Sunday, July 26, 2020



মনমাঝি রে
সোমা সাহা পোদ্দার

জীবন গাঁথা নদীর বুকে, আর এই নৌকাজলের গন্ধেই জরিয়ে আছে দিনলিপি ।
নদীগর্ভে লীন হতে থাকে সুখে মোরা ঘর দুয়ার। পাহাড়ি ঢলে লেগে আছে বিপদ সংকেত।
ঘন বর্ষায় ভাঙন অনিবার্য হয়ে পরে। এই  ভাঙ্গা গড়াতেই বার বার পাল্টে যাচ্ছে বসবাসের ঠিকানা।
কিন্তু প্রবল জলের টানে, রঙিন পালতোলা নৌকা হারানো মাঝির মনের খবর কেউ রাখে না।
অথচ এই মাঝি ভাটিয়ালি গানে মনের মানুষকে মিলিয়ে দেয়।
হাসির ওপারে হাসি ছড়িয়ে ভোর খুলছে প্রতিবেশির দুয়ার । দাদু -ঠাকুমাদের এ বাড়ি সে বাড়ির
সাথে দেওয়া নেওয়া হয় প্রাতিদিনের বেঁচে থাকা । ছোটোদের খেলার উঠোন ছড়িয়ে পরে
পাড়ার উঠোনে। কিন্তু উত্তাল ঢেউ লিখে যায় এ-সবকিছুর-ই পরিবর্তনের গল্প।
নদীর বাড়ন্ত যৌবন বয়-  নিদারুন ভাঙ্গনে ।
স্বজন হারা দুপুর আশ্রয় খুঁজে -  দুপারের শূন্য জনপদ পেরিয়ে ।
মাঝিহীন নৌকার মতো ঠোকা খাচ্ছে পুনর্বাসন । অপরদিকে নৌকাহীন মাঝি তার ঠিকানায়
ভাঙ্গনের নিঃসঙ্গতা ভাসিয়ে দেয় ---
“একা রাত বাঁকা চাঁদ লাগেনা ভালো রে আর”
ঘর ছাড়া রাত শিশুদের মায়াবি মুখে বাড়ছে খিদের ছাপ। নিজেস্ব দেশ অথচ নিজ দেশেই
দূর সম্পর্কের কারও আসা যাওয়ার মতো যাপন । ঝুপরি থেকে বেরোতে চায়  বানভাসী
অভাবী সংসার । ফিরতে চায় আগের ঘরে,  কিন্তু ঘর ! কাকে বলবো যদি সেটাই না থাকে।
এভাবেই ভিটে বাড়ির ডোর ছিঁড়ে স্বপ্নগুলো তলিয়ে যায় নিরুদেশে ।
তবু, মাঝি ভাঙ্গনের ওপারেও ছুটবে আজীবন। নদী আবার নেমে আসবে সাধারন মানুষের হয়ে।
মাঝি ফিরে পাবে তার সঙ্গীকে । নৌকোয় পারাপার হবে দিন,রাতের শব্দ ছাপিয়ে ভাটিয়ালি সুর।
এই দিন রাতের অন্তরালে নদীকথায় এগিয়ে যাবে মন মাঝি।


No comments:

Post a Comment