Tuesday, February 27, 2018

মিলটন রহমান-এর কবিতা
নতুন

ঘুঙুর বাজছে কোথাও, এই সোনালী সকালে বাজছে
ঘূর্ণির মত উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে জং-ধরা হলুদাব দিন
জলসার রূপোলী আলোয় আমি জেগে উঠছি মাতাল,
মন্দাকিনী তুমি নিজেকে আরো জলজ বিকর্ষিত করো
দেহের ভাঁজ থেকে উত্থিত আলোয় তুলে নাও অমসৃন
তোমার সম্মুখে সহ¯্র বছর বসে রইবো হে মথুরাদেবি।

ঘুঙুর আর মন্দাকিনী দুই মিলে এই সকালে হাসছে
ভাসছে তুমুল কুঞ্জাভিভূত টঙ্কাপতির দেরাজে
কোথায় কোন কালে জেগেছিলো নতুন নগর
সেই বার্তা এতোদিন জানানো হয়নি কোথাও
এই ভোরে নতুন নগর পত্তন করো হে মন্দাকিনী
মুছে দাও সকল পাপ ও পঙ্কিল রাষ্ট্রের নাম
নতুন নগর তোলো, মন্দাকিনী নগর
যেখানে শুধুই প্রেম রইবে, জেগে রইবে সোনালী ঘুঙুর।


সম্পর্ক

রাত ভাঙতে ইচ্ছে করে না আর
যন্ত্রীরা সব সুর খুলে ঝুলিয়ে গেছে
এমন নিকষ হৃদপিন্ড থেকে উৎসারিত মীড়
ভাঙতে গেলেই উঠে দাঁড়াবে হরিয়াল বন
পতেঙ্গায় পাথর ফাটিয়ে কারা রেখে গেছে কান্না
তার খোঁজ নিতে পরিক্রমণ করেছি সহ¯্র চোখ
অমৃতের বদলে বিষ পানে বেঁচে থাকে ওরা
আমৃত্যু পাঁজরে পুষে রাখে সমুদ্রের ঢেউ।
যারা বালির ওপর জাহাজের ছবি এঁকেছিলো
তারাও জোয়ারের সূত্র জানে না
কামুকের কাছে যারা স্মৃতি রেখে গেছে
তারা সমুদ্রের গভীরতা জানে না
তারা সকলেই হারিয়ে গেছে যে যার মত
কেবল আমি বসে আছি সকল সূত্র ছিন্ন করেৃ



প্রকৃতি

প্রাচীন ব্রীজ থেকে নামছে গোলাপজল
মোমের খুঁটিজোড়া মজবুত রাখো নারী
বিরতিকালে স্টীমারে জমা করি দম
খরা কেটে গেলে পাড়ি দেবো মন্দাক্রান্ত নদী।

আমি বেপরোয়া নই
জেগে থাকা চরে আটকে থাকতে পারি
খুঁজে নিতে পারি ব্রীজের গভীরে
প্রাচীন নগর।

কত মায়া রাখো হে নারী
ব্রীজর দৃশ্য নড়ে না আর
প্রাচীন দেয়ালে জং খুঁড়ে
নতুন আবিষ্কারে মজে থাকি
নারী গোলাপজল আর চাই না
সে কেবল অপেক্ষায় রাখে।


শিকার

আজ ফলের উদ্যানে কয়েন বিনিময় করেছি
হত্যা করেছি আপেল, পিয়ারস, স্ট্রবেরিসহ
আত্মহননে অপেক্ষারত অসংখ্য বেনামি ফল
ভাড়া করা ট্রলি বোঝাই করে রক্তস্নাত ফলগুলো
দাফন করেছি সমুদ্রপাড়ে পরিত্যক্ত গোরস্থানে
কেননা স্বর্গের বাগান ভেবে যে ফলের উদ্যান
রচিত হয়েছে,
তাতে অনাহুত বিফলেরা নকল চেহারা ধারণ করেছে
ওরা জানে না আমি বাঘ-শিকারী
কড়ি বিনিময়কালে ভুল করলেও উদ্যানের মাটি ছুঁয়ে
জেনে যাই বাগানের খবর
একে একে দ্বিখন্ডিত করে হৃদপিন্ড থেকে
তুলে আনি হরেক ফলের আদি পরিচয়
আমি তো বাঘ-শিকারী
আত্মাহুতির ভয়ে কেউ যদি বাঘের খোলস পড়ে
সেও আমার শিকারে উঠে আসে,
আমি তো শিকার ছাড়তে অভ্যস্ত নই
ফলেদের আজ জানিয়ে দিয়েছি
বর্ণ পরিচয়হীনদের দিকে তাক করেছি নিশানা
বিভ্রমকালেও লক্ষ্যচ্যুত হতে শিখিনি আমি।


মদিরগন্ধা

নিকষ আলো থেকে পদ্মপায়ে ধুলোয় নেমে এসেছো তুমি
চুম্বনে চুম্বনে রাঙিয়ে তুলেছো বর্শবতি জোয়ারের জল
তোমার মখমল শাড়ীর দোলায় ছুঁড়ে দেওয়া হাওয়ায়
বুকের ভাজের মত শুয়ে আছে তপ্ত নদীর জল, সেই
জলের পাঁজর থেকে রজ্বগন্ধ তুলে পান করেছি নেশায়
দ্বি-খন্ডিত আপেলের ভাজে নিজেকে সমর্পণ করে
অজান্তে খুলেছি রক্তজবার এক একটি পাপড়ি
তোমার রহস্যস্নাত ঠোঁটে চাপা পড়া পাখিগুলো মুক্ত করো
দেখাও উচ্ছসিত যৌবনের তারায় নেচে ওঠা বিহঙ্গবেলা
সুতীক্ষ্ম সমরাস্ত্রের মত বুকের গোলাপ থেকে
ঢেলে দাও বেহেস্তের গোলাবি শরাব
আসতেই যদি চাও সাদা সময়ের উতল গানে
আমাকেও একটু সময় দিও যেনো তোমার
শিশিরস্নাত করোটির ভাজে বাজিয়ে দিতে পারি ম্যান্ডোলিন
আবাদ করতে পারি চুম্বনের সুষমা
তুমি এতো মদিরঘোর নিয়ে এলে!
আমাকেও সময় দিও আত্মহননের।


জলজ

একটা লালটিপ না হয় সেঁটেই দিলাম কপালে
নদীর মত আঁকাবাঁকা কিছুটা জলজ বাতাস
মধ্যিখানে ঢেলে দেই কিছুটা আলোর সৌরভ
চক্ররেখায় কম্পমান রক্তের ¯্রােত ঢেলে দিয়ে
আমি এবারের মত চলে যেতে চাই দৃশান্তরে

যদি কোন সময় ফিরে আসি এই নদী উপকূলে
যদি কোনদিন নিজেকে দেখতে পাই স্বচ্ছ জলে
সেই দিন স্মৃতি হাতড়ে খুঁজে নেবো আমার যৌবন
যা কিছু লুকিয়ে রেখে যাচ্ছি তোমার ভেতর...


No comments:

Post a Comment