Sunday, July 26, 2020

অনিন্দ্য রায়ের কবিতা


সহজে ফুটকি লিখে

সহজে ফুটকি লিখে শূন্যকে বসাই আগে তার
এই তবে দশমিক, পিছু পিছু রাশিরা হাজির
সারি দিয়ে দাঁড়িয়েছে, মাথা নীচু, একেবারে স্থির
ঘাড়ের ওপরে কারো দশ, কারো একশো, হাজার 

এভাবে ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি? এভাবেই অপত্য জন্মায়?
বাড়তে থাকে অর্থনীতি? আরও বড়ো মানবসভ্যতা?
এভাবে ছড়িয়ে পড়ে চরাচরে জীবনের চোতা
বিস্তারিত হতে হতে অনন্ত পর্যন্ত গেছে প্রায়

সমস্ত কিছুর জন্য লাগে একমাত্র দশমিক 
মাত্রা নেই, মুখচোরা, চট করে পড়বে না চোখে 
উহাকে চেনাতে সামনে খাঁড়া হতে হয় যে শূন্যকে 
তিনি বিন্দু টপকে ক্রমে করে নেন দখল ওদিক 

আমরা শূন্যের প্রজা, রোজ তাঁকে কর দিতে হয় 
তুমি যা ভগ্নাংশ বলো, তার মানে জ্ঞানীও তো হয়

এই যে বলছেন

এই যে বলছেন, “লেখা বন্ধ করে দেব অনিন্দ্যর”
এই যে গ্লাসের মধ্যে পড়ে যাওয়া পোকাটি অবাক 
শুনছে আপনার কথা, কানেকশন, খিল্লি, হাঁকডাক
“পত্রিকায় ওর লেখা ছেপেছিস! বুদ্ধি নেই তোর?”
কবিতা পাঠের পর সন্ধ্যাবেলা হোটেলে হুল্লোড়
রয়্যাল স্টাগের দাম মেটালেন, প্রভূত দেমাক
দেখিয়ে সবার সামনে খুলে যাচ্ছে কবির পোশাক
টেবিলে কবিতাবই, চাপা-দেওয়া একটি পাথর

কোথায় উল্লাস হবে, নাচ হবে, উড়বে কবিতা
তা নয়, আমার নাম! প্রিয় কবি! মটকা গরম
আমি থাকি বহু দূরে, মফসসলে, বুঝেছেন কি তা
আমাকে হত্যার জন্য ফালতু তো আপনার শ্রম

আপনি বিখ্যাত লোক, কেন যে আমার নাম বাদ 
দিতে গিয়ে জনেজনে চিনিয়ে দিচ্ছেন… ধন্যবাদ   

নয়নতারার ঝোপে

নয়নতারার ঝোপে হারিয়েছে আলো
স্যাঁতস্যাতে ছায়া, চুপচাপ শুঁয়োপোকা 
পৃথিবীর থেকে সরে এল সমকালও
পাতাদের পাশে আশকারা থোকাথোকা
বিষাদের রস চোখেমুখে ছিটকালো
সেটুকু নিয়ে তো আমাদের লেখাজোকা
তুমি মেটাফর, নিরিবিলি, একরোখা 
তোমাকে না-ধরে পারি না দাঁড়াতে ভালো

দাঁড়ালে মাথায় আকাশ যে ঠোকা লাগে 
ছোটো হতে চাই, যেটুকু না-হলে নয়
মিশে যেতে চাই জীবাণুর সংরাগে     
উপমায় ভুলে গেছি নাম, পরিচয় 
শুধু মনে আছে তোমাকে, খুনের আগে 
‘ভেঙেছ দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়’

17 comments:

  1. অনিন্দ্য রায়ের তুলনা নেই কোনও...কোনও দশকের কবি তিনি নন...তাঁর লেখা চিরকালীন ...বাঙলা ভাষায় এত শক্তিমান কবি খুব কম এসেছেন...আমার শ্রদ্ধা জানাই..

    ReplyDelete
  2. কী সুন্দর লিখছ রে, ভাই! পড়ি আর মুগ্ধ হই। ভালোবাসাই নাও।

    ReplyDelete
  3. অনিন্দ্য-নীয়! অভিভূত! কী অপূর্ব ধ্রুপদী শোনালে তুমি দাদা!

    ReplyDelete
  4. দারুণ লাগলো ❤

    ReplyDelete
  5. তিনটি চতুর্দশপদীই অনবদ্য ৷ অনিন্দ্যকে পছন্দ করি বলে নয়;ওর কবিতাার পরীক্ষানিরীক্ষা আমাকে উদ্বুদ্ধ করে ৷ অনিন্দ্যকে ধন্যবাাদ দেওয়াাা এক্ষেত্রে বাহুল্যই ৷

    ReplyDelete
  6. তিনটি চতুর্দশপদীই অনবদ্য ৷ অনিন্দ্যকে পছন্দ করি বলে নয়;ওর কবিতাার পরীক্ষানিরীক্ষা আমাকে উদ্বুদ্ধ করে ৷ অনিন্দ্যকে ধন্যবাাদ দেওয়াাা এক্ষেত্রে বাহুল্যই ৷

    ReplyDelete
  7. অপূর্ব, অনিন্দ্য।

    ReplyDelete
  8. অসাধারণ সব লেখা।

    ReplyDelete
  9. দারুণ লাগল। শ্রদ্ধা জানাই আপনাকে।

    ReplyDelete
  10. সনেট চর্চা অনায়াস হয়েছে

    ReplyDelete
  11. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete
  12. চমৎকার হে , চমৎকার !

    ReplyDelete
  13. প্রতিদিন মুগ্ধ হই তোমার কবিতা পড়ে। নিজের কথাই লিখলাম। কেউ তোমার লেখা বন্ধ করে দিতে পারবে না।

    ReplyDelete