Sunday, July 26, 2020

কবিতা করিডোর , জুলাই সংখ্যা , ২০২০

কবিতা করিডোর , জুলাই সংখ্যা , ২০২০
প্রচ্ছদ : মনতোষ বসাক 
সম্পাদক :শুভঙ্কর পাল 
সহ সম্পাদক : সব্যসাচী ঘোষ 
উত্তর -পূর্বাঞ্চল বিভাগীয় সম্পাদক : রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ 
বাংলাদেশ বিভাগীয় সম্পাদক : ফারহানা রহমান 

যোগাযোগ : শুভঙ্কর পাল 
বারবিশা , আলিপুরদুয়ার 
৭৩৬২০৭
ইমেল : kabitacorridoor@gmail.com 


সম্পাদকীয় : 
এ এক কঠিন দুঃসহ সময় । মানুষ প্রতিমুহূর্তেই এক অস্তিত্বহীনতায় দিন যাপন করছেন । তবুও কিছু নতুনের আশায় সে সৃষ্টি করে যায় । আসলে তার এই সৃষ্টিশীল মানসিকতা তাঁকে বাঁচার রসদ জোগায় । আমরা বেঁচে থাকি নতুনের ভোরের খোঁজে । সুদিন একদিন আসবেই আসবে । এই বিশ্বাসের উপর আস্থা রেখেই জুলাই সংখ্যা প্রকাশ । সবাই মনকে শক্ত রাখুন , সচেতন থাকুন , স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন । 

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য -প্রকাশিত সমস্ত লেখার দায় লেখকের । সম্পাদক কোন ভাবেই দায়ী নয় । 
॥ ধন্যবাদ ॥ 





কী চাই আমার ? 
 সুমন মল্লিক

কী চাই আমার ?
অন্ধকার আর আগুনের মাঝে মায়াজল ঢেলে ঢেলে
জাগাই বসন্ত পঞ্চমীর শিহরণ, যার খামখেয়ালিতে
মিশে আছে গভীর রাতের চন্দ্রদর্শন আর মধুমুখাগ্নি ৷
ঠিক এভাবেই কি ফিরে পেতে চাই তোমাকে ?
পুড়ে যাওয়া পাখিরা উড়ে আসে আবার, নিয়ে আসে
নিলামে উঠে যাওয়া বিছানার গোপন ইতিহাস – আমি
দিব্য উড়ান ফিরে পাই, আমি আকাশের বুকে লিখি
জটিল রসায়নের সূত্র আর তারই পাশে লিখে রাখি
ভুল সূত্রের হিসেব-নিকেশ ...  আসলে বিভাব খুলে রাখি
নিজের বিলয়ে, দৃশ্যে সাজাই অদৃশ্যের মৌন মৌতাত ৷
কেন করি এসব ? তোমাকে ফিরে পাবার জন্যই কি ?

কী চাই আমার ?
পৃথিবী ঘুমোবার পর ঘুমের মশানে একচিলতে আগুন ...
আগুনের ভেতর আগুন ... তার ভেতর আরও আগুন ...
আর শেষে তছনছ করা অসংখ্য জাদুমৈথুনে তোমার
                                     একমুহূর্ত পদার্পণ ৷

ব্যাস, এটুকুই তো চাই আমার, এতটুকুই তো বাসনা,
বাড়তি যা কিছু বলি বা লিখি সবই তো আসলে মায়াঘোর ৷





তোমার বুকে...

তাপস দাস 

খানিকটা আমি মুখ থুবড়ে পড়ে আছি তোমার বুকে
মানে স্তনের অনেকটা নীচে হাড়গুলো পেড়িয়ে
কোন এক আলো আধারিতে

তুমি কথা বললে আমার গন্ধ বেড়িয়ে আসে
যে গন্ধ আমি সংগ্রহ করেছিলাম
সারাদিন বাজার করে ফেরা বাবার দেহ থেকে
আমার বাড়ির পেছনে এসে আত্মসমর্পণ করা
সব বেদনা থেকে

ওই টুকরো আমিটার যত্ন নিও
মৃত্যু মূহুর্তে ঝরে পড়া হলুদ পাতাগুলো না হয় দিয়ে যাব
তোমাকে…



উদয় সাহার কবিতা 
সাবওয়ে থেকে সরে এসে  

সেলাই ফোঁড়ের কাজটা শেষ করে জানালার গলা ধরে দাঁড়াই 
অথবা রোদ নিয়ে বসি মুড়ির বাটিতে 

পাপোশ পেরিয়ে যাওয়া অংকে পানের পিক, থুতু ;
বসার ঘরে আল্যার্জি 

শাকের পসরার কাছে যাই। বলি, 
কুলেখাড়া পাতা আছে ?      
লাওয়ারিশ কাচপোকার মত উড়ে আসে 
ছোট মাছের ভাবনা ... 

ওহে সাধুখাঁ, একটা স্যাঁতসেঁতে সাব-ওয়ের পাশে 
লিখে রাখি তোমার লাবণ্য 

জিওলমাছটা বঁটির দাঁতে এলে বুঝতে পারি 
কত সুন্দর তোমার খোলা চুল 
আর এই শ্রাবুনো মেঘ           






দ‍্য সার্কেল অব্ লাইফ
জ‍্যোতির্ময় মুখোপাধ্যায়


নরক পেরিয়েই স্বর্গে যেতে হয়
জানিয়েছিলেন দান্তে
জানিয়েছিলেন ব‍্যাসদেব
একটা নিখুঁত সার্কেল
অতিক্রম করতে হয় আমাদের প্রত‍্যেককেই
মৃত্যুর পর কী আছে, এটা না জেনেও
এই জীবনেই এরকম অসংখ্য
সমকেন্দ্রিক বৃত্তের মধ‍্যে
কাটাতে হয় আমাদের পুরো জীবন
যার পরিধি ধরে হেঁটে চলি আমি একা
এবং কেন্দ্রে
নির্ভার, পূর্ণ এক আমি

পূর্ণস্য পূর্ণমাদায় পূর্ণমেবাবশিষ্যতে










 কুয়োর অন্ধকার
সেলিম মণ্ডল

যদি কুয়ো থেকে না বেরোতে পারেন, পৃথিবী সম্পর্কে কী ধারণা পাবেন? পৃথিবী ন্যাসপাতি নয়, ন্যাসপাতির মতো। কামড়ে খাব বলেই খেয়ে নেওয়া যাবে না। ঝকঝকে দাঁত দিয়ে বড়োজোর মনোমুগ্ধকর নকল হাসি দেওয়া যেতে পারে। 

পুকুর কেটে সাঁতার কাটবে ভেবে কেটে ফেলেছ কুয়ো। বর্ষার আগেই শুরু হয়েছে গোঁ গোঁ। সোনালী খসখসে পিঠে আদর করা হাতগুলো জলে নিজছায়া দেখে পালিয়েছে। এখন নিজেকে আদর করার জন্য একমাত্র পা অবলম্বন। 

দলবদ্ধ ব্যাঙ, কুয়োর মধ্যে বসবাস শুরু করতে থাকল। নিজের একটা রাষ্ট্র পেয়েছে ভেবে মহানন্দে কাটাতে থাকল দিন। প্রতিদিন নিজেদের মুখ দেখতে দেখতে তারা ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। একদিন সর্দার ভাবল, সবাই মিলে না হোক; অন্তত নিজে পালাবে। কিন্তু কিছুতেই সফল হল না। তারপর কুয়োতে কাঁটাতার দিয়ে নোটিশ টাঙিয়ে দিল, প্রবেশ নিষেধ। 

কারো আর যাতায়াত নেই। একটা পরিত্যক্ত কুয়ো পড়ে থাকতে থাকতে ভরে উঠল আবর্জনায়। তারপর বর্ষা এল। ভেসে উঠল আরও অজস্র ব্যাঙ। সোনালী নয়, কুচকুচে কালো।





একহাত শোক প্রস্তাব

উদয়ার্ণব বন্দ্যোপাধ্যায় 



১.
শান্ত স্বভাবের মানুষ উঠে আসছে জলাভূমি থেকে। হাত ও পায়ের নখ খসে গেছে । খসে গেছে জিভ। অথচ চোখের ভেতর জ্বালিয়ে রেখেছে সুতীব্র ধিক্কার।

২.
আমাদের যাপনের মধ্যে একটা জিনিস খুব লক্ষণীয় ছিল, তুমি যখন মানুষের নীতি বোধ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে, আমার হাতে থাকতো একটা ভাঙা আয়না।





ভালোবাসা
নাফিসা মিদ্যা


কখনো ফেনিয়ে ওঠে কখনো থিতিয়ে যায়
ভালোবাসার পথ ঘাট 
সেদিন হঠাৎ ঘর খুঁজে 
দশটা পাঁচটার চাকরি
দেড় কাঠা ছাদেই ডানা মেলার আকাশ।
জানলার বৃষ্টিতে মেঘালয় হারিয়ে গেলে
আবার আকাশ খোঁজে
বহুদিনের জ্বর ছেড়ে
মেঘেদের পথ ধরে





স্নানবিষয়ক 
নীলাব্জ চক্রবর্তী



যে একটা রঙ। ক্রমে একটার পর একটা মনমরা কাগজ। ভাঙছে। দেখি এক পড়ে যাওয়া ঋতু। ভাল আছি এই টুকরো টুকরো দিন। মানডে ব্লুজ। এবং ফাঁপা সিনট্যাক্স। এবং নির্বাসনের ভেতর আমি তার ভাষা। একটা স্কেল-চেঞ্জিং দুপুর। ঘুমের টেক্সচার কত জরুরী হয়ে উঠল। ব্লাশ করল। কাঁচের গভীর দিয়ে চলে যাওয়া একটি নাম। পাথর সাজিয়ে রেখেছে। অবপথ। ছায়া ও মুকুরের পরে যে শ্রম। সময় ভেবেছে। শুধু ক্যামেরা এলেই আমাদের কন্টিন্যুইটির কথা মনে পড়ে। একটা কাঠের স্মৃতি পর্যন্ত এই আঙুল। গতকালকের ঠিক এইসময়ের স্নানবিষয়ক কবিতা আজকেও একইরকম ভেজা ভেজা হয়ে...




শতানীক রায়ের কবিতা 
নিয়মমাফিক এই পথে…


বাবাকে প্রতিদিন বলি— ঘুমিয়ে পড়ো৷ ঘুমোনো ছাড়া আর কিছু নেই। যুদ্ধ হয়েছিল অনর্গল। এই ঘাসকে অযথা ভুলেছিল কতজন। কতজনকে কাকের গল্প বলতে হয়েছিল। পাখির ডানাভাঙা কবিতা। ঘুমিয়ে পড়তে হবে— মাকেও একদিন বললাম। ক্রিয়া থেকে ক্রিয়াহীনতা একটি আকাশ। আকাশে ভেসে থাকা মানুষ। তারা কি পদ্ম হয়েছে আজ। ভুলে যাওয়া ঘর। ঠিকানাহীনতা। কোনো কাগজের হয় না এমন শরীর হোক আমাদের। আমাদের জন্য কত কিছু অপেক্ষা করে আছে। শুধু ঘাস শুনেছে আমাদের গল্প। কখন অতল না পেয়ে সাদা ডানা মেলা পাখি হয়েছিল সে। সব সেই যুদ্ধের মাঠ থেকে ভেসে। ভুলে গেছি এখনও মানব থেকে যায়। ভুলে গেছি ঘাসের স্পর্শে শস্যশ্যামল মানুষ পুনরায় বাড়ি খুঁজে পায়।       


ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কতগুলো বছর কেটে গেল। টের পেতে ভুলে গেছি। আদৌ আছি কিনা এও এক অজানায় পাড়ি দেওয়ার মতো। ছোটোবেলায় যার কোনো পক্ষীরাজ ছিল না সেরকম দিনগুলোতে যদি মাংসের ঘোড়া হয়ে আসে কেউ। সমগ্র তখনই শুরু। এই মতো সমগ্রের কোনো অতীত ছিল না। মনে হওয়াও কি তেমন ছিল? কোনো এক জীবনে কতগুলো বছর কাটিয়ে ছিলাম। জলছবিও এখন আর প্রতিবিম্ব দেখায় না। স্তরীকরণ তাহলে কীসের। কী নিয়ে তবে টানাপোড়েন? রোদজলের সরু রাস্তাটাই থাকে। কোনো এক বাড়ি থেকে বেরিয়ে ফেরার পথ। নির্জনতা। সরু পথটাই থাকে। যেটা এক-একটা সময় একটু বেশি-ই সরু হয়ে যায়।


যেখানে শুধু সংকেত লক্ষ করি। ভঙ্গিমায় যেখানে শুরু ও শেষ। সেইসব অজগরের দেশ মনে পড়ে। ভাষাহীন রোগ। আত্মজীবনীতে ডুবে যাওয়া। শ্রম অথবা বিন্যাসের রাজনীতি। কাকে বলব এত কথা। নিঃশব্দ প্রার্থনায় কে ডুবে গিয়ে উঠে আসে। আমাকেই অনেক বিভাজিত হতে হয়। অনেক শ্রম ও স্বপ্নের জাল কেটে এগোতে গিয়ে ছেলেবেলা নয়তো যা কিছু গাছের ফল হিসেবে সুন্দর ছিল যা কিছু ছিল একাই সুন্দর। শোভিত গানের দেশের মানুষের মতো স্রোত ভাঙতে ভুলে গিয়ে কোনো এক নগরে প্রবেশ করা। আর সেখান থেকেই এত সব আলোচনা আর আয়োজন মিলেমিশে গল্প আসে।
অনুগল্প 
দুর্ঘটনা 
বাপ্পাদিত্য জানা 




রাগ হলেই মনালি বাপের বাড়ি যায়। রাগ করে গেলেই অনিলের কোনও না কোনও দুর্ঘটনা ঘটবেই।
    একবার প্রচন্ড জ্বর। ডাক্তার ডাকতে হয়েছিল। মনালির খারাপ লেগেছিল। 
     একবার রাস্তা পার হতে গিয়ে অটোর পিছনের দিকে কাণায় লেগেছিল। ব্যথা ছিল অনেক দিন। মনালি গিয়ে গরম সেঁক দিয়ে সারিয়ে তুলেছিল।
    এবার কি হবে কে জানে! 
     ক'দিন গেলেই রাগ কমে যায় মনালির। তখন অনিলের জন্য মায়া হয়। আর যাই হোক মানুষটাতো খারাপ না।আমায় বিশ্বাস করে। কুকর্ম নেই।সময় দেয় কম কিন্তু তাচ্ছিল্য নেই। মনালি মনে মনে ভাবে। তবু মাঝে মধ্যে রাগ হয়ে যায়। 
    
     মনালির মনটা আজ ভালো লাগছে না। সাত সকালেই উঠোনে ডাকাডাকি করছে কাক। 
    বাড়ি ফিরবে। 
     ফোন করল। রিং হচ্ছে। রিসিভ হচ্ছে না। 





ব্যালাড
সুবীর সরকার

জন্মদিনের পোশাক পরে হাসতে হাসতে আমার
                         কবিতায় ঢুকে পড়লে তুমি
এরপর থেকে অর্গান বেজেই চলছে
করা যেন লিখতে শুরু করেছে স্টোরি অফ 
                                           সেগুনবাগিচা
পাটচাষী পানশালায় ঢুকলে ঝুপ করে বিকেল
                                              ফুরিয়ে যায়
আমার কবিতায় তুমি আছো
আমার কবিতায় একটা দশ বাই বারো ফুটের
                                          ঘর ঢুকে পড়ে
ঢুকে পড়ে কাঠের জানালা, বৃষ্টির 
                                                ম্যাজিক
ছবি আঁকছে মরা ইঁদুরের চোখ
ভরা বাজারের আখ্যান লিখি
মুখস্থবিদ্যার মত এই জীবন
চোরা ঢেকুরের মত এই জীবন
ঘুম ভাঙলেই আমাকে তাড়া করবে                                                       বারোকোদালীর রাস্তা
আমার দিকে ছুটতে শুরু করবে শিকারীলাইনের
                                                    হাতি
খ্যাতি আসলে দুরারোগ্য অসুখের ডাক নাম
হালকা কাশি নিয়ে খাসা কেটে যাচ্ছে
                                              জীবন
তেঁতুলগাছের নিচে আবিষ্কার করি স্তব্ধতা
স্তব্ধতার পাশে পেইনকিলার
কচু পাতার জল চেটে খাই আমি
আগুনে পুড়িয়ে ফেলি দুই হাত
তুমি ঢুকে পড়ছো সাংঘাতিকভাবে আমার
                                               কবিতায়
মাঝে মাঝে শূন্যতা ঢুকে পড়ছে আমার
                                           কবিতায়
এখন কর্কট রাশির মেয়েরা নাচ করবে
আমাদেরকে সরে যেতে হবে সাইলেন্স জোনের
                                                   দিকে




কাঁটাতার 
আশিস গোস্বামী

গৃহনাম স্মারকে রাত জেগে বসে থাকা মেঘ।
মেঘের পায়ে না ছিল পায়চারি 
না আকরিত ধুলিয়া যামিনী 

জমে যাওয়া ডাকবাক্স
এক নদী নৌপার চৌপার
বিশ ঘোড়া বার্ধক্যে
দ্বারভাঙা অভ্যাসগুলো

তো বাপেরও জন্ম হয় বাপান্তে
তিনকাল ছলাৎ কাহিনী 
মোহরের সপ্ত মুদারম
            গোধূলি ঝলক ঝানানা

এখানেই ছিল উথালি হাইওয়ে
দূর জংশনে সমবেত তালি
পিসি হেঁটে যায়
ভ্যানিটি ব্যাগ 
দোল দোলা
আর একটা আনমনা কাঁটাতার


মনমাঝি রে
সোমা সাহা পোদ্দার

জীবন গাঁথা নদীর বুকে, আর এই নৌকাজলের গন্ধেই জরিয়ে আছে দিনলিপি ।
নদীগর্ভে লীন হতে থাকে সুখে মোরা ঘর দুয়ার। পাহাড়ি ঢলে লেগে আছে বিপদ সংকেত।
ঘন বর্ষায় ভাঙন অনিবার্য হয়ে পরে। এই  ভাঙ্গা গড়াতেই বার বার পাল্টে যাচ্ছে বসবাসের ঠিকানা।
কিন্তু প্রবল জলের টানে, রঙিন পালতোলা নৌকা হারানো মাঝির মনের খবর কেউ রাখে না।
অথচ এই মাঝি ভাটিয়ালি গানে মনের মানুষকে মিলিয়ে দেয়।
হাসির ওপারে হাসি ছড়িয়ে ভোর খুলছে প্রতিবেশির দুয়ার । দাদু -ঠাকুমাদের এ বাড়ি সে বাড়ির
সাথে দেওয়া নেওয়া হয় প্রাতিদিনের বেঁচে থাকা । ছোটোদের খেলার উঠোন ছড়িয়ে পরে
পাড়ার উঠোনে। কিন্তু উত্তাল ঢেউ লিখে যায় এ-সবকিছুর-ই পরিবর্তনের গল্প।
নদীর বাড়ন্ত যৌবন বয়-  নিদারুন ভাঙ্গনে ।
স্বজন হারা দুপুর আশ্রয় খুঁজে -  দুপারের শূন্য জনপদ পেরিয়ে ।
মাঝিহীন নৌকার মতো ঠোকা খাচ্ছে পুনর্বাসন । অপরদিকে নৌকাহীন মাঝি তার ঠিকানায়
ভাঙ্গনের নিঃসঙ্গতা ভাসিয়ে দেয় ---
“একা রাত বাঁকা চাঁদ লাগেনা ভালো রে আর”
ঘর ছাড়া রাত শিশুদের মায়াবি মুখে বাড়ছে খিদের ছাপ। নিজেস্ব দেশ অথচ নিজ দেশেই
দূর সম্পর্কের কারও আসা যাওয়ার মতো যাপন । ঝুপরি থেকে বেরোতে চায়  বানভাসী
অভাবী সংসার । ফিরতে চায় আগের ঘরে,  কিন্তু ঘর ! কাকে বলবো যদি সেটাই না থাকে।
এভাবেই ভিটে বাড়ির ডোর ছিঁড়ে স্বপ্নগুলো তলিয়ে যায় নিরুদেশে ।
তবু, মাঝি ভাঙ্গনের ওপারেও ছুটবে আজীবন। নদী আবার নেমে আসবে সাধারন মানুষের হয়ে।
মাঝি ফিরে পাবে তার সঙ্গীকে । নৌকোয় পারাপার হবে দিন,রাতের শব্দ ছাপিয়ে ভাটিয়ালি সুর।
এই দিন রাতের অন্তরালে নদীকথায় এগিয়ে যাবে মন মাঝি।




অমরত্ব
নির্মাল্য ঘোষ 

বৃষ্টি ছুঁয়ে যায় যেগুলি -
আমি পেছন থেকে সংগ্রহ করি...
একটা হতাশা আঁকার ট্যাটু খুঁজে চলি...
পাই না...
তুমি সব নারীতেই প্রাণ ঢালো..
আমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখি...
মাঝে মাঝে স্বপ্ন মনে হয়..
যদিও ঘুমের মধ্যে জেগে থাকতে পারি  
এখন..
অমরত্বের আশায়...
তবুও তোমার কবিতা লিখতে বসলে 
এখনও  প্রেম হয়ে যাবে...

কাজী সাহেব ও নজরুল     
স্বপন রায়

কে বাসিনী না জেনেই আস্তে গড়া বিয়োগে এক যোগের নিয়মে ঢুকে পড়া এই H2O
স্ট্রিং-এ পালতোলা হাওয়াই
দ্বীপ ভাবলে দ্বীপ
বা চপ্পল
যখন এক চায়ের গমন নীতি খসে পড়ল অম্বুজ প্রিন্টিং মেশিনে
জল-ই-জল এই জলবাহারে প্যাঁচানো
সেও কী চিবুকের তিলে
ছিল ঢুঁ মারার অভ্যাস,ছিল ফ্লুয়ের বাসিন্দা
সারাক্ষণ জ্বর
সারাদিন জল
সারারাত সাগরে ভেসে যাওয়া চুলের বিকল্প সেও কী
রাতে পোহায়
দিনে জুতোর ফিতে বাঁধার সময় গেয়ে ওঠে দ্বীপ’কে, চারুলতায়

কাজী সাহেব জল শুনছেন
নজরুল তাঁকে শোনার ভঙ্গী দাও,ভৃগুছাপ

প্রদীপ চক্রবর্তী ' র কবিতা 
.........................................

সমকামী বাঁশি 

এক .

শান্ত কুসুমিত এক প্রকল্প 
তার পাশে 
              পুরোনো অভ্যাসে 
                                      শুয়ে পড়েছি 


বিজলিলতার গিঁট কিভাবে খুলতে পারে 
এই নবদূর্বা বৃষ্টির দেশ ,
অনিদ্রা সারাক্ষণ 
দুচোখ খোলা থাকলে দেখা যাবেই 


মানুষের সবচে প্রিয় ক্ষত , এখনো মানুষ 
এই প্রাচুর্য্য  আশা করা যায় বড়ো হবে  ...


দুই .

ফুটে -- ওঠা থেকে অভূত ভেঙেছে 
যমুনা জুড়ে  খরোতোয়া যায় না ধরা 
ভেঙেছে বিরল মৌনতায় বনশ্রেণী ভেঙেছে 
জলছুঁই পাশে গলিঘুঁজি খন্দ খানায় 
সজল সোঁদা নম্র থোপা শিরীষ ফুলের 
অঞ্জুলা বনে নীল চলো না আমার সঙ্গে 

অগণিত মরা নদীর বালি ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে আছে ট্রাক 
রোগা মেয়েটির মৃদুতা মেশানো কাঠের জানলা 
আঁকাবাঁকা পথে উড়তে উড়তে থমকে দাঁড়ায় 
সমস্ত ছবিটাই শালবল্লীর ওপারে সুদূর ..

নির্জন বিদ্বেষী নই ,
প্রবঞ্চিত সর্বহারা একাকী নায়িকার ভেসে আসে
গানের অমোঘ দ্রাক্ষারস  

সেই বৃষ্টির বাইরে তুমি ভিজে যাচ্ছ 
পৃথিবীর দিকে শ্রী হরিণ 
 দাবদগ্ধ উৎসারিত অনিমেষ 
 প্রথিত নদীর বাঁকে পাখিরা যখন 
মধ্যমে ভেঙে যায় ....

তিন .

হে মেঘমথিত পুলক , মোশনে ক্লিক করো 
দেখো কাঙালকে শাকের খেত দেখাতে নেই 
বিশাখা , কৃত্তিকা আর কি কি সব নিয়ে 
আকাশটা জন্ম -- মূক 
তার নীচে দাঁড়িয়ে তুমি একটা মেয়েকে 
খুন করার কথা ভাবছো ?

ভাবছো যামিনী রায়ের পটে আঁকা ছবি 
ভাঙা ছাদ | থমথমে সিঁড়ি | পাতালবাহিনী একটি পুকুর 
রাধাগোবিন্দের মন্দিরচূড়ার মতো রাঙা মনোরেল 
কাজল নীল ক্রিমরোজ উড়ছে কফিসপে 
সপসপে মাঝবয়সী জামার হাতায় ভিজে চোখে মুছে 
অন্ধ কানাই চাঁদে যাবে না অপেক্ষা করবে 
সেই ডিসিশনে রোগা হচ্ছে রোদ 
এই কাঁপন তার মিষ্টি লাগছে 

এটা খুনির দান করা শব্দ 
না মীরণের ছুরিকা 
অমীমাংসিত প্রশ্নে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যায় 
তার চোখ 
নিঃস্ব  পশমিক ভ্রান্তিলতা 
সুদূর অব্যবহৃত  পোলটুকু পেরোলেই 
পোলকা নাচ ,
ব্রীজ আছে তবু ছায়াবাঘ নেই ...


 

 





নদী
 নীপবীথি ভৌমিক

 সমস্ত অন্ধকার ফিকে হয়ে আসে আবার পৃথিবীর সুদীর্ঘ চোখে

  এই যে নদী বয়ে যায়, 
  বুকে রেখে নিয়ে যায় অজস্র কথা-জলের গল্পকণা

   আলো হয়ে আসে জানো
  এদেশ, এ পৃথিবীর যত অন্ধ কোণ !

     অথচ, ক্ষত কি শুধু তোমারই বুকে বাজে?
  রক্তপাত হয় কি শুধু শূন্য হাতে
    আমাদের দুকূল উজাড় করে বয়ে যাওয়া
       ঘোরদোর ভাসিয়ে ?

   নদী সব চেনে। যেমন চেনে সে
     শুষ্ক মাটির ব্যথা !

          একার থেকে একলা হলে
   তবেই না নিজেকে চেনা !

হকারের সূর্যাস্ত বর্ণময়

রুমা ঢ্যাং অধিকারী


গুগলের অষ্টপ্রহর ধাঁচে মিশে যাচ্ছে ক্রেতার সার্চ
পেকে উঠছে ঘুড়ির লকলকে জিভ 

দৃষ্টির ভঙ্গিমাতেও ফিরে এসেছে স্নানার্থী বিকেল
পাঁচিল ডিঙোনো লাগাম নিয়ে তবু এখনও শুয়ে আছি
প্রেরণবিহীন প্রস্তাবনায়

লড়াকু বায়নাগুলো, টপকানো সিঁড়িগুলো 
মিলিয়ে যাচ্ছে এক হাটখোলা দরজায় 

সাইকেল ভ্যান গড়িয়ে গেলে
দেহাতি শরীর হাঁক পাড়ে, শব্দ ফেরি হয় গলির মোড়ে মোড়ে 
ওখানেই ঝুঁকে আছে চাঁদের হাট
বিলি করে রাখি লোহাগড়া আবাসন

হকারের সূর্যাস্ত যদি হয় বর্ণময়
আড়ম্বর যেন উৎসবের নিপাট আয়োজন 







গল্প বলা
মানিক সাহা

যেভাবেই বলো, সমুদ্রের দিকে সাইকেল চালিয়ে যাওয়ার মতো
মনোরম ভাবে বলতে পারবে না।

এখানে আবাদের জমি। মাঝে মধ্যে অবিশেষ রক্তের দাগ।
বায়ুস্তর ভেদ করে বৃষ্টি ও জলের আহ্বান খেলা করে।

এখানে বালির রুপালি চমক নেই।  ধারে ধারে ঝাউ আর কাজুবাদামের গাছ নেই।

সিক্ত গন্ধময় সে এক স্বপ্নের দেশ -
নির্বাচন নেই বলে স্বার্থের হানাহানি নেই।

সাইকেল চালিয়ে যাওয়া - মায়াময় গোধুলির বেলা - বড় ম্যাজিক্যাল।
যত পাতা উড়ছে তার প্রতিটিতে 
হাওয়া লেগে গুড়ো হয়ে যাওয়া আলো লেগে থাকে। 
বাতাসে পাখির দল ডুব দেয় গুড্ডির মতো...

যেন অনিশ্চিত বলে কিছু নেই এইখানে -
অনিশ্চিত শুধু  বাউন্সার। ডাক করতে হয়। কিংবা সাহস করে হুক।
বাকি সব শর্টপিচ। ইচ্ছে মতো গল্প বানাও। ইচ্ছেমতো জল ঢালো গাছে। 

বলো তবে সুপবন, সমুদ্র থেকে আনা সেই পুরাতন শঙ্খ'র ইতিহাস বলো।



তোর অবিনস্ত  ভাসা মেঘ থেকে
অভিষেক মোহিণ্তা 

তোর অবিনস্ত  ভাসা মেঘ থেকে
একাপশলা বৃষ্টি চুরি করতে চেয়েছিলাম, 
চেয়েছিলাম ওই একপশলা বৃষ্টি নিয়ে
যাবো, রায়দিঘীর পারে, সেই রায়দিঘী
যেখানে কথাকলির আসর বসে রোজ।
চেয়েছিলাম ওই একপশলা বৃষ্টি নিয়ে
যাবো, নীলকুঠির পশ্চিম পারের মাঠে,
যেখানে রুক্ষ জমি যদি আবার সবুজ গালিচা
পেতে দেয়। চেয়েছিলাম ওই একপশলা বৃষ্টি
নিয়ে যাবো, কানু মিঞার আনাজ ক্ষেতে,
বেচারা ভঙ্গুর মিঞা পানি পানি করে
তোর দিকে চেয়ে থাকে বছর ভরে।
চেয়েছিলাম ওই একপশলা বৃষ্টি নিয়ে
যাবো, বনলতার বাড়ীর উঠোনে,
যেখানে সদ্য পোঁতা বোগেনভেলিয়া
বনলতার সাথে একটা আমুদে স্নান
সেরে নিতে পারে। চেয়েছিলাম ওই 
একপশলা বৃষ্টি দিয়ে ভিজিয়ে দেবো 
পথের ধুলোবালি, পারিনি, তুই হতে
দিস নি, আটকে দিয়ে আমার চুরি,
তোর জমিয়ে রাখা অনেক একপশলা 
বৃষ্টি দিয়ে ধুয়ে দিচ্ছিস আমার
ভাবনা গুলো।


সম্পা পালের কবিতা 
পাহাড়ের অন্দরমহল 


পাহাড়ের অন্দরমহলে অনেক কথা
তবু শীতঘুমে অনেকটা সময় চলে যায়
পাহাড় আমাদের এভাবেই বেঁচে থাকতে শেখায় 

বাইরে গ্ৰীষ্ম এসেছিল
তখন বুক রিভিউ এ ব‍্যস্ত
মাঝপর্ব দিয়ে চলে গেছে জীবন ও রাজনৈতিক  শ্লোগান

এতকিছুর পরেও কবি কখনো একা রাস্তা খোঁজে
একটু কেঁদে হালকা হবার জন্য
বুক রিভিউ এ এত সব 



আঙুলের শুকনো চামড়া 

শৌভিক দে সরকার 


খুব সহজন, পিছিয়ে পড়া একটা দাগের মহড়া খুলছি। অর্ধেক নখের দাগ, খরচ হয়ে যাওয়ার পৃষ্ঠা। ঘামের ফোঁটার ভেতর যতটুকু লবণ থাকে, ততটুকু শুষে নেওয়ার স্মৃতি! মেঘ তাড়ানোর আতিশয্য নিয়ে খুলে ফেলছি ভ্রমর, আরও আরও গূঢ় হয়ে ওঠা অনর্থের দুপুর, চামড়ার ফাটল থেকে উড়ে আসা মাংসের শাদা, দুপুর সংক্রান্ত যা কিছু জীবনতাড়িত, ব্লিস্টার ফয়েলের রূপোলী। ‘অনঙ্গ’ বলে ডাকতে ডাকতে উড়ে গেল রাস্তার পাখি। জীবন এটুকুই দেয়, বাকিটা লুকিয়ে রাখে নিজস্ব প্ররোচনার ভেতর! কালো হয়ে যাওয়া ইরেজার দিয়ে ঘষে ঘষে তুলছি নিশ্চিহ্ন তারিখ, চামড়ার অতীত বুদবুদ, ঘুমের তলদেশে ঢুকে পড়া সামান্য রুদ্ধশ্বাস ।  

নৌকাডুবি

কুশল ভৌমিক 


হ্যাংগারে ঝুলে থাকা বিকেলের রোদ 
যখন আত্মসমর্পণ করলো রাত্রির শরীরে 
তখন আমার প্রেমিকার হাসির দমকে
থমকে গিয়েছিল মাছেদের সান্ধ্য-সঙ্গীত 
একটা মাছরাঙা খিস্তি করতে করতে
মিশে গেল হিজলের পাতার ভেতর 
আর আমি মেয়েটির চিবুকের তিলে
নিজের নাম লেখাবো বলে 
তুমুল তর্ক বাজালাম ঈশ্বরের সাথে।

ঈশ্বরের সাথে আমার সম্পর্ক 
বরাবরই সাপে-নেউলে
পিঠাপিঠি ভাই-বোনদের মতোন। 
আমি একটা চাকরি চাইলে 
ঈশ্বর আমাকে দিয়ে দীর্ঘমেয়াদি 
বেকারত্বের এক্সপেরিমেন্ট চালান
একটা ঘর চাইলে দেখিয়ে দেন আকাশ 
হুইস্কি চাইলে এক গেলাস গঙ্গাজল
একবার রোদ্দুর চেয়েছিলাম বলে
তিনি আমার আঁজলায় তুলে দিয়েছিলেন 
কয়েক টুকরা ছেড়া মেঘ
আজ যেমন তুমুল বাজতে থাকা
মেয়েটির বুকে বরাদ্দ চাইলাম
একখন্ড ব্যক্তিগত জায়গা
ঈশ্বর কাব্য করে বললেন -

প্রতিটি নারী একেকটা নদী
পারো তো নৌকা হয়ে ভেসে বেড়াও। 

সেই থেকে বুকের ভেতর 
আমি একটা নদী নিয়ে ঘুরে বেড়াই
সেই নদীতে আমার নৌকা 
ভাসে...চলে...

ডুবে যায়... 
 

 

বিনয় সমীপেষু,

শুভদীপ_রায়

উড়ে যায় মার্টলেট শান্তির খোঁজে, আমিও পতাকা খুঁজি আকাশের বুকে

দেখি --
কবিতা জীবন হলে আশ্রয় শঙ্কিত হয়
তোমাকে বলিনি, এই তো লালিত দ্রোহপরব
অথচ
অন্তরপ্রলাপ লিখি ভ্রমরদংশনে অথবা
অপনোদন এঁকে রাখি  ঘুঙুর সংলাপে
আমাকে প্রলম্বিত দুঃখ ভেবে বালিঢেউ খোঁজে আদৃত যন্ত্রণার তীর

ভাবি --
ফিরে তো আসেনি চাকা,
আসলে চাকারা ফেরেনা বিনয় আলোয় 


গৌরাঙ্গ চক্রবর্তীর কবিতা 
একবার না হয় ফিরে আসো

একবার না হয় ফিরে আসো।

মেঘলা আকাশে, ক্লান্ত নদীর পারে--
দূরত্বটা ঘনিয়ে আসুক গাঢ় চুম্বনে
বৃষ্টি নামুক,
হৃদয় জুড়ে স্বপ্নের মায়াজাল ভেঙ্গে নিরুদ্দেশে।

কখনো কি ভেবে দেখেছো ! আমাদের পবিত্রতা হারিয়েছে কবে, কোন নগরীর অশান্ত চোখে।
তুমি বেশ জানতে--বিশাল শূন্যতার ভেতর কি করে বেঁচে থাকা যায়।

নূপুরের শব্দে থমকে দাঁড়াই--
এক মুহূর্তে জটিল ভালোবাসা বাষ্প হয়ে উড়ে যায়,
নিস্তব্ধ তারাদের লালসা যতবার পুড়িয়ে ফেলতে চেয়েছি,--লোভ, ঘৃণা,অতৃপ্ত আত্মার খোরাক,
ততোবারই তুমি রোগা ফ্যাকাশে শরীরে ফুটিয়েছ গোলাপ।

অথচ দেখো, কেমন করে নিজেকে ভাঙতে চেয়েও বারবার ভুল করে বসি, তোমাতে মিশে।

                            
                   

বিবেক রায়ের কবিতা 
টি শার্ট 
তোমার আমার মাঝে এক বিশাল দেওয়াল 
সে দেওয়াল দেখা যায় না শুধু  আঘাত করে 
খাওয়া থেকে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত অস্ত্র চালায় 
তিলে তিলে মৃত্যুর পাহাড় গড়ে 
তুমি বলতে পারো এ পৃথিবী কার টি শার্টের হেংগারে ঝুলিয়ে আছে 
তুমি হয়তো নিজেও জানো না 
তোমার পায়ে কতো পথ তৈরি হয় 
তবু তুমি মৃত্য তুমি ভিতু তুমি নিষ্পাপ 
শেষে তুমি হেরে গেছো
আমাকে দেক আধ পেট খেয়েও
আলো আর অন্ধকারের মাঝে আমি বেঁচে থাকার লড়াই করছি
কষ্ট হয় তবু মাথা নত করি চিৎকার করে বলি 
এ পৃথিবী আমি ভালো আছি 
আমি আজও ছুটি যেখানে শান্তি 
অন্ধকার হলেও চলবে 


মহুয়া বৈদ্যর কবিতা



এই রঙ


১.

মেরে ফেলবার পর একটি মশার রং নীল

অথচ আকাশ থেকে গাঢ়তর একফালি কালো
 
নিয়ম মাফিক এসে জমা হয় এই পৃথিবীতে

সেই মতো হিসেবের খাতা,দুই পোঁচ ঘন লাল রং

সাপটিয়ে বিছিয়ে দিল, আমার মুখের পাশটিতে

এই ভালো, এমন তো মনে হয় বড় বেশি ভালো

প্রতিটি পতঙ্গ যেন আদতেই মুঠোমুঠো নীল

 নীল রঙ ফুলেদের পরাগে ছড়ায়,  তারপর

বেহিসেবী মধুটুকু প্রাণপণ টানে অবিরাম

এমন করেই ধীরে ধীরে, ফুলেদের নাম জানলাম।


২.


তান বলছিল ওর কমলালেবুর গাছ মরে গেছে,

ছবিও পাঠালো। শুকনো পাতার মরা কাঠ--

পাতাগুলি কমলা যদিও...

আমার কমলা গাছ এখনো সবুজ,

চারটি পাঁচটি কচি পাতা

ছবিদুটি ভিউয়ারে পাশাপাশি স্থান নিয়ে আছে

কমলা কমলা রঙ হাল ছেড়ে কখনো সবুজ

সবুজ আপেল নিয়ে আসে,

মরে গিয়ে পাতাকে রাঙায়...

রাঙায়,পাতাকে? ফলহীন সবুজ কমলা রঙ

পাশাপাশি দুর্দিনে পাত পেতে স্থির বসে আছে




উত্তরায়ন


ছায়াহীন এই আমি কায়ার সন্ধানে তবে যাবো

সাত জুন রবিবার দু'হাজার কুড়ি

দুপুর বারোটা

চিরদিন পাশে থাকা ছায়াটুকু
                                 আজ তিনি পায়ে পড়বেন

 বিনম্র বিনয় এই কোনখানে রাখি!

সূর্যদেব,একাকী আমিও




উড়ো কথাদের পদ্য


১.
এইসব ভূতজন্ম অনভ্যাস অক্ষরের ত্রাস

লিখে রাখি মৃদু মৃদু মহাকাল সময়-সন্ত্রাস 

২.
উঝুমপুরের দেশে নিঝুমপুরের সেই মেয়ে

আনমনে তাকিয়েছে পরজ রাগের গান গেয়ে

দিন যায় মাস যায় কথার উপর জমে কথা

কথাই পাহাড় হয়,পাথরের ভুল সফলতা

তবু সেই পাথরেই ভালোবেসে লিখে রাখি নাম 

ক্ষয়ে যাওয়া সহবাস তোমাকে আদর পাঠালাম

৩.

অই দ্যাখো বাঁকা চাঁদ,হিম পড়ে ধুলোবালি মুখে

বরফ যুগের থেকে নামিয়েছি এই ডাকনাম

তবু যদি শারীরিক শীত শীত কাতর অসুখে

হেমন্তের রোদ মেখো, ধান্যের শপথ রাখলাম

মরাকাঠ ডালপালা বিস্তৃত এ শুষ্ক চরাচরে

সচন্দন পুষ্পগন্ধ ভাসিয়েছি মেঘলা সফরে

৪.

এই সেই ওষ্ঠ-ভার এই নাও অলক্তক-রাগ

এমন মেঘের দলে আশাতীত  ভ্রমণ গরাগ

শ্রাবণের অতিরিক্ত যদি কিছু ফেলে যাই,সাঁকো

নড়বড়ে।তুমি এই হালখানি সাবধানে রাখো

সাবেক জলের পদ্যে দিক ঠিক করে নিও চোখ

আকাশের ধ্রুবতারা থেকে নামে অচিন পালক।
দীপ শেখর চক্রবর্তীর কবিতা 
যতটুকু নিজের কাছে থাকা

কতটুকু নিজের কাছে আছি?
কোথায় থমকাবো?
কোথায় রাখবো এ দু হাত?
কতদূর চলে যাবো আমি নিজের ভেতরে?
ধীরে ধীরে হেমন্তের ঘন দিন নেমে আসে,কোন অন্ধ বালকের বুকের ভেতর শঙ্খের মোহধ্বনি আরও আরও বড় করে তুলেছে জীবনের মানে
দিকে দিকে তালসারি,
শব্দের শেষতম পবিত্রতা লেগে থাকে
তার উত্তর দক্ষিণে হাত পেতে বসেছে আকাশ
জীবনের সামান্য রস তার চাওয়া 
এ দৃশ্য আমার হবে কি?লিখে রাখি 
এটুকু বাঁচাই এই সময়ের জন্য যথেষ্ট হয়েছে
অথচ যথেষ্ট শব্দের ডানদিকে পুরোনো ঘাসের মাঠ,বামদিকে ইস্কুল পালানো পথ শুধু ডাকে
চলে এসো সমস্ত ফেলে 
তবুও কোথায় যাবো আমি? কতদূর হেমন্তের পথ পার হয়ে গেলে দেখা যায়?
একটি ঘর,মাটির উঠোন
কাঁচপোকা টিপের মেয়েটি দু পা ভেঙে যে আলপনা দিয়েছে তা খড়ি মাটির সীমানা
আমার সীমানা চাই?যতদূর ভালোবাসা হেঁটে যেতে পারে কাঁটাফোটা পায়ে
ততদূর যেতে পারি?একা?
একটি পাতা বৃক্ষচ্যুত হয়ে যতদূর ভেসে যেতে পেরেছে হাওয়ায়
তারপর আমার জমি
কৃষকের হাত অতিক্রম করে গেছে সমস্ত চাওয়ার সীমানা
সে হাতের পাশে এক রাতে শব্দ এসে দাঁড়াতে পারে
অন্ধকারে মোমের আলোয় তার মুখ দেখি
পনেরো বছর পর মোমের আলোতে সে মুখ এসে দাঁড়িয়েছে আমার সম্মুখে
সে মুখে লেখা আছে কথা দুটি
বিছানা রয়েছে সেই অন্ধকারে পাতা
তুমি অযথা নিদ্রা হারালে।


এত শূন্য চারিদিকে

.................................

সব কথা এভাবে বলা যায়না।কথার ভেতর একটা পথ সহজভাবে চলা যায়না এভাবে।

তোমাকে যা বলি টা তোমারই কথা।তবুও তো ভুলি

একটা হওয়ার কথা বারবার লিখে রাখি

তোমাকে পাবো বলে বহুদূর বহন করে নিয়ে এসেছি ব্যথা

অরণ্যের পথের ভেতর দিয়ে যে একা একা 

অনন্তের সীমা হাতে গেছে

আমি তার গান জানি,তাই সবাই ছেড়েছে আমায়

বন্ধ করে নিয়েছি দুচোখ যখন তোমার দুচোখ দিয়ে দেখেছি

তার গান জানি আমি

যে খুলে খুলে নিয়ে প্রসাধন আমার

পায়ের তলায় জ্বলন্ত কয়লা রেখে যে শিখিয়েছিল জীবনের নৃত্য

শুন্যকে জড়িয়েছে যে বুকে সেই জানে

একদিন বাতাস ছাড়াই শাখা দোলে, বৃক্ষ জন্ম পাও তুমি

তবু এই শেষ নয়

সবে শুরু

পাখি পায়ে করে আবার নিয়ে যাবে তোমার বীজ অন্য জন্মে

তোমার একটি পাতা আবার আকাশের দিকে তাকিয়ে

তার ডাক পায়

তার ডাক পেয়েছিলে বলে তুমি একা হলে,তোমার ভেতরে সৃষ্টি হলো বিশ্বব্রহ্মাণ্ড

আর জন্ম হলো এই মুহূর্তে এক ধূমকেতুর যে তোমাকে জানবে বলে ছুটে চলেছে অনন্ত আগুন মুখে নিয়ে

তাকে ফাঁকি দাও তুমি।নির্বাসন ডেকে আনো

তুমি যার কাছে ফেরো সেই তোমাকে চিহ্ন দিয়েছে

অথচ কোন চিহ্ন তে কি ধরে তোমার খেলার ইচ্ছে

অনন্ত মাঠ পড়ে আছে

এত শূন্য চারিদিকে,তবু কেন বুকের ভেতরে এই পূর্ণতা?

নত হয়েছ তুমি সামান্য ব্যথার কাছে?

তোমার এই নত হওয়া ধীরে ধীরে পাথরের মধ্যে একে গেলো রোদের পাতা, কারুকাজ

কোথায় যাবে তুমি নিজেকে দূরে রেখে?

সব কথা এভাবে বলা যায় নি

সব ভালোবাসার পথ এভাবে চলা যায় নি ধরে রেখে

তোমাকে যা বলি তা তোমারই কথা 

তুমি বিস্মিত হও,তোমার বিস্মৃতি দেখে মনে মনে ব্যথা পাই

সে ব্যথা

বাতাসের অপেক্ষা করেনা।একা একা বেজে চলেছে আজ সব পাতা,সব ডাল,এক অনন্তের গান

শুধু বেজে চলে

খেলার ডাক এসেছে অবিরাম

বারবার ফিরে ফিরে আসো,ঘর ছেড়ে নিয়ে যাবে তুমি

খেলার মধ্যে থেকে আমাদের পরিচয় উঠে আসে

পরাজয় মেনে নিই

তোমাকে পেয়েছি আমি,নিজেকে দূর থেকে দেখে

রচিত হয়েছে এভাবে

নিজেকে জানার পথ,আমি জানি এই খেলা সামান্যটুকু নয়। 

ছক্কা
দেবাশিস মুখোপাধ্যায়

১.
জানালার ব্যাকরণ ভেঙে
ফিরে এল শ্যামলী জলা
শরীরে সে রেখেছে মৃত ব্যাঙ
 পেট হওয়া পলিথিন আর কালো শ্যাওলা
 দৃষ্টিদোষে সাজি
 অন্ধ
২.
তেরাত্তির
পার করার পর
সে ছায়ামূর্তি হলো না
শুধু পড়ে থাকল ফাটা মালসা
পোড়া ভাত
শুকনো রক্তে এক টুকরো চাঁদের ভ্রুণ

৩.
দোলনা ভেবে নেয়
কেউ আছে
পড়ে পাওয়া লং প্লে গ্রামাফোনে
 গান
 দুলিয়ে দিচ্ছে যা দুলবার নয় বাতাসে
 লজ্জায় হলুদ মাখছে পাতা
৪.

অন্ধকারে এসেছ
গায়ে নিয়ে চাঁদ
মেঘের নকশা তাতে আঁকা
পুকুর 
তুলে নেয়  তার চোখের রেটিনায়
মাছেরা স্থির হলে হঠাৎ বৃষ্টি নামে

৫.

কথা মেখেছে রূপ
তার আয়নায়
ডানায় ডানায় ধরেছে উল্লাস
যেন অনন্ত বশ করেছে সে
ঠোঁটের কারুকাজে এক ব্যঙ্গ চিত্র আঁকা
অজান্তেই