Friday, January 8, 2021

কবিতা করিডোর , অক্টোবর সংখ্যা , ২০২০

 

সম্পাদকের কলম: এই সময় কোন সম্পাদকের কলম নয়।  যাদের হারালাম তাদের আত্মার শান্তি কামনা করি। 


 যাও পাখি

কুমকুম বৈদ্য 


পাখি তোর ঠোঁটে খড়কুটোর আশ্বাস

ডানাতে আকাশের নিঃশ্বাস

কান পেতে গাছেদের কানাকানি


তুই আমি দুজনই নিজেদের গান জানি

মাথার দিব্বি, ফিরে তুই  আসিসনা আর

তোকে তো দিলাম কিছু স্মৃতি

আমি তো মগ্ন নিজের গানে

রাখা আছে গাছেদের কাছে আমাদের অশ্রুকণা

হাজার বছরেও কিছুতেই মরবে না

উড়ে যেতে পারিস যত দূরে  -

ডানা যদি নাই পারে

মনে চাষ কর নে কিছু ডানা

বসতে পারিস যে কোনো গাছে-

আমাদের যে দিন ছিল

ইতিহাস লিখে গেছে তারাদের গায়ে

হারাতে পারবে না সে আর কিছুতে

 ভাবনা 


- তপন তরফদার

নিজের যোগ্যতার বেড়া না ডিঙিয়ে
মনের অজ্ঞতার মেগাপিক্সল মোবাইলে ফুটে ওঠে
এক সত্যম শিবম সুন্দরমের চাবির চিহ্ন
বিশুদ্ধ সুন্দরকে ভেদ করে মগজ জানতে চায়
নিত্যদিন অক্ষরমালার কত পিরামিড হয়
হিসাব রাখেনা তার ভবঘুরে বা অর্থনীতিবিদরা।

গুগুল ডট কম জানে না কত পাঠক কবিতা পড়ে
কখন কত পাঠিকা বালিশে বুক রেখে
সিরিয়াল ছেড়ে সৃষ্টি রহস্যে বুঁদ হয়ে থাকে।

তবে কি চাহিদার থেকে যোগান বেশি-
ওএলএক্স বেচেনা, কেউ হিসাব রাখেনা
আবার কবিরা গভীর গোপনেও জানতে পারেনা
মেঘ থেকে বৃষ্টি হল না শুধুই বজ্রপাত দিল
আবার
কোনকোন পিরামিডের অন্তরালে থাকে ক্লিওপেট্রারা
যারা মৃত মমিতেও প্রাণ সঞ্চার করে।।

 

শেষ না শুরু
অনিমেষ

গদ্য লিখতে বসলে সর্বপ্রথম যেটা আমাকে আকর্ষণ করে সেটা হলো আমি কিছু কিছু সময় যেভাবে বিষয়হীন ভাবে ছেড়ে দিই নিজেকে ।কী লিখছি কেন লিখছি কোন দিকে যাচ্ছে লেখা সেরকমই সেই নেশাটা আমাকে টেনে নিয়ে যায়। গদ্যের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করতে না পারলেও হয়তো পাতা ছুঁয়ে বেরিয়ে আসি ঈষৎ।

শহরের মাথার উপর চাঁদ জ্বলে আছে দীর্ঘদিন ,নিস্তার নেই তার। ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে।শীত বাড়ছে ।শীতল মেঘে ঢাকা পড়ছে চাঁদ। এরপর সমস্তটা রাতের মতো নির্ঝঞ্ঝাট। অথচ দেয়াল ঘড়ির মতো তীক্ষ্ণ বীতশ্রদ্ধ কী আছে আর!

কুয়াশার ভেতর হাঁটতে হাঁটতে জলপাই ফলের গাছ। পড়ে আছে ঝুলে আছে ফল। তুলে নেবো কি নেবো না ,ভেতর ভেতর অন্তর্দাহ শুরু হয়েছে। যাদের মুখ না দেখার মতো করে রাস্তায় পাশ কাটিয়ে চলে যাই।সেরকমই আর না থেকে এগিয়ে যাই। ট্রেইন চলে যাচ্ছে পাশ দিয়ে।হাঁটার মুহূর্তগুলো সকালের বাজার, ভায়োলিন ছেড়ে আসা মেয়ে ,গভীর রাতের কফি সব আদতে একটা একটা দৃশ্য ঢুকে পড়তে থাকে স্মৃতির ওয়্যারে।

থমকে যাই। যেভাবে এতকাল বেকার থেকে থেকে ভুলে গেছি কখন কোথায় কী বলতে হয়। আদতে নাব্যতার সামনে বরাবর চুপ থেকেছি চুড়ান্ত চুপ। মুখে কুলুপ। বহিদৃশ্যের সাথে অন্তর্দৃশ্যের একটা পার্থক্য থাকে ছায়াবলয় ঘিরে চলতে থাকে ঠান্ডাযুদ্ধ। A amazing cold war .

মাঝেমধ্যে  শূন্যতার সংজ্ঞা খুঁজতে গিয়ে অতলান্তে তলিয়ে যাই। তল্লাশি চলে চলতে থাকে। মৃত্যু ঠিক কোথায় লেখা!কোন দরজার সামনে দাঁড়ালে এক্স ফ্যাক্টর কাজ করে যাবে।  Terrific luck খেলে যাবে।

এই একটা গদ্য লেখার সমস্যা । মেমোরির ধার ঘেঁষে কিছু আলো তুলে নেবো ভাবি তা আর হয়না। টাইম ট্রাভেলিং করতে করতে পৌছোই ছেড়ে আসা জগতে। Thw worthless memories.

তবুও হাঁটি যেভাবে আকর্ষিত হয়ে থাকি অনর্থক কোনো গদ্যের দিকে। বিভীষিকাময় প্রহেলিকার দিকে। টানটান চিত্রনাট্য কোনো যেন আমাকে গিলে খাবে। আটকে যাই মায়ার মতো। কলম না গিরগিটি বুঝতে পারি না।

রঙের সাথে গুলে যেতে থাকি। সর্বস্ব রঙ যেন মরীচিকা। শেষে আমি নিরুদ্দেশ হয়ে যাই। কোথায় শুরু কোথায় শেষ।খেই হারিয়ে কোথায় গদ্যে কোথায় আর এই হাঁটা !

From here  you never know ,What will be happening at the end...


 দৃশ্যের বাইরে

       -তন্ময় ধর 


১।


যেন পৃথিবী ও পৃথক মাংস তুলে রাখা আছে আভাসে

অভ্যাসে আলোর পা

আঙুলে অধিক ঈশ্বরজল

দৃশ্যঝিনুকের ভিতর ছদ্মবেশ হারিয়ে ফেলছে সমুদ্র


ঢেউ নামক প্রবল অস্তিত্বের দিকে চলে গিয়েছে স্মৃতিহীনতা

শঙ্খচিলের নখে একে-একে শব্দ নেমে আসে 

ফেনা 


২।

নীল একটি রঙ এখানকার সংসার 

অজ্ঞাত প্রাণের আলোশিশ্ন অন্ধকারে বোবা প্রশ্ন

সংজ্ঞাহীন এক ঢেউ


তন্ময়তা অনেকক্ষণ ভেসে গেছে জলে

তুমি কি শুনেছো কিছু

বিশৃঙ্খল অনন্ত পতনে? 

আঘাত খুঁজতে গিয়ে


অভিশ্রুতি রায় 


১.

 পৃষ্ঠার পাশে 
নামিয়ে রাখছি নিজেকে

প্রত্যেকটা দাঁড়ি, কমায় 
নিজেকে গুটিয়ে নিতে নিতে
শক্ত হচ্ছে কাঠামো 

ভাঙছে...

ভাঙা টুকরোর পাশে রেখে দিচ্ছি এক এক দিনের কথা

টুকরোর পাশ জুড়ে তুমি আলো হয়ে উঠছো

২.

পাথরের কাছে
জলের কাছে
আকাশের কাছে 
পৌঁছোনোর পর
পাথরকেই বেশি শীতল মনে হয়েছিল 

শীতলতা আসলে একটি কঠিন অবস্থা
নিজের উপর স্রোত ভাসিয়ে দেওয়ার

দিকশূন্যপুর

রুদ্র সান্যাল

একদিন ঠিক পৌঁছে যাবো দিকশূন্যপুরে।
যেখানে বাতাসে ফিস ফিস করে কথা বলে,
ঝরা সময়ের দিনলিপি।

শরীরী কিংবা অশরীরী যেকোন অস্তিত্বের মাঝে,
পরে থাকে বিমূর্ত স্বপ্নের চেতনা।
মনের গোপন সিন্দুকে এখন ধীরস্থির হয়ে,
বাস করে আমার আমি।

চেতনায় আঁধার নেমেছে সেই বহুকাল আগেই।
ধিকি ধিকি আগুনে পুড়ে ছারখার প্রাণহীন সময়।
মেঘ উড়ে চলে হু হু করে ঈশান কোণের দিকে।
চারিদিকে কালবৈশাখীর রুদ্র তান্ডব।

ফুসফুসে বিশুদ্ধ অক্সিজেন ভরে নিজের শৈশবে, 
ফিরতে চাই অন্তত আরো একবার।
নিজের বুক চিরে করেছি অনেক ভুল।
এক অসম্ভব জ্বালাময় আত্মহনন।

একদিন ঠিকই পৌঁছে যাবো দিকশূন্যপুরে।
যেখানে কথা হবে ঝরা সময়ের দিনলিপির সাথে,
অন্তত একবার.....

 অনিন্দ্য রায় 

____________

সকাল 


সকাল সাড়ে সাতটা

ডুরে-জানলার পাশে কালশিটে গায়ে রোদ পড়ে আছে
                   আর তার মনিবের মতো এক আরামকেদারা

দৃশ্যত শরীর— স্পর্শের চাহিদা মতো হাতল ও উত্তল পিঠ 
কাঠ, আদি বার্নিশের গন্ধ, একাকীত্ব, ঘোর      
                               মনে পড়ে মধ্যতিরিশ

বসি পর্দা টেনে, হাতে মান্দেলস্তাম 

পা থেকে পোষ্যটি যত সরে যায়  
    কোনও মুমূর্ষু কবির লেখা মনে রাখার দায়িত্ব                            আমার ভেবে বিচলিত হই  


বিকেল 


বিকেল পৌঁনে ছয়

বাঁধের পশ্চিমপাড়ে অর্জুনগাছের তলায় এসে বসেছেন 
বাঁকুড়া জেলার গ্রীষ্ম 
শ্রান্ত, কপালের ঘাম হাওয়ার গামছা থেকে নিঙরে তিনি হাই তুলছেন  
আর বাঁশঝাড় মরমর করে উঠছে 

হাঁসের পেছন-পেছন-ছুটে-আসা আদুড় বালক হঠাৎ দেখল  
ঝোপের ভেতর আকাশে ওঠার আগে চুল আঁচড়াচ্ছে লক্ষ্মীট্যারা চাঁদ          
 
আমরাও খেলা ছেড়ে ওদিকে এগোই

আমরাও কবিতা লেখার জন্য অন্তত একবার 
                   মঙ্গলকাব্যের মাঠে ঘুরে আসতে চাই   


প্রভু দাও দ্বার খুলে-'

বিশ্বজিৎ  লায়েক


১)

সঙ্গম ক্লান্ত শরীরে আজ অঘ্রাণ মাসের বিকেল

মাঠ ভর্তি ধানের গন্ধ নিয়ে আমি এখন কোথায় যাব

কিসে ডুববে আমার উচ্ছ্বাস

চাঁদ গলে গলে এই যে রেখে গেলে অজস্র মোম

রেখে গেলে লক্ষ্মী কোজাগর

এখানে দ্রাবক নেই, হলুদ সাদা জীবনের উপর 

ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কাম, দ্রাব আর বিষণ্ণতা

রমণী শীত জানে না এইসব

সে শুধু কুড়িয়ে আনে আমাদের শীতের ওম


২)

তুমি আর মন খারাপ লিখো না, লিখো অনন্ত খিদে

তুমি আর জলে ভাসো না, ভাসাও শরীরে আহা মন

আমার লুকিয়ে রাখা হাহাকার

আমার অন্ধ জন্মের প্রতীক 

এই মগ্ন অন্ধকার

রাখো তার ডানায় শুদ্ধ পালক, গত জন্মের উচ্ছ্বাস



৩)

ধানের মতোই বেড়ে ওঠো তুমি

কালো ধোঁয়া আর বঞ্চনার এই চ্যালাকাঠ

ছোটো হে অন্ধ মাতাল, মুগ্ধ প্রেমিক 

শব্দ ছুঁয়ে হও দিগভ্রান্ত

বুকের ভিতরে কে যেন জ্বালিয়ে দিয়ে গেছে ধিকিধিকি

কাঠের আগুন

যুদ্ধের বিপরীতে অন্য যুদ্ধ খেলা


৪)

পারফিউমের গন্ধে কাঁদতে কাঁদতে নেমে গেল শ্যামল ছায়া

শরীরে তার ধোঁয়া, কার্বন ও গন্ধক

কৃষক রমণীর দেহজ প্রসব

অকল্পিত অসুখ







৫)

এই বয়ঃপ্রাপ্ত নিড়ানি চারাধান

ক্ষেতের আলে ফুটে ওঠা অসময়ের চাঁদ

ধানের আহ্লাদে তুমি নাচো শস্য শ্যামলিমা

ক্ষুৎ কাতর এই দেশে

ধানের আহ্লাদে মিশে যাও তুমি চুম্বনের মতো

টিপে দেখো তার মসৃণ ফলের মতো স্তন


৬)

কৃষকের করতল 

এই দেশ পিপাসা তর্পণ

পাতায় পাতায় রাখো অবশিষ্ট যৌণ বিদ্যুৎ

অভিষিক্ত নদ-নদী

অভিসারে রেখেছ যে মন

চাষীর খোয়াবে নাচে যে লকলকে সবুজ

কচি ধান

দুটি ঠোঁট ছুঁয়ে আছে জলে

জলের অক্ষরে

ভালবাসা তুমি গড়িয়ে নামো আলো আর আঁধারে

কথার ঠোঁটে, ডুব সাঁতারের এই রাত

মিশে যাও আমার নির্বাক ছুঁয়ে থাকা কচি ধানের দুধে


৭)

পুড়ছিলাম, বহুবার আমি পুড়ে পুড়ে

কাকে যেন বলেছি

ভালবাসা দাও সঙ্গে সামান্য অবহেলা

শিউলি তলায় পড়ে থাকা জবাফুল

কুড়িয়ে নিয়ে তাকে বল

এই দ্যাখো প্রেম এখানে কচি ধানের দুধ

এই ভালবাসা গ্রহণে অক্ষম তুমি

দূরে থাকো

তোমার বিষণ্ণতার দিকে চলে গেছে আমার আঙুল



৮)

তুমি হেসে ওঠো

অনেক উঁচুতে তিনি লিখছেন

ফেসবুক

আমার শৈশবে জমানো স্বরবর্ণ রাত

আপাতত বৃষ্টি দিন, উদাসীন ওম

কতকাল বসে আছি শালপাতা নিয়ে

প্রাচীণ অরণ্যে

'ঝরো ঝরো মুখর বাদল দিনে'

রুগ্ন ভালবাসা তোমার কোনো ব্যঞ্জন নেই

আলাদিনের পুষ্টি নেই

নিষেধের বাড়িঘর

যতবার চেয়েছি তোমাকে

ঘুম ও স্বপ্নে মতিভ্রম

জেগে আছেন বোবা ঈশ্বর



৯)

শুয়ে থাকা চাঁদ নিয়ে

রাত নেমে আসছে জিহ্বা ও জ্বরে

মৃত হারমোনিয়াম

শীতের স্টেশনে বাজাও তোমার অসুখ-বিসুখ

অসময়ে অতটা খিদে গান হতে চেয়েছিল

আর আমি বৃত্তের বদলে জিরো বসালাম

শুয়ে থাকা সর্বনামে


১০)

মাইগ্রেন নয়, শ্বাসকষ্ট নয়, উল্কি

বেচতে এসেছি তোমার শহরে

তুমি বোতাম খুলে পাঁজরে সেলাই মাখালে

জিভের নোনা আল স্বাদ


১১)

সাদা পৃষ্ঠার আগে বাষ্পমোচন

সাদা পৃষ্ঠার আগে বিনোদন লজ

সাদা পৃষ্ঠার আগে রাত নেমে আসছে

শরীরে আবার







১২)

কী নিয়ে বসে থাকব আমি

দরজায় হেলান দিয়ে বসে আছে ত্রয়োদশী চাঁদ

কী নিয়ে বসে থাকব আমি

শূন্যঘর একাকী একা...


১৩)

আমি কি ভাঙা আয়নার টুকরো টুকরো ভেঙে যাওয়া কাঁচ

জোড়া লাগাবে বলে সকালে এসেছিল

বন্ধুর মতো প্রিয়জন

দুপুরেও কেউ কেউ এসেছিল নিশ্চয়

আমি ঘুমোচ্ছিলাম

বিকেলে যারা আসব বলেও এলো না এখনও

ঠোঁটে আলকাতরার জ্যোৎস্না মেখে বোবা হয়ে গেছে

চিরকাল


১৪)

আমি কি আরো ভেঙে ভেঙে টুকরো হয়ে

নিজেই নিজেকে লাগাচ্ছি জোড়া

হাত-পা, পেট-পিঠ, মুখ

শরীরের শিরা


১৫)

এতরাতে কে এলো ঘরে

সারা শরীরে তার অক্ষর মিছিল

'মানুষ পারে না।

এক জায়গায় এসে স্পষ্ট ভেঙে পড়ে।'


 মনপদাবলি ১


কৌশিক চক্রবর্তী



মন বললে তো সেই একটাই

তরুছায়া অনেকগুলো হতে পারত

আবার কিছু না-ও


শূণ্য তার সমস্তটা নিয়েই জলে ভেজা। 

আয়নায় মুখ না দেখলেও 

এই তোমার আরতিগান

টুকটুক 

তুলে নিলাম পাড়ভাঙায়। 

তুলো মুড়লেও 

হঠাৎ হঠাৎ শহর পালায়

ঝিকমিক মনখারাপে


ফিরে আসার বাঁক এদিকে একটাই।

হাসি তার সাইকেল নিয়েও লাইন কাট করে কোথায় মিসিং 

গড়িয়ে আসতে গিয়েও

সিঁড়ির কমলায় দুটো মানুষ

বিরতির সেইসব ফাঁকে ফাঁকে তখন 

নতুন নতুন সর্বনামে

চান করে নেয়...




শিরোনামহীন ৫

মিহির দে


এখনও এলোমেলো হলে তোমাকেই খুঁজি
জানি,কিভাবে রাত্রি শেষে হাসি মুখে
ঢুকে পড়ো ভোরের আলোতে


তোমার শরীর ছুঁয়ে যে দিন
তার ভেতর একটা হলুদ পাখি থাকে


বুকের কাছে মাথা রেখে দিলে
মনখারাপের গল্প শোনায় চিলেকোঠার
বিকেল

আয়না ও সম্পর্কের একটা গভীর মিল
যার ফাটল কখনও জোড়া নেয় না

কতটা ব্যার্থ হলে বুঝি
তুমিও চুপ করে বসে থাক কুয়াশার ভেতর

দুয়ার

সুভান



মনের ঘরে দুটো দরজা থাকে,

একটি ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার..

অন্যটি ঘরে ফেরার...


ইদানীং দুয়ারের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে

গোলাপের মতো সন্ধে ঝরে পড়ে শুকনো মাটিতে।


হাতের মধ্যে লুকোনো থাকে কাঠের নোঙর...

তিনখালের একটি আমি লুকিয়ে রাখি চোখে

অন্য দুটিতে রাখি বিরহের সাদাহাঁস ও ময়াল।


জল তো আর বন্দর নয়, জীবনের দিকে তার স্রোত।

জীবনের কাছে গিয়েই তার ডুবে থাকা বিস্ময়...

সমুদ্রবীজ থেকে সফর আর নুন 

আলাদা করা যায় না বলে আমি ভাসমান মহল্লার

খোঁজ কাউকে জানাইনি। 


সূর্য জলে এসে বসে এখানে। জলের সঙ্গেই

তার সহবাস। আমি গাছ লিখতে লিখতে এতকাল

খেয়ালই করিনি। সবুজ নয় শুধুই ধূসর লিখে গেছি।


হয়ত 
নীলাঞ্জন সাহা 


হয়ত আমি তেমন কিছুই বলছি না
তবুও আমি চলতি হাওয়ায় চলছি না।
হয়ত আমি সবুজপাতায় সবুজপোকা
হয়ত আমি তোমার চোখে ভীষণ বোকা
কিম্বা হয়ত খুব সেয়ানা, বেড়াল ভিজে
হয়ত আমি ঢাকটা পেটাই নিজেই নিজের।
হয়ত আমি দূরেই তবু তোমারই কেউ
যেমন নদীর স্রোতের মাথায় খুব চেনা ঢেউ
কিম্বা হয়ত নিজেই একটা আস্ত নদীস
নৌকো হতাম যাত্রী তোমায় পেতাম যদি!

হয়ত আমি পূর্ণচ্ছেদের আগের কমা
সুদ-আসলে স্মৃতির শুধুই বাড়ছে জমা
কিম্বা হয়ত কলসি ফাঁকা বাজছি বেজায়
ভোরেরবেলা স্বপ্নে তোমার হঠাৎ কে যায়?

ভোরেরবেলা স্বপ্নে তোমার আজও কে যায়?

আলাপ 

নীলিমা দেব


হয় না! ---- বাক্ থেকে অবাক   

নীল ফেটে শিশির  

কী সমস্ত থৈ থৈ 

ভাবছি বাগেশ্রীতে ব্রাউজ করি রাত 

কিংবা যতক্ষণ আমি ততক্ষণ কাহারবা …  


সামনে বোকা বোকা জল 

স্পর্শ নেবো কিনা না ভাবতেই বৃষ্টির ছায়া ও তার জলদি

আমার দিকে

আমাদের স্পর্শের দিকে

নামতে নামতে…


 খাঁখাঁ নীল

কোথাও কোথাও জেগে থাকলো মেয়েটার সংক্ষেপ 

দু’বিঘে মেঘ

চোখের সামনে ঘোড়ার ফ্লো  


সমস্ত শব্দেই খুইয়ে ফেলি আলাপ  

যেটুকু স্তব্ধ সেটুকুই না হয় মেয়েটা …  


তুমি ঠিক তখন

শৌভিক রায়

(লিওনার্দো কোহেনের কবিতার ছায়ায়)

এই যে হাসছ কিংবা দৌড়চ্ছ অথবা খেলছ
কিংবা ধরা যাক নির্বিঘ্নে দিন কাটাচ্ছ,
নিজের মতো

কেমন লাগছে এতে?

কখনো আমার দিকে তাকাচ্ছ
চুপিসারে ঠোঁটে ঠোঁট রাখছ 
অনুভব করছ আমাকে, আমারই মতো

ভাল লাগছে এতে?

দিনরাত এই বসে থাকা,
বসে বসে দিন মাপা, রাত মাপা
কিছুই করতে না হওয়া

মানতে পারছ তো সব?

একবার এই ঠোঁটে ঠোঁট রাখা
আশ্লেষে গভীরে চলে যাওয়া,
গভীর হলে, এতটা গভীর হলে,
সহজেই চলে যেতে পারি

চারপাশে সুখী সব,
তোমার চারপাশে,
তুমি নিজে অনুভব

চলে যেতে পারি
গভীর থেকে উঠে এসে
একেবারে চলে যেতে পারি...

যদি যাই
বাঁচবে তো তাতে
তুমি!

ঠিক তখন?

রাজনৈতিক 

মহুয়া বৈদ্য



জ্বর নেমে গেছে তাই ফুরফুরে মেজাজটি নিয়ে
বহুক্ষণ বসে বসে কাটাকুটি খেলা শেখা গেল
সেইমতো ছক বুঝে ঘুঁটি গুলি তুমিও নামিয়ে
পেতেছ চেকারবোর্ড এইবার যুদ্ধটি সাজানো

অপেক্ষায় আছে ঘোড়া অইদিকে জোছনাটি মৃত
হারপুণ নামিয়েছি হরিণীরা তাই সচেতন
সাপটেছি নৌকো-চাল, একেবারে কোনাকুনি ঠিক
রাজা তুমি কাপড়টি সামলাও,প্রজা হতবাক!

এই নাও চেকমেট অথবা কি ধুরন্ধর চাল
উলঙ্গ রাজাও জানে এইভাবে কেটে যাবে কাল

শৌভিক কুণ্ডার কবিতা 

অভ্যেস 



বস্তুত অভ্যেস জুড়ে ছুঁড়ে দাও
"কেমন আছেন? " অথবা, "ভালো তো?"
আর উত্তর না জেনেই হেঁটে যাও নিজস্ব দ্বীপের ঝিনুকে।

অথচ আমি তো হাত বাড়ালামই,
কাঁধ ছুঁয়ে বলবার ছিলো,  "আহা! তুমিও কেমন?"
বলতে চেয়েছি, "জানো, কাশবনে আর নেই বালিহাঁস 
প্রজন্ম পেরোনো ঘাসও
চুপ হয়ে গ্যাছে। "
এইসব গুঁড়ো কথা শুনবে না বলে
তুমি চলে যাও
প্রশ্ন ধুলায় থাকে স্রেফ অভ্যেসে।




পাহাড় 


একটি রঙের গল্পকথা লিখতে চাইছি বলে
টুকরো টুকরো পান্ডুলিপি দেরাজ ভরে রাখি
হারিয়ে ফেলার ভয়ে
শব্দে শব্দে প্যালেট সাজাই উন্মুখ প্রত্যয়ে।

পাহাড়, আমি তার দিওয়ানা 
পাহাড় বনতে চাই
বৃষ্টি দামাল, ধ্বস নেমেছে
স্বপ্ন ভরে ছাই

পাহাড়রঙা গল্পকথা খাদের মুখে বাঁক
ফ্রেম ছাড়িয়ে চুল এলিয়ে একলা জেগে থাক।

অপরা কবিতা

চিরঞ্জীব হালদার

 কে কাকে আর ভঙ্গ করে বলো কী বা ভঙ্গ করার আছে গুন
অযোধ্যার পাহাড়ে বসে একা দেখিতেছো ভার্চুয়ালই মুন
কাঁথা বোনা বুড়ি নিরুদ্দেশ বুকে ধারণ করো কাঁথা স্টিচ
নিম্ন বিত্ত অন্য অাগুন জ্বালে চোয়া ঢেকুর জ্বালায় পেটের নিচ।
ক্রম ভাস্বর আলোর কথা বলো দুত্যি কি আর মাপ তে পারে রিপু
হরধনু ভঙ্গ করে নাঙল চালায় দেখ পাশের বাড়ির দিপু।
দিপুর আছে আমডাঙার ই মাঠ দিপুর তেঁতুল পাতায় আছে সুজন
সম্পর্কের মধ্যে দ্রিদিমি বাজে ফলিডলের স্রোতে ভাসে দু'জন।
থ্রি কোয়াটার  পেগের পরে চাঁদ উঠেছে দেখো জোৎস্না নিরুদ্দেশ
রিবন সুতোয় ঝুলছে জন্মদিন হেসে ওঠে কলঙ্কিত কেশ।

মন্থন 


ইহা সমস্ত।এবং সম্মত।নাড়ু পাকাইবার জন্য।কোথাও কোন অবশিষ্ট নাই।
বারকোষ টি সোনার বা কাষ্ঠের। উপাদানেরা শায়িত।নিদ্রা মুখর।উৎসবী।যথা সময়ে জাগরণ দেওয়া আবশ্যক।
বায়ু কণা আছে। যেমন থাকিতে হয়। ধার্মিক আছে।তার দন্ড টি অদৃশ্য।তাহার ও একটি কর্তব্য স্থির। কেহ জানেনা।ঠিক সময়ে নাকি সূচি দ্বার
ভেদ করিয়া কিছু একটা নির্গত হইবে।
আপনি ভাবিতে থাকুন।ভাবনাই আপনার সমূহ কর্তব্য।বাসায় বিদ্যমান থাকিবেন।না থাকাই ধর্মের অন্তরায়।
এক্ষনে যাহা বলা হইল। তাহা বলা হইল কি।
আপনাকে বলা হল নায়ক।যুদ্ধাস্ত্র নেই। চুম্বক আধার নেই। জিঘাংসা নেই। আপনি নায়ক।
আপনি প্রলুব্ধ। প্রলোভিত। নিত্য বর্তমান।
হেমকনা। ফুলেরা জয়গান করে।মুগ্ধ প্রজাপতি।
পরাগবহনী মাত্র।
হে ঈশ্বরী।ঈশ্বর ক্ণা। দাড়ি। কমা। রেফ। বিসর্গ। বিন্দুচন্দ্রে জাগ্রত।শুধু পাকানোর অপেক্ষা মাত্র।
হে দাসী। হে দ্বারী। হে নৈতিক কারুকর্মা। 
আপনাদের পদ ব্যাতিরেকে এই নাড়ু কর্ম।নাদ ও স্রোতের মধ্যবর্তী। শুধু হেতু আখ্যান বলার অপেক্ষায়। প্রসবিত প্রহর।
দেখুন অষ্ট চন্দ্রমা।দেখুন। আপনারা আসন গ্রহন করুন রাত্রিনাগর।

৩- নভেম্ব র-২০



বান্ধবধর্ম


হাস্নুহেনার নিচে দাঁড়িয়ে দিনের ধর্ম ত্যাগ করার
 পর  ধর্মরাত্রি কে বলি 
মার্জনা করবেন।
আমার শিকড়ের স্বপ্ন গুলো সিফন
 পরিধানে এক একজন অবধূত।
আপনার বুলন্দী আসবাব উত্তরীয়ের পাশে
যাযাবর হরফের গুলতানির এরা সফল অনুবাদক।

আপনার থেকে এক কুনকে রাতশষ্য ধার দেবেন।

আমি অঙ্গীকার বদ্ধ ইহাদের সব ফুল 
পাখি জন্মের দিকে নোলক ঠোঁটে উড়াল দেবে।
ভালো থেকো মানসবান্ধবী।

 অর্ক চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা 


১) 

মধ্যিরাত আর মধ্যিবয়স
বাড়িয়ে তোলে আত্ম-সন্দেহায়ন।।
নখের দর্পণে যার ছবি ভেসে ওঠে,
সে আমি নই, ছিলাম না কখনো!  

২)

স্মরণ যখন শ্রবণ হয়ে ওঠে,
মনে হয় সবাই জানে
বাড়ি থেকে বেরিয়ে কখন
চৌরাস্তায় গিয়ে দাঁড়াবো।
দেখতে আসবে সকলে,
আর না দেখেই চলে যাবে,
শব্দ হয়ে, স্মৃতি হয়ে,
রয়ে যাবে,
লোহিতরক্তকণিকা।।

৩)

একা মানুষের
সমবেতসঙ্গীত
ফুরোনো পর্যন্ত
ভরোসা থাকুক
বন্ধ দুয়ার খোলার।।

৪)

গানটা গেঁথে রয়েছে মগজে সারাদিন।
যতক্ষণ না মনে হবে,
যেটা গেঁথে আছে সেটাই তো মন।
মগজে গানের মতো গেঁথে থাকে,
সারাদিন সারারাত।


৫)

আলমারির বন্ধ দিকটায় তোর গন্ধ পাই
গন্ধ পাই বলেই খুলি মাঝে মাঝে,
ঐদিকটা।
গন্ধ পাই বলেই তো সবসময় খুলি না,
ঐদিকটা।
তুই বলিস,
গন্ধ বুজে আসে সময় ভর করলে
নতুন সংক্রমণেও নাকি গন্ধ উবে যায়
তাও আলমারির বন্ধ দিকটায় তোর গন্ধ পাই।।
আমি ফাল্গুনী রায়ের সৌন্দর্য রাক্ষস নই,
ভেঙে ফেলতে পারিনি 'প্রজাপতির গন্ধসন্ধানী শুঁড়' ।।

পূজারী

তপোব্রত মুখোপাধ্যায়


মণিমুখে রাখো শব্দ, স্থির
ওঁ ঋদ্ধ্যতাম, এরপর আসীন হবেন দেবী হৃদয়ে
প্রাণ ও প্রণয় এক-তারে বেঁধে, রুদ্র, নামো পথে
ঐশ্বরিক আদেশের আগে প্রশ্রয় রেখে যান নাগ
গণিতে সরল আশ্রয়, অথচ কাঁটাতারে
ভাগ হয়ে পড়ে থাকে মাখা ভাত, জলটুকু

মণিবন্ধে মাথা রাখো, স্থির। শোনো,
স্নেহ ডাকে, প্রেম
হৃদয়ে গভীর শব্দ, নাগপাশ পার করে
উঠে আসা স্বর প্রাণাঃ, ইহা গচ্ছঃ, ইহ স্থিতঃ
মৃত্যুর পাশ থেকে ডেকে যায়...

-

 মৃত্যুর কবিতাখানি


পৌলমী গুহ



শেষ অথবা শুরুর দিকে এগিয়ে যায় উন্মুক্ত জঙ্ঘা।

একটি গভীর চোখ টগবগ করে ফুটে ওঠে ডালে।

ধুনোবাতাসে খাবি খায় কচুরিপানাসম পিঠ,

গভীর গভীর কিছু দুঃখকে দানাপানি দিয়ে কাছে ধরে রাখি।

একটি নারীজনম ধীর পায়ে টিলা বেয়ে নাভি অবধি ব্যর্থ হয়।




জলের গায়ে সারি সারি শৈশব ভাসে।

ফ্ল্যাশটানার মিউজিক শেষ হলে,

পতনের পাশাপাশি চোখ মেলে শুয়ে থাকে

অবিকল হংসিনী মুরতি।



আদরের প্রলাপ


কথা রাখারাখি পুরোনো হয়ে গেলে,

বেজন্মা কথাগুলো হাওয়ায় ওড়ে।

কখনো ঘর ভেঙে গেলে বুকের বদ্বীপ

স্রেফ খুন হয়ে যাবে বলে জেগে থাকে।


চুম্বন

অভিষেক মহান্তি 


তোমার খোলা তরবারি থেকে
চুঁইয়ে পরছে আমার শেষ
ভালোবাসা,
আমি যন্ত্রণাকে  আড়াল করে
সাজিয়ে দিচ্ছি প্রেমময় মুখ,
তোমার বিজয় উল্লাসে
সামিল করছি,
আমার ভঙ্গুর আত্মা কে,
সমাজের কাছে উপভোগ্য
সম্পর্কের রক্তক্ষরণ ।
মানসিক ধর্ষণের স্বাদ
তোমার অভিব্যক্তিতে,
তবুও আমি অপেক্ষায়
তোমার শেষ চুম্বনের।
  

Tuesday, January 5, 2021

 অরুণ পাঠকের গুচ্ছ কবিতা



দুর্ঘটনা


এখনও উত্তপ্ত দুহাতে ফুটন্ত গোলাপ তুলে ধরে

বয়সের প্রত্যন্ত ভার তুমি গোপন করে যাও

আকাশ তোমার দেহে গুলে গেছে রং

প্রহরী পেরিয়ে গিয়ে সামান্য বাগান মাত্র গেছি 

সেখানেই গরীয়সী বহুলাংশে আমার হয়েছ

মায়ের আসল রূপ মাটিতে বা মেঘে একই বৃষ্টির

কারসাজি 

যোনি প্রবাহিত হয়ে আলোর দরজায় 

উপগত আমি যোনিতে প্রবেশ করে আবার জন্মাই

স্বয়ম্ভু শক্তির গায়ে এমন রূপের মাটি

তোমাকে মণ্ডপে আনে কিংবা বিছানায় 

আমি বাইরের লোক; আমার নকল ঘরে

তোমাকে পেয়েছি, যে ঘর বিমূর্ত ছিল সূর্যাংশের

আগে

যখন ধারনা ছিল, অনুভূতিযোগ্য কোনও 

মেধাবী নারীর জন্য সূর্যতারকারও একটা

দুর্ঘটনা দরকার... 




দেহ


যা-দেখছি তা-সত্য নয়, মর্ম খুব শ্লথ

বেঁচে থাকার মহত্ত্বে আমরা তো বিশ্বাস করি 

এই ধবল সাধুতা সমান্তরালভাবে বইছে দেহটি 

মাথাটি গণক আর মধ্যমার চিরায়ত ভুল 

জীবন তো মৃত্যুর উঠোন, ভাই-বোন আত্মার বিভেদ

সব এক হয়ে চলে আসে প্রথম সারিতে

আমার রক্তের রং আমাকে বিশ্বস্ত করে

অথবা সে চিন্তার পাহাড়, যা অন্নের অভিমুখ

প্রকাশিত করে, কখন যে শুরু হবে

দেহ তার কিছুই বোঝে না, ভাগ্যের ক্রীড়ণক নয়

এই দেখো জিহ্বা স্বাধীন, বাক্ও স্বতস্ফূর্ত 

শুধু আলোকে অসীম করে দাও, সহ্য করো

প্রতিবিম্ব তার, কলের লাঙল থেকে মেধার কলমদানি 

প্রযুক্তি আমার কাছে আদিমতা চায় প্রথমত



অর্জন 


আমি কোনও বস্তুনাম এ জিভে নেব না

দেহের ভেতরে যে অনন্তের খেলা, তরঙ্গসুলভ

তাকে প্রাকারের নিচে রেখে শাসন করব

কখনও কখনও তুমিও উদ্বায়ু একটা বিশ্বের মতো

ফুটে উঠবে আমারই নিয়ন্ত্রণে 

তুমি, জগতের সংযোগ সাধিকা

একমাত্র আত্মপরায়ণ আমাকে বিশ্বলগ্ন করেছ

তাই, তুমি সঙ্গে থাকবে আর অধীর নিয়োগপত্র হাতে

পরমার্থের গতিকে স্তব্ধ করবে ধূলায় ধূলায় 

উচ্চ ধীশক্তি ও আত্মসচেতন 

এক মানুষ, তাকে এক নির্জন নদীর মধ্যে রেখে

আমার এই হাওয়া মোরগের কারখানা 

হাওয়া বিষাদগ্রস্ত হলে

আমার কিছু যায় আসে না 

আমার নির্ণয় নিয়ে মর্তুকামী মানুষেরা নাচে গায়

উদাত্ত এ গ্রহবর্ম আঁটা শেখান স্বার্থের লোকজন 

ব্যাধিগ্রস্ত দৃষ্টিতে তোমাকে চায়

তুমি সাধন নিয়ন্ত্রা 

রক্ষিতা শব্দের 

স্বনাম অর্জন করে এসো


পাত্র


এ পাত্রে গোছানো আছে হিরণ্ময় আলোটি উজ্জ্বল 

বিশ্বাসে ও বীজ আলোর রক্ত পুড়িয়ে দিচ্ছে কোষ

এইখানে মরণ অভ্যাস আলোকিত মঞ্চের ওপর

দুপুর গড়িয়ে আসে, তবু সে প্রভাত হতে চায় সবিশেষ


অনন্ত শব্দের ক্ষোভ অভ্যাস ঝাঁকিয়ে দিতে চায় 

ধরে রাখি ফুলের প্রদীপ, প্রজ্জ্বলিত হাতে হাতে 

একা ফুল উৎসে টেনে নেয় সকারণ জীবন বিদ্বেষ 

শেকড় আলোকে টানে মাটির গভীরে, সেখানে উদ্ধার


কালো রাস্তা, ভালো রাস্তা, ছিল, আছে আছে

প্রকাশ্য সংগত সেই দিনের হিসাবে মেঘান্ধ আকাশ 


 একটি প্রেমের কবিতা

সুবীর সরকার

যুদ্ধের কবিতার পাশে বসে আমি সিগারেট 
                                                ধরাই
প্রেমের কবিতাকে আমি অভিসম্পাত করি
আমার দিকে এগিয়ে আসছে তোমার ক্লিভেজের
                                              তিল
তোমার ঠোঁট আমাকে টানছে
তোমার স্তনবৃন্তে আঙুল ছোঁয়াতে চাইছি
তবে কি কামড়ে দেব কানের লতি
নাভিতে মুখ রাখতে দেবে আমাকে
আমি বন্ধ কারখানার সামনে বেগুনি ব্যান্ডের
                                 ঘড়ি পরে দাঁড়িয়ে থাকবো
মথ ও প্রজাপতি নিয়ে সিরিয়াসলি ভাববো
আমার লোমহীন বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ছো তুমি
বিশ্বাস করো,সেক্স নয় সুড়সুড়ি পায় 
                                              আমার
ফুটো হয়ে যাওয়া কন্ডম পরে আমি সহবাস
                                               করি
সঙ্গমের পর অসম্ভব জল খাই
তুমি রাতপোশাকে নগ্নতা ঢাকো
আমি আকুলি বিকুলি নিয়ে 
আমি চিরায়ত ঘুম নিয়ে
পশুখাদ্যের বাজারে ঘুরে 
                               বেড়াই
হাত রাখি তোমার উজ্জ্বল ঘাড়ে
আর সমস্তটুকুর পাশে তুমি থাকো
জল কিংবা জলযান আমাদের আলোচ্য
                                  বিষয় নয়
তাই বিষণ্ন হই
আর মিছিলে মিছিলে ছয়লাপ হয়ে ওঠে 
                                         দিক ও দিগর

 বন্ধু

সঞ্জীব সেন


জানালাগুলো ডাকে না আয়

বিছানাগুলোও চুপচাপ শুয়ে

পাঁচ দিন আগেও ডেকেছিল তারা

সকাল সন্ধ্যায় দরজায় টোকা দেয়

একটা সুকোমল হাত

দূরে থাকা মানে দূরে রাখা নয়

একটা মনখারাপ জানালায় বসে

তাই দেখে গাছটির দুঃখ হয়

তার মন ভোলাতে নিচু হয়ে হাতটা বাড়িয়ে দেয় ।

গাছেরা জানে স্বপ্ন ধূসর হলে প্রকৃতি বন্ধুপাতায়।



 আমার কোনো গন্তব্য নেই

   শিপ্রা পাল।(লাভলী)
  
মাটিতে দাঁড়াও একবার———
যতোটা আকাশ দেখা যায়, তার চেয়েও প্রশস্ত গভীরে
খুঁজে পাবে অস্তিত্বের নীরব পদাবলী
সেখানে মিশে গেছে একটি কাব্যময় ফটিকের পাণ্ডুলিপি!!

হয়তো আমার মতো দেখবে না কেও——
সেই অনাদি থেকে অচেনার জোনাকি হয়ে খোঁজা
অথচ সবটা এবং সবটা-ই তুমি চিনেছো আমায়
যদি আয়নায় দেখতে প্রতিচ্ছবি, এক সমুদ্র নোনা জলে ডুবে যেতে!!

হেমন্ত সন্ধ্যায় বিষের সুখ কুড়াতে
যা বলার ছিলো, বলা হলো না 
তখন তোমার ভীষণ ব্যস্ততার অজুহাত, তখন আমার বাড়াবাড়ি জ্বর
বন্দী সহবাসে অভিশাপ আর কিছু সময় বাহিত সর্বনাশ!!

অপেক্ষারা নদী হতে পারে না——
কেবল-ই জমতে থাকে, আর হৃৎপিণ্ডের মরা চরে বালুকাভূমি
ধূ ধূ প্রান্তরে তুমি ছুটছো, না ছোঁয়ার অসীম দিগন্তে
সীমান্তে কাঁটাতার, আমার কোনো গন্তব্য নেই!!

 


জীবন যে-রকম
দীপঙ্কর দেবনাথ


এই সেই সময় আমি কোনো অন্ধকার গলির ভেতর কুয়াশার মতো ঢুকে যাই। 

তুমি গর্ভগৃহ ব-দ্বীপ। চরাচরে নতুন সভ্যতার নাম লেখাও।
তোমার সাথে আমার ঢের তফাৎ। তুমি এগিয়ে গেলে ভবিষ্যৎ!

আমি পূর্বজন্মে ফিরতে চাই আবার। আজকাল ঘরের ভেতর মাছ চাষ হয়। জীবন টিপকলের মতো, খোঁড়াতে থাকে। 

কি অজুহাত দেব আমি! আমার অসুখ দেবতার শরীরের মতো উজ্জ্বল। বরং তাকে যতদিন আয়ু সহ্য করতে বলি।

 যে মানুষ সচরাচর রাস্তা হাঁটতে পছন্দ করে না, হতে পারে সে বুকে ভর দিয়ে পৃথিবীর সব গন্তব্য খুঁজে যাচ্ছে।

 এভাবে অনেক দূর পিঠে সফলতা বিফলতা বয়ে যেতে যেতে সব শেষ হয়।  




শেষ দেখা

 সুবিনয় দাস 


  রাত তখন প্রায় ১২ টা। ট্রেনটা কোন স্টেশনে এসে দাঁড়াল সুবীর ঠিক বুঝে উঠতে পারছিল না। ক্লান্ত শরীর নিয়েই সে আপার বার্থ থেকে শুনতে পারছিল কাটনি বা সাতনা হবে। হঠাৎ সে ট্রেনের কোনাকোনি জানলা দিয়ে দেখতে পায়, অসংখ্য যাত্রীর ছোটাছুটি। কি হল? সে বুঝতে পারল না। নীচের বার্থ গুলিতে যারা ছিল, তারাও তীব্র বেগে বাইরে বেড়িয়ে গেল। ট্রেনে ওঠা হয়েছে তো সেই সকালে, পেটে একটি দানাও পরে নি। 

  মায়ানগরি মুম্বাইতে সুবীর গিয়েছিল কাজের সন্ধানে। বর্তমান বঙ্গভুমির এমনি হাল, যা কয়েক দশক ধরে চলে আসছে। বাংলার প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ বাড়ি থেকে কমপক্ষে একজন করে সদস্য জীবিকার সন্ধানে বঙ্গ বহির্ভূত এলাকায় পারি দেয়। সুবীরও তাদের মধ্যে একজন। মুম্বাইতে নির্মাণ শিল্পে শ্রমিকদের বেশ চাহিদা। কিন্তু সবকিছুর মধ্যে ছন্দপতন ঘটাল অজানা এক মারণ ভাইরাস। আক্রান্তের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন স্থানকে লাল-সবুজ-কমলা করা হল। মুম্বাই অতিদ্রুত লাল অঞ্চলের শিরোপা গ্রহন করল। সুবীরের মনে আছে লকডাউন না কি যেন একটা হরতালের মতো চালু হওয়াতে সমস্ত দোকানপাট, কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেল। প্রথমদিকে সে ভেবেছিল ‘এদেশে কতই না হরতাল হয়েছে, কতই না বন্ধ হয়েছে। এই বন্ধও কয়েকদিনের’। কিন্তু এই বন্ধও তো আর খুলে না। মালিক এক সপ্তাহ খাওয়াল, পরের তিন সপ্তাহে নিজের জমান টাকা ফুরাল। আলিপুদুয়ারের এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে সুবীরের অসুস্থ বৃদ্ধ বাবার ফোন আসে – ‘বাবা দিনকাল বেশি বালা না, আমি আর কয়দিন বাঁচুম জানি না? তর মুখটা দেহনের খুব ইচ্চা করতাচে রে’। সুবীর মাস ছয়েক আগে যখন মুম্বাইয়ের উদ্দ্যেশ্যে পারি দেয়, সে দেখেছিল বাবার শরীর ভাল নেই। বয়স হয়েছে। আজ যখন কাতারে কাতারে ঘরছাড়া জীবিকাসন্ধানী মানুষেরা ঘরে ফিরার ইচ্ছায় রাস্তায় নেমেছে, সেও তখন ক্ষুদা ক্লান্তি আর শুন্য পকেটকে সঙ্গী করে ট্রেনে উঠে পরেছে। ঘরে ফিরবে বলে। বাবার অপত্য আবদার পুরন করবে বলে। 

  একটুও কাল বিলম্ব না করেই সুবীর ক্লান্ত, ক্ষুদাপীড়িত দেহটাকে এক ঝটকায় কিছু শক্তি সঞ্চয় করে নিচে নেমে পরে। এক লহমায় পৌঁছে যায় ট্রেনের দরজায়। বাইরে তখন অগণিত যাত্রীর খাদ্য নিয়ে কাড়াকাড়ি, মারামারি। সুবীরও আগ-পিছু, ভাল-মন্দ না ভেবেই কারাকারি-মারামারিতে অনশগ্রহন করে। হাতে লাগল দশটি চিপসের প্যাকেটের একটি চেইন আর দুখানা কেকের প্যাকেট। খাদ্য সংগ্রহের সংগ্রামে থুঁতনিতে কখন যে কার হাত সজোরে এসে লাগল, সুবীর বুঝতে পারেনি। ট্রেনে ফিরে, বার্থে বসে মনে হল ঠোঁটটা কেটে গেছে। আরও দুদিনের যাত্রা। তারপর নিজ গ্রাম। আগামী দুদিন কেটেছিল এই দশখানা চিপসের প্যাকেট আর দুটি কেক দিয়েই। আলিপুরদুয়ারে ট্রেন সকাল পাঁচটা নাগাদ দাঁড়াবে। 

  তখনও ভোরের আলো ফোটেনি। ট্রেন তাদের নামিয়ে দিয়ে গৌহাটির উদ্দ্যেশ্যে চলে যাবে। দূরে দেখা যাচ্ছে পুলিশের কড়া নজরদারি। ট্রেনের সমস্ত কোচ থেকে এই জীবিকাসন্ধানী লৌহমানবরা ‘পরিযায়ী শ্রমিক’ শিরোপায় ভূষিত হয়ে লাইন দিয়ে নামছে। সুবীরের জানা ছিল বাইরের রাজ্য থেকে আগত এই ঘর ফেরৎ শ্রমিকদের চৌদ্দদিনের কোয়ারিন্টনে যেতে হয়। তারপর সব ঠিক থাকলে, বাড়িতে। আর সন্দেহ হলে অনিশ্চিতপুরের যাত্রা। 

  ‘কিন্তু, বাবা তো অসুস্থ। আমাকে দেখতে চায়!’         

সাতপাঁচ ভেবে সুবীর চালাকি করে। তাৎক্ষণিক বুদ্ধিতে সে কোচের ভিতর দিয়ে শেষের কোচটিতে পৌঁছে যায়। আলো আঁধারি অবস্থায় কোন ভাবে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে অন্ধকারে মিশে যায়। কোনক্রমে সে নিজ গ্রামে পৌছায়। তার ভাবনাই ছিল অসুস্থ বাবার মুখখানা দেখে সে নিজেই পুলিশের হাতে ধরা দিবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য! বাড়িতে পৌঁছানোর আগেই স্থানীয় ফাঁড়ির পুলিশের অতন্দ্র প্রহরায় সে ধরা পরে। নিমেশে তার সমস্ত আশা নিরাশার রুপ নেয়। সে চিৎকার করে কাঁদতে লাগল- 

 ‘একটি বার স্যার, একটি বার শুধু। বাবার মুখখানা দেখেই ফিরে আসব’।   

নিয়মের কাছে পুলিশেরও হাত-পা বাঁধা-

 ‘আপনি রেড জোন থেকে ফিরে এসেছেন, আমরা এত বড় রিস্ক নিতে পারিনা, বোঝার চেষ্টা করুন’। 

  সুবীরকে কোয়ারিন্টনে পাঠান হয়। বাবার সাথে দেখা হয় নি। বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা জানতে পেরেছিল সুবীর ফিরেছে। বাবা দেখল সুবীর তার চোখের সামনে এসে বলছে- ‘বাবা আমি ফিরছি, এই দেহো, আমি, আমি তোমার সুবীর’। সকাল আটটা নাগাদ বয়স্ক বাবা সুবীর সুবীর বলে হঠাৎ নিস্তব্দ হয়ে গেল। না ফিরার দেশে তিনি পারি দিয়েছেন। মরদেহ উঠানের মাঝে রাখা হল। সুবীর তখনও কয়েক গজ দূরে দাঁড়িয়ে, পাশে দুজন পুলিশকর্মী। নিস্তব্দ, নিথর সুবীরের চোখ থেকে অঝোরে জল বয়ে যায়। মুখে শুধু একটিই কথা-

  ‘বাবা শেষ দেখাটা! 

   শেষ দেখাটা! 

   শেষ দেখাটা আর হল না! 

   ক্ষমা কর আমায়’।  


 নামহীন লেখাগুলি

দেবাশিস মুখোপাধ্যায়

১.
রাত্রির জন্য কিছু ফেলে রেখেছি । 
পুড়ে যাওয়া একটি সাময়িক ব্যাপার। ছাই কত জন্ম দেয়। বিশ্বাস করো। শেষ থেকেই শুরু হয়। 
২.
কাউকে ডাকতে হয় না কোনোদিন। শুধু অপেক্ষায় থাকো। 
উপেক্ষা করো ভ্রুকুটি। দৃঢ় পায়ে
তারা আসছে। একটু সঙ্গ দিলে সংঘ গড়ে ওঠে। 

৩.
ধ্যানের ভিতর টুকরো টুকরো দৃশ্য। 
শান্ত কখন অশান্ত। ক্ষোভগুলি কখন ক্রোধ। এক অবিশ্রান্ত মিছিল। মিথ আর মিথ্যা ভাঙবার
পর অনন্ত সত্যের দিকে ধাবমান। 
মানুষের কাছে যেতে ইচ্ছে জাগায়

৪.
আমি ঘুমিয়ে গেলে তুমি দেখতেই
থাকো। স্বপ্ন চোখে আঁকা। এই অসুখের পৃথিবীতে ভালো কিছু
ভাবনা জড়ো হয়। খুব করে আঁকড়ে ধরো। ধরিত্রীর গভীরে সুপ্ত
আনন্দ। স্রোতে ফেরো

 আলো নেভার আগে

----------------------
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়



চৌমাথায় পাঁচমাথায় যে ভাষায় চিৎকার চলছে
একশ বছর আগে তার মানে করে 
সকলের দুয়ারে দুয়ারে পৌঁছে দেওয়া হয়ে গেছে
জানলাহীন ঘরের বাসিন্দাদের
চোখের আলো কম থাকায় সে ভাষা উদ্ধার হয় নি

এখন তো দোকান বন্ধ হওয়ার সময়
খরিদ্দারকে কত সময় দেওয়া যায় ?
না কেনার ভয় দেখালেও কিছু যায় আসে না
সারাদিনে যা হওয়ার হয়ে গেছে
এখন পুরো দোকানটা নিয়ে নিতে চাইলেও 
কেউ ফিরেও তাকাবে না

আর কিছুক্ষণ পরেই বাজারের সব আলো নিভে যাবে ।

 শূন্য 


অমিত দে



কথার পিঠে কথা এলেও পরের কথাটি সহজ নয়।

যদি বলি আত্মহত্যা, তুমি বলবে মহাপাপ —অথচ সে 

এক সুতীব্র হাহাকার। যদি বলি পরাজয়, তুমি বলবে

বিজিত —সে এক মরুভূমির তৃষ্ণা। যদি বলি মগ্ন, তুমি বলবে 

চিরকালীন —কিন্তু সেও তো আলো আবার অন্ধকার। 


যদি বলি শূন্য!

তুমি বলবে অপার।


অথচ তারও আছে বৃত্তের অধিকার। 


 

প্রনব রুদ্রর কবিতা (গুচ্ছ কবিতা)

অরণ্যে ধূসর ফুল


জীবন এমন এক অপঠিত বই যার
ইচ্ছে এবং মূল চরিত্র প্রায়ই সব জানা 
তথাপি তার সব বাঁকগুলো বোঝা যায় না 
হিসাব বিভাজন সমীকরণ মেলেই না।

ঘাস মাড়িয়ে চলে যায় জীবন্ত কষ্টগুলো 
ঘাস জুড়ে থাকে ছোটদের, ছোট প্রাণীদের
জীবন নাড়িয়ে যাওয়া অসংখ্য ডালপালা।

আমার সমস্ত দেহে চেনাশোনা কত ভুল
ভালোবাসা নয়, ভুল পাপে বাড়ে কষ্টদল।
উত্তরণ পথ একদম পরিচিত নয়
আস্তে ধীরে খুলে যাচ্ছে সম্পর্কের প্রচলন। 

ছেড়ে দিয়েই ভালো থাকতে শিখে যাচ্ছে মন 
জীবন তোমাকে আকাশ থেকে পাখির চোখে
এক পলকে পুরো দেখার বড়ো শখ হয়। 


###


সুখ নেই সংসারে 

রোদের গায়ে রোদ না জ্বললেও মিথ্যে সত্য শুষে নিতে পারে।
সম্পর্কের অভিমানী শীত কিছু উষ্ণতা গোপনে বুকে রাখে
বিকেলের নরম বারান্দা পাল্টায় আগ্রহ, নির্বিকার মন।

সত্য লুকানোতে বিষে জ্বলে যাচ্ছে সংসার যাপনের মিষ্টতা
অন্তর তো জানে নিজের ও অন্যের সততা কতটা ফুলেল।

দিন দিন ফুল ফুটে সুখকে বিস্বাদ করে ঝড়ে যায় সব
কুসুম বাসনা জীবনের প্রেম কাউকেই বিশ্বাস করে না
আয়ু শেষ করা মিথ্যা আশ্চর্যরকম প্রভাব খাটায় পথে।

কিছু মানুষ বিজ্ঞান জ্ঞানে তর্ক করে না, করে মুর্খামি নিয়ে
ঈশ্বর জানেন কত ব্যথা বুকে শুয়ে থাকে আমার বিছানা।

সুখ মেয়েটির নাম যদি হয়, এখন বুঝতে পারি তবে
মনোরোগ মনেরই তার, মেয়ে সম্পর্কে মিথ্যই বড়ো গল্প।

যারা পুঁতে দিয়েছে মাকাল ফুলটি শুধুই প্রতারণা জানে,
একদিন আপনত্ব ভুলে জনশুন্য ঘরে বায়ুই তাদের
নির্মম ব্যঙ্গতার যাবতীয় যন্ত্রণা দিয়ে পাগল বানাবে। 

###


ঝড়ো দুপুর 

খাবার যেন উগ্ লানো বমি, পাতা শূন্য গাছ ফলহীন;
পেছন ফিরে আছে শীতল দুপুর, হাতে রক্তদাগ!
সমস্ত পান্ডুলিপি প্রেমিকার ঋতুকালীন লাল
মিথ্যে আদতে বাড়তে থাকা মাকড়সার জাল।

নানাবিধ অপূর্ণতায় ঘরে ঝুলকালি
নুন জীবনে ভাঙা একাধিক শুন্যতা
কোনটা যে মৃত্যুর সহজ উপায়- দড়ি না বিষ?
কোনটা বাঁচার বীজ- ভালোবাসা না প্রতারণা?

দৃশ্যত্ব আড়ালের ঝড় চোখের মাপকে বিদেহী
নিপুণ নির্মাণে বিখ্যাত হবো বলে আয়না দেখি না আর 



 দেবীপক্ষ



স্বরূপ সান‍্যাল

প্রত‍্যাশিত দেবীপক্ষের চাঁদ
অতিবৃষ্টি প্রবল ঝড়
বন‍্যা মহামারী ক্ষুধা 
সবকে উপেক্ষা ক'রে
শারদ আকাশে সোনালী ভোরে আগমনী  সুর।

 ঝড়

 নীপবীথি ভৌমিক



  মাঝে মাঝে ঝড় ওঠা ভালো!
    খুলে যায় মুখ আর মুখোশের দূরত্ব     অবলীলাক্রমে

    এই যে ভরা শ্রাবণ এখন,
   অথচ অকাল  বৈশাখী  আকাশ এসে থমকে দাঁড়ায়   চৌকাঠ থেকে চৌকাঠে!

      ঝড় উঠবে জানি এবার। প্রবল ঝড়।
  উলটে পালটে যাবে সব মৃত্যুমুখী হাহাকার
    ঘরদোর ভাসিয়ে...

      মাঝে মাঝে ঝড় ওঠা ভালো,
           এই শ্রাবণেও ;
   সেতু ভেঙে যাবে ছায়া থেকে ছায়ার অবয়বে
       ‌‌  দীর্ঘ বিরতিহীন বর্ষা নিয়ে ।

      ‌‌তবুও কি আর ছেঁড়া ঘর সেলাই করা যায়
    বলো, মেঘের সুতো দিয়ে !

 এ যুগের কালী

সুকান্ত গোস্বামী 




 পৃথিবী হয়তো ভুলে গেছে তোমার আশীর্বাদ। 
হয়তো  মানুষও ভুলে গেছে ,তোমার অহংকার। 
মানুষ মনে রাখে না সৃষ্টি- ধ্বংস, 
সে শুধু বোঝে আপন স্বত্ব।

তবে তুমি কেন দিতে চাও সীমাহীন প্রেম? 
কেন ফিরে যেতে চাও ধরা তলে! 
ভুলেছো কী অতীত তুমি? 
পাষন্ড শিকারীদের দল-
কিভাবে খুবলে খেয়েছে তোমার জাতি -মান- ধন। 
আক্রমণ করেছে তোমার শরীরে লক্ষ লক্ষ  পিপাসু 
সৈনেরদল।

এবার তুমি থামো। 
বলো আর নয় প্রেম-ভালোবাসা-স্নেহ
দৃপ্ত কন্ঠে খড়্গ হাতে বলো -ওরে চিল, শকুন
আয় তোরা , 
বস্ত্রহীন কালীর জন্ম দেখ্ যুুগে যুগে । 
এসো আমার সমস্ত শরীরের মোহময় রুপের
কোমলতাকে খেয়ে ফেলা ধার্মিক । 
তোমাদের পুরুষাঙ্গ কেটেই বানাবো
  আমার বিজয়মালা। 

বদল 

প্রসাদ সিং




এখানে ঈশ্বর পাল্টে যায় দানবাক্সের আয়তনে 
ভিআইপি দর্শন , সাধারণ দর্শন 
মাঝেমধ্যে দর্শনের দর্শনটাই বুঝি না 

আসলে ভক্তি বা বিশ্বাস সব প্রয়োজন মাফিক 
প্রয়োজন শেষে ঈশ্বরের দৌড় ঠাকুর ঘর পর্যন্তই 
তখন মানুষ ডগ আর গড থিয়োরিতে ব্যস্ত 

ঈশ্বর দেখা দিতে ভয় পান খুব 
কারণ মানুষ যাকে জেনে যায় তাকে ভয় করে না
মানুষ খুব বেশীরকম বিস্মৃতিপ্রিয় 

ঈশ্বর ঠিক একটা মোমবাতির মতো 
অন্ধকারে বসে আলোর আভাস দেন 
আর তার পদতলের অন্ধকারে মানুষের বাস 

 কাঙাল হয়ে যাই  

পার্থ সারথি চক্রবর্তী 




অক্ষরগুলোকে বাগে আনতে চাইছি,
     সেই ভোরবেলা থেকে, প্রাণপণে
কুণ্ডলী পাকিয়ে ধোঁয়ার মত উড়ে যাচ্ছে 
     মিলিয়ে যাচ্ছে বাতাসে, নিমেষে।
বাইপাসের ধারে ঘাঁটি গেড়েছি
     হাতের মুঠোয় পুরে নেব বলে।

কুয়াশা ঘেরা রাস্তায় একাকী গাছ
আমার সঙ্গী হলো নিঃস্বার্থভাবে।
পাতা, ডালপালা প্রসারিত করল।
প্রবল ঢেউ খেলে গেল আমার হৃদয়ে

ঋণমুক্ত হবার জন্য কাঙাল হয়ে যাই।

ভোর থেকে সকাল, এই সময়টায় 
এক নতুন রূপ পাই, শিহরিত হই;
চোখের জলে তোমার পাতা ধুইয়ে দেই-
চোখের জল ফেলেই আমি কাঙাল হয়ে যাই।

শিউলির গন্ধে বুঁদ হয়ে, আকাশে মুখ গুজি।

 ছায়াবৃত্তে জেগেছে কুসুম 



উত্তম চৌধুরী 

ছায়াবৃত্তে জেগেছে কুসুম 
আমিও জেগে উঠতে চাই, 
আমাদের অতিপ্রিয় ঘুম 
ছোট্ট হতে হতে বনসাই।

যে আলোকে অন্ধকার আসে
আমি তার প্রথম দোসর,
অপসূর অনুসূর খেলা 
চোখ মেলে দেখেন ঈশ্বর।

জলশব্দ বায়ুশব্দে লীন
ডান বাম বৃত্ত সমতল
চোখ মুখ আবর্তিত মুখে,
উল্কাপাতে আলোকিত নদী
পারম্পর্য ধরে ঘণ্টা পল
জানালায় ঝোলে অন্তহীন।