Sunday, August 5, 2018

উত্তর পূর্বাঞ্চলের কবিতা 

শক্তি নন, শক্তিপদ

বিশ্বরাজ ভট্টাচার্য

স্বপ্ন আর সম্বিতের মধ্যে
খানিকটা ফাঁকা জায়গা;
সেখানেইতো তাঁর বসত-বাড়ি।
বিকেলের গায়ে সন্ধেরা নামলে
ঘরে ফিরতেন তিনি।

কাঁধের ব্যাগে দিস্তা দিস্তা ভাবনা
শব্দরা উড়ত জোনাকির মত 
কবির পায়ের ছাপ
শহরের বুকে আজও অক্ষত

বৃষ্টির মতন কবিতা ঝরে
শিলচরে বারোমাস
মেঘ এখানেও  চড়ে গাভির মত!
তুমুল ভিজে এতে
শক্তি নন,এখনও বাড়ি ফেরেন
আমার শক্তিপদ...


এপিটাফ

দেবলীনা সেনগুপ্ত

ভালবাসার শবদেহ
বহনে  ক্লান্ত কবি
খুঁজে বেড়াচ্ছেন
একফালি  নাবাল জমি,
যেখানে গাছের ছায়া
ঝুঁকে থাকে রোদ মেখে,
বৃষ্টির জলধারা পরিখা আঁকে
নিশ্চিন্ত ভরসার
নিবিড় আলোর তৃষায়
জেগে থাকে রাতের আঁধার ।
সেইখানে
সেই পবিত্র মৃত্তিকাভূমে
তিনি পরম মমতায়
শুইয়ে দেবেন
ভালবাসার নিথর শরীর।
নিথর অথচ পচনশীল নয়,
তাকে আগুন দগ্ধ করে না 
বাতাস বিদ্ধ করে না
 এমনকি,জলও আর্দ্র করে না ।
তারপর...
কবি মগ্ন হবেন
প্রেমহীন যাপনে
এক নিজস্ব এপিটাফ লেখার জন্যে...।


আশপাশ বৃষ্টি 

নীলাদ্রি ভট্টাচার্য 

বর্ষার জল বৃষ্টি আশপাশটা
ঘাড়ের কাছে দড়িপাকানো মেঘলা ছোঁয়া
আকাশ মিলন ঝুলন্ত আলোড়ন
অলীক আনাগোনা একান্ত রিমঝিম শব্দদানা।

পাশে অভিমান দর্শন কাঁদা জানালা
জমা মরশুমে বৃষ্টিজব্দ পোঁতা প্রেম আবরণ
ঠোঁট কাঁপা ঠিকানা বন্দী জলকথা
আমার ঘর ঘিরে পুরোনো স্কুলবেলার গুরুপাক আন্দোলন।


তরতাজা।তেজি।কালো ঘোড়া।

বিজয় ঘোষ

ঘোড়া পুষব ভেবে একটা ঘোড়া কিনে ছিলাম।তরতাজা।তেজি।কালো ঘোড়া।অথচ কিছুতেই তাকে পোষ মানাতে পারছি না।ঘোড়াকে আদর করি।ঘোড়া পিছনের পা দিয়ে চাটি মারতে উদ্যত হয়।ফলত আমি নিজেকে সরিয়ে নিই। ঘোড়ার দিকে রাগত ভাবে তাকিয়ে ভাবি হয়তো এই রকম অনেক ঘোড়ায় চড়ে যারা এসেছিল সহস্র সহস্র বছর পূর্বে তারাই ধ্বংস করেছিল সিন্ধু সভ্যতা! ঘোড়া নির্বিকার ভাবে দাঁড়িয়ে।যেহেতু রাত্রি। কালো ঘোড়া মিশে আছে কালো রাত্রির গর্ভে। তবুও কিছু বেদনা যেন ছেয়ে থাকে ।চারিদিকে।আকাশে অতি ক্ষীণ চাঁদ। যথাসাধ্য আলো দিয়ে যাচ্ছে।ঘোড়া।একটি যুবা-ঘোড়া। একা একা দীর্ঘশ্বাস ফেলছে।

কোন এক যুবতী-ঘোড়ার আকাঙ্ক্ষায়।

লন্ঠন
অপাংশু দেবনাথ

মানুষটি লন্ঠন জ্বালিয়ে আলো দিতো পথে,
                                তুমি বুঝতে পারোনি।
স্বেচ্ছা নির্বাসনে ছুটে গেছো, আরও সুখের খুঁজে
ছেড়েছো সরল নগরী ।

এ সড়কে সকাল বিকেল রেল আসে, রেল যায়।
মর্দিত নারীর মতো পড়ে থাকে জোড়া লৌহপাত
দুজনেই একই আকাশ দেখে, যেন বিরহী হৃদয়।

মানুষটি লন্ঠন জ্বালিয়ে লেবাংবুমানীর সুরে গায়,
এ সড়কে সকাল বিকেল রেল আসে, রেল যায়
কারা যেন সিট বদলায়,উড়ায় রঙিন ঘুড়ি
                            মানুষটি লন্ঠন জ্বালায়


সান্ধ্য খবর 
অমলকান্তি চন্দ 


চোখ দুটো রোজ উড়ে যায় পাখীর ডানায়
হাট বারে কখনো কখনো পয়চারী করে এদিক ওদিক
শাল পাতায় মোড়়া ,জল শামুকের ভীড়ে
গোটাকয়েক ব্যাঙাচির আকাশ দেখা হয়ে গেলে
ভীড় ঠেলে ঠেলে ঢুকে পড়ি পাচু মিঁয়ার চায়ের
স্টলে, সিঙ্গারায় অবিকল আঙুলের প্যাচ ………

চায়ের ধোঁয়াতে ভাসতে থাকে সান্ধ্য খবর
বুকের খাঁচায় গোটা দুয়েক বুলডজার
খাবলে খেল কিশোরীর নরম স্তন যুগল আর বোবা যোনী….


ভালো থাকো, অন্যকে ভাল থাকতে হবে

শতদল আচার্য

বন্ধু থেকে বন্ধুর আসা পথে
বিশ্বাসঘাতকের ছুরি মনকে করেছে বিষণ্ণ
আর, বিষণ্ণতা সুস্থ  মানুষের লক্ষণ নয়।
আদিমকাল থেকে জয়ের বাসনা জাগানো
যুদ্ধের কথা না  বলা , এদিকে যুদ্ধই শান্তি আনে
সবই মানুষের উচ্চারণ
সুবিধা মতো জায়গায় সঠিক শব্দ বসিয়ে দিয়েছে
ঠিক দাবা খেলার মতো—
বন্ধু তুমি জানো ?
তোমার ধারালো ছুরি ক্ষতবিক্ষত করেছে সময়কে ,
সাপ হলাম না।
                      জানি আমার ঈশ্বর আছেন
                    জয় আমার সহপাঠী
                     একদিন জয় আসবে ।
সময়কে তুমি ধরতে গেলে
সময় ছিটকে মাটিতে হামাগুড়ি দিলো ,
দাঁড়াতেই পারলে না । বন্ধু তোমার উৎফুল্লতায়
তোমাকে একটা লাল গোলাপ পাঠাবো আর লিখব


টইটম্বুর 

সু চক্রবর্তী 

তুই তুই করে বছর কাটে
ধান থেকে চাল, চাল থেকে ভাত
অযোনিফলের গন্ধ ধরে চারপাশে
বাঁজা জমির উপর জল ওঠে টইটম্বুর

লাঙল ফলায় আগুন লাগে





তুমি তুমি করে ভাত পুড়ে

পুড়ে
পুড়ে

আংগড়া, কাঁকড়,  কড়কড়

জীবন মানেই...

আবু আশফাক্ব চৌধুরী

দরজায় ঠুকা দিয়ে ফেরিওয়ালা নমস্কার করে বলল- উড়িষ্যা থেকে এসেছি...খদ্দর কাপড়...  একেবারে সস্তায়। লাগবে বাবু? এই দেখুন - নিজের চোখে পছন্দ করুন।
মাঝেমাঝে আমার গিন্নী বাজার থেকে দৃষ্টিনন্দন মাল এনে পরে পস্তায় ভেবে তাকে খাটাং বলে দিলাম -লাগবে না কিছু। তবু কাছুমাছু  করে বারবার তার বস্তুগুলোর তারিফ করে আমাকে সমঝাতে চায়... মানে টুপি পরাতে। একবার পারলেই কেল্লা ফতে।
কোনমতে বিদায় দিয়ে ভাবলাম জীবনে কতবার কতো টুপি পরলাম - কতো পরালো... এখনও পরে যাচ্ছি তার কী হিসাব রাখছি!  জীবন মানেই টুপি পরানোর খেলা।

জানালা 

রাজীব ভট্টাচার্য 

দরজা বন্ধ থাক
জানালা দিয়ে ঠিক বেরিয়ে পড়বো
এই গোপন কথঞ্চিত রূপকথা কেউ জানবে না
নতুন এক আকাশ মেঘ সাজিয়েছে অপেক্ষায়
চলো ভিজি
ধুয়ে ফেলি সমস্ত বিষন্নতা  ।


সন্তান

রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ

মনুষ্যত্ব মরে গেলে টিকে থাকে
ধর্মের কিছু বিবর্ণ সন্তান
পচা ভাতের লড়াইয়ে ছিঁড়ে
যায় ঈশ্বরের চামড়ার বান

প্রেমিকের ফিনিক্স-চোখে

মেঘমালা দে মহন্ত

কাজগুলো ইদানিং মাঝ রাতেই হয়
অন্ধকারের আড়াল গায়ে মেখে।
চোখ জ্বালা করা অন্ধকার।

মোম আরও কতো  কী র আদরে আদরে
সাপের মতো পিচ্ছিল করে তোলা দড়িটায়
কেন যে কচি সোহাগি বউটার গন্ধ..
পোয়াতি বাপের বড্ড বমি পায় আজকাল।

এও নাকি প্রেমিক ছিল -
প্রেম কিংবা প্রেমিকার খুনি!

আবারও সেই অসহ্য অন্ধকারে
সব আলো ঢেকে দিতে দিতে জ্বলে যাওয়া চোখ দেখে-
প্রেমিকের ফিনিক্স-চোখে  একরাশ স্বপ্ন-জল।

পিচ্ছিল সাপের শেষতম আলিঙ্গনপাশে
মুক্তি ছড়িয়ে  জ্বালা করা চোখ পা বাড়ায় -
পরনে ঢাকাই আর কপালে সিঁদুরের
বিরহ-প্রতীক্ষা পথে।

ফাঁসুড়েটা কচি সোহাগের দু চোখে সাজাবে আজ
কিছু চুরি করা স্বপ্ন-প্রেমের ঝাপসা জলছবি।

No comments:

Post a Comment