Saturday, July 25, 2020

প্রবন্ধ : কুমারেশ তেওয়ারীর কলমে 
কবি, কবিতা ও কমিউনিকেশন
কুমারেশ তেওয়ারী


এক ভাস্কর একটি অসাধারণ ভাস্কর্য নির্মাণ করে সেটিকে লুকিয়ে রেখে দিলেন তার ঘরেরই কোনো অন্ধকার কোণায়। তাহলে লাভ কী হলো? হয়তো শিল্পী মানসিকভাবে সুখী হলেন কিন্তু সেই আত্মতুষ্টির সামগ্রিক মূল্য কতটা। তিনি ও তার তৈরি সৃষ্টির সার্থকতা তখনই যখন সেই ভাস্কর্যটিকে নিয়ে আসা হবে দর্শকের সমক্ষে। যখন আলোচিত হবে তার ভালো-মন্দের বিভিন্ন দিক।

তাহলে কি দেখা যাচ্ছে যে কোনো শিল্পের উত্তরণের ক্ষেত্রে তার দর্শক-স্রোতার একটি বড় ভূমিকা আছে। কবিতার ক্ষেত্রেও তাই। কোনো কবি যতই উন্নাসিক হয়ে বলুন না কেন—তিনি পাঠকের কথা ভেবে কবিতা লেখেন না। নিজের জন্য লেখেন। তার পুরোটা সত্য নয়। কবিকে পাঠকের কাছে যেতেই হয়। আর এখান থেকেই কবিতার ক্ষেত্রে কমিউনিকেশন শব্দটি জন্ম নেয়। কবি ও কবিতার অবশ্যই একটা দায়বদ্ধতা (কখনই প্রেসারজাত নয়) আছে পাঠককে কমিউনিকেট করার।  মোদ্দা  কথা হলো কবি যদি তার পাঠকের কাছে পৌঁছতে নাই-ই চাইবেন তবে বিভিন্ন পত্রিকার তার লেখা প্রকাশিত হওয়ার ব্যাপারে কেন তার এত আকুলতা এবং উৎকন্ঠা।  কেনই বা গাঁটের কড়ি খরচ করে বই প্রকাশের উদ্যোগ। তিনিও তো ওই ভাস্করের মতো নিজের কবিতা সন্তানদের মোটা জাবদা খাতায় বন্দি করে, রাখতে পারতেন লোকচক্ষুর অন্তরালে। 

তবে কমিউনিকেট করার প্রসঙ্গে একটা কথা বলতেই হয় একজন পাঠকেরও কিছু দায়বদ্ধতা থাকে নিজেকে কবিতার প্রকৃত পাঠক হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে। এজন্যই নিজেকে কবিতা পাঠের যোগ্য করে তোলার জন্য তাকেও অন্তত কিছুটা পড়াশোনা করতেই হবে। এখন তো কবিতার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। একরৈখিক থেকে হয়েছে বহুরৈখিক। বহুস্তরীয় কবিতায় অনেক বেশি বেশি করে এসেছে বিমূর্ততা। বিজ্ঞান,ভূগোল,ইতিহাস,পুরাণ,মনস্তত্ত্ব প্রভৃতি বিষয় আরও বেশি করে ঢুকে পড়ছে কবিতায়। যার জন্য অন্তত কবিতার খাতিরে কিছুটা পড়াশোনা তো করতেই হবে পাঠককে। তবে যেহেতু কবিতা চেতন-অবচেতনের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার এক বিমূর্ত শিল্প তাই কবিতা বোঝার ক্ষেত্রে পাঠকের বোধই তার প্রধান অস্ত্র। শুধুমাত্র কোনও একাডেমিক জ্ঞান বা পড়াশোনা দিয়েই কবিতাকে ধরা বা বোঝা সবক্ষেত্রে সম্ভব নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে সাফল্যের বদলে ব্যর্থতাই হয়তো বেশি আসতে পারে। বিশেষ করে কবিতা রচনার সময় কবির মধ্যে অবচেতন মনের প্রভাব বেশি থাকলে কবিতার মধ্যে যে আলো-আঁধারির আবহ তৈরি হয় বা কবিতার শরীরে যে রহস্য ঢুকে অশরীরী হয়ে বসে থাকে সেই রহস্য বা আলো-আঁধারিটুকুই অনেকক্ষেত্রেই কবিতার প্রধান সম্পদ হয়ে ওঠে। ওই আলো-আঁধারির মধ্যে ঢুকিয়ে তার রহস্য উন্মোচনের জন্য যেন পাঠককে আহ্বান করে কবিতা। তখন যে ঘোরের মধ্যে কবি রচনা করেছেন সেই কবিতা প্রকৃত পাঠকও যেন সেই ঘোরের দ্বারা সংক্রামিত হয়। এক বোধ ও না-বোধের মধ্য থেকে জন্ম নেওয়া অনুরণন গ্রাস করে পাঠককে। পাঠক বুঝতে পারেন তিনি ভিজে যাচ্ছেন অথচ কিসে সেটা ধরতে পারেন না। এই ভিজে যাওয়াটুকুই পাঠকের কাছে প্রধান বিষয় হয়ে ওঠে। তিনি তখন খুঁজতে চান না তার এই ভিজে যাওয়ার উৎসটিকে।

একাকি গায়কের নয় তো গান—এই কথা দিয়েই শেষ করি এই আশা নিয়ে কবি ও পাঠকের মেলবন্ধনই বাংলা কবিতাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে আগামীর পথে। 

যেহেতু কবিতা চেতন-অবচেতনের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার এক বিমূর্ত শিল্প তাই কবিতা বোঝার ক্ষেত্রে পাঠকের বোধই তার প্রধান অস্ত্র। শুধুমাত্র কোনও একাডেমিক জ্ঞান বা পড়াশোনা দিয়েই কবিতাকে ধরা বা বোঝা সবক্ষেত্রে সম্ভব নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে সাফল্যের বদলে ব্যর্থতাই হয়তো বেশি আসতে পারে। বিশেষ করে কবিতা রচনার সময় কবির মধ্যে অবচেতন মনের প্রভাব বেশি থাকলে কবিতার মধ্যে যে আলো-আঁধারির আবহ তৈরি হয় বা কবিতার শরীরে যে রহস্য ঢুকে অশরীরী হয়ে বসে থাকে সেই রহস্য বা আলো-আঁধারিটুকুই অনেকক্ষেত্রেই কবিতার প্রধান সম্পদ হয়ে ওঠে। ওই আলো-আঁধারির মধ্যে ঢুকিয়ে তার রহস্য উন্মোচনের জন্য যেন পাঠককে আহ্বান করে কবিতা। তখন যে ঘোরের মধ্যে কবি রচনা করেছেন সেই কবিতা প্রকৃত পাঠকও যেন সেই ঘোরের দ্বারা সংক্রামিত হয়। এক বোধ ও না-বোধের মধ্য থেকে জন্ম নেওয়া অনুরণন গ্রাস করে পাঠককে। পাঠক বুঝতে পারেন তিনি ভিজে যাচ্ছেন অথচ কিসে সেটা ধরতে পারেন না। এই ভিজে যাওয়াটুকুই পাঠকের কাছে প্রধান বিষয় হয়ে ওঠে। তিনি তখন খুঁজতে চান না তার এই ভিজে যাওয়ার উৎসটিকে। 
তবে কবিতার শরীরে কৌশলে ঢুকিয়ে দেওয়া এই রহস্যটিই আসলে জন্ম দেয় এই বহুল প্রচারিত শব্দের—কমিউনিকেশন। কবিতার সঙ্গে পাঠকের কমিউনিকেশন। আর এখানেই যাবতীর দ্বন্দ্ব, ক্ষোভ-বিক্ষোভ। অনেক কবিই এই রহস্যকে ঢেকে দেন অভেদ্য কালো কাপড় দিয়ে। ফলে পাঠক কবিতার ভেতরে ঢোকার চাবিটি খুঁজে পান না কিছুতেই। ভেতরে ঢোকার ন্যুনতম সুযোগও না পাওয়াও পাঠকের ভেতরে সামান্যতম অনুরণনেরও জন্ম দিতে পারেনা সেই কবিতা। হয়তো এটাই সেই কবিতার ব্যর্থতা। অন্যদিকে যখন কোনও কবি তার কবিতাকে একটা অর্ধস্বচ্ছ কাপড়ে ঢেকে দেন। পাঠক সেই কবিতাকে দেখতে পায় তাকে স্পর্শ করতে পারে তার আবছা অন্ধকারে ঢাকা গলিগুলোতে বোধের আলো ফেলতে পারে সবশেষে অনুরণিত হতে পারে। এখানেই সেই কবিতার একটা সফল কবিতা হয়ে ওঠা এখানেই তার উত্তরণ

তবে কবিতার শরীরে কৌশলে ঢুকিয়ে দেওয়া এই রহস্যটিই আসলে জন্ম দেয় এই বহুল প্রচারিত শব্দের—কমিউনিকেশন। কবিতার সঙ্গে পাঠকের কমিউনিকেশন। আর এখানেই যাবতীর দ্বন্দ্ব, ক্ষোভ-বিক্ষোভ। অনেক কবিই এই রহস্যকে ঢেকে দেন অভেদ্য কালো কাপড় দিয়ে। ফলে পাঠক কবিতার ভেতরে ঢোকার চাবিটি খুঁজে পান না কিছুতেই। ভেতরে ঢোকার ন্যুনতম সুযোগও না পাওয়াও পাঠকের ভেতরে সামান্যতম অনুরণনেরও জন্ম দিতে পারেনা সেই কবিতা। হয়তো এটাই সেই কবিতার ব্যর্থতা। অন্যদিকে যখন কোনও কবি তার কবিতাকে একটা অর্ধস্বচ্ছ কাপড়ে ঢেকে দেন। পাঠক সেই কবিতাকে দেখতে পায় তাকে স্পর্শ করতে পারে তার আবছা অন্ধকারে ঢাকা গলিগুলোতে বোধের আলো ফেলতে পারে সবশেষে অনুরণিত হতে পারে। এখানেই সেই কবিতার একটা সফল কবিতা হয়ে ওঠা এখানেই তার উত্তরণ।

একাকি গায়কের নয় তো গান—এই কথা দিয়েই শেষ করি এই আশা নিয়ে কবি ও পাঠকের মেলবন্ধনই বাংলা কবিতাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে আগামীর পথে।

No comments:

Post a Comment