Saturday, July 25, 2020

অনুগল্প : রঙ্গন রায়ের কলমে 
ভাঁজ
রঙ্গন রায়



        কথায় বলে 'এমন ভাঁজ দেবোনা!' কিন্তু এরকম ভাঁজ কেউ কখনোই দেননি কাজল বাবুকে। কাজেই ভাঁজ সম্পর্কিত কোনো স্বচ্ছ ধারণা তাঁর থাকবার কথা নয়। মুশকিল টা হলো সেদিন যেদিন ঘুম থেকে উঠে বিছানা থেকে নামতে গিয়ে তিনি পায়ে মাটি পেলেন না এবং  বিছানা থেকে নামার পথেই স্রেফ হারিয়ে গেলেন। অনন্ত শূন্যতার  পর কাজল বাবুর মনে হল তিনি একটা মাঠের মধ্যে এসে পড়েছেন। নরম সবুজ মোলায়েম ঘাস। এটা কি করে হল? বিছানা থেকে নামতে গিয়ে মাঠে? না , ব্যপারটা গোলমেলে। নির্ঘাৎ স্বপ্ন এখনো রানিং। কিন্তু যখন একটা বলের মত কিছু এসে সজোরে তার বাম  কাঁধে আঘাত করলো এবং তিনি ব্যাথায় ককিয়ে উঠলেন তখন ব্যাপারটাকে আর স্বপ্ন বলে চালানো গেলোনা। এরপরই বাঁশির শব্দ। এবং একপাল লোককে তিনি তার দিকে ছুটে আসতে দেখলেন।
- আরে কী হয়েছে জগন্নাথ দা! কোন জায়গায় লেগেছে? এটা নিশ্চয়ই দক্ষিণ পাড়ার লেন্ডুর কাজ। জানে তোমাকে কাবু করলেই ম্যাচ ওদের হাতে। দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা।
তারপরই হৈহৈ লেগে গেলো মাঠের মধ্যে। কাজল বাবু শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন। বোঝার চেষ্টা করেও মাথায় ঢুকছেনা কিছুই। এরা তাকে জগন্নাথ দা বলছে কেন? আর ফুটবলার?  তিনি কোনোদিন ফুটবল পায়ে ছোঁয়ানো কেন টিভিতে ইস্টবেঙ্গল মোহনবাগানের ম্যাচ অবধি দেখেননি।
একটুপরেই কারা যেন মাঠের তুমুল মারামারি আর গন্ডগোল থামালো এবং ফের খেলা শুরু হল। কাজল বাবু ওরফে জগন্নাথ  দা নিজের দিকে তাকিয়ে সত্যিই ঘাবড়ে গেছেন। লুঙ্গি আর ফতুয়া পরে ঘুমিয়ে উঠে যদি দেখা যায় কারোর গায়ে ফুটবলের জার্সি তাহলে শুধু অবাক নয় আরোও অনেক কিছুই হতে পারে। কিন্তু এখন কাজল বাবু সবার সাথে ছুটছেন। কাঁধে ওরা কী যেন স্প্রে করে ব্যাথা কমিয়ে দিয়েছে। শুন্য মস্তিষ্কে দৌড়তে দৌড়তে কাজল বাবু বুঝলেন কেউ তাকে লেঙ্গি মারলো এবং তিনি পড়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কী আশ্চর্য!  এবার তিনি মাঠে পড়লেন না। একটা অনন্ত কালো গহ্বরের  মধ্যে দিয়ে পড়ে যেতে লাগলেন।

- এই তো মশায় ফিরেছেন। উফফফ কী টেনশনে পরে গেছিলাম। আপনি না ফিরলে তো এই বউ বাচ্চা সব আমাকেই সামলাতে হত! কী কষ্টই না হত তখন!
- মানে!
- মানে আর কিছুই না। এরকম ভাঁজ মাঝে মাঝে প্রকৃতি দেয়। মানে  আপনি আমার সময়ে আর আমি আপনার সময়ে চলে যাই। এটা হয়। ডাইমেনশনাল ব্যাপার স্যাপার বুঝলেন কি না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যাপারটা ৫-১০ মিনিটেই সাঙ্গ হয়ে যায়। কিন্তু এর বেশি হয়ে গেলেই চাপ। তার আর ফেরা হয়না। এই যেমন আপনি পাক্কা ১১ মিনিটে ফিরলেন। আমার তো ভয় শুরু হয়ে গেছিল মশাই!
- এই এটা কেরে? কী সব বকে যাচ্ছে। এই আপনি কে? আমার ঘরে ঢুকলেনই বা কী করে?  আর ডাইমেনশন টাইম , এটা কী ফিজিক্সের ক্লাস হচ্ছে নাকি! সকাল সকাল দিলেন তো মেজাজটা চটকে। 
- সেটাই। আসলে আমি তো প্রায়ই এই ভাঁজের মধ্যে পড়ে, উহু , পড়ে যাইই বা বলি কি করে। আমিই তো এই ভাঁজের স্রষ্টা !
- মানে?
- এটা ফোর্থ ডাইমেনশনাল ব্যাপার , আপনার নিরেট আর্টসের বুদ্ধিতে এসব ঢুকবেনা। আমার পরিচয় যদি জানতেই চান তো দিতে পারি। তবে স্বয়ং অর্জুন অবধি আমার পরিচয় সহ্য করতে পারেনি কিন্তু! 
- এই গাঁজাখোর টা কোত্থেকে এলোরে! এই মোহিনী , শুনছো!
- আমি সেই এগারো নম্বর ফুটবলার। দেখুন এই জার্সিটাই তো আপনি পরে ছিলেন তাইনা? আমার নাম জগন্নাথ। পাড়ার সকলের জগন্নাথ দা।
বলে লোকটা  বিছানা থেকে নামতে গেলো এবং কাজল বাবু নিজের চোখকে সত্যিই  বিশ্বাস করতে পারলেননা , লোকটা একদম ভোজবাজির মতই অদৃশ্য হয়ে গেল!

- আজ্ঞে কর্তামশায়ের ঘুম ভাঙলো? আজকে জগন্নাথ দেবের মন্দিরে আমার পুজো দিতে যাওয়ার কথা না? আর তুমি এতক্ষণ ধরে পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছো ? কোনো কান্ডজ্ঞান নেই তোমার! ছিঃ! স্বয়ং জগন্নাথও কোনোদিন তোমার পুজো নেবেনা এই বলে দিলাম। হ্যাঁ। 
কাজল বাবু পাশ ফিরে উঠতে গিয়ে দেখলেন তার বা কাঁধে এখনো ব্যাথা রয়ে গেছে।

No comments:

Post a Comment