Tuesday, June 22, 2021

কবিতা করিডোর, জুন সংখ্যা , ২০২১

 কবিতা করিডোর , জুন সংখ্যা , ২০২১





সম্পাদকের কলমে

নিয়মিত হয়ে ওঠার চেষ্টা করে করে আজও সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি । মাঝে মাঝে কিছু সংঘাত জীবনকে থমকে দিতে চায় । কিন্তু জীবন মানে তো চলমান একটা নদী ।থেমে যাওয়া নয় বরং বিরতির প্রয়োজন আছে । কিন্তু এই আতিমারির বিরতি মানুষের বেঁচে থাকাটাকেই চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিয়েছে । তবুও হারতে আমরা শিখিনি । বরং আশাবাদের ভেলায় চড়ে আমরাও বেহুলার সত্তা নিয়ে বেঁচে আছি । দেশের অর্থনীতি যখন মুখ থুবড়ে পরার উপক্রম ,  মানুষের বিশেষত সাধারন খেটে খাওয়া মানুষ যখন গৃহবন্দী তখন সরকার পেট্রো পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি করে মানুষকে আরও বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে । স্বাভাবিক ভাবেই এই সব ভাব ভাবনা লেখার মধ্যে ছাপ ফেলছে । তবুও কবিদের নিজস্ব একটা জগত থাকে । সে নিজের মত  করে  নিজের লেখাটাই লিখে যায় । আমরা শুধু সেই অক্ষরের ভিতর নিজেদের যাপনটাকে খুজে নিই । এই সংখ্যা শুধুই কবিতার হলেও মনোনীতা দির একটা গদ্য আছে ।

 

প্রচ্ছদ ও অলংকরণ  শুভঙ্কর পাল

অলংকরণ চিত্র সংগৃহীত হয়েছে গুগল সার্চ ইঞ্জিন থেকে 

যোগাযোগ -শুভঙ্কর পাল ( সম্পাদক )

সহ সম্পাদক  সব্যসাচী ঘোষ

উত্তর পূর্বাঞ্চলের সম্পাদক  রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ

বাংলাদেশে বিভাগের সম্পাদক  ফারহানা রহমান

ই-মেইল  subhabrb@gmail.com

মুঠোফোন  ৯৯৩৩৭৭০৫৪১

 

 সুভানের কবিতা

ধুতুরাগাছ




বন্ধুরা একটা সময়ের পরে ধুতুরা গাছ হয়ে যায়।

কাঁটাফল ও শীতকালের মাঝে সাদাবকের গ্রীবার মতো

সুযোগ ও মাছ ধরে খায়।

আবার যৌথখামারের রঙ পুরনো হলে 

তুলসীমঞ্চে আগুন। কেউ কেউ গুটিপোকা। 

রেশমের কীট হয়ে খুব দাম বাড়িয়ে ফেলে, 

প্রাক্তন প্রেমিকার মতো কণ্ঠিবদল করে নেয়। 

তুলসীর মালা। কাঁটাচিহ্নের দাগ।

এদিকে বাগান পুড়িয়ে রত্নাকর 

আরও একবার পাপস্খলনের গল্প লিখতে চায়।

আর্তজনকথা 

প্রবীর রায়




ভেবে রাখাটাই সব নয়
আলাদা আলাদা বুদবুদে
ভেসে যাচ্ছি যার যার আকাশে
মসৃণ নিরাপদ বলয় ফাটোফাটো

এরকম ঝুঁকিটাই সব নয়
বায়ু থেকে প্রাণ ছটফটে
ভীড়ের মধ্যে সকলেই একা একা
মৃত্যুমিছিলে সারিবদ্ধ
পুতুল্পুতুল খেলা হোক
মেলামেশা হোক

দ্য লাস্ট ডে’জ অফ দ্য কনডেমড।। 

ফারহানা রহমান 




কোনো তৃষ্ণাই কি মেটে
আনন্দ, বেদনা কিংবা বিশুদ্ধ সৌরভের?

এ হৃদয় তো এক কোমল পাখি  
কখনো বা বন্দি থাকে খাঁচায় ; 
কখনো উড়ে যায় আকাশে 
আবার মাঝেমাঝে বুনোহাঁসের মতোই 
কুয়াশায় ডুব দেয়,
.  
দ্যাখো অঝরে যে বৃষ্টি ঝরছে 
আনন্দ নগরীর ঝলমলে উচ্ছ্বাসে    
সেখানেও কোথাও কোথাও থাকে 
কবরের অন্ধকার 
আর তখনই বহুদূর থেকে ভেসে আসে স্মৃতি।
এক একটি আঁচড়ই তো এক একটি ক্ষত 
এই পৃথিবী ধারণ করে চলেছে সেইসব ক্ষয় 
ওখানেও থাকে মন ছটফট করা দুপুর 
উদাস করা গোধূলির মায়াময়ী আলো 
আমি মোসাফির হয়ে যাই 
.   
এ এমনই এক আশ্চর্য মৃত্যুর মতো অনুভূতি 
যা আমার চলাকে পিছনে ফেলে চলে যায় 
আর চোখের সামনেই
আরও জোরে এগিয়ে চলে 
জনশূন্য মালভূমি।  

কাল সারারাত একটি পাখিকে বুকে নিয়ে ঘুমাতে চেয়েছিলাম বলেই কি
আমাকে এভাবে শবের মিছিলে ফেলে চলে গেলে?

যারা যেতে চাচ্ছে

বিবেক রায়




যারা যেতে চাচ্ছে  -- তাদের যেতে দাও
থাকলেই বরং অন্ন ধ্বংস হবে,
যেতে আমি ভুলে গেছি বলেই , নির্লজ্জের মতো বেঁচে আছি
এ বাবুদের সমাজে শোভা পায় না, ঝোলা নিয়ে দুয়ারে দুয়ারে ঘুরা ।

যারা যেতে চাচ্ছে   -- তাদের যেতে দাও
যারা দেশ ছেড়েছে -- তারা কেউ ফিরে আসেনি
আমার সেই একই চিন্তা -- শহরে বুকে কেন এতো হাত -- জেগে ওঠে অনাথ শিশু ।

যারা যেতে চাচ্ছে  -- তাদের যেতে দাও
আমারও অনেক আগেই যাওয়ার কথা ছিলো
কিন্তু আমি পারেনি , এক একটার অনাথ শিশুর বায়না পূর্ণ করতে করতে
লাল বেলাটাও ডুবে গেছে
ইশ্বর তুমি তো জানো, আমি অন্ধকারে ঝাপসা দেখি -- অন্ধকার  ভয় পাই  ।

যারা যেতে যাচ্ছে -- তাদের যেতে দাও
আমার অপেক্ষা করে, নিজের বারোটা বাজিয়ো না
আমার আর ইশ্বরের কাছে যাওয়া হবে না ,
আমি গেলে শিশুদের হিসাব করবে কে ----
বরং এক তারা হাতে নিয়ে জীবনের সব যন্ত্রণা মুছে দেব, --- জীবনের আঙিনায়
ভুলে যাওয়া - চলে যাওয়া কি এতো সহজ
এ মাটির সাথে যে আমার একটা বংশ পরম্পরাগত একটা সম্পর্ক আছে ------

পাবলো নেরুদার কবিতা


অনুবাদঃ মানিক সাহা 





পাবলো নেরুদা (১৯০৪ - ১৯৭৩) প্রকৃত নাম রিকার্ডো এলীসার নেফতালি রিয়েস বাসোয়ালতো।তিনি তাঁর বাবার জন্য পাবলো নেরুদা ছদ্মনাম গ্রহন করেছিলেন।


১৯৭১ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজেতা একজন চিলিয় কবি, কুটনীতিবিদ ও রাজনী ছিলেন।বিদ। নেরুদা মাত্র তেরো বছর বয়েসে কবি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন যখন তিনি বিভিন্ন ধরণের কবিতা লিখতে শুরু করেন। এর মধ্যে ছিল পরাবাস্তববাদী কবিতা, ঐতিহাসিক মহাকাব্য, প্রকাশ্য রাজনৈতিক ইশতেহার, গদ্য আত্মজীবনী এবং ভালোবাসার কবিতা।নেরুদার প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয় যখন তাঁর বয়স মাত্র সতের বছর এবং খুব দ্রুত তাঁর কবিতার উন্নতি ঘটতে থাকে। ১৯২৪ সালে প্রকাশিত Twenty Love Poems ang a Song of Despair শীর্ষক কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের পর তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতিলাভ করেন। তাঁর এই কাব্যগ্রন্থটি সবথেকে বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করে এখনো সমান বিক্রিত ও জনপ্রিয়কাব্যগ্রন্থ।


নেরুদা ১৯৭১ সালে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। 


অনুদিত এই কবিতাদুটি 'Twenty Love Poems and a Song of Despair' থেকে নেওয়া হয়েছে।



এক নারীর শরীর 


এক নারীর শরীর, ফর্সা গোঁড়ালি, ফর্সা দুই উরু,

তোমাকে সমর্পণে রাজী এক বিশ্ব মনে হয়।

আমার খড়খড়ে চাষা-শরীর তোমাকে খুঁড়ে চলে

এবং মাটির গভীর থেকে লাফিয়ে ওঠা সন্তান বানিয়ে নেয়।


আমি ছিলাম সুরঙ্গের মতো একা। পাখি আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল,

এবং রাত হিংস্র আক্রমণে ভাসিয়ে নিয়ে যেত আমায়।

নিজেকে বাঁচাতে আমি তোমাকে অস্ত্রের মতো ব্যবহার করেছিলাম,

আমার ধণুকে তীরের মতো, আমার গুলতিতে পাথরের মতো ছিলে তুমি।


কিন্তু প্রতিহিংসার সময় কেটে যায়, এবং আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলি।

তোমার এই শরীর চামড়ার, শ্যাওলার, আকাঙ্খা  ও তীব্র দুধের। 

ওহ স্তনের ওই পানপাত্রগুলি! ওহ উদাস চোখগুলি!

ওহ জঙ্ঘার গোলাপগুলি! ওহ তোমার কণ্ঠস্বর,  ধীর ও করুণ!


আমার নারীর এই শরীর, তোমার স্বর্গীয় লাবণ্যে আমি বেঁচে থাকবো।

আমার তৃষ্ণা, অন্তহীন বাসনা, আমার পরিবর্তনশীল পথ!

এই অন্ধকার নদীচর যেখানে অনন্ত তৃষ্ণা বয়ে চলে 

এবং ক্লান্তি তার পিছু পিছু চলে, এবং যন্ত্রণা অসীম।






আহ পাইনের বিশালত্ব


আহ পাইনের বিশালত্ব, স্রোত ভেঙে পড়ার ধ্বনি, 

আলোর ধীর খেলা, নির্জন ঘন্টা,

তোমার চোখে গোধুলির আলো এসে পড়ে, খেলনা পুতুল,

মাটির খোলস, যাতে এই পৃথিবী গান গায়!


তোমার ভেতর নদী গান গায় এবং তোমার ইচ্ছে মতো আমার আত্মা 

তাতে বয়ে চলে, এবং তাকে তুমি ইচ্ছেমতো যেখানে খুশি পাঠিয়ে দাও।

তোমার আশার ধণুকে আমার পথ

এবং উন্মত্ত হয়ে আমি আমার তীরগুলি ছুড়ে দেবো।


চারদিকে তোমার কুয়াশার কোমর

এবং তোমার নৈশব্দ্য আমার আর্ত সময়কে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়;

আমার চুম্বনগুলি নোঙর ফেলে, আর আমার চটচটে আকাঙ্খা 

তোমার স্বচ্ছ পাথরের হাতের সঙ্গে তোমারই ভেতরে আশ্রয় নেয়।


আহ তোমার রহস্যময় কন্ঠ যা প্রেমের কথা বলে এবং 

প্রতিধ্বনিত ও মৃতপ্রায় গোধুলিতে ডুবে যায়!

এভাবেই গভীর ও নির্জন  সময়ে মাঠে মাঠে দেখেছি

বাতাসের মুখে গমের কানগুলি প্রতিধ্বনিতে আন্দোলিত হয়।

 



সম্বল
পার্থ সারথি চক্রবর্তী 

অক্ষরে অক্ষরে ডুবে থাকার সংকল্পে
- বিভোর যে মনপ্রাণ 
তার কাছে দিন কী, রাতই বা কী!
আলোর ঝাঁঝ বা অন্ধকারের নির্মমতা-
একই রকম আঘাত নামিয়ে আনে।

জাগতিক সব মোহ, আকাঙ্খা কবেই ঘুচেছে-
শুধু মেরুদণ্ডটাই আঁকড়ে ধরে আছে
শেষ পর্যন্ত, সেটাই একমাত্র সম্বল।


 ডানা


রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ 


কল্পনায় শূন্যতার বৈপরীত্য 

একটা শব্দ আর সহজ কিছু বন্দনা 

উপেক্ষা করে বসন্তের ভোরে জলসায় 

আগুন ছেঁকা গান...


ঠিক যেন ডুমরুর ছন্দ

নিয়মিত ডানা মেলছে 

একক তর্জমায়...

 মহামারী ও অনন্ত ছাদজীবন


- জয়শীলা গুহ বাগচী





(৬)

ছাদ যেভাবে পাহাড়ি পথে রওনা দেয়

আমি সেভাবে পারি না

ছাদের তো কোন নম্বর থাকে না

কিন্তু পাহাড়ে যাবো বলে যখন আমি

কপালে নম্বর পরি

অমনি টক জল

পাহাড় থেকে গড়িয়ে নামে বমির তেতো

ছাদ তখন খানিক লেবু লজেন্স

খানিক ধমক মেশা নিভৃত

ছুঁতে পারি না বলে

একমুঠো শান্তিজল, বিপদতারিণী সুতো

রেখে যায় ঘুমের বালিসে

গেলাস গেলাস পাহাড়ি মেঘ

রাখা থাকে ছোট্ট টেবিলে

গড়িয়ে পড়া বমির একপাশে ছাদ

একপাশে আমি

ঘুমোই...

আমাদের চলন্ত ঘুম ভাঙে না

 

  (৭)

 

আমরা একে অন্যের সেরে ওঠা না বুঝলে

অসুখ প্রবণতা না বুঝলে

জ্বরের বাতাসে সিপ দেবো কী করে

কী করে অস্তিত্ব বদল করে

সম্পর্কে গুলে দেবো সূর্যমুখী রঙ

হে ছাদ...

তোমার অরণ্যে অন্ধ পোকাজীবন

অন্ধ বাস্তুগন্ধ

সব কেমন স্মিত হাসির মতো

সাবধানী গর্তের মতো

নির্জন শ্বাসের আকারে সভ্যতার আবেগটুকু

হে ছাদ...

তোমার মাঝে আমির স্বাদ

আমার মাঝে তোমার চলাফেরা

সব নিরন্তর হোক

ঘুমের স্থিতি হোক

 

(৮)

 

কোথায় যে কীভাবে চেনা হয়ে ওঠে অস্তিত্ব...

যেদিন নারকেল পাতায় সূর্য এসে বসে

খোলা আকাশ পকেটে পুরে

নরম তুমি... আমার ছাদজন্ম...

তিরতিরে রক্তপ্রবণতাকে ধুয়ে মুছে

সহজ কথাবার্তা হ’লে

শেকড়ের আলো হ’লে

আমি ধীরে ধীরে গরমিল মুছতে মুছতে

ছাতিমছায়া

মানুষ-গন্ধ নিতে নিতে অপরিহার্য স্নান

দরজা জানালা ছেড়ে , মিথোজীবীতা ছেড়ে

ছাদজন্ম আমার...

কপালে দিগন্তরেখা এঁকে দাও

মুছে দাও দুহাতের মরীচিকা গাছ 


Monday, June 21, 2021

 আঁচল

 সোমা সাহা পোদ্দার


 

মায়ের আঁচলে মুখ ঢাকে রোদ
ভেসে আসে প্রথম বর্ণের উঠোন।
চেনা দরজায় পরিচিত হাতের কারুকাজ
রেশম ডোরে রাঙা দুপুর          
সময় চিহ্নে জেগে রয় ডাকনাম।
নাড়া দেয় ওয়ারড্রবে গুছিয়ে রাখা শৈশব
খোলা আঁচলে নতুন বিন্দু বিন্দু সাজে
চেনা গন্ধে মাখা ভাতে হলদে আলোর ছাপ।
আজও বৃষ্টি বেলায় টানে মাকে ছুঁয়ে রাতঘুম।
ফেরার সময় হলে আবেগী হয় নদী
বদল হয় শব্দমন বদলায় চেনা ছবিরূপ
তবু বর্ণময়ী আঁচলে ডেকে ওঠে ‘মা’।

 অপেরা

সুবীর সরকার




১.
আর সেই তছনছ হয়ে যাওয়া ভুট্টাখেত
মাটি ফুঁড়ে উঠে এলো এয়ারগান হাতে
                                           শিকারীরা
আমি ভাবি পুরোন সব নদীবন্দরের কথা
অথচ কতকাল কথা হয়না তোমার সাথে
লটারি বিক্রেতার চিঠি আসে।
কার্টুন ভেবে কেউ পাঠিয়ে দেয় জিরাফের
                                           ছবি
ভালোমন্দ নিয়েই কেটে যায় দিন।
চিরুনিতে আটকে থাকে বাসি চুল।
ধান খুঁটে খায় উঠোনের হাঁস
ভুট্টাখেত থেকে নদী বেরিয়ে আসে
আমরা হাত রাখি সবুজ শ্যাওলায়

২.
দৃষ্টিতে বিস্ময় জাগিয়ে বসে থাকি
খটখটে নদী,হ্যাঙার দিয়ে ঘেরা
মধ্য চরে বালির লিরিক
সেই কবে সাহেবের ডুবে যাওয়া ঘোড়াটি
স্মৃতি ভেঙে ভেঙে ফিরে আসতে থাকে।
জামা খুলে ফেলবো এবার
এবং এটা খুবই ব্যাক্তিগত

 লোডশেডিং 

নীলাদ্রি দেব


 

হওয়ার ভেতর খেলা করছে ঘূর্ণি 
যেভাবে শ্বাস উড়ে যায়, 
              অপ্রস্তুত খসখসে পাতা
আমাদের ফিরবার কথা ছিল 
হাওয়া অফিসের মোরগের পালকে বৃষ্টির দাগ 
উঁচু কোনো মিনারের ছায়া দুলছে 
আর লোডশেডিংয়ের ভেতর 
                       গলে যাওয়া মোমবাতির শরীর

ছুয়ে দেখতে চাই 

মনামী সরকার 




আমি স্বপ্নকে একবার ছুঁয়ে দেখতে চাই।

আঙ্গুল রাখতে চাই রামধনু কিংবা গোধূলির রঙে রাঙা দিগন্ত রেখায় 

আমি স্বপ্নে দেখা সেই মুহূর্তগুলোকে একবার ছুঁয়ে দেখতে চাই

যেখানে তোমার  অবাধ যাতায়াত। 

যেখানে আঙুলে আঙুল ছুঁলে সিগন্যালের লাল বাতিটা সবুজ হয়ে যায় না

স্বপ্নের সাথে আড়ি( দিয়েছে) দরজা

জানলাগুলো ভীষণ প্রিয় হয়ে উঠেছে আমার কাছে। 

পথ ভুলকরে প্রজাপতি ঢুকে পড়ে ঘরে

আমি উষ্ণতা মাপবো বলে পারদকে হাতের মুঠিতে ধরি।


ভরা_বা_মরা_কোটাল

নাদিরা



খুঁইয়ে যাচ্ছি, একে একে সরে যাচ্ছে চাঁদ সূর্য পৃথিবী 
মাটির রঙ নীলে বদলে যায় _ সমুদ্র কালো হয়ে উঠছে; 
আমি চেয়ে চেয়ে অন্তসত্ত্বা মায়ের মৃত্যু দেখছি। 
পেটের সন্তানের পুড়ে যাবার কান্না ছাপিয়ে ভরা কোটালের শব্দ শুনছি 
এখন আমি নিঃস্ব হয়ে শব্দ খুঁজি _ ভাষার ভেতরের জলস্রোত থেমে গেছে। 

বাবার চোখ সাদা হতে হতে ভাতের ফ্যানের মতো হচ্ছে, 
আমি লড়াই শব্দের সঠিক অর্থ এখনও বুঝিনি । 
সেই লড়াই করতে করতে মায়ের ফুসফুসের রঙ কালো হয়ে গেলো 
অথচ আমাদের মধ্যবিত্ত দেওয়াল আঁটা ঘরে আলোর রঙ ফ্যাকাশে হলো। 
দেশে কতবার ঝড় তুফান সুনামি আমেরিকান মন্ত্রী এলো 
অথচ কিছুই ছোঁয়নি বোনের রঙচটা টেবিল বা ফুলদানি ; 
আমি আজো উজ্জ্বল আলো _ নতুন ভাতের হাঁড়ি ও বাবার নতুন শার্টের কলার স্বপ্নে দেখেছি । 
ধীরে ধীরে উজ্জ্বল হতে হতে কখন যেন অন্ধকার বিন্দুতে পরিণত হয়েছি..... 
ধবল বক সুস্থ নদী আর হাসিমুখ সন্তানের চোখ আমায় কাঁদিয়ে কাঁদিয়ে আবার হাসাবে ...

 ভ্রমণ

দেবশ্রী রায়



যে পথের ধারে দাঁড়ালে
হলুদ বিকেলের আলোয় নিজের থেকেও 
দীর্ঘতর হয় ছায়া 
সে পথেও হেঁটে দেখেছি,
যে পথ ভিন্নমুখী আলোকে প্রতিহত করে
নস্যাৎ করে লৌকিক বিজ্ঞাপন
তাতেও রক্তাক্ত পায়ের চিহ্ন!
আজ কেবল শরীরের ভাঁজে ভাঁজে 
প্রত্যয় লিখে রাখে আমৃত্যু আক্ষেপ
বাকিটুকু পিছুটান আর উপান্তের কালো ছায়া,
পেরোনো কঠিন হলেও 
ওই পাড়েই যত নৌকাযাপন
নদীঘাট ছুঁয়ে আড়াল করা কুয়াশার কাছে
ঘন হতে থাকে অপরিশোধ্য ঋণ। 

বড়  মায়া কত কত স্মৃতিকথা ঘিরে!
অপরিহার্য কিছু মুহুর্ত-বিলাস
হয়তো দোলাচল, 
হয়তো এভাবেই হেঁটে চলা আমরণ
নয়তো সাংকেতিক নির্যাস  নিঃশ্বেসে কিছু
তবুও অনতিক্রম,
এই সব অহেতুক কূহক ভ্রমণ।

 আকাশ 

সুলগ্না বাগচী



আমি একবারই আকাশ চেয়েছিলাম বাবার কাছে
তারপর কতদিন চলে গেছে মাটির নীচে
কিছু দিন আগলে রেখেছি - কিছু দিন ব্যক্তিগত ,
ধীরে ধীরে মুছে গেছে খুব চেনা ছাপ 
আমি তো একবার এমনিই শুধু -
বাবা আমায় চিরদিনের আকাশ দিয়ে গেছে , 
যতটা আনন্দ ভরে রাখা যায় আকাশের বুকে
ততটা বারবার খালি হয়ে গেছে আমার কাছে ৷

শিরোনামহীন ২


জ্যোতি পোদ্দার




পাতার ভেতর পাতা উল্টে পাতার শরীরে লিখি 
কতিপয় বিবমিষা

পাতাবোন তুমি পাতাভাই তুমি তোমার শরীরে আগুন;
আগুনের গুনগুন আর  লালে লাল রক্তজিভ
ঢেলে দিচ্ছে ঢেলে দিচ্ছে বিষভাণ্ড

আমি যে শোলার পুতলা মেলায় মেলায় ঘুরি
ও কারিগর ও কারিগর মরি মরি আমি মরি

 ও ডাকিনী ও যোগিনী কালরাত্রি অমাবস্যা
           এমন রাতেই তুমি শুষে নিলা প্রাণ?

লাল রক্তজিবে বুনো গন্ধ---গন্ধের ভেতর নরমুন্ড মালা
উড়ছে উড়ছে বাতাস বাতাসে ভাঁজকরা অন্ধকারে;

মুণ্ডহীন খাঁজকাটা পাতারশরীর
                                 মন্ত্রে নাচে
                                           তন্ত্রে নাচে
নাচে তান্ত্রিকের গোল গোল মাদকচাহনি

ও শিব শ্মশানবাসী  ওঠো তুমি ওঠো
                                  শব দেহ নিয়ে কী করিবে তুমি
খোল আলোর পরতে পরতে আলোভাঁজ
সাদা সাদা সাগুদানা আলোবিন্দু
                                     আর নয়া পয়সার ঝলক;

তুমি কাল কালীর যাত্রাবিন্দু।

আমি যে শোলার পুতলা মেলায় মেলায় ঘুরি
                                 আমি যে চিনির ঘোড়া
আমি যে চিনির হাতি
তাপে ভাপে চাপে পাতার ভেতর পাতা উল্টে
পাতার কোমলা শরীরে লিখি যাপনের বিবমিষা




















আলপথ

জয় দাস




আমার
আটচালা ঘর জুড়ে
লাউ ও কুমড়ার ডাঁটা

তোমার
ভালোবাসা জুড়ে
শুধু জোয়ার-ভাঁটা

আমাদের আলপথ জুড়ে
তাই একসাথে হাঁটা

অনুরূপা পালচৌধুরী। 

মক্সমেরিন অংশীদার





আকন্ঠ রোদের সাইট্রিক বিরতি : চিবিয়ে চিবিয়ে তিনপায়া দিনপঞ্জি। চতুষ্কোনের ফসল হয়ে উঠছি আজকাল লেব্রি লেব্রি নুইপাল। কখনো কখনো স্নায়ুবদ্ধ স্টপেজের আশপাশ একে অন্যের খালবিল , নুড়িমাখা বেকিং জুনের সাত সতেরো স্ক্রিনিংরোদ। শূন্যজলের ডানা ভাঙা কুয়াশার পাঠক্রমে তারিখ পোষা জল্লাদের একাধিক কোটালপুত্র তবু আল্পনা পর্বের রোদটবে স্বপ্নকীটের ঘুলঘুলি এখন বেসামাল ডাকনামের জলাভূমি গড়িয়ে বিস্বাদ ঘুমের দোতলায় পাশাপাশি__ ফের ঘুমের ছত্রাকী বাগান। মাকে দেখার আপ্লুত স্বর ভিজিয়ে দুবেলা দুমুঠো গঙ্গা বইয়ে দেওয়ার অহেতুক প্রতিফলন। নাগরিকঘন জানলার অভিভাবক প্রেরিত সৌমিলি ঢলঢলে জোছনা কাটা পদ্মনাভি। যাবতীয় চিহ্ন মুড়ে আটলান্টিক তুলে ঘুমোতে যাবো সালংকারা ব্রোকলেট। শিকার ভুলে যাওয়া শিকারীর কাছাকাছি সংখ্যা চেয়ে নেবো বিনিময় পুড়িয়ে। আপাতত গালভরা গালিভারস খেয়ে আনুপাতিক মাকড়সার টেক্সচার জমা জলীয় টিপের নবান্ন

গন্তব্যহীন

বিনীতা সরকার


সঠিক পথ চিনতে গিয়ে
বার বার মুছে ফেলছি
লিখে ফেলা পথ
পথে নেমেও ফিরে আসছি গৃহে
খুলে ফেলছি পুরনো বর্ম
রোদে পোড়া শরীরের দাগ
ক্ষয়াটে ইটের স্তুপ
শরীর জুড়ে জ্বর 
সর্দি-কাশির অভিশাপ
ক্রমে লাল হয়ে উঠছে অভিশপ্ত সময়
ক্লান্ত হয়ে পড়ছি ভেতর ভেতর
নিস্তরঙ্গ সময়জুড়ে বিষন্নতা চাপ চাপ
তবু পথের টানে পথের মায়ায়
দোষ ভুল সব দূরে সরিয়ে
নিজেকে অজান্তেই দাঁড়িয়ে পড়ছি পথে
অজানা এক গন্তব্যের সন্ধানে
চিনে নিতে সঠিক পথ
খুঁড়ে চলেছি নিজেকেই নিরন্তর

বিরতি

সৈকত সেন




স্তব্ধতা ঘিরে, ঘুম নেই,
থেমে গেছে জীবন প্রতি ঘরে ঘরে 
আসে না ভেসে আজানের সুর 
বাজে না ঘন্টা দূরে মন্দিরে,
এদেশের মেঘ ও দেশে যায় 
বসন্ত থেমে গেছে কৃষ্ণচূড়ায় 
চাঁদ বুকে করে কালো পাখি ওড়ে 
কত প্রিয় মুখ দূর জানালায়।


থেমে গেছে গ্রাম, থেমে গেছে শহর 
নেই গোলাগুলি, নেই ভাঙ্গা রথ
ঘরবন্দি মানুষ, শুনশান পথ 
তবুও মৃত্যুর নীরব মিছিল 
বাতাসে ভাসছে বিষ অনুজীব 
স্বজনহীন শ্মশান, স্বজনহীন কবর।

মেঘলা সনেট 

মহুয়া বৈদ্য





অনেক সময় গেল উত্তরের ক্ষীণ অবকাশে 
অপেক্ষার ফিসফাসে কেটে যাচ্ছে একটা বছর
এখনো ফলন্ত মেঘ চুপিসারে বার্তা নিয়ে আসে
প্রশ্নের ফলকে কার নাম লেখা হয় অতঃপর?!

বারণ ছলকে ওঠে! প্রতিদিন একই প্রশ্রয়ে! 
নিজেকে বাঁধতে বসে দড়ি খুঁটি সব একাকার
যক্ষিণীর অপেক্ষায় কুরচি ফুলের সাজি নিয়ে
মেঘ চলে...বৃষ্টিপাত!  ঝরে যায় ক্লান্ত নিরাকার

এত ভালো অবসান, কখনো তা তুলনা রহিত
 জল পেয়ে চারাগাছ, আর কিষাণীর উনোমাটি
প্রেমসহ জেগে ওঠে, মাটির আনন্দ পরিমিত
তোমাদের খাদ্যরূপে শরীরকে করে পরিপাটি

এই অনিঃশেষ ঝরে যাওয়া তবে একাধারে ভালো,

এখনও জীবিত

বাপ্পাদিত্য দে



যে যাই ভাবুক
আমরা এখনও জীবিত।
হাড়-মাংসের দেহটিতে
নিশ্বাসে গা ভাসিয়ে এক অভিশপ্ত শব্দ
রক্তে রক্তে সাতার কেটেই চলেছে।

যে যাই করুক
আমরা এখনও জীবিত।
অবিশ্বাসের নেশায় বিশ্বাসকে না হারিয়ে,
ঘাতকের চক্রান্তে পা না দিয়ে
যে সময়টা চলে যাচ্ছে ...
তাকে যেতে দাও।

অতি বড় প্রিয়ের মায়া
আন্তরিক মেঘের ছায়া
সবই পরস্পর বিরোধী
তাদের ভাসিয়ে নিয়ে গেছে নদী।

একটা নিশ্বাস ফেলা সকালে
কালো ফ্রেমে বাঁধানো সাদা ছবির মত
দেহটাকে সঙ্গে নিয়ে
একেকটা লড়াই অহং মেখে নিচ্ছে
বলেই
আমরা এখনও জীবিত।

  " পূর্ব রাগ "

অভিষেক মহিন্তা







তোমার আমার পূর্বরাগে
সময় কুড়োচ্ছে ছায়াকুমার।
দিনপঞ্জি থেকে খসে পড়লো
কয়েক প্রহর প্রেমের কবিতা।
আমার তোমার পূর্বরাগে কে
সময়ের আহুতি দিয়ে
প্রজ্জ্বলিত রাখার চেষ্টা করে
চলেছে ছায়াকুমার।
আলো জ্বালানোর সময় হয়নি
এখনও সাঁঝের প্রহর গুনছে বিকেল।
অপেক্ষার সরনী ধরে এগিয়ে
চলেছি উভয়েই,
শুধু কক্ষপথ আলাদা।

 মেঘমল্লার

 
সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়



 
চৈত্র দিনের শেষে আচমকা অন্যমন এই কলকাতা
ভাঙাচোরা গলি - অসহায়  শর্তবিহীন
অপসৃয়মান রোদের ট্যাক্সিতে সওয়ার অনিশ্চিত প্রেম-প্রস্তাব
জি.পি..- সামনে ইতস্তত ভিড় -
রেসের মাঠের সন্দেহজনক বুকি
দেশলাই চায় হাইকোর্ট-উকিলের কাছে
বন্ধ স্টক এক্সচেঞ্জের রাস্তায় হেঁটে যায় হারানো কলিগ
আচমকা অন্ধকার চারদিক
তাড়া খাওয়া জন্তুর মতো ছুটে যায় ত্রস্ত বাস
হাওয়ায় উড়ে যায় বাড়ি-ঘর-লোক
আকাশের দিকে মাথা তুলে মনে পড়ে -

দুঃখ  উচ্ছলতার ভেতর ভেসে থাকা
তোমার আশ্চর্য মুখ , সেইসব মেঘমল্লার ...

প্যাটার্ণ

শিপ্রা পাল। (লাভলী)




একটা প্যাটার্ণ, কোথাও লাইট কোথাও ডার্কনেস
না কেউ ছিলো না কেউ আছে,
অনন্তকাল আটকে থাকা আলো-আঁধারীর ছায়া,   ধীরে-ধীরে কেমন এক পোকা হয়ে উঠছি। 

ভেতরের ভেতর যখন সক্রিয় হয়ে ওঠে, তখন সৃষ্টি  ভাঙ্গনের লড়াই 
ভাবিয়ে তোলা নানা অসুখ জ্বালাপোড়া ছুঁড়ে দিয়ে বলে, আসলে জীবন এমন নয় বা অমন নয়। 

এ-ও এক ছটফটানি খেলা
আরো অতি ক্ষুদ্র পতঙ্গের মতো টালমাটাল দুঃস্বপ্নপীড়িত উদ্ভট অনুভূতি
চারপাশের অন্ধকারে হাতড়ে বেড়াই। 

অস্তিত্ব শূন্য ফক্কা আওয়াজ
মাটিতে মিশে যাওয়া রূপান্তর গল্পের চাবিহীন ধাঁধা। 

ব্যাটন

রাজশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়



 



পৃথিবীর অন্তিম স্টেশান থেকে ফেরার সময় 

কিছু লাল নীল হলুদ সবুজ বেলুন  কিনে এনেছিলাম

কিছুদিন পর বেলুনের ভেতরের বাতাস ফুরিয়ে আসতে লাগল

আমার নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না

চামড়া থেকে অনবরত ধুঁয়ো উঠতে লাগল

মাথার চুল ঠোঁট নাভিকুণ্ড পুড়তে পুড়তে

পায়ের পাতা পর্যন্ত পুড়ে ছাই হয়ে গেল

সেই ছাইগুলো জড়ো করে আমি অস্থি বিসর্জন করতে গিয়ে দেখি

সেখানে আগে থেকেই আমার ক্লোন

রিলে রেসের ব্যাটনটা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷