Monday, February 25, 2019


চিরঞ্জীব হালদারের কবিতা 

নতুন বছরের পাঁচটি কবিতা

এক
================
ভাল্লুক জানেনা যে সে ভাল্লুক
এই সন্ধিক্ষণে
বায়রন কি তাকে গানের তালিম দিচ্ছিলেন
না কবিতা ধর্মের অগোছালো ভবিতব্যের রূপরেখা শোনাচ্ছিলেন।
আমাদের হিংসুটে চিলেকোঠায় একটা মাছি ও গলতে পারেনা।
যদিও তারা অবৈধ হাওয়াদের
ধানক্ষেতে কুমারী নক্ষত্র পতনের গল্প শোনায়।
তোমার সনেট শুনে ভাল্লুকটির বোধোদয় হয়েছিল কিনা
দুঁদে পুলিস কি জেনেছিল।
আমিও কি নিজের লাশ ব্যবচ্ছেদের পর ফিরে আসব অন্ধ চিলেকোঠায়।
যেখানে বায়রন ভাল্লুকের মনবেদনার
নথিলিপিতে ব্যস্ত ছিল।
=================
দুই.


কবিতা এক অর্থহীন বাক্যের তোলপাড় করা খোয়াবনামা
জানেন—
সাক্ষাৎকারের আগে দু'তিনটে পিল না হলে সব সত্যিগুলো বাদুড়ের মত
ডানা ঝাপটাবে। আর আপনাদের
আয়রন করা টানটান ভবিতব্যের
ওপর দৌড়তে থাকবে ঠিক যেমন পাগলী ঘোটকীর দেহ মৌল সারবত্তার যৌন দৌড়ে সামিল হয়।
কবিতা একটি আপাত জটিল
মনোবিকলনী ধন।
যে কবির ঘরে কোন দিন খ্যাতি উপচে পড়বে না তবু সন্ধ্যার প্যাঁচারা তাহার সজাগ পড়শি।
সেই পক্ষী পড়শির জন্য নাগরদোলার মালিককেও আত্মহত্যার পথে হেঁটে যেতে দেখি।
এতসব জেনেও কেন তুমি পয়ারের গোলক ধাঁধায় খঞ্জ চঞ্চু ঘষতে
ঘষতে হারিয়ে ফেল জন্মতিল।
কেন ভুলে যাও ঘোষপুকুরে চায়না চাটুজ্জের ফুল ফুল ওড়নার তুষারাচ্ছন্ন সামন্তবাদ।
গেরামভারি এই সব দারিদ্র্যকথন
পনেরো মিলিগ্রামের এক একটি ঘুমের কবিতা। এইসব দীর্ঘায়িত বিনষ্টিবাদ আর ভনিতাকথন দিয়ে একজনও জুটিবেনা জেনেও ভাঙা সেতুর কাছে
সাঁতারের কৌশল শিখে নিতে হয় যতক্ষণ না ঝর্ণা কলমের খোয়াবনামা লেখা হয়ে ওঠে।
=====================================
তিন.


এই অভিজ্ঞতা ধূসর বল্কলের কোনও নাভিচিত্রের ছবি আঁকা হবে।
কোন আদিম পায়রার তৃষ্ণার্ত পালক
মায়াবী সংকেত উদ্ধার করে করোটি
অভ্যন্তরে রেখে যাবে গোধূলি পালকি।
কবি তার দাসখত টাঙিয়ে রেখেছে
অসফল নাবিকের ঘরে।
একটি কলম জানেনা কতদূর যেতে হয়।
কত পৃষ্ঠায় তার নগ্ন হৃদপিণ্ডের
অশরীরি পালকেরা ফর্মালিন
মহিমা বর্ণনা করবে সময়ের
আন্দোলিত হ্রদে।
চিতার অসুখী আগুন
এইসব অভিজ্ঞতার শিখা হয়ে
লাল বটফলে রেখে যাবে
আমাদের সমাহার ক্রিয়া।
============================
চার.


কবিতা আর মৃত্যুর জ্যামিতিবক্সের কোন চাবি নেই।
ভল্লাতক উপত্যকা জুড়ে স্ট্রবেরি মেখে যে মেয়েটা হাত ছাড়িয়ে শুয়ে আছে সেও জানেনা তার কটা দরজা। ভীতুলাঠির ডগায় চাবিরা তাঁবু খাটিয়ে সমাহারনৃত্যে প্রহর গুজরান
কালে আগুন জ্বলে উঠলে কাঁটাকম্পাসের দরকার।
দেখো-দেখো মোবাইল টাওয়ার এখন কাকভেজা হয়ে ধুঁকতে থাকবে অনার্যের উপাসনাগৃহে।
প্রতিটি কলাগাছ পৌষসংক্রান্তির মেলায় ঘুড়িদের মস্করায় মশগুল।
প্রতিটি পাঠশালের খঞ্জবেঞ্চের খোদিত নামেরা এক একটি আধুনিক ডাইনোসরের মত হাই তুলতে তুলতে ঢুকে পড়বে শরণাগতের লাইনে।
যে কখনও পয়ারের ফুটকি ঠিকঠিক দিতে পারেনি তাকে ডাকা হয়েছে মুখাগ্নির প্রথম মন্ত্রোচ্চারণে।
মধুসূদন দেখি ডোমনিদের ভিড়ে খুঁজতে থাকে ইডলিপ্রিয় প্রেমিকার মর্মস্থল।
মেধনাদের শেষ সর্গ লেখার আগে তিনি মিলিয়ে নেবেন চিতার জ্যামিতি।
হাজারদুয়ারীর সব দরজা খোলা থাকলেও চাবি তার ছায়াকেও সঙ্গত দেয়না।
জ্যামিতিবাক্সের জন্মদিনে নিমন্ত্রিত
চাবিদের পংক্তিভোজে ডোমটা দেখি পাতে পাতে লবণ দিয়ে চলেছে।
================================
পাঁচ.


পৃথিবীকে বেল ভেবে আপনি কি আহ্লাদিত।
আপনি কি ভুট্টা ক্ষেতের পাশ দিয়ে যেতে যেতে বাবুইপাখির বাসা বুননের অব্যয় তরলে মাখামাখি।
তাহলে তৃষ্ণা নামে এক পুরুষবান্ধব
তোমাকে সম্পন্ন শুঁড়িখানায় হিসাবরক্ষক নিযুক্ত করে ভিড়ে যাবে
বেলুন কারবারিদের মহোৎসবে।
প্রকৃতার্থে বেলুনকে যাই ভাবুন না কেন তার আঁশহীন শীতলপাটি ত্বকে
কোনও প্রদীপ ভাসাতে গেলেই
বেলেরা অনশন শুরু করলে
কে তার দায় নেবে বলুন।
বেলজনিত আহ্লাদের
সময়সীমা প্রায়
বেলুনের মত।
আপনি তার
অতিথি
মাত্র।
=========

No comments:

Post a Comment