Sunday, May 6, 2018


উত্তর পূর্বাঞ্চল বিভাগ :
কবিতা :


সিপিয়া রঙ সময়

 দেবলীনা সেনগুপ্ত

সময়ের রঙ এখন সিপিয়া
এই সিপিয়া রঙের সময়ে
কোন কথা বোলো না।
চুপ করে থাকো আর
চোখে রাখো নিরীহ নিরীক্ষণ
সতর্ক শ্বাপদের মতো
পার করো প্রহরার ক্ষণ ।
সমস্ত প্রশ্নচিহ্ন
বিকলাঙ্গ ভাসিয়ে দাও
প্রশ্নহীন আনুগত্যে
নতজানু সভ্যতার কাছে ।
শোন, কথা বোলো না
দেখো, কথা বোলো না
গুণে রাখো পাতাদের অসহায় খসে পড়া
তারাদের অকাল পতন
শস্যক্ষেত্র জ্বলে গিয়ে বধ্যভূমি হওয়া
ভুলে যাও অনাবিল স্বাধীন চারণ
এই বিপ্রতীপ সত্য সব
আগুন ও লাভা হয়ে
জমা থাক বুকের ভেতর

ইতিহাসের  পাতায় লিখো
অসহ্য উদগীরণ
ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির
জ্বলন্ত স্বাক্ষর।

যুদ্ধ

কমলিকা মজুমদার

প্রতিটা রাতের পর রাত নামলে
আমি মার দিকে চেয়ে থাকি
বেডরুমের জিরো পাওয়ার বাল্বে
বুঝে নিতে চাই বলিরেখা
হাত ছোঁয়াই আর মাপি
যুদ্ধ এখনো কতটা বাকি
যতদিন কাঁটাতারে সৈন্য বহাল
আমার ঘুমটাও যে সুনিশ্চিত
এটাকেই কি স্বার্থপরতা বলে?

ফাঁকি

অনুরাগ ভৌমিক

এই চলে যাওয়া ফাঁকি,

ফাঁকি দিয়ে সমস্ত ‍রচনা;
অথবা সমস্ত এর পর...

দিন দিন ছেড়ে যায় যৌবন,
উড়ে যায় পোষমানা পাখি।

পরশি-দেয়াল টপকায় না
ঘসা কাচ।

শুধু শিউলি বৃক্ষে বসে থাকে
মিশুকে জ্যোৎস্না...

হত্যা 

তমা বর্মণ 

তর্কশাস্ত্রে বেঁচে থাকতে তীব্র অনিচ্ছে।

যা হয় হবে।
ভালোমন্দ ভাবা নিবারণ স্যারের কাজ

একটি সম্মতির মধ্যরাত জেগে...
অতো বাঁচামরা নিয়ে আজকাল কে ভাবে!

মুদির দোকানে দাঁড়ালে
সব সমানুপাত।

লাভ ক্ষতি আছে?

জীবন জাতীয়সর্বভুক প্রাণী,
বন্ধ্যা গর্ভিণী সব খায়।

একশো বাহান্নোটা টুকরো আমিও প্রমাণলোপাটে রাখতে চাই...

আলোর নীচে

জাদু

মূল অসমিয়া : চন্দন গোস্বামী 
বাংলা ভাষান্তর :অর্জুন দাস 

জাদুকরের জাদুতে  একদিন
গলতে শুরু করে পাথরটা

পাথরের এক অংশ জল
আরেক অংশ মাটি

যার কথায় কোনো এক সুরংগ ভেদ করে
রক্তের নদী বয়ে আসে
সাগরের ঢেউ ধুয়ে নেয় উঠোন

অন্য এক ফেরার পথে
গানের পাখিরা উরে যায়
আগুন-সৃষ্ট ঢোলের শব্দে

মাছ লেজ নাড়ালেই
একটি মালার ভিতর চন্দ্র

পাতালের রূপকথা
পলাশ সাগরে ঝিলমিল তারা

উচ্চিংড়ের ডাকে লুকিয়ে থাকে রোদ্দুর

মাঠে বীজের স্তুতি
জাদুকরের কথায়

বিশ্বাসের জন্যই যুদ্ধে নিমজ্জিত জীবের প্রাণ
হিংসার জন্য হিংসা
অহিংসার জন্য অহিংসা
জাদুর পথে অনেক পথ
মহাপথের প্রান্তে অসত্যর ছায়া
ঢেকে রাখে সত্য

প্রত্যেকটা শব্দই তাই কবিতা
কে প্রথম শারী কবিতার স্রষ্টা
কে স্রষ্টা হবেন শেষ শারী কবিতার
বলো হে জাদুকর!


ডিজিটাল পদাতিক

আবু আশফাক্ব চৌধুরী

প্রাচীন বসন্ত হাওয়া মরু মেঘ অস্থির
পাহাড়ের পরিয়ায়ী সুখ লেপটে থাকে গায়
বনফুল অর্ধমৃত রাতদিন নীরব পাহারায়
দুদণ্ড বিশ্রামহীন সময় এ ধরিত্রীর

ত্রিকোণ গুহা থেকে ওঠে আসে সন্তান সন্ততি
নতুন সংকল্প ঘেরা চোখ মুখে আতসবাজি
অন্ত্যমিলে ছন্দ হারা বন্ধ চোখ অন্ধ আরতি
ডিজিটাল পদাতিক উর্ননাভ সূতোর কারসাজি...


রিফিউজি 

পিংকি পুরকায়স্থ চন্দ্রানী 

নাম তার বনময়ূরী,
বাড়ী হাইটেক এপার্টমেন্টের ওপারে।
যেখানে জন্ম নিতে চলেছে,
ভবিষ্যতের এয়ারপোর্ট।
আপাততঃ সেখানে আকাশ,
মিলে মিশে যায় মাটির টানে,
আর চাঁদ ঝুলে থাকে সারাটা রাত,
স্বপ্নের ঝাড় বাতির গন্ধ নিয়ে। 
সকাল বিকেল জানালায় চোখ রেখে দেখতে পাই,
তার সুখের সংসার,
ঘাস জংলার আড়ালে আবডালে,
ছড়ানো ছেটানো তার গুছিয়ে রাখা আসবাব।
এই কিছুকাল আগেই তো মা হোল সে,
কোলে দুটো দুধের সন্তান।
তাদের জন্যে সযত্নে বুনে চলে,
রঙিন পালকের উত্তরীয়।
বৃষ্টি মাখা কোনও এক অবেলায়,
তারা নেচে উঠবে বলে। 
তবু মাঝে মাঝে কেঁপে উঠে তার বুক,
মনে পড়ে সেই খাণ্ডব দহনের ইতিহাস।
যখন ইশ্বর ও ঈশ্বর-সখা গৃহদাহের পর,
সাজিয়েছিলেন ইন্দ্রপ্রস্থ নামের সুখের সংসার।
সেই থেকেই তারা ঘর হারায় প্রতিদিন,
রিফিউজি নেমপ্লট বনময়ূরীর দোর গোঁড়ায়।

তোমারই জন্য

অপাংশু দেবনাথ

 হাওয়ায় ওড়ে স্বপ্ন গুঁড়ো,
             বাতাসে প্রাণকপাট
খুলে নামে পুনশ্চ  অন্ধকার।
রাত্রি ছিঁড়ে একা সে আদিম       
                       বাজাই বাঁশী।

এ শরীর জানে যাকে ছলে
         দগ্ধ করেছি এ যাবৎ
কান্না জড়িয়ে বেড়েলকাটা পথে।
শ্বেতকান্না আমাকেই মাটিমুখী করে।
যতোবার কেঁদেছি বেঁচেছি প্রাণে।
কান্নার প্রকৃত সুর জানো তুমি।

জমিন জুড়ে যতো হরিৎ দেখো
তোমরই জন্য, তাতে স্বপ্ন রুয়ে রেখেছি


চরিত্রগত  শব্দসুখ

নীলাদ্রি ভট্টাচার্য 

আধশুকনো মনের দাগ
অধরা জায়গা নিয়ে বসে
আছে ফসল কবিতা।
নিয়মিত উনুন ছোঁয়া ঘামের
ঘনিষ্ট টানাপোড়ন শব্দছাদ
বেয়ে উর্ধ্বে ওঠে।
ভাত ফুটার  প্রহরী  দার্শনিক আওয়াজ
গৃহস্থের মেঘবাহার চোখ,
প্রচ্ছদময় মোড়ে তারা খিদের
করাঘাত মগ্ন  কাব্যভাঁজ।
মানুষের ছায়ায় মানুষ ভিড়ের   দ্বিপ্রহরের দ্বন্দ্ব,
ধীরে ধীরে কবি আঘাতের
নিরাকার রস খুঁজে সৃষ্টিমত্ত মাটির বেহালা।


ভয়

রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ

মধ্যরাতে ভীতু হাওয়ায়
শাখা মেলে পাল্টে যাওয়া
বিকল্প বাঁধন
আঙুলের সভ্যতায় দীর্ঘ হচ্ছে
নির্দেশ আর বাইসন
গৃহস্থালি প্রজাপতি মেঘের পাঁচালি ভেঙ্গে
তীব্র করে কারসাজি


কবিতা এক জীবন- মিছিল

অভীক কুমার দে


বুকের অতৃপ্ত বাতাস 'আহ্'
নিয়ে আসে দিনের শেষে।
রাতের ধারা মুছে দেয় আলো।
অবুঝ ছায়াপথ ঘোলাস্বপ্নে
আকাশ সাজায়। অথচ বাইরে ভিন্ন শূন্যতার ভিড় এবং
ভেতরে স্বপ্নজাগা ভোর।
এখানেই বাস করে নীরব আর সরব অনুভূতি।
ভেতর:- কবিতা কি শুধুই
উপশমের মনোপারদ ?
বাহির:- বর্ণময় কর্মজীবনের
বর্ণনা, তোমার চারদিকের আমি, আমি আর আমি
যেমন। তুমি যাকে তুমি বলো।
দৃশ্য:- রূপ, রঙ,শব্দ, ছন্দ,
ব্যথা, আনন্দ, ভয়, অশ্রু, সুখ এসব গায়ে মেখে চেনা বকের
ডানায় ছড়িয়ে থাকা আকাশ অথবা তরল নদীর সাগরসুখ।
ভেতর:- যদি প্রতিফলকের
ভাষা না বোঝা যায় ? যদি
উত্তেজক অন্ধ চোখে কিংবা অন্ধ স্নায়ুতে ? দর্শনক্ষুধায়
ঝাঁপিয়ে পড়ে যদি কাল্পনিক সীমানা ?
বাহির:- মানে ?
দৃশ্য:- রাতের বাহারি ভাষা
মতোই গোল্লাছুট, অন্ধকার।
লক্ষ্যবস্তুর অভিমুখে
অনুমানের অনুভব।
ভেতর:- একটি নদী সাগর চেনে,
একটি নদী আকাশ।
জলের তরল গোপন জানে,
শূন্য চেনে বাতাস।
বাহির:- জানি। দৃশ্যেরই
প্রতিফলন রূপকের ভেতর।
দৃশ্য:- তরঙ্গের পর তরঙ্গে
কখনো কান্নার সুর, কখনো
সুখের গুল্ম জাগে।

শব্দ ও নিঃশব্দের ভেতর।
একখণ্ড দ্বীপ। বাইরের বর্ণনায়
মিশে উর্বর জমি। শব্দের শিশু
বড় হয়, আকাশ ছোঁয়।
কবিতা এক জীবন- মিছিল।
কবি তার জমি চেনা শিশু।

সময় 

শতদল আচার্য

আমাদের তেড়ে আসা
যে সময় ।
দশকে দশকে পরীক্ষা
বাস্তুভিটা ,জীবন নিয়ে নতুন নতুন
ফন্দি-ফিকির।

পূর্বপুরুষের ঠিকানা লিখা আছে ,
কালচক্রের ইতিহাসে।
উনিশের পাতা উল্টালে
সারিবদ্ধ বিশ্বাসঘাতক
চেতনার ফুল আর বিষাদের ছাই ।

চলো ,আমরা এভাবেই যাবো
আমাদের ট্রেন থামবে একদিন
এই পথে ।



৩ টি অনুগল্প

আকাশ

শিবাশিস চট্টোপাধ্যায় 

হাতে একখণ্ড 'ছেলাইজ'। বেকা তাকিয়ে আছে একদৃষ্টে। বেকা ভিখারী। যা হোক দিনটা কষ্টেছিষ্টে পার হবে। মংলার চায়ের দোকানের বাইরে একটা টিউবল আছে। টুকরা-টাকরা যেদিন যা জোটে তাই গিলেই সে সেখানে যথেচ্ছ জলযোগ করে। খিদেটা তখন মালুম হয় না। আজ এই  'ছেলাইজ' খেয়েই কেভি স্কুলের গেটের কাছে সিমেন্টের ছাউনিতে পড়ে থাকবে সে। আগে সে নাটমন্দিরে থাকতো। সেখানে কিছুদিন থেকে এক পাগলির আস্তানা। ঘুমোতে দেয় না।
    ছেলাইজ হাতে বসে আছে বেকা। কাছে একটা নেড়ি প্রবল ল্যাজ নাড়ছে ।অর্ধবৃত্তাকারে ঘুরছে নেড়িটা। পেছনে হারু মণ্ডলের খাল। পানায় ভর্তি প্রায়। সাথে চিপস, কুড়কুড়ের ছেঁড়া প্যাকেট।  মাঝখানটায় একটু ফাঁকা। জল দেখা যায়।
    " কি আচরিত! তোর দেখং একফোঁটাও ধৈজ্জসহ্য।  নাই রে জজসাহেব!"
     নেড়ির দিকে চেয়ে বলে ওঠে বেকা। ওই নামেই সে নেড়িটাকে ডাকে। নেড়িটাও সাড়া দেয় বেশ!
   "তোক না দিয়া মুই কোনোদিন খাং?"
নেড়িটা পূর্ববৎ পাক খেতে থাকে। ল্যাজ নাড়ে অস্থির ভাবে।
   'বইস তো খানেক'
জজসাহেবের বসতে বয়েই গেছে! তার কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই যেন।
   পুরোপুরি সন্ধে হয়নি এখনো। তবে আকাশচারী পাখিরা একটু যেন চঞ্চল হয়েছে। একটু একটু আঁধার ঘনিয়ে এলে যেমন হয়! শালিখ, ঘরচিরিকা, আর দুটো পাতিকাক। শুধু এইটুকু মাত্র আকাশ বেকার। বেকা আকাশে তাকায়।
    হঠাৎ একটা পাতিকাক কোত্থেকে উড়ে এসে ছোঁ মারে তার ছেলাইজে।বেকা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছেলাইজ ঠোঁটে ধরে খালের ওপর দিয়ে উড়ে যায় কাকটা। কিন্তু ঠোঁটের ছেলাইজ ঠোঁট ফসকে খালে পড়ে যায়। কাকটা উড়ে গিয়ে বসে খালের ওপারে ঝুলে থাকা ফোনের তারে, দোল খায়। টাল সামলাতে না পেরে আবার উড়ে যায়। এবারে কাকটা গিয়ে বসে হারু মণ্ডলের আমের ডালে। আমগাছে সন্ধেরা আগে আসে। গাছের নিচ থেকে ওপর অব্দি তাই এখনই কেমন আবছা অন্ধকার ।
   ঘটনার আকস্মিকতায় ভ্যাবাচ্যাকা খেলেও খুব অবাক হয়নি বেকা। জোরেজোরে হাসতে থাকে সে। হেসে গড়িয়ে পড়ে। এদিকে জজসাহেবের অবস্থা কে দেখে! একবার উপরে তাকিয়ে ভৌ ভৌ করছে তো একবার হেসে গড়িয়ে পড়া বেকার পাছা শুঁকছে।
    এলা! মোর উপর বিশ্বাস না কইল্লে কী ফল হয় বুঝলু রে, কাউয়া! বেশি ছঠফঠ ভাল নোয়ায়! দ্যাখ না, তোর আমও গেইল ছালাও গেইল!
     কিছুতেই আর হাসি থামে না বেকার। কাকটা ক্রমশই ঢাকা পড়ছে অন্ধকারে। সে কিছু শুনেছে কি না বোঝা গেল না।
বেকা উঠে দাঁড়ায়।
কুকুরটার খুব আশাভঙ্গ হয়েছে। ল্যাজে বিপন্নতার হালকা দোল।
    "মুনসিপালের ডাসবিন যাবু রে জজসাহেব? চ..."
বেকা হাঁটা দেয়।

........

নোটিশ




গতরাতটা একত্রিশের ছিল। রাতের বাজিগুলোর খোলটাগুলো এখনো পরে আছে এখানে ওখানে। ভোর হয়েছে সবে। নতুন বছর! ভোরটার নাম  এন আর সি! নীল নীল কুয়াশা মাখা! আকাশেও কী অদ্ভূত কুয়াশার মেঘ! মেঘ শব্দে কালাচানের মনে পড়ল মেঘনা। বাবার মুখে সে শুনেছে মেঘনা পূর্ববঙ্গের একটি নদী। ওই নদীর পারেই নাকি ছিল ভিটে। একসময় পুড়ে যায়! অসমে আসার পরেও তো কতবার পুড়ল! তৃতীয়বার উচ্ছেদ হয়ে যে বার তার বাবা পর্বতঝোরার পাহাড়ে আশ্রয় নেয় তখন সে খুব ছোট। তারপর তো বাবা মারাই গেলেন। মারা যাবার সময় কোনোমতে শুধু এটুকু বললেন--
     কালাচান রে, বাপ হক্কলরে দেহিস! পলাইস না!   
     আমি মনে হয় বাইচ্চা গেলাম! মল্লে তো আর মানষে   
     বাঙালি থাকে না!
বলেই চারিদিকে একবার মাথা ঘুরিয়ে সবাইকে দেখলেন। নাক-মুখ দিয়ে ধোঁয়া ধোঁয়া তরল বেরোলো। তিনি চোখ বুঝলেন।
      মরে তিনি ডেডবডি হলেন প্রথমে। তারপরে হলেন চন্দ্রবিন্দু।
বালিশ নেই, খড়ের বিছানা! তীরের ফলার আগুনে ঝুপড়ির পর ঝুপড়ি পুড়ছে! আর বাবা পালাচ্ছেন আন্ডাবাচ্চা সহ! শহরের হাইওয়েগুলো তখন চিৎকার করছে আলীকুলিবঙালি! আলীকুলিবঙালি! সে মানেই বুঝতো না এসবের! কী করেই বা বুঝবে? সবে তো নয় বছর তখন!
    সবশেষে এই পাহার-জঙ্গল। এখানে বাঘ আছে--দূর থেকে ডাক ভেসে আসে! তবে মানুষরূপী বাঘ খুব একটা নেই!
   অনেকদিন পর একদিন পিওন এলো। কালাচানের ছেলেটি খাম হাতে নিয়ে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে জিজ্ঞাসা করল--এইডার ভিতরে কি লরচর করে গো?
    ইয়ার ভিতিরা বাঘ আছে, বাপই, বাঘ...
পিওন চলে গেল!
    খামের ভিতরে সত্যই বাঘ কি ছিল না!
আজকের ভোরটার নাম এন আর সি। বাবা মৃত্যুশয্যায়  বলেছিলেন " কালাচানরে পলাইস না!
কালাচান পালিয়ে যায়নি। সে পালাবে না।

.......

দেয়ালচিত্র





ছবি কখনো সখনো রক্তমাংসের হয়ে যায়! তবে এই ট্রান্সফরমেশনটার জন্য দরকার একটা নিঝুম শোবার ঘর, সেই ঘরে একটা ঝুলকালিমাখা বন্ধ ঘড়ি, গভীর এক নিশুতি রাত আর ঘুমোনোর ভান করে রাত জেগে শুয়ে থাকা একজোড়া চোখ।
     না ঠিক স্বপ্ন নয়। ঠিক উইশ ফুলফিলমেন্টও বলা যাবে না একে! ব্যাপারটা এতো ফ্রয়েডিয় নয় মোটেই।
     এই যেমন দেখতে পাচ্ছি এখন, এই মুহুর্তে...জীবন্ত হচ্ছে ছবিটা! আমি সূর্যোদয় দেখার মতো তাকিয়ে আছি দেয়ালে। দেয়ালের খানিকটা জায়গায় ছবিটার আবির্ভাব হচ্ছে। স্পন্দন জাগছে ছবিটার গায়ে। দৈর্ঘ প্রস্থে বাড়ছে। জ্বলজ্বল করে উঠছে দুচোখের তারা। তারপরে নাক...শ্বাস...শ্বসন প্রক্রিয়া। গালের ডান পাশের টোল...হাসি। শরীরের বাকি অংশগুলোও আকার নিচ্ছে।
        মেয়েটির নামকরণ করেছি-- ছবি। জানিই তো এ ছবি ক্ষণিকের রক্তমাংস, লালা। আর কিছু নয়। দেওয়ালেই ফিরে যাবে আবার রিভার্স একসনে!
       ছবি আমার দিকে তাঁর মাংসল দু হাত বাড়িয়ে দেয়। সে আমাকে নিছক হাগ নয়, আলিঙ্গন দিতে চায় ! তবে কি ছবি আমার পছন্দ-অপছন্দ জানে! তাই কি পরনে তার সাদামাটা ডুরে কাটা শাড়ি!  প্রসাধনহীন মুখ! লিপস্টিকহীন শুষ্কঠোঁট!
    ছবির শরীর দেখছি--- জীবন্ত। লুকিয়ে নয়, সরাসরি-- আঁড়াল সরে গিয়ে যে দেখা, তেমন। এভাবে সমগ্রতায় কোনোদিন কোনো শরীর দেখেছি বলে মনে পড়ছে না। জীবন্ত শরীর আমাকে ডাকছে। দেয়ালজুড়ে মেঘ, আকাশ... ভাবছি সাড়া দেব। এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরব ছবির শরীর।
    ছবিকে জড়িয়ে ধরি, ঠেসে ধরি বুকে। সুডৌল একটা অনুভূতি।  সুরের ওঠানামার মতো। ক্রমশ ডুবে যেতে থাকি।
ছবি হেসে ওঠে খিলখিল করে। কথা বলে ওঠে:

     হায়! যদি প্রেমিক হতে...যদি তুমি শুধু প্রেমিকই   
     থাকতে সেদিন! বিয়েটা তো দেয়ালই ছিল শুধু।     
     সিঁদুরের টিপ যেমন, শেষে দেয়ালই আশ্রয় হয়ে 
     যায়!
ছবি এসব কী বলছে! আমি অবাক চোখে তাকাই ওর দিকে!
      ছবি কি তাহলে সব জানে, মানে জেনে গেছে! সন্দেহ-ভালবাসার ঘাতক হাত কীভাবে এক নিশুতি রাতে বিষ খাইয়ে দেয়ালে গেঁথে দিয়েছিল ওকে!

1 comment: