Wednesday, June 20, 2018

কবিতা করিডোর মে - জুন সংখ্যা

মে - জুন সংখ্যা 

"কবিতা করিডোর" এক নিজস্ব ভাবনার 

প্রচ্ছদ অঙ্কন : অভিশ্রুতি রায় 


সম্পাদকীয় 
সমুদ্র আমার কাছে আবেগের জায়গা । সে শুধু ভাসিয়ে নিয়ে যায় । কিন্তু সেই ভুল অচিরেই ভেঙে যায় , যখন দেখি সমুদ্র অনেক কিছুই ফিরিয়ে দেয় আমাদের । ফিরিয়ে দেয় বললে অনেক কম হয়ে যায় । ওর গর্ভে কতো যে সম্পদ লুকিয়ে রেখেছে ঈশ্বর সে কথা একমাত্র সেই বলতে পারে । সাহিত্যও এমনি এক সমুদ্র যেখানে ডুব দিয়ে আমরা কবিতা ,গল্প , উপন্যাস ও আরো কতো কী  যে দেখছি পড়ছি তার ইয়াত্তা নেই । আর এই মাধ্যমটিকে পাঠকের কাছে আরও সরলীকরণ করতেই ওয়েবজিনের ভাবনা । বেশ খানিকটা হেঁটে এলাম । আড্ডায় , করিডোর সম্মান প্রদান এই সবের মধ্য দিয়ে দায় ও দায়িত্ব অনেকটা বেড়ে গেছে । মাঝের একটা মাস নিয়ম মেনে  কবিতা করিডোর বের হয়নি । সেই দায় নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে এই সংখ্যাটি মে - জুন সংখ্যা রূপে প্রকাশ করা হলো । পরবর্তী সংখ্যা ১৫ জুলাই প্রকাশিত হবে । 
প্রসঙ্গত বলে রাখা ভাল সমস্ত লেখার দায় লেখকদের নিজস্ব । সম্পাদক সে ক্ষেত্রে দায়ী নয় ।
       ধন্যবাদান্তে 
            শুভঙ্কর পাল 
যোগাযোগ : 9933770541


পার্থসারথি লাহিড়ির  চোখে কবিতা করিডোর এর আড্ডা :


৯ই মে,২০১৮ “কবিতা করিডোর” এর অনুষ্ঠান। এরকম অনেক সময় হয়, অনেক ক্ষেত্রেই হয়। বিশেষকরে ঘটনাটা বেশি বেশি ‘করে ঘটে মানুষের ক্ষেত্রে যেতে ইচ্ছে করে, সংস্পর্শ পেতে ইচ্ছে করে। আমার ক্ষেত্রে এটা হয়েছে অতনুর দৌলতে, ওর গল্পে। আমার কিন্তু এরকমও হয়, অকারণে হঠাৎ মনে হয় একে আমার পছন্দ হল না। যদিও এটা আমি প্রকাশ করিনা।
“কবিতা করিডোর” মানে তো শুভঙ্কর পাল, সব্যসাচী, সঞ্জীব, সুব্রত, রামকৃষ্ণ, গোপেশ ... অনেকদিন আগেই ঠিক করে ফেলেছিলাম অতনু সুবীর, মানিকদের সম্মাননা অনুষ্ঠানে যাব। ভোর ৭ টায় গাড়ি ধরতে হবে জলপাইগুড়ি এন.বি.এস.টি সি-র ডিপো থেকে। না হলে গাড়িতে জায়গা পাওয়া যাবে না। সময় মতো উঠতে হবে বলে আগের দিন রাতে বারবার ঘুম ভেঙে গেছে, বারবার ঘড়ি দেখেছি কটা বাজে? টোটোতে যখন উঠলাম তখন ঝাঁচক্‌চকে রোদ্দুর, বেগুন্টারিতে পৌঁছুতে পৌঁছুতেই দেখলাম কেমন যেন আলো কমে আসছে, আমি চশমার কাঁচকে সন্দেহ করে সেটাকে মুছতে মুছতে কি প্রচন্ড হাওয়া, টোটোটাকে উড়িয়ে নিয়ে যায় আরকি আর মুহূর্তে আন্ধকার করে রাত নেমে এলো আবার। এভাবে অসময়ে দিনের দ্বিতীয় রাত্রিকে টেনে নামিয়ে নিয়ে আসতে পারে কেবল কালবৈশাখী কীভাবে আটকাই এই এলোপাথাড়ি আকাশ ধোয়া জল? ভিজতে ভাললাগে কিন্তু এই সময়? সেলফোন বেজে উঠল ইথারে অতনুর আওয়াজ “আমরা গাড়িতে উঠে গেছি তোরা কোথায়?” স্বপ্নে কখনও কখনও বিপন্ন বোধ হয়। ওর ফোন কলটাও সেরকম একটা বিপন্নতা ছেয়ে দিল। স্ট্যান্ডে পৌঁছে গিয়েও কোন গাড়ীটা বারোবিশা যাচ্ছে বুঝতে পারছি না। সব খুইয়ে ফেলার একটা আশঙ্কা থেকে আমি ওর ফোনকলটার উত্তর করলাম “ কোন গাড়ীটা”? যথারীতি গাড়ী খুঁজে যখন গাড়িতে উঠলাম তখন আমি আর দুর্জয় ভিজে একশা আমার মনে হল বিপর্যয় আমাকে একটুও ভয় দেখাতে পারেনি যতখানি না বিপন্ন করেছে বাস মিস করার আশঙ্কা। গাড়ী ছাড়ল। আমার মনে হল গাড়ীটা বেশ গম্ভীর। গম্ভীর গলায় স্টার্ট নেবার কারন হিসেবে কন্ডাক্টরবাবু জানালেন এই বাসটা রকেট হিসেবে কোলকাতা যাতায়াত করত কিন্তু জলপাইগুড়ি ডিপো থেকে সেই রুট বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে সে এখন লোকালে চলে কিন্তু তার এক সময়ের আভিজাত্যটাকে ভুলতে পারেনি। সাথে সাথে আমার ছবি বিশ্বাসকে মনে পড়ে গেল, “জলসাঘর” আমাদের যাত্রাপথ আর কালবৈশাখীর যাত্রাপথ যে একই সেটা বুঝতে অসুবিধা হল না। প্রতিটা স্টপেজেই সে তার নিশান ছেড়ে গেছে। রাস্তার পাশে বারোবিশা ব্যবসায়ী সমিতি লেখা একটা হোটেলে ঢুকে দেখি বিদ্যুৎ নেই। আসার সময়েই দেখেছি বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে আছে। জানলাম সমস্ত বারোবিশা বিদ্যুৎ সংযোগের বাইরে। সারাদিনে কবে বিদ্যুৎ আসবে ঠিক নেই তবে এখন হোটেলে মজুত যে জল আছে তাতে আমাদের স্নান ও অন্যান্য প্রাতঃক্রিয়াদি সম্পন্নের জন্যে যথেষ্ট। ইতি মধ্যে সব্যসাচী, সঞ্জীব, সুব্রত, শুভঙ্করা এসে গেছে। আমি সঞ্জীব, রামকৃষ্ণ, গোপেশদের গায়ে গায়ে লেগে থাকলাম। আমার প্রথম বারোবিশা। আমি ওদের থেকে বারোবিশাকে চিনছিলাম। দ্বিধাবিভক্ত বিশাল চওড়া রাস্তার দুধারে গড়ে উঠেছে ব্যবসায়িক জনপদ। একদিকে ভুটান অন্যদিকে অসমরাজ্য। ওরা আমাকে এখানকার ম্যাপ চিনিয়ে দিচ্ছিল। বললাম নদী? সুন্দরী নদীর নাম সংকোশ।
এসেছিলেন দেবজ্যোতি-দা, পাপড়ি গুহ নিয়োগী, শৌভিক বনিক, গৌরব চক্রবর্তী, রেটিনা রশ্মি ও আরও চেনা অচেনা অনেকে। তাছাড়া আরও একজন এসেছিলেন একদম পঞ্চম, আর চারজনকে বাদ দিয়ে চোখে পড়ে। তার চশমাটা দেখে জয়জয়ন্তী সিনেমার অপর্ণা সেনকে মনে পড়ে গেছিল। নামটা ভুলে গেছি। এটা লিখতে গিয়েই সত্যমকে মনে পড়ে গেল। সারাক্ষণ গোপেসের সাথে ছিল বসে। ওর সাথে পরিচয় করিয়ে দিতেই সত্যম হাত বাড়িয়ে দিল। আহা, করমর্দনের টাইম স্প্যানটা যে কা’র ভেতরে হিংসার জন্ম দিতে পারে। অস্বীকার করতে একটুও দ্বিধা নেই, বয়সের কথা ভেবে আমি নিজেকে সংযত করে নিলাম। “যেখানে রোদেরা নরম”,  সত্যমের কবিতার বই, “শুভেচ্ছা”-য় ওর নাম লিখে দিতে সত্যমের চোখ চকচক করছিল।
রাতে আড্ডা হওয়ার কথা। সন্ধ্যায় হোটেলে ফিরে দেখি আলো নেই আর আসার সম্ভাবনাও নেই। জল দূরঅস্ত। এখানে ইলেক্ট্রিসিটি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে দুদিন তিনদিন লেগে যেতে পারে। ভাবলাম, আমার কোন অসুবিধা নেই। একদিন স্নান আর একরাত ঘুম না হলে আমার কিছু যায়-আসে না, তাছাড়া আসার সময় খোলা আকাশের নিচে হৈহৈ একপ্রস্ত স্নান আমার হয়ে গেছে। বলতে সাহস হল না – এক রাত তো ...  বললেই অতনু ঠিক বলে উঠত - তুই এখানে থাক আমরা অন্য যায়গায় যাচ্ছি। একা হয়ে যাওয়ার ভয় কে না পায়? তাই মুখের উপর মারফি রেডিওর তৎকালীন বিজ্ঞাপন টাঙিয়ে দিলাম – চুপ। বাড়ি বদলের উদ্দেশ্যে বার হয়ে পৌঁছে গেলাম “শান্তিবন বাংলো”। জানা গেল অপর্যাপ্ত জল আছে এখানে। জেনারেটর চলবে সারে বারোটা অবধি। আর কি, বাড়ি বদল সম্পন্ন করে বসে গেল সেই রাতের ঠেক রাতের গল্প, রাতের কবিতা। সঞ্জীব, শুভঙ্করের পরিচিত কেয়ারটেকারকে বলে কয়ে জেনারেটার চলল রাত ২টো অবধি, চলল গল্প, কবিতা পড়া আর তার আলোচনা সমালোচনা। তুলনামূলক আলোচনা, বাংলা ভাষার কবিতা, বিদেশী ভাষার কবিতা, বিদেশের কবিতা। গোপেস ছবির জগতের মানুষ সে তুলে আনল চার চারটি রিয়ালিজমের বিতর্ক, কবিতা আর ছবির মিলনের জায়গা। এক সময় চলে এলো কবিতার অবচেতন ও অবচেতনে যুক্তির অনুপ্রবেশ। দেখুন, যুক্তি বড় আপেক্ষিক আর এই আপেক্ষিকতা নিয়েই রাতদুপুরে শোরগোল। এই যুক্তির আপেক্ষিকতা “বাদ” নির্ভর। আবার এই বাদ, টু সাম এক্সটেন্ড আদর্শ। আদর্শবাদকে আমি এক প্রকারের মৌলবাদ বলি। সবাই সবার সাথে একমত ছিল না কিন্তু একমত ছিল কবিতা আর ছবি আঁকা আঁকিতে। অতনু, সত্যম, দুর্জয়, শুভঙ্কর, রামকৃষ্ণ, কবিতা পড়ল। আর গোপেস বলল ছবির কথা। মিলেমিশে ৯ই মে ২০১৮ রাত ছিল এক অনবদ্য ঋদ্ধ হওয়ার রাত. দেবজ্যোতি-দার থাকার কথা ছিল। আমরা তাকে খুব মিস করলাম।    

Tuesday, June 19, 2018


প্রদীপ চক্রবর্তীর গদ্য 
..................................
আত্মস্বর কিছুতেই চাপা থাকছে না ....
...................................................


সীমাভাঙনের খেলা 
.............................

এক/

" আমি স্পষ্ট দেখছি বর্ষা ফেলে আসা সেই সাপুড়ে ,
গলির কানাচে দাঁড়িয়ে 
কেউটের ঝাঁপি থেকে - মণির মতো একটা - দুটো ললিপপ  
আমাদের শৈশবের দিকে ছুড়ে দিচ্ছে ..."
( স্ফি্কস ও অচেনা অর্কিডেরা / বিষবর্ষাদিনে / সুদীপ সান্যাল )

একটা প্রশস্ত লম্বা টানেল | অতীতের শিকড় বেয়ে যে চলে গেছে ,আলো অন্ধকারের কুয়াশা নিয়ে এক অস্পষ্ট গোধূলিয়া মোড়ে | বিমূর্ত ,অবয়বহীন সেই ফেলে আসা শৈশব , যার ফ্রেমগুলো আপাত পৃথিবীর প্রতিদিন ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর সংগে কোনো মিল নেই ..., নেই তার কোনো প্রত্যক্ষ বাস্তব | শিল্পশহর দুর্গাপুরে যে কিশোর বেড়ে উঠেছিলো , দামোদর নদের আঁকাবাঁকা উত্তাল সর্পিল গতির সঙ্গে বন্ধ কারখানার পাঁচিলের চারদিকে বেড়েওঠা জংলা গাছের ঝোপঝাড় নিয়ে | 
সন্ধে বেলায় প্রাচী গাছের শিকড় বেয়ে যে গন্ধ ওঠে , ভোরে সেই গন্ধই বদলে যায় ...| সে চুপচাপ ,সে বারোমাস বিভিন্ন রোগে ভোগা | জানলার এ ' পাশে বসে সে দেখে , জানলার ওপারে চলমান সদর রাস্তা | কারখানার সাইরেন বাজে | দলবেঁধে কারখানার কর্মীরা যায় , সাইকেল নিয়ে | সাইকেলের মৃদু কলিং , একই মানুষ , একইভাবে ,একই সময়ে দুপুরের নির্দিষ্ট sipting ডিউটি সেরে আসে যায় | সে বসে বসে দেখে ,একই মানুষের মুখের পৃথিবী , বিভিন্ন সময়ে বদলে বদলে যায় কি ভাবে ...! সে দেখে একই গাছে বছরভর , পাতার কিনারে হাওয়া , আলস্য জনিত অভ্যাসে বদলে বদলে যায় পাতার কত রঙের রকম ফেরে | কত বৃষ্টিদিনে সাইকেলের টায়ার ঘুরিয়ে খেলতে খেলতে চলে যায় ,তার বয়সী কত কিশোর | ডেগ্গুল, গোবর লাঠি , গাবু খেলা , গোল্লা ছুট , রুমাল চুরি , হুসহুস , লুকোচুরি, ডাংগুলি, ক ত কত খেলা | কোএডুকেশন বেসিক প্রাইমারি স্কুলে সে পড়ে | যখন সে লুকোচুরি খেলার সঙ্গী হয় , তখন ছুটতে ছুটতে শ্যাওলা মাখা পুরোনো নোনা ধরা পাঁচিলের আড়ালে ,সে একদিন দেখে ফেলে কবিতা আর সুলেখার ঝুঁকে পড়া বুকে দু জনের দু রকম রঙের তিল | আলতো লাল ,আর চকলেট মিহি কালো | সে প্রথমবার ভাবতে ভাবতে শিউরে ওঠে ,রোমাঞ্চিত হয় | সে তখনো শরীর বোঝে না ....তবু এক দম চাপা রোমাঞ্চে এক অকথিত দুর্জ্ঞেয় পাহাড়ি বৃষ্টির ঝরে পড়া অনুভব করে কিশোর স্নায়ুর প্রথম ব্যথিত নিঃশ্বাসে ... ... সেই প্রথমবার কি ভাষা হীন কবিতা হয়ে উঠেছিল তার রুগ্ন শরীর ?...সেই প্রথম .....

" সে চাঁদের আলো আমি দেখি নি---
কেবল শেষ - বৃষ্টির সন্ধ্যায় , -- দেখেছি ,
এক ভেজা - জ্যোৎস্না
টেলিগ্রাফের তার বেয়ে অপসৃয়মাণ জলবিদ্যুৎরা  
কীভাবে একে অপরের পিছু নেয় |
তারপর মিলেমিশে একাকার হয়ে রাস্তার স্রোতে খসে পড়ে |

আজো পড়ে |
আজো..."  
( স্ফিঙ্কস ও অচেনা অর্কিডেরা / সেফটিফিন আর চপ্পলের গল্প / সুদীপ সান্যাল )

সেই প্রথম বেদনাহত , এক দৈব বৃক্ষযুবতী স্বপ্নে আসে | লতাপাতা মাখা , বাতাসের ঢেউ অর্থহীনতার নিরুদ্দেশে নিয়ে যায় কিশোরটিকে | জ্বর নামে মধ্যরাতে | পোড়া শরীর কুড়িয়ে ,পৃথিবীর স্বচ্ছ এক নদী ,রাত্রীর সরাইখানায় প্রাকৃতজনের মতো মুছিয়ে দেয় মা নামক সর্বস্ব ও পৃথিবীর কাছে বিষাদিত এক নারী | ছাই থেকে তুলে নেয় মাথা | স্বপ্ন ঘোরে প্রতিটি জলবিন্দুর রঙ যা তার জ্বোরো কপাল ছাপিয়ে নেমে আসছে বুকে পিঠে ঘামে , তার মধ্যে অদ্ভুত এক সুর আর ভালোলাগার আলো রশ্মি চুঁইয়ে পড়ে , গড়িয়ে যাওয়া জলের ঢালে মাছরাঙা পাখিটার ডুব - ঘাই , পৃথিবীর গর্ভতাপ বাড়ে , মায়ের চোখ থেকে কখন যেন ফোঁটা ফোঁটা গড়িয়ে যাওয়া বর্ষা জনহীন অপার্থিব ঘরের মধ্যে , যতদূর চোখ যায় , ফিনফিনে রাতের জানলা পেরিয়ে যতদূর চোখ যায় , ভোর রাতে কমলালেবুর কোয়া ভেঙে আকাশে চলকে ওঠে একসময় ....| পরে কিশোরটি যখন বড়ো হয় ,পরিণত হবার চেষ্টা করে , বুঝতে পারে সেদিন সেই জ্বর , গহন - রতি তৃপ্ত হলে হয় | জন্ম নেয় শূন্য বোধ | স্থিতি শান্ত স্বাধীন সংসার বন্ধন মুক্ত নক্ষত্রপুঞ্জের বলয়ের মধ্যে , ঘরের চেয়েও বড়ো জানলাটা চারদিকে গ্রহ মেঘে ঢেকে যায় তার ...

এভাবেই ভূতগ্রস্ত এক আত্মক্ষয়কারী নেশা চেপে বসে কিশোরের মনে | অবুঝ এক অনুভূতি ,এক আগ্নেয় সুপ্ত মুখের কিছুটা উন্মেষিত হয় | তাকে অনন্য এক পাগল ,দিকদিশাহীন তৃতীয় পৃথিবীর সামনে ঠায় দাঁড় করিয়ে রেখে সেই থেকে চলে যায় ....সে অপেক্ষা করে ....অপেক্ষাকরে .....অপেক্ষা করেই যায় ....অপেক্ষা তার ফুরায় না ..... তার গল্প অসংখ্য গল্পের কোলাজে ঢুকে তার ছোট বেলায় দেখা সেলিম বাবা 'র দূর দিক্চক্রবালভেদী , বায়োস্কোপের মতো রাসপ্রিন্টের বাতিল ফিল্ম গুলোর অংশ হয়ে ,সাদা কালোয় ছড়িয়ে পরে আকাশের আরো গহন আকাশে ....

*** " মাঠের নাম ধরে সবুজ চিরে যায় 
রুমালচোর খেলতে বসে ছেলেটা দু - দুবার কিল খেয়ে দেখে 
রুমালের ঘাম ঝরে গেছে বিকেল গড়িয়ে বান্ধবী ধুলোয় ..."
( রুমাল )

*** " গতির জড়তা নিয়ে একমুখী পাথর জানে 
চুরমার হওয়ার আগে আয়না শেষ প্রতিবিম্ব ফেরত দিয়ে যাবে ..." ( এন্ড অফ উইক- এন্ড )

*** " তার আচমকা গন্ধের মতো ন্যাপথলিন জীবন নিয়ে 
অবসন্ন মনে থাকো 
খোলা জানলা থেকে রঙ এসে 
ক্ষত আরও সবুজ করে দেয়
জলীয় সামুদ্রিক স্বাদ ঠোঁটে লেগে 
অবসন্ন মনে থাকো 
গাছ বলে ভুল করি না এখন  " 

                  ( তোমার ঘা - এর রঙ ঈষৎ সবুজ হলেও )
***( সুদীপ সান্যালের স্ফিঙ্কস ও অচেনা অর্কিডরা , নামক কবিতা বই থেকে )






দমকা হওয়া
বিকাশ সাহা
=============
অলস নির্জন দুপুরে
ভেসে আসা একরাশ দমকা হওয়া,
অব্যক্ত এক বার্তা বয়ে নিয়ে,
পরিশ্রান্ত, ক্লান্ত সে আজ।
চাঁপা কান্না আর অস্ফূট কিছু
আবেগের মুহূর্ত ঠাঁসা মনটা,
সেই দমকা হওয়ায় শিহরিত।
তার বাহিত বার্তাগুলো যেন,
মনের প্রতিটি শিরা-উপশিরা,
অলিন্দ-নিলয়ে প্রবেশ করে,
খুঁজে নিচ্ছে সহোদরকে।
অস্ফূট সেই আবেগগুলো,
আজ বড়ই চনমনে,
অনাহুত অতিথির আগমনে।
চাঁপা কান্না গুলো আজ অশ্রু শুকিয়ে,
বিবর্তনের অপেক্ষায়।
মন খারাপের সিক্ততা কাটিয়ে,
ঝলমলে রোদ্দুর আর তাতে,
একপশলা বৃষ্টির লুকোচুরি খেলার,
মঞ্চ-স্থাপনের প্রচেষ্টায়,
ব্যস্ত আজ সেই দমকা হওয়া।।
চিত্র ঋণ : সমীরণ ঘোষ 

উত্তর -পূর্বাঞ্চলের কবিতা 

উনিশের মে-এর কবিতা 

ভাষা

রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ

খাতায় টানাটানা রোলনম্বর
পরিচয় খুঁজে রাতের হুইসেল
উনিশ ছুঁয়ে আছে
জ্যোৎস্না মাখা লাইন
মেঘ ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে
উপত্যকা কান্না...


উনিশ এলেই

জয় কুমার দাস


উনিশ এলেই

মায়ের সোহাগী আঁচল
চোখের তারায় বৃষ্টি নামায় ,
বরাক ফুপ্ ড়ে ফুপ্ ড়ে কাঁদে
অভিমানে কমলার বাঁশ বাগানে
স্রোতের তুলিতে চাঁদ আঁকে।

উনিশ এলেই

তারাপুর স্টেশনে জোনাকিরা ধর্মঘটে বসে
শহীদ মা পাথরে লেখে ভাষার গান :
কানাই-চন্ডী-হিতেশ-সত্যেন্দ্র-কুমুদ
সুনীল-তরণী-শচীন্দ্র-বীরেন্দ্র-সুকোমল
নামে গড়ে - একটি অস্তিত্বের মাঠ।

উনিশ এলেই

আগুনপাখি সূর্য লড়াইয়ের ধুয়া তুলে
১৯৭২ ,১৭ আগস্ট, ১৯৮৬,২১জুলাই-র
সংগ্রামের খাতাটি আজো কেমন মায়ের ভাষার
অক্ষরে কবিতা লিখতে বলে ; বিজন চক্রবর্তী, জগন্ময় দেব,
দিব্যেন্দু দাস যেন কলমে তুলে বেগ ।


অন্তর শিহরন 

নীলাদ্রি ভট্টাচার্য 

সংকল্পবদ্ধ রক্ত অন্তহীন অস্তিত্বের ছবিদল,
বরাকের অক্ষর কুড়িয়ে রাখা আস্থাশীল মাতৃত্বের জ্যান্ত  দর্শন।
ভালো লাগে গায়ে লেগে থাকা ভাষা স্পর্শের  অমৃত শিহরন
কিছু জমানো পরিচিত নৈবেদ্যে অন্তরতম রোদ্দুর...
দূরে ভাসমান ভাবনা  আলোড়নে অমর উনিশের রক্তিম কৃষ্ণচূড়া।


পরাণের শব্দ তুলে যাঁরা

অপাংশু দেবনাথ

বেদি বেয়ে নামে কার রক্ত! আয় বৃষ্টি, ধুয়ে
নিয়ে যা, নিষ্ঠুর এই পাপ, ভেসে যাক জলে।

এতো কান্না হাওয়ায় ভাসে ফিরে আসে তবু
পুষ্প নিয়ে হাতে বলো রাখি কোন্ বেদিমূলে?
রক্তচিহ্ন লেগে আছে দেখো আমাদের মুখের ভাষায়।

নেই যাঁরা এই ভাষাতেই লেখা হয় তাদের মৃত্যুর ইতিহাস,
পরাণের শব্দ তুলে যাঁরা আমাদের জন্য
রেখে গেছে এই ধারাপাত
আমি হৃদয়ের ঝাঁপি খুলে পুষ্প রাখি তাঁদেরই পায়,

বাঁশকরুলে গোদক রেঁধেছি খেয়ে যাও আর একবার।




১৯ শের গান

শতদল আচার্য

এ সময়  আলোহীন অবসরে

দিব্য চলছে
ভিটে মাটি  হারানোর
গল্প ফিরে আসছে ।

দেশ এখন বাঁচা –মরার গানে
নিত্য দিন ঝুট ঝামেলা
ডি লিস্টে উঠছে নাম
দেশি-বিদেশি নিয়ে হচ্ছে হামলা ।

কে তুমি সুরবালা ?
আশি ছুঁয়েছ  কবে
তোমার লিগেসি খুঁজে এ সময়
তোমার যাওয়া কবে হবে ।



প্রবাসীর ১৯

পিংকি পুরকায়স্থ চন্দ্রানী

আমি সুদূর প্রবাসে,
উনিশের আগুন বুকে,
বাঙলার গান গাই।
ভিনদেশী এক হলুদ পাখী সুর মেলায়,
তারই সুরে।
দুটো অবুঝ পাহাড়ি বালিকা,
মাথা নাড়ে কবিগুরুর সুরের মূর্ছনায়।
আমার ঈশানের বৃষ্টি ভেজা মাটির গন্ধ,
স্পষ্ট হয়,এই মাটির সোঁদা গন্ধে।
তাই হয়তো কৃষ্ণচূড়া ও হাত বাড়িয়ে,
আমার দখিনের জানালায়।
আকাশের নীলিমায়,
ভেসে ওঠা এগারোটি মুখ,
ছায়া ফেলে মনের শার্সি কাঁচে।
মাতৃভাষার মিষ্টতা,
ছুঁয়ে যায় আমার উদাস প্রহর।
কোন অচিন পাখীর ডানায় করে,
এক মুঠো যুঁই, পাঠিয়ে দেই ,
তোমাদের উদ্দেশ্যে।
জেগে থাকো তোমরা চেতনায়,

অবচেতন মনে।

নিষিদ্ধকথা 

অনিরুদ্ধ দেব 

১।

চার হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে আছি
রাস্তার মতো
বুকের ওপর দিয়ে এক এক করে চলে যাচ্ছে সব রেলগাড়ি গন্তব্যে
আমার বোধহয় বাড়ি ফেরা হবে না কোনো কাল

2।

আগুনের নদী থেকে তুলে আনা হলো
দুটো নির্জন দেহ
প্রেমিক প্রেমিকা বোধহয়
হয়তো রং তাদের আলাদা
সারা গা জুড়ে জারুলের ঘ্রাণ এখনও

3।
গল্পের রাজা আজও উলঙ্গ
নির্ভীক ছেলেটার শরীর মৃত্যুর নদী
আঙুল তুলবে কে!
আমাদের মেরুদন্ডে ঘুণের শহর।

4।
একটু একটু করে ঝরে পড়ছে
চাঁদের গা থেকে রূপোলী বালি
দুটি স্তিমিত দীর্ঘশ্বাসে সন্ধিক্ষণে বিগ ব্যাং থিয়োরি
আমি মৃত্যুর জন্ম হতে দেখেছি.....
বসবাস/বেবী সাউ 

এক।

তোমার ভেতর আর কোন হইচই নেই। তেমন কোন গানের নাব্যতা কী ছিল কখনও! দৃশ্যের মাঝখান দিয়ে টুপটাপ ঘোর ঝরছে। আর বিড়ালকে পোষা জন্তু ভেবে সারাটা জীবন শুধু মায়া চেয়ে গ্যাল দু'একটি মুহূর্ত। রান্নাঘরে ভাজা মাছ; মিসেস চৌধুরীর দেওয়া দুধের বাটিতে পোষা আরশোলা--- সাঁতার শিখছে। আর এসবের মাঝখান থেকে তুমি বের করে আনছ সবুজ পাঞ্জাবী। ন্যাপথালিনের গন্ধে জেগে উঠছে শতাব্দীর পোষ-মানা আত্মহত্যা। তুমি কী তাদের এবার আসনপিঁড়ি পেতে পাত খাওয়াবে!

দুই।

বৃষ্টির ভেতরে যেসব গাছেরা হেঁটে যাওয়ার পথ শিখে নিতে পেরেছে, তারাই নির্বাচিত রত্নাকর পুরস্কারে। সংবাদ পত্র উত্তাল। প্রেমিকারা সেজে উঠছে ঘন পাতায়। শেকড়হীন জঙ্গল থেকে, নদীর ধার থেকে, ব্যালকনির ছোট টব ভেঙে বেরিয়ে আসা রোদে-রা মুখে মুখে হারাচ্ছে। বৃষ্টি-ফোঁটাতে  নেমে পড়বে অসংখ্য প্রতিযোগী। অথচ, এই মৃত জল আমার ক্ষতি করতে পারে, ভেবে, কৌশলে তোমার হাত আস্ত একটা কংক্রিটের শহর বানিয়ে তুলছে। বোঝো!
শ্রীমতী দেবানন্দ / নীলাব্জ চক্রবর্তী



সকাল বানাতে বানাতে
শ্রীমতী যে দেবানন্দ
ট্যাটু আর তাবিজে
কেক মাখছেন দুহাতে জুলাই মাখছেন
আশা আশা
ট্যাগ খুলে রেখে
জলের বাইরে
এইসব কাপ কাপ ভাষায়
যেটুকু লোকেশন পড়ে আছে
কেন্দ্র হয়
১০-১২ মিনিটের ব্যাসার্ধে
লোকাস বরাবর যত রঙ
যত রুট শান্ত হচ্ছে
অথচ
এটা একটা প্রেমের কবিতা হবে কি হবে না
তার ঠিক নেই এখনও...


নীলাঞ্জন সাহার চারটি কবিতা


১।আত্মকথা

সমুদ্রকে বেশি ভালোবাসি বলে
পাহাড় আমাকে চূড়ায় উঠতে দিলো না।

২। উপলব্ধি

চেষ্টা করে দেখলাম
নিজেকে নকল করাই সবচেয়ে কঠিন।

৩। সকাল

জলতরঙ্গের শব্দে ভাঙে ঘুম
হয়ত তুমি কোথাও চায়ের কাপে গুলে দিচ্ছো চিনি...

৪। মুগ্ধতা

তোমার বাগানে কত ফুল, প্রভু
আমি তবু তার নাকফুলে
সব মুগ্ধতা খরচ করে ফেললাম!
মাহমুদ নোমানের কবিতা 


১.
চোরাটান

                   (উৎসর্গ: পিয়াস মজিদ'কে)
কলজের বঁডু ধ'রে —
টর্চলাইটের আলো মাড়িয়ে
ঐ-খানে ,
পাটিপাতা ঝোপের নিচে,
কলমিশাকে পেঁচিয়ে থাকা
কেরগলি সাপের ডেঁরায়;
টাকি মাছের ফুলকাতে
গেঁথে গেছে আন্ধা বড়কি।
কালো চুঁকচুঁকে কড়ায়ে ভেজে
আজ তুমি, হেসে উঠো
ভোজন সংগীতে।

অনন্ত ইমরুলের কবিতা 

১. 
মা ও বাবা কিংবা ঈশ্বর

কলস ও পুকুরের সাথে মায়ের একটা
সম্পর্ক ছিল
সম্পর্ক ছিল,কচুরি ফুলের সাথেও
সেই কচুরি ফুল যখন বর্ষার পানিতে
ভেসে গিয়েছিল দূর কোন বিলে
তার বেদনা ঘুচাতেই বাবার এই
যাওয়া-আসা ত্রিবেণীর ঘাটে
ওখানে ইরা, পিঙ্গলা, সুশুমনা পথ ঘুরে
বাবা আমার সাধক
তারপর থেকেই মা, ছোট ছোট কাঁথায়
নকশি করতো আর গুনগুন করে
গান গাইত---

একদিন আঁতুড়ঘরে
অমাবস্যার চাঁদের উদয়
আর বাবার অপলকে অরূপ রূপের লীলা



২.
লাট্টুদার পাগড়ি

রেখে আসা লত্তির প্যাঁচে আনচান
কোন পাড়ায় যদিও থমক
জারুলের ছায়ার সৌহার্দে
              ঝিমগন্ধ হাওয়া---
              পাতারা যেন প্রপেলার
দাড়িয়াবান্ধার ঘরে সুষমার এ ঘুমকাল
কত নটিক্যাল মাইল এগিয়ে গেল!
তার পেশির আইস-ক্রিমে এ চাকার পাখি;
ক্রিংক্রিং বাড়ি জাগায়,

তার ফ্রকের ফিউজে আজও
জিইয়ে আছে আপেলের স্নেহ সব,

উপসংহার---
লাল তরমুজের ভিতর কালো দানা
চির লোকাল----

সেইসব যুবাদের খুঁজি
যারা ভেসে গিয়েছিল সুষমার অলকগুচ্ছের ঢেউয়ে---
গন্ধের সৈকতে তাদের পড়ে আছে সুখতলা।

রুদ্র হকের কবিতা 

উৎসর্গ: আলভিয়া তানজিনকে

১.
তোমার কবরে বৃষ্টি পড়ছে
আমি কী ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে থাকবো?
আমি কী ভারী বটকে বলবো, ‘সরে এসো’?
নামফলকে নাম ভিজে একাকার
আমি কী নামটা নিয়ে পালিয়ে যাবো?
পুলিশের খাতায় নাম উঠলে
আমি কী বলবো না?
সেদিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিলো
আমি ছাতা হাতে দাঁড়াতে চেয়েছিলাম
বটকে বলেছি ‘সরে এসো’?



তুমি মরে গেলে
তোমার সঙ্গে দেখা স্বপ্নগুলো এসে কাঁদছে
বলছে- আমাদের মা মারা গেছে
একটা হাঁসের পুকুরে বসে সারাদিন
আমি দেখছি
ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি উড়তে উড়তে
নেমে যাচ্ছে দূরের মাঠে-
চোখ লাল করে
যেখানে রোজ অন্ধকার নামে.
ফেরদৌস নাহারের দুইটি কবিতা 
মৃত্যুর আগেই আমি তোমাদের সব জল্পনা কল্পনার অবসান করে দিয়ে যাব

১. 
আবহমান

যারা যারা পেরেক ঠুকেছিল,আমি তাদের দলে ছিলাম না
আমি ছিলাম নদীর পাশে পাশে,ফুল তোলা পাখা হাতে
ভ্রমরের পিছে গান গেয়ে 
ও মাটি সোঁদাঘ্রাণ,তোমার ঠোঁট কোথায় 
কোন দূর নক্ষত্রের দেশে মাতাল মগ্নতা মেখে 
নিয়ে যাও আরো দূর পাহাড়ি সন্ধ্যার স্বরগ্রাম ধরে 
যে আমি চিনেছি জল ছলছল
সেই আমি আচমকা ভোরে চাবুকের শব্দে উঠি জেগে

আমি মাটি,আমাকে নির্মাণ কর নিষ্ঠুর অভিঘাতে 
হাড়ের বাজনা বাজাও ধীরে ধীরে, ভেতরে ভেতরে

২.
বিকেলের বৃষ্টি

ভালো আছি,আপনি কেমন আছেন
এখানে আবারও ঠাণ্ডা পড়ছে বৃষ্টি হচ্ছে খুব
দানাদার মৌসু্মি হাওয়া স্নেহবশত ঠোঁটে রাখছে ঠোঁট
বরিশালে কেমন বৃষ্টি,কেমন রোদ
জীবনানন্দ কি ভিজে পুড়ে ঘরে ফিরছেন রোজ 

এইসব গল্পের ঝাঁঝা রোদ্দুর দুপুরকে ফেলে রেখে বিকেলকে জড়িয়ে ধরে 
বৃষ্টির অগোছালো দেহ আমাদের শরীরে আছড়ে পড়ে, পড়ে নাকি 
তার প্রতীক্ষায় বছর যায়, দিনরাত্রির ত্রিভুবন যায়, ডাকে আয় বৃষ্টি আয়

হাসান রোবায়েতের কবিতা 

পায়রার ঘর

*

বেড কভারে আঁকা ফুল— সারাদিন কাটাকুটি করে একটি ভগ্নাংশের দিকে তাকিয়েছে বাবা—

অথচ এমন হয়, ক্ষত শুকানোর পরে কিছুটা প্রসঙ্গ ভেক্টর বসে থাকে চাঁপাগাছ তলে—হোমিওপ্যাথির থেকে মুছে যায় শস্যের দিন—রণশরীরের দিকে যতখানি নিরোদ বরফ: সেখানেও পারাবত ওড়ে প্রাক্তন বীজের সাথে—কেমন সিঁধকাটা বল্লম শূন্য হতে হতে মিইয়ে যায় করতল

আজকাল জুতার কথা উঠলে বাবাকে কুড়োতে যায় কেউ—পায়রায় ঘরে

মিলটন রহমানের কবিতা 

অক্ষয়


প্রশ্নাতীতভাবে যে নক্ষত্রের প্রতি আমরা অবনত
যে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আমরা সাহসী হই
তারওতো কিছু প্রাপ্তি আছে
যে বৃক্ষ ছায়া ও গুল্ম দিয়ে আমাদের প্রানীত করেছে
যে পথ আমাদের অন্তহীন হাঁটতে শিখিয়েছে
তারওতো কিছু চাওয়ার আছে
যে উর্ধ্বমুখী হাত আমাদের আকাশ দেখিয়েছে
যে কথা আমাদের যুদ্ধ জয়ে আপ্লুত করেছে
তারওতো কিছু দেখার আছে
যে বুকে জেগেছিলো বাংলার অবিনাশী গান
যে বুকে লেগেছিলো দখিনা পালের হাওয়া
তারও তো কিছু গান শুনার আছে
যে করোটি ধারণ করেছে সহ¯্র ক্ষত চিহ্ন
যে বুকে স্লোগান ছিলো একতা ও অভিন্ন
তারওতো কিছু প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন

ওই যে উর্ধ্বমুখী প্রান্তর, ওই যে সাতই মার্চ
ছাব্বিশে মার্চের নবনকশার ঘোষণা
মৃত্যুমুখী যাত্রায় যে হীমালয় অবিচল থেকেছে
তাঁর উত্তরসুরীরা বোল পাল্টাবে কি করে?
হে মুজিব, হে পিতাÑ
যারা অকৃতজ্ঞ থেকেছে তারা মুন্ডুহীন
যারা এখনো নগ্ন নকশাকার
তারাতো তোমার সন্তান নয়
অন্যকোন বীর্যনিসৃত পরগাছা
এই বাংলায় যতদিন বাতাস খেলা করবে
ততদিন তুমি বেঁচে রবে
এই বাংলায় যতদিন উদ্যান রবে
ততদিন রবে তোমার অবিনাশী গান
তুমিই আমাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
 

প্রিয়ভাষিণী


মাঝে মাঝে পথ ভুল করে চলে যেও পাখি
বেলা শেষে থেমে গিয়েÑ
নেমে যেও মাঝে গন্তব্যহীন কোন পথে
একদিন যেভাবে অনিচ্ছায় থেকেছো অন্ধকুপে
রেখেছো হাত কৃষ্ণাভ রাতেÑ
ওরাইতো সেদিন ঢেলেছিলো বিষ ওই দ্বৈরথে।

আমাদের জন্য রেখো না কোন শোক হাহুতাশে
যে ঋণ তুমি দিয়েছো আমাদেরÑ
রেখে গেছো অংকিত উদ্যানের শোভিত রেশে
সেই ভালো তুমি মরে যেও মাঝে শীতবৃক্ষের মতো
বিষাঘœ রাত শেষে কোন এক ভোরেÑ
আবার জেগে উঠো তুমি শঙ্খমালা আর কেশে।

চাইলে তুমি নিতে পারি হাতে হাতুড়ি-শাবল
দিতে পারো হাতে বুলেটের তুঁলিÑ
যদি তুমি ডাকো নতুন কোন যুদ্ধরণতরী
আমরাতো আছি মুটে-মজুর যার যা কিছু আছে
হাঁক দিয়ে কেবল ডাক দিলে তুমিÑ
ধনুকের মতো ক্ষীপ্রগতিতে আমরাইতো লড়ি।

কখনো কখনো পথ ভুল হলে কি আর এমন হয়
ট্রাফিক সিগনাল পথ মেলে দিলেওÑ
আর্তস্বরে তুমিইতো ডাকো হেÑÑ প্রিয় সুহাসিনী
তোমার দেহত্যাগ প্রস্তান নয় কোনো এই দাবি মানি
তোমার হাতের অক্ষররা আছেÑ
আছে বুলেটের মতো লালটিপ তোমার ওগো প্রিয়ভাষিণী।

বিরতি


কারুকর্ম কিছুকাল বন্ধ রেখে ভেবেছি অস্ত্রবাণিজ্য করবো
লক্ষ্য ঠিক করে ট্রিগার চালনার বিদ্যা আয়ত্ব করবো
কড়কড়ে নোট আর নারীগন্ধময় সময়ে লেপ্টে থাকবো
কিছুকাল আমি এভাবে আর শিল্পকর্মে থাকবো না
প্রয়োজনে পতিতালয়ে দালালি করবো
পানমত্ত পড়ে থাকবো কোন ভাগাড়ে
তবুও কিছুকাল রচিবো না কোন কিছু
প্রয়োজনে কোন নারী নেত্রীর সাথে মিছিলে যাবো
ভাড়ার বদলে আড়ালে একটু সময় চেয়ে নেবো
আমি এখন বাণিজ্যিক, চাকার সুগন্ধে পাঁড়মাতাল
আমি এমন সময়ে আর শিল্প করবো না
আমি কিছুকাল পতিত হবো
তারপর কোনকালে মৃতগন্ধ থেকে
ফুলের সুভাস নেবো
আবার কবি হয়ে উঠবো
আঙ্গুলের ডগায় ফোটাবো এটমবোমার মতো কবিতা
যে কবিতায় কেবল অগ্নিভূগ পতঙ্গের গান থাকে।

Sunday, June 17, 2018


মৃণালিনির কবিতা 

   আগ্রাসী অঙ্কুর সিরিজ- 

              

মেঘ নেমে আসুক গোলা বারুদ হয়ে
বিস্ফোরণ দুটি ঠোঁটের স্পর্শে
আগ্নেয়গিরি ফেটে পড়ুক না হয় একবার সৃষ্টির উল্লাসে
অভ্যন্তরে জমা হোক মেঘ বাস্প।

রোমকূপের ঘাসেরা দুলে দুলে মাথা নেড়ে যাক-
সবুজ শস্যদানা ধানের শিশ হয়ে
শ্যামলিমা ছড়িয়ে দিক থর মরুভুমিতে
আকাশের বুকচেরা ভালবাসা ছড়িয়ে দাও একবার ভুমিতে।



            
জঙ্গলের পশুদের নিয়ে ঠাকুরমার ঝুলি খুলে বসি
               পেছনে তুমিও এসে বসো

গল্প শেষে ভেসে যাব অলকানন্দায়
পাড়ের বাঁধ ভেঙ্গে নতুন অধ্যায়।
সন্ধ্যা তারাদের নিয়ে আলপনা- আমার বসন্ত বাতাস
আদম-ইভ আসবে পিছু পিছু খোসা ছাড়া আপেল হাতে।

ওদের দেখে লজ্জায় রাঙ্গা হলে
কামরাঙ্গায় কামড় দিয়ে যেও আধখানা।




                          

মাটির নরম বিছানায় তুমি জলন্ত পলাস
আমি বৃষ্টি নিয়ে তোমার শরীরে
পলাস, পাপড়ি মেলে দেখো
এক আকাশ মেঘ জমা আমার বুকে
ঝরে পরবে শরীরে
ঝরে পরছে
       ঝরে পরবে
            ঝর ঝর ঝরে পরবে
তুমি আগুনরঙা থেকে তৃপ্তির গৈরিক হলেও
      বৃষ্টি ঝরে পড়বে চিরকাল অঝোরে
নদীর পাড়ে হবে আমাদের বসন্তবিলাস।


                               

আনমনে বসে থাক যেন তুমি রাধিকা
সুনীল ভালবাসা তোমার জন্যে
মানুষের প্রশ্ন-উত্তর বাঁচিয়ে বাঁচিয়ে
আরও জমা হয় সেই ঝলকময়ী ঝর্নার মোহময়য় আকর্ষণ
ম্যাগনেটিক টাচ-

তোমার প্রিয় গোলাপের সঙ্গে একটু বড় মাপের ব্লাউজ
লাল শাড়ির ভাঁজে পাঠিতে দিয়েছি, সান্ত্বনার রসে ভিজিয়ে
              আর সংযমে বেঁধে রেখেছি নিজেকে।






তবুও মন আনচান সেই মেয়েটির জন্যে
ময়ূরাক্ষী চোখ, কাঁচা হলুদ রঙে সারা শরীরে স্তন ফুল
সুগন্ধ নাকে সারাক্ষণ তার ছোট্ট ফ্রকের ঝুল।

থেমে আছি আমি, আমার সময়, আমার মন
গহ্বরে উত্তপ্ত টগবগে ভালবাসা
তুমি এসব জেনেও উদাসিন ফ্লোরা
ফ্রকের ঝুল ছাড়িয়ে তোমাকে পরিনত করেছি নারিতে
শাড়িতে নারি তুমি, এখন বেশ আধুনিকা।



        

কিছু কথা কানে কানে ঝাড়বাতি
ইউক্যালিপটাস
অকেজো কথার মেঘগুলো উড়িয়ে দিও পুরনো প্রেমিকার মত।

শরীরে অ্যাপেনডিস্কে অস্ত্রপচার নিষ্প্রয়োজন ভেবো না
শারিতে আধুনিক নারি হয়ে বদলে ফেলেছি রিং টোন;
চাঁদের পাড়ে  বালির চিকিমিকি ফোঁটা নক্ষত্র
ক্ষীণ আলোতেও দেখবে নিজেকে বিবেকের আয়নায়
কিছু স্মৃতি মনে এলে নিভিয়ে দিও ঘরের বাতি
পরস্পরকে জড়িয়ে ধরো মিথ্যা ভালবাসার বাহানায়।

                                   







অর্ঘ‍্যদীপ বন্দ‍্যোপাধ‍্যায়
এক শহরের রাতে।


পিচের কালো মসৃণ দেহ শুয়ে পড়েছে সরল সর্পিল ভঙ্গিতে।
এখন রাত-ঘোর অন্ধকার ঝুঁকে আছে কালো পিচের দিকে।
বৈদ্যুতিক ট্রামের স্তব্ধতা–-- বাসের বাষ্পীয় নি:শ্বাস,
রাস্তায় পড়ে আছে বিকেলের মিছিলের পোস্টার,
তাতে মুক্তির কথা-সূর্যোদয়ের বার্তা-
রাত্রিকে তা করে তুলছে আরো ঘনীভূত।
তারই পাশে ফুটপাথের বাসিন্দাদের সংসার,
ছেঁড়া জামা-জটপড়া চুল-ফাটা বাসন-
আশেপাশে কিছু কুকুর।
মাথার ওপর উড়ালপুলের ছাদ।
আগে ছিল আকাশের শামিয়ানা,
এখন পেয়েছে কংক্রিটের নিরাপত্তা-আপাতত(কারণ, যেকোন দিনই ভেঙে পড়তে পারে অবশ্য)
সমস্ত কিছু ঘিরে উচুঁ নিচু শ্রেণির মাতালের ভীড়,
বিভিন্নরকম বারাঙ্গনার আনাগোনা,
চলে দরকষাকষি।
এরই মধ্যে হঠাৎ জ্বলে ওঠে সংগৃহীত খড়কুটো থেকে আগুন-ফুটপাথে।
তবে, সকাল থেকেই আকাশে চাপচাপ মেঘ
বৃষ্টিও নামতে পারে যেকোন মুহূর্তে।

রাহুল গাঙ্গুলী

মাঝামাঝি অবস্থান ~ ১টি দৃশ্যবার্তা কোলাজ
(২য় অংশের পর)
------------------------------------------------------------------

চাপ ~ ১টি অস্থায়ী তাপমান-সূচক শুভাহ্ন অক্ষরেখা বরাবর।বিষন্নতা : সাময়িক পাস্কেলের সূত্র বরাবর।পথ < হাঁটি।খুঁড়ি।কাটি > সরলরেখা দিয়ে আবেগের জ্যা ~ ধোঁয়াশা-ধোঁয়াশা প্রতিকল্পনা যেমন ______
:
এই মুহূর্ত ~ মুহূর্তকাল।ক্রমবর্ধমান ঘর্ষণ-ধ্রুবক
চাপ : ৮৭৬ মিলিবার। রাত ১১-২৩।দিন ২৩/০৫/১৮
স্থান ~ সমুদ্র থেকে হলদিয়া → কিছুটা ভাসমান 
উষ্ণতা ~ ৬৬(½)℉ ~ কৌণিক অথবা হেলানো
অক্ষাংশ : (৮১.৯৫৭১৫ - xxx) ~ উড়ান
দ্রাঘিমাংশ : (১৬.৪৪২৯১ - yyy) ~ প্যারাশুট
উচ্চাংশ মাত্রা : (z - উচ্চতায় সমুদ্র পিঠ ~ উল্টো)
:
কখনো কোনো উল্কার সাথে সঙ্গম? ভেবেছো কি জটিলতা ~ তুমি এলে : এলোমেলো : বিখরানো শারীরিক খোয়াব ~ অভিন্ন নতমস্তক ____
মনে হয় : বেখেয়ালি বেহায়া সময়, যেন বিদ্যুৎ ঝলকানির পর একেকটা প্যারাচৌম্বক।কাছে আসে অথবা যায় ~ অলীক ৭-কাহন ~ রোদেলা মাস্তুল আছড়ে পড়ে নিরাসক্ত নিরাকার গাছশেকড়ের শরীরে।আসলে আদ্যন্ত একটা ৩য় আড়াল।যার গভীরে মন একটি টোটোগাড়ি ~ সওয়ারী শরীর।সূত্র "এগিয়ে চলো।পাল্টাও সাবেকী দৃশ্যের সাবমেরিন।"
:
মাস্তুল : কথা বলছো না কেন? তবে কি অর্থহীন নিরাবতা।হয়তো মন্ত্রঃপূত জল ~ মেঘলা চাহিদায় আসমানি সালোকসংশ্লেষ

রাহুল : কখনোসখনো মেঘেদের অন্ত্যমিল ~ আগুন জলে।কথা পোড়ে।গোপন ফসিলের চাষ

মাস্তুল : তবে যে কেবলই বলছো ~ 'গতি বাড়াও।নতুবা ছুঁইছুঁই অনামিকা'

রাহুল : ঠিক এতোটা সব্বোনাশ নয়।ঝড় ও মেঘলা সাবুদ

মেঘ : খামোকা আবার অকাল দ্বিরাগমন কেন?বেশ ছিলে ~ পালকের মতো চিঠি, যেভাবে ছিঁড়ে ফেলতে আর কেবলই ওড়াতে

ঝড় : আমারও কিন্তু একই কথা ~ অস্থায়ী যতুগৃহ

রাহুল : কথারা ইদানীং মেগাস্থিনিস্ হতে চায় কেবলই।বিসর্জিত নোনামাটি ~ আণবিক মৌসম্

সমুদ্র : আগলে থাকছি।তাতে তো ক্ষতি নেই কোনো

মেঘ : উঠে আসুক তাহলে ডাগরচোখ।গোলাপি মাছ ও মেয়ে ~ কানামাছি ইশারা-র খেল

মাস্তুল : ঘনো আবেগের কথা।কতো দৃশ্যই স্বপ্নিল যাপনের কাছাকাছি ~ অলীক দূরত্ব

রাহুল : হয়তো এভাবেই চিরায়ত মাটির পোশাককে ঘুম।যতিচিহ্ন প্রশয় দিচ্ছে দেখ

গোলাপি মাছ : আমার কথা কি তাহলে স্মৃতিভ্রম?

ঝড় : তিরতিরে বর্ষাতি চুমু ~ তির্যক জল অথবা টাপুরটুপুর মুষলধারা

গোলাপি মাছ : বড্ডো ভালোবাসি যে ~ ভারী জরায়ুজ আবেশ

রাহুল : এসো তাহলে ~ সকলেই ভিজতে ভিজতে ভেজা কাগজের উপকেন্দ্র বরণ করি।বৃত্তীয় রাতের ভিতর ঢেলে দিই বরফিলা আলো-র রম্বস

:
এসো সকলে।সকলেই আমরা যেন পবিত্র উপবীত।শুদ্ধ রাত ~ বিশুদ্ধ গভীরতা ~ জাহাজঘাটের চেয়েও বিশুদ্ধতম
এসো ~ প্রকাশিত হই : পুরনো খামের ঘাম ~ সমুদ্র + মাস্তুল + মেঘ + ঝড় + গোলাপি মাছ 



শব্দরূপ : রাহুল

(দৃশ্যবার্তা নিয়ে কাজগুলোর আরেকটু এগিয়ে যাওয়া।এবারে দিন, সময়, অক্ষাংশ এবং দ্রাঘিমাংশের সাথে যোগ হলো উচ্চতার মাপ এবং বাতাসের চাপ ও উষ্ণতা।এই কাজটির মূল উদ্দেশ্য হলো ~ মহাব্রহ্মান্ডের অন্তর্নিহিত প্রকৃতির ভিতর প্রবেশ এবং তার উপাদানগুলির সাথে আত্ম-উপলব্ধির সংযোগ স্থাপন ~ বার্তা বিনিময় মাধ্যমে।প্রকৃতির এমন কোনো উপাদান নেই, যা প্রাণস্পন্দনহীন এবং যা আমাদের উপকার করতে চায় না।ক্রমশঃ)
অনুরূপা পালচৌধুরীর কবিতা 


ত্রিকোণ ছায়ার অখন্ডতা
-----------------------------------


কুয়াশার কুপিতে ঘরপালং -এর ঘাসদেউরখা

মুখোমুখি গাঢ় দুপুরের মাঞ্জাদেওয়া শিলগাছ

আসলে ১চোরা বসন্তনখ্ : মুকুব করে দীর্ঘ ঘামরাস্তা

      আধপোড়া সূর্যে দাসত্বের ঘুড়ি উড়িয়ে

      পরিচয়বোধে আড়াল করি আয়তপথের বরফদেওয়াল

ভেসে যাওয়া ছায়াকোষ : আদতে বোবামোমের (+)(-)

     অবশিষ্ট নগ্নজলে আলোফলের চিৎসাঁতার

     তুমি কেঁপে ওঠো স্থলজ আয়ুর নাভি ছিঁড়ে


মাথাভাঙ্গা সিরিজ থেকে দুটো কবিতা
---------------------------------------------------
             বিপ্লব সরকার 

মাথাভাঙ্গা
--------------
১)
পপকর্ন চিবানো গল্পের ভিতর দিয়ে 
হেঁটে আসি

উদ্ধার করি ঘাসের গর্ভে লুকিয়ে রাখা সুচ 

আমার শহরের জন্মকথা অবধি
                            অজস্র পাতার হকারগল্প বুনন 

২)
এই শহরের অলিতে গলিতে 
কবির উপদ্বীপীয় যন্ত্রণারা তাজা হয়ে ওঠে 

অনেক দিন বদলের ইতিহাসের ভিতর
প্রচ্ছন্ন আজও প্রথম পিঙ্কিবেলার যাপনটুকরোগুলো

আর হৈমন্তি বিকেলের গায়ে এখন 
                                                    ভাঙারী শব্দগুচ্ছ 



লাল কাঁকড়া

জ্যোতির্ময় মুখার্জি 


মেয়েটি নাম ভুলেছে
.
যদিও এই প্রথমবার নয় এবং হয়তো শেষবার মাঘি পূর্ণিমায় আগুন জ্বলেছিল। বলাৎ শব্দের পর ঘুরতে ঘুরতে চুরি হয়ে গেছে আট’টি বছর
.
শরীরই যথেষ্ট নয়
শরীরের খোলে শরীর ঢাকবার
.
তারপর জাহান্নামের প্রসাদ খেয়ে সাঁতরেছিল মেয়েটি। অপটু সাঁতার শেষে, সাদা খই খই পায়ে থকথকে লাল কাঁকড়া
মানুষ হবে!!  
গায়েত্রী দেবনাথ


বা ষ্প জমা গলায় হুঙ্কার
ট্রামে বাসে
নিরুত্তাপ কথা বাতাসে
মৃত্যু নিঃশব্দ পায়ে
জিজ্ঞাসা করে
মানুষ হবে?
আকিবুকি ছবি
কচূরিপানার ডোবা বাধানো
পাগলির রাস্তা ওল্টানো
নিকষ অবয়ব
প্রতিদ্ধনি ফিরে যায়
কপালে রক্ত,’কনকচাপারা মৃত
দায়হীন অনায়াস
নদীটির মাতৃস্নেহ
মোহনার সূ্র্যাস্ত
লাল আভায়
লেলিনের শ্লোগান
কোলাজে— —মানুষ হবে!!