দেবাশিস মুখোপাধ্যায়ের গুচ্ছ কবিতা
রহস্য কাহিনী
১
খেলার ভেতর হত্যাকান্ড
কেউ দেখল না
সারারাত জাগবার পর মর্জিনা
চাঁদের দিকে পিছন ফিরে
কাপড় তোলে
সমস্ত তারা সেই জলের আয়নায়
ভেসে যেতে যেতে ভাবে
এক দিন তারাও..
কিন্তু পৃথিবী তাদের মর্জি না করে দেয়
২.
রেললাইনকে কিছুতেই বোঝানো যায় না
আত্মহত্যাকারীর কথা
এমন ঝকঝকে পূর্ণিমায় টুকরো টুকরো
দেহভাষা
পড়তে কষ্ট হলেও ভিড় বাড়ছে
অত্যন্ত ক্লিভেজ যেন নজরে পড়ে যায়
৩.
বাজারে ঘাম না কিনেও কেনা হয়ে
গেলে
নিজেকে বরফের দেশে কল্পনা করে নেন শিতলবাবু
তারপর ফ্রিজের ভিতর চালান
করে দেন তার অনুভব
ফ্ল্যাটের দেয়ালে একটি অরণ্য
ছেলের আঁকা
তারিফ শব্দটি শুনতে শুনতে দেয়ালপ্রিয় হয়ে ওঠেন
তারপর চ্যানেল সার্ফিং করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লে
দুঃস্বপ্নের বউ তার গলা কেটে
দরজায় তালা দিয়ে বেরিয়ে যায়
তার হৃদপিণ্ডের প্রেম আর উষ্ণ থাকে না
৪.
সবুজ পৃথিবী নিয়ে যে ঝরনা বয়
আর রুপোর নাকছাবি তৈরি হয়
সূর্যের তরুণ আলোয়
উপত্যকার শূন্যতা ভরে যায়
এই যে যুবক শুয়ে আছো খোলামুখ
জিভের ভিতর প্রেমের চিহ্ন নিয়ে
ঘাসের বালিশে
গভীর ঘুমের আদরে বিবর্ণ সবুজে
রোদ গন্ধে বিভোর
তোমার পা দুটিকে বুনো ফুলে পেয়েছে প্রণাম ভঙ্গিমায়
শিশুর মতো অপরাধ ছাড়াই হাসি
কে দেবে উষ্ণতা তোমার শীতল রক্তে
পতঙ্গও দূরে চলে যায় যেন অপরিচিত কেউ
তার বুকের উপর হাত রেখে সে
ঘুমে নির্বিকার
এতো শান্তি ,তার বুকের পাশের ক্ষতও বুঝতে পারে না তাকে
৫.
বৃষ্টির জলে সব রক্ত ধুয়ে যায় না
হাসিখুশি আর খেলার ভিতরে
রাক্ষসের গল্পে ঢুকে যায় সেই স্রোত
গরম মাংসের জন্য সে তোলপাড় করছিল
বালিকা শরীরে কোনো দুর্গ নেই
এই যে প্রাচীর ভাঙা হল অনুমতি ছাড়াই
বাগানকে ফেরত পাওয়া গেল না
পাখির বাসার কান্না
মুক্তো হতে না পারায়
সারা উঠোন জুড়ে কাচ আর কাচ
বিঁধে গেলে যন্ত্রনা সারা জীবন
কাটাছেঁড়া হয়ে বেরিয়ে আসছে
মর্গের বাইরে
একটা ছোট্ট হাইফেন পলিথিনে মোড়া
সুরতহালের সংবাদ হাওয়ায়
ক্রমশ ঘুড়ি আর জল
৬.
বাড়িটি বাড়াতে হবে
গাছটি বোঝে
তার সময় হলো যাবার
দুঃখ ক্রমশ ইট কাঠ পাথর
ভাতের ভিতর
লেবুগন্ধ নেই
সন্ধ্যার ভিতর নেই সন্ধ্যামণি
আম কাঁঠালেরা চলে গেলে
গ্রীষ্ম অতীতকাল হয়ে পড়ে
বাড়িটি বাড়তে বাড়তে
আকাশ ঢাকলে
হারিয়ে যায় চড়ুই শালিক
এতো উচ্ছেদের পর
নিজের শিকড়
সেও বিদেশে চলে গেলে
শূন্য শব্দটি এই নির্মাণে বসাই
খাঁ খাঁ র ভিতর তবু কিছু ঘুঘু রয়ে গেছে
৭.
বকুল গাছের গান শুনতে
তোমার সকাল সুবাসে
বাসা খুঁজে নেয়
তুমি পুকুরের ভিতর এক
একটি মুক্তোর পতন দ্যাখো
আকাশের উপর কালো পর্দা
সরে গেলেই সিনেমা শুরু
অন্ধকারের ভিতর তোমার অপেক্ষা
বেশ উত্তেজনাকর
আওয়াজ আসছে ওপার থেকে
কিছু ঝিলিকের সাথে
স্থলপদ্মের পাপড়িগুলো জল
ধরে আছে স্নানের পরে
তার ভিতর তোমাকেই দেখি
গায় ভেজা চুল
এক এক ফোঁটায় তুমি উজ্জ্বল
জলের গভীরে জল
কোন রহস্যে খুব হেসে ওঠে
৮.
কালো আলখাল্লা পরে পীর সেজে
রোদকে হুমকি দিলে
সে বশ হয়ে লুটিয়ে পড়ে দরগায়
গাছের পাতা যেন চামর
বুলিয়ে যায় মাথায়
নিরাময়ের পথে উড়ে আসে বাতাস
সমস্ত ষড়যন্ত্রের ভিতর
মাকবেথের দুর্গে পাখির কলতান
ফুলের সুবাতাস
নৈরাজ্যের মাঝেও ফড়িংয়ের
অবিরাম ওড়া
মধু খেয়ে যাওয়া প্রজাপতি
ডানায় লেখে বহুরৈখিক কবিতার ভাব
বৃষ্টির ছোঁয়াচ লাগা সন্ধ্যায়
ঝিঁঝিঁরা বেজে যায় অবিরাম
তুমি বধূ তবুও
গলায় কাপড় বেঁধে
সিলিং ফ্যানের প্রেমে পড়ে যাও
তোমার অভাবে
ভিজে বিড়ালটিকে কে তবে ফেরাবে!
৯.
মৃত ঘোড়ার সাথে
কথা হয় সন্ধ্যার রাস্তায়
এক ক্ষয়া চাঁদের নীচে
তার কর্কশ হ্রেষায়
কেঁপে ওঠে
শহরের নির্জন রাস্তা
ছায়াময় আলো
অন্ধকারের কাটা মাথা
দ্রুত ছুটে যেতে
না পারায় আতঙ্ক
তার শূন্য চোখ থেকে
ক্রমশ সংক্রমিত
তার থম মারা অবস্থা
থেকে থেকে
মৃদু পায়ের শব্দ
ধূ ধূ দুঃখ রেখে
হারিয়ে যায়
১০.
মেয়ে গায়
জল তরঙ্গে নূপুর ভেসে যায়
মাছরাঙা পাখিটির দেশে
দোল খায় চোখ
আর ক্রমশ রঙ্গিন আকাশের মাঠে
খেলা চলে রোদ ও ছায়ার
মায়াবী অক্ষর গাছে গাছে
সুস্বাদু পথের জানালায় বাহবা তুলি
আরো কিছু এঁকে দিলে
সাদা কাগজের যেমন খুশি সাজ
বাড়িতে উৎসব গন্ধ
এসব কিছুই দুঃখ ভুলানি উপকথা
ঠাকুমার কণ্ঠটি কেঁপে কেঁপে
ঝুলির ভিতর নামের মালাটি জপে
আর বর্ষার মাঠে বীজতলা
তৈরি হলে কষ্টের ভিতর
ভাতের পুরনো সুবাস ফিরে আসে
সে ঘরে ফিরে নি কেউ বলতে পারে না
১১.
একটা ভাঙাচোরা বাড়ির নীচে
শূন্য আর স্বপ্ন বুনে
সময় কেটে যায়
ঘুম বিদায় নেওয়ায় তার জায়গা
নিয়েছে তোমার প্রিয় নাম
এই যে বর্ষার দিনে মেলে
তোমার দীর্ঘ চুলের বাহার
মাঝে মাঝে সেখানে
সেজে ওঠে বর্শা রঙের ক্লিপ
রাত্রির শরীরে
কেঁপে ওঠে
এক মধুর ঝড়
ধ্বংসের ভিতর এক কালো নদী
শূন্যতার মাঝখানে গড়ে
তোলে রাত্রির এলো চুলের
অস্পষ্ট স্মৃতি
মৃত জোছনায়
আছড়ে পড়েছে কান্না
সাগরের গুমরে গুমরে
No comments:
Post a Comment