Monday, February 25, 2019

কবিতা করিডোর , জানুয়ারি - ফেব্রুয়ারি সংখ্যা ২০১৯

কবিতা করিডোর 
জানুয়ারি -ফেব্রুয়ারি সংখ্যা 
২০১৯
প্রচ্ছদ : কৌশিক বিশ্বাস 
অলংকরণ : সমীরণ ঘোষ ও অভিশ্রুতি রায় 
সম্পাদক : শুভঙ্কর পাল 
উত্তর পূর্বাঞ্চলের সম্পাদক : রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ 
সম্পাদকীয় 
উৎসব আর আতস বাজির খেলা খেলতে খেলতে কখন যেন রাত গড়িয়ে ভোর হয়ে এলো ।  বাঁকা চাঁদ তখন হেলে পড়েছে বাঁশের নুয়ে পড়া ডালের ফাঁকে আর আমি রবীন্দ্র সংগীত শুনছি । 
টেবিলে ছড়িয়ে থাকা বই থেকে প্রিয় বারীণ দাও কথা বলে উঠছে ....
কবিতাটা ঠিক করে লিখে যাবার কথা 

একটু পরেই কাক ডাকার শব্দে বুঝতে পারলাম উঠে পড়তে হবে ।  ছাত্ররা অপেক্ষা করছে ।  একটা বৃত্তের ভিতর মেধা ও মনন ঘুরপাক খেতে থাকে ।  কোথাও যেন ছন্দ কেটে গেল ।  টিভির স্ক্রীনে বারবার ভেসে উঠছে সেনা কনভয়ে জঙ্গি হানায় মৃত্যুর খবর ।  জওয়ানাদের মৃত্যু ও স্বদেশ প্রেম আরো একটা যুদ্ধের ইঙ্গিত বয়ে আনছে ....
ভূ স্বর্গ জ্বলছে .......
কবিতা লেখা হচ্ছে .....
গান লেখা হচ্ছে .......
ছবি আঁকছেন কেও কেও ....
সত্যিই আজ ভয় হয় এ কোন সকাল । 
তবুও সৃষ্টি জেগেই থাকে ......

ধন্যবাদান্তে 
শুভঙ্কর পাল 
সম্পাদক , কবিতা করিডোর 
ই মেইল :subhabrb@gmail.com
মুঠোফোন : ৯৯৩৩৭৭০৫৪১
উত্তরের জনপদ নিয়ে সুবীর সরকারের গদ্য 

গঞ্জহাটেরকিসসা
সুবীর সরকার

১।
পেছনে তখন পড়ে থাকছে দলদলির ভরা হাট।কত কত মানুষের,চেনা অচেনার এক চারণভূমি।কইকান্ত আর রাধাকান্তর তখন গরুর গাড়ির দুলুনিতে কেমন এক ভ্রমবিভ্রমের নেশার পাকে জড়িয়ে পড়বার দশা হয়।না কি,তারা স্মৃতিকাতর হয়ে পড়তে থাকে।একটা চলমান জীবনের দীর্ঘতাকে তারা অতক্রম করে আসতেই থাকে।বামনডাঙ্গার সেই রাতের আন্ধারে মিশে থাকা আহত চিতাবাঘের হাহাকার থেকে সোমেশ্বরীর বিবাহনাচের দলে তুমুল নাচতে থাকার দৃশ্য ভরা হাটের ওপর উড়তে থাকা বগিলার মতন কেবলই পাক খেতে থাকে।ঘুমে ঢলে পড়বার আগে তাদের কানে এসে বাজে গান_
‘চিলমারিয়া চিকন চিড়া
দিনাজপুরের খই
ও রে,অংপুরিয়া বাচ্চা বাপই
কুড়িগ্রামের দই’
জীবনের ওঠাপড়ার দিকে বারবার যেতে যেতে অনন্তের এক যাপনের কাছেই তো কইকান্তদেরকে যেতে হয়।আসা ও যাওয়ার ভিতর উত্তরাঞ্চলের হাটগঞ্জপাথারনদীমেঘ ও মইষাল মিশে থাকে।ধানপাটসরিসার খেতে সাদা বকের দল,শালিকের দঙ্গল,খোরা জালে বন্দী ঝাঁক ঝাঁক মাছ সব নিয়ে মানুষের আবহমানের জীবনযাপন।নদী নদী ফরেষ্ট ফরেষ্ট এক জীবনে কেবলই জুড়তে থাকে উত্তরের নোলোক পড়া মেয়েদের গান_
‘ঘাড়ত কেনে গামছা নাই
গামছাবান্ধা দই নাই
হাত্তির পিঠিত মাহুত নাই
মাহুতবন্ধুর গান নাই
দাড়িয়াবান্ধা খেলা নাই
বড় গাঙত পানি নাই
ও রে,আজি মন কেনে মোর
উড়াং রে বাইরাং করে’
২।
কুদ্দুস,ইয়াসিনদের কথা ভাবতে গিয়ে মনে পড়ে গেল ধলা গীদালের কথা.৫০/৮০ মাইলের ভিতর যত হাট,যত গাঁ গঞ্জ,যত ফরেষ্ট সবখানেই মিথের মতন এই ধলা গীদাল।বাবড়ি চুল,কপালে অজস্র কুঞ্চন,হাতির দাঁতের চিরুনী চুলে ছুঁইয়ে তার কিসসা বলা,আর দোতোরা বাজিয়ে সর্বশরীরে দুলুনি এনে গান শুরু করা উত্তরের এত এত জনপদগুলিতে তাকে ঘন জঙ্গলের প্রাচীন শালগাছের মতন উপাখ্যানের নায়ক করে তুলেছে।আর হাটে হাটে তাকে নিয়ে যে কত কত উপকথা ঘোরে,তার ইয়ত্তা নেই।আজ পঞ্চাশষাট বছর ধরে এমনই হয়ে আসছে।গানে গাঁথায় তার বুনে যাওয়া কথাকিসসায় আস্ত এক সময় ও উত্তরের ভুবনজোত।হাতিজোতদারের বাড়ির ডাকাতির গল্প বল,কোচবিহারের রাজকুমারের সেই মহাশিকার বল,রাজকুমারী নীহারবালার বিবাহে দু রাত্তিরের গানপালার আসর বল,কালজানি নদীর সেই ভয়াবহ বন্যা বল,ঝামপুরা কুশানীর কুশান গানের যাদুতে আটকে থাকা বল,জল্পেশের ভরা হাটের সেই সিজিলমিছিল বল_সব সবকিছুই ধলা গীদালের আখ্যানের জরুরী অংশ হয়ে পড়ে।সে তার দল গড়েছে কত কত বার।কত কত গীদালের গুরু সে।কত বাবুর ঘরের জ্ঞানী মানসি,খবরের কাগজের বাবুর বেটা,কত সিনেমার মানসি তাকে নিয়ে কাজ করতে চেয়েছে।দ্যাশ বইদ্যাশে নিয়ে যেতে চেয়েছে।কিন্তু কোনকিছুতেই ধলা গীদালের মন জয় করতে পারে নি তারা।ধলা গীদাল এই হাটটাট গঞ্জগাঁ নদীমাঠের জঙ্গলের ছায়ায় ছায়ায় কেবল থাকতে চেয়েছে,আদিঅনন্ত আবহমানের এক জীবনজড়ানো উত্তাপজড়ানো জীবনের ভেতরেই।তার হাসিমুখের কুঞ্চনে সে কেবল গেয়েই চলেছে জীবনেরই গান_
‘ধান কাটে ধানুয়া ভাইয়া রে
ও জীবন,ছাড়িয়া কাটে ও রে নাড়া
সেই মতন মানুষের দেহা
পবন গেইলে মরা জীবন রে’
৩।
আস্ত একটা জীবন নিয়ে কি করে মানুষ!এই জিজ্ঞাসাই কি তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় মানুষকে!জীবন যাপন করতে করতে কি ক্লান্তি জমে!ঘুমের ঘোরে তলিয়ে গিয়ে কি এক খোঁজ পীড়িত করতে থাকলে তখন তো আর পলায়ন ছাড়া কোন উপায় থাকে না।সেরকম এক উপায়হীনতা থেকে ফরেষ্ট ফরেষ্ট হেঁটে হেঁটে কুদ্দুস ও ইয়াসিন এক কুড়ি সাত বছর আগে চলে গিয়েছিল আসাম দেশের এক বাথানে।কিন্তু তাদের সর্বশরীরে মিশেই ছিল উত্তরের সব নাচ,সব গান,সব গানবাড়ি,রাতের পর রাতের সব গানপালার আসরগুলি।আর ছিল ধলা গিদাল।তার এত এত সময় ডিঙিয়ে আবার ফিরতে হল তাদের।আর এই ফেরাকে উৎসবের মর্যাদা দিতে মধ্য হাট থেকেই আজ ফিরতে হচ্ছে রাধাকান্ত আর কইকান্তকে।এসবের ভিতর সাজিয়ে রাখা থাকছে গানের পর গান_
‘ছাড়িয়া না যাইস রে
বুকে শ্যালো দিয়া
তুই সোনা ছাড়িয়া গেইলে
আদর করিবে কায় জীবন রে’...


জ‍্যোতির্ময় মুখার্জির ব্যক্তিগত গদ্য শ্রীচরণেষু,
             .............

পত্রের প্রথমেই আপনি আমার প্রণাম লইবেন। বড়দের প্রণাম ও ছোটদের স্নেহাশীস জানাইবেন। অনেক দিন হইল আপনাদের কুশল সংবাদ পাইনি। আশাকরি আপনারা সকলে ভালোই আছেন। আমার শরীরটা ইদানীং ভালো যাইতেছে না। বাতের ব‍্যাথাটাও বাড়িয়াছে। হরির হোমিপাতি ঔষধ খাইয়া অবশ্য কিঞ্চিৎ সুস্থ বোধ করিতেছি। গত পরশু কমলা সিঁড়ি থেকে পড়িয়া পা ভাঙিয়াছে। নেতো মাস্টার জড়িবুটি সহকারে পা বাঁধিয়া দিইয়াছে। চিন্তা করিবেন না, আশাকরি খুব দ্রুত ওর পায়ে বল ফিরিয়া আসিবে।

এই বৎসর বৃষ্টির দেখা নেই। মাঠের ধান মাঠেই শুকাইতেছে। কাঁদোরেও জল নেই। চিন্তায় আছি, এতগুলো পেট চলিবে কীভাবে। অবশ্য সম্বৎসরের ধান কিছু মড়াইয়ে বাঁধা আছে। চাল করাইয়াও রাখিয়াছি কিছু। কিন্তু মঙ্গলার হাতে গোর পরাতে কাজে বিঘ্ন ঘটিয়াছিল। ঢেঁকির পাদানি থেকে পুঁটির পা পিছলাইয়া এই দুর্ঘটনা। হাত ভাঙেনি তবে হাতের হাড় সরিইয়া গেছিল। আমাদের পাটকুড়ুনি নন্দা সরিষার তেল দিইয়া হাড় বসাইয়া দিইয়াছে। প্রতিদিন সকাল সন্ধে নিয়ম করিয়া ঝেড়েও যায় ও। এখন আর ফোলা ভাবটাও নেই। খুব শীঘ্রই ঢেঁকি চালু হইবে। অবশ্য ঢেঁকিটার’ও বয়স হইয়াছে। ঠাকুরদার আমলের সেগুন কাঠের ঢেঁকি। নতুন একটি ঢেঁকি তৈয়ার করাইব ভাবিতেছি। বাগানের পুব পাড়ের শাল গাছটা কাটাইয়া ফেলিব।

সে যাইহোক, আপনাদের আশীর্বাদে আর ঈশ্বরের অশেষ কৃপায় আশাকরি দিন চলিয়া যাইবে। দুমোঠো অন্নের সংস্থান ঠিক হইয়া যাইবে। কিন্তু খড় না হইলে গোরুগুলোকে খাওয়াইব কী, জানি না। বৃষ্টি না হওয়ার দরুণ ঘাসের’ও আকাল দেখা দিইয়াছে। ভুবিডাঙ্গার মাঠের ঈশান কোনে যে পুকুরটি ছিল, সেটি সেঁচিয়া দিইয়াছি। তাতে কিছু জমির সুরাহা হইয়াছে। পুকুরটি থেকে প্রচুর মাগুর, ল‍্যাটা, ভেলে,  কই, শিঙ্গি মাছ মিলিয়াছে। কিছু আত্মীয় স্বজনদের পাঠাইয়াছি, কিছু প্রতিবেশীদের। তবু অনেক মাছ তিনটি চৌবাচ্চায় জিয়ানো আছে। আপনাদের’ও কিছু মাছ পাঠানোর মনোবাসনা রহিয়াছে। আমি নিজেই যাইতাম, কিন্তু শরীরের এই অবস্থা তারপর মাঠে ঘাটে কাজে চিরিবিরি। যেদিকটাই না দেখিব, সেদিকটাই আটকে থাকিবে। সব ফাঁকি মারিতে ওস্তাদ। বিড়ি খাইতে উঠেও বাবুরা সিকি পোর বেলা পার করিয়া দেয়। দেখি, হেমুকে বলিব। ও যদি যায় তাহলে কিছু মাছ পাঠাইয়া দিব। সাথে কিছু লাউ’ও দিব। রান্না ঘরের চালে হইয়াছে।

বুধোর এবার বকনা হইয়াছে। দুটো এঁড়ের কোলে বকনা। খুব ভালো গাই। দুধেল গাই। দুধটাও খুব পুরু আর মিষ্টি। ওর গাদরা ভাজা খাইয়া দুইদিন পেটে গরবর দেখা দিইয়াছিল। লোভে লোভে অনেকটা খাইয়া ফেলিয়াছিলায়। বয়স হইতেছে, খাওয়া দাওয়াই সংযম দেখাইতে হইবে। আপনি তো জানেন, বয়সকালে এক সের দুধ দোয়াইতে দোয়াইতেই চুমুকে খাইয়া ফেলিতাম। কিন্তু এখন কী আর তা পারি, সহ‍্য’ও হয় না। ফুলি, ও পাড়ার সঙ্গীতানুষ্ঠানে গান গেয়ে ফাসট্ হইয়াছে। একটা বড়ো গামলা পাইয়াছে। বেশ শক্তপোক্ত, কানাউঁচু। ওর মা ওতেই এখন গরুর ঘাঁটা রাঁধে।

ও পাড়ার শঙ্কর গয়লার ছেলেটা এবারেও বাঁচিল না। ফুটফুটে ছেলে। গৌড়ের মতো কাঁচা সোনা রঙ। মায়ের রঙ পাইয়াছিল। কিন্তু মায়ের জন‍্যেই ছেলেটা আঁতুরেই মরিল। সেদিন মাঝ রাতে বৃষ্টি হইয়াছিল। উঠোনের ঠেঙে আঁতুরঘরে জল ঢুকিয়া মা ছেলে দুজেনেই ভিজে চবচবে, বুকে জল বসিয়া গেছিল। এর আগের ছেলেটাও আঁতুরেই লতায় কেটে মরিয়াছিল। আমি বলিয়াছিলাম তখনই, উঠোনে কেন, গোয়ালের এক কোণে আঁতুড় তুলতে পারিস তো। তা কে শোনে করা কথা। সে যাইহোক, আমরা আর কী করিতে পারি। সবই হরির খেলা। বিধির লিখনকে তো আর কেউ খন্ডাইতে পারে না। ভগবান যে কখন কাকে কাছে ডেকে নেন, তা তিনিই জানেন। জিতু বাগদির দ্বিতীয় পক্ষের বউটিও মারা গেল ও মাসে। ওঝা এসেছিল, বলল ওকে যে সে ভূতে নয়, বম্মদত্যিতে পেয়েছে। অনেক ঝাড়াঝুড়ি করল। লঙ্কা পোড়া ধোঁয়ায় ভরে গেছিল ঘর। বেলের ডাল দিয়ে এতো মারল, তবু বম্মদত্যিতা ছেড়ে গেল না। বউটাকে সঙ্গে নিয়েই গেল। আহারে, ছোট ছোট তিনটে ছেলে মেয়ে, আবার আগের পক্ষের দুটো, জিতু যে এখন কী করে। ওকে বলিয়া আসিলাম, তাড়াতাড়ি আর একটা বিয়ে করিইয়া লে। গতকাল খবর পাইলাম, জিতু বিবাহ করিয়াছে।

আপনাকে আর একটা গোপন সংবাদ দিই, দেশে নাকি খবর রটিয়াছে কারা নাকি বিপ্লব আনিতেছে। চিন না রাশিয়া কোথা থেকে। কিন্তু বিপ্লবটা কী, বুঝিতে পারিতেছি না। বিদেশি জিনিস। নিশ্চয় ভালোই হইবে। কতো দাম পড়িবে কে জানে, তাহলে কিছু কিনিয়া লইব। আপনি যদি এই ব‍্যাপারে কিছু জানিতে পারেন, সত্ত্বর জানাইবেন।

পত্র পৌঁছাইতে পৌঁছাইতে পূজা আসিয়া যাইবে। তাই বিজয়ার প্রণামটিও সারিয়া লই। চিঠি পাইবা মাত্র কুশল জানাইবেন। আপনার চিঠির প্রতীক্ষায় থাকিব।
  

                                                                  ইতি
                                                 আপনার স্নেহধন্য
                                                  ..............………..
 
 

পুনশ্চঃ : প্রতিবারের ন‍্যায় এইবার’ও আপনার শালের দুই টিন উত্তম গুড় রাখিয়া দিবেন। আমি যাইয়া লইয়া আসিব।

  


  


অনুরূপা পালচৌধুরী




প্লাস্টিক চাঁদের মুখ ও মুখচ্ছবি
____________________________


৫আঙুলে ব্যক্তিগত সাঁতার____
পোষা ডালভাত : ১২ মাসিক প্রাসাদ
জমা রাখো পিচ মলাটের নৌমন্থন
১টা কিংবা ২টো চুঁইচুঁই ফ্যানের কিপিং কিউডস
বেহুদা উপত্যকার ক্রেডেলস হাতরে
নিংড়ে দ্যাও কিউবিক মেঘস্রাব
কিশোরী ছাদের ৩ কদমধুলো : আশঙ্কার উড়োচিঠিতে  
যুবতী কুয়াশার পেনাল্টি ফারকত 

ছুড়ির আগুনে নক্ষত্র খুনের নেশাখোর জলরাশি
হয়তো কফিনের বোবা পোস্টার থেকে
ডুবছে ঘিলুবিদ্ধ অক্টেভ খুলির জীবন্ত মেমব্রেন

সুকুমার হালদার
                    দুটি কবিতা
                         (১)

      
           খাতা থেকে অন্তঃরঙ্গ দীর্ঘশ্বাস গড়িয়ে নামে
           খাতা ভরে যায় অদৃশ্য জখম দাগে
            শব্দগুলো কেবল ভেঙে যায়
            কত যুগ ধরে চেষ্টা করে চলেছি
            দাউ দাউ দূপুর 
            মিহি ঘন রাত
            জুঁই ফুল ভোর
            একই ফ্রেমে বাঁধব
             কিন্তু কই...

            অদৃশ্য জখম দাগে খাতা ভরে যায়    
            

                       (২)

          গাঢ় চাপ চাপ অন্ধকার
          সারা আকাশ কালো মেঘে ঢাকছে
          ক্রমশ আমার জন্মভূমি

          ধর্ম সন্ত্রাসে ডুবে যাচ্ছে

তোমার জন্য
রৈবতী বন্দোপাধ্যায় ( চক্রবর্তী)


তোমাকে দিয়েছিলাম এক রক্তিম
ভালোবাসা, জীবনের কালো মেঘ
সরিয়ে নতুন সূর্য ওঠার পালা
বৃষ্টিধারার মতো না পাওয়া
গুলো বেয়ে পড়ে, পাওয়ার অপেক্ষায়।

তেল নুন ও কবিতা
উদয়ার্ণব‌ বন্দ্যোপাধ্যায়


আমাদের রক্তের ভেতর রয়েছে অলৌকিক বিশ্বাস
যেন ক্ষতস্থানের ভেতর প্রলেপ দেয়া হয়েছে মাটি
তবে ভাত চিরকালই হতভাগ্যদের কপালে
 অন্ধকার তাড়িয়ে এনেছে  হরতাল


ভাত -মাটি
মাটি- ভাত
সময়ের অন্তরালে কুঁড়েঘর জ্বালিয়ে তুলেছে
 আশ্চর্য প্রদীপ





শুভদীপ ঘোষের কবিতা 

ন্যারেটিভ কাল্পনিক চরিত্র
-------------------------------------


নদীর বুক থেকে হারিয়ে যাচ্ছে
                 সকাল বেলার ভোর
                 ডুব সাঁতারে চাঁদের সিঁড়ি

 ভরিয়ে দিচ্ছি স্কুলের খাতা
একলা নদীর আত্মকথনে
প্লে-স্টোরে স্কোর করছে শৈশবের আঙুল

             এভাবেই আমাদের ভিতর মৎসকন্যার দেশ


বড্ড ন্যারেটিভ হয়ে পড়ছে কাল্পনিক চরিত্রের
                                                রাজপ্রাসাদ।
                       
রঙ-ছুট
 সংস্কৃতি ব্যানার্জী


আমাদের কোনও লাল নেই,
ঘন নীল ছুঁয়ে কবেই
কর্পূর উবে গেছে।
পবিত্র দিনের কাছে গেরুয়া রঙ
উৎসাহ লিখতে লিখতে,সাদা ক্যানভাস
চাঁদের ছায়া মাড়ায়নি
ঝমঝমিয়ে সেদিন বৃষ্টি নেমেছিল।
মিশমিশে কালোর ভেতর একজোড়া শব্দফুল...
গাঢ় বিকেল থেকে সবুজ নিয়ে বলেছিলাম,
তোমার খয়েরি বোতাম খুলে যাচ্ছে
উত্তর পূর্বাঞ্চলের কবিতা 


শূন্য অথবা তারার গল্প 

বিজয় ঘোষ 

এক


কিছু কিছু দুঃখ আছে বলে 
এখনো বেঁচে থাকা 
কিছু কিছু সুখ আছে বলে

প্রতিস্রোতে নৌকো বাওয়া । 

দুটি

জীবনটা ছোট হতে হতে 
জল শূন্য পাত্র হয়ে যায় 

আমি থাকি শুধু শিশিরের প্রতীক্ষায় !

তিন

ইচ্ছেরা পাখি হয়ে উড়ে যাক
মুঠোয় রেখেছি একটিপালক

চার

মন্ত্র পড়ে বৃষ্টি নামাতে পারি
বশীকরণ বিদ্যা জানা নেই

পাঁচ

অনুপমা  বড় বেশি ছিচ্ কাঁদুনে
থেকে থেকে হলুদ-চিঠি পাঠায়

বর্ণমালা  চোখের জলে 
বসন্ত আঁকে---

ছয়

এই মাত্র যে তারাটি খসে পড়লো
তার নাম অনুপমা

সাত

জমে থাকা শিশির কুয়াশা হয়

হারিয়ে যাওয়া ট্রেনের জানালায়
আবছা একটি মুখ

অনুপমা !



কিছু বলার ছিল না

শিবাশিস চট্টোপাধ্যায়

থমকে দাঁড়াল একটু, ফোঁস করল না
আমাকে দুভাগ করে ঢুকে গেল 
আমার ভিতরে

কতটা ভিতরে গেল জিজ্ঞাসা করো না
চড়াই উতরাই ভেঙে কতটা গভীর হয় চলা
জিজ্ঞাসা করো না

কতটা বাইরে আমি
কতটা ভিতরে আছি বরফশীতল
প্রশ্নে জমে ছিল শীত...

দাঁড়িয়ে দেখলাম, কিছু বলার ছিল না


খবর 

অমলকান্তি চন্দ

জানালার  নেটে ঠোঁট ঢুকিয়ে দেয় 
গোলাপী রঙের চিকন  পাখীটা ।
সারারাত হাপরে শ্বাস নেয়, 
চঞ্চল বুকে মৃদু  উঠানামা  সজাগ প্রহরে। 

ডানাতে আড়াল করে রাখে জীবনের মিঠেল  স্রোত 
তোমার ভাললাগা কিছু রাএি ঘ্রাণ  ।

পায়ে পায়ে হাজারো মানুষের ভীড়ে 
ভালবাসার রং ছড়িয়ে দিয়ে আকাশে ,প্রেয়সীর মত 
কতকাল জড়িয়ে থাকে  আমার বুকের গহনে। 

দহনে আকাশ পুড়ায় 
পুড়ায় পাখীচোখ, তোমার বুকে কলিঙ্গ যন্ত্রণা । 

এরাতের সুখও অসুখের খবর কেবল ভেসে  আসে…..



আশ্রয় 

নীলাদ্রি ভট্টাচার্য 

মিলন হবে না জানি 
তবু হলে বলবো জল দাও 
শূণ্যের ওপাশে একটি গাছ 
গাছের নিচে একটি মাদুর 
মাদুরে জ্যান্ত পীঠের ঘাম |

মিলন  হবে না জানি 
তবু হলে বলবো ঘুম দাও
শূণ্যের ওপাশে একটি কাঠ
কাঠে জ্যান্ত  আগুন ।



অদ্ভুত 

সঙ্গীতা নাথ

ইতিহাস বলে না কিছুই ,
ইতিহাসের শুধু বদল ঘটে ।
আজ আমি বসে পড়ছি ইতিহাস,
কাল আমি নিজেই হয়ে যাবো ইতিহাস।
সময়ের তারতম্যে বদলে যায় সবই ।
শুধু বদলায় না অলস মানসিকতা,
বদলায় না নিত্যদিনের সাথী মলিন মানসিকতা।
ইন্টারনেট সাঁতরে খুঁজে নিতে পারি,
বিশ্বের নিত্য নতুন ঘটনা প্রবাহ ,
কিন্তু মনটা পড়ে থাকে সেই 
মহম্মদ বিন তুঘলক এর রাজত্বে ।
কথার যুদ্ধে করে যাই রাজ্য জয় ।
মুখোশ পরা মনটা থেকে যায় 
আদিম যুগের পাথরের খাঁজে খাঁজে।
চকমকি পাথর ঠুকে আজ আর আসে না আলো,
তাই মন থেকে যায় আঁধারে , সেটাই নাকি ভালো।




প্রাণায়াম  

দিশারী মুখোপাধ্যায় 


ঠিক এই সময়ে তুমি বসে আছো 
একটা অসমাপ্ত ছবির সামনে 
ক্যানভাসের মাঝ বরাবর যে রাস্তাটা 
পুবদিক থেকে এগিয়ে গেছে পশ্চিমে 
সে রাস্তায় কার মুখ রাখা ঠিক হবে 
ভাবছো আর তুলির সঙ্গে পরিচয় করাচ্ছো কোনো নতুন রঙের 

ওই ক্যানভাসেরই এধারে ওধারে উড়ে বেড়াচ্ছিল 
কয়েকটা প্রজাপতি 
তারা মাঝে মধ্যে এসে বসছিল তোমার চুলে 
সিঁথির মাঝখানে আর ঠোঁটে 
শিহরণ উঠছিল তোমার পার্শোনাল ইমেলের ইনবক্সে 
বাইরে অবশ্য ছিলে নির্বিকার 

হঠাৎ নগর দায়রা আদালত থেকে 
একটা সমন সেঁটে দিয়ে গেল তোমার দরজায় 
আর তাই দেখে তোমার ক্যানভাস সক্রিয় হয়ে উঠলো 
তোমার ইচ্ছা অনিচ্ছাকে বাদ দিয়েই 

ক্যানভাসে ফুটে উঠলো পঁচিশ বছর আগে ছাপানো 
তোমার হলুদ রঙের বিস্ময় 




বাকসংযম 




কথা বলার আগে প্রায়শই আমার মনে হয় 
বাংলাভাষার শব্দ ,অক্ষর ও বর্ণ বড়ই কম 
যত কথা আমি বলতে চাই জীবন ,জল আর মৃত্যু সম্পর্কে 
কিম্বা দশ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট বা লালকেল্লা সম্পর্কে 
কথার ভেতরে ভেতরে যত গিঁট ,যত পজ ,যত থকথকে ঘৃণা 
আর আকণ্ঠ চুমো আছে 
সেসব বলতে গেলে আমার কথার কথা কম পড়ে যায় 

অথচ এই বাংলাতেই আমার কিছু বন্ধু স্বজন আছেন 
যারা অক্লেশে হুঁ ,হাঁ ,এইতো ,বেশ তো ,না না- দিয়েই 
জীবন কাটিয়ে ফেলছেন প্রতিদিন 
বাকি কথা জমা রাখছেন অ্যাকাউন্টে 
পরবর্তী জীবনের কথা ভেবে 

আমি তাদের বোঝাতে পারি না 
আমাদের ক্ষতস্থান থেকে নষ্ট হয়ে গড়িয়ে যাচ্ছে যত প্রত্যাশা 
তাদের সংগ্রহ করলে 
মেডিক্লেমের দরকার হত না





মণীদীপা নন্দী বিশ্বাস 

কথা থেকে যায়
-------------------------
বিষন্ন অন্ধকার থেকে বার বার উঠে আসে হ্রেষা
তখন রূপকথার দেশে যাই,লালমাটি ছুঁয়ে আসি
সোনালি চুলের ধারে আপামর জনতার গান
মিলে মিশে বন্ধুর গাছের কাছে দুহাত পাতি,অবসন্ন
এখন সময় নুড়ি পাথরে ঢেকে আছে জলেদের গান
শীত নামে নামতে থাকে ধূলো বালি মেশে আকন্ঠ
আর্তিতে ঘন্টা বাজে একাকী বিগ্রহ বড় গোপনে
ডেকে নেয় ভক্তকুল তবু কথা থাকে বুকের ভেতর
অনন্ত জলদে...টিলা পেরিয়ে চলি শ্রুতিতে ধরেছি
সুর আর কথা কথা গল্প বিনুনী..রূপকথা খুঁজি

ঢেকে দিয়েছি গোপনতা ঢেকেছি মন কেমনের ঘর
কেমন করে বুঝে নাও হাতের পেলবতা বলে অনুচ্চার
কিছু শব্দ সে গভীরতা বোঝে তোমার আমার...চল
খুঁজি নতুন গহ্বর পাতি শয‍্যা,খুঁজি ঘর কথা চাষ করি


 যে জন
অভিজিৎ মান্না 


যে জন ক্ষোভ মাখে ঠোঁটে মুখে 
সে বলে বার বার 
স্পর্শ করলে অমৃতবন্ হবে ও l 
প্রিতিটি ভাঁজে বিপজ্জনক সেতু l 
অদ্ভুত অস্থিরতা l পাঁজর খুলে বলে 
প্রকান্ড উইঢিপি হৃদপিণ্ডের দেয়ালে l 
একটা গোলাপ বাগান হতে পারতো 
বেরিয়ে আসতো মধুগন্ধ  l 
সেই প্রতীক্ষায় বিঁধে আছে মাছকাঁটা l
আশাবাটি অস্থিমজ্জার তাকে l 

    

দেখাশুনাগুলি
দেবাশিস মুখোপাধ্যায়

১.
হেঁটে আসছি পাড়ায় 
পুকুর উঠে এলো চাঁদ নিয়ে
তার ঘোমটার ভিতর দেখা যায় না
জলে তার গা রয়ে গেছে 
মেয়ে গন্ধ নিয়ে 
ক্রমশ বিষয়ি হয়ে উঠছি আমি
মাঝে মাঝে পান করছি
জেনেশুনে চাঁদলাগা বিষ

২.

পড়াশুনা না জানা আকবর আর আমি
বালির প্রাসাদ বানাতে গড়ে ফেলেছি
সেখানে পাশাপাশি মন্দির মসজিদ
ভেতরে ঢুকতে গেলে 
 সব ছেড়ে যেতে হবে
আসা আর যাওয়ার ভিতর
নগ্নতাই ধর্ম
 সত্যিকারের পরিচয়পত্র

৩.
দুপুরের পাতা নড়ছে ঝিরঝির
ঘুমিয়ে আছে জানালা বিড়াল নিয়ে
তোমার গল্পের ভিতর একটা কাক
ঘুরে দেখে গেল কতটা নোংরা 
ব্যয় হয়ে গেছে পরনিন্দায়
পতঙ্গ ওড়ে বিষে ও মধু ফুলে
দৃষ্টি ছড়িয়ে যায় 



৪.
তোমাকে পুকুর ভেবে
ডুবে মরতেই চাঁদ গিলে নেয়
তখন আকাশ ভেসে যায় 
আর তারারা তারানা গেয়ে ওঠে 
তুমি বেজে ওঠ
আমির গভীরে

৫.
শীত নিয়ে ঢুকে পড়ি তোমার
হোগলাপাতা ঘরে
এলমুনির বাসনগুলি ছড়িয়ে
মুরগিগুলিকে ডাকে 
ডাকবাক্সহীন ঘরে অসংখ্য
ছেঁড়া কাগজের টুকরোয়
শাহরুখ আমির 
তারা জমিনে গড়াগড়ি খেলে

৬.
কেউ সুবাসে নেই 
সুভাষেও 
দরজা জানালা বন্ধ করে
কল্পনা করছি কল্পনার মা
না এলে চুলা জ্বলবে না এ ঘরের
শীত বসে যাবে দেহের খাঁজে
হাই তুলতে তুলতে 
তুলে নিয়ে যাবে ঘুম 
অলস দিনের সাহারা




৭.
যতটা চোখের উড়ান ততটা ধানের ক্ষেত
ইটভাটা
আর বীজতলা নির্মাণ করছে মেয়েরা
অনেক গোপন অসুখ সেরে যায়
ভ্ৰমনের পাশে বসলে

৮.
প্লাটফর্মকে একলা পায় না
দু একটি শালিক
খুঁটে নেয় তোমার অবশেষ
চাঁদ ভিজিয়ে দিয়ে নরম করেছে
ততদূর যেখানে ছায়াগাছ
আলাপন সেরে নেয় নয়ানজুলির সাথে

৯.

এই যে সোয়েটার 
তার উলে উলে ছড়ানো
আপনফুলের গন্ধ
গভীরে ঢুকে যায় স্মৃতির পিন
একটানা গান বেজে গেলে 
স্বেদবিন্দুতে কলকাতা এসে যায়
 ছেড়ে দিতে হয় কৌশলে 
 কিছুটা ভালোবাসার আসন 

১০.
বাইক নিয়েছে মোরামের পথ
অপেক্ষায়
প্রথম দেখা
প্রতিবেশী দৃশ্যের কাছে ঋণ
ছুঁয়ে যায় হাওয়া মোরগের শির
এমন আদর 
আড়াল ভেঙে দিলে 
কিছু মায়াফুল অজান্তেই টেবিলে
রেখে আসি প্রতিশ্রুতির হরফে
ছাপগুলি ধূলোমেলায় না হারানোই ভালো 








লক্ষ্যভেদ 
নির্মাল্য ঘোষ 


একটু একটু করে যন্ত্রনার 
উল কাঁটা দিয়ে শুরু করেছি 
সমঝোতার নিপুণ সোয়েটার 
বোনা...

হাসির ট্যাবলেট খাচ্ছি 
প্রতিদিন সকাল বিকেল 
রাত্রে মস্তিষ্ক দিয়ে একটা 
দুটো করে..

হৃদয় দিয়ে ব্যবসা আর 
মস্তিষ্ক দিয়ে প্রেম করার 
চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি 
অবিরত...

আমার ভুল বানানের নাম 
আর বাঁকাচোরা ছবিটা 
কেউ দেখার নেই আর
গমগম করে কবিতার কথা 


কেউ বলবে না আর ভিন্ন ভিন্ন স্বরগ্রামে...

সবাই ব্যস্ত রিং মাস্টারের হাত ধরে 
যুগোপযোগী হওয়ার মীনাক্ষ লক্ষ্যভেদে..

চিরঞ্জীব হালদারের কবিতা 

নতুন বছরের পাঁচটি কবিতা

এক
================
ভাল্লুক জানেনা যে সে ভাল্লুক
এই সন্ধিক্ষণে
বায়রন কি তাকে গানের তালিম দিচ্ছিলেন
না কবিতা ধর্মের অগোছালো ভবিতব্যের রূপরেখা শোনাচ্ছিলেন।
আমাদের হিংসুটে চিলেকোঠায় একটা মাছি ও গলতে পারেনা।
যদিও তারা অবৈধ হাওয়াদের
ধানক্ষেতে কুমারী নক্ষত্র পতনের গল্প শোনায়।
তোমার সনেট শুনে ভাল্লুকটির বোধোদয় হয়েছিল কিনা
দুঁদে পুলিস কি জেনেছিল।
আমিও কি নিজের লাশ ব্যবচ্ছেদের পর ফিরে আসব অন্ধ চিলেকোঠায়।
যেখানে বায়রন ভাল্লুকের মনবেদনার
নথিলিপিতে ব্যস্ত ছিল।
=================
দুই.


কবিতা এক অর্থহীন বাক্যের তোলপাড় করা খোয়াবনামা
জানেন—
সাক্ষাৎকারের আগে দু'তিনটে পিল না হলে সব সত্যিগুলো বাদুড়ের মত
ডানা ঝাপটাবে। আর আপনাদের
আয়রন করা টানটান ভবিতব্যের
ওপর দৌড়তে থাকবে ঠিক যেমন পাগলী ঘোটকীর দেহ মৌল সারবত্তার যৌন দৌড়ে সামিল হয়।
কবিতা একটি আপাত জটিল
মনোবিকলনী ধন।
যে কবির ঘরে কোন দিন খ্যাতি উপচে পড়বে না তবু সন্ধ্যার প্যাঁচারা তাহার সজাগ পড়শি।
সেই পক্ষী পড়শির জন্য নাগরদোলার মালিককেও আত্মহত্যার পথে হেঁটে যেতে দেখি।
এতসব জেনেও কেন তুমি পয়ারের গোলক ধাঁধায় খঞ্জ চঞ্চু ঘষতে
ঘষতে হারিয়ে ফেল জন্মতিল।
কেন ভুলে যাও ঘোষপুকুরে চায়না চাটুজ্জের ফুল ফুল ওড়নার তুষারাচ্ছন্ন সামন্তবাদ।
গেরামভারি এই সব দারিদ্র্যকথন
পনেরো মিলিগ্রামের এক একটি ঘুমের কবিতা। এইসব দীর্ঘায়িত বিনষ্টিবাদ আর ভনিতাকথন দিয়ে একজনও জুটিবেনা জেনেও ভাঙা সেতুর কাছে
সাঁতারের কৌশল শিখে নিতে হয় যতক্ষণ না ঝর্ণা কলমের খোয়াবনামা লেখা হয়ে ওঠে।
=====================================
তিন.


এই অভিজ্ঞতা ধূসর বল্কলের কোনও নাভিচিত্রের ছবি আঁকা হবে।
কোন আদিম পায়রার তৃষ্ণার্ত পালক
মায়াবী সংকেত উদ্ধার করে করোটি
অভ্যন্তরে রেখে যাবে গোধূলি পালকি।
কবি তার দাসখত টাঙিয়ে রেখেছে
অসফল নাবিকের ঘরে।
একটি কলম জানেনা কতদূর যেতে হয়।
কত পৃষ্ঠায় তার নগ্ন হৃদপিণ্ডের
অশরীরি পালকেরা ফর্মালিন
মহিমা বর্ণনা করবে সময়ের
আন্দোলিত হ্রদে।
চিতার অসুখী আগুন
এইসব অভিজ্ঞতার শিখা হয়ে
লাল বটফলে রেখে যাবে
আমাদের সমাহার ক্রিয়া।
============================
চার.


কবিতা আর মৃত্যুর জ্যামিতিবক্সের কোন চাবি নেই।
ভল্লাতক উপত্যকা জুড়ে স্ট্রবেরি মেখে যে মেয়েটা হাত ছাড়িয়ে শুয়ে আছে সেও জানেনা তার কটা দরজা। ভীতুলাঠির ডগায় চাবিরা তাঁবু খাটিয়ে সমাহারনৃত্যে প্রহর গুজরান
কালে আগুন জ্বলে উঠলে কাঁটাকম্পাসের দরকার।
দেখো-দেখো মোবাইল টাওয়ার এখন কাকভেজা হয়ে ধুঁকতে থাকবে অনার্যের উপাসনাগৃহে।
প্রতিটি কলাগাছ পৌষসংক্রান্তির মেলায় ঘুড়িদের মস্করায় মশগুল।
প্রতিটি পাঠশালের খঞ্জবেঞ্চের খোদিত নামেরা এক একটি আধুনিক ডাইনোসরের মত হাই তুলতে তুলতে ঢুকে পড়বে শরণাগতের লাইনে।
যে কখনও পয়ারের ফুটকি ঠিকঠিক দিতে পারেনি তাকে ডাকা হয়েছে মুখাগ্নির প্রথম মন্ত্রোচ্চারণে।
মধুসূদন দেখি ডোমনিদের ভিড়ে খুঁজতে থাকে ইডলিপ্রিয় প্রেমিকার মর্মস্থল।
মেধনাদের শেষ সর্গ লেখার আগে তিনি মিলিয়ে নেবেন চিতার জ্যামিতি।
হাজারদুয়ারীর সব দরজা খোলা থাকলেও চাবি তার ছায়াকেও সঙ্গত দেয়না।
জ্যামিতিবাক্সের জন্মদিনে নিমন্ত্রিত
চাবিদের পংক্তিভোজে ডোমটা দেখি পাতে পাতে লবণ দিয়ে চলেছে।
================================
পাঁচ.


পৃথিবীকে বেল ভেবে আপনি কি আহ্লাদিত।
আপনি কি ভুট্টা ক্ষেতের পাশ দিয়ে যেতে যেতে বাবুইপাখির বাসা বুননের অব্যয় তরলে মাখামাখি।
তাহলে তৃষ্ণা নামে এক পুরুষবান্ধব
তোমাকে সম্পন্ন শুঁড়িখানায় হিসাবরক্ষক নিযুক্ত করে ভিড়ে যাবে
বেলুন কারবারিদের মহোৎসবে।
প্রকৃতার্থে বেলুনকে যাই ভাবুন না কেন তার আঁশহীন শীতলপাটি ত্বকে
কোনও প্রদীপ ভাসাতে গেলেই
বেলেরা অনশন শুরু করলে
কে তার দায় নেবে বলুন।
বেলজনিত আহ্লাদের
সময়সীমা প্রায়
বেলুনের মত।
আপনি তার
অতিথি
মাত্র।
=========


ভালোবাসা
 তিথি সরকার              

            

তোমাকে অনেকটা ভালোবাসি, 
কতটা ভালোবাসি জানি না। 
ভালোবাসি বলেই হয়তো
"ভালোবাসি "শব্দের -
মূল্যায়ন করতে পারি না। 
আচ্ছা, প্রেম আর ভালোবাসা কি এক? 
তোমার কি মনে হয়? 
ধর, যদি বলি -
তোমার - আমার সম্পর্কটা
অন্ধকার আকাশে দীপ্তমান তারার মত। 
কিংবা যদি বলি -
তোমার -আমার সম্পর্কটা
রেললাইনের মত। 
তুমি কি সেটাকে ভালোবাসা বলবে?নাকি প্রেম? 
আমি কিন্তু  এটাকে ভালোবাসাই বলব। 
কারণ .......
যেখানে চাওয়া নেই, পাওয়া নেই, 
নেই স্বার্থ, নেই কোনো পরাধীনতা, 
আমার কাছে সেটাইইইই ভালোবাসা। 

 প্রবীর রায়ের তিনটি কবিতা
----------------------------------

সাথী
-------

পলাশ একটি রোদ্দুরের নাম
প্রাপ্তবয়স্ক নয় কিছুটা ছেলেমানুষের মত
সদ্য ওঠা গোঁফে মাখে বসন্ত্রাগ
শাসন মানেনা বলে তার কোনও ঘর নেই
পথেই অপেক্ষা করে
মেয়েটির হাত ধরে চলে যাবে গ্রীষ্ম দাবদাহে

শহরমরমা
-------------

চারিপাশ যেন যে কোনও কৌতুকে সেজে আছে
হিহি হাট শহরের ঝলমল এমনকি মলের কথাও বলতে হয়
আঁতিপাঁতি খুঁজে কালাতিপাত বিকেল চমৎকার সন্ধ্যাদর্শন
সারিসারি জটাধারী হিল্লোলবোধে জড়িয়ে যাচ্ছে কাহারা কাহারা

জলজীবী
-------------

কয়েকমাত্র আকুতি ফুরিয়ে গিয়ে বলার কিছুই নেই
পাওনাগন্ডা গন্ডায় গন্ডায় গন্ডারসুলভ কঠিন চামড়া বেয়ে
জলও মসৃণ থাকেনা কর্কশ কথা বলে ফিরিয়ে দিল
বন্ধুর কাছে এসে বন্ধুরতা এইভাবে বোঝার কী পঠিত অভ্যাস
মানিক আহমেদের দুটি কবিতা 


(১) 
জানালা 

উত্তরের জানালা ক'দিন খুলতে পারিনা;
তোমার মত ঠান্ডা বাতাস হু হু করে কানে হিম ছড়িয়ে মারে
আজ সাতাশ, এরপর  বাতাস আরো তীব্র হতে হতে উড়িয়ে নেবে 
প্রিয় বারান্দার কুসিম্বী লতা, প্রিয় হেমন্ত, কুদফুলের সাতটি পাপড়ি;
ভেবেছিলাম, দক্ষিণমুখী জানালাটা আজ খুলেই দেই- রোদে পোড়া চোখ মাঝ রাতে
আধেক চাঁদে  চন্দ্রাহত হোক । 
উত্তরের হাওয়া আর দক্ষিণ জানালা পরস্পর  নরপতির মত আচরণ দেখে মনে হচ্ছে,
আমায় নাগরিকত্ব না দিলে জানালা খুলে দিতে পারিনা,
বাতাসের কী স্পর্ধা! 
বাড়োয়ারি  ঋতু  আর তোমার মত ঠান্ডা দেবশিশু আমায় জানালায় আটকে রাখে;
পুড়ে যেতে ভালো লাগে রোদে বা শীতের হিম কুয়াশায়;
তবু জানালা খোলা চাই ।





(২)
বেহিসেবি প্রেম
হলুদ বসন্ত আর এতশত চৈত্র-বৈশাখ পেরুল তোমার কাছে ফিরি কী ভাবে? 
টের পাই, পার্থিব জীবনে বেহিসেবি প্রেম বুকের গহীনে;
বাইরে সেতারের সুরে ঝর ঝর শব্দে বৃষ্টি নেমেছে
ইচ্ছে আমার, রাস্তায় নেমে খালি পায়ে হেঁটেহেঁটে ভিজে হই চু্ঁর..আসবে? 
এসো, আজ না হয় কাদাজলে ভিজে যাই… 
বুনোজল লাগুক দুজনার গায় তাতে কী এসে যায়?

একটা ফিনিক্স পাখি উড়ে যায় দূরে, 
কোথাও খাঁ খাঁ রোদ্দুরে; রোদের গরমে ভিজি চুপচাপ ।
পলিমাটি পোয়াতি হলে, সময় উড়ে যায় অতীতের ক্ষয়িষ্ণু মেঘে.. 
ঘুঙুরচোখে হলুদবসন্ত ডানা ঝাপটায়;
যারা যায় অদম্য বিষণ্ণতায় তারা ফেরে না কখনো,
না ফিরুক; আমি ঠাঁয় দাঁড়িয়েছি পাখির চোখে স্মৃতির কোলাজে;

তোমার হাস্যমুখ, গভীর চাহনী, অতলপ্রেম ছাড়া
আমার প্রেম বিধ্বস্ত.. বড় বেহিসেবি । 
দুটি কবিতা

মঈনুস সুলতান



ভাবনার সাথে দৃশ্যের বিবাদ ভঞ্জন



সময় ফুরিয়ে এসেছে..শেষ করে লেনদেন
বন্ধ করতে হয় এবার দোকানপাট,
কী মেহনতে না খুঁড়েছি পুকুর এক
ঘাই মারে হালফিল রূপার রুইমাছ
ঘাসে কী ভরে যাবে আমার বাঁধানো ঘাট
লকলকিয়ে ওঠেছে বেড়ে কৃষ্ণচূড়ার সোমত্থ গাছ।

তুমি তো দেখেছো- উনসত্তরের গরিবানা ছনের ঘর
বছর তিরিশেকে হলো টিনের চারচালা
খুব কী বেশীদিন আগের কথা
পুকুরের পাড়ে বসতো যাত্রার পালা।

আর সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ত্রিপুরায় যাবো
উনকোটে পাথরের গড়ুড় পাখি,
ষাড়েরগজ পাহাড়ে খাসিয়াবাড়ির সিঁড়ি বাওয়া
তোমাকে নিয়ে লালবাগের বারুণীতে যাওয়া,
বোধ করি থেকে গোলো তাবৎ কিছু বাকি।

কলকাতা থেকে খুব বেশী দূরে তো নয় মুর্শিদাবাদ
দেখা আর হলো কই..হাজার দুয়ারী
আমের বাগিচায় ইংরেজের সাথে নবাবের বিবাদ;

মেয়ের নামে ভেবেছিলাম করে যাবো ছোট্ট এক লাইব্রেরী
বইগুলো দিলে না তো তুমি জোগাড় করে
হলো না গোছানো কিছু তার আগেই
                            বেজে ওঠলো চলে যাওয়ার ভেরী;

না হয় গেলাম ই-বা সময়ের একটু আগে
নেই কোন খেদ,
একটি কথা যেও না ভুলে..সারাজীবন চেয়েছি আমি
                                       গোছাতে মানুষের ভেদাভেদ;

আরেকটি কথা বলে যাই
তোমার সরল সিধা সুহৃদ আমি শিশির রঞ্জন,
অঘাটায় ভেসো না আর..পারো তো করো
ভাবনার সাথের দৃশ্যের বিবাদ ভঞ্জন।



খোয়াবের মাউন্ট মিরাপি


আরশিতে দেখি আমার অক্ষিগোলকে
জমছে স্ফটিকের বিন্দু- ছড়াচ্ছে রূপালি আভা,
ঝরা পাতার উপর দিয়ে হাঁটে আবির মাখা সাপ
খোয়াবের মাউন্ট মিরাপিতে উদগরিন হয় লাভা।

নিদ্রায় শুনি পুলিশের বেফজুল বিভ্রান্ত বাঁশি
তীর্থযাত্রীরা তুষার পাড়ি দিয়ে পৌঁছে হরিদ্বার,
প্রত্যাশার নীলগিরিতে নামে পাথরের ধ্বস
উচ্চাশার থার্মমিটার ভেঙ্গে পারদ হয় ছারখার।

আমার ভেতরে জমে রাজ্যের বিভ্রান্তি
অবগাহনে আমার অশ্রু ছোঁয় পুকুরের শাপলা,
মাউন্টেন বাইক কর্দমে দাগ কেটে এগোয়
হারিয়ে মানচিত্র সড়কের বাঁকে থামে পথচলা।

রোদের তরুণ সয়লাবে আমার অশ্রু হয় বাষ্প
মেঘের পরমাণুতে মিশে জুড়ায় স্নায়ুর ক্লান্তি,
স্বাতী নক্ষত্র প্রতিফলিত হয় আসমানী তুষারে
সুমাত্রার মন্দিরে সন্ন্যাসীরা জপে শান্তি-রস্তু-শান্তি।

বৃষ্টি হই আমি, ছুঁই আবার পৃথিবীর পাললিক মৃত্তিকা
ঝরাপাতার পুষ্টিতে জমিনে ফুটে অর্কিডের কুসুম,
ফিরে আসি-তসবিরের রেখায় হয় রঙের বিবর্তন
বৃক্ষ বাড়ে-নীড়ের ডিমে বসে মা সারস ছড়ায় উম।

সাকিরা পারভীনের কবিতা 


গণতন্ত্র 
 সাকিরা পারভীন


সাফ সাফ কবলে দিচ্ছি  কেবল তোমার বেলায়  আমি কোনো গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি না।
অথচ নিজের বেলায় সমস্ত দাবি-দাওয়া  রেল ও রাজপথ পথ দখল, পিকেটিং ইটের টুকরোয় উড়িয়ে দেয়া পথচারির মাথার খুলিতে আয়োডিনযুক্ত গরম ভাত অতএব প্রিয়তমা আপনি বিশ্বস রাখুন যে, আপনার ভবিষ্যৎ বংশধরেরা সোডিয়াম পটাশিয়াম ঘাটতিতে পড়বেন না তৈলাক্ত বাঁশ বাইয়া উঠে যাবেন উপরের দিকে তীব্র উইন্টারে পালন করবেন সামার ভ্যাকেশন প্রবল আভিজাত্য লইয়া আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে নিতি নিত্যে মম চিত্তে কেডায় জানি নাচে তাতা ছৈ ছৈ।
আমার খালাত বইনের হলুদ অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন  ছয় পিয়ার ছাউন্ড এবং দ্যাশের তারকা শিল্পীরা আপনে কুনো চিন্তা কইরেন না বস ভাই ব্যারাদার আছে সরিষা ইলিশ, হরিণা চিংড়ি, পাঠার কাচ্চি রাইন্দা মরিচুয়ারিতে থুইয়া দিমুনে নষ্ট অইব না তয় কেডায় জানি কইল আমার পুকুরের পানিফল হাঙ্গরে খাইয়া যাইতেছে এইসব মিছা কতা উস্তাদ বিশ্বাসে লইয়েন না।
কয়েকটা চড়ুই পাখি নাকি অহনো বারান্দায উড়াউড়ি করতাছেে কিচির মিচির শব্দ করতাছে তাদের লাইগা কি ব্যবস্থা নিয়েছ?
উস্তাদ ইন্দুরী কাবাবের নতুন দোকান দিয়েছি, শীততপ নিয়ন্ত্রিত, আপনি চিন্তা ফালায়া দ্যান
প্রিয়তম বলো আর কি কি করি নাই আমি
এইবার তাহলে চলো তিস্তার দেয়ালেে একজন গেরিলা বাচ্চু পাঠাই একটা জানালা দরকার হেইয়া হু হেইয়া
ওদিকে কমলা রঙের চিতার নৈঃশব্দে  মগজের অন্তর্গত পেয়ালার ঠোঁটে উঠে আসছে অখ- ঈর্ষার উত্তপ্ত চুমুক।
আর প্রতিজ্ঞা চলছে তোমার ঘুমের ভেতরে একটি পিঁপড়ের পাহারাও হজম না করার  ওদের খাদ্য খাবারের কোন ত্রুটি হলো কী না? উপনিবেশিক জাহাজের তলায় কাটা পড়ে গেল কী না উদীয়মান অর্থনীতি?
এসব কিছুতেই কিছু যায় আসে না আমার আমি মনে প্রাণে গণতন্ত্রে বিশ্বাসী এক অসম্ভব স্বেচ্ছাচার জনগণ আমায় জননেত্রী বলেই জানে... কেবল তোমার চিড়িয়া খানায় একটা পিঁপড়ের জীবনও অসহ্য ঠেকে আমার
আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবসি।
আঞ্জুমান রোজির দুটি কবিতা 




১। কালের অভিযাত্রী

আমাকে দেখো ভিন্ন কোনো চোখে
যেখানে আলো এসে খেলা করে।
আমাকে দেখো সূর্যতাপে 
যেখানে হৃদয়টা পোড়ে অকপটে।
আমাকে দেখো নদীর মোহনায়
যেখানে কথা হবে জলেরছাটে।
আমাকে দেখো সবুজ ঢেউয়ে
দোল খাবো নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে।
আমাকে দেখো লাউয়ের মাচায়
যেখানে দেহলতা গড়িয়ে পড়ে।
আমাকে দেখো বাঁশঝাড়ে
যেন জড়িয়ে থাকি একে অপরে।
আমাকে দেখো নদীর ঢেউয়ে
যেন কেঁপে উঠি ক্ষণেক্ষণে
তোমার ছোঁয়াতে।

আমাকে খুঁজো না মানুষের ভিড়ে
খুঁজো না ইটপাথরে
খুঁজো না ধোঁয়া ওঠা নগরীতে
যদি খোঁজো, হারিয়ে যাবো তেপান্তরে  
দিগন্তছোঁয়া কোনো পাহাড়ের ঢালে।
যদি ওখানে আসো, ছুঁয়ে দেখো আমায়
এখানে পাহাড়ও কথা বলে, কথা বলে নদী,
সবুজ নির্জনতা ভেদ করে আমরা
দুজনা হয়ে যাবো কালের অভিযাত্রী।


২।প্রাগৈতিহাসিক ভাবনা

আমি কিচ্ছু চাইনে। শুধু চাই,
কেউ একজন আমাকে নিয়ে ভাবুক
চোখবন্ধ করে আমাকে দেখুক
হাতে হাত রেখে পায়ে পায়ে
নিয়ে যাক অন্যকোথাও
অন্যকোনো কল্পরাজ্যে।

আমি কিচ্ছু চাইনে। শুধু চাই,
কেউ একজন দূর থেকে জিজ্ঞেস করুক,
'কেমন আছো তুমি!'
দিনশেষে অনুভবে প্রশান্তি ছুঁয়ে যাক।

আমি  বুঝতে পারি
কেউ ভাবছে আমাকে নিয়ে 
আমি  বুঝতে পারি
কেউ ভালোবেসে যাচ্ছে গোপনে।
আমি বুঝতে পারি, একটি ছায়া
দিনমান  পিছুপিছু ছুটে।

হাতের মুঠোয় এসে খেলা করে
আকাশ দূরত্বে হৃদয়
নিঃসঙ্গতার একতাল চাঁদ
আলো দেয় ঘরময়।

যদিও সব নক্ষত্র থাকে যে যার মতো দূরে দূরে
চিরকাল দূরে থেকে ভাবে শ্বাসরোধী মিলনের কথা |
কুশল ইশতিয়াক এর দুটি কবিতা 



❑   বিনয়ের ভূত

বিনয়ের ভূত আমাকে এসে বললো, আমি তো অবিবাহিত। তুই কেন তুমি কেন বিয়ে করছো? আমি বললাম, আপনি আমাকে  তুই করে বলতে পারেন। বিনয় ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে বললো, তা ঠিক আছে, কিন্তু তাতে তুই তো আর অবিবাহিত হয়ে যাবি না। এই বলে বিনয় প্রস্থান করলেন।


❑   মাতৃত্ব
অবহেলা করে চাঁদ; কেউ না বললেও এ কথা বুঝতে পারি। বসন্ত পত্রেরা উড়ে  যায়, নক্ষত্র-শস্যের রাতে, হাওয়া নিচে খেলা করে হলুদ মাঠ। প্রকৃতির কাছে মানুষও কি ফল নয়, অথবা বীজ— যা ঝরে যায় অতিদ্রুত, পরিনত হবার আগে? যদিও সূর্যের সমীকরণ অনুসারে সবই ফল নয়, ফুলও কিছু থাকতে পারে মাঝে।