যখন থেমে যায় সব
সত্যম ভট্টাচার্য
চরম নৈঃশব্দের সাথে মৃত্যুর একটা কেমন জানি সম্পর্ক রয়েই গেছে।কারণ যে ক্যাকোফোনি আমাদের ঘিরে থাকে সবসময়-দিবারাত্র,স্কুলে শোকসভার সময়ই প্রথম আমরা তার বাইরে গিয়ে দাঁড়াই।চারিদিক থেমে যাওয়া এক চরম নৈঃশব্দ আমাদের সকলেরই প্রথম অনুভব হয় কন্ডোলেন্সের লাইনে দাঁড়িয়েই।আর কন্ডোলেন্স মানেই তো মৃত্যু-শোকসংবাদ।ঠিক মনে পড়ে না প্রাইমারী না হাইস্কুলে প্রথম শোকসভায় নীরবতা পালন করেছিলাম।কিন্তু এটা খুব মনে পড়ে যে ভেবলে গিয়েছিলাম রীতিমতো।কারণ সব স্কুলে সবসময় একটা শোরগোল লেগেই থাকে।ক্লাস শুরুর আগে বা টিফিনে বাচ্চাদের চিতকার-ক্লাসের সময় স্যারেদের পড়ানো-বা বাচ্চাদের সমবেত পড়ার আওয়াজ-দেখলাম তার থেকে একদম সরে গিয়ে আমার চেনা স্কুল কোন একদিন সকালে কেমন যেন নিস্তব্ধ হয়ে গেলো।একদম নিথর যেন,ঠিক সেই মৃতদেহের মতোনই।সকলে বলেন পিন পড়া নিস্তব্ধতা।সেই প্রথম সেইদিন আমরা একে অপরের নিঃশ্বাসের আওয়াজ পেলাম।আমার চেনা স্কুল চেনা চারপাশে কেমন যেন এক থমকানো পরিবেশ ধীরে ধীরে নেমে আসতে লাগলো।একটা ভয়ানক দম বন্ধ করা নৈঃশব্দ তখন গ্রাস করছিলো গোটা স্কুলচত্বর।সশব্দ জীবনের লাইনে যে অশ্বমেধের ঘোড়া দিবারাত্র চলতে থাকে প্রথম তা অনুভব করলাম থেমে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।যে বিচ্ছু ছেলেটা হই হট্টগোল করে সবসময় মাতিয়ে রাখে গোটা স্কুল সেও দেখলাম মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে।আর আমি ভাবছিলাম যে এটা হতে পারে?হতে পারে এত চুপচাপ চারিদিক।রীতিমতো ভয় ভয়ই লাগছিলো আমার তখন।ভাগ্য ভালো যে স্যার ঘড়ি দেখছিলেন এতক্ষণ মাথা নীচু করে, যখন মাথা তুলে বললেন যে এবারে আমরা কোনরকম হট্টগোল না করে বাড়ি ফিরে যেতে পারি,তখনই আবার ধীরে ধীরে চেনা স্কুলের পরিবেশ বা ছন্দ ফিরে এলো।হ্যাঁ,নিত্যদিনের এই আওয়াজ-এই কোলাহল-সশব্দ পরিবেশের মাঝেই লুকিয়ে তাকে জীবন।তাই তো কোন কোন সময় নৈঃশব্দে ভয়ই লাগে।
অথবা খুব মনে পড়ে সেই সকালটা-খুব সম্ভবত রোববারই ছিলো মনে হয়-যখন সবাই মিলে বাবাকে নিয়ে এলো-আমি বসে ছিলাম আমাদের ছেড়ে আসা পুরোনো বাড়ির বারান্দায়-বাবাকে দেখছিলাম-চরম কর্মক্ষম লোকটা কেমন বছর দুয়েকের মধ্যেই ফুরিয়ে গেলো।চারিদিকে অনেক কথা বলছিলো অনেকে,কিন্তু আমাকে তখন ধীরে ধীরে গ্রাস করছিলো এক প্রগাড় নিস্তব্ধতা-চরম নৈঃশব্দের এক ধূ ধূ বালুচরে বসে আমি শুধু স্বার্থপরের মতো ভাবছিলাম-এরপর কি হবে আমাদের...এখন বাবা চলে গেছে অনেকদিন,অথচ প্রতিটি মুহূর্তে আমি তার নিঃশব্দ পদচারণা অনুভব করি আমার চারপাশে।এই নৈঃশব্দ,এই নিঃশব্দ পদচারণা যেন চিরকাল আমার সাথে থাকে।
সত্যম ভট্টাচার্য
চরম নৈঃশব্দের সাথে মৃত্যুর একটা কেমন জানি সম্পর্ক রয়েই গেছে।কারণ যে ক্যাকোফোনি আমাদের ঘিরে থাকে সবসময়-দিবারাত্র,স্কুলে শোকসভার সময়ই প্রথম আমরা তার বাইরে গিয়ে দাঁড়াই।চারিদিক থেমে যাওয়া এক চরম নৈঃশব্দ আমাদের সকলেরই প্রথম অনুভব হয় কন্ডোলেন্সের লাইনে দাঁড়িয়েই।আর কন্ডোলেন্স মানেই তো মৃত্যু-শোকসংবাদ।ঠিক মনে পড়ে না প্রাইমারী না হাইস্কুলে প্রথম শোকসভায় নীরবতা পালন করেছিলাম।কিন্তু এটা খুব মনে পড়ে যে ভেবলে গিয়েছিলাম রীতিমতো।কারণ সব স্কুলে সবসময় একটা শোরগোল লেগেই থাকে।ক্লাস শুরুর আগে বা টিফিনে বাচ্চাদের চিতকার-ক্লাসের সময় স্যারেদের পড়ানো-বা বাচ্চাদের সমবেত পড়ার আওয়াজ-দেখলাম তার থেকে একদম সরে গিয়ে আমার চেনা স্কুল কোন একদিন সকালে কেমন যেন নিস্তব্ধ হয়ে গেলো।একদম নিথর যেন,ঠিক সেই মৃতদেহের মতোনই।সকলে বলেন পিন পড়া নিস্তব্ধতা।সেই প্রথম সেইদিন আমরা একে অপরের নিঃশ্বাসের আওয়াজ পেলাম।আমার চেনা স্কুল চেনা চারপাশে কেমন যেন এক থমকানো পরিবেশ ধীরে ধীরে নেমে আসতে লাগলো।একটা ভয়ানক দম বন্ধ করা নৈঃশব্দ তখন গ্রাস করছিলো গোটা স্কুলচত্বর।সশব্দ জীবনের লাইনে যে অশ্বমেধের ঘোড়া দিবারাত্র চলতে থাকে প্রথম তা অনুভব করলাম থেমে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।যে বিচ্ছু ছেলেটা হই হট্টগোল করে সবসময় মাতিয়ে রাখে গোটা স্কুল সেও দেখলাম মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে।আর আমি ভাবছিলাম যে এটা হতে পারে?হতে পারে এত চুপচাপ চারিদিক।রীতিমতো ভয় ভয়ই লাগছিলো আমার তখন।ভাগ্য ভালো যে স্যার ঘড়ি দেখছিলেন এতক্ষণ মাথা নীচু করে, যখন মাথা তুলে বললেন যে এবারে আমরা কোনরকম হট্টগোল না করে বাড়ি ফিরে যেতে পারি,তখনই আবার ধীরে ধীরে চেনা স্কুলের পরিবেশ বা ছন্দ ফিরে এলো।হ্যাঁ,নিত্যদিনের এই আওয়াজ-এই কোলাহল-সশব্দ পরিবেশের মাঝেই লুকিয়ে তাকে জীবন।তাই তো কোন কোন সময় নৈঃশব্দে ভয়ই লাগে।
অথবা খুব মনে পড়ে সেই সকালটা-খুব সম্ভবত রোববারই ছিলো মনে হয়-যখন সবাই মিলে বাবাকে নিয়ে এলো-আমি বসে ছিলাম আমাদের ছেড়ে আসা পুরোনো বাড়ির বারান্দায়-বাবাকে দেখছিলাম-চরম কর্মক্ষম লোকটা কেমন বছর দুয়েকের মধ্যেই ফুরিয়ে গেলো।চারিদিকে অনেক কথা বলছিলো অনেকে,কিন্তু আমাকে তখন ধীরে ধীরে গ্রাস করছিলো এক প্রগাড় নিস্তব্ধতা-চরম নৈঃশব্দের এক ধূ ধূ বালুচরে বসে আমি শুধু স্বার্থপরের মতো ভাবছিলাম-এরপর কি হবে আমাদের...এখন বাবা চলে গেছে অনেকদিন,অথচ প্রতিটি মুহূর্তে আমি তার নিঃশব্দ পদচারণা অনুভব করি আমার চারপাশে।এই নৈঃশব্দ,এই নিঃশব্দ পদচারণা যেন চিরকাল আমার সাথে থাকে।
অসাধারণ! নৈশব্দ নিয়ে এমন শব্দের কথামালা পাঠকের অভিনিবেশ দাবী করে।
ReplyDelete