর
ফরম্যালিনের গন্ধ থেকে অবুঝ একটা ছবি আমাদের ঢেকে রেখেছে। খিদের মুখে ভুল হয়ে যায় বর্ণমালায়। আহ, চেপে ধরো এই ঐশ্বরিকটুকু। স্বরসন্ধি ভেঙে একটা ভয় গড়িয়ে পড়ছে। কীটপতঙ্গের সাহসে সেই প্যালিওলিথিক সূর্য প্রবল 

সুপ্রিয় কুমার রায়ের কবিতা




হৃদয়,,,দয়হৃ,শুধু
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

ঈশ্বরও তো ধরে রাখতে পারেনি সম্পদ
খসে পড়েছে তারা ,,,
হাওয়া তোমায় দিয়ে যাবে সেই খবর
নাম দেবে শীত একদিন,,
শুনতে ভায়োলিন যেমন দেখতে আয়ু হোক তোমার ,,
সব বলা হয়ে যাক ঠোঁট আমাদের
শুধু  নদীর মতো আওয়াজ করি এরপর ,,,

মানিক সাহা 


বিজয় নাম্বিয়ানের কবিতা
(First Infinites)
অনুবাদঃ মানিক সাহা

"Hell, or a state very much llike it, does feature in Nambisan's poetic underworld, which is deep, intricate and enticing. But its attendant horrors are never indulged in for their own sake and are kept well in check by a certain wit, aa muscularity of mind,  which remind mme of a similar grace in poets as far distant in time from each oother as Robert Graves ans John Donne.
- From the Preface  by Adil Jussawall of 'First Infinities'

 বিজয়  নাম্বিয়ান  (1963   -   10 August 2017  ) ছিলেন একজন সাংবাদিক ও লেখক।  তিনি ভারতের অনেক অঞ্চলে কাজ করেছেন এবং পত্রিকায় লিখেছেন। কবি, গদ্যকার  ও কলামিস্ট হিসেবে তিনি জনপ্রিয় ছিলেন। কবিতার পাশাপাশি তাঁর ননফিকশনগুলিও ছিল অত্যন্ত জনপ্রিয় ও আলোচিত। 'Bihar is in the Eye of the Beholder' বিহারের বাস্তব ছবি তুলে ধরে। বইটি তাঁকে খ্যাতির শীর্ষে স্থাপন করে।
বিজয় নাম্বিয়ান, জিত থেয়িল এবং ডম মোরেসের (সম্পাদক) সাথে 'জেমিনি'র সহ-লেখক ছিলেন। 'জেমিনি' ছিল থেয়িল এর সঙ্গে করা তাঁর প্রথম কবিতা বই। নাম্বিয়ান পুন্ঠনম ও মেলপথুর নারায়ণ ভট্টতীরীর ভক্তিমূলক কবিতাও অনুবাদ করেছেন।
তাঁর বিখ্যাত বই 'ল্যাংগুয়েজ এ এথিক' এ, নাম্বিয়ান ভাষাগতভাবে নৈতিক ব্যবহারের জন্য সাহিত্যের লেখকদের এবং পাঠকদের উভয়ের কাছে আন্তরিকভাবে আবেদন করেছেন।

নাম্বিয়ান তাঁর প্রথম কবিতা 'মাদ্রাজ সেন্ট্রাল'র জন্য  1988 সালে সর্বকালের সর্বভারতীয় কাব্য চ্যাম্পিয়ন হন। এই কবিতাটি সমালোচকদের কাছে প্রশংসা লাভ করে এবং পাঠকপ্রিয় হয়ে ওঠে।
বিজয় নাম্বিয়ান মাত্র 54 বছর বয়সে মারা যান।

অনুদিত কবিতাটি ২০১৫ সালে প্রকাশিত 'First Infinities' কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া। এই বইটিই কবির শেষ প্রকাশিত বই। প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই বইটি সমালোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। কবির বিদেহী আত্মার প্রতি সম্মান জানিয়ে এই অনুবাদগুলি তাঁকেই সমর্পণ করলাম।


অন্ত্যেষ্টিগাথা

কবিরা মাছির মতো মরে কিন্তু আমি নিজেকে সামান্য সরিয়ে রেখেছি,
স্পেন বা সিয়াম নিয়েই আমি সন্তুষ্ট, নিজেকে লুকিয়ে রেখেও আমি খুশি।
সেই বন্ধুরা কী সুন্দর লিখতো, এখন ওরা শৃঙ্খলিত,  সুন্দর ইন্দো-ইঙ্গ উচ্চারণ
ওদের জ্ঞানী প্রতিপন্ন করতো, তখন পৃথিবী ছিল নবীন- ওরা তাতে রাজত্ব চালাত।
আমি বাঁচব এবং আমার শব্দকে গোপনেই রেখে দেব, সমালোচনায় জেরবার হয়ে গেছি;
খ্যাতির চেয়ে আমার কাছে প্রিয়ার চুমু অনেক বেশি প্রিয়।

পৃথিবী চকচক করবে তাদের উজ্জ্বল প্রচারের আলোয়; তারপর প্রকাশকেরাও যত্নশীল হবে;
গত বছরের অর্জিত চেক আর অর্থহীন হবে না।
তারপর সংবাদপত্রগুলি লেখা চাইবে; এবং পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তাদের ছাপবে,
এবং তার মূল্য দেবে;
কিন্তু এখন অনেক কানাঘুষো যা এই নিপুন শিল্পকে হিসেবী ব্যাবসায় পরিণত করেছে।
সাপ্তাহিকী, ট্যাবলয়েড ও পেজ থ্রি'র তীব্র প্রচারে
আমি সংকুচিত হয়ে আমার কর্তব্য করে যাই আর প্রিয়ার স্নিগ্ধ চুমু গ্রহণ করি।

সারা পৃথিবী কী বলছে তা নিয়ে তাদের মাথাব্যাথা নেইঃ তারা বরং
কথা লেখার চাতুরী শেখায়।
কবিতা যখন কাতর প্রার্থনা করে মোজাম্বিকে যাওয়ার জন্য, তারা তা লেখে না।
কিন্তু আমি থাকবো আমার কবিতা নিয়েই, এই শীর্ণ কলমের শক্তিতে
আমার প্রতিরোধের বিষয় ও ভাষা নিয়ে, চার কুড়ি দশ বছর বাঁচবো আমি।
এবং যদি প্রমাণিত হয় আমার শক্তি শেষ হয়ে গেছে, যদি শব্দের আশির্বাদ
আর না আসে
তবে প্রেমিক হিসেবে মিথ্যাচারণ কেন করবো আর কেন প্রিয়ার ঠোঁটের স্নিগ্ধ চুমু নেব।

এই হাত একস্ময় সেই কবিতা লিখেছিলঃ যাদের মতো বন্ধু কখনো পাইনি।
সবার সবটুকুর জন্য আমার তৃষ্ণা ছিল আজীবন, কিন্তু লেখাগুলি শেষ হয়ে এল।
তাই অরুণ আর ডম আর নিসিম - আমি তাদের কষ্টার্জিত বেদনা ছেড়ে দেব
আর তাদের খুব মিস করবো, কোমল ছায়ায় স্বস্তি খুঁজে নেব।
এবং আমার যখন নব্বই বছর বয়স হবে আর নতুন কবিরা এসে জিজ্ঞেস করবে
কেন আমি এর  বেশি কিছু কেন লিখিনি
আমি বলবঃ 'অপদার্থের দল! আমার প্রিয়ার কাছে থেকে আমি স্নিগ্ধ চুমু পেয়েছি।"
সব্যসাচী ঘোষ এর চোখে....

শ্রী রমাপদ চৌধুরী (১৯২২-২০১৮)
৪০র দশক থেকে যিনি লিখে চলেছিলেন। ১৯৬০এ যিনি মাত্র ৩৭ বছর বয়সে গ্রামীণ বাংলার  “বনপলাশির পদাবলী” শেষ করে ফেলেছেন আবার সেই তিনিই চরম রুক্ষ শীতার্ত কলকাতার অমানবিক মুখ দেখিয়েছিলেন খারিজে। সেই রমাপদ চৌধুরী মশাই দীর্ঘকাল আনন্দবাজারের রবিবাসরীয় বিভাগেরও সম্পাদক ছিলেন। সাগরময় ঘোষ দেশ পত্রিকার সম্পাদনার জন্যে এতটাই ব্যস্ত ছিলেন যে নিজে কলম ধরার সময়টুকুই পান নি। যারা সাগরময় ঘোষের একমাত্র উপন্যাস “একটি পেরেকের কাহিনী” পড়েছেন তাঁরা নিশ্চয়ই জানেন একজন সম্পাদক কতটা লিখিয়ে নিয়েছিলেন কিন্তু লিখিয়ে নেবার তাগাদার কারণে নিজের লেখার স্বার্থ চিরকালের জন্যে ছেড়ে দিতে হয়েছিল তাকে। ভাববার চেষ্টা করে দেখুন সেইকালের রবিবাসরীয় সম্পাদনার কাজের জন্যে নিজের লেখালিখিতে কি চরম বেগ পেতে হয়েছিল শ্রীচৌধুরীকে! আজকের কাগজের সম্পাদকদের পেড়ে ফেলতে যেসব ছকবাজ লেখক কবিরা ছোটাছুটিতে লেগে রয়েছেন সেই সময়েও নিশ্চয়ই সেই ছকবাজদের পূর্বসূরিরা চৌধুরী বাবুর সামনে যে কত ভাঁড় তেল ছিটিয়ে গেছেন তার হিসাব আন্দাজ করা যেতে পারে মাত্র। কিন্তু তিনি থাকতে সুবিধা যে আদায় হয় নি সেকারণেই সম্মান জানাচ্ছি গত শতাব্দীর এই ঋজু মানুষটিকে। ৯৬এ তিনি গত হয়েছেন কিন্তু আমার কাছে ওনার তিনটি বয়স ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। ২৫, ৪৫ ও ৮৯। ২৫এ তিনি স্বাধীনতা দেখেছেন। ৪৫এ তিনি ৭৭এর বামজমানার শুরুবাত দেখলেন আর ৮৯তে সেই বামেদের সরিয়ে মমতার আবির্ভাবও দেখেছেন। শুধুই দেখেছেন আর দেখেছেন আজকের নির্লজ্জ কবি লেখকদের মত তো তিনি নিজের ভেতরের নদীটিকে তো কোন পাল্টে যাওয়া সরকারের পথে বইয়ে দেন নি। লেখক কি পারতেন না যৌবনে স্বাধীনতার পর ডান আর মধ্যবয়সে গিয়ে বাম এবং বার্ধক্যে এসে মমতাময়ীর হাত ধরতে। কোনদিন দেখি নি তো!





সুবীর সরকারের গদ্য 


ধানবাড়ি গানবাড়ি
সুবীর সরকার

‘আইতোত দেখং সোনার বালা
দিনত দেখং মুখত গোটা’
তো সেই মধ্যরাতের গানের আসরে,লোকনাটকের আসরে যে সুন্দরী তার নাচ, তার কোমড়ের ভাঁজে এক হিল্লোল এনে পুরো গানবাড়িকেই আবিষ্ট করে দিয়েছিল;সেই ভরা সভায় তুমুল লোকপালাকে মুখরিত কোন নদীর পাড়ের কাশিয়ার ফুলের শোভায় শোভায় আচ্ছাদিত করে পুরো গানের আসরটাকেই উৎসব মুখরিত করে দিতে পেরেছিল সেই সুন্দরী চানবালা বর্মনকে সকালের নুতন রোদের আলোয় আলোয় হেঁটে যেতে দেখে গঞ্জের মানুষজন কিঞ্চিত বিষ্মিত হয়েই ওঠে বুঝি বা!কি কান্ড!রাতের সেই রুপসী নাচুনির সকল রূপ তো একেবারেই উধাও!চানবালার মুখভরতি পুরোন ব্রণের অগভীর সব দাগ।গাত্রবর্ণ বেশ কালো।উচু দাঁত।হায় রে,রাতজীবনের সোনার ময়না এখন কোন আন্ধারে বুঝি উড়াল দেয়!এমনই হয়,এরকম হতে থাকে জনমভর চানবালার চার কুড়ি ছুঁই ছুঁই জীবনে।কি এক তাড়িত দুঃখের মতন জীবন তার।সেই ছোট থেকেই ঠাকুরদাদাদার ‘কুষান পালার’ দলে ঘুরে ঘুরে চানবালার নাচের জীবন,গানের জীবনের শুরু।রাতের পর রাত গানের আসরে আসরে,কত কত ধুলিমাখা মানুষের ভিতর তার জীবন পেরিয়ে আসা।সারাদিন অন্দরে কন্দরে ঘোরা,ঠাকুরদাদার সাথে হাট টাট ঘুরে বেড়ানো।আর রাত হলেই গানের আসরে আসরে,গানবাড়ির আদিমধ্যঅন্ত জুড়ে এক অন্য জীবনের দিকে ঝুঁকে পড়া।চানবালা বড় হয় এভাবেই।ঠাকুরদাদাদা চলে যান।ইতিমধ্যে চানবালা বর্মণ নামিক্কার নাচুনিতে রুপান্তরিত হয়েছে দশ বিশ চল্লিশ গাঁগঞ্জে।চানবালার দল মানেই অপরূপ সব পালার আসর।মানুষের আবেগ মিশে থাকে সেই সব পালায় পালায়।আসর ভেঙে যায় শেষ রাত্রে।কিন্তু গানবাড়ি ফেরত মানুষের কন্ঠে আর স্মৃতিতে জেগে থাকে গান_
‘বেলা ডুবিলে হইবে রে আতি
সঙ্গে নাই মোর সঙ্গের সাথী
ছাড়িয়া দে মোর শাড়ির আঞ্চল
যায় বেলা’
সেই রাতের আসরে আসরে ঘুরে ঘুরে দুলে দুলে অদ্ভূত সব নাচগুলি গানগুলি চোখের মণিতে ভেসে ওঠা বিদ্যুৎরেখায় চানবালা তার মস্ত জীবনকেই জাগিয়ে রাখতে চায়।উত্তরের গঞ্জে গঞ্জে নাচগানের দুনিয়ায় সে তার স্বপ্নগুলিকে নুতনতর করে নিতে থাকে।রাতের জীবনের রহস্যে সে কেবল ডুবে মরে।এটাই তো তার নিয়তি।এই ভেসে যাওয়াটাই হয়তো সত্য।
চানবালার মনে পড়ে খুব মুকুন্দের কথা।মুকুন্দচরণ বাউদিয়া।কি আশ্চর্য দোতোরা বাজাতো।চানবালার গান আর নাচের ফাঁকে দুলে দুলে মুকুন্দের দোতোরা গানবাড়ির আবহই একেবারে বদলে দিত।মুকুন্দ দোতরা বাজাতে বাজাতে ঘাড়ে হলদিয়া গামছা ঝুলিয়ে যখন গাইতো_
‘গদাধরের পাড়ে পাড়ে রে
ও তোর মাহুত চড়ায় হাতি
কি মায়া নাগাইলেন মাহুত রে
ও তোর গালায় রসের কাঠি
কি মায়া নাগাইলেন মাহুত রে’
আহা!উদ্দাম হয়ে উঠতো পুরো সভা।মেয়েরা চোখ মুছতো আবেগে।চেংড়ার দল দু’চার পাক নেচেই উঠতো।রাতের স্তব্ধতা ভেঙে চাপা পড়ে যেত দূরাগত রাতশেয়ালের ডাক।মুকুন্দর চোখে চোখ রেখে কেমন ভেসেই যেত বুঝি চানবালা!মুকুন্দর সাথে জড়িয়ে গিয়েছিল চানবালার জীবন।কিন্তু মুকুন্দের বিবাহের প্রস্তাবে সায় দেয় নি সে।কেননা,বাঁধন তো তার জন্য নয়।সে কেবল নিজেকে বেধে রেখেছে লোকগানের সাথে।নাচের সাথে।হাজার হাজার প্রান্তবাসী জনমানুষের ধুলো ও ঘামের সাথে।রাতের গানবাড়ির মাদকতার টানে রাতের রহস্যে লীন করে দেওয়া এক জীবনযাপনের সাথে নিজেকে।মনের দুঃখে মুকুন্দ চলে গেল দল ছেড়ে দেবীর হাটের মহেশ গীদালের দলে সে এখন দোতোরা বাজায়।আর মুকুন্দের কথা মনে হলেই একা একাই গুনগুন করে চানবালা-
‘ওরে দুঃখ কপালের লেখা
মৃত্যু লেখা পায়রে
আহারে দারুণ বিধি
খন্ডন না যায়
মরি আই আই রে’
এভাবেই রাতের পর রাত গান নিয়ে নাচ নিয়ে গাননাচ নিয়ে চানবালার বাঁচা।বেঁচে থাকা।রাতের জীবনের দিকে প্লাবনের মতন ছড়াতে থাকা মনোশিক্ষার গীত-
‘আরে মানব দেহা ভাই মাটির ভান্ড
পড়িলে হবে খন্ড রে খন্ড
ভাঙ্গিলে দেহা আর জোড়া নেবে না’
বহতা নদীর মতন এক জীবন নিয়ে রাতের গানবাড়িতে গানের পর গান নাচের পর নাচে কেমন এক মুখরিত নদীদেশের চঞ্চলতা নিয়ে চানবালা কখন কিভাবে যেন বা রাতজীবনের একেবারে অন্দরেই নিজেকে তীব্র প্রবিষ্ট করে দেয়।যা থেকে সে আর কোন পরিত্রাণ চায় না।রাতের রহস্যের টানেলে সে নিজেকে প্রবেশ করালেও,চুড়ান্ত এক ‘কুষান পালার’ পরিসমাপ্তিতে আমরা কিন্তু চানবালাকে অসহায় দাঁড়িয়েই দেখি।মধ্যরাতের ঘনঘোরের ভেতর তখন বাজতে থাকে চিরকালীন সব গান_
‘যেদিন মাহুত জঙ্গল যায়
নারীর মন মোর কান্দিয়া রয় রে
হস্তীর কন্যা হস্তীর কন্যা বামনের নারী
মাথায় নিয়ে তাম কলসি ও
সখি হস্তে সোনার ঝারি
ও মোর হায় হস্তীর কইন্যা রে’
গান ও নাচের,পালা ও আসরের এই একবজ্ঞা জীবনেই বেশ কেটে যায় চানবালার জীবন।দিনের আলোর কোন রহস্য নেই তার কাছে।সে কেবল রাত্রির রহস্যের দিকে সওয়ারীহীন ঘোড়াদের মতন ছুটে যেতে থাকে,ছুটে যেতে চায় আরো আরো রাত্রি ও রাত্রিকালীন সব চিরায়ত গানবাড়ির দিকেই।

          দখল      
                           সঞ্জয় সাহা 


 বরং পেঁচাদের কথা বলি
সাদা লাল সবুজ গেরুয়া
             জনমোহিনি ম্যানিফেষ্টো

ভোট পরবর্তী মৃত্যু সংবাদ্গুলি
রাতের পেয়ালায় অবিরাম ভেসে চলে...
            
মাধবী সিরাপ## স্বপন রায়


৩৫.
মাধবী-সিরাপে গুগলের পা আর টুটুলেরও পা। দুজনেই লাইন মারতো, জানতো না যে একটা গানও আছে, হে মাধবী দ্বিধা কেন
##
বন্ধুদের ভেতরে মাধবী ছিল, ‘ব্রেক-শ্যু’ও  মেনে নিত ছিল, আচমকা মারার সময়। সাইকেল, বিকেলের পাটায় তখন। মাধবী কোথায় যেন যাচ্ছে, সঙ্গে পুরো রাস্তা। পুরো ছায়াবীথি। সংক্ষিপ্ত মাধবী, তার অবহেলানো দুপাট্টায় নিরুদ্দেশ বিবাগী পাখির থেকে নেয়া। গুগল আর টুটুল ভেবেছিল নাকি ভাবে নি, যে সংক্ষেপ মানেই সারাংশ নয়..
##
সিরাপ বানানো ছিল মাধবীর নেশা, যারা যারা মাতাল হত, তাদেরই দুজন হত গুগল, টুটুল। তারা টলতো না। বলতো না। রাইফেলের নল বের করতো না। ভালবাসার জন্য তারা খুব ভাবতো, এরকমও ভাবতো যে সংক্ষেপ হল চাহিদা আর সারাংশ হল যোগান। মাধবী তাহলে কি? এই দ্বিধা ছিল তাদের, শুধু গানটা তারা জানতো না। খুব সহজে তারা লুম্পেন হয়ে গেল
##
১৬ অগাস্ট নাকি ২৭ জানুয়ারি, কবে যেন?
##
৩৬.
চাঁদ ফুরিয়ে যাবে , ঈদ থাকবে। চাঁদ কি আর একটা? মাধবী সাজিদকে বলে, কুরআন পড়ো মিয়াঁ, শরিফ হতে পারোনা? দেখো যায়-যায় চাঁদের যে টগরসুধা ঢলে পড়ছে মাঠসোহাগি ধানের ছড়ায়, মিশ্রণটা দেখো, শাদা। শরিফের রঙ সির্ফ আউর সির্ফ শাদা।
##
সাজিদ চলে যায়, শাদার গায়ে। ফিরে আসে বাদল হয়ে। ঘনঘোর। সিরাপে চুমুক দেয়। মাধবী বলে, চুমুক, ‘ক’ বাদ দিয়ে ভাবছ নাকি, চোখ গেলে দেবো। বাদল হাসে। বাদল এক কালো প্রস্তাবনা, দাঁতে কিন্তু জ্যোৎস্নাপালিশ।
##
দুজনেই চায়। মাধবী এক দেয়াল, সেই দেয়ালে হেলান দিয়ে চেয়ে থাকে। দেয়ালে সিরাপের দাগ, চন্দ্রাহত ধানী সিরাপের।
##
দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে তারা দেখে। মাধবীজংশনে শুধু আলো। দেখে তারা, দুটো ছায়া পড়বে ব’লে.... 
সম্পা পালের কবিতা 
ইতিহাস ও সংস্কৃত 


ইতিহাস আজ নতুন সাজে 
গায়ে শাহী গয়না আর লাল বেনারসী ।

চারিদিকে বিসমিল্লা খাঁ র সানাই
যে ঝাড়লন্ঠনটা বহুদিন আলোহীন
ওতে আজ নতুন মোমবাতি ।

চৌহান , চান্দেল‍্যরা অতিথি ।
সিন্ধুর তীরে যঞ্জের বেদী ।
গায়েত্রী মন্ত্রের উচ্চারণে ইতিহাস সংস্কৃতের হাতে হাত ।

তপোবনের পাতায় পাতায় হিল্লোল ।
অপেক্ষা হয়তো বহু যুগ বা কালের ।

শুরু হলো ইতিহাস ও সংস্কৃতের যুগান্তরের পথ চলা ।
ইতিহাসের দলীল দস্তাবেজ রয়ে গেল সাক্ষী ।

চিরঞ্জীব হালদারের কবিতা 


তের নম্বর প্রেমিকদের নীল শার্টই পরতে হ য়।
যতোই আপনি ঘনশ্যাম বটব্যলের দোকান থেকে কুমকুম কিনুন না কেন।
আপনার জামায় যতোই  গন্ধরাজ গন্ধরাজ
কলম্বিয়ান আতর জেগে থাকুক,
হয়তো মৌমাছিদের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায়
একমাত্র নিমন্ত্রিত নীল প্রেমিক।

আচ্ছা বলতে পারেন পররাষ্ট্রনীতির সেরা ছাত্র হয়ে কেন আপনি গজাস্ট্রীপের সেই ত্নন্বীর দিকে  স্ট্রবেরী বাড়িয়ে দিলেন।
লজ্জা হওয়া উচিত চাঁদ ওঠার আগে কেন বোরখা পরে লেডিস টয়লেটের ছাদে সাপ্লুডোয় ব্যস্ত ছিলেন।
বার নম্ব র আর চোদ্দ নম্বরে উভয়ে লটারী অধিকর্তা,প্রত্যেকে তাহাদের একাদশতম প্রেমিকাদের সাথে হাইঊ দ্বীপে বায়োস্কোপ
দেখতে যায়।
মোশিয়ে আপনার আন্ডার ওয়ারও কি নীল।
আমি চে গুয়েভারের কবিতা ঠিক ঠিক
মুখস্থ বলতে না পারার জন্য নীল জামা নাকি উপ যুক্ত  পরিধেয়।
হে তের ন ম্ব র আপনি কি জানতেন না
চন্দ্রবিন্দু আর খন্ড-ত য়ের ভেত র ক্যনোভাবে বিসর্গ বসাতে নেই।

আমার জামা আর গাত্রবর্নের ভেতর
 রং বদল শুরু হল বলে।

১৯+৬+১৮
ইহাকে অপেক্ষা বলে মাদমোয়াজেল।

এই আলো বর্তনীর গৃহধর্ম এক বরেন্য কৌতুক।
শোভন চৌর্যবৃত্তি তার ললাটকুমকুম
পাহার দিচ্ছে।
কখন কদমফুল অভিসার যাত্রায়
ডাহুক স্বরে ডেকে উঠবে।

১৮-৬+১৮

মধ্য শিক্ষিতরা জানেনা গরান কাঠেরনৌকা কোন ঘাটে নোঙর করে।
শিংশপা বৃক্ষে সব অভিজ্ঞান ঝুলিয়ে
মাঝি অর্ধনমিত হয়ে আছে জলজ রসায়নে।
এই লগিময় জীবনে রাধেদের কোন পারানি লাগেনা।
মাঝির ট্যাঁকে গোঁজা পেট্রোল ম্যাচ
এই সব দেখতে দেখতে আবাহন  মন্ত্র শিখে নেয়।
১৭-৬-১৮
পেয়ালা / প্রশান্ত গুহমজুমদার


২১। ঘরের পাশেই ঘর! অনাবিল ছিল না এই বহন। তুমি সিঁড়ি দেখিয়াছিলে। তাহার। আধখানা গোল। ভয় ভাবিয়াছিলে? চাকা, নির্বিকার, এমত মনে ছিল? খুলিয়া দেখ নাই, মাটির ধুলো অথবা ধুলোর সাদা অনাবিষ্কৃত ছিল ওই সাদা ভ্রমণে, নতুন। কেবল নিজেকে কষ্ট ওই সব অধম পদে, ক্রিয়ায়, পতনে। দেখ নাই, চাকা ক্রমশ তোমাকেই লেহনে উদ্যোগী। ফলত সংবেদী কাঁটাসব তোমাকে গ্রহণ করিয়াছে। দেখ, আজ অবধি সাদায়, দুয়ারে। আত্মনেপদী পেয়ালায়। শূন্য সীমন্তে। সেইসব।

রাজশ্রী ব্যানার্জীর কবিতা 




শঙ্খচিল
------------



শঙ্খচিলের ডানায় শ্লথ হয়ে আসে রাত্রি,
রাত্রির বুক চিরে আর্তনাদ,
জীবন চুরমার ষড়যন্ত্রের কামড়ে ,
হেমলক স্রোত শিরা ধমনীতে ,
নীলাভো হয় শরীরী খোলস ,
থরে থরে অ-সুখ ,অশুভ আঁতাত 
মৃত্যু শুঁকে যায় জীবনকে ,
এরপরই আসে সেই প্রশ্ন,
মৃত্যু,হত্যা না আত্মহত্যা !!



নিষিদ্ধ ফল
------------------



সাদা কালো জীবনের দাগগুলো এক একটা বাঁক,
কুচো কুচো কাঁচের টুকরো যতই জড়ো কর-
প্রতিবিম্ব বিকৃত হবেই,
প্রতিটি দুপুর সরোবরের জলের মত স্তব্ধ,
অবহেলায় জন্মানো আগাছা সাফ করে ,
সেখানে স্বপ্ন বুনবো,
পাতাদের সালোকসংশ্লেষ শেষ হলে-
একটু ক্লোরোফিল ধার করে নিও ,
জীবনের মলিন দৃশ্যগুলো আবার সবুজাভ করব ,
সবুজ কালচে ধরলে আবার শেওলা জন্মায় ,
সীমারেখা থাকাটা খুব জরুরি,
সেটা পার করে নিষিদ্ধ ফল খেতে চেও না ৷

 রমাপ্রসাদ গোস্বামীর কবিতা 

কবিতা ১৮

কি দেখেছিলে সেদিন 
বসন্ত বিদায় বিকেলে 
ব্যবধান দুরন্ত বিস্তর 
তবুও একাকী প্রতিজ্ঞা দু'চোখে
ঝরে পরে অবিরত 
পৌরুষে আমার করেছিলে
তীব্র আক্রমণ 
সময় ঘনিয়েছিল অবেলা স্রোতে 
নিজেকে সঁপেছিলে একান্ত নিরালায়
বাসী ফুলের গন্ধে আজও 
বিভোর প্রবাসী 
দুই পাড়ের দুই কুলে আষাঢ় ঘনায়।।

কবিতা ১৯

এখনও হয়নি যেন 
মুগ্ধ ঋতুমাস সময়ের বেলা
প্রগলভ চাউনি কেন
মধ্য বক্ষ মাঝে অশণি সংকেত 
গুড়ু গুড়ু ঝরে অবিরত 
তোমাকে উন্মোচিত করে
শ্রান্ত সহবাসে
বসন্ত অবেলায় অধরাই থেকে গেলে 
নব বধূগো আমার ।।

কবিতা ২০

নীল মদে চুমুক দিয়েছি সদ্য 
ভুলে গেছি সব-অতীত বর্তমান 
ভুলেও ভাবতে চাইনা ভবিষ্যৎ
নেশাটা ফিকে হয়ে যাবে।
হিটলার থেকে সাদ্দাম
শুধু আমিই নিয়ামক
আরো অতীতে -
নাদির থেকে রবার্ট ক্লাইভ
পলাশী থেকে সদ্য বাগদাদ
সবই নীল মদের মহিমা 
তবুও পিপাসা মেটেনি
নেশাটা ক্রমশ ফিকে হয়ে আসছে 
আরো আরো এবারে দিক পরিবর্তন 
আঃ অসহ্য ,এখনও আমার দু'গালে
চে-ফিদেলের আঙুলের ছাপ
বুকে আমার হোচিমিনের দেয়া ক্ষত
টুপটাপ্ টুপটাপ্ এ কিসের শব্দ 
ধ্যাত্ মদের স্বাদ ক্রমশ নোনতা
যাক্ চুলোয় তবুও উদ্ধত আমি 
জিভে পাই নীল মদের সাথে 
গরম রক্তের স্বাদ
আগ্রাসন
এবারে এশিয়া ।।

কবিতা  ২১

সভ্যতা শুয়ে আছে লাসকাটা ঘরে 
নেকড়ের হাতে দেখো শাণিত কৃপান
সদ্য জাত শিশুটি
স্তন খুঁজে মরে
নেকড়ের সজাগ দৃষ্টি 
তারই পরে আজ
লাসকাটা ঘর থেকে গুমোট হাহাকার
ভোরের সূর্য কাঁদে মেঘের আড়ালে 
ধীরে ধীরে শিশুটি 
হামাগুড়ি দেয়
নিমেষে সহস্র চোখে বিদ্যুৎ খেলে 
কচি রক্ত শুষে নিতে তৎপর ওরা
লকলকে জিভ দেখ সদা ঠোঁট চাটে
লাসকাটা ঘরে---।।

কবিতা ২২

আলো ঝলমলে সারি সারি
পসরার মেলা
ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘেদের আনাগোনা
প্রাসাদের শীর্ষে বসে
সেদিনের মৃণ্ময়ীর 
সখের সই পাতানোর খেলা 
যমুনার সাথে 
তোমার মখমলে সাজানো রূপ 
বেসাতি পসরা সাজায়
আমার ছেঁড়া বসনে
আগমনীর হাসি চোরা স্রোতে ।।

কবিতা    ২৩

তোমাকে নিভন্ত দেখেও
আগুন জ্বালাতে পারিনি আজও 
জঠরে সুতীব্র ক্ষুধা 
দানা বাঁধে রোজ
শরতের কোন এক কাকভোরে
বর্ষার বিভিষিকা
আমার উনুনে কেঁদে মরে ।।

সন্ধিক্ষণ
                     কণিকা দাস        

এখন আর রামধনু রঙে খুঁজিনা সে মুখ
বর্ষার জলে ধুয়ে নিয়েছি শরীর মন
এখন শুধুই ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার সাথে লড়াই
প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টায় নাজেহাল।
শান্ত বিকেলে যাই না এখন তিস্তার পাড়ে
ঘরে বসে দিনগুনি বিদায়ের
প্রাণায়াম কিংবা ধ্যানমগ্ন সন্ধ্যা লগ্নে
জীবনকে চিনে নেওয়ার প্রচেষ্টা।
এখন আর কথা হয়না মেঘেদের সাথে
হিসাব কষেই কেটে যায় বেলা
কী দিয়েছি আর কী দিতে হবে 
চুলচেরা বিশ্লেষণ চলে প্রতিক্ষণ।
মেঘ কেটে গিয়ে চাঁদ যদিও দেয় উঁকি
জোছনায় স্নান করিনা গভীর রাতে
আবেগ গাঁথে না মালা বিরহ বা মিলনের।
এখন আমার শুধুই একলা থাকার দিন
নিজের ভিতরে নিজেকে খোঁজার পালা।
সেই নদীটি মনের গভীরে বয়ে চলে
শৈশব স্মৃতিস্নানে ডুবে থাকি সারাবেলা।
ঘুমহীন রাত কাটে অবলীলায় 
দিনও বয়ে চলে সময়ের স্রোতে ভেসে
এখন শুধুই দিনগোনা আর দিনগোনা।
টুকরো কবিতা

                                         উমাপদ কর



৪১
ভুলে যাওয়া নদীটিকে অসময় ভেবে মনে করার কথা ভাবি
        তার স্রোতের দিকে বাইছিলাম মান্দাস
তার স্রোতের বিরুদ্ধে কিছুই ছিল না সাঁতার ছাড়া
         স্বপ্নে ছিল এক সুদৃশ্য পাল আর নৌকার ময়ূরপঙ্খী গলুই
তীরে উঠে আসার পর স্বপ্ন ভেঙেছে যেমন সাঁতারের কথাও আর মনে নেই

৪২
ভুবন ভোলানো হাসিটিকেই বাজি ধরেছিলাম খুব নিচু গলায়
          বিপরীতগামী এক ট্রেন ঝমঝমিয়ে উঠেছিল কোনো ব্রিজে
নদী পারাপারের সময় এক বিচ্ছু পানকৌড়ি আমার দিকে তাকিয়ে বুঝিবা হেসেছিল
          আর কামরাভর্তি গুঞ্জরিত মানুষ আমার কাছে কত কি চাইছিল
ওই ভুবন ভোলানো হাসিই কি তবে কাল হয়েছিল নাকি কর্ণ বানিয়েছিল

৪৩
ধরো আমিই তোমার মানিক, পাথরও
          ধরি তুমিই আমার পাষাণ
কিভাবে বর্ণনা করব দুজন দুজনকে
           ঘুরছি ফিরছি আর বারবার মেপে নিচ্ছি 
গভীরে প্রবেশের দরজাগুলো যা ঠিক হাট করে খোলা নেই

৪৪
ফিরে যাবো না আর যতই পথ শেষ হয়ে যাক
         ঘুমিয়ে পড়ব বিশ্রাম নেব
তারপর পথকেই বলব আরেকটু লম্বা হতে
         সেও আমার কথানুসারে আরও চলার রাস্তা বানাবে
পথের দিগন্তে এসে এই যে রাস্তা খুলে যাওয়া তা আমাকে ফিরতে দেবে না

সুমন মল্লিক
রাত্রি পান করি


অন্ধকারের মন্ত্র-মোহানায় ভেসে ওঠে যেই সুদীর্ঘ নিরুদ্দেশ, রাত্রি পান করি সচেতন অবচেতনে ৷ লজ্জার গভীরে প্রবেশ করি ৷ চুমুকে চুমকে তৈরী করি সোহাগচারণের চারণভূমি ৷ নদী হয়ে নেমে আসে আভাসিত প্রশ্রয় অপেক্ষার সযত্ন-জমিনে ৷ অবলোকনে আছড়ে পড়ে সম্ভাবনার জলপ্রপাত ৷ আগুনের মাঝে ঝড় তোলে আগুন ৷

নজর ও আঙুলে সাজিয়ে রাখি পরশামৃতের প্লাবন ৷ মন ভেসে যায়, মন উড়ে যায় যেন নতুন পৃথিবীর শান্তি-পাতালে ৷ কী যত্নে শরীর দিয়ে শুষে নাও শরীরের কারুবাসনা ; শরীরের আতরবাসনা উজাড় করো শরীরে ! রাত্রি পান করি, রাত্রি পান করি, আর লালন করি শীতের শেষ উত্তাপ ৷

তৈমুর খান এর দুটি কবিতা
শূন্যে চেয়ে থাকি 
________________
বিকেল শীতের খড় শুকিয়ে নিতে থাকে
রোদের ওড়না মেলে দাঁড়িয়ে থাকে গাছ
শালিক পাখির ঠোঁটে নরম ইশারা
ঘুরেফিরে কার ছায়া আসে  ?
মুঠো খুলি
স্মৃতির স্পর্শগুলি শিহরন ছড়ায়
বালিপথ জুড়ে সময়ের পদচিহ্ন আঁকা
শেষ নিশানায় জলপাখি
ডুব মারে
কী মাছ  ?  কী মাছ ওর ঠোঁটে   ?
সাম্রাজ্যের কারুকাজগুলি জলের ওপরে দুলে ওঠে
তীরে কার ছায়ার আড়ালে শূন্যে চেয়ে থাকি 
                                              উন্মুখ দিগন্তের পারে   ?

অতীত জ্বর 

___________
মনখারাপের বিষণ্ণ মেঘের নীচে
অনুভূতির ঝরনাগুলি নাচে
চুপচাপ বৃক্ষদিন
হাওয়ার কাছে মন খুলে দেয়
পাতায় পাতায় কানাকানি
ধুলোরাস্তায় গোরুর গাড়ি
আমার কৈশোর চেপে আছে
যাচ্ছে কোথায়  ?   কোথায় যায় রোজ  ?
খেলা ফেলে নতুন খেলায়
হলুদ জামা  ,  ছেঁড়া জুতো
শ্লেট-পেনসিল,   বর্ণমালা 

কৌতূহলী দুঃখী চোখ.....

শ্যামল সরকারের অনুগল্প 

বিশ্বজিৎ লায়েক এর বিষয়হীন গদ্য 


বিয়োগফলের বত্রিশ আনা জীবন


ভাবছি নিজের কথা লিখব। হয় না। লেখার সঙ্গে ঢুকে পড়ে চাল, গম, চিনি। বি.পি.এল. এর মানুষ। পোড়ামাটির জীবন ও মানুষজন। মিডডে মিলের ভাত। ভাঙা স্কুলঘর। সর্বস্ব খোয়ানো আমানতকারীর ক্যাবলা, দোমড়ানো মুখ। আর্দ্রতা ও কৌতুহল।
আকাশে চাঁদ উঠলে নাচতে ইচ্ছে করে। কানে গুঁজে নিতে ইচ্ছে হয় পাখির পালক। সম্ভব হয় না। ঘর বন্ধ করে শুয়ে শুয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করে। পারি না।
মেসবাড়ির জানলা বন্ধ করলে পাশের খাট থেকে চিৎকার করে বিশু, ' দেখছিস না, বিড়ি ধরিয়েছি! স্যাভোকেশন হবে।'
আমি বিড়ির ধোঁয়ার দিকে ঈষৎ প্রেম প্রেম চোখে তাকাই। ঈষৎ জুলজুল চোখে তাকাই। বিপরীত  ইচ্ছের প্রবল দড়ি ধরে টানে কেউ। তাকের উপর রাখা ডিওলিন চোখ গোল গোল করে তাকায়। আমি ফাটা বেলুনের মতো চুপসে যাই।
অতনু ফোন করে। বলে, 'খবরটা শুনে সেই থেকে আমার খুব খারাপ লাগছে। কেন এমন হল বলো তো!'
কী হল ভাবতে থাকি, ভাবতেই থাকি। ভাবনার আর গাছ, পাথর থাকে না। ১৯ মিনিট ১৩ সেকেন্ড পর মনে হয়, 'সেকি! অমন তো কিছুই হয়নি। হ্যাঁ, হতে পারত। কিন্তু হয়নি।'
বাংলা বাজারের জলবায়ু অঙ্কুরোদগম সহায়ক। দ্রুত মাটি ফুঁড়ে চারাগাছ। ডালপালা গজায়। গোঁফদাড়ি গজায়। শিশু কিশোর হয়। কিশোর যুবক হয়। যুবক প্রৌঢ় গাছ। প্রৌঢ় কি হেঁটে যায় ফেলে আসা শৈশবে। হাঁটি হাঁটি পা পা।
মিহির এসেছিল। আজ। এ যে আস্তাকুড়! কী করে থাকিস! বিছানা জুড়ে বইপত্র। খাতা। চ্যবনপ্রাস। আয়না।  বিস্কিট। মুড়ির কৌটো। ব্যাগ। শোয়েটার, ল্যাপটপ, বিনয় মজুমদার, নীরা, আকাশ অংশত মেঘলা থাকবে, টর্চ!  বসবো কোথায়!
আমি সন্তর্পণে বাগিয়ে গুছিয়ে জায়গা করে দিই। নে বোস। চা খাবি? মিহির শুয়ে পড়ে। টান টান। চোখ বন্ধ। গরম জলে ব্ল্যাক কফি মিশিয়ে আমি নাড়তে থাকি। মিহির বোঝাচ্ছে বি-কমপ্লেক্স এর গুণাগুণ। প্রোটিন পাউডারের দাম...
আমি অনেকটা পিছনে হেঁটে ক্লাস ফাইভে ঢুকে পড়ি। গোরুর গাড়ি চেপে মামার বাড়ি। একমাসের অফুরন্ত এঁড়ে বাছুর। সন্ধ্যেবেলায় পড়তে বসার হ্যাপা।
আমাকে অঙ্ক কষতে দিয়েছে মিহির। আমি মিহিরকে দিয়েছি একটা খোলা নল আর ভর্তি নলের সঙ্গে বানর আর লম্বা বাঁশের পাটিগণিত। ঠাণ্ডা লড়াই আস্তে আস্তে গরম হচ্ছে - কে উত্তর মেলাতে পারে আগে।
সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে লাফ মারি। উফ্ পিছলে পড়ি। টিউশন জুড়ে হো হো! ফাস্টবয়ের তিন টাকা দামের খাতায় প্রথম পাতায় লাল কালিতে গোল্লা। দশে শূন্য আমি। দশে মিহির দশ। সারা ক্লাস মুখ নিচু। লজ্জার চেয়েও দশ গুণ ভয় দাদাকে
মিহির আজ বীরপুরুষ। মুখে, চোখে যুদ্ধ জয়ের হাসি। মিহির আজ অঙ্ক পুরুষ। মেজাজের রঙে দশে দশ।
ইলেকট্রিক বাতি তখনও আসেনি গ্রামে। বিকেল বিকেল হ্যারিকেনের কাঁচ মুছে দিত মা। কেরোসিন ভরে দিত ঠাকুমা। টিউশন শেষে হৈ হৈ বেরিয়ে পড়া। নিজের সামনেটুকু আলো। পিছনে ধূ ধূ অন্ধকার। হ্যারিকেন নিয়ে দৌড়লেই ঝুপঝাপ অন্ধকারে ভূতের ভয়। ভয় সামনে পিছনে। মাথার উপর অগণন নক্ষত্র। কে যেন চিৎকার করল, ' ভূত আসছে... '  আর দে দৌড়...
আজ নিখিল বিশ্বজুড়ে এতো জ্বালিয়েছ প্রভু। টিউব আর নিয়নের ধাঁধাঁ। আমাদের সন্তানেরা কি টের পাবে ভূতের ভয়। পাবে না। আরে ভূতের রাজা তো বর দিয়ে গেছে জব্বর জব্বর তিন বর - আলো, আলো, আলো...
এতো কষ্ট করে থাকিস। ভালো ঘর দেখে উঠে যা।
আমি চায়ে চুমুক দিই।
আর্দ্রতা বেশি হলে বাটা কাটি। চালের দেবতা রুষ্ট হন।
ঘরের কোণে এনে রাখি পাখির পরিত্যক্ত বাসা।
ছেলের ভাঙা খেলনা।
ডায়েরির পাতায় লিখি হিসেব। তের বছর তিন মাস সতের দিন সময় বিক্রি করে, শ্রম বিক্রি করে, নিম্নমেধার সঙ্গে ঘাম বেচে সাকুল্যে একলাখ উনিশ হাজার সাতশো সতের টাকা পঞ্চাশ পয়সা। ব্যাঙ্কে জমা রাখি। বছরে হাজার দশেক থেকে নেমে নেমে সাত, ছয়.. বই কিনি, মৃত আর তরুণ কবির কবিতাযাপন....
আয়নায় ঢিল ছুঁড়েছিল যে প্রবীণ,  ইন্ধন দিয়েছিল ঈষৎ নবীন ও মধ্যবর্তী তরুণ। আজ ওরা ফ্যালফ্যাল করে তাকায়। কথা বলে না। আড়ালে গোপনে। লোক মারফত খবর নেয়।
ভাবে কোন যাদুবলে একটা মধ্য তিরিশের খেটে খাওয়া মানুষ এত আনন্দে গমগম হেঁটে যায়। স্বর্গের বাগানে। দুঃখ কি লুকোয় তাকে! নাকি সেই দুঃখ লুকিয়ে রাখে! বাড়ি আসে।  ছাদে উঠে পায়চারি দেয়। ফুলগাছে জল, মাটি, প্রাণ আর আরাম।
গান গায় - " বাসনা যখন বিপুল ধুলায়/ অন্ধ করিয়া অবোধে ভুলায়/ ওহে পবিত্র ওহে অনিদ্র, রুদ্র আলোকে এসো।"
বাড়ি এলে, দু-পাঁচ জন লোক দেখা করতে আসে। চা আর পাঁপড় ভাজা খায়। আড্ডা দেয়। কবিতা আর অঙ্ক কষে রোজ। দুঃখ কষে না কেন!
কিছুতেই ভাঙে না, নুয়ে না। চা খাও তারপর অন্য কথা হবে।
কী আছে তার শিরদাঁড়ায়।
এইসব ভেবে ভেবে মনখারাপ করে কেউ কেউ।
ভাবতে ভাবতে কারো পেটও খারাপ হয়।
কেউ কেউ চাঁদা চাইতে আসে। দুর্গামন্দিরের চাতালে পাথর বসবে। কালিমন্দিরে মোজাইক। জানি ঈশ্বর মন্দিরে থাকেন না। ভাতের থালায় থাকেন আর থাকেন স্কুলের ব্ল্যাকবোর্ডে...
দুপুরে উবু হয়ে শুই। কোনো কোনো রোববার। মাসে দু-একবার তো হয়ই। হাসতে হাসতে তিন বছরের সন্তান অপ্রতিম এসে খাটের বাজু ধরে দাঁড়ায়। হামি খায় গালে।
কোলের পাশে এসে চুপচাপ শোয়। ভাবি ঘুমোবে এবার। না। মিনিট পাঁচেক চুপচাপ থেকে তড়াক করে উঠে বসে।  ডায়েরিতে আঙুল ছুঁইয়ে বলে, 'বাবা দেখো 'ক'।'
আমি ওর মুখের দিকে তাকাই। ওর শৈশবের সঙ্গে মিশতে থাকে আমার ফেলে আসা শৈশবের রঙ। লাল, নীল, হলুদ, সবুজ রামধনু। আমার বিয়োগ ফলের বত্রিশ আনা জীবন।
ছোটো ছোটো দুটো হাত আমার কর্কশ গালে বুলিয়ে দেয়। আদর করে। হামি দেয়। বলে, 'বাবা সোনা ছেলে 'ক' করে।'
ওকে বোঝাতে চেষ্টা করি  - 'ক' তারপর এই 'বি' (বিশ্বচরাচর)।  তারপর এই যে 'তা'(তাক ধিনতাধিন)  এই আমার কবিতা লেখা।
যাপিত জীবনে কবিতার আলো-অন্ধকার। তুই লিখবি!
হাততালি দিয়ে ওঠে, 'বাবা, আমিও কবিতা... '
আমার হাতে আলগা করে ধরে থাকা কলম কেড়ে নিয়ে গোটা পাতা জুড়ে মস্ত 'ক' লিখছে আমার শিশু ভোলানাথ।
সাতবছর পর আবার আমার চোখে জল আসছে।
আমি কাঁদছি না।
আমার অপ্রতিম সত্ত্বার ভিতর দেখছি আমার বীজ, আমার আগামী স্বপ্ন..
হাসছি। হো হো করে হেসে উঠছে অপ্রতিম। আমিও আপ্রাণ চেষ্টা করছি বত্রিশ বছর পিছনে গিয়ে সেই হাসি টুকু ছুঁয়ে থাকার...
 শোভন মণ্ডলের কবিতা


  ডুবে যাই ঘুমের ভেতর
           

আমাদের ভাবনাগুলোর মাঝখানে খেলা করছে যে সব দাঁড়ি কমা
তার কোন নিভন্ত আগুনের গল্প নেই
ভেঙে যাওয়া ভালোবাসার পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়ছে দুরন্ত শিলা
আমাকে শুধু কাটাঘুড়ির সুতোর মতো ছুঁয়ে থাকতে দাও অলীক মুহূর্ত
আপেলের গন্ধে ভরে আছে অজানা বাগান
মায়াকাজলে জুড়িয়ে যায় চোখ
আমরা ক’জনে সাঁতরে যাই গহন দিঘি
ঘুমের ভেতর থেকে তুলে আনি একটা দীর্ঘ রূপকথা


পুরনো গ্রামে ফিরে
           

এখনো ছায়া ঝুলে আছে বটগাছে

শ্যামল-নাপিত খরিদ্দারের অভাবে টুলে বসে বসে ঢুলছে

পুকুরের জলে ডুবসাঁতার কাটছে কয়েকটা হাঁস
ওদের আদৌ কোন তাড়া নেই

রাস্তার পাশের পুরনো মন্দিরটা এখনো আগের মতোই
শুধু একটু বিবর্ণ, বিমর্ষ
তার চাতালে বসে ভোলাপাগলা অদৃশ্য আঁকিবুঁকি কাটছে

সামনের স্কুলটা থেকে ভেসে আসছে ছুটির ঘন্টার শব্দ
আর আমি স্পষ্টই দেখলাম
একছুটে স্কুলের গেট ঠেলে বাইরে বেরচ্ছে আমার হারানো ছেলেবেলা...

মলয় রায়চৌধুরীর কবিতা নিয়ে কথা