Wednesday, April 7, 2021

 অনুবাদ গল্প 

জড়িবুটি

অমৃতা প্রীতম

অনুবাদ – বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়  


প্রভাতী আমাদের পাড়ার কোন একটি বাড়িতে কাজ করে। বহুদিনের পুরোনো চাকর। তার নতুন বউয়ের সাথে আমার সদ্য পরিচয় হয়েছে, ওর নাম অঙ্গুরি। মাঝবয়সী প্রভাতীর দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী। পাঞ্জাবী ভাষায় দ্বিতীয়বার বিয়ে করা পুরুষকে দুহাজু বলে।দুহাজু কথার অর্থ দ্বিতীয় জীবন। বছর খানেক হল অঙ্গুরির বিবাহিত জীবন শুরু হয়েছে। তাকে সবাই নতুন বউ বলে ডাকে। অঙ্গুরি মাঝে মাঝে আমার কাছে এসে গল্প করে। তার জীবনের কথাগুলো বলে, আমি শুনি।

বছর পাঁচ আগে প্রভাতীর প্রথম বউ মারা যায়। ওদের গাঁয়ে ওর বউয়ের শেষকৃত্যের সময় প্রভাতীর কাঁধে রাখা ভেজা গামছা হাতে নিয়ে নিংড়ে তার জল ফেলে দিয়েছিল অঙ্গুরির বাবা। 

“ কাঁদতে নেই বাবা, যে চলে গেছে তার পথ পিছল করে দিও না, এই গামছায় লেগে থাকা তোমার শোকচিহ্ন আমি নিংড়ে দিলাম। যে জায়গা ছেড়ে চলে গেছে তোমার বউ, সেখানে আমি অঙ্গুরিকে দিলাম তোমার কান্নাভেজা গামছা নিংড়ে আবার নতুন করে শুরু হোক জীবন।”

এটা পুরোনো একটা নিয়ম। চলে যাওয়া বউয়ের জন্য পুরুষেরা কেউ কেউ কাঁদে,কিন্তু এতখানি অবশ্যই কাঁদে না যে গামছা ভিজে যাবে। তবু যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এই নিয়ম। মৃতা স্ত্রীর সৎকারের সময় মৃতার স্বামী জলে গামছা ভিজিয়ে কাঁধের উপর রাখে। যদি কোন মেয়ের বাবা সেই গামছা নিজের হাতে এসে নিংড়ে সমস্ত জল ফেলে দেয়, তাহলে বুঝতে হবে এই পুরুষের হাতেই সে তার মেয়েকে সমর্পণ করবে। এভাবেই প্রভাতীর সঙ্গে অঙ্গুরির বিয়ের ঠিক হয়। ওর মা বাত ও অন্যান্য অসুখে ছিল সম্পূর্ণ শয্যাশায়ী। ফলে ঘরের সব কাজ অঙ্গুরিকেই করতে হত।বিয়ে দেব দেব করেও তাই বছর পাঁচেক দেরি হয়ে যায়। 

 বিয়ের পর প্রভাতী একদিন তার মনিবকে বলল সে নতুন বউকে নিজের কাছে এনে রাখতে চায়, অনুমতি দিলে ভালো নইলে তাকেই নিজের গাঁয়ে অন্য কাজ দেখতে হবে। মালিক খুব কৃপণ। একটা বাড়তি পেটের খোরাক জোগাড় করা মানে বেশ কিছু টাকার অপচয়। তাই প্রথমে সরাসরি না বলে দিলেও প্রভাতী যখন বলল, তার বউয়ের খাবার সে নিজেই জোগাবে, শুধু একটা ঘর দিলেই হবে তখন মালিক রাজী হল। অঙ্গুরির শহরে আসার ইতিহাসটা এরকম। 

নতুন বউ অচেনা জায়গায় এসে ঘোমটার আড়ালে লুকিয়ে রাখত নিজেকে। মেয়েদের সাথেও বিশেষ কথা বলত না প্রথম প্রথম। মাস খানেক পর তার লজ্জা লজ্জা ভাবটা যখন কিছুটা কাটল তখন ঘোমটাটা উঠে গেল অজান্তেই। খুব কম সময়েই সে এই পাড়ার সকলের কাছের মানুষ হয়ে উঠল। সে যখন হাঁটত , নূপুরের সুন্দর শব্দ বেজে উঠত তার পায়ে। এই শব্দ শোনার জন্য কমবয়সী ছেলেরা বেরিয়ে আসত রাস্তায়। কিন্তু সে তো সামান্য সময় মাত্র। দিনের বেশিরভাগ সময়ই কাটত ছোট্ট একটা ঘরে। বাইরে এলে তার রিনিঝিনি নূপুরের শব্দের মতোই হাসিতে ভরে উঠত চারপাশ। এই মিষ্টি হাসির আওয়াজেই ফিরে তাকালাম ওর দিকে- পায়ে কী পরেছো অঙ্গুরি?

কেমন মেয়ে গো তুমি নূপুরও চেনো না।

আমি হাসলাম- পায়ের আঙুলে ওগুলো কী?

এগুলোকে আংটি বলে।

বাঃ, বেশ। হাতে এটা কী? দারুণ সুন্দর তো।

কাঁকন।

কপালে ?

আলবিন্দা। 

কোমরে বিছা কই তোমার ?

অঙ্গুরির মুখটা খুশিতে ভরে উঠল- আমার বিছেটা খুব ভারি, পরলে কোমরে ব্যথা করে তাই পরিনি। তবু কাল তোমার জন্য আমি পরব। গলার হারটাও পরতে পারিনি ওর চেইন ভেঙে গেছে বলে। 

অঙ্গুরি তার রূপোর গয়নাগুলো পাড়ার সবাইকে দেখায় বেশ আনন্দের সাথে। বলে- আমার মায়ের গয়না। 


সময় থেমে থাকে না। শীত পেরিয়ে গ্রীষ্ম আসে। ছোট ঘরটার মধ্যে সারাদিন থাকতে কষ্ট হয় অঙ্গুরির। তাই মাঝে মাঝেই বাড়ির বাইরে বেরিয়ে গাছের ছায়ায় এসে বসে। একদিন আমি বাগানে বসে বই পড়ছি, অঙ্গুরি এসে দাঁড়াল আমার পাশে – কী পড়ছো ভাবিজি?

বই পড়ছি। পড়বে? অক্ষর থেকে চোখ তুলে ওকে জিজ্ঞেস করি।

আমি লিখাপড়া শিখিনি যে।

 শেখার বয়স তো পেরিয়ে যায়নি। শিখে নাও আমার কাছে।

 না। 

 কেন?

 মেয়েরা বই পড়লে পাপ লাগবে।

 আর ছেলেরা যদি পড়ে?

ওদের পাপ লাগে না। ওদের লিখাপড়া করা দরকার।

তারমানে তুমি বলতে চাও আমি পাপ কাজ করছি?

না ভাবিজি। শহরের মেয়েদের বই পড়া দরকার। শুধু গাঁয়ের মেয়েরা বই পড়লে পাপ হয়। 

আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলাম। আমার হাসি দেখে সেও হাসল। 

মানুষ যদি তার বিশ্বাস নিয়ে বাঁচতে চায়, বাঁচুক না, ক্ষতি কী। ভুল ধারণা আঁকড়েই যদি কেউ সুখী হতে চায় ,কী দরকার সেই সুখের ঘরটাকে ভেঙে দেওয়ার। আমি তার হাসিমুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম অনেকক্ষণ কোথাও কোন মালিন্য লেগে নেই। গায়ের রঙ চাপা, সুগঠিত শরীর।সুন্দর মাখানো আটার তালের মতো নরম যৌবন ,কোথাও বাড়তি মেদ নেই। অঙ্গুরির দ্বিগুণ বয়সী প্রভাতীর কুঁচকানো চামড়া, ঝুলে পড়া চোয়াল, আধভাঙা শরীর। সে কি পারবে এই আটার শরীর বেলে ঠিকমতো রুটি বানাতে? নিজের এই ভাবনায় নিজেরই খুব মজা লাগল। নারীশরীরকে আমিও আটার তালের মতো ভাবছি কেন?

ধীরে ধীরে অঙ্গুরির সাথে আমার সম্পর্কটা আরও সহজ ও আন্তরিক হয়ে উঠল। আমি তার গ্রামের খোঁজখবর নিলাম। তার বাবা মা ভাইবোনের কথা জিজ্ঞেস করলাম। সে তার গাঁয়ের সবুজ মাঠের কথা বলল যেখানে সে গোল্লাছুট খেলতে খেলতে বড় হয়েছে। সেই নদীর কথা বলল যার জলে সাঁতার কাটতে কাটতে সে ফেলে এসেছে তার বিয়ের আগের দূরন্ত দিনগুলি। 

আমি জিজ্ঞেস করলাম তোমাদের বিয়ের নিয়মকানুন কী?  

সে বলল- খুব ছোটবেলাতেই আমাদের গাঁয়ের মেয়েদের বিয়ে শাদী হয়ে যায়। মেয়ে পাঁচ ছ বছর হলেই তাকে পুরুষের কাছে অর্পণ করা হয়।

এটা কীরকম ?

মেয়ের বাবা থালায় করে ফুল টাকা পয়স আর বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে ছেলের বাড়ি যায়, তারপর ছেলের পায়ের কাছে এই থালা নামিয়ে বলে আমার মেয়েকে গ্রহণ করো।

এখানে মেয়ের ভূমিকা কোথায়? তার বাবাই তো সব।

বাবাই তো মেয়ের জন্মদাতা। 

তা হোক, তবু ছেলেকে না দেখেই তোমাদের বিয়ে হয়ে যায়?

হ্যাঁ। তবে যারা ভালোবেসে বিয়ে করে তাদের কথা আলাদা। তারা দেখেশুনেই করে।

ভালোবেসেও গাঁয়ের মেয়েরা বিয়ে করে?

হ্যাঁ। তবে খুব কম। কারণ ভালোবেসে বিয়ে করলে পাপ হয়।

তাহলে কেউ কেউ পাপ করে কেন?

এতে ওদের কোন হাত নেই। কোন পুরুষ মানুষ ওদের কিছু খাইয়ে দেয়। তখন ওরা পুরুষ মানুষের প্রেমে পড়ে যায়।

কিছু মানে ? কী খাওয়ায়?

জড়িবুটি। পান বা মিষ্টির সাথে মিশিয়ে এটা খাওয়ানো হয়। তখন যে খাওয়ায় সেই পুরুষ মানুষটিকে ছাড়া দুনিয়ার আর কোন মরদ লোককেই তার ভালো লাগে না।

এরকম হয় নাকি? ভারি মজার ব্যাপার তো? 

খুব হয়। আমি নিজে দেখেছি।

সত্যিই দেখেছো?

আমার এক সই ছিল, সে আমার চেয়ে লম্বা আর খুব সুন্দর।সবার নজর ছিল তার দিকে।

তারপর?

তারপর আর কী? সে একদিন একটা লোকের জন্য পাগল হয়ে গেল।তার সাথে পালিয়ে গেল গাঁ ছেড়ে।

তুমি কীকরে বুঝলে ওকে জড়িবুটি খাওয়ানো হয়েছে?

নইলে কি কেউ মা বাপ ছেড়ে ভাইবোন ছেড়ে গাঁ ছেড়ে সবাইকে কষ্ট দিয়ে এভাবে চলে যায়।

কোথায় পাওয়া যায় এই জড়িবুটি? কোন গাছ থেকে? তুমি দেখেছো কখনও কেমন দেখতে হয় জিনিসটা?

দেখিনি। শুনেছি দূরের জঙ্গলের গাছ থেকে তা সূর্য ওঠার আগেই নিয়ে আসতে হয়। তারপর পান বা মিষ্টির সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হয়। এর নাম মোহিনী বশীকরণ। মেয়েদের তখন নিজেদের আর কিছু করার থাকে না।   আমাকে খুব ছোটবেলা থেকেই মা নিষেধ করে দিয়েছিল কোন ব্যাটাছেলের হাত থেকে আমি যেন মিষ্টি বা পান না খাই।

তুমি খাওনি ভালো করেছো। কিন্তু তোমার সখী কেন খেয়েছিল?

 কেন খেয়েছিল জানি না। কিন্তু এই পাপের ফল তাকে ভুগতেই হবে।

কথাগুলো সে বলল বটে কিন্তু মনের ভেতর সেই বান্ধবীর জন্য বুকের ভেতর গভীর গভীরতর অনুভূতি তার রয়ে গেছে আজও। মমতা মাখানো ছায়া পড়ল তার উদাস চোখে- বেচারার চেহারা দেখলে তোমার কষ্ট হত ভাবিজি।চুল আঁচড়াত না। খেতেও ভুলে যেত।শুধু কাঁদত। কাঁদতে কাঁদতে দিন রাত কেবল গান গাইত।

কান্না মেশানো গানের ভেতর দিয়ে গল্পটা আরও অনেকদূর যেত। আমি তাকে থামালাম। 

এরপর কয়েকদিন অঙ্গুরির সাথে আর আমার দেখা হয়নি।আজকাল তার নূপুরের শব্দ পাওয়া যায় না।তার হাসির খিলখিল আওয়াজ ভেসে আসে না। চুপচাপ বই পড়ছিলাম। নিঃশব্দে কে এসে দাঁড়াল পাশে। অঙ্গুরি তো এভাবে আসে না। অন্য কেউ হবে বোধ হয়। বই থেকে চোখ সরিয়ে তাকালাম- অঙ্গুরি। 

ওর চোখ ম্লান,বিষন্ন। ‘ আমাকে লিখাপড়া শেখাবে ভাবিজি? 

‘কেন? পাপ হবে না?’

‘হলে হবে।’

‘এখন আমার কাজ আছে। পরে শেখাবো’ 

তখন দুপুরবেলা। নিমগাছের তলে একটা খাট পেতে বসে আছে অঙ্গুরি। আমি কাজে ব্যস্ত হয়ে উঠলাম। বিকেলে বেরিয়ে দেখি সে গাছতলায় মুখ বুজে তখনও বসে আছে সে।আমি চুপিচুপি তার পিছনে এসে দাঁড়ালাম। বুক কেঁপে উঠল তার গান শুনে। 

‘ তোমার গুণের মায়া কত তার তাপ

 তোমার রূপের লাগি পুড়ে যায় চোখ। 

ও সখী তোর মতো বিষ খাব, পাপ

 যদি হয় তবে এ জনমে বার বার হোক। 

আমার পায়ের শব্দে শুনতে পেল অঙ্গুরি।সে গান থামিয়ে আমার দিকে তাকাল।

কী সুন্দর তোমার গলা। দারুণ গাও তো তুমি। 

সে মুখ ফিরিয়ে নিল অন্যদিকে। বুঝলাম কান্না লুকোতে চাইছে।একটা আধভাঙা হাসি জোর করে ঠোঁটের উপর রেখে বলল- একে কি আর গান বলে? মন চাইল গাইলাম। এই যেমন এখন যদি বলি- ‘চার মাস যায় গরম হাওয়ায়, পায়ের বালি তাতা। চার মাসের বাদল হাওয়া ভিজায় শুধু মাথা। চার মাস শীতের কাঁপন ঝরায় মনের পাতা।’

গান থেমে গেলে অঙ্গুরি আমার দিকে চাইল। ওর চোখে জল। ভেতরের উথাল পাথাল বেরিয়ে আসছে নদী হয়ে। আমার খুব ইচ্ছে করছিল জানতে- তোমাকে কি কেউ জড়িবুটি খাইয়েছে? মনের ভেতরেই থেকে গেল এই  নিরুচ্চার জিজ্ঞাসা। আমি ওর শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে মাথায় হাত রেখে স্নেহসিক্ত গলায় প্রশ্ন করলাম- আজ তুমি কিছু খেয়েছো অঙ্গুরি?

কিছু? ওর জিজ্ঞাসায় কেঁপে উঠলাম আমি নিজেই, না মানে সারাদিন তোমাকে রান্না করতে দেখিনি তো তাই?

আজ রান্না করিনি এখনও।

চা খেয়েছো সকালে ?

চা! 

তুমি চা খাও না সকালে?

খাই, রোজই খাই। কিন্তু আজ খাইনি।

কেন?

প্রতিদিন রামতারা দুধ দিয়ে যায়। কদিন ও নেই। দুধ পাইনি তাই চা খাওয়া হয়নি।

আমাদের এই কলোনির পাহারাদার রামতারা। আমরা সবাই তাকে চাঁদা তুলে বেতন দিই। কম বয়সী হাসিখুশি ছেলেটিকে দেখে আমার খুব মায়া হয়। সারারাত সে রাস্তায় টহল দেয়। সকালে ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঘুমিয়ে থাকে আমতলায়।অঙ্গুরি আসার আগে অবধি এটাই ছিল তার রোজকার রুটিন। কিন্তু এখন সে গোয়ালার কাছ থেকে দুধ নিয়ে এসে অঙ্গুরিকে দেয়। অঙ্গুরি চা বানায়। সেই চা খেয়ে আমতলায় প্রভাতী আর রামতারা আড্ডা দেয়। নিজেদের মধ্যে গল্পগুজব করে। কদিন হল রামতারা ওর দেশের বাড়িতে গেছে।

তার মানে তুমি তো তিন চারদিন চা খাওনি অঙ্গুরি?

 সে বোবার মতো চেয়ে থাকল আমার দিকে তারপর ধীরে ধীরে মাথা নেড়ে বলল- হ্যাঁ। 

শুধু কি চা? নাকি কিছুই খাওনি এ কদিন?

এবার সে কোন উত্তর দিল না। তার মুখই বলে দিচ্ছে আমার অনুমান সত্য।

আমি কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলাম। রামতারার আকৃতি ভেসে উঠল আমার চোখের সামনে লম্বা চেহারা, হাসি মুখ, গোলগাল চেহারা, চোখে মায়াভরা আলো। অঙ্গুরির মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম আলতো করে। ওকে নিজের বুকের কাছে টেনে নিলাম – সত্যি করে বলো, তুমি কি কোন জড়িবুটি খেয়েছো কারোও হাত থেকে?

সারা পৃথিবী কেঁপে উঠল প্রবল ঝাঁকুনিতে। যেন একটা ভূমিকম্প হয়ে গেল এইমাত্র। ওর ভেতরে জমে থাকা বাস্প বেরিয়ে এল ফোঁপানো কান্নায়- বাপের কিরা নিয়ে বলছি ভাবিজী, আমি মিষ্টি খাইনি, পান খাইনি, শুধু এক কাপ চা খেয়েছিলাম রামতারার হাতে। ওতে কি সত্যিই কোন জড়িবুটি মেশানো ছিল ভাবিজী?...... 


আমি আর কিছু শুনতে পাচ্ছিলাম না, ওর পরের শব্দগুলো ভেসে যাচ্ছিল কান্নার স্রোতে। 



সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

কবি কথাশিল্পী প্রাবন্ধিক অমৃতা প্রীতমের জন্ম ১৯১৯ সালের ৩১ অগাস্ট অবিভক্ত ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের গুজরানওয়ালায়। কবি ও শিক্ষক বাবা কর্তার সিং হিতকরির অনুপ্রেরণায় খুব ছোটবেলা থেকেই তাঁর লেখালেখি শুরু।মাত্র ষোল বছর বয়সে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ অমৃত লেহরেঁ।দেশভাগ এবং দাঙ্গা তাঁকে প্রবল ধাক্কা দেয়। নারীর স্থিতি, সংগ্রাম আর স্বপ্ন তাঁর সাহিত্যে নতুন এক ভূখন্ড নির্মাণ করেছে। দেশভাগের পর তিনি চলে আসেন দিল্লীতে।উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে কাগজ তে ক্যানভাস, পিঞ্জর, কোরে কাগজ,আদালত, উঞ্চাস দিন , নাগমণি, রসিদি টিকেট প্রভৃতি।ইংরেজিসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে তাঁর সাহিত্যসম্ভার। স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন আন্তর্জাতিক পুরস্কারসহ ভারতের সর্বোচ্চ সাহিত্যপুরস্কার জ্ঞানপীঠ। এছাড়া সাহিত্য আকাদেমী, পাঞ্জাব রতন সহ রাষ্ট্রীয় সম্মান পদ্মশ্রী ও পদ্মবিভুষণে সম্মানিত হয়েছেন। ২০০৫ সালের ৩১ অক্টোবর দীর্ঘ অসুস্থতার পর এই কিংবদন্তী সাহিত্যিক অমৃতলোকের পথে যাত্রা করেন। 

এই গল্পটি অমৃতা প্রীতমের জংলি বুটি গল্পের রূপান্তর। 

























No comments:

Post a Comment