Saturday, November 30, 2019


মানিক সাহার দীর্ঘ কবিতা 

তন্ত্রের রাত


আর একটু এগিয়ে গেলে মাঠ
তারপর শান্ত শ্মশান

আমি কালীমন্দির ছাড়িয়ে, মাসানবাবার পাট ছাড়িয়ে
মানুষখেকো পুকুর ছাড়িয়ে, শ্যাওড়াগাছের নিচে এসে দাঁড়িয়েছি

আমার গলায় কে রুদ্রাক্ষের মালা পরিয়ে দিয়েছে?
কপালে কে দিয়েছে ভস্মের টিকা?
মৃত শিশুর কড়ে আঙুল খুঁজতে আসা কাপালিক বলেছে 
-শুয়ে পড়ো।

আমার পেটের ভেতর কোটি কোটি জোনাকি ঢুকে গেছে
মাথার ভেতর কয়েক লক্ষ ঝিঁঝিঁ

কলাপাতার উপর শুয়ে 
আমার শরীরে কারা যেন তেল, হলুদ, চন্দন, ঘি লাগিয়ে দেয়
কারা যেন চাঁদ গুলে ঢেলে দেয় আমার কপালে।

আমিও কি তবে এই চিতার সঙ্গী হবো?
শরীরের প্রয়োজন কি তবে শেষ?
চোখ বুজে শুনি অবোধ্য মন্ত্র, চাপা কান্নার রোল

কেউ তো কাঁদছে না। তবে কান্না শুনি কেন?

চারদিকে কারা যেন ভীষণ নিরব হয়ে আছে
জলে ভেজা বালির উপর তাদের পায়ের ছাপ
আমার ঘিলুর পাত্র সেই এক ছাপে রেখে দেওয়া 
কে রেখেছে?
তাকে আমি চিনি না এখনো।
সে কেবল কড়ে আঙুলের খোঁজে মাটি খোড়ে
মৃত শিশুদের দেহ থেকে স্নেহ ও আঙুল কেটে নেয়

আমার দেহের পাশে সেইসব রাখে
চিতাভস্ম, কাটা আঙুল, মানুষের হাড়, বেশ কিছু জড়িবুটি
সাপের খোলস, বাংলা মদের গ্লাস, কিসের মাংস যেন তার পাশে রাখা

যে সত্য কোনদিন দেখতে চাইনি
যার প্রতি কোন মোহ নেই
কেবল শরীর নিয়ে যে আমি এতদিন কাটিয়ে দিয়েছি
এসবের মাঝে তাকে টেনে এনে কী লাভ পেয়েছে  কে জানে?

যে নারী ভীষণ সুন্দরী বলে একদিন খুব গর্ব ছিল 
যে পুরুষ অর্থ ও যশ দিয়ে তাকে হরণ করেছে বহুদিন
আমার দেহের পাশে তাদের শরীরগুলি পরে আছে
বিভৎস ও তীব্র অর্থহীন

আমাকে এখানে এনে কী লাভ হয়েছে
যাকিছু দেখেছি, দেখি তার 
কণামাত্র মনে রাখিনা।
প্রতি রাতে কেন তবে নিশী-ডাক দাও
কেন নিয়ে আসো এই শ্মশানের কাছে?

আমার চোখের মণি খুলে এই তোমাকে দিয়েছি
দেখে নাও যা কিছু দৃশ্যমান
দেখে নাও যাকিছু দৃষ্টি অগোচর।

1 comment: