হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দীর্ঘ কবিতা
অন্য সুরের বৃত্তে
" কোথায় তুমি ! " ------
কথা শুনে তুমি এত রেগে গিয়েছিলে
যেন এক আকাশ রোদ্দুর পেরিয়ে
মুখ চোখ লাল করে বাড়ি ফিরেছিলে
আমি তো অত কিছু ভাবি নি
দেখতে না পেয়ে মন বলে ফেলেছিল
যেভাবে হাওয়ার যাত্রাপথ থেকে
একটু সরে গিয়ে হাওয়ার বয়ে যাওয়া দেখে
আমি সর্বত্র তোমাকেই দেখতে চেয়েছিলাম
দুপুর থেকে একটু একটু করে রোদ সরে গিয়ে
দিনের সারা শরীর কেমন পাণ্ডুর হয়ে গিয়েছিল
সবাই আমাকে পাড়ার পুরোনো বটগাছের নিচে
আমার ঠাকুরদার কাছে নিয়ে গেল
কেউ তো আমাকে চেনেই না
জামা পুরোনো হলেই কি পুরোনো হয়ে যায় ?
আমি মুখ খুলতেই সবাই আমাকে লাথি দেখালো
আমার কথার যত গয়না ছিল
সব ওরা টেনে খুলে ফেলতে চাইলো
গয়নাই আমাকে রাস্তা দেখিয়ে এনে
নদীর ধারে বসিয়ে দিল
ডাকের মধ্যে কে যেন শুনতে পেয়েছিলো
চারদেয়ালের গণ্ডির স্থবিরতার গানের সুর
পায়ের গতিবিধি দেখে
অনেকে নাকি বুঝতে পেরেছিল
আমি অধিকারের গণ্ডি পেরিয়ে
অনেক দূরে চলে যেতে চাই
শীতের রোদে পিঠ দিয়ে
সবাই গল্প জুড়ে দিয়েছিল
বসন্তকালের কাক ডাকা ভোরের গল্প
ঠাণ্ডা হাওয়ায় কেউ পাশ ফিরে শোওয়ার কথা ভাবে নি
একজনও কেউ তার পাশের জনকে খোঁজে নি
এখানে আমার ডাক নিয়ে
গল্প হওয়া তো দূরের কথা
একজনও কেউ আমায় নিয়ে আগ্রহ দেখায় নি
শুধুমাত্র ডাকের এক ভিন্ন সুরের জন্য
আমার গায়ে ভিন গ্রহের ছাপ দিয়েছিল
জেনে গিয়েছিলাম আমার সুরে
গলা মেলাতে একজনও কেউ জেগে উঠবে না
নদীর পাড়ে এখন আমি হাত পা ছড়িয়ে বসে
জলের গভীর তলদেশ থেকে
যে সুর আমার বুকে আশ্রয় নিয়েছিল
তাকে এখনও তেপান্তরের মাঠ দেখানো হয় নি
আমি সবকিছু ভুলে যেতে চাইছিলাম
যেন আমার সঙ্গে কারও কিছুই হয় নি
যা কিছু দোষ সব আমার সুরের
চেনা মুখের আড়ালে সব সরিয়ে নিয়ে গিয়ে
আবার ভোরের অপেক্ষায় থাকব
নদীর পাড়ে শুয়ে আমি সারারাত গান শুনবো।
No comments:
Post a Comment