ঝুরোগল্প
কাজল সেন
রিমঝিম বৃষ্টি
সময়ের বৃষ্টি বলে এখন আর কিছু হয় না। নিয়ম মেনে বর্ষাকালের দুটো মাস টানা বৃষ্টির দিনগুলোর কথা ভাবলে মনটা উদাস হয়ে যায় রঘুবরের। আহা! সেসব কী দিনই না ছিল! প্রচন্ড গরমের দিনগুলো কোনোরকমে পার করে বর্ষার জলে চুপচুপে ভিজে ফুলে ঢোল হবার মজাটাই ছিল আলাদা। ঘরে সদ্য আসা নতুন ছোটবৌমাকে সেইসব হারানো দিনের গল্প করতে বসে চোখদুটো কখন যেন জলে ভরে ওঠে তাঁর। নতুন ছোটবৌমা অবাক হয় তার নতুন দাদাশ্বশুরের ভাবাবেগ লক্ষ্য করে। তার অবশ্য কোনো দোষ নেই। সে বেচারি তো জন্মেই ছিল বর্ষার খটখটে দিনে। সে বছর সারা বর্ষাকালেই ভালো বৃষ্টি হয়নি। ক্ষেতের ধান ক্ষেতেই জলের অভাবে সরাসরি খড় হয়ে গেছিল। চারিদিকে আকাল। বাজার অগ্নিমূল্য। সাংঘাতিক গরমে অনেক মানুষ নাকি পাগলাও হয়ে গেছিল। এসবই অবশ্য তার শোনাকথা। তার তো কিছু বোঝার বয়সই হয়নি তখনও। একটু বড় হয়ে অবশ্য সে জেনেছে, প্রাকৃতিক এইসব বিপর্যয়, মানে সারাবছর ধরেই গরমের লাম্পট্য, শীতে ঠান্ডার অহেতুক টানাটানি অথবা বাড়াবাড়ি, বর্ষাকালে আকাশে কালো মেঘের নিষ্ঠুর কৃপণতা, এসবই নাকি এখন প্রাকৃতিক স্বাভাবিক নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবং এই সবকিছুর জন্য দায়ী অন্য কেউ নয়, বরং মানুষ নিজেই। নতুন ছোটবৌমা বোঝার চেষ্টা করে, তার দাদাশ্বশুরের এই যে হারানো দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করে মনোবেদনা, তার সঙ্গে কি মিশে আছে মূর্খ ও জ্ঞানপাপী মানুষের অজ্ঞানতা ও স্বার্থপরতার জন্য ধিক্কারও!
রঘুবর গল্প শোনান নতুন ছোটবৌমাকে, বুঝলে নতুন ছোটবৌমা, একদিন ঠিক তোমার মতোই নিতান্ত ছেলেমানুষ টুকটুকে ফর্সা কাজলটানা চোখ টলটলে লাবণ্যে ভরা আমার নতুন বৌকে নিয়ে এসেছিলাম এই ঘরে। তখন বর্ষাকাল। সারা আকাশ জুড়ে ঘোলাটে গভীর মেঘ। আর সেদিন কী বৃষ্টি, কী বৃষ্টি! সব কিছু যেন ভাসিয়ে নিয়ে যাবার জোগাড়। আমার কিন্তু খুব ভালো লাগছিল। মজা লাগছিল। কালরাত্রি পার করে পরের দিনই ছিল বৌভাত আর ফুলশয্যা। আমার তো আর তর সয় না! বাইরে রিমঝিম বৃষ্টি আর ঘরে ফুল দিয়ে সাজানো পালঙ্ক, সে যে কী রোমান্টিক ব্যাপার!
রঘুবরের কথার ধরনে লজ্জা লাগে নতুন ছোটবোমার। কীসব যে বলেন দাদাশ্বশুর! সে তো এই দিন পনেরো হলো এসেছে বাড়ির বৌ হয়ে। ফুলশয্যার রাত এখনও তার মনে টাটকা, তরতাজা। তবে শ্রাবণের এই দিনগুলোয় আকাশে নেই মেঘের ঘনঘটা, কানে ভেসে আসছে না নিরন্তর বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ। বরং গুমোট আবহাওয়া শরীরটাকে অস্থির করে তুলেছে। বিনবিন করে ঘাম বেরিয়ে এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে যাবতীয় অন্তর্বাস। চিটচিটে আঠালো কী যেন লেপ্টে আছে আপাদমস্তক।
কথা বলতে বলতে রঘুবরের দুটো চোখ কখন যেন বুজে আসে। অনেকদিন হলো স্ত্রীবিয়োগ হয়েছে। চোখ বুজে আসে নতুন ছোটবোমারও। অদেখা দিদাশাশুড়ির শরীরের আদল তার মনের আয়নায় ভেসে ওঠে। সে অনুভব করে, আকাশটা কখন যেন কালো মেঘে ছেয়ে গেছে আর রিমঝিম বৃষ্টির শব্দে তার শরীর এক আশ্চর্য শিহরণে কেঁপে কেঁপে উঠছে।
কাজল সেন
রিমঝিম বৃষ্টি
সময়ের বৃষ্টি বলে এখন আর কিছু হয় না। নিয়ম মেনে বর্ষাকালের দুটো মাস টানা বৃষ্টির দিনগুলোর কথা ভাবলে মনটা উদাস হয়ে যায় রঘুবরের। আহা! সেসব কী দিনই না ছিল! প্রচন্ড গরমের দিনগুলো কোনোরকমে পার করে বর্ষার জলে চুপচুপে ভিজে ফুলে ঢোল হবার মজাটাই ছিল আলাদা। ঘরে সদ্য আসা নতুন ছোটবৌমাকে সেইসব হারানো দিনের গল্প করতে বসে চোখদুটো কখন যেন জলে ভরে ওঠে তাঁর। নতুন ছোটবৌমা অবাক হয় তার নতুন দাদাশ্বশুরের ভাবাবেগ লক্ষ্য করে। তার অবশ্য কোনো দোষ নেই। সে বেচারি তো জন্মেই ছিল বর্ষার খটখটে দিনে। সে বছর সারা বর্ষাকালেই ভালো বৃষ্টি হয়নি। ক্ষেতের ধান ক্ষেতেই জলের অভাবে সরাসরি খড় হয়ে গেছিল। চারিদিকে আকাল। বাজার অগ্নিমূল্য। সাংঘাতিক গরমে অনেক মানুষ নাকি পাগলাও হয়ে গেছিল। এসবই অবশ্য তার শোনাকথা। তার তো কিছু বোঝার বয়সই হয়নি তখনও। একটু বড় হয়ে অবশ্য সে জেনেছে, প্রাকৃতিক এইসব বিপর্যয়, মানে সারাবছর ধরেই গরমের লাম্পট্য, শীতে ঠান্ডার অহেতুক টানাটানি অথবা বাড়াবাড়ি, বর্ষাকালে আকাশে কালো মেঘের নিষ্ঠুর কৃপণতা, এসবই নাকি এখন প্রাকৃতিক স্বাভাবিক নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবং এই সবকিছুর জন্য দায়ী অন্য কেউ নয়, বরং মানুষ নিজেই। নতুন ছোটবৌমা বোঝার চেষ্টা করে, তার দাদাশ্বশুরের এই যে হারানো দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করে মনোবেদনা, তার সঙ্গে কি মিশে আছে মূর্খ ও জ্ঞানপাপী মানুষের অজ্ঞানতা ও স্বার্থপরতার জন্য ধিক্কারও!
রঘুবর গল্প শোনান নতুন ছোটবৌমাকে, বুঝলে নতুন ছোটবৌমা, একদিন ঠিক তোমার মতোই নিতান্ত ছেলেমানুষ টুকটুকে ফর্সা কাজলটানা চোখ টলটলে লাবণ্যে ভরা আমার নতুন বৌকে নিয়ে এসেছিলাম এই ঘরে। তখন বর্ষাকাল। সারা আকাশ জুড়ে ঘোলাটে গভীর মেঘ। আর সেদিন কী বৃষ্টি, কী বৃষ্টি! সব কিছু যেন ভাসিয়ে নিয়ে যাবার জোগাড়। আমার কিন্তু খুব ভালো লাগছিল। মজা লাগছিল। কালরাত্রি পার করে পরের দিনই ছিল বৌভাত আর ফুলশয্যা। আমার তো আর তর সয় না! বাইরে রিমঝিম বৃষ্টি আর ঘরে ফুল দিয়ে সাজানো পালঙ্ক, সে যে কী রোমান্টিক ব্যাপার!
রঘুবরের কথার ধরনে লজ্জা লাগে নতুন ছোটবোমার। কীসব যে বলেন দাদাশ্বশুর! সে তো এই দিন পনেরো হলো এসেছে বাড়ির বৌ হয়ে। ফুলশয্যার রাত এখনও তার মনে টাটকা, তরতাজা। তবে শ্রাবণের এই দিনগুলোয় আকাশে নেই মেঘের ঘনঘটা, কানে ভেসে আসছে না নিরন্তর বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ। বরং গুমোট আবহাওয়া শরীরটাকে অস্থির করে তুলেছে। বিনবিন করে ঘাম বেরিয়ে এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে যাবতীয় অন্তর্বাস। চিটচিটে আঠালো কী যেন লেপ্টে আছে আপাদমস্তক।
কথা বলতে বলতে রঘুবরের দুটো চোখ কখন যেন বুজে আসে। অনেকদিন হলো স্ত্রীবিয়োগ হয়েছে। চোখ বুজে আসে নতুন ছোটবোমারও। অদেখা দিদাশাশুড়ির শরীরের আদল তার মনের আয়নায় ভেসে ওঠে। সে অনুভব করে, আকাশটা কখন যেন কালো মেঘে ছেয়ে গেছে আর রিমঝিম বৃষ্টির শব্দে তার শরীর এক আশ্চর্য শিহরণে কেঁপে কেঁপে উঠছে।
No comments:
Post a Comment