Sunday, May 6, 2018

কিছু  ব্যক্তিগত স্বীকারোক্তি 
-------------------------------------------------------------------
প্রিয় [সম্পাদক + পাঠক] সমীপেষু,

আজ সকালে ~ মা যখন 'ব্যক্তিগত জরায়ু থেকে' পড়ছিলেন, তখন একটা কথা শেয়ার করেছিলাম।শিল্প এক বিশেষ যাপন থেকে আসে।সেই যাপন সৎ হলে, শিল্পের গুনগত প্রকৃতিও সৎ হয়।অর্থাৎ সদর্থক ও সৎ চিন্তনই সঠিক রাস্তা বা মার্গ দর্শন করায়।কিন্তু এই সৎ বা সততা বিষয়টি কিরকম?তার পরিধি-র রেখাচিত্রটিও কিরকম? তা কি খুব জটিল?না কি সরল একটি সমীকরণের প্রক্রিয়া বিশেষ?যেখানে 'x' ফ্যাক্টর অনুধাবন করতে পারলে, যেরকম খুশী সমাধান সম্ভব।এ সবই যেন ভিন্নভিন্ন বলয়-উপবলয়ে ঘুরছে।অতএব এই প্রশ্নগুলির উত্তরগুলোও স্থান-কাল-পাত্রভেদে হয়তো একেক রকম হতেও পারে ~ ভিন্নভিন্ন বলয়-উপবলয়ের শ্রেণীগত গঠন সম্পর্কিত।তবে মোদ্দা কথাটি হলো যা আত্ম-আবিষ্কারের সপক্ষে, তার দ্বারা কিন্তু সঠিক মনন-টিও দিশা পায়।আর মন থেকেই কিন্তু মানবিক & আত্মা থেকেই আত্ম।এখন আত্ম-আবিষ্কার এতো জরুরী কেন?বামপন্থি মতে একটি সুন্দর কথা আছে।যখন মত ও পথ নিয়ে দ্বিধা ~ তখনই প্রয়োজন আত্ম-সমালোচনা।ধর্মীয় জায়গায় এখানেই আসে কনফেস্ বা স্বীকারোক্তি।গুরুবাদ বলে ঈশ্বরের কাছে।দর্শন বলে আত্মার কাছে।আমরা কোনটা নেবো ~ সম্পূর্ণ আত্ম-অভিরুচি।জানতে ইচ্ছে হয় : দ্রৌপদী-র বস্ত্রহরণ সকলের সমক্ষে হয়েছিল, প্রকাশ্য রাজসভায়।কেউ কি করেছিল আত্ম-সমালোচনা?হয়তো করেছিল।তাও এই গূঢ় প্রশ্নটি থেমে থাকে না।আত্ম-সমালোচনার প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হলেও, তা কি সঠিকভাবেই হয়েছিল বা বলা ভালো প্রক্রিয়াগত অনুশীলনে তা কি সঠিক ছিল? 
:
কেউ বলতেই পারেন ~ হঠাৎ সাহিত্য ছেড়ে এসব প্রসঙ্গ কেন?কিন্তু সাহিত্য কি যাপনের বাইরে থেকে সত্য এবং নিশ্চিত?তার ভেতরে কি কোনো অন্তর্বর্তী অবস্থান নেই?শুধুই কি ভেবে নেওয়া অহেতুক আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দু?না কি কানপাতলা কিছু কথায় অহেতুক উদ্বেল আবেগ?আজ যা ঘটছে, ক্রমাগত ভাবে ঘটছে, যেভাবে ঘটছে : তাকে এড়িয়ে যেতে পারছি না।কিন্তু কেন?কেন বারবার প্রয়োজনীয় প্রসববেদনা ঘটাচ্ছে আত্মার বার্তা।কেন মস্তিষ্ক সমস্ত নেশা, সমস্ত ঘোর কাটিয়ে বারংবার মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছে ~ সেই শুদ্ধ জ্যোতির মুখোমুখি? 
:
এর উত্তরে বলি ~ কোনো রকম লবিবাজি না করে কিছু অগ্রজ পত্রিকা বহু তরুণ কবিদের এগিয়ে দিয়েছে অতীতে।বহু প্রতিকূলতা সত্ত্বেয় তারা এই কাজ এখনো করছে।আর তা তারা করছেন ~ বাংলা সাহিত্য এবং বাংলা ভাষার প্রতি দায়বদ্ধ হয়েই।সাহিত্যের এই তরুণদের ভিতর আমিও একজন।হয়তো কোনো লেখা কবিতা নাই হতে পারে, কিন্তু সেটা যে কবিতা নয় হিজিবিজি (যারা হিজিবিজি নামের সাথে পরিচিত, তাদের জন্য আরো বললাম), তা ঠিক করবে কে ~ আমি?তাহলে কি আমিই শেষ কথা?
এই প্রশ্ন অনেকেই বলবেন আত্ম-অহংকার, কিন্তু আমি তা বলি না।কারণ, প্রকৃত যাপনে (বলা উচিৎ প্রকৃত শিল্পবোধ যাপন) আমার সময়ের কাছে ~ আমার চিন্তনই শেষ কথা।সময় পাল্টাবে ~ বোধ পাল্টাবে ~ চিন্তন পাল্টাবে : এটাই ব্রহ্মাণ্ডের প্রকৃতি।বিজ্ঞান সময়কে ব্যাখ্যা করে একটা বলয়ের মতোই, বলয়ের কেন্দ্রে আছে ব্রহ্মাণ্ডের অন্তর্গত প্রতিটা অংশ / প্রতিটা ক্ষুদ্রাতি-ক্ষুদ্র তরঙ্গ।সুতরাং আমরাও বা এর বাইরে কেন?আমার সময় ~ আমার আত্ম-অবস্থান, আপনার সময় ~ আপনার আত্ম-অবস্থান।মজার কথা, এটা প্রমাণিত যে প্রত্যেকটি সময়-বলয় কিন্তু স্বতন্ত্র, কখনোই পরস্পর বিরোধী নয়।কিন্তু এখানেই সেই জায়গা ~ এই চিন্তন কিসের জন্য?যখন নিজেরাই সময়ের পরিচর্যা ছেড়ে প্রত্যেকে প্রত্যেকের পরস্পর বিরোধীতায় দিনের মুহূর্তগুলোর অলস ব্যায় করায় মত্ত।চিন্তন & [চিন্তন + যাপন] যদি সৎ হয়, তা হবে আত্মার খোঁজ।তা যদি, আরেকজনের সময় ও সময়যাপন-কে আঘাত করে, কোথায় সেই সততা।
:
এই সময়পর্বে, অনেকেই বলছেন দুর্বোধ্য / অনেকেই বলছেন কোষ্ঠ-কাঠিন্য লেখা, পাঠককে পাঠ বিমুখ করে তুলছেন / আবার অনেকেই বলছেন নির্বোধ শব্দের জাগলারি।তাদের কাছে প্রশ্ন : আমরা কি পাঠকের সময়পর্বকে চিহ্নিত করে, তাকে বলতে পারছি ~ আপনি কোন সময়পর্বে রয়েছেন?যেখানে কম্পিউটার শুধু '০' এবং '১' ছাড়া কিছু বোঝে না, সেখানে আমরা যে কোনো কাজে / যে কোনো ভাষায় কম্পিউটারের সাহায্য নেবো, প্রযুক্তিকে চাইবো ~ আর শিল্পবোধে সেই প্রযুক্তির কথা বললেই বলবো, সাধারন পাঠকের সময়ের অভাব।একটি গ্রুপে বলেছিলাম ~ '০' লিখলে বা আঁকলে পৃথিবীর যে কোনো ভাষায় তা 'শূন্য' বা 'জিরো' বোঝায়।তাহলে নূন্যতম স্থান ব্যবহার করে, এক কথায় '০' না লিখে কেনো লিখবো 'শ+ঊ+ন+য্' বা 'জ+ই+র+ও'।আরেকটি জায়গায় লিখলাম '♨' অর্থাৎ লিখলাম না 'দাউদাউ করে জ্বলছে লেলিহান অগ্নিশিখা' বা 'দ+আ+উ+দ+আ+উ, ক+র+এ, জ্+ব+ল+ছ+এ, ল+এ+ল+ই+হ+আ+ন, অ+গ্+ন+ই+শ+ই+খ+আ'।কেন বারবার ভূল? ~ এটা ন্যানোপ্রযুক্তির যুগ।আর সৌমিত্র রায় বা তারকনাথ দলুই বা রাহুল গাঙ্গুলী যা লিখছে ~ তা অন্য কেউ লিখলেই কপিপেস্ট শুধু নয়, দুর্বোধ্য এবং জোর করে লেখা।কেন এটা বোঝা যাচ্ছে না, যে স্বতন্ত্র পরিকল্পনা থাকলে কপিপেস্ট নয়, হওয়া সম্ভব নয়।কিছুদিন আগে শ্রদ্ধেয় প্রয়াত বারীন ঘোষাল একটি তথ্যচিত্রে বলছেন : যদি আধূনীক লিখতে হয়, মনে-প্রাণে-শরীরে-যাপনে তাকে আধূনীক হতে হবে।যদি, অধূনান্তিক লিখতে হয় ~ মনে-প্রাণে-শরীরে-যাপনে তাকে অধূনান্তিক হতে হবে।যদি নতুন কবিতা লিখতে হয়, মনে-প্রাণে-শরীরে-যাপনে তাকে নতুন হতে হবে।তেমনিই তথ্যপ্রযুক্তি সময় মনে করলে, তাকে লিখতে হলে মনে-প্রাণে-শরীরে-যাপনে তাকে তথ্যপ্রযুক্তি সময়যাপনে বিশ্বাস করতে হবে, এটাই কি স্বাভাবিক নয়?কেন বিশ্বাস করা যাচ্ছে না, এই যাপন একটা পথ।একটা অনুসরণ, যেখানে প্রকৃত স্বতন্ত্রতা না থাকলে চলা সম্ভব নয়।এখানে ~ সৌমিত্র রায়, তারকনাথ দলুই বা রাহুল গাঙ্গুলী বা অন্য যে কেউ, প্রত্যেকেই স্বতন্ত্র ও স্বাধীনভাবে পথ চলছে।
:
সম্প্রতি একটি এরকমই তরুনদের সুযোগ দেওয়া পত্রিকার হোয়াটস্ আপ গ্রুপে এক তরুণ কবির লেখায় বলা হলো ~ কবিতা সে লেখে না, লিখে দেয় রাহুল গাঙ্গুলী।যেহেতু সে রাহুল গাঙ্গুলীর কবিতা যাপনকে অনুসরণ করার চেস্টা করে ~ এই অপমান উভয়পক্ষেরই।আবার, লেখা থেকে কথা প্রসঙ্গে ব্যক্তিগত আক্রমণ এতোটাই চালানো হলো, ভেঙে দেওয়া হলো তার উৎসাহ এবং আন্তরিকতা।এবং করা হলো এতোটাই সাংঘাতিকভাবে, যে সে আর লিখতে চাইছে না : ঘেন্নায় এবং অভিমানে।এই দায় আমারই ~ যেহেতু আমিই তাকে এনেছিলাম এখানে বা অতীতেও বহু-কে এনেছিলাম, তারা বেশ কিছু কারণে ছেড়ে গেছে বা কেউ এখনো আছে।
হ্যাঁ বহু তরুণ কবিবন্ধুকে চেস্টা করেছি নানান্ ভাবে সাহায্য করতে, কোনোরকম স্বার্থপর পাওনা ব্যতিরেকে।তাতে কি তার অস্তিত্ব কিছু কম হয়ে গেছে?তার সময় ~ তার শিল্প ~ তার উপলব্ধি ~ তার অনুভূতি ~ তার চিন্তন : সে তো তারই একান্ত, আমার নয়।আমরা কি বলি "কবিগুরুর লেখা অনেক গানের সুর ~ বিদেশি লোকসঙ্গীত থেকে নেওয়া।অথবা কবিগুরুর সুর যখন বিখ্যাত সুরকার কোনো ভিন্ন ভাষার ছায়াছবিতে হুবুহু প্রয়োগ করেন", এ সবই কপিপেস্ট???
আর ব্যক্তিগত আক্রমণ? যখনই আমাদের কাছে সঠিক প্রত্যাত্তুর নেই, বলা ভালো তার উত্তরটি যখন দেখছি ~ সঠিক এবং সৎ, তখনই দাঁতনখ বার করে তাকে আক্রমণ করা অথবা সেই আক্রমণটিকে প্রশ্রয় দেওয়া।
:
কি হবে এই অসৎ কবিতা চর্চা করে ~ যেখানে শুধু নাম আছে, স্মৃতি নেই।একথা কি তাহলে ভুলে যাব, কাজের উদ্দেশ্য সঠিক হলে, আজ না হোক কাল ~ সেই কাজের সময়বলয়টি সর্বজনগৃহীত হবে।না হলে, কেন প্রতিষ্ঠান বহির্ভূত কবিদের আমরা স্মৃতি থেকে স্মৃতিতে সঞ্চার করি, ভিন্ন সময়বলয়ে থাকা পাঠকের ভিতর সঞ্চার করাই ~ তাকে এক সময়পর্ব থেকে আরেক সময়পর্বে উত্তরণের দরজাটি দেখিয়ে দিই।পত্রিকা একদিন কালের নিয়মে গতিপথ হয়তো পরিবর্তন করবে।কিন্তু আমার মতো অনেকেই মনে রেখে দেবে সেইসব কবিতার সংকলন, যা বাংলা কবিতার গতিপথ বদলে দিতে পেরেছিল।মনে রাখা থাকবে সেই হিজিবিজি, যার কনসেপ্ট নিয়েছিল এয়ারটেলের মতো কর্পোরেট সংস্থারা।তাহলে কেন আজ বিভিন্ন জায়গাগুলি কিছু সময়ের জন্য হয়ে উঠছে কৌরব রাজসভা? কেন আমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছি ~ শুধুমাত্র বিশৃঙ্খলতা দিয়ে দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ?
অতীতে আমাদের ভিতর বহু মননশীল আলোচনা হয়েছে।অংশগ্রহণ করেছি সবাই।বিতর্ক হয়েছে, তর্ক হয়েছে ~ তারপরেও তা সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রকাশ করা হয়েছে (আমার টাইমলাইনে দুটি যেমন উদাহরণ আছে)।তা ছিল তথ্যে সমৃদ্ধ, মেধায় সমৃদ্ধ, সৎ উপলব্ধিতে সমৃদ্ধ।আর আজ ~ কোথায় সেইসব?যারা ভাবেন উপলব্ধিহীন প্রচুর পরিমাণে নীরস পাঠ করে শুধুমাত্র তাথ্যিক হয়ে থাকবেন ~ খুব করুণা হয়।কারণ, উপলব্ধি হলো ~ সেই পথ ও দিশার অভিমুখ অনুসন্ধান।আর পাঠ হলো সেই বহিরাগত সহায়তা, যার সাহায্যে আমরা পথ অতিক্রমণ করবো দ্রুত (যেমন, গরুর গাড়ি, মোটরগাড়ি, জাহাজ, এরোপ্লেন, ইত্যাদি)।অতএব আর যাই হোক, পরিকল্পনাহীন বা উপলব্ধিহীন বা অনুভূতিহীন শক্তিক্ষয়ে থাকা ক্ষতিকর ছাড়া আর কিছু দিতে পারবে না বলেই আত্মবার্তা।তাই এই প্রকার নিরথর্ক কবিতা চর্চায় আর থাকতে চাইনা।কারণ, যে হাত চারাগাছকে এগিয়ে দিতে সাহায্য করে, সেই কচি চারাগাছটির উপর আঘাত মানে ~ তার সাথে জুড়ে থাকা প্রকৃতির সেই হাতটিকেও আঘাত করা।আর যতোদিন না আত্ম-সমালোচনা পর্ব শুরু হবে ~ এই অপ্রীতিকর ঘটনাগুলিও ঘটবে।সুতরাং নিজের আত্ম-সমালোচনাই হোক আত্ম-প্রতিবাদ।আর তাই ছেড়ে যেতে চাই সেইসব বন্ধুদের।আসলে এই প্রক্রিয়াটি বড়ো জরুরী, কারণ বারংবার বাংলা সাহিত্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কতিপয় ব্রুটাসের জন্যই।আর এটা ভুলে গেলে চলবে না, আগামী পৃথিবীতে আত্ম-অবস্থান যতো ছোটো হচ্ছে, প্রকৃতির অন্তর্বস্থানের স্পেস আরো বাড়ছে।হয়তো একদিন, সমস্ত অবস্থান মিলেমিশে এক হয়ে যাবে।অতএব, বন্ধ হোক সাহিত্যের ভিতর রাজনীতি, বন্ধ হোক অহেতুক ধ্বংসের প্ররোচনা।শুদ্ধ ও স্বচ্ছ হয়ে উঠুক আত্মবার্তা।সকলে ভালো থাকবেন, সৎ প্রচেষ্টায় থাকবেন।শান্তি।উপরের কথাগুলি আরো একবার কয়েক লাইনে
:
[কবিতারা পেরোতে চায় আগাম চৌকাঠ
যারা বারুদ নিয়ে বাঁচে
পোড়া ছাই নাভির চেয়েও দামী
বাতাসে ভাসমান পালক।কখনো পালকেও_____

ইতি : রাহুল গঙ্গোপাধ্যায় 

No comments:

Post a Comment