বিশ্বজিৎ লায়েকের কবিতা
পুড়ে যাওয়া মেঘের মতো অগ্নি
না, না সত্যি নয় প্রতিনিবৃত্ত নয় কেবল শব্দ নির্দেশে একীভূত গমন
ঘুরতে ঘুরতে ব্রহ্মে আশ্রিত এক দেওয়াল
উঁচু উঁচু বাড়ি মাথা উঁচু দৃষ্ট ফল ঘাড়ে নিয়ে জড় ও অজড় পৃথিবী
উচ্চস্বরে কাঁদছে ব্রহ্ম চতুষ্কল
মৃদুস্বরে বিড়বিড় করতে করতে ওই দেখ
পালিয়ে যাচ্ছে প্রাণ
কিলবিল করছে, 'ক' ব্রহ্মের পাশে অন্য এক 'খ' ব্রহ্ম
চাপা অন্ধকারে নিঃসাড় হাহাকার, মুখ ডুবিয়ে শ্রুতি
পুড়ে যাওয়া মেঘের মতো অগ্নি
এক মিনিটের নীরবতা পালন করব আমরা
উল্টে পাল্টে বিষাক্ত করব ফুরফুরে মেজাজ
না না সত্যি নয় ভৌতিক নয় বিশেষণ নয়
একদিন বলে গেছি অনবরত উপপাদ্য
অগ্রাহ্য করেছি ইতি ও অমনা
ঘরের ভেতরে রেখেছি ঘর বলয় পথে ঘুরিয়ে দিয়েছি
ইহলোক-পরলোক, তুচ্ছ ব্যবধান
অপদেবতা
ঘর থেকে বাইরে বাইরে থেকে ঘরে ঘ্রাণ থেকে অঘ্রাণে
লেগে ছিল অভিতাপ
গল্পের মুড়ো এখানেই এসে ফাটল
লিঙ্গ শরীরে
মৃত অন্ধকারের মতো অভেদ কাম, গন্ধ ও রস
তোমার ক্লান্ত বেহুশ মাধ্যাকর্ষণে আজ
ব্রহ্মকমল
নাভিমূলে আজ মোহন-মোহিনী রসায়ন
এইসব আঁকা ঝাঁকি শূন্যে রাক্ষসীর ওয়াশিং মেশিন
ষোলকলা মুছে দিল ভ্রমণের আরাম
মুছে দিল চিড়িয়াখানা পার্ক অরণ্য সমুদ্র শহর
লিখতে লিখতে ভিড়ে বাজারে লোকালয়ে ভুল লিখল সব
সিঁড়ি ধরে নেমে গেল কে কোথায়
চ্যানেল পালটে পালটে তোমার রুগ্ন হাত ছুঁয়ে
আচম্বিতে জাগল মৃত অতীত
বিপন্ন ভ্রূণেরা
লঘু-সম্ভাষণ
কিছুটা নিয়েছি অব্যয় লিপি বৃক্ষ ও পাথর কি বুঝছেন প্রভু
আমার এই ইষ্ট জপ প্রীতি-সম্ভাষণ
এই সব লঘু বেঁহুশ
আমি তাহলে সাইকেল নিয়ে চলে যাই অফিসে ও মাঠে
এই শরীর তো আনন্দতার
জীর্ণ মসৃণ, হোম ও দুরাচার
হে ঈশ্বর ও আড়তদার
ব্যক্তিগত হিম নিয়ে একটু নেচে উঠব জন্ম কাঙালের মতো
বাকিটুকু ছড়িয়ে ছিটিয়ে জলের দরে লিখব
ফড়ের ইচ্ছা, বন্ধুদের লম্বা-লম্বা শ্বাস
তারপর সমস্ত পৃথিবী জুড়ে ওই এক গল্প
আনন্দ, মোচন ও পতন
বাকি সব গল্প মাংস আর মাংসপিন্ডের
ভোর ভোর উঠে তুমি স্নানঘরে খল খল হেসে উঠছ
বেচারা ঈশ্বর ভাবছেন আমার চাওয়াকে কচুকাটা করে
গণ্ডুষে ভরে পান করবেন পাপ ও শর্করা
খেয়াল গাইবেন বসন্তে বসন্তে ডাক দেবেন
একটি একটি করে সব মানুষ নিরাময়ে ফিরবে
ফিরবে বিনির্মাণে
নিত্যকর্ম পদ্ধতি
আলাপচারিতায় আমি পুড়ছি আমার অবৈধ দরজায় এসে
ফিরে গেছে শাঁখা-পলা
আমি ঘাম হয়ে ঝরে গেছি চুঁইয়ে পড়েছি
তাবৎ বৃত্তের কাছে ক্ষয়ে যাওয়া রেখাটুকু নিয়ে
নিয়মিত ঢেলেছি রণকৌশল
ছোট ছোট স্টেশন ছোট ছোট জনজীবন পেরিয়ে
এই খানে এসে বর্শায় গেঁথে গেলাম
নিষিদ্ধ ভোর অনেক রঙ এখন কলোনির মাঠে
আসুন হেঁটে হেঁটে নিখুঁত শহর আর পানশালা দেখি
এখানে অগণিত বেশ্যালয়
হাঁটু মুড়ে বসে আছে অনিচ্ছুক ক্রেতা
আত্মলীন মেট্রোস্টেশন
গভীর কোনও ক্ষত থেকে ফিরছে আমার জিহ্বা
আমার ত্বক আমার নাসিকা আমার প্রদাহ, আমার ঈশ্বর
আমার সুখের দিনে এসেছে যে বধির হাওয়া
বিয়ারের ক্যানে ভরা শুদ্ধ মহাকাশ
অসম্ভবের মতো হেসে উঠল হাসপাতালের কান্নাগুলি
বাতিস্তম্ভের মতো জ্বলে উঠল নিদ্রামগ্ন অতীত
শরীর
দুদিকের অক্ষে গাঁথা ছিল মাছ গাঁথা ছিল তূণ তাতে লেগে ছিল বর্ষার মাটি
তাকে তুমি জানান দিলে খোলা জিভে আত্মহত্যাপ্রবণ
আমন্ত্রণ বৃত্তে আলগা হচ্ছে সুঠাম শরীরে লেপটে থাকা শাসন
পোড়ে জঠরাগ্নি কৃশ-ক্লান্ত সুর
একটু একটু করে মরে যাচ্ছে সরষে খেত
সকরুণ হাসি দৃশ্যটি এই রূপ ছিল না
পাহাড় জঙ্গল কেটে উঠে আসা আদিবাসী মরদের মতো
জ্যোৎস্না লাফাতে লাফাতে এসে নামল তেপান্তরে
সাদা জ্যোৎস্নায় টুপটাপ লেখা হল ‘টাকা মাটি, মাটি টাকা’
নীল জ্যোৎস্নায় লেখা মদ ও নারী
ধান জ্যোৎস্নায় থাকুক বাৎসায়নের দেশলাই কাঠি
খই জ্যোৎস্নায় এত এত চাঁদ গলে গলে নেমে গেল
তলপেটের নীচে
এই সময় বৃষ্টি এল মৃৎপাত্রে
প্রগাঢ় বশ্যতায় এক দু’পশলা বজ্র নামল যোনিপীঠে
তোয়াক্কা বিহীন ছাপার অক্ষরে আদিজন নাচল ধুনুচি নাচ
অন্ধকার পেট সব খেল বুনোফুল, ঘুম, আহার, ভঙ্গিমা
দু’দিকের অক্ষরে গাঁথা রইল আমার নিদ্রা, আমার জাগরণ
No comments:
Post a Comment