Tuesday, October 27, 2020

 "ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়

পূর্ণিমার চাঁদ যেনো ঝলসানো রুটি"



কবি সুকান্তের হাত ধরে ক্ষুধা কেমন হয় শুনেছি ,অনুভব করেছি আমরা আমাদের পেটের ক্ষুধার অনুপাতের হিসেবেই ।

কিন্তু ক্ষুধাকে বিশ্ববাসী চাক্ষুস করলো আবেদিন সাহেবের মোটা তুলির আঁচরে,যা ছিলো হৃদয় বিদারক মানবতার  অবক্ষযের এক করুন দৃশ্য,যা দেখলে তথাকথিত যারা শিল্পপ্রমী নন তাদের ভরা পেটও ক্ষিদের জ্বালায় কুঁকড়ে উঠে পরে।

হ্যাঁ , শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন১৯৪৩ শে যখন দেশেরই কিছু স্বার্থাণ্বেষী মানুষ ও বৃটিশ সরকারের চক্রান্তে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ শুরু হয় তখন তিনি   কলকাতার ১৪ নম্বর সার্কাস রোডের বাড়ীটিতে আর বসে থাকতে পারেন নি।কলকাতার রাস্তায় ডাস্টবিনে পরে থাকা সামান্য উচ্ছিষ্ট খাবারের জন্য যখন কুকুর মানুষের তীব্র লড়াই চলছে তখন তিনি অতি সাধারন কাগজ ও কালো কালি নিয়ে বেড়িয়ে পরেছিলেন।

রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছেন,প্রত্যেক্ষ করেছেন অনাহারক্লিষ্ট মানুষের আর্তনাদ,ক্ষুধার তাড়নায় মানুষের  বিবেকহীনতা,খাদ্যহীন,বস্ত্রহীন মানুষের চরম দূর্দশা।

শত শত স্কেচে ভরে উঠেছিলো তার ঝোলা।"স্ত্রীর শবদেহের পাশে আর্তনাদরত স্বামী","মৃত মানুষের চোখ ঠুকরে খাচ্ছে কাক"। এরকম বহু দৃশ্য তিনি আঁকেন।এরকম ১২ টি চিত্র নিয়ে তিনি তৈরি করেন "Darking Days Of Bengal"নামে একটি এলবাম ।

            শিল্পীদের একটি প্রিয় বিষয় "ম্যাডোনা"তাতে আমরা দেখতে পাই মা ও শিশুর অকৃত্তিম ভালোবাসার কথা।ইতালীয় রেনেসাঁর শিল্পী লিওনার্দো-দা-ভিঞ্চি থেকে শুরু করে ,মাইকেল এঞ্জেলো ,রাফায়েল এরা প্রত্যকেই ম্যাডোনার ছবি  এঁকেছেন ।লিওনার্দো-দা -ভিঞ্চির "Virgin of the rocks" ছবিটিতে ম্যাডোনার সুশ্রী  রূপ তুলে ধরা হয়েছে সুন্দর বর্ণ প্রয়োগের মাধ্যমে অর্থাৎ ম্যাডোনা বলতে আমরা সুন্দর মায়ের রূপই কল্পনা করি।

               কিন্তু "ম্যাডোনা ১৯৪৩" নামে জয়নুল আবেদিনের ম্যাডোনা এর ব্যাতিক্রম। তিনি যে ম্যাডোনা কে আঁকলেন তিনি রাস্তায় পরে থাকা না খেতে পেয়ে অস্তি কঙ্কালসার  মৃত  মায়ের  এক করুন দৃশ্য যার বুকের উপর চড়ে জীবিত শিশুসন্তানটি মাতৃদুগ্ধ পান করছে ।যদিও মা মৃত তবুও মানবপ্রেমী আবেদিন সাহেবের তুলিতে প্রাণের স্পন্দন স্পষ্ট দেখা যায় ।


                   এরকমই আরো একজন সংগ্রামী শিল্পী চিত্তপ্রসাদ ভট্টাচার্য সংগ্রাম করেছেন মানুষের দুঃখ ,দুর্দশা ,ক্ষুধা তৃষ্ণা নিয়ে ।হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন কালো রং।এমন কি শিল্পী প্রত্যক্ষ ভাবে যোগ দিয়েছিলেন কমিউনিস্ট আন্দলনে।শিল্পীসত্তা ও প্রতিবাদী সত্তার মিশ্রনে এই সাদা-কালোর সম্রাট ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তার পরবর্তী সময়ে ভীষণভাবে আলোড়িত হন।চট্টগ্রামে বিমান আক্রমন ,পূর্ববংগের বিরাট অঞ্চলে খাদ্যশস্যের  হাহাকার চিত্তপ্রসাদের ছবিরর বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে।১৯৪৩ সালে মেদিনীপুর জেলায় ঘুরে ঘুরে ছবি আঁকেন যা হা যা hungary Bengal নামে পরিচিত ।

                চিত্তপ্রসাদের  ভাবাদর্শ ও শিল্পাদর্শে অনু্প্রাণিত হয়ে  সোমনাথ হোর কাজ করেন।

No comments:

Post a Comment