Friday, November 20, 2020

আমার দূর্গা

দেবপ্রিয়া পন্ডিত

"আমরা নারী,আমরা পারি"। সত্যি আমার মা সেটা করে দেখিয়েছেন। বড় অভাগী আমার মা। ভাগ্যদোষে অজান্তে বরমাল্য পড়িয়েছিল এক পাগলকে।২ বছর সংসার করার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। আদর্শ স্ত্রীর মতো ডাক্তার বৈদ্যর কাছে দৌড়েছে স্বামীর আরোগ্যের জন্য। কিন্তু বর্বর স্বামী গভীর নেশায় আসক্ত তাই স্ত্রীর প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। এর‌ই মাঝে আমি পৃথিবীতে আসতে চলেছি, তখন মার অবস্থা মরোমরো। হাসপাতালেই কাটিয়েছেন বেশিরভাগ সময়।

অবশেষে আমি আসি পৃথিবীতে। জানিনা আমি আসায় আমার বাবার মনে কতটুকু খুশির ঝলক এসেছিলো। হয়তো আসেনি, তাই জন্মলগ্নে বাবা ছিলোনা আমার পাশে, আজ‌ও নেই। কোনোদিনই থাকার চেষ্টাও করেনি। আমার মা'র শ্বশুরালয়ে থাকার দুই বছর অনিদ্রা, প্রচন্ড মারধর, অশান্তিতে কেটেছে। এমনকি বৌভাতের দিন‌ই বেল্টের  আঘাতে কালশিটে পরেছিল পিঠে। যেদিন বাবা ছোট্ট আমিকে বিছানা থেকে ফেলে দিয়ে মাকে আবার মারধর শুরু করেছে, সেদিনই মা নিজেকে আর আমাকে বাঁচাতে সব কিছু ছেড়ে চলে এলো বাপের বাড়ি। শুরু হয় সংগ্রাম। সেই ছোট্ট আমিকে দিদার কাছে রেখে সকাল, বিকাল ও সন্ধ্যায় টিউশনি পড়াত। আস্তে আস্তে আমি বড়ো হচ্ছি, অন্যদিকে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমে ভীষণ ক্লান্ত আমার দুর্গা। মা দুর্গার মতো দশ হাত না থাকলেও, মনোবল ভীষণ শক্ত। দাদুর জমি সহ ছোট্ট বাড়িটাকে ধীরে ধীরে সামান্য নিজের হাতে সাজিয়ে চলছে এখনও। এখন মা খুউব ছোট্ট একটা মুদির দোকানের মালিক। আমি বড়ো হচ্ছি, মা করছে অক্লান্ত পরিশ্রম। লক্ষ্য একটাই আমাকে মানুষের মতো মানুষ করা। বাবার স্নেহ ‌‌ও ভালোবাসা আমার কাছে তুচ্ছ হয়ে গেছে মায়ের পবিত্র পরিশ্রমে।

দিদা ও দাদুর দেখাশোনার পাট চুকিয়ে গেছে। এখন শুধু আমাকে নিয়েই তাঁর জগৎ ও তাঁর কর্ম। পিশাচরূপী মানুষের কটূ মন্তব্যকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এগিয়ে চলেছে একাগ্রতার সাথে। সংগ্রাম‌ই হয়তো মায়ের ভবিতব্য। জানিনা মায়ের হাতের এই বৈঠা ধরে মাকে কতটুকু সুখের ছোঁয়া দিতে পারব। আমার মা 'আমার দুর্গা'। তাঁর দৃঢ় মনোবলকে অনুসরণ করে এগোতেই হবে আমায়...

No comments:

Post a Comment