Saturday, November 30, 2019

স্বল্পকথায় গল্পকথা-২

নদীমাতৃক 
শুভময় সরকার

                                   (এক)

নদী মানে নৌকো, ছই,লণ্ঠনের মৃদু আলো, অপার রহস্যময়তা, আর এই রহস্যময়তা থেকেই নাগরিক জীবনকে ছুঁয়ে থাকে অনি, একটু দূর থেকে,কিন্তু খুব দূরে নয়। আসলে নাগরিক জীবনকে পুরোপুরি ছেড়ে যেতে বড্ড ভয় অনির। অদ্ভুত এক আশ্রয়হীনতা আর তা থেকেই আশ্রয়সন্ধানের তাগিদে ছুঁয়ে থাকতে চায় নদীপাড়ের নাগরিক জীবনকে।
চিরকালই নদীমাতৃক অনি। সমুদ্র ওকে টানেনা, উচ্ছ্বাস বড্ড বেশি। জীবনকে ছুঁয়ে থাকে এই মাঝনদী থেকেই। সামনে পেছনে নিকষ কালো অন্ধকার,দূরে জীবনের স্রোত। এই অনিশ্চয়তা থেকে ঐ আলোর স্রোতে চলমান শহরকে আরও বেশি প্রাণবন্ত লাগে। প্রিয় ছইয়ের নীচে আজ ঢোকেনা অনি। কালো জলের স্রোতে চলতে চলতে ওপরের আকাশের দিকে তাকায়। এতো বড় ক্যানভাসে নিজেকে বড় ক্ষুদ্র মনে হয়!
অনি জানেনা এ নৌকো কোথায় যাবে!  কোনো মাঝি-মাল্লা কিচ্ছু নেই, হাল ধরতে হয়না এ নৌকোয় কিন্তু সব কিছু নিয়মমাফিকই ,কোথাও কোনো বিচ্যুতি নেই, নেই ভুল পথে চলা, পথ হারানো। তবু প্রতিমুহূর্তে নৌকোর গতি খুব ধীর হলেও বাড়তে থাকে, নদী যতো এগোয়, স্রোতের গতিও ততো বাড়ে। সময় কমে আসছে প্রতিনিয়ত, প্রতি পলে অনুপলে! চারপাশে ঘেরা জলাশয়ের কোনো পরিণতি নেই,সে হলো স্থির, স্থবির। আর সমুদ্র উচ্ছ্বাসপ্রবণ হলেও বাঁধা থাকে বিশালত্বে,সীমাহীন এক অনন্ত জলাধারা। অমৃত, গরল সব উঠে আসে। চলমান কেবল নদী,শুরু থেকেই এক পরিণতির দিকে যাত্রা...!

                              (দুই)

গভীর রাতে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ায় অনি।  ঘুমোচ্ছে শহর। ঘরের বাইরে হাল্কা হিমেল হাওয়া। স্রোতের গতি বাড়তেই ঘুম ভেঙে যায় ওর, শরীর বেয়ে ঘাম, জবজবে! অনি জানে অস্তিত্বহীনতার এইসব বিপজ্জনক সময়ে স্বপ্ন ভেঙে যায়, ঘুম ভেঙে যায়! ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরায়, ধোঁয়ার রিঙ ছাড়ে, বৃত্ত হয়, বৃত্ত ভাঙে! না চাইলেও বৃত্ত ভাঙে বাইরের হাওয়ায়। তবু বৃত্ত থেকে বৃত্তান্তরের এক অনন্ত যাত্রায় রয়ে যায় অনি। মাঝরাতের এই ঘুমন্ত শহরকে আজ বড্ড ছুঁয়ে থাকতে ইচ্ছে হয় চিরকালের ভীরু, মধ্যবিত্ত অনির্বাণ বসুর।

No comments:

Post a Comment