প্রদীপ চক্রবর্তীর গদ্য
.............................. ....
আত্মস্বর কিছুতেই চাপা থাকছে না ....
.............................. .....................
সীমাভাঙনের খেলা
.............................
এক/
" আমি স্পষ্ট দেখছি বর্ষা ফেলে আসা সেই সাপুড়ে ,
গলির কানাচে দাঁড়িয়ে
কেউটের ঝাঁপি থেকে - মণির মতো একটা - দুটো ললিপপ
আমাদের শৈশবের দিকে ছুড়ে দিচ্ছে ..."
( স্ফি্কস ও অচেনা অর্কিডেরা / বিষবর্ষাদিনে / সুদীপ সান্যাল )
একটা প্রশস্ত লম্বা টানেল | অতীতের শিকড় বেয়ে যে চলে গেছে ,আলো অন্ধকারের কুয়াশা নিয়ে এক অস্পষ্ট গোধূলিয়া মোড়ে | বিমূর্ত ,অবয়বহীন সেই ফেলে আসা শৈশব , যার ফ্রেমগুলো আপাত পৃথিবীর প্রতিদিন ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর সংগে কোনো মিল নেই ..., নেই তার কোনো প্রত্যক্ষ বাস্তব | শিল্পশহর দুর্গাপুরে যে কিশোর বেড়ে উঠেছিলো , দামোদর নদের আঁকাবাঁকা উত্তাল সর্পিল গতির সঙ্গে বন্ধ কারখানার পাঁচিলের চারদিকে বেড়েওঠা জংলা গাছের ঝোপঝাড় নিয়ে |
সন্ধে বেলায় প্রাচী গাছের শিকড় বেয়ে যে গন্ধ ওঠে , ভোরে সেই গন্ধই বদলে যায় ...| সে চুপচাপ ,সে বারোমাস বিভিন্ন রোগে ভোগা | জানলার এ ' পাশে বসে সে দেখে , জানলার ওপারে চলমান সদর রাস্তা | কারখানার সাইরেন বাজে | দলবেঁধে কারখানার কর্মীরা যায় , সাইকেল নিয়ে | সাইকেলের মৃদু কলিং , একই মানুষ , একইভাবে ,একই সময়ে দুপুরের নির্দিষ্ট sipting ডিউটি সেরে আসে যায় | সে বসে বসে দেখে ,একই মানুষের মুখের পৃথিবী , বিভিন্ন সময়ে বদলে বদলে যায় কি ভাবে ...! সে দেখে একই গাছে বছরভর , পাতার কিনারে হাওয়া , আলস্য জনিত অভ্যাসে বদলে বদলে যায় পাতার কত রঙের রকম ফেরে | কত বৃষ্টিদিনে সাইকেলের টায়ার ঘুরিয়ে খেলতে খেলতে চলে যায় ,তার বয়সী কত কিশোর | ডেগ্গুল, গোবর লাঠি , গাবু খেলা , গোল্লা ছুট , রুমাল চুরি , হুসহুস , লুকোচুরি, ডাংগুলি, ক ত কত খেলা | কোএডুকেশন বেসিক প্রাইমারি স্কুলে সে পড়ে | যখন সে লুকোচুরি খেলার সঙ্গী হয় , তখন ছুটতে ছুটতে শ্যাওলা মাখা পুরোনো নোনা ধরা পাঁচিলের আড়ালে ,সে একদিন দেখে ফেলে কবিতা আর সুলেখার ঝুঁকে পড়া বুকে দু জনের দু রকম রঙের তিল | আলতো লাল ,আর চকলেট মিহি কালো | সে প্রথমবার ভাবতে ভাবতে শিউরে ওঠে ,রোমাঞ্চিত হয় | সে তখনো শরীর বোঝে না ....তবু এক দম চাপা রোমাঞ্চে এক অকথিত দুর্জ্ঞেয় পাহাড়ি বৃষ্টির ঝরে পড়া অনুভব করে কিশোর স্নায়ুর প্রথম ব্যথিত নিঃশ্বাসে ... ... সেই প্রথমবার কি ভাষা হীন কবিতা হয়ে উঠেছিল তার রুগ্ন শরীর ?...সেই প্রথম .....
" সে চাঁদের আলো আমি দেখি নি---
কেবল শেষ - বৃষ্টির সন্ধ্যায় , -- দেখেছি ,
এক ভেজা - জ্যোৎস্না
টেলিগ্রাফের তার বেয়ে অপসৃয়মাণ জলবিদ্যুৎরা
কীভাবে একে অপরের পিছু নেয় |
তারপর মিলেমিশে একাকার হয়ে রাস্তার স্রোতে খসে পড়ে |
আজো পড়ে |
আজো..."
( স্ফিঙ্কস ও অচেনা অর্কিডেরা / সেফটিফিন আর চপ্পলের গল্প / সুদীপ সান্যাল )
সেই প্রথম বেদনাহত , এক দৈব বৃক্ষযুবতী স্বপ্নে আসে | লতাপাতা মাখা , বাতাসের ঢেউ অর্থহীনতার নিরুদ্দেশে নিয়ে যায় কিশোরটিকে | জ্বর নামে মধ্যরাতে | পোড়া শরীর কুড়িয়ে ,পৃথিবীর স্বচ্ছ এক নদী ,রাত্রীর সরাইখানায় প্রাকৃতজনের মতো মুছিয়ে দেয় মা নামক সর্বস্ব ও পৃথিবীর কাছে বিষাদিত এক নারী | ছাই থেকে তুলে নেয় মাথা | স্বপ্ন ঘোরে প্রতিটি জলবিন্দুর রঙ যা তার জ্বোরো কপাল ছাপিয়ে নেমে আসছে বুকে পিঠে ঘামে , তার মধ্যে অদ্ভুত এক সুর আর ভালোলাগার আলো রশ্মি চুঁইয়ে পড়ে , গড়িয়ে যাওয়া জলের ঢালে মাছরাঙা পাখিটার ডুব - ঘাই , পৃথিবীর গর্ভতাপ বাড়ে , মায়ের চোখ থেকে কখন যেন ফোঁটা ফোঁটা গড়িয়ে যাওয়া বর্ষা জনহীন অপার্থিব ঘরের মধ্যে , যতদূর চোখ যায় , ফিনফিনে রাতের জানলা পেরিয়ে যতদূর চোখ যায় , ভোর রাতে কমলালেবুর কোয়া ভেঙে আকাশে চলকে ওঠে একসময় ....| পরে কিশোরটি যখন বড়ো হয় ,পরিণত হবার চেষ্টা করে , বুঝতে পারে সেদিন সেই জ্বর , গহন - রতি তৃপ্ত হলে হয় | জন্ম নেয় শূন্য বোধ | স্থিতি শান্ত স্বাধীন সংসার বন্ধন মুক্ত নক্ষত্রপুঞ্জের বলয়ের মধ্যে , ঘরের চেয়েও বড়ো জানলাটা চারদিকে গ্রহ মেঘে ঢেকে যায় তার ...
এভাবেই ভূতগ্রস্ত এক আত্মক্ষয়কারী নেশা চেপে বসে কিশোরের মনে | অবুঝ এক অনুভূতি ,এক আগ্নেয় সুপ্ত মুখের কিছুটা উন্মেষিত হয় | তাকে অনন্য এক পাগল ,দিকদিশাহীন তৃতীয় পৃথিবীর সামনে ঠায় দাঁড় করিয়ে রেখে সেই থেকে চলে যায় ....সে অপেক্ষা করে ....অপেক্ষাকরে .....অপেক্ষা করেই যায় ....অপেক্ষা তার ফুরায় না ..... তার গল্প অসংখ্য গল্পের কোলাজে ঢুকে তার ছোট বেলায় দেখা সেলিম বাবা 'র দূর দিক্চক্রবালভেদী , বায়োস্কোপের মতো রাসপ্রিন্টের বাতিল ফিল্ম গুলোর অংশ হয়ে ,সাদা কালোয় ছড়িয়ে পরে আকাশের আরো গহন আকাশে ....
*** " মাঠের নাম ধরে সবুজ চিরে যায়
রুমালচোর খেলতে বসে ছেলেটা দু - দুবার কিল খেয়ে দেখে
রুমালের ঘাম ঝরে গেছে বিকেল গড়িয়ে বান্ধবী ধুলোয় ..."
( রুমাল )
*** " গতির জড়তা নিয়ে একমুখী পাথর জানে
চুরমার হওয়ার আগে আয়না শেষ প্রতিবিম্ব ফেরত দিয়ে যাবে ..." ( এন্ড অফ উইক- এন্ড )
*** " তার আচমকা গন্ধের মতো ন্যাপথলিন জীবন নিয়ে
অবসন্ন মনে থাকো
খোলা জানলা থেকে রঙ এসে
ক্ষত আরও সবুজ করে দেয়
জলীয় সামুদ্রিক স্বাদ ঠোঁটে লেগে
অবসন্ন মনে থাকো
গাছ বলে ভুল করি না এখন "
( তোমার ঘা - এর রঙ ঈষৎ সবুজ হলেও )
***( সুদীপ সান্যালের স্ফিঙ্কস ও অচেনা অর্কিডরা , নামক কবিতা বই থেকে )
অপর বিশ্বের পাখিওয়ালা ও অলীক একটি অমোঘ সত্য
.............................. .............................. ......
দুই /
এক অসম্ভব অথচ সুদূরের দিগন্ত ছোঁয়া ভাবনা নিনাদ , আমাকে রক্তে ব'য়ে আসা এক চলন্ত অন্তর্লীন আলোয় নিয়ে গেলো একটি কবিতার বইয়ের মধ্যে দিয়ে | বইটি হলো " পাখির দুধ " কবি , সমর রায় চৌধুরী |
বইটি পড়তে পড়তে আমার মনে হলো , " অবিশ্বাস " নামক শব্দটা মানুষের যাবতীয় অভিধান থেকে মুছে ফেলা উচিৎ | যা নেই , অথচ ব্যাখ্যাতীত আছে , যা মানুষের গড়পড়তা প্রথাগত জীবনে থেকেও মানুষ দেখতে চায় না তার সেই নিজস্ব সীমারেখা ছিঁড়ে অসীম তৃষ্ণার একাকিত্বে , অপার পাঠার্জিত শিক্ষা কে খন্ড জ্ঞানে উপেক্ষা করে এক তীব্র বোধের স্বতস্চালিত নিহিত নিমজ্জিত মুন্সিয়ানায় ,কবি তৈরী করেছেন তার কাল্পনিক অভিজ্ঞতার বিপুল পাঠাগার | ভাব ও ভাবনার ভিয়েনে রসের যে বিনিময় , যে অন্তস্তাপ তা যেন সময়ের অতিক্রান্ত এক সীমা ভাঙনের আহার্য রস , যা অনুভব করার জন্য পাঠককে প্রথাহীন ব্যাপ্তিতে নিষ্ঠিত হতে হয় |
এই কবিতা বই পড়তে পড়তে আমার মনে হয়েছে , দৃশ্যমান ,বস্তুর ধ্বনি যেন রক্তমাংসের | চরিত্র বদলে গেছে দৃশ্য ও ধ্বনির | জড় ও জীবের প্রাথমিক ধারনা | এক আবহমান প্রবাহ একইসঙ্গে বস্তুরগুণ হিসেবে প্রসারিত হচ্ছে , প্রতিটি বস্তু কণায় | জড়েরও আছে ক্ষয় বৃদ্ধি বিকাশ রিরংসা ভালোলাগা স্বমেহন সঙ্গমইচ্ছে ঈর্ষা প্রণয় পাপ ও ব্যর্থতা বোধ , অসাফল্য বিষাদ মগ্ন ও মৌনতা | মগ্ন মৈনাক যেন | এখানেই কবি ' র চেতনাতিরিক্ত কাল্পনিক অভিজ্ঞতার সম্প্রসার | বিস্তার বলা চলে | তাই অলীক বা মিথ্যে বলে কিছু হয় না | বোধের বিস্তার ক্ষুদ্র বস্তুর অণু পরমাণু থেকে বাড়তে বাড়ে সীমা ভাঙনের খেলায় মিলে মিশে যায় অসীমে |
কবি যে কোনো বস্তুর দৃশ্য ও শ্রাব্য গুণকে ও তাদের অজানা " কাজ " কে , অপূর্ব দক্ষতায় ব্যবহার করেছেন | আমরা প্রায়শই বা স্বাভাবিক জানি ধ্বনি' র কাজ শোনানো | দৃশ্যের কাজ দেখানো | কিন্তু , সীমায়িত বা খণ্ডিত ভাবনা আসলে বিচ্ছিন্ন ও সংকীর্ণ দেখার প্রকাশ মাত্র | ধ্বনি 'র শ্রাব্য ও দৃশ্যে ধ্বনি গুণ ,গু নগুনিয়ে ওঠে বোধে | নৈঃশব্দে অঝোর হয় মাথার ভেতরকার বৃষ্টি - কুয়াশাময় নকশা | কবি সমর রায় চৌধুরী সে ভাবেই প্রতিটি বস্তুর ধ্বনি - দৃশ্যকলার অমোঘ রক্তমাংসকে তার রূপ শিহর রঙ রস রহস্যায়িত শ্রুতিকে ব্যবহার করেছেন অনিঃশেষিত বিস্তারে |
পৃথিবীর যাবতীয় ধ্বনি যাবতীয় অনুভব যাবতীয় গন্ধ ,অলীক ও অন্ধকার পরতে পরতে তার আলোকিত নিবিড় গহন ও পরিস্ফুরণের স্খলন পতন , সমস্ত কিছুরই আছে অনিবার্য মহাজগৎ | তৎপর ও সতর্কিত সভ্যতার জীবন যাপনের সঙ্গে সঙ্গেই কিছু মেকি বহু ব্যবহৃত ভাবনার খণ্ডতা ও নশ্বর ধূসরতা ঢেকে দেয় এক চলমান বিপুল নিসর্গের বহুমাত্রিক মুহুর্মুহু রঙ ও রঙ হীন শূন্যতার গ্যালাক্সসি , অবিরাম তার চলাচল , ফ্রেম গুলোকে প্রতি মুহূর্তে ইরেজ করে ,আবার ভরিয়ে দেয় |এইখেলাটি দেখেন সেই পাখিওয়ালা , যার ডানা আসলে পাখির চূড়া | ....
কয়েকটা উদাহরণ রাখা যাক , পাঠকদের সামনে ....
**** " স্বচক্ষে নিজের জিহ্বাগ্র দেখতে সাধ হয় হঠাৎ / বের করি জিভ / জিভের ডগায় একটি প্রজাপতি / উড়ে এসে বসে / এক বিন্দু নাচে / এক বিন্দু কথা বলে জিভের সঙ্গে / তারপর উড়ে চলে যায় ( দুয়েন্দে )
****" একটা আলমারির মধ্যে চুপচাপ বসে থাকি / বসে থাকি ভাতের হাঁড়ির মধ্যে / উনোনের ওপর / রক্তের ঝিঁঝিঁ - ডাক --/ শুনি ,অশ্রুর খেপা হাসির শব্দ / বন্ধ আলমারির ভেতর থেকে দেখি / ভাতের ফেন গালছ তুমি / তুমি কি টের পাচ্ছ / ওই ভাতের ফেন আসলে কি ? / আসলে কে ? ( স্কিজোফ্রেনিয়া )
****" জলের দিকে তাকিয়ে নিজেকে জলের সন্তান , আর / শিরশিরে হাওয়ায় / নিজেকে হাওয়ার অন্তরতম বাচ্চা মনে হয় / আমি মানুষের ছদ্মবেশে এক অশরীরী ছাতিম গাছ / আমি পাখির ডাকের ছায়া / সহসা নিজেকে এই পৃথিবীর গভীর অন্ধকার ও অপার শূন্যতা মনে হয় / চারপাশে পাথর / পাথরের দিকে তাকালে / নিজের ভেতর আমি পাথরের কান্না , আর / টের পাই কান্নার পাথর ( উপলব্ধি )
****" গাড়িটা দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে অচিরেই উড্ডীন গ্যাস বেলুন / সাইকেল চলতে চলতে হঠাৎ পাখি / গোরু ঘাস খেতে খেতে চোখের পলকে ঘুড়ি / মেয়েটা জানলার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে সহসা বাদল মেঘ / ছেলেটা শিস দিতে দিতে মুহূর্তে দোতারা .../ চোখ বন্ধ করে দেখি এইসব , আর / নাক দিয়ে শুনি / মাটি ভেদ করে উদ্ভিদ গজিয়ে ওঠার শব্দ / চিটপিট করে খই - এর মতো ফুল ফোটার শব্দ / ক্ষতস্থান থেকে রক্ত চুঁইয়ে বেরিয়ে আসার আওয়াজ ( আমার অডিও ভিস্যুয়াল )
**** " ??????
!!!!!!!!
..................
||||||||||||||||||||||
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
এক লাইন প্রশ্নবোধক চিহ্ন
এক লাইন বিস্ময় চিহ্ন
এক লাইন লিডার
এক লাইন দাড়ি
এক লাইন কমা
ব্যাস এটাই কবিতা
অর্থহীন ?
হ্যাঁ অর্থহীন এবং অর্থহীন ,
অবশেষে অর্থহীন আমার কবিতা
অর্থহীন আমারই মতো, অর্থহীন"
( অর্থহীন )
অভিভূত | এই কবিতা বই পাঠক নিজে পড়তে পড়তে বুঝবেন , দুহাতে পাখি নিয়ে কিংবা পৃথিবীর লুকোনো পাখি হৃদয় নিয়ে এক জাদুকর অস্পষ্ট কুহেলি মাখানো ফাঁদ নিয়ে অপেক্ষা করে আছেন আমাদের সামনে | পাখি পড়ছে , পাখি ভর্তি আকাশ থেকে উপচে পড়া ছিটকে পড়া ,প্রতিটি ফোঁটাতেই এখন পৃথিবী উপচে অকস্মাৎ নিজেদের বুকের মধ্যেই একটা চিড়িক প্রবাহ | ধ্বনি ও রঙের ভেতর নিসর্গে , জাদুকর নানারকম ধারণা ও ভাবনার ভেতর ছড়িয়ে দিচ্ছে আপন অস্তিত্বের সিন্দুকভরা প্রাচীন চকচকে আশরফি | কোনো বিপ্লব গণ বিক্ষোভ ছাড়া নির্মোহ এক পৃথিবীর অনাবিষ্কৃত
সবুজ ম্যানিফেস্টো কেবল তার হাতে ....
No comments:
Post a Comment