হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এর কবিতা
পরিচয়
-----------
রোদ্দুরের নামে হোক আমার পরিচয়
আমি সকলকে ছুঁয়ে থাকি
গোধূলিতে আমার শরীর
সবার গায়ের গন্ধে ভেসে যাক
পরিশ্রমের গন্ধে ডুবে
আমার দু'চোখে ঘুম নামুক
পরদিন আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠার গান ।
রোদ্দুর পায়ে
-------------------
রোদ্দুর আঁকতে আঁকতে
ছেলেটা রোদ্দুরের গল্প করত
মেঘলা আকাশে
ছেলেটির হরিণ সরলতা
এলোমেলো দাগ কাটতো
সেই দাগ বরাবর
আকাশ জুড়ে ভেসে উঠতো
রোদ্দুরের চোখ, কান, হাত, মাথা
আকাশমুখো ছেলেটা এখন
রোদ্দুর পায়ে হেঁটে বেড়ায় ।
মা
----
চার কাঁধে চেপে যে মহিলা
এইমাত্র ঘাটের উদ্দেশ্যে চলে গেল
তাকে কি তোমার মা বলে ভাবতে পারো?
জানি, তোমার মায়ের কাপড় একশ টাকার
চার জায়গায় বড় বড় গিঁট বাঁধা
আর ওই মহিলার পরনে এক হাজার
ওই মহিলার লাল সিঁদুর
তোমার মায়ের মেটে
খোলা মাঠে দাঁড়িয়ে আকাশ নীল
তোমার ঘরে তো জানলাই নেই
একবার মাত্র ভীষণ ঝড়ে
তোমার ঘরের চাল উড়েছিল
চোখে ভেসেছিল সন্ধ্যের আকাশ
তারপরই ঝিঁঝিঁ ডাকা অন্ধকারে
তুমি চিরকালের মতো ডুবে গিয়েছিলে ।
চরিত্র
--------
রাত্রি আমাকে একটা কবিতার বই পড়তে দিল ।
প্রতি পাতায় চোখ আটকে যায়
কী সুন্দর অক্ষরগুলো
আর কী সুন্দর ছাপা
কবিতাগুলোর মধ্যে
কী দারুণভাবে ঢুকে পড়ছিলাম
আমার সামনে
একের পর এক রাস্তা খুলে যাচ্ছিল
একটা গলির কাছে এসে আটকে গেলাম
কবিতায় আরও একবার ডুব দিতেই
গলির মুখে একটা ক্ষীণ আলো এসে পড়ল
পা বাড়াতেই পিছন থেকে হাতে টান পড়ল
ফিরে আসার পথে দেখি রাত্রি হাসছে ।
তোমার মতো করে
--------------------------
কিছু কি বলতেই হবে?
না বললেও তো হয়
তুমি বুঝে নাও
তোমার মতো করে
আমার গল্প একতরফা
এক কোণ থেকে বলা
তুমি ঘুরে ঘুরে দেখো
আমার সব দিক খোলা
যেখানেই কাহিনী নড়বড়ে
জানবে সেখানেই কিছু চাপা
ঢাকনা খুলে আমার গল্প
তোমার মতো করে সাজিয়ে নাও ।
বসন্ত
--------
তুমি বললে, ত্রিশটা বসন্ত পেরিয়ে এলাম
এর মানে কী হেঁটে হেঁটে পার হওয়া ?
সবাই যেমন নদী পার হয় ?
কোথায় তোমার শিমুল ?
পলাশের তো নামগন্ধ নেই
তুমি কী উড়তে উড়তে বসন্ত পার হলে ?
মানুষের দিকে
--------------------
মানুষের দিকে তাকালে
মানুষের কাছ থেকে
মানুষ সরে যাচ্ছে বলে মনে হয়
বাসস্টপ, রেলস্টেশনে
মানুষের চোখ সর্বদা ঘোরে
কী ভাবছে মানুষ এখন ?
কাকেই বা সে খুঁজছে ?
কারও চোখেই আমি
চোখ ফেলতে পারি না
আমি হেঁটে যাই
দৃষ্টি স্থির হলে
কথা বলে নেওয়া যাবে ।
No comments:
Post a Comment