Friday, November 20, 2020

নির্জন পার্ক

শোভন মণ্ডল

এই পার্কটা বেশ নির্জন। ঊর্মি দু'দিন ছাড়া এখানে আসে। ঝিলের ধারে এই বেঞ্চটা তার খুব পছন্দ। লোকজন খুব একটা এদিকে আসেনা। একটা গভীর ঝোপ জায়গাটাকে আড়াল করে রেখেছে।

অন্যদিনের মতো ঊর্মি এখানে এসে বসলো।ব্যাগটা পাশে রেখে রুমালটা বের করে ভালো করে মুখ মুছলো। ঢকঢক করে বোতল থেকে জল খেল খানিকটা। তারপর যথারীতি কালো ব্যাগটা থেকে ল্যাপটপটা বের করে কোলের ওপর রাখলো। খটখট করে টাইপ করতে লাগলো। আসলে সে একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক। বিভিন্ন আর্টিকেল লিখে সংবাদপত্রে মেল করে পাঠায়। এই পার্কের বেঞ্চটাই তার কাজের ডেস্ক হয়ে উঠেছে বেশ কিছুদিন। অনেকক্ষণ কাজ করার পর ল্যাপটপটা মুড়ে রেখে একটু আড়মোড়া ভাঙলো সে।

বেলা পড়ে এসেছে। তবে বিকেলের আলো এখনও ঝিলের ওপরে খেলা করছে। এইসময়ই একটা বৃদ্ধ লোক লাঠি হাতে বেঞ্চির কাছে এসে ইতস্তত করছিল বসার জন্য। ঊর্মি ব্যাগদুটো আর জলের বোতলটা নিজের দিকে সরিয়ে নিয়ে কিছুটা জায়গা করে দিল। বৃদ্ধমানুষটিকে তবুও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ঊর্মি মৃদু হেসে বললো,  বসতে পারেন।

বৃদ্ধ বসলেন। দুচোখে প্রশান্তির ছাপ স্পষ্ট।

খুব স্টাইলে বললেন, থ্যাঙ্ক ইউ মাই সান

ঊর্মি কোনো কথা বললো না। আবার ল্যাপটপ খুলে কাজ শুরু করলো। আলো কমে যাবার আগেই লেখাটা শেষ করতে হবে তার।

অনেকক্ষণ কাজে মগ্ন থাকার পর বৃদ্ধের একটি কথায় তাল কাটলো ঊর্মির।

--তোমার নাম কী মা?

--ঊর্মি

--তোমার অসুবিধা হচ্ছেনা তো? 

--এ মা,  অসুবিধা হবে কেন? অবাক হয়ে বললো ঊর্মি।

-- আসলে জানো তো মা, আগে এখানে প্রায়ই আসতাম। আমার স্ত্রী আর আমি এই বেঞ্চিটাতে এসেই বসতাম। উনি চলে যাবার পর আর আসিনা। তবে বছরে এই একটি দিন...

বলে বৃদ্ধ যেন চোখ মুছলেন। ঊর্মি কাজের কথা ভুলেই গেছে।

--কোন দিন...?  মুখ ফুটে প্রশ্নটা করেই ফেললো।

No comments:

Post a Comment