প্রভু দাও দ্বার খুলে-'
বিশ্বজিৎ লায়েক
১)
সঙ্গম ক্লান্ত শরীরে আজ অঘ্রাণ মাসের বিকেল
মাঠ ভর্তি ধানের গন্ধ নিয়ে আমি এখন কোথায় যাব
কিসে ডুববে আমার উচ্ছ্বাস
চাঁদ গলে গলে এই যে রেখে গেলে অজস্র মোম
রেখে গেলে লক্ষ্মী কোজাগর
এখানে দ্রাবক নেই, হলুদ সাদা জীবনের উপর
ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কাম, দ্রাব আর বিষণ্ণতা
রমণী শীত জানে না এইসব
সে শুধু কুড়িয়ে আনে আমাদের শীতের ওম
২)
তুমি আর মন খারাপ লিখো না, লিখো অনন্ত খিদে
তুমি আর জলে ভাসো না, ভাসাও শরীরে আহা মন
আমার লুকিয়ে রাখা হাহাকার
আমার অন্ধ জন্মের প্রতীক
এই মগ্ন অন্ধকার
রাখো তার ডানায় শুদ্ধ পালক, গত জন্মের উচ্ছ্বাস
৩)
ধানের মতোই বেড়ে ওঠো তুমি
কালো ধোঁয়া আর বঞ্চনার এই চ্যালাকাঠ
ছোটো হে অন্ধ মাতাল, মুগ্ধ প্রেমিক
শব্দ ছুঁয়ে হও দিগভ্রান্ত
বুকের ভিতরে কে যেন জ্বালিয়ে দিয়ে গেছে ধিকিধিকি
কাঠের আগুন
যুদ্ধের বিপরীতে অন্য যুদ্ধ খেলা
৪)
পারফিউমের গন্ধে কাঁদতে কাঁদতে নেমে গেল শ্যামল ছায়া
শরীরে তার ধোঁয়া, কার্বন ও গন্ধক
কৃষক রমণীর দেহজ প্রসব
অকল্পিত অসুখ
৫)
এই বয়ঃপ্রাপ্ত নিড়ানি চারাধান
ক্ষেতের আলে ফুটে ওঠা অসময়ের চাঁদ
ধানের আহ্লাদে তুমি নাচো শস্য শ্যামলিমা
ক্ষুৎ কাতর এই দেশে
ধানের আহ্লাদে মিশে যাও তুমি চুম্বনের মতো
টিপে দেখো তার মসৃণ ফলের মতো স্তন
৬)
কৃষকের করতল
এই দেশ পিপাসা তর্পণ
পাতায় পাতায় রাখো অবশিষ্ট যৌণ বিদ্যুৎ
অভিষিক্ত নদ-নদী
অভিসারে রেখেছ যে মন
চাষীর খোয়াবে নাচে যে লকলকে সবুজ
কচি ধান
দুটি ঠোঁট ছুঁয়ে আছে জলে
জলের অক্ষরে
ভালবাসা তুমি গড়িয়ে নামো আলো আর আঁধারে
কথার ঠোঁটে, ডুব সাঁতারের এই রাত
মিশে যাও আমার নির্বাক ছুঁয়ে থাকা কচি ধানের দুধে
৭)
পুড়ছিলাম, বহুবার আমি পুড়ে পুড়ে
কাকে যেন বলেছি
ভালবাসা দাও সঙ্গে সামান্য অবহেলা
শিউলি তলায় পড়ে থাকা জবাফুল
কুড়িয়ে নিয়ে তাকে বল
এই দ্যাখো প্রেম এখানে কচি ধানের দুধ
এই ভালবাসা গ্রহণে অক্ষম তুমি
দূরে থাকো
তোমার বিষণ্ণতার দিকে চলে গেছে আমার আঙুল
৮)
তুমি হেসে ওঠো
অনেক উঁচুতে তিনি লিখছেন
ফেসবুক
আমার শৈশবে জমানো স্বরবর্ণ রাত
আপাতত বৃষ্টি দিন, উদাসীন ওম
কতকাল বসে আছি শালপাতা নিয়ে
প্রাচীণ অরণ্যে
'ঝরো ঝরো মুখর বাদল দিনে'
রুগ্ন ভালবাসা তোমার কোনো ব্যঞ্জন নেই
আলাদিনের পুষ্টি নেই
নিষেধের বাড়িঘর
যতবার চেয়েছি তোমাকে
ঘুম ও স্বপ্নে মতিভ্রম
জেগে আছেন বোবা ঈশ্বর
৯)
শুয়ে থাকা চাঁদ নিয়ে
রাত নেমে আসছে জিহ্বা ও জ্বরে
মৃত হারমোনিয়াম
শীতের স্টেশনে বাজাও তোমার অসুখ-বিসুখ
অসময়ে অতটা খিদে গান হতে চেয়েছিল
আর আমি বৃত্তের বদলে জিরো বসালাম
শুয়ে থাকা সর্বনামে
১০)
মাইগ্রেন নয়, শ্বাসকষ্ট নয়, উল্কি
বেচতে এসেছি তোমার শহরে
তুমি বোতাম খুলে পাঁজরে সেলাই মাখালে
জিভের নোনা আল স্বাদ
১১)
সাদা পৃষ্ঠার আগে বাষ্পমোচন
সাদা পৃষ্ঠার আগে বিনোদন লজ
সাদা পৃষ্ঠার আগে রাত নেমে আসছে
শরীরে আবার
১২)
কী নিয়ে বসে থাকব আমি
দরজায় হেলান দিয়ে বসে আছে ত্রয়োদশী চাঁদ
কী নিয়ে বসে থাকব আমি
শূন্যঘর একাকী একা...
১৩)
আমি কি ভাঙা আয়নার টুকরো টুকরো ভেঙে যাওয়া কাঁচ
জোড়া লাগাবে বলে সকালে এসেছিল
বন্ধুর মতো প্রিয়জন
দুপুরেও কেউ কেউ এসেছিল নিশ্চয়
আমি ঘুমোচ্ছিলাম
বিকেলে যারা আসব বলেও এলো না এখনও
ঠোঁটে আলকাতরার জ্যোৎস্না মেখে বোবা হয়ে গেছে
চিরকাল
১৪)
আমি কি আরো ভেঙে ভেঙে টুকরো হয়ে
নিজেই নিজেকে লাগাচ্ছি জোড়া
হাত-পা, পেট-পিঠ, মুখ
শরীরের শিরা
১৫)
এতরাতে কে এলো ঘরে
সারা শরীরে তার অক্ষর মিছিল
'মানুষ পারে না।
এক জায়গায় এসে স্পষ্ট ভেঙে পড়ে।'
No comments:
Post a Comment